মাহফুজ আলম
পেঁপে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফল-ফসল, যা উচ্চ পুষ্টিমান, ঔষধি গুণাগুণ এবং সারা বছর সহজলভ্যতার কারণে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘এ’, ফলিক অ্যাসিড ও খাদ্য আঁশে সমৃদ্ধ পেঁপে মানুষের খাদ্য ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় বিশেষ অবদান রাখে, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে যেখানে এটি আঙিনায়ও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের পেঁপে চাষের উৎপাদনশীলতা ও লাভজনকতা নানা জীবাণুজনিত সমস্যার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার মধ্যে পেঁপের রিং স্পট ভাইরাস (PRSV) সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক।
এ ভাইরাসজনিত রোগ কেবল বাংলাদেশেই নয়, বরং বিশ্বব্যাপী উষ্ণ ও উপউষ্ণ অঞ্চলের পেঁপে উৎপাদনের জন্য গুরুতর হুমকি। PRSV হলো Potyviridae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত Potyvirus গণের সদস্য। এটি একটি RNA ভাইরাস যা মূলত এফিড (aphid) দ্বারা non-persistent পদ্ধতিতে ছড়ায়। এই ধরনের সংক্রমণে ভাইরাস স্থানান্তর খুব দ্রুত হয়, ফলে প্রচলিত কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনুকূল পরিবেশে সংবেদনশীল জাতসমূহে PRSV প্রাদুর্ভাব ৩০% থেকে ১০০% পর্যন্ত ফলন হ্রাস করতে পারে। বাংলাদেশের অনুকূল জলবায়ু ও মাটির অবস্থা সত্ত্বেও পেঁপে চাষ সম্প্রসারণে এই ভাইরাস অন্যতম প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
PRSV-এর ইতিহাস
PRSV প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৪০-এর দশকের গোড়ায় হাওয়াইতে। পরবর্তীতে এটি ভারত, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ব্রাজিলসহ বিশ্বের সব প্রধান পেঁপে উৎপাদনকারী দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটির দুটি প্রধান রূপ রয়েছে PRSV-P, যা পেঁপে ও কুকুর্বিট জাতীয় ফসল (যেমন কুমড়া, শসা, স্কোয়াশ) উভয়কেই সংক্রমিত করে এবং PRSV-P, যা শুধু কুকুর্বিট জাতীয় ফসল আক্রমণ করে। বাংলাদেশে PRSV-P ই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, যা পেঁপে চাষে ভয়াবহ ক্ষতির জন্য দায়ী।
বিশ্বব্যাপী PRSV-এর ক্ষতির গুরুত্ব বোঝা যায় ১৯৯০-এর দশকে হাওয়াইয়ের পেঁপে শিল্পের প্রায় ধ্বংসযজ্ঞ থেকে। সেখানে জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড (GM) প্রতিরোধী জাত ‘Rainbow’ ও ‘SunUp’ চালু না হলে পুরো শিল্প প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। এ অভিজ্ঞতা দেখায়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেমন বাংলাদেশে যেখানে বায়োটেকনোলজি গ্রহণ এখনও সীমিত দ্রুত ও টেকসই ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন কতটা জরুরি।
সংক্রমণ ও রোগ বিস্তার
PRSV প্রধানত বিভিন্ন প্রজাতির এফিড যেমন Aphis gossypii ও Myzus persicae দ্বারা ছড়ায়।
এফিড আক্রান্ত গাছে সামান্য সময়ের জন্য খাবার গ্রহণ করলেই ভাইরাস গ্রহণ করতে পারে এবং মুহূর্তের মধ্যে সুস্থ গাছে তা স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়। এই non-persistent প্রকৃতির কারণে কীটনাশক ব্যবহার করেও ভাইরাস সংক্রমণ রোধ প্রায় অসম্ভব, কারণ কীটনাশক কাজ করার আগেই সংক্রমণ হয়ে যায়। ভাইরাসটি যান্ত্রিক উপায়েও (contaminated tools, শ্রমিকের হাত, মাঠে কাজের সময়) ছড়াতে পারে। এছাড়া একই জমিতে বারবার পেঁপে বা কুকুর্বিট চাষ এবং ফসল পর্যায়ক্রম না মানা PRSV-এর পরিমাণ ও স্থায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়।
অর্থনৈতিক প্রভাব
বাংলাদেশে চPRSV-এর অর্থনৈতিক প্রভাব অত্যন্ত গুরুতর। সংক্রমণের মাত্রা ও ফসলের বয়সভেদে ফলন হ্রাস ৩০% থেকে ১০০% পর্যন্ত হতে পারে। কৃষকেরা ফলনের ঘাটতির পাশাপাশি পুনঃরোপণ, বারবার কীটনাশক প্রয়োগ (যা অনেক ক্ষেত্রেই অকার্যকর) এবং বাজারে নিম্নমানের ফল বিক্রির কারণে আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। ক্ষতির সামাজিক প্রভাবও রয়েছে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের জন্য, যারা পেঁপে চাষের ওপর নির্ভরশীল। অনেক সময় পেঁপের রিং স্পট ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে কৃষকেরা পুরোপুরি পেঁপে চাষ ছেড়ে দেন, যার ফলে ফসল বৈচিত্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে।
রোগের উপসর্গ
PRSV সংক্রমণে সাধারণত তিন ধরনের উপসর্গ দেখা যায় :
১. পাতায়:
হলদেটে ও মোজাইক দাগ: পাতায় অনিয়মিত হলুদ দাগ তৈরি হয়। পাতার বিকৃতি: পাতা কুঁকড়ে যাওয়া, পাকানো বা খাটো হয়ে যাওয়া। শিরা স্বচ্ছতা: পাতার শিরা অন্যান্য অংশের তুলনায় হালকা দেখা যায়।
২. ফলে:
রিং স্পট : ফলে পানিভেজা বৃত্তাকার দাগ। বিকৃত আকার : ফল ছোট, বাঁকা এবং বাজার অযোগ্য হয়ে যায়। মিষ্টত্ব হ্রাস : শর্করার পরিমাণ কমে গিয়ে স্বাদ নষ্ট হয়।
৩. কা-ে :
গাঢ় দাগ : লম্বা নেক্রোটিক দাগ। বৃদ্ধি ব্যাহত: গাছ স্বাভাবিকের তুলনায় ধীরে বাড়ে। অনেক সময় প্রাথমিক লক্ষণগুলো কৃষকেরা পুষ্টি ঘাটতি হিসেবে ভুল করেন, ফলে সঠিক নির্ণয় ও ব্যবস্থা নিতে দেরি হয়।
নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
১. সাংস্কৃতিক পদ্ধতি
রোগগ্রস্ত গাছ তুলে ধ্বংস করা (Rogueing)। বিকল্প পোষক উদ্ভিদ দমন। ফসল পর্যায়ক্রম : একই জমিতে বারবার পেঁপে বা কুমড়া জাতীয় গাছ না লাগানো।
২. রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ
এফিড দমন : ইমিডাক্লোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করে এফিড সংখ্যা কমানো।
৩. জৈবিক নিয়ন্ত্রণ
উপকারী পোকা : লেডিবাগ ও লেসউইং এফিড খায়। উদ্ভিদ নির্যাস: নিমতেল প্রাকৃতিক এফিড প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
৪. প্রতিরোধী জাত
জেনেটিক্যালি মডিফায়েড জাত : যেমন হাওয়াইয়ের ‘Rainbow’ জাত PRSV প্রতিরোধী, তবে বাংলাদেশে এখনও অনুমোদিত নয়। প্রচলিত প্রজনন: ইঅজও স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনের জন্য কাজ করছে।
৫. কৃষক সচেতনতা
রোগমুক্ত চারা ব্যবহারের প্রচার।
উপসংহার
২০২৫ মৌসুমে বাংলাদেশে PRSV পেঁপে উৎপাদনে মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে, যা দেশের পুষ্টি, অর্থনীতি ও গ্রামীণ জীবিকার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। প্রচলিত পদ্ধতিতে আংশিক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলেও বায়োটেকনোলজিভিত্তিক সমাধান যেমন ট্রান্সজেনিক প্রতিরোধী জাত বা CRISPR-ভিত্তিক জিন সম্পাদনা ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক। সাংস্কৃতিক, জৈবিক ও আধুনিক আণবিক পদ্ধতির সমন্বয়ে সমন্বিত রোগ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করাই টেকসই পেঁপে উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য।
[লেখক : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (শস্য), বিএআরসি, ঢাকা]
মাহফুজ আলম
বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫
পেঁপে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফল-ফসল, যা উচ্চ পুষ্টিমান, ঔষধি গুণাগুণ এবং সারা বছর সহজলভ্যতার কারণে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘এ’, ফলিক অ্যাসিড ও খাদ্য আঁশে সমৃদ্ধ পেঁপে মানুষের খাদ্য ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় বিশেষ অবদান রাখে, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে যেখানে এটি আঙিনায়ও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের পেঁপে চাষের উৎপাদনশীলতা ও লাভজনকতা নানা জীবাণুজনিত সমস্যার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার মধ্যে পেঁপের রিং স্পট ভাইরাস (PRSV) সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক।
এ ভাইরাসজনিত রোগ কেবল বাংলাদেশেই নয়, বরং বিশ্বব্যাপী উষ্ণ ও উপউষ্ণ অঞ্চলের পেঁপে উৎপাদনের জন্য গুরুতর হুমকি। PRSV হলো Potyviridae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত Potyvirus গণের সদস্য। এটি একটি RNA ভাইরাস যা মূলত এফিড (aphid) দ্বারা non-persistent পদ্ধতিতে ছড়ায়। এই ধরনের সংক্রমণে ভাইরাস স্থানান্তর খুব দ্রুত হয়, ফলে প্রচলিত কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনুকূল পরিবেশে সংবেদনশীল জাতসমূহে PRSV প্রাদুর্ভাব ৩০% থেকে ১০০% পর্যন্ত ফলন হ্রাস করতে পারে। বাংলাদেশের অনুকূল জলবায়ু ও মাটির অবস্থা সত্ত্বেও পেঁপে চাষ সম্প্রসারণে এই ভাইরাস অন্যতম প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
PRSV-এর ইতিহাস
PRSV প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৪০-এর দশকের গোড়ায় হাওয়াইতে। পরবর্তীতে এটি ভারত, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ব্রাজিলসহ বিশ্বের সব প্রধান পেঁপে উৎপাদনকারী দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটির দুটি প্রধান রূপ রয়েছে PRSV-P, যা পেঁপে ও কুকুর্বিট জাতীয় ফসল (যেমন কুমড়া, শসা, স্কোয়াশ) উভয়কেই সংক্রমিত করে এবং PRSV-P, যা শুধু কুকুর্বিট জাতীয় ফসল আক্রমণ করে। বাংলাদেশে PRSV-P ই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, যা পেঁপে চাষে ভয়াবহ ক্ষতির জন্য দায়ী।
বিশ্বব্যাপী PRSV-এর ক্ষতির গুরুত্ব বোঝা যায় ১৯৯০-এর দশকে হাওয়াইয়ের পেঁপে শিল্পের প্রায় ধ্বংসযজ্ঞ থেকে। সেখানে জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড (GM) প্রতিরোধী জাত ‘Rainbow’ ও ‘SunUp’ চালু না হলে পুরো শিল্প প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। এ অভিজ্ঞতা দেখায়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেমন বাংলাদেশে যেখানে বায়োটেকনোলজি গ্রহণ এখনও সীমিত দ্রুত ও টেকসই ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন কতটা জরুরি।
সংক্রমণ ও রোগ বিস্তার
PRSV প্রধানত বিভিন্ন প্রজাতির এফিড যেমন Aphis gossypii ও Myzus persicae দ্বারা ছড়ায়।
এফিড আক্রান্ত গাছে সামান্য সময়ের জন্য খাবার গ্রহণ করলেই ভাইরাস গ্রহণ করতে পারে এবং মুহূর্তের মধ্যে সুস্থ গাছে তা স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়। এই non-persistent প্রকৃতির কারণে কীটনাশক ব্যবহার করেও ভাইরাস সংক্রমণ রোধ প্রায় অসম্ভব, কারণ কীটনাশক কাজ করার আগেই সংক্রমণ হয়ে যায়। ভাইরাসটি যান্ত্রিক উপায়েও (contaminated tools, শ্রমিকের হাত, মাঠে কাজের সময়) ছড়াতে পারে। এছাড়া একই জমিতে বারবার পেঁপে বা কুকুর্বিট চাষ এবং ফসল পর্যায়ক্রম না মানা PRSV-এর পরিমাণ ও স্থায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়।
অর্থনৈতিক প্রভাব
বাংলাদেশে চPRSV-এর অর্থনৈতিক প্রভাব অত্যন্ত গুরুতর। সংক্রমণের মাত্রা ও ফসলের বয়সভেদে ফলন হ্রাস ৩০% থেকে ১০০% পর্যন্ত হতে পারে। কৃষকেরা ফলনের ঘাটতির পাশাপাশি পুনঃরোপণ, বারবার কীটনাশক প্রয়োগ (যা অনেক ক্ষেত্রেই অকার্যকর) এবং বাজারে নিম্নমানের ফল বিক্রির কারণে আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। ক্ষতির সামাজিক প্রভাবও রয়েছে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের জন্য, যারা পেঁপে চাষের ওপর নির্ভরশীল। অনেক সময় পেঁপের রিং স্পট ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে কৃষকেরা পুরোপুরি পেঁপে চাষ ছেড়ে দেন, যার ফলে ফসল বৈচিত্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে।
রোগের উপসর্গ
PRSV সংক্রমণে সাধারণত তিন ধরনের উপসর্গ দেখা যায় :
১. পাতায়:
হলদেটে ও মোজাইক দাগ: পাতায় অনিয়মিত হলুদ দাগ তৈরি হয়। পাতার বিকৃতি: পাতা কুঁকড়ে যাওয়া, পাকানো বা খাটো হয়ে যাওয়া। শিরা স্বচ্ছতা: পাতার শিরা অন্যান্য অংশের তুলনায় হালকা দেখা যায়।
২. ফলে:
রিং স্পট : ফলে পানিভেজা বৃত্তাকার দাগ। বিকৃত আকার : ফল ছোট, বাঁকা এবং বাজার অযোগ্য হয়ে যায়। মিষ্টত্ব হ্রাস : শর্করার পরিমাণ কমে গিয়ে স্বাদ নষ্ট হয়।
৩. কা-ে :
গাঢ় দাগ : লম্বা নেক্রোটিক দাগ। বৃদ্ধি ব্যাহত: গাছ স্বাভাবিকের তুলনায় ধীরে বাড়ে। অনেক সময় প্রাথমিক লক্ষণগুলো কৃষকেরা পুষ্টি ঘাটতি হিসেবে ভুল করেন, ফলে সঠিক নির্ণয় ও ব্যবস্থা নিতে দেরি হয়।
নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
১. সাংস্কৃতিক পদ্ধতি
রোগগ্রস্ত গাছ তুলে ধ্বংস করা (Rogueing)। বিকল্প পোষক উদ্ভিদ দমন। ফসল পর্যায়ক্রম : একই জমিতে বারবার পেঁপে বা কুমড়া জাতীয় গাছ না লাগানো।
২. রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ
এফিড দমন : ইমিডাক্লোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করে এফিড সংখ্যা কমানো।
৩. জৈবিক নিয়ন্ত্রণ
উপকারী পোকা : লেডিবাগ ও লেসউইং এফিড খায়। উদ্ভিদ নির্যাস: নিমতেল প্রাকৃতিক এফিড প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
৪. প্রতিরোধী জাত
জেনেটিক্যালি মডিফায়েড জাত : যেমন হাওয়াইয়ের ‘Rainbow’ জাত PRSV প্রতিরোধী, তবে বাংলাদেশে এখনও অনুমোদিত নয়। প্রচলিত প্রজনন: ইঅজও স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনের জন্য কাজ করছে।
৫. কৃষক সচেতনতা
রোগমুক্ত চারা ব্যবহারের প্রচার।
উপসংহার
২০২৫ মৌসুমে বাংলাদেশে PRSV পেঁপে উৎপাদনে মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে, যা দেশের পুষ্টি, অর্থনীতি ও গ্রামীণ জীবিকার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। প্রচলিত পদ্ধতিতে আংশিক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলেও বায়োটেকনোলজিভিত্তিক সমাধান যেমন ট্রান্সজেনিক প্রতিরোধী জাত বা CRISPR-ভিত্তিক জিন সম্পাদনা ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক। সাংস্কৃতিক, জৈবিক ও আধুনিক আণবিক পদ্ধতির সমন্বয়ে সমন্বিত রোগ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করাই টেকসই পেঁপে উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য।
[লেখক : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (শস্য), বিএআরসি, ঢাকা]