সাঈদ চৌধুরী
বিদেশিদের চাপ থাকায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম করে রিস্ক এনালাইসিস করে। একটি ফ্যাক্টরিতে কি কি রিস্ক আছে এবং রিস্ক যদি বিপদ ঘটিয়ে দেয় তবে কিভাবে এখান থেকে দ্রুত রেসকিউ করা যাবে তার একটি ডাটাশিট থাকে। সেটা মোতাবেক সব কাজ সম্পন্ন করা হয়। এখন যে কোনো কারণে একটি ফ্যাক্টরির মধ্যে একটি রিস্ক বাদ পড়ে গেল অডিটর এসে সে রিস্কটি ধরতে পারলে সেটা নন কনফরমিটি হিসেবে যাচাই করে। যদি মেজর কোনো ননকনফরমিটি হয় তবে ফ্যাক্টরিতে অর্ডার বাতিলের মতও ধারা রয়েছে।
আমাদের প্রিয় শহর ঢাকা। খেয়াল করে দেখুন তো কত রিস্ক এখানে। বিদ্যুতের তারগুলো ঝুলে আছে। রেস্টুরেন্টের খোলা জায়গায় গ্যাস দিয়ে রান্না হচ্ছে। রাস্তায় অনেক ড্রেনের মুখ খোলা। একটি দালান হচ্ছে সেখানে কোনো সেইফ গার্ড নেই। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই গড়ে উঠেছে সব প্রতিষ্ঠান, গলির সর্বশেষ বিল্ডিংটি রাখা হয়েছে স্কুল হিসেবে এবং সেখানে কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না, যেখানে হাসপাতাল সেখানে কোনো অ্যাম্বুলেন্স পার্ক করার জায়গা নেই, ট্রান্সফরমারগুলো উন্মুক্ত অবস্থায় আছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের জেনারেটরের এক্সোস্ট মুখ মানুষের কাঁধ বরাবর করে রাখা!
আমি যে রিস্কগুলোর কথা বললাম এগুলোর কোনো এসেসমেন্ট হয়েছে কখনও? যদি এসেসমেন্ট থেকেও থাকে তবে কোন দপ্তর তা করেছে সরকারের অনেক দপ্তরই তা জানে না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যারা কাজ করেন তাদের জিজ্ঞেস করলেও প্রথম ধাক্কায় তারা হাঁপিয়ে উঠতে পারেন! একটি আশ্চর্য শহরের বাসিন্দা আমরা। যেখানে কোনো ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা একটি নির্দিষ্ট এসওপি মেনে হয় না। বিপদ হলে যতক্ষনে সংশ্লিষ্টরা সেখানে পৌছায় ততক্ষণে সব ধরণের অপকর্ম সম্পন্ন হয়ে যায়।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যে ঘটনাটি হল তা একটি নিরাপত্তা ব্যর্থতা বলা যায়। কারণ এখানে রিস্ক আছে কিন্তু এটা নিয়ে কোনো কথা হয়নি কখনও। গ্রামে বাঁশঝাড়ের মধ্য দিয়ে হেঁটে গেলেও রিস্ক আছে। সেটা কি বলেন তো? রাতে সাপ কামড়াতে পারে। এটাতো আপনাকে জানতে হবে তাহলেই না আপনি সাবধান থাকতে পারবেন।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সব শিশু, শিক্ষক, অভিভাবক যে মৃত্যুকে বরণ করে নিল তার পেছনে একটি কারণ এই প্লেনেরও রিস্ক এনালাইসিস নেই এবং এ শহরে গড়ে ওঠা কোনো স্থাপনারও রিস্ক এনালাইসিস নেই। তার মানে এখানে যা ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা করতে পারে এবং বিপদ ঘটলে শোক প্রস্তাবে নতুন কয়েকটি লাইন উঠতে পারে।
প্রথমে ঢাকা থেকে অনেকা সদর দপ্তর কমিয়ে ফেলুন। আবাসের জায়গা, স্কুলের জায়গা, হাসপাতাল নির্দিষ্ট স্থানে দিন। প্রত্যেকটি রিস্ক সনাক্ত করুন। তারপর একটি সুন্দর নগর পরিকল্পনা করুন। খুব খেয়াল করে দেখবেন যখন ঢাকায় অক্সিজেন কম মনে হয় তখন গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে ভাসিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু আজ গাছ লাগালে আজই কি পরিবেশ ভালো হয়ে যাবে? এখন পরিবেশ উন্নত করতে হলে রিস্ক ফ্যাক্টরগুলোকে বন্ধ করতে হবে। দেখানো কাজগুলো আমাদের মস্তিষ্ক বেশি গ্রহণ করে। তার নামও এখন আছে। সেটা হলো জনগণ খায় বেশি এগুলো! দেশটারে একটু বাঁচান। আমাদের দেশের জ্ঞানী মানুষগুলো এখন সরকার চালাচ্ছে।
সব সংস্কার না করে সিস্টেমটাকে বদলে ফেলুন। সবাইকে জিজ্ঞেস করে সবার মত নিয়ে সিস্টেম বদলানো যায় না। সবার মত নিয়ে তাদের স্বার্থই প্রাধান্য দিতে হবে আপনাকে। একটি স্ট্যান্ডার্ড সিস্টেম দাঁড় করুন সে অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোকে ফরমেটে আনুন। দেশটা সুন্দর হবে।
যে কথায় ছিলাম, ঢাকাকে বিপদ মুক্ত করতে হলে সব রিস্ক লিপিবদ্ধ করুন। তারপর কাজে হাত দিন। একটা একটা করে রিস্ক ফ্রি করুন। তবেই দেখবেনে আমরা নিরাপদ হয়ে উঠছে। আজ সোনালী রোদের সাথে আমার শিশুকেও স্কুলে দিতে চেয়ে মনে হলো আহ! কত বাবা মা সকালে তার সন্তানের হাত ধরতে পারবে না। শূন্যতায় নিমজ্জিত হয়ে হাহাকার নিয়ে বারবার পিছু ফিরেছি আর কান্নায় ভরেছি চোখ! এ কান্না থামার মতো নয়।
[লেখক : রসায়নবিদ]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সাঈদ চৌধুরী
সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
বিদেশিদের চাপ থাকায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম করে রিস্ক এনালাইসিস করে। একটি ফ্যাক্টরিতে কি কি রিস্ক আছে এবং রিস্ক যদি বিপদ ঘটিয়ে দেয় তবে কিভাবে এখান থেকে দ্রুত রেসকিউ করা যাবে তার একটি ডাটাশিট থাকে। সেটা মোতাবেক সব কাজ সম্পন্ন করা হয়। এখন যে কোনো কারণে একটি ফ্যাক্টরির মধ্যে একটি রিস্ক বাদ পড়ে গেল অডিটর এসে সে রিস্কটি ধরতে পারলে সেটা নন কনফরমিটি হিসেবে যাচাই করে। যদি মেজর কোনো ননকনফরমিটি হয় তবে ফ্যাক্টরিতে অর্ডার বাতিলের মতও ধারা রয়েছে।
আমাদের প্রিয় শহর ঢাকা। খেয়াল করে দেখুন তো কত রিস্ক এখানে। বিদ্যুতের তারগুলো ঝুলে আছে। রেস্টুরেন্টের খোলা জায়গায় গ্যাস দিয়ে রান্না হচ্ছে। রাস্তায় অনেক ড্রেনের মুখ খোলা। একটি দালান হচ্ছে সেখানে কোনো সেইফ গার্ড নেই। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই গড়ে উঠেছে সব প্রতিষ্ঠান, গলির সর্বশেষ বিল্ডিংটি রাখা হয়েছে স্কুল হিসেবে এবং সেখানে কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না, যেখানে হাসপাতাল সেখানে কোনো অ্যাম্বুলেন্স পার্ক করার জায়গা নেই, ট্রান্সফরমারগুলো উন্মুক্ত অবস্থায় আছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের জেনারেটরের এক্সোস্ট মুখ মানুষের কাঁধ বরাবর করে রাখা!
আমি যে রিস্কগুলোর কথা বললাম এগুলোর কোনো এসেসমেন্ট হয়েছে কখনও? যদি এসেসমেন্ট থেকেও থাকে তবে কোন দপ্তর তা করেছে সরকারের অনেক দপ্তরই তা জানে না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যারা কাজ করেন তাদের জিজ্ঞেস করলেও প্রথম ধাক্কায় তারা হাঁপিয়ে উঠতে পারেন! একটি আশ্চর্য শহরের বাসিন্দা আমরা। যেখানে কোনো ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা একটি নির্দিষ্ট এসওপি মেনে হয় না। বিপদ হলে যতক্ষনে সংশ্লিষ্টরা সেখানে পৌছায় ততক্ষণে সব ধরণের অপকর্ম সম্পন্ন হয়ে যায়।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যে ঘটনাটি হল তা একটি নিরাপত্তা ব্যর্থতা বলা যায়। কারণ এখানে রিস্ক আছে কিন্তু এটা নিয়ে কোনো কথা হয়নি কখনও। গ্রামে বাঁশঝাড়ের মধ্য দিয়ে হেঁটে গেলেও রিস্ক আছে। সেটা কি বলেন তো? রাতে সাপ কামড়াতে পারে। এটাতো আপনাকে জানতে হবে তাহলেই না আপনি সাবধান থাকতে পারবেন।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সব শিশু, শিক্ষক, অভিভাবক যে মৃত্যুকে বরণ করে নিল তার পেছনে একটি কারণ এই প্লেনেরও রিস্ক এনালাইসিস নেই এবং এ শহরে গড়ে ওঠা কোনো স্থাপনারও রিস্ক এনালাইসিস নেই। তার মানে এখানে যা ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা করতে পারে এবং বিপদ ঘটলে শোক প্রস্তাবে নতুন কয়েকটি লাইন উঠতে পারে।
প্রথমে ঢাকা থেকে অনেকা সদর দপ্তর কমিয়ে ফেলুন। আবাসের জায়গা, স্কুলের জায়গা, হাসপাতাল নির্দিষ্ট স্থানে দিন। প্রত্যেকটি রিস্ক সনাক্ত করুন। তারপর একটি সুন্দর নগর পরিকল্পনা করুন। খুব খেয়াল করে দেখবেন যখন ঢাকায় অক্সিজেন কম মনে হয় তখন গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে ভাসিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু আজ গাছ লাগালে আজই কি পরিবেশ ভালো হয়ে যাবে? এখন পরিবেশ উন্নত করতে হলে রিস্ক ফ্যাক্টরগুলোকে বন্ধ করতে হবে। দেখানো কাজগুলো আমাদের মস্তিষ্ক বেশি গ্রহণ করে। তার নামও এখন আছে। সেটা হলো জনগণ খায় বেশি এগুলো! দেশটারে একটু বাঁচান। আমাদের দেশের জ্ঞানী মানুষগুলো এখন সরকার চালাচ্ছে।
সব সংস্কার না করে সিস্টেমটাকে বদলে ফেলুন। সবাইকে জিজ্ঞেস করে সবার মত নিয়ে সিস্টেম বদলানো যায় না। সবার মত নিয়ে তাদের স্বার্থই প্রাধান্য দিতে হবে আপনাকে। একটি স্ট্যান্ডার্ড সিস্টেম দাঁড় করুন সে অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোকে ফরমেটে আনুন। দেশটা সুন্দর হবে।
যে কথায় ছিলাম, ঢাকাকে বিপদ মুক্ত করতে হলে সব রিস্ক লিপিবদ্ধ করুন। তারপর কাজে হাত দিন। একটা একটা করে রিস্ক ফ্রি করুন। তবেই দেখবেনে আমরা নিরাপদ হয়ে উঠছে। আজ সোনালী রোদের সাথে আমার শিশুকেও স্কুলে দিতে চেয়ে মনে হলো আহ! কত বাবা মা সকালে তার সন্তানের হাত ধরতে পারবে না। শূন্যতায় নিমজ্জিত হয়ে হাহাকার নিয়ে বারবার পিছু ফিরেছি আর কান্নায় ভরেছি চোখ! এ কান্না থামার মতো নয়।
[লেখক : রসায়নবিদ]