জিয়াউদ্দীন আহমেদ
অনেক দৌড়ঝাঁপের পর তৃতীয় দফার আলোচনায় মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্য বিক্রির ওপর আরোপিত শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৫৭টি দেশের ওপর ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক আরোপ করেছিলেন; জুলাই মাসের মধ্যে দেশের সংখ্যা বেড়ে হয় ৯০টিরও অধিক। ট্রাম্পের শুল্ক বাড়ানোর এই নীতি গ্রহণের পূর্বে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫.৫ শতাংশ শুল্ক ছিল; নতুন নীতিতে বৃদ্ধি করা হয়েছিল আরও ৩৫ শতাংশ, দুটি মিলে হয়েছিল ৫০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্ক ঘোষণার পর বিশ্ব অর্থনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আলোচনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে শুল্কহার যুক্তিযুক্ত করার সুযোগ প্রদান করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রদত্ত সুযোগ কাজে লাগিয়ে তৃতীয় দফার আলোচনায় ১৫ শতাংশ শুল্ক কমানো সম্ভব হয়েছে; এখন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি করতে হলে পুরাতন ১৫.৫ শতাংশ এবং নতুন ২০ শতাংশ মিলিয়ে মোট ৩৫. ৫ শতাংশ শুল্ক আমেরিকাকে দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক বাংলাদেশ বা অন্য কোন দেশ থেকে নয়, আদায় করা হবে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকদের কাছ থেকে। কিন্তু যার কাছ থেকেই আদায় করা হোক না কেন, তাতে কেনা মূল্যের সঙ্গে শুল্কের অর্থ যোগ হয়ে পণ্যের মূল্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বেড়ে যাবে।এই প্রক্রিয়ায় যে দেশের পণ্যের ওপর শুল্কহার যত বেশি হবে সেই দেশের পণ্যের মূল্য যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে ততবেশি হবে। বাংলাদেশের পোশাকের দর তুলনামূলকভাবে কম বিধায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে বেশি পোশাক আমদানি করে থাকে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পোশাক রপ্তানিকারক চীন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশের ওপরও যুক্তরাষ্ট্র বর্ধিত শুল্ক আরোপ করেছে। সব দেশকেই আলোচনার সুযোগ দেয়া হয়েছে, তাই এই আলোচনা ছিল সংশ্লিষ্ট দেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমেরিকার সঙ্গে দর কষাকষির জন্য আমাদের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা লবিস্ট নিয়োগের পক্ষে কথা বলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত লবিস্ট ছাড়াই শুল্ক কমানো সম্ভব হয়েছে, আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টা দর কষাকষির বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
দর কষাকষিতে অংশ নেয়া বাণিজ্য উপদেষ্টার সাফল্যে অন্তর্বর্তী সরকার আনন্দে উচ্ছ্বসিত। এটা অনস্বীকার্য যে, যে কোন বিজয়ই আনন্দের। বিজয়ের এই আনন্দে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি সফলভাবে সম্পন্ন করায় আমরা বাংলাদেশের শুল্ক আলোচক দলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এটি এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিজয়’। বিদ্যুৎ উপদেষ্টা এই সাফল্যে আরও সরস, তার মতে বাণিজ্য উপদেষ্টা সমালোচকদের হতাশ করে দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন।প্রধান উপদেষ্টা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন; আলোচকরা নাকি জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট জটিল আলোচনার মধ্য দিয়ে অত্যন্ত সফলভাবে পথ পার করেছেন। আলোচকদের সাফল্যে তিনি এত বেশি উচ্চকিত যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে নাকি আমাদের তুলনামূলক সুবিধা অক্ষুণœ থাকবে এবং এই সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শক্তি ও মর্যাদাকেই তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশের বৃহত্তর সম্ভাবনা, দ্রুততর প্রবৃদ্ধি এবং স্থায়ী সমৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত করবে। তিনি এখানে থেমে যাননি, এই চুক্তি নাকি আমাদের জাতীয় দৃঢ়তা এবং সাহসী অর্থনৈতিক ভিশনের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
চুক্তির এই সাফল্যে এত বেশি আনন্দিত হওয়ার সত্যি কোন উপাদান আছে বলে মনে হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার অলঙ্করণসমৃদ্ধ শব্দগুলো এই চুক্তির সঙ্গে খুব বেশি সংশ্লিষ্টও নয়। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর একটি বক্তব্য নিয়েও হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল, বিনিয়োগ আনতে না পারায় এখন তার কথা সবাই ভুলেই গেছে।
দ্বিতীয়ত, অন্তর্বর্তী সরকার কোন নির্বাচিত সরকার নয়, তাই দলীয় সরকারের মতো তাদেরও প্রশংসায় আপ্লুত হওয়ার বিষয়টি একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। দলীয় সরকার তাদের যে কোন অর্জনের প্রচার করে থাকে, কারণ ভোটের জন্য জনগণের কাছে তাদের বারবার যেতে হয়। যেমন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আকাশ জয়; ভারত এবং মায়ানমারের সঙ্গে আইনি যুদ্ধে সমুদ্র জয়; পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ইত্যাদির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের কাহিনী প্রচার করেছে। এগুলো প্রচার করতে আপত্তি নেই, কিন্তু কৃতিত্ব দাবি করার কিছু নেই, এসব কাজ করার জন্যই জনগণ ভোট দেয়। কিন্তু দেশ এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, ঘুষ ছাড়া কোন কাজ কোন সংস্থার কোন কর্মী করে দিলে গ্রাহক তার প্রশংসায় গদগদ হয়ে যায়, মনে করা হয় ওই কর্মী নিয়মের বেশি সেবা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার পর সম্পাদিত চুক্তিতে প্রধান উপদেষ্টার কথিত ‘বাংলাদেশের বৃহত্তর সম্ভাবনা, দ্রুততর প্রবৃদ্ধি এবং স্থায়ী সমৃদ্ধির পথ’ কীভাবে উন্মুক্ত হলো তা বোঝা গেল না। এত খুশি হওয়ার তো কিছু দেখা যাচ্ছে না, শুল্ক তো সম্পূর্ণ রহিত হয়নি, আগে ছিল ১৫ শতাংশ, এখন থেকে হবে ৩৫ শতাংশ। এর ফলে আমাদের রপ্তানিযোগ্য পণ্য বিশেষ করে বস্ত্রের দাম আমেরিকান বাজারে বৃদ্ধি পাবে, দাম বৃদ্ধি পেলে চাহিদা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরও আমরা আমাদের আলোচকদের কৃতিত্ব দিতে কার্পণ্য করতাম না যদি তাদের শুল্ক কমানোর হার বাকি দেশগুলোর চেয়ে কম হতো।আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত ২০ শতাংশ শুল্ক হার শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়Ñ শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান এবং ভিয়েতনামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যুক্তরাজ্য ও ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের জন্য ১০ শতাংশ, আফগানিস্তানসহ প্রায় ৪০টি দেশের জন্য ১৫ শতাংশ; কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইনের জন্য ১৯ শতাংশ। বিভিন্ন দেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শুল্কের হার এবং প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় প্রতীয়মান হয়, বৈঠকের আলোচনায় শুল্ক কমেনি, শুল্ক কমেছে পারষ্পরিক সম্পর্কের বিবেচনায় এবং আমেরিকা থেকে বেশি বেশি আমদানি করার সম্পাদিত বাণিজ্যিক চুক্তি এবং গোপনীয় শর্ত মানার শর্তে।
যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে সেই সব দেশের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করে দেশগুলোর যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি হ্রাসের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে আলোচনার সুযোগ রেখে দেশগুলোকে আমেরিকান পণ্য কিনে তাদের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাধ্য করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন পরিকল্পনায় বাংলাদেশ আমেরিকা থেকে ২৫টি যাত্রিবাহী বোয়িং বিমান কেনার চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে, তাদের কাছ থেকে ৩৫ লাখ টন গম কেনার চুক্তিও করতে হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক দরে এই দুটি পণ্য অন্য কোন দেশ থেকে কেনার আর সুযোগ থাকলো না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন এবং তুলা ক্রয়ের তোড়জোড়ও শুরু হয়ে গেছে, এলএনজি এবং সামরিক সরঞ্জামসহ আরও কিছু পণ্য আমদানি করা যায় কিনা তা-ও ভাবা হচ্ছে। শুধু আমদানি বৃদ্ধির চুক্তি করে আমেরিকাকে সন্তুষ্ট করা যায়নি, আমেরিকান পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর প্রতিশ্রুতিও দিতে হয়েছে। এতে প্রতিপন্ন হয়, বৈঠকে আলোচকদের দক্ষতা কোন কাজে আসেনি, আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চুক্তি এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি বেশি পণ্য আমদানির প্রতিশ্রুতি শুল্ক কমানোর টনিক হিসেবে কাজ করেছে।আমেরিকা বেনিয়ার জাত, তারা যুক্তির ধার ধারে না, নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণে তারা তাদের অকৃত্রিম বন্ধু ইসরায়েলকেও ছাড় দেয়নি, ১৫ শতাংশ বর্ধিত শুল্ক তাদের ক্ষেত্রেও আরোপ করেছে।
শুধু বাণিজ্যিক স্বার্থ বিবেচনা করে আমেরিকা এই শুল্কহার বৃদ্ধি করেনি। যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার করতে সম্মত হয়েছে তাদের জন্য শুল্কহারে ছাড় দেয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কথা অনুযায়ী বাংলাদেশের আলোচকরা জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট জটিল পথ পার করেছেন। কী কী শর্তে কোন কোন জটিল পথ আলোচকরা সফলভাবে পার করেছেন তা কিন্তু প্রকাশ করা হয়নি। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন, এতেই প্রতীয়মান হয় আলোচনা শুধু পণ্য বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না।হয়তো প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আস্তে আস্তে কমিয়ে আনা হবে। শুল্কহার কমানোর বৈঠক করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি গোপনীয়তার চুক্তি বা ‘নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট’ স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। বাণিজ্যের বাইরের বিষয়গুলোয় বাংলাদেশ কীভাবে সামাল দিয়েছে তা গোপন থাকায় শুল্ক হ্রাসের বিনিময়ে আমরা কী হারিয়েছি তা না জেনে কৃতিত্ব প্রদানের বিষয়টি বিবেচনায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে আমেরিকাকে কোন দেশ কতটুকু দিয়েছে তাইই ছিল শুল্ক কমানোর মুখ্য নিয়ামক। যেসব দেশের জন্য ১০ বা ১৫ শতাংশ শুল্ক, সেই সব দেশের আলোচক কি আমাদের আলোচকদের চেয়েও দক্ষ? চীন বা ভারতের লোকজন কি দক্ষ আলোচক নয়? নিশ্চয় ভারত এবং চীনের লোকজন জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান। আলোচনাই যদি মুখ্য হবে তাহলে চীন এবং ভারতের জন্য শুল্কহার বেশি কেন? কারণ এই দেশগুলো আমেরিকাকে বাণিজ্য বা নিরাপত্তা বিষয়ে ছাড় দিতে সম্মত হয়নি। ভারত রাশিয়ার তেল কিনে শুধু নিজে ব্যবহার করে না, পরিশোধন করে অন্য দেশেও বিক্রি করে। রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করতে সম্মত হলে ভারতের পণ্যের ওপর শুল্ক হতো ১০-১৫ শতাংশ, কারণ চীনকে নিয়ন্ত্রণ করতে ভারতকে হাতে রাখা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ফরজ।
পোশাক রপ্তানিকারক শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের জন্য বর্ধিত শুল্ক বাংলাদেশের মতো ২০ শতাংশ। আমাদের চেয়ে ১ শতাংশ কম অর্থাৎ ১৯ শতাংশ শুল্কের কারণে আমেরিকায় ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তান পোশাক রপ্তানিতে সুবিধা পাবে। তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিযোগী ভারত ও চীনের শুল্ক বাংলাদেশের চেয়ে বেশি, তাই যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বর্ধিত শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে হয় না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় স্পষ্ট করে বলেছেন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’, অর্থাৎ আমেরিকার স্বার্থই তার সকল বিবেচনায় ‘প্রথম’ স্থানে থাকবে। আগেও তিনি একবার ক্ষমতায় ছিলেন, তখনো তিনি একই বিবেচনায় দেশ চালিয়েছেন। আমেরিকা চায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামরিক শক্তিতে তারা অপ্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে, তাই ট্রাম্প সব দেশকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। শুল্ক কমানোর ক্ষেত্রে তাই কোন দেশের দর কষাকষির সক্ষমতা বিচার করা হয়নি, বিচার করা হয়েছে কোন দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে কতটুকু ছাড় দিয়েছে এবং ছাড়করণে আমেরিকার স্বার্থ কতটুকু সংরক্ষিত হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বৈঠকে কোন দেশের আলোচকের দক্ষতার স্বীকৃতি ছিল না, স্বীকৃতি ছিল আলোচনার টেবিলে রাখা আমেরিকার স্বার্থের অনুকূলে সম্পাদিত বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা চুক্তি।
[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক]
জিয়াউদ্দীন আহমেদ
শনিবার, ০৯ আগস্ট ২০২৫
অনেক দৌড়ঝাঁপের পর তৃতীয় দফার আলোচনায় মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্য বিক্রির ওপর আরোপিত শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৫৭টি দেশের ওপর ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক আরোপ করেছিলেন; জুলাই মাসের মধ্যে দেশের সংখ্যা বেড়ে হয় ৯০টিরও অধিক। ট্রাম্পের শুল্ক বাড়ানোর এই নীতি গ্রহণের পূর্বে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫.৫ শতাংশ শুল্ক ছিল; নতুন নীতিতে বৃদ্ধি করা হয়েছিল আরও ৩৫ শতাংশ, দুটি মিলে হয়েছিল ৫০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্ক ঘোষণার পর বিশ্ব অর্থনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আলোচনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে শুল্কহার যুক্তিযুক্ত করার সুযোগ প্রদান করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রদত্ত সুযোগ কাজে লাগিয়ে তৃতীয় দফার আলোচনায় ১৫ শতাংশ শুল্ক কমানো সম্ভব হয়েছে; এখন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি করতে হলে পুরাতন ১৫.৫ শতাংশ এবং নতুন ২০ শতাংশ মিলিয়ে মোট ৩৫. ৫ শতাংশ শুল্ক আমেরিকাকে দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক বাংলাদেশ বা অন্য কোন দেশ থেকে নয়, আদায় করা হবে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকদের কাছ থেকে। কিন্তু যার কাছ থেকেই আদায় করা হোক না কেন, তাতে কেনা মূল্যের সঙ্গে শুল্কের অর্থ যোগ হয়ে পণ্যের মূল্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বেড়ে যাবে।এই প্রক্রিয়ায় যে দেশের পণ্যের ওপর শুল্কহার যত বেশি হবে সেই দেশের পণ্যের মূল্য যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে ততবেশি হবে। বাংলাদেশের পোশাকের দর তুলনামূলকভাবে কম বিধায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে বেশি পোশাক আমদানি করে থাকে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পোশাক রপ্তানিকারক চীন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশের ওপরও যুক্তরাষ্ট্র বর্ধিত শুল্ক আরোপ করেছে। সব দেশকেই আলোচনার সুযোগ দেয়া হয়েছে, তাই এই আলোচনা ছিল সংশ্লিষ্ট দেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমেরিকার সঙ্গে দর কষাকষির জন্য আমাদের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা লবিস্ট নিয়োগের পক্ষে কথা বলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত লবিস্ট ছাড়াই শুল্ক কমানো সম্ভব হয়েছে, আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টা দর কষাকষির বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
দর কষাকষিতে অংশ নেয়া বাণিজ্য উপদেষ্টার সাফল্যে অন্তর্বর্তী সরকার আনন্দে উচ্ছ্বসিত। এটা অনস্বীকার্য যে, যে কোন বিজয়ই আনন্দের। বিজয়ের এই আনন্দে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি সফলভাবে সম্পন্ন করায় আমরা বাংলাদেশের শুল্ক আলোচক দলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এটি এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিজয়’। বিদ্যুৎ উপদেষ্টা এই সাফল্যে আরও সরস, তার মতে বাণিজ্য উপদেষ্টা সমালোচকদের হতাশ করে দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন।প্রধান উপদেষ্টা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন; আলোচকরা নাকি জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট জটিল আলোচনার মধ্য দিয়ে অত্যন্ত সফলভাবে পথ পার করেছেন। আলোচকদের সাফল্যে তিনি এত বেশি উচ্চকিত যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে নাকি আমাদের তুলনামূলক সুবিধা অক্ষুণœ থাকবে এবং এই সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শক্তি ও মর্যাদাকেই তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশের বৃহত্তর সম্ভাবনা, দ্রুততর প্রবৃদ্ধি এবং স্থায়ী সমৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত করবে। তিনি এখানে থেমে যাননি, এই চুক্তি নাকি আমাদের জাতীয় দৃঢ়তা এবং সাহসী অর্থনৈতিক ভিশনের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
চুক্তির এই সাফল্যে এত বেশি আনন্দিত হওয়ার সত্যি কোন উপাদান আছে বলে মনে হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার অলঙ্করণসমৃদ্ধ শব্দগুলো এই চুক্তির সঙ্গে খুব বেশি সংশ্লিষ্টও নয়। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর একটি বক্তব্য নিয়েও হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল, বিনিয়োগ আনতে না পারায় এখন তার কথা সবাই ভুলেই গেছে।
দ্বিতীয়ত, অন্তর্বর্তী সরকার কোন নির্বাচিত সরকার নয়, তাই দলীয় সরকারের মতো তাদেরও প্রশংসায় আপ্লুত হওয়ার বিষয়টি একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। দলীয় সরকার তাদের যে কোন অর্জনের প্রচার করে থাকে, কারণ ভোটের জন্য জনগণের কাছে তাদের বারবার যেতে হয়। যেমন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আকাশ জয়; ভারত এবং মায়ানমারের সঙ্গে আইনি যুদ্ধে সমুদ্র জয়; পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ইত্যাদির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের কাহিনী প্রচার করেছে। এগুলো প্রচার করতে আপত্তি নেই, কিন্তু কৃতিত্ব দাবি করার কিছু নেই, এসব কাজ করার জন্যই জনগণ ভোট দেয়। কিন্তু দেশ এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, ঘুষ ছাড়া কোন কাজ কোন সংস্থার কোন কর্মী করে দিলে গ্রাহক তার প্রশংসায় গদগদ হয়ে যায়, মনে করা হয় ওই কর্মী নিয়মের বেশি সেবা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার পর সম্পাদিত চুক্তিতে প্রধান উপদেষ্টার কথিত ‘বাংলাদেশের বৃহত্তর সম্ভাবনা, দ্রুততর প্রবৃদ্ধি এবং স্থায়ী সমৃদ্ধির পথ’ কীভাবে উন্মুক্ত হলো তা বোঝা গেল না। এত খুশি হওয়ার তো কিছু দেখা যাচ্ছে না, শুল্ক তো সম্পূর্ণ রহিত হয়নি, আগে ছিল ১৫ শতাংশ, এখন থেকে হবে ৩৫ শতাংশ। এর ফলে আমাদের রপ্তানিযোগ্য পণ্য বিশেষ করে বস্ত্রের দাম আমেরিকান বাজারে বৃদ্ধি পাবে, দাম বৃদ্ধি পেলে চাহিদা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরও আমরা আমাদের আলোচকদের কৃতিত্ব দিতে কার্পণ্য করতাম না যদি তাদের শুল্ক কমানোর হার বাকি দেশগুলোর চেয়ে কম হতো।আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত ২০ শতাংশ শুল্ক হার শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়Ñ শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান এবং ভিয়েতনামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যুক্তরাজ্য ও ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের জন্য ১০ শতাংশ, আফগানিস্তানসহ প্রায় ৪০টি দেশের জন্য ১৫ শতাংশ; কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইনের জন্য ১৯ শতাংশ। বিভিন্ন দেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শুল্কের হার এবং প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় প্রতীয়মান হয়, বৈঠকের আলোচনায় শুল্ক কমেনি, শুল্ক কমেছে পারষ্পরিক সম্পর্কের বিবেচনায় এবং আমেরিকা থেকে বেশি বেশি আমদানি করার সম্পাদিত বাণিজ্যিক চুক্তি এবং গোপনীয় শর্ত মানার শর্তে।
যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে সেই সব দেশের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করে দেশগুলোর যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি হ্রাসের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে আলোচনার সুযোগ রেখে দেশগুলোকে আমেরিকান পণ্য কিনে তাদের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাধ্য করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন পরিকল্পনায় বাংলাদেশ আমেরিকা থেকে ২৫টি যাত্রিবাহী বোয়িং বিমান কেনার চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে, তাদের কাছ থেকে ৩৫ লাখ টন গম কেনার চুক্তিও করতে হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক দরে এই দুটি পণ্য অন্য কোন দেশ থেকে কেনার আর সুযোগ থাকলো না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন এবং তুলা ক্রয়ের তোড়জোড়ও শুরু হয়ে গেছে, এলএনজি এবং সামরিক সরঞ্জামসহ আরও কিছু পণ্য আমদানি করা যায় কিনা তা-ও ভাবা হচ্ছে। শুধু আমদানি বৃদ্ধির চুক্তি করে আমেরিকাকে সন্তুষ্ট করা যায়নি, আমেরিকান পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর প্রতিশ্রুতিও দিতে হয়েছে। এতে প্রতিপন্ন হয়, বৈঠকে আলোচকদের দক্ষতা কোন কাজে আসেনি, আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চুক্তি এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি বেশি পণ্য আমদানির প্রতিশ্রুতি শুল্ক কমানোর টনিক হিসেবে কাজ করেছে।আমেরিকা বেনিয়ার জাত, তারা যুক্তির ধার ধারে না, নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণে তারা তাদের অকৃত্রিম বন্ধু ইসরায়েলকেও ছাড় দেয়নি, ১৫ শতাংশ বর্ধিত শুল্ক তাদের ক্ষেত্রেও আরোপ করেছে।
শুধু বাণিজ্যিক স্বার্থ বিবেচনা করে আমেরিকা এই শুল্কহার বৃদ্ধি করেনি। যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার করতে সম্মত হয়েছে তাদের জন্য শুল্কহারে ছাড় দেয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কথা অনুযায়ী বাংলাদেশের আলোচকরা জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট জটিল পথ পার করেছেন। কী কী শর্তে কোন কোন জটিল পথ আলোচকরা সফলভাবে পার করেছেন তা কিন্তু প্রকাশ করা হয়নি। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন, এতেই প্রতীয়মান হয় আলোচনা শুধু পণ্য বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না।হয়তো প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আস্তে আস্তে কমিয়ে আনা হবে। শুল্কহার কমানোর বৈঠক করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি গোপনীয়তার চুক্তি বা ‘নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট’ স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। বাণিজ্যের বাইরের বিষয়গুলোয় বাংলাদেশ কীভাবে সামাল দিয়েছে তা গোপন থাকায় শুল্ক হ্রাসের বিনিময়ে আমরা কী হারিয়েছি তা না জেনে কৃতিত্ব প্রদানের বিষয়টি বিবেচনায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে আমেরিকাকে কোন দেশ কতটুকু দিয়েছে তাইই ছিল শুল্ক কমানোর মুখ্য নিয়ামক। যেসব দেশের জন্য ১০ বা ১৫ শতাংশ শুল্ক, সেই সব দেশের আলোচক কি আমাদের আলোচকদের চেয়েও দক্ষ? চীন বা ভারতের লোকজন কি দক্ষ আলোচক নয়? নিশ্চয় ভারত এবং চীনের লোকজন জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান। আলোচনাই যদি মুখ্য হবে তাহলে চীন এবং ভারতের জন্য শুল্কহার বেশি কেন? কারণ এই দেশগুলো আমেরিকাকে বাণিজ্য বা নিরাপত্তা বিষয়ে ছাড় দিতে সম্মত হয়নি। ভারত রাশিয়ার তেল কিনে শুধু নিজে ব্যবহার করে না, পরিশোধন করে অন্য দেশেও বিক্রি করে। রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করতে সম্মত হলে ভারতের পণ্যের ওপর শুল্ক হতো ১০-১৫ শতাংশ, কারণ চীনকে নিয়ন্ত্রণ করতে ভারতকে হাতে রাখা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ফরজ।
পোশাক রপ্তানিকারক শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের জন্য বর্ধিত শুল্ক বাংলাদেশের মতো ২০ শতাংশ। আমাদের চেয়ে ১ শতাংশ কম অর্থাৎ ১৯ শতাংশ শুল্কের কারণে আমেরিকায় ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তান পোশাক রপ্তানিতে সুবিধা পাবে। তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিযোগী ভারত ও চীনের শুল্ক বাংলাদেশের চেয়ে বেশি, তাই যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বর্ধিত শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে হয় না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় স্পষ্ট করে বলেছেন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’, অর্থাৎ আমেরিকার স্বার্থই তার সকল বিবেচনায় ‘প্রথম’ স্থানে থাকবে। আগেও তিনি একবার ক্ষমতায় ছিলেন, তখনো তিনি একই বিবেচনায় দেশ চালিয়েছেন। আমেরিকা চায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামরিক শক্তিতে তারা অপ্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে, তাই ট্রাম্প সব দেশকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। শুল্ক কমানোর ক্ষেত্রে তাই কোন দেশের দর কষাকষির সক্ষমতা বিচার করা হয়নি, বিচার করা হয়েছে কোন দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে কতটুকু ছাড় দিয়েছে এবং ছাড়করণে আমেরিকার স্বার্থ কতটুকু সংরক্ষিত হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বৈঠকে কোন দেশের আলোচকের দক্ষতার স্বীকৃতি ছিল না, স্বীকৃতি ছিল আলোচনার টেবিলে রাখা আমেরিকার স্বার্থের অনুকূলে সম্পাদিত বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা চুক্তি।
[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক]