alt

উপ-সম্পাদকীয়

ডিজিটাল শিক্ষার নতুন দিগন্ত

মোস্তাফা জব্বার

: মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০২১

কারও পক্ষে বিশ্বাস করাও কঠিন হবে যে দুই দশক আগে ২০০০ সালে বাংলাদেশে শিক্ষার ডিজিটাল যাত্রার সূচনা হয়েছে, আর তার দুই দশক পর বাংলাদেশ একটি নতুন দিগন্তে পা রেখেছে। অথচ দুই দশক আগে প্রয়াত বিজ্ঞানী ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী ও তার স্ত্রী সেলিনা মল্লিকের হাত ধরে শুরু হয় পথচলা। সেদিন কেউ ভাবতে পারেনি যে শিশুরা কম্পিউটার দিয়ে লেখাপড়া করতে পারে। কেউ কেউ ভাবতেন কম্পিউটার শেখা যায়-কিন্তু কম্পিউটার লেখাপড়ার যন্ত্র বা শিক্ষা উপকরণ হতে পারে সেটি কেউ কল্পনাও করতে পারত না। আমি শুধু জামিলুর রেজা স্যারকে এটি বিশ্বাস করাতে পেরেছিলাম ও তিনি সন্ত্রীক গাজীপুর গিয়ে স্কুলটির উদ্বোধন করেছিলেন। দুই দশক পর স্যারের দূরদর্শিতার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া গেল।

৭ জানুয়ারি ২০২১ বাংলা দেশের শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে এক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। ঐদিন প্রকাশিত সরকারি তথ্য বিবরণী থেকে তুলে ধরছি। ‘এইদিন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের টেলিকম অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাঝে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শুরু হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেসন প্রক্রিয়া। বিটিআরসির সার্ভিস অবলিগেসন তহবিলের অর্থায়নে হাওর, প্রত্যন্ত, অনগ্রসর ও দুর্গম এলাকার ৬৫০টি স্কুলে এই প্রকল্প দুই বছরের মাঝে বাস্তবায়িত হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব ক্লাসরুম ডিজিটাল হবে। এর মধ্যে ৩০টি স্কুলে শিশুরা বইবিহীন বা অনলাইনে ট্যাবে লেখাপড়া করতে পারবে। তাদের ক্লাসে ডিজিটাল টিভি, আইপিএস ও ইন্টারনেট থাকবে। তাদের ২০২০ সালে ইনটেলের সঙ্গে উইটসা পুরস্কার প্রাপ্ত ডিজিটাল কনটেন্ট দিয়ে পাঠদান করা হবে। ডিভাইস ও ইন্টারনেট থাকলে শিশুরা বাড়িতে বসে এবং অনলাইনেও ক্লাস করতে পারবে।

বেসরকারিভাবে ২০০০ ও ২০১৫ সালে এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা দেশে চালু হলেও সরকারিভাবে কোন প্রকল্প গ্রহণ করে পাঠ্য বিষয়ের সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেসন করে ডিজিটাল যন্ত্রের সহায়তায় প্রাথমিক শিক্ষার সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেসন এই প্রথম।

বৃহস্পতিবার ৭ জানুয়ারি সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের উপস্থিতিতে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার অনলাইনে চুক্তি অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব-গোলাম মো. হাসিবুল আলম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএম মনসুরুল আলম এবং টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহসীনুল আলম বক্তৃতা করেন।

টেলিযোগাযোগমন্ত্রী শিশু বয়সকে সৃজনশীলতা ও মেধা অর্জনের সঠিক সময় উল্লেখ করে বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে বইয়ের পরিবর্তে একদিন ট্যাব বা ডিজিটাল ডিভাইস পৌঁছে যাবে এবং সেদিন খুবই কাছে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে শতকরা ৮৮ ভাগ শিশুর হাতে ট্যাব আছে। তাদের বইয়ের দিকে তাকাতে হয় না। প্রাথমিক শিক্ষা ডিজিটাল রূপান্তরের পথিকৃৎ বর্তমান নিবন্ধের লেখক মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তনে সামান্য ফল দেবে কিন্তু প্রাথমিকের ডিজিটাল রূপান্তরে শতভাগ ফল পাওয়া সম্ভব।’ ১৯৮৭ সালে কম্পিউটারে বাংলা ভাষা প্রবর্তনের পাশাপাশি কম্পিউটারে প্রাথমিক শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ৮৭ সালে ৩২টি কেন্দ্র থেকে ডিজিটাল শিক্ষার জন্য ডিজিটাল সফটওয়্যার নিয়ে কাজ শুরু করলেও বাংলার উপযোগী ডিজিটাল সফটওয়্যার তৈরি তখন সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, ‘১৯৯৯ সালে আমি উপলব্ধি করি এই বিষয়টির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া দরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গাজীপুরে সেই বছর ১৩ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে ২০০০ সাল থেকে দেশের প্রথম ডিজিটাল স্কুল নিয়ে যাত্রা শুরু করি। ‘অল্প দিনের মধ্যেই তিনি শিক্ষার্থীদের দক্ষতায় মুগ্ধ হলেন উল্লেখ করে বলেন, বাচ্চাদের হাতে পাঠ্য বিষয়টি বাংলায় কন্টেন্ট করে দেয়ার প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় হলিক্রসের ইংরেজি শিক্ষক জেসমিন জুঁইয়ের মাধ্যমে ২০১০ সালে তা সফলতায় রূপ নেয় এবং বর্তমানে প্রাক প্রাথমিকের তিনটি ও প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটিসহ মোট আটটি কনটেন্ট প্রাথমিক শিক্ষার ডিজিটালাইজেশনের যাত্রায় মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কোভিডকালে বিনা মাশুলে ডাউনলোড করে দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী বাড়িতে বসে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে এক বছরের পাঠ্যক্রম অনায়াসে এক মাসে সম্পন্ন করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মন্ত্রী ডিজিটাল শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষার মূলস্রোতধারায় সংযুক্ত করতে ২০১৫ সাল থেকে তার গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে আইসিটি বিভাগ থেকে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও নানা প্রতিকূলতায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। দুর্গম অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত অসহায় শিশুদের জন্য সামাজিক দায়বদ্ধ তহবিলের মাধ্যমে গৃহীত উদ্যোগ শিক্ষার রূপান্তরের একটি ঐতিহাসিক মাইল ফলক বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। এর ফলে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর এগিয়ে নেয়ার পথে পরবর্তী করণীয় ও প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে যা শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখবে। মন্ত্রী শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিজিটাল শিক্ষা প্রবর্তনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, করোনাকালে অচল জীবনধারা সচল রাখার পাশাপাশি ঘরে বসে শিশুরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণ ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার বড় দৃষ্টান্ত। ডিজিটাল শিক্ষা বিস্তারে আমরা পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চাই।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব বলেন, শিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরে যাত্রা শুরু হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এই যাত্রার সাথী হতে পেরে আমরা আনন্দিত।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, শিক্ষার ডিজিটার রূপান্তরে পথ ধরেই সোনার মানুষ গড়ে উঠবে উল্লেখ করে বলেন, আগামী দিনের উপযোগী মানব সম্পদ গড়ে তুলতে ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার বিকল্প নেই।

পরে প্রাথমিক অধিদপ্তর ও টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকদ্ধয় নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী সুবিধা বঞ্চিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৬৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা ডিজিটালকরণ যাত্রা শুরু হবে। টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।’ বাংলাদেশ সরকার শিক্ষার ডিজিটাইজেনের জন্য একটি প্রকল্প তাও মাত্র ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে এতে আমার এত উল্লাস কেন? একটি বাক্যে বললে বলা হবে, এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের একটি দৃষ্টান্ত পাবে। দ্বিতীয়ত এই প্রকল্প শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের নতুন নতুন পথ পাবে। আমি নিজেই ভাবছি যে প্রকল্পটি গ্রহণ করলাম তার চাইতে লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষাকে ডিজিটাল করা যায় কিনা। আশা করি সহসাই এই পথেও সফলতা পাব।

একটি ছোট্ট ঘটনায় এতো বড় উল্লাসের একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে। আজকে হয়তো সেই ইতিহাস লিখতে পারব না তবে প্রকাশ তো করবোই।

১৯৮৭ সালের ২৮ এপ্রিল যখন প্রথম কম্পিউটারের বোতাম স্পর্শ করি তখন কম্পিউটার চেনা তো দূরের কথা এর কিছুই জানা ছিল না আমার। আমার বিবেচনায় জানার দরকারও ছিল না। তখনকার দিনে বড় বড় কম্পিউটার ব্যবহৃত হতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানে। এগুলো ব্যবহার করতেন কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা। তখন মেকিন্টোস নামের এক ধরনের কম্পিউটার ডেস্কটপ প্রকাশনার জন্য ব্যবহৃত হতো। অন্যদিকে আইবিএম পিসি প্রধানত ওয়ার্ড স্টার লোটাস ডিবেসের জন্য ব্যবহৃত হতো। আমার নিজের প্রয়োজনেই আমি মেকিন্টোস স্পর্শ করি। কারণল মেকিন্টোসই একমাত্র বাংলা ভাষা লিখতে পারত। শ্রদ্ধেয় সাইফুদ্দাহার শহীদ ভাই ৮৬ সালে শহীদ লিপি প্রচলন করেছিলেন। আশেকুর রহমান সাহেবের বিইএসএল কোলকাতার রাহুল কমার্সর বাংলা ফন্ট দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও আমি হাফিজ ভাইয়ের স্নেহের সুযোগে রাহুল কমার্সের পন্টকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র সৈয়দ মাইনুল হাসানের বদৌলতে মাইনুল লিপিতে রূপান্তরিত করাতে পারি। সেই সূত্র ধরে অ্যাপল কম্পিউটারের শিক্ষামূলক সফটওয়্যারের সঙ্গে পরিচিত হই। এর মূল কারণ ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যাপলের শিক্ষামূলক সফটওয়্যার ব্যবহার করত আর আমরা তাদের মেরামতি সেবা দিতাম।

বাংলাদেশে তখন কম্পিউটার শেখার হুজুগ ছিলো। আমিও সংবাদপত্রে বাংলা ভাষা প্রচলনের জন্য মেকিন্টোস কম্পিউটারে ডিটিপির প্রশিক্ষণ দিতে থাকি। তবে ৯৭ সালে আমারিকার সানফ্রান্সিসকোতে ম্যাকওয়ার্ল্ড মেলায় যোগ দিয়ে ফেরার পথে চার বছরের ছেলে বিজয়ের জন্য মেকিন্টোস কম্পিউটারের জন্য তৈরি করা কিছু শিক্ষামূলক ডিজিটাল সফটওয়্যার কিনে আনি। মাত্র ৫০ ডলারে কেনা সেই সফটওয়্যার ছেলে বিজয়ের হাতে দেবার পর অনুভব করি এটি এক সোনার খনি। এরপর ৯৯ সালে গাজীপুরে কম্পিউটারভিত্তিক আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল খুলি পরের দুই বছরে দেশব্যাপী ৩২টি স্কুলের জন্ম হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় এর কনটেন্ট নিয়ে। কম্পিউটারের যন্ত্রপাতি বাজারে পাওয়া যায়-কিন্তু সেই কম্পিউটারে পড়ানোর জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট যার ভাষা বাংলা ও বাংলাদেশে পাঠ্য তা পাওয়া যায় না। ২০০০ সালের পর সারা দেশব্যাপী বিরাজ করা আনন্দ মাল্টিমিডিয়া নাম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেই সফটওয়্যার তৈরি করা শুরু করলাম। কয়েকটি সফটওয়্যার তৈরিও হলো। কিন্তু আমার পছন্দ হলো না।

পরিশেষে বিজয় ডিজিটাল নামক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে তার দায়িত্ব কলেজ শিক্ষিকা জেসমিন জুঁইকে প্রদান করি। জুই বিজয় শিশু শিক্ষা নামে প্রথম সফটওয়্যার উপহার ছিল ২০১০ সালে। এরপর সেটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োগের চেষ্টা করলাম ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ পূর্বধলায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ একটি ক্লাসের সব ছাত্রছাত্রীদের হাতে ট্যাব দিতে পারলাম-কনটেন্ট দিতে পারলাম। ওরা ১ মাসে পুরো বছুরের সিলেবাস শেষ করে ফেলল? ছাত্রছাত্রীরা অবাক হবে কি, শিক্ষিকা, স্কুল প্রশাসন তো বটেই আমি ও বিজয় ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী জেসমিন বিস্মিত হলাম। এটি আমাদের কল্পনার বাইরের বিষয় ছিল।

হঠাৎ করেই আমার মনে হলে শিক্ষার ডিজিটাইজেসনে আরও একটি প্রকল্প আমার হাতে আছে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আমি আমাদের সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির মাধ্যমে আরও ৫০টি প্রাথমিক স্কুল ডিজিটাল করব। এবার প্রযুক্তিগত দিক থেকে এক পা এগিয়ে থাকব। ডটের গৃহীত প্রকল্পে আমরা ল্যাপটপ ও ট্যাব ব্যবহার করব। সাবমেরিনের প্রকল্প ল্যাপটপ বা ট্যাব নয় কেবল এন্ড্রয়েড টিভি আর বিজয় ডিজিটালের এন্ড্রয়েড সংস্করণের ডিজিটাল কনটেন্ট দেবো। এর ফলে শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ ব্যয় কম যাবে ডিজিটাল ক্লাসরুম গড়ে তুলতে।

আমি বিশ্বাস করি আমরা যারা বাংলাদেশকে ডিজিটাল করার জন্য এমন সব লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি তখন আমাদের শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর ঠেকায় কে? কোথায় প্রজেক্টর, ইন্টারএ্যাকটিভ বোর্ড আর কোথায় কেবল একটা এন্ড্রয়েড টিভি। আমাদের মতো আর কেউ ভাববে বিশ্বাসই করি না।

ঢাকা, প্রথম লেখা : ২২ জানুয়ারি, ২০১৫। আপডেট : ১১ জানুয়ারি, ২০২০।

[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যারের প্রণেতা]

mustafajabbar@gmail.com

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ডিজিটাল শিক্ষার নতুন দিগন্ত

মোস্তাফা জব্বার

মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০২১

কারও পক্ষে বিশ্বাস করাও কঠিন হবে যে দুই দশক আগে ২০০০ সালে বাংলাদেশে শিক্ষার ডিজিটাল যাত্রার সূচনা হয়েছে, আর তার দুই দশক পর বাংলাদেশ একটি নতুন দিগন্তে পা রেখেছে। অথচ দুই দশক আগে প্রয়াত বিজ্ঞানী ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী ও তার স্ত্রী সেলিনা মল্লিকের হাত ধরে শুরু হয় পথচলা। সেদিন কেউ ভাবতে পারেনি যে শিশুরা কম্পিউটার দিয়ে লেখাপড়া করতে পারে। কেউ কেউ ভাবতেন কম্পিউটার শেখা যায়-কিন্তু কম্পিউটার লেখাপড়ার যন্ত্র বা শিক্ষা উপকরণ হতে পারে সেটি কেউ কল্পনাও করতে পারত না। আমি শুধু জামিলুর রেজা স্যারকে এটি বিশ্বাস করাতে পেরেছিলাম ও তিনি সন্ত্রীক গাজীপুর গিয়ে স্কুলটির উদ্বোধন করেছিলেন। দুই দশক পর স্যারের দূরদর্শিতার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া গেল।

৭ জানুয়ারি ২০২১ বাংলা দেশের শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে এক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। ঐদিন প্রকাশিত সরকারি তথ্য বিবরণী থেকে তুলে ধরছি। ‘এইদিন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের টেলিকম অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাঝে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শুরু হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেসন প্রক্রিয়া। বিটিআরসির সার্ভিস অবলিগেসন তহবিলের অর্থায়নে হাওর, প্রত্যন্ত, অনগ্রসর ও দুর্গম এলাকার ৬৫০টি স্কুলে এই প্রকল্প দুই বছরের মাঝে বাস্তবায়িত হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব ক্লাসরুম ডিজিটাল হবে। এর মধ্যে ৩০টি স্কুলে শিশুরা বইবিহীন বা অনলাইনে ট্যাবে লেখাপড়া করতে পারবে। তাদের ক্লাসে ডিজিটাল টিভি, আইপিএস ও ইন্টারনেট থাকবে। তাদের ২০২০ সালে ইনটেলের সঙ্গে উইটসা পুরস্কার প্রাপ্ত ডিজিটাল কনটেন্ট দিয়ে পাঠদান করা হবে। ডিভাইস ও ইন্টারনেট থাকলে শিশুরা বাড়িতে বসে এবং অনলাইনেও ক্লাস করতে পারবে।

বেসরকারিভাবে ২০০০ ও ২০১৫ সালে এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা দেশে চালু হলেও সরকারিভাবে কোন প্রকল্প গ্রহণ করে পাঠ্য বিষয়ের সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেসন করে ডিজিটাল যন্ত্রের সহায়তায় প্রাথমিক শিক্ষার সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেসন এই প্রথম।

বৃহস্পতিবার ৭ জানুয়ারি সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের উপস্থিতিতে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার অনলাইনে চুক্তি অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব-গোলাম মো. হাসিবুল আলম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএম মনসুরুল আলম এবং টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহসীনুল আলম বক্তৃতা করেন।

টেলিযোগাযোগমন্ত্রী শিশু বয়সকে সৃজনশীলতা ও মেধা অর্জনের সঠিক সময় উল্লেখ করে বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে বইয়ের পরিবর্তে একদিন ট্যাব বা ডিজিটাল ডিভাইস পৌঁছে যাবে এবং সেদিন খুবই কাছে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে শতকরা ৮৮ ভাগ শিশুর হাতে ট্যাব আছে। তাদের বইয়ের দিকে তাকাতে হয় না। প্রাথমিক শিক্ষা ডিজিটাল রূপান্তরের পথিকৃৎ বর্তমান নিবন্ধের লেখক মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তনে সামান্য ফল দেবে কিন্তু প্রাথমিকের ডিজিটাল রূপান্তরে শতভাগ ফল পাওয়া সম্ভব।’ ১৯৮৭ সালে কম্পিউটারে বাংলা ভাষা প্রবর্তনের পাশাপাশি কম্পিউটারে প্রাথমিক শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ৮৭ সালে ৩২টি কেন্দ্র থেকে ডিজিটাল শিক্ষার জন্য ডিজিটাল সফটওয়্যার নিয়ে কাজ শুরু করলেও বাংলার উপযোগী ডিজিটাল সফটওয়্যার তৈরি তখন সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, ‘১৯৯৯ সালে আমি উপলব্ধি করি এই বিষয়টির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া দরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গাজীপুরে সেই বছর ১৩ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে ২০০০ সাল থেকে দেশের প্রথম ডিজিটাল স্কুল নিয়ে যাত্রা শুরু করি। ‘অল্প দিনের মধ্যেই তিনি শিক্ষার্থীদের দক্ষতায় মুগ্ধ হলেন উল্লেখ করে বলেন, বাচ্চাদের হাতে পাঠ্য বিষয়টি বাংলায় কন্টেন্ট করে দেয়ার প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় হলিক্রসের ইংরেজি শিক্ষক জেসমিন জুঁইয়ের মাধ্যমে ২০১০ সালে তা সফলতায় রূপ নেয় এবং বর্তমানে প্রাক প্রাথমিকের তিনটি ও প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটিসহ মোট আটটি কনটেন্ট প্রাথমিক শিক্ষার ডিজিটালাইজেশনের যাত্রায় মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কোভিডকালে বিনা মাশুলে ডাউনলোড করে দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী বাড়িতে বসে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে এক বছরের পাঠ্যক্রম অনায়াসে এক মাসে সম্পন্ন করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মন্ত্রী ডিজিটাল শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষার মূলস্রোতধারায় সংযুক্ত করতে ২০১৫ সাল থেকে তার গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে আইসিটি বিভাগ থেকে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও নানা প্রতিকূলতায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। দুর্গম অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত অসহায় শিশুদের জন্য সামাজিক দায়বদ্ধ তহবিলের মাধ্যমে গৃহীত উদ্যোগ শিক্ষার রূপান্তরের একটি ঐতিহাসিক মাইল ফলক বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। এর ফলে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর এগিয়ে নেয়ার পথে পরবর্তী করণীয় ও প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে যা শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রাখবে। মন্ত্রী শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিজিটাল শিক্ষা প্রবর্তনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, করোনাকালে অচল জীবনধারা সচল রাখার পাশাপাশি ঘরে বসে শিশুরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণ ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার বড় দৃষ্টান্ত। ডিজিটাল শিক্ষা বিস্তারে আমরা পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চাই।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব বলেন, শিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরে যাত্রা শুরু হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এই যাত্রার সাথী হতে পেরে আমরা আনন্দিত।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, শিক্ষার ডিজিটার রূপান্তরে পথ ধরেই সোনার মানুষ গড়ে উঠবে উল্লেখ করে বলেন, আগামী দিনের উপযোগী মানব সম্পদ গড়ে তুলতে ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার বিকল্প নেই।

পরে প্রাথমিক অধিদপ্তর ও টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকদ্ধয় নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী সুবিধা বঞ্চিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৬৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা ডিজিটালকরণ যাত্রা শুরু হবে। টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।’ বাংলাদেশ সরকার শিক্ষার ডিজিটাইজেনের জন্য একটি প্রকল্প তাও মাত্র ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে এতে আমার এত উল্লাস কেন? একটি বাক্যে বললে বলা হবে, এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের একটি দৃষ্টান্ত পাবে। দ্বিতীয়ত এই প্রকল্প শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের নতুন নতুন পথ পাবে। আমি নিজেই ভাবছি যে প্রকল্পটি গ্রহণ করলাম তার চাইতে লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষাকে ডিজিটাল করা যায় কিনা। আশা করি সহসাই এই পথেও সফলতা পাব।

একটি ছোট্ট ঘটনায় এতো বড় উল্লাসের একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে। আজকে হয়তো সেই ইতিহাস লিখতে পারব না তবে প্রকাশ তো করবোই।

১৯৮৭ সালের ২৮ এপ্রিল যখন প্রথম কম্পিউটারের বোতাম স্পর্শ করি তখন কম্পিউটার চেনা তো দূরের কথা এর কিছুই জানা ছিল না আমার। আমার বিবেচনায় জানার দরকারও ছিল না। তখনকার দিনে বড় বড় কম্পিউটার ব্যবহৃত হতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানে। এগুলো ব্যবহার করতেন কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা। তখন মেকিন্টোস নামের এক ধরনের কম্পিউটার ডেস্কটপ প্রকাশনার জন্য ব্যবহৃত হতো। অন্যদিকে আইবিএম পিসি প্রধানত ওয়ার্ড স্টার লোটাস ডিবেসের জন্য ব্যবহৃত হতো। আমার নিজের প্রয়োজনেই আমি মেকিন্টোস স্পর্শ করি। কারণল মেকিন্টোসই একমাত্র বাংলা ভাষা লিখতে পারত। শ্রদ্ধেয় সাইফুদ্দাহার শহীদ ভাই ৮৬ সালে শহীদ লিপি প্রচলন করেছিলেন। আশেকুর রহমান সাহেবের বিইএসএল কোলকাতার রাহুল কমার্সর বাংলা ফন্ট দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও আমি হাফিজ ভাইয়ের স্নেহের সুযোগে রাহুল কমার্সের পন্টকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র সৈয়দ মাইনুল হাসানের বদৌলতে মাইনুল লিপিতে রূপান্তরিত করাতে পারি। সেই সূত্র ধরে অ্যাপল কম্পিউটারের শিক্ষামূলক সফটওয়্যারের সঙ্গে পরিচিত হই। এর মূল কারণ ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যাপলের শিক্ষামূলক সফটওয়্যার ব্যবহার করত আর আমরা তাদের মেরামতি সেবা দিতাম।

বাংলাদেশে তখন কম্পিউটার শেখার হুজুগ ছিলো। আমিও সংবাদপত্রে বাংলা ভাষা প্রচলনের জন্য মেকিন্টোস কম্পিউটারে ডিটিপির প্রশিক্ষণ দিতে থাকি। তবে ৯৭ সালে আমারিকার সানফ্রান্সিসকোতে ম্যাকওয়ার্ল্ড মেলায় যোগ দিয়ে ফেরার পথে চার বছরের ছেলে বিজয়ের জন্য মেকিন্টোস কম্পিউটারের জন্য তৈরি করা কিছু শিক্ষামূলক ডিজিটাল সফটওয়্যার কিনে আনি। মাত্র ৫০ ডলারে কেনা সেই সফটওয়্যার ছেলে বিজয়ের হাতে দেবার পর অনুভব করি এটি এক সোনার খনি। এরপর ৯৯ সালে গাজীপুরে কম্পিউটারভিত্তিক আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল খুলি পরের দুই বছরে দেশব্যাপী ৩২টি স্কুলের জন্ম হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় এর কনটেন্ট নিয়ে। কম্পিউটারের যন্ত্রপাতি বাজারে পাওয়া যায়-কিন্তু সেই কম্পিউটারে পড়ানোর জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট যার ভাষা বাংলা ও বাংলাদেশে পাঠ্য তা পাওয়া যায় না। ২০০০ সালের পর সারা দেশব্যাপী বিরাজ করা আনন্দ মাল্টিমিডিয়া নাম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেই সফটওয়্যার তৈরি করা শুরু করলাম। কয়েকটি সফটওয়্যার তৈরিও হলো। কিন্তু আমার পছন্দ হলো না।

পরিশেষে বিজয় ডিজিটাল নামক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে তার দায়িত্ব কলেজ শিক্ষিকা জেসমিন জুঁইকে প্রদান করি। জুই বিজয় শিশু শিক্ষা নামে প্রথম সফটওয়্যার উপহার ছিল ২০১০ সালে। এরপর সেটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োগের চেষ্টা করলাম ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ পূর্বধলায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ একটি ক্লাসের সব ছাত্রছাত্রীদের হাতে ট্যাব দিতে পারলাম-কনটেন্ট দিতে পারলাম। ওরা ১ মাসে পুরো বছুরের সিলেবাস শেষ করে ফেলল? ছাত্রছাত্রীরা অবাক হবে কি, শিক্ষিকা, স্কুল প্রশাসন তো বটেই আমি ও বিজয় ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী জেসমিন বিস্মিত হলাম। এটি আমাদের কল্পনার বাইরের বিষয় ছিল।

হঠাৎ করেই আমার মনে হলে শিক্ষার ডিজিটাইজেসনে আরও একটি প্রকল্প আমার হাতে আছে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আমি আমাদের সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির মাধ্যমে আরও ৫০টি প্রাথমিক স্কুল ডিজিটাল করব। এবার প্রযুক্তিগত দিক থেকে এক পা এগিয়ে থাকব। ডটের গৃহীত প্রকল্পে আমরা ল্যাপটপ ও ট্যাব ব্যবহার করব। সাবমেরিনের প্রকল্প ল্যাপটপ বা ট্যাব নয় কেবল এন্ড্রয়েড টিভি আর বিজয় ডিজিটালের এন্ড্রয়েড সংস্করণের ডিজিটাল কনটেন্ট দেবো। এর ফলে শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ ব্যয় কম যাবে ডিজিটাল ক্লাসরুম গড়ে তুলতে।

আমি বিশ্বাস করি আমরা যারা বাংলাদেশকে ডিজিটাল করার জন্য এমন সব লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি তখন আমাদের শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর ঠেকায় কে? কোথায় প্রজেক্টর, ইন্টারএ্যাকটিভ বোর্ড আর কোথায় কেবল একটা এন্ড্রয়েড টিভি। আমাদের মতো আর কেউ ভাববে বিশ্বাসই করি না।

ঢাকা, প্রথম লেখা : ২২ জানুয়ারি, ২০১৫। আপডেট : ১১ জানুয়ারি, ২০২০।

[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যারের প্রণেতা]

mustafajabbar@gmail.com

back to top