alt

উপ-সম্পাদকীয়

নারীর সমঅধিকার : সমাজ পরিবর্তনের চাবিকাঠি

জিল্লুর রহমান

: বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫

আদিকাল থেকেই পরিবার ও সমাজে কন্যাশিশুরা অবহেলিত হয়ে আসছে। ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার এই বৈষম্যের মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে। একে ভাঙতে হলে কুসংস্কার দূর করার পাশাপাশি মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। ইতিহাসে আমরা দেখি, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক সংস্কারে বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায় প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাদের পথ অনুসরণ করে আমরাও দায়িত্ব গ্রহণ করলে কন্যাশিশুর অধিকার রক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।

নারী-পুরুষের সমঅবদান

একটি কল্যাণমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে নারী ও পুরুষ উভয়ের অবদান অপরিহার্য। শুধু পুরুষ নয়, সুযোগ পেলে নারীরাও সব ক্ষেত্রেই উৎকর্ষতা দেখাতে পারে। তাই প্রতিটি শিশুর সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কন্যাশিশুর প্রতি বৈষম্য প্রাগৈতিহাসিক ধ্যানধারণা থেকে এসেছে, যা ভাঙতে হবে। এ কারণেই বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর “কন্যা শিশু দিবস” পালন করা হয়, যাতে সমাজের দৃষ্টি ও মনোভাব পরিবর্তন হয়।

বৈষম্য ও সহিংসতার বাস্তবতা

বর্তমানে পরিবার ছাড়াও সামাজিক পর্যায়ে বহু নারী ও কন্যাশিশু সহিংসতার শিকার হচ্ছে। বাল্যবিয়ে কন্যাশিশুর ক্ষমতায়নের প্রধান অন্তরায়। অনেক পরিবার কন্যাশিশুকে বোঝা মনে করে, তাদের শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে চায় না। বরং দ্রুত বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে চায়। অথচ বাস্তবতা হলো, কন্যাশিশু কোনো বোঝা নয়Ñতারা ভবিষ্যতের সম্পদ ও সমাজের আলোকবর্তিকা।

যদি তাদের শিক্ষায়, পুষ্টিতে ও দক্ষতা বিকাশে বিনিয়োগ করা যায়, তারা বড় হয়ে আদর্শ মা ও সমাজের নেতা হয়ে উঠতে পারে। গাছের যতœ নিলে যেমন- ফল, ফুল, কাঠ ও ছায়া মেলে, তেমনি একটি কন্যা শিশুর সঠিক পরিচর্যায় একটি আলোকিত প্রজন্ম গড়ে ওঠে।

সামাজিক মানসিকতার বাধা

অবাক করার বিষয়, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিব নির্বিশেষে এখনও কন্যাশিশুকে ভিন্ন চোখে দেখা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা দরিদ্রতার প্রথম শিকার হয়। ছোটবেলা থেকেই তাদের এমনভাবে গড়ে তোলা হয় যাতে তারা প্রতিবাদী হতে না শেখে, বরং বৈষম্যকে মেনে নিতে শেখে। এই মানসিকতা পরবর্তীতে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়াতে সহায়তা করে।

ধর্মীয় ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ

বিভিন্ন ধর্মেই নারীর সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কুসংস্কার ও ভুল ব্যাখ্যা সেই অধিকারকে আড়াল করে রেখেছে। সরকার নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু সহিংসতা, বাল্যবিবাহ, যৌন হয়রানি, যৌতুকের মতো অপরাধ এখনও বিদ্যমান। তাই নারীদের নীরবতা ভাঙতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে এসব সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে।

কন্যা ভ্রƒণ হত্যার উদ্বেগ

বাংলাদেশে কন্যা ভ্রƒণ হত্যার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে ২০১৪ সালের গুতম্যাকার ইনস্টিটিউটের জরিপে দেখা যায়, বছরে প্রায় ১১ লাখ ৯৪ হাজার গর্ভপাত হয়, যার মধ্যে অনেকই কন্যা সন্তানকে পেটে থাকা অবস্থায় হত্যা। ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের মতে, গর্ভপাত ধর্মীয় দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ, যা খুনের শামিল।

ভারতের অবস্থাও একই রকম। জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়, গত ৫০ বছরে ভারতে ৪ কোটি ৬০ লাখ মেয়ে “নিখোঁজ” হয়ে গেছেÑযাদের অনেককেই গর্ভপাতের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। পুত্র সন্তানকে আর্থিক নিরাপত্তা ও বংশ রক্ষাকারী মনে করলেও মেয়ে সন্তানকে আর্থিক বোঝা ও যৌতুকের চাপ হিসেবে দেখা হয়।

বাংলাদেশে কন্যাশিশুর অবস্থা

বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০% কন্যাশিশু (প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ)। তবুও তারা নিরাপত্তাহীনতা, অপুষ্টি ও অবহেলার শিকার। ইউনিসেফের তথ্যমতে, এখানে ১৮% মেয়ে ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ে হয় এবং ৫২% মেয়ে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে। সেভ দ্য চিলড্রেনের তথ্য অনুযায়ী, অল্পবয়সী মেয়েদের অনেক বড় বয়সী পুরুষদের সঙ্গে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়া হয়।

শিক্ষা : ক্ষমতায়নের চাবিকাঠি

শিক্ষা হলো নারীর ক্ষমতায়নের মূল হাতিয়ার। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বাল্যবিবাহ, শিশুমৃত্যু এবং দারিদ্র্য কমাতে সহায়তা করে। একটি জরিপে দেখা গেছে, মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রাপ্ত নারীদের মধ্যে মাত্র ২৬% এর বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগে, যেখানে নিরক্ষর নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ৮৬%। সরকার মেয়েদের শিক্ষায় অংশগ্রহণ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে, যার ফলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে লিঙ্গসমতা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে।

উপসংহার

কন্যাশিশু ও নারীকে অবজ্ঞা, বঞ্চনা ও বৈষম্যের মধ্যে রেখে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই কন্যাশিশুর জন্মলগ্ন থেকেই পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দক্ষতা বিকাশে বিনিয়োগ করতে হবে। আজকের কন্যাশিশু আগামী দিনের শিক্ষিত, আত্মনির্ভর ও নেতৃত্বদায়ী নারীÑযিনি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোকিত করবেন।

[লেখক : ব্যাংকার]

জ্ঞানের মঞ্চ এখন সার্কাস, গবেষণা সেখানে নীরব দর্শক

ছবি

ভরা শ্রাবণে স্বদেশ-ভাবনা

নারীর প্রতি সহিংসতা : বাস্তবতা, আইন ও প্রতিরোধের জরুরি দিকনির্দেশনা

ছাত্র রাজনীতি : নেতৃত্বের হাতেখড়ি নাকি দাসত্বের লেজুড়বৃত্তি?

ছবি

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতেই হবে

ছবি

উন্নয়ন ও প্রকৃতি

ছবি

কৃষকের চেয়ে বড় উদ্যোক্তা আর কে আছে

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষাগত ও সামাজিক সমস্যা

ট্রেড ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

সব অর্জনে কৃতিত্ব নিতে নেই

নাগাসাকি দিবস : পারমাণবিক বোমার অপপ্রয়োগ বন্ধ হোক

আদিবাসী অধিকার : দায় ঘোচানোর সুযোগ এসেছে, কাজে লাগাতে হবে রাষ্ট্রকেই

অদৃশ্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই : উষ্ণ বাংলাদেশে জলবায়ু-প্রসূত স্বাস্থ্য সংকট

নেতানিয়াহুর এক ভ্রান্ত কৌশলের মুখোমুখি ইসরায়েল

আসিয়ানে বাংলাদেশের অভিযাত্রা : সম্ভাবনার পথে কূটনৈতিক বাস্তবতা ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ

ভাঙছে নদী, গড়ছে দুঃখের গ্রাম

ছবি

গণঅভ্যুত্থান ও গণআকাক্সক্ষা : এক বছরে অর্জনটা কী?

ছবি

ভিন্নমত, ভিন্নপথ এবং প্রান্তজনের স্বপ্ন

আচরণগত অর্থনীতির আয়নায় বাংলাদেশিদের বিদেশযাত্রা

গরিবের ইলিশ শুধুই স্বপ্ন কেন?

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান : বৈষম্য ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জাগরণ

শারীরিক শিক্ষা : সুস্থ ও সচেতন প্রজন্ম গড়ার সম্ভাবনা

জ্ঞানতীর্থের সংকট ও গবেষণাবিমুখ উচ্চশিক্ষা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : মেঘ থম থম করে

অলৌকিকতা, লৌকিকতা ও বিশ্বাসের বিভ্রান্তি

বিচারপতি গ্রেফতার, শুনানিতে পুলিশের অসহযোগিতা ও কিছু আইনি জিজ্ঞাসা

অপেক্ষার রাজনীতি ও সময়গত বৈষম্য : ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপট

বৃক্ষরোপণ হোক পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন

আফ্রিকায় রাশিয়ার ভূরাজনৈতিক কৌশল

বিভীষিকাময় দুর্ঘটনা ও করুণ মৃত্যু

কেন এত তরুণ দেশ ছাড়তে চাচ্ছে

রেলওয়ে পরিচালনায় আমলাতন্ত্রের প্রভাব

রম্যগদ্য : ‘গোপালগঞ্জ, বাংলার গোপালগঞ্জ...’

দেশি মাছ রক্ষায় অভয়াশ্রম

আলুর বাজার বিপর্যয় : কৃষকের ভাগ্যে লোকসান

ছবি

নীল নদের পানি নীল নয়

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নারীর সমঅধিকার : সমাজ পরিবর্তনের চাবিকাঠি

জিল্লুর রহমান

বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫

আদিকাল থেকেই পরিবার ও সমাজে কন্যাশিশুরা অবহেলিত হয়ে আসছে। ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার এই বৈষম্যের মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে। একে ভাঙতে হলে কুসংস্কার দূর করার পাশাপাশি মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। ইতিহাসে আমরা দেখি, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক সংস্কারে বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায় প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাদের পথ অনুসরণ করে আমরাও দায়িত্ব গ্রহণ করলে কন্যাশিশুর অধিকার রক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।

নারী-পুরুষের সমঅবদান

একটি কল্যাণমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে নারী ও পুরুষ উভয়ের অবদান অপরিহার্য। শুধু পুরুষ নয়, সুযোগ পেলে নারীরাও সব ক্ষেত্রেই উৎকর্ষতা দেখাতে পারে। তাই প্রতিটি শিশুর সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কন্যাশিশুর প্রতি বৈষম্য প্রাগৈতিহাসিক ধ্যানধারণা থেকে এসেছে, যা ভাঙতে হবে। এ কারণেই বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর “কন্যা শিশু দিবস” পালন করা হয়, যাতে সমাজের দৃষ্টি ও মনোভাব পরিবর্তন হয়।

বৈষম্য ও সহিংসতার বাস্তবতা

বর্তমানে পরিবার ছাড়াও সামাজিক পর্যায়ে বহু নারী ও কন্যাশিশু সহিংসতার শিকার হচ্ছে। বাল্যবিয়ে কন্যাশিশুর ক্ষমতায়নের প্রধান অন্তরায়। অনেক পরিবার কন্যাশিশুকে বোঝা মনে করে, তাদের শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে চায় না। বরং দ্রুত বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে চায়। অথচ বাস্তবতা হলো, কন্যাশিশু কোনো বোঝা নয়Ñতারা ভবিষ্যতের সম্পদ ও সমাজের আলোকবর্তিকা।

যদি তাদের শিক্ষায়, পুষ্টিতে ও দক্ষতা বিকাশে বিনিয়োগ করা যায়, তারা বড় হয়ে আদর্শ মা ও সমাজের নেতা হয়ে উঠতে পারে। গাছের যতœ নিলে যেমন- ফল, ফুল, কাঠ ও ছায়া মেলে, তেমনি একটি কন্যা শিশুর সঠিক পরিচর্যায় একটি আলোকিত প্রজন্ম গড়ে ওঠে।

সামাজিক মানসিকতার বাধা

অবাক করার বিষয়, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিব নির্বিশেষে এখনও কন্যাশিশুকে ভিন্ন চোখে দেখা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা দরিদ্রতার প্রথম শিকার হয়। ছোটবেলা থেকেই তাদের এমনভাবে গড়ে তোলা হয় যাতে তারা প্রতিবাদী হতে না শেখে, বরং বৈষম্যকে মেনে নিতে শেখে। এই মানসিকতা পরবর্তীতে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়াতে সহায়তা করে।

ধর্মীয় ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ

বিভিন্ন ধর্মেই নারীর সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কুসংস্কার ও ভুল ব্যাখ্যা সেই অধিকারকে আড়াল করে রেখেছে। সরকার নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু সহিংসতা, বাল্যবিবাহ, যৌন হয়রানি, যৌতুকের মতো অপরাধ এখনও বিদ্যমান। তাই নারীদের নীরবতা ভাঙতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে এসব সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে।

কন্যা ভ্রƒণ হত্যার উদ্বেগ

বাংলাদেশে কন্যা ভ্রƒণ হত্যার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে ২০১৪ সালের গুতম্যাকার ইনস্টিটিউটের জরিপে দেখা যায়, বছরে প্রায় ১১ লাখ ৯৪ হাজার গর্ভপাত হয়, যার মধ্যে অনেকই কন্যা সন্তানকে পেটে থাকা অবস্থায় হত্যা। ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের মতে, গর্ভপাত ধর্মীয় দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ, যা খুনের শামিল।

ভারতের অবস্থাও একই রকম। জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়, গত ৫০ বছরে ভারতে ৪ কোটি ৬০ লাখ মেয়ে “নিখোঁজ” হয়ে গেছেÑযাদের অনেককেই গর্ভপাতের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। পুত্র সন্তানকে আর্থিক নিরাপত্তা ও বংশ রক্ষাকারী মনে করলেও মেয়ে সন্তানকে আর্থিক বোঝা ও যৌতুকের চাপ হিসেবে দেখা হয়।

বাংলাদেশে কন্যাশিশুর অবস্থা

বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০% কন্যাশিশু (প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ)। তবুও তারা নিরাপত্তাহীনতা, অপুষ্টি ও অবহেলার শিকার। ইউনিসেফের তথ্যমতে, এখানে ১৮% মেয়ে ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ে হয় এবং ৫২% মেয়ে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে। সেভ দ্য চিলড্রেনের তথ্য অনুযায়ী, অল্পবয়সী মেয়েদের অনেক বড় বয়সী পুরুষদের সঙ্গে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়া হয়।

শিক্ষা : ক্ষমতায়নের চাবিকাঠি

শিক্ষা হলো নারীর ক্ষমতায়নের মূল হাতিয়ার। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বাল্যবিবাহ, শিশুমৃত্যু এবং দারিদ্র্য কমাতে সহায়তা করে। একটি জরিপে দেখা গেছে, মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রাপ্ত নারীদের মধ্যে মাত্র ২৬% এর বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগে, যেখানে নিরক্ষর নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ৮৬%। সরকার মেয়েদের শিক্ষায় অংশগ্রহণ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে, যার ফলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে লিঙ্গসমতা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে।

উপসংহার

কন্যাশিশু ও নারীকে অবজ্ঞা, বঞ্চনা ও বৈষম্যের মধ্যে রেখে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই কন্যাশিশুর জন্মলগ্ন থেকেই পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দক্ষতা বিকাশে বিনিয়োগ করতে হবে। আজকের কন্যাশিশু আগামী দিনের শিক্ষিত, আত্মনির্ভর ও নেতৃত্বদায়ী নারীÑযিনি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোকিত করবেন।

[লেখক : ব্যাংকার]

back to top