alt

উপ-সম্পাদকীয়

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতেই হবে

কামরুজ্জামান

: রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫
image

নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা গেলে নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে

যে নারীর গর্ভে তাবত পৃথিবীর সব মানুষের জন্ম সেই নারীর জন্যই নিরাপত্তার প্রয়োজন পড়ে; কিন্তু কেন? কেন হচ্ছে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন, কেন হচ্ছে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা?

সম্প্রতি একজন নারী ফেসবুকে লিখেছেনÑ ‘হে আল্লাহ আপনি আর পৃথিবীতে কোনো কন্যাসন্তান পাঠাবেন না।’ আরেকজন মেয়ে ফেসবুকে লিখেছেনÑ ‘যদি সমাজে পুরুষ মানুষ না থাকতো তাহলে সে পুরো শহর রাতে ঘুরে কাটাতে পারতো। মুক্তভাবে বাতাস গ্রহণ করতে পারতো, মুক্তভাবে হাঁটতে পারতো।’ অর্থাৎ তার আর পুরুষের প্রয়োজন নেই। এ বিষয়গুলো আমাদের সমাজের জন্য, পুরুষ জাতীর জন্য লজ্জাজনক বিষয়।

বাংলাদেশে বর্তমানে নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় অনেক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মিডিয়ার মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের মতো ঘটনার খবর আমরা দেখছি প্রতিদিন।

সম্প্রতি মাগুরা জেলায় ঘটে যাওয়া ঘটনাটি সারা দেশের মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়। পত্রিকা থেকে যতটুকু জানা যায়Ñ শিশুটি (৮) মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির পড়–য়া ছাত্রী। মাগুরা শহরে বোনের বাড়িতে এসে বৃহস্পতিবার দুপুরে ধর্ষণের শিকার হয়।

দেশে কেন বাড়ছে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা। এ সবের কারণ খুঁজে বের করা দরকার। এটি কোনোভাবেই একটি সভ্য সমাজের প্রতিচিত্র হতে পারে না। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশ একটি রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে। কিন্তু একশ্রেণির অসৎ এবং লোভী মানুষের কারণে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে। এটাকে কেউ কেউ আবার কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। যার ফলে বর্তমান সময়ে ধর্ষণ অনেক বেড়ে গেছে।

এছাড়াও আমাদের দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন পদে-পদেই হয়ে থাকে। আমাদের দেশের নারীরা ঘরে নির্যাতিত হয়। খুব আপন মানুষের দ্বারাই নির্যাতনের শিকার হয়। স্বামী, ভাই বাবা এমনকি সন্তানের দ্বারাও নারী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। কন্যা শিশু, মেয়ে, নারী অনেকেই নিকটাত্মীয় দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু পারিবারিক ও সামাজিক লাজলজ্জা ও মান সম্মানের ভয়ে থেকে যায় অপ্রকাশিত।

আমাদের দেশের নারীরা কর্মক্ষেত্র, গণপরিবহন রাস্তাঘাটে চলাফেরায় শপিং মলে সর্বত্রই কটূক্তি ও যৌন হয়রানির শিকার হয়। এক শ্রেণির বিকৃত মস্তিষ্কের পুরুষ থাকে যারা এ কাজগুলো নীরবে করে যায়। এর মধ্যে যেগুলো মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় সেগুলো মিডিয়াতে আসে, আসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে।

দেশের নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয় পিছিয়ে পড়া মেয়েরা। এর মধ্যে বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, দরিদ্র অসহায় ঘরের নারী ও কন্যাশিশু, বস্তিবাসীর নারী ও কন্যা শিশুরাই বেশি।

ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা যারা করে তারা বেশির ভাগই অপরাধী। বিভিন্ন অপরাধের সাথে এরা সম্পৃক্ত। যেমন- এরা মাদকাসক্ত, কিশোর গ্যাং, চুরি ও ডাকাতির সাথে সম্পৃক্ত।

ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে গেলে দেখা যায়- অপরাধী হয় মাদকাসক্ত, নয়তো কিশোর গ্যাং, নয়তো চুরি অথবা ডাকাতির সাথে সম্পৃক্ত। আমাদের সমাজে মাদকের সাথে যারা জড়িত বা যারা মাদকাসক্ত তারা কিছুই মানে না। এদের দ্বারা আমাদের নারী সমাজ সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়।

পর্নোগ্রাফি নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ। এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগ। অবাধে দেখানো হয় বিভিন্ন অপরাধ সিরিয়াল। যেগুলো দেখে অনেকই বিপথগামী হয়। কৌশল রপ্ত করে এবং নিজেরা আসক্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে শিশু ও নারী নির্যাতন রিলেটেড যেসব সিরিয়াল দেখানো হয় সেগুলো ভয়ংকর ক্ষতিকর। এগুলো দেখে দেখেই একশ্রেণীর পুরুষ মানসিক বিকারগ্রস্ত হয় এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটায়।

কন্যা শিশুর প্রতি সচেতনতার অভাব সহিংসতার একটি কারণ। কন্যাশিশু কার সাথে মিশছে, কে তাকে কাছে ডাকছে, কে আদর করার চেষ্টা করছে, কোথায় ঘুমাবে, বেড়াতে নিয়ে গেলে কার সাথে থাকবে ইত্যাদি বিষয়গুলো মনিটরিং করা খুবই প্রয়োজন; কিন্তু আমাদের বাস্তবতা হচ্ছেÑ আমরা এসবে গুরুত্ব কম দেই। এর ফলে ঘটে যায় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা।

নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনার জন্য প্রথমেই যেটা প্রয়োজন তা হলো- সচেতনতা বৃদ্ধি। পরিবারের সদস্যদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কন্যা শিশুকে চোখে চোখে রাখা এবং সমস্যাগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান দিয়ে সচেতন করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও বেশি আন্তরিকতা বৃদ্ধি ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে আইন সংস্কার করা।

নারী নির্যাতন বন্ধে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। নারীর সুশিক্ষা নিশ্চিত করা, নারীকে স্বাবলম্বী করে তোলা, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা। নারীকে নারী হিসেবে না দেখে কন্যা, জায়া, জননী হিসেবে দেখা। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পারলেই নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনা সম্ভব। নারীর জন্য নিরাপদ হোক আগামীর পৃথিবী।

[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, ভাওয়ালগড়, গাজীপুর]

ছবি

উন্নয়ন ও প্রকৃতি

ছবি

কৃষকের চেয়ে বড় উদ্যোক্তা আর কে আছে

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষাগত ও সামাজিক সমস্যা

ট্রেড ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

সব অর্জনে কৃতিত্ব নিতে নেই

নাগাসাকি দিবস : পারমাণবিক বোমার অপপ্রয়োগ বন্ধ হোক

আদিবাসী অধিকার : দায় ঘোচানোর সুযোগ এসেছে, কাজে লাগাতে হবে রাষ্ট্রকেই

অদৃশ্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই : উষ্ণ বাংলাদেশে জলবায়ু-প্রসূত স্বাস্থ্য সংকট

নেতানিয়াহুর এক ভ্রান্ত কৌশলের মুখোমুখি ইসরায়েল

আসিয়ানে বাংলাদেশের অভিযাত্রা : সম্ভাবনার পথে কূটনৈতিক বাস্তবতা ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ

ভাঙছে নদী, গড়ছে দুঃখের গ্রাম

ছবি

গণঅভ্যুত্থান ও গণআকাক্সক্ষা : এক বছরে অর্জনটা কী?

ছবি

ভিন্নমত, ভিন্নপথ এবং প্রান্তজনের স্বপ্ন

আচরণগত অর্থনীতির আয়নায় বাংলাদেশিদের বিদেশযাত্রা

গরিবের ইলিশ শুধুই স্বপ্ন কেন?

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান : বৈষম্য ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জাগরণ

শারীরিক শিক্ষা : সুস্থ ও সচেতন প্রজন্ম গড়ার সম্ভাবনা

জ্ঞানতীর্থের সংকট ও গবেষণাবিমুখ উচ্চশিক্ষা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : মেঘ থম থম করে

অলৌকিকতা, লৌকিকতা ও বিশ্বাসের বিভ্রান্তি

বিচারপতি গ্রেফতার, শুনানিতে পুলিশের অসহযোগিতা ও কিছু আইনি জিজ্ঞাসা

অপেক্ষার রাজনীতি ও সময়গত বৈষম্য : ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপট

বৃক্ষরোপণ হোক পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন

আফ্রিকায় রাশিয়ার ভূরাজনৈতিক কৌশল

বিভীষিকাময় দুর্ঘটনা ও করুণ মৃত্যু

কেন এত তরুণ দেশ ছাড়তে চাচ্ছে

রেলওয়ে পরিচালনায় আমলাতন্ত্রের প্রভাব

রম্যগদ্য : ‘গোপালগঞ্জ, বাংলার গোপালগঞ্জ...’

দেশি মাছ রক্ষায় অভয়াশ্রম

আলুর বাজার বিপর্যয় : কৃষকের ভাগ্যে লোকসান

ছবি

নীল নদের পানি নীল নয়

বিশ্ব বাঘ দিবস

ঢাকার কি রিস্ক এনালাইসিস করা আছে?

ছবি

সোনার হরফে লেখা অনন্য শিক্ষকের নাম

পরীক্ষার পর পরীক্ষা, কিন্তু কোথায় মূল্যায়ন ও মূল্যবোধের ভিত্তি?

বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেন বাদ কেন?

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতেই হবে

কামরুজ্জামান

image

নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা গেলে নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে

রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫

যে নারীর গর্ভে তাবত পৃথিবীর সব মানুষের জন্ম সেই নারীর জন্যই নিরাপত্তার প্রয়োজন পড়ে; কিন্তু কেন? কেন হচ্ছে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন, কেন হচ্ছে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা?

সম্প্রতি একজন নারী ফেসবুকে লিখেছেনÑ ‘হে আল্লাহ আপনি আর পৃথিবীতে কোনো কন্যাসন্তান পাঠাবেন না।’ আরেকজন মেয়ে ফেসবুকে লিখেছেনÑ ‘যদি সমাজে পুরুষ মানুষ না থাকতো তাহলে সে পুরো শহর রাতে ঘুরে কাটাতে পারতো। মুক্তভাবে বাতাস গ্রহণ করতে পারতো, মুক্তভাবে হাঁটতে পারতো।’ অর্থাৎ তার আর পুরুষের প্রয়োজন নেই। এ বিষয়গুলো আমাদের সমাজের জন্য, পুরুষ জাতীর জন্য লজ্জাজনক বিষয়।

বাংলাদেশে বর্তমানে নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় অনেক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মিডিয়ার মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের মতো ঘটনার খবর আমরা দেখছি প্রতিদিন।

সম্প্রতি মাগুরা জেলায় ঘটে যাওয়া ঘটনাটি সারা দেশের মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়। পত্রিকা থেকে যতটুকু জানা যায়Ñ শিশুটি (৮) মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির পড়–য়া ছাত্রী। মাগুরা শহরে বোনের বাড়িতে এসে বৃহস্পতিবার দুপুরে ধর্ষণের শিকার হয়।

দেশে কেন বাড়ছে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা। এ সবের কারণ খুঁজে বের করা দরকার। এটি কোনোভাবেই একটি সভ্য সমাজের প্রতিচিত্র হতে পারে না। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশ একটি রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে। কিন্তু একশ্রেণির অসৎ এবং লোভী মানুষের কারণে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে। এটাকে কেউ কেউ আবার কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। যার ফলে বর্তমান সময়ে ধর্ষণ অনেক বেড়ে গেছে।

এছাড়াও আমাদের দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন পদে-পদেই হয়ে থাকে। আমাদের দেশের নারীরা ঘরে নির্যাতিত হয়। খুব আপন মানুষের দ্বারাই নির্যাতনের শিকার হয়। স্বামী, ভাই বাবা এমনকি সন্তানের দ্বারাও নারী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। কন্যা শিশু, মেয়ে, নারী অনেকেই নিকটাত্মীয় দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু পারিবারিক ও সামাজিক লাজলজ্জা ও মান সম্মানের ভয়ে থেকে যায় অপ্রকাশিত।

আমাদের দেশের নারীরা কর্মক্ষেত্র, গণপরিবহন রাস্তাঘাটে চলাফেরায় শপিং মলে সর্বত্রই কটূক্তি ও যৌন হয়রানির শিকার হয়। এক শ্রেণির বিকৃত মস্তিষ্কের পুরুষ থাকে যারা এ কাজগুলো নীরবে করে যায়। এর মধ্যে যেগুলো মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় সেগুলো মিডিয়াতে আসে, আসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে।

দেশের নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয় পিছিয়ে পড়া মেয়েরা। এর মধ্যে বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, দরিদ্র অসহায় ঘরের নারী ও কন্যাশিশু, বস্তিবাসীর নারী ও কন্যা শিশুরাই বেশি।

ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা যারা করে তারা বেশির ভাগই অপরাধী। বিভিন্ন অপরাধের সাথে এরা সম্পৃক্ত। যেমন- এরা মাদকাসক্ত, কিশোর গ্যাং, চুরি ও ডাকাতির সাথে সম্পৃক্ত।

ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে গেলে দেখা যায়- অপরাধী হয় মাদকাসক্ত, নয়তো কিশোর গ্যাং, নয়তো চুরি অথবা ডাকাতির সাথে সম্পৃক্ত। আমাদের সমাজে মাদকের সাথে যারা জড়িত বা যারা মাদকাসক্ত তারা কিছুই মানে না। এদের দ্বারা আমাদের নারী সমাজ সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়।

পর্নোগ্রাফি নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ। এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগ। অবাধে দেখানো হয় বিভিন্ন অপরাধ সিরিয়াল। যেগুলো দেখে অনেকই বিপথগামী হয়। কৌশল রপ্ত করে এবং নিজেরা আসক্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে শিশু ও নারী নির্যাতন রিলেটেড যেসব সিরিয়াল দেখানো হয় সেগুলো ভয়ংকর ক্ষতিকর। এগুলো দেখে দেখেই একশ্রেণীর পুরুষ মানসিক বিকারগ্রস্ত হয় এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটায়।

কন্যা শিশুর প্রতি সচেতনতার অভাব সহিংসতার একটি কারণ। কন্যাশিশু কার সাথে মিশছে, কে তাকে কাছে ডাকছে, কে আদর করার চেষ্টা করছে, কোথায় ঘুমাবে, বেড়াতে নিয়ে গেলে কার সাথে থাকবে ইত্যাদি বিষয়গুলো মনিটরিং করা খুবই প্রয়োজন; কিন্তু আমাদের বাস্তবতা হচ্ছেÑ আমরা এসবে গুরুত্ব কম দেই। এর ফলে ঘটে যায় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা।

নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনার জন্য প্রথমেই যেটা প্রয়োজন তা হলো- সচেতনতা বৃদ্ধি। পরিবারের সদস্যদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কন্যা শিশুকে চোখে চোখে রাখা এবং সমস্যাগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান দিয়ে সচেতন করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও বেশি আন্তরিকতা বৃদ্ধি ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে আইন সংস্কার করা।

নারী নির্যাতন বন্ধে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। নারীর সুশিক্ষা নিশ্চিত করা, নারীকে স্বাবলম্বী করে তোলা, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা। নারীকে নারী হিসেবে না দেখে কন্যা, জায়া, জননী হিসেবে দেখা। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পারলেই নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনা সম্ভব। নারীর জন্য নিরাপদ হোক আগামীর পৃথিবী।

[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, ভাওয়ালগড়, গাজীপুর]

back to top