alt

উপ-সম্পাদকীয়

ডায়ানার সাক্ষাৎকার বিতর্ক : ঘটনা ও তদন্ত

জন ওয়্যার

: বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১

(গতকালের পর)

আর্ল স্পেন্সারের সঙ্গে বশিরের যোগাযোগ

বশিরের পরিকল্পনার মধ্যে প্রথমে ছিল ডায়ানার ভাই আর্ল স্পেন্সারকে বিশ্বাস করানো যে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে, যা তিনি চার্লস ও ডায়ানার কাছের মানুষদের কাছ থেকে এবং উচ্চপর্যায়ের লোকজনের কাছ থেকে জেনেছেন।

১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট স্পেন্সারের সহকারীকে ফোন করে বশির বলেন কোন সাক্ষাৎকার বা তথ্য নয়, শুধু ১৫ মিনিটের জন্য স্পেন্সারের সঙ্গে কথা বলতে চান তিনি। এরপর তিনি তাদের একটি চিঠি পাঠান। এতে তিনি লেখেন গত তিন মাস ধরে তিনি গণমাধ্যমের আচরণ লক্ষ করছেন এবং অনুসন্ধানে স্পেন্সারের পরিবারের ব্যাপারে তাদের অতি আগ্রহের বিষয়ে অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন। যদিও এই তিন মাস বশির আসলে প্যানারোমার অনুষ্ঠান নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন।

বশিরের ভাবখানা এমন ছিল যে তিনি নিজেও সংবাদামাধ্যমের বিরুদ্ধে লড়ছেন। যদিবা স্পেন্সারেরা তার প্রস্তাব লুফৈ নেয় সেই হিসেব থেকেই তিনি তাদের বলেন যে তার কাছে এমন কিছু তথ্য আছে যেগুলোর বিষয়ে তারা আগ্রহী হতে পারেন। চিঠির কোন উত্তর না পেয়ে বশির আবার তাদের ২৯ আগস্ট কল করেন। তখন ডায়ানার ভাই তাকে বলেন ৬টার সময় তাদের দেখা হতে পারে।

স্পেন্সারের কাছ থেকে হঠাৎ করে এমন সাড়া পাওয়ায় নিশ্চয়ই অবাক হয়েছিলেন বশির। ডায়ানার সঙ্গে দেখার করার সুযোগ পেতে স্পেন্সারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতেই কিনা বশির বানিয়ে বানিয়ে বলেন, আপনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনীর সাবেক প্রধান সাবেক সেনাসদস্য অ্যালান ওয়ালারকে ধনকুবের রুপার্ড মারডকের নিউজ ইন্টারন্যাশনাল এবং গোয়ন্দাসংস্থাগুলো নিয়মিত পয়সা দিচ্ছে আপনাদের পরিবারের তথ্য দেয়ার জন্য। এ বিষয়ে স্পেন্সারকে প্রমাণাদি দেখানোর কথাও বলেন বশির। ওই মিটিংয়ে দেখাতে পারেননি, কারণ তখনো তা তৈরি হয়নি।

সেই তথ্য প্রমাণ ঠিক কবে বশির তৈরি করেছিলেন তা নিশ্চিত হতে পারেননি ডাইসন। তবে বিবিসির নিজস্ব অনুসন্ধানে দেখা গেছে স্পেন্সারের সঙ্গে সাক্ষাতের পরপরই বশির তৈরি করেছিলেন সেই তথ্যপ্রমাণ। সেই সাক্ষাতে স্পেন্সার সম্মত হন আলাপ চলতে পারে। তাদের পরবর্তী সাক্ষাতের তারিখ ধার্য হয় আলথর্পে। দুদিন পরে, অর্থাৎ ৩১ আগস্ট সাড়ে ১১টায়।

ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট

সেই তথ্যপ্রমাণের জন্য মার্টিন বশির যোগাযোগ করেন তার এক সাবেক সহকর্মী ম্যাট উইসলারেরর সঙ্গে। উইসলারকে বশির বলেন, হাতে যা কাজকর্ম আছে তা রেখে দিতে। কেননা তার কাজটা করতে হবে আগে। হাতে সময় নেই। তবে বশির তাকে এ বিষয়ে প্রথম কবে ফোন দিয়েছিলেন তা মনে করতে পারেননি। শুধু বলেছেন, সময়টা আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি হবে।

উইসলারের ব্যবসায়িক অংশীদার বিবিসিকে জানান এটা নটিং হিলস কার্নিভালের কাছাকাছি সময় হবে। ওই কার্নিভাল শেষ হয় ২৮ তারিখে।

তিনি জানান বশির কাজটির জন্য প্রথম তার সঙ্গেই যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু এক রাতের মধ্যেই করতে হবে বলে রাজি হননি উইলারের ওই ব্যবসায়িক অংশীদার। তিনিই বশিরকে উইসলারের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলেন।

উইসলার ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার দুজনেই পরিষ্কারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কল করেন বশির। যেহেতু স্পেন্সারের ডায়েরিতে উল্লেখ আছে, বশিরের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল ২৯ তারিখ সন্ধ্যায়। তার মানে হচ্ছে স্পেন্সারের সঙ্গে সেই সাক্ষাতের পরপরই বশির তাদের কল করেনে।

উইসলার বলেন, বশির তার ফ্ল্যাটে আসেন। বলেন, অ্যালান ওয়ালারের দুটো ব্যাংক স্টেটমেন্ট তিনি দেখেছেন একটা ৮ মার্চের - চার হাজার পাউন্ড, নিউজ ইন্টারন্যাশনাল থেকে পাওয়া। আরেকটা ৬৫০০ পাউন্ডের, জার্সিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পেনফোল্ডস কনসাল্টেন্ট দিয়েছে।

উইসলারকে বশির বলেননি যে তিনি প্রিন্সেস ডায়ানাকে নিয়ে কোন কাজ করছেন। শুধু বলেছেন তিনি যা করতে যাচ্ছেন তা অনেক বড় ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত। ডিজাইনার উইসলার তখন ধরেই নিয়েছিলেন বশির হয়তো ওয়ালারের সত্যিকারের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখেছেন। বশিরকে উইসলার বলেন, কাজটি করতে তার পুরো রাত লেগে যাবে। উইসলার বিবিসিকে বলেন বশির তাকে বলেন পরের দিন বিমানে করে তিনি এক জায়গায় যাবেন। তাই উইসলার যেন গ্রাফিক্সের কাজটি করে সকালে ৭টার দিকে মধ্যে তাকে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। অনুমান করা যায় বশির এগুলো আলথর্পে স্পেনসারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার আগেই হাতে পেতে চান। সেই সাক্ষাৎকারের বিষয়ে স্পেন্সারের নোটে লেখা আছে, বশির তাকে ওয়ালারের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখান যেখানে ওই দুটি লেনদেনের উল্লেখ আছে। স্পেন্সারকে বশির বলেন পেনফোল্ডসকে সামনে রেখে কাজ করে গোয়েন্দা সংস্থা জিসিএইচকিউ।

তবে বশিরকে স্পেন্সার বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেন চার্লসের ব্যক্তিগত সহকারী কমান্ডার রিচার্ড আয়লার্ড ডায়ানার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন এটা শোনার পর। স্পেনসারের নোটে টুকে রাখা আছে, বশির তাকে বলেছেন আয়লার্ড তাদের কথাবার্তা গোপনে হস্তান্তর করেছেন। তিনি সাংবাদিক জনাথন ডিম্বেলেলেকে বলেছেন, আমরা চার্লস-ডায়ানার ব্যাপারটা একদম শেষ করতে চলেছি। এস্পার-ওস্পার কিছু একটা হবে।

তবে বশিরের কাছ থেকে শোনা কথাগুলো অন্যরকম ঠেকে স্পেন্সারের কাছে। সেজন্যই পরে তিনি প্যানারোমার স্টিভ হিউলেটের সঙ্গে যোগযোগ করেন। তাকে জিজ্ঞেস করেন বশিরকে বিশ্বাস করা যায় কিনা। তখন হিউলেট তাকে জানান বশির প্যানারোমার ‘অন্যতম সেরা’ কর্মী।

ডায়ানার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো বশিরকে

১৪ সেপ্টেম্বর বশির এবং স্পেন্সারের দেখা হলো আলথর্পে। তখন বশির একে একে সব অভিযোগ তুলে ধরলেন। যেমন, ডায়ানার ব্যক্তিগত সহকারী প্যাট্রিক জেফসনের সঙ্গে আয়লার্ডের যোগসাজশ। ডায়ানার গতিবিধির ওপর নজরদারি রাখার জন্য আয়লার্ড ও জেফসন যে গোয়েন্দাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তার প্রমাণ হিসেবে এফোর সাইজের কাগজের নথি বের করে দেখালেন বশির।

তবে ডাইসনের কাছে এসব কাগজ দেখানোর কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন বশির। তবে বশিরের সঙ্গে সাক্ষাতে স্পেন্সার যে নোট নেন, সেখানে কিন্তু ঠিকই লেখা আছে বশির তাকে বলছেন প্যাট্রিক জেফসন আয়লার্ডের ভালো বন্ধু, তাদের মধ্যে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল ইত্যাদি। ডায়ানা তার স্বামীর পক্ষের লোকজনের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে যেসব ভীতির কথা বলতেন, তার সঙ্গে তাদেরকে বশিরের কাছ থেকে স্পেন্সার যেসব কথা শুনেছেন বলে দাবি করছেন তার সঙ্গে মিলে যায়।

বশিরের কাছ থেকে যেসব ষড়যন্ত্রের কথা শুনছিলেন তা নিয়ে কোনো কিছু ভাবতে পারছিলেন না ধারণাই করতে পারছিল না স্পেন্সার। তার কাছে মনে হলো তার বোনেরই বরং সরাসরি এগুলো শোনা উচিত বশিরের কাছ থেকে। তাই টেলিফোন করে ডায়ানাকে বশিরের সঙ্গে বসার পরামর্শ দিলেন তিনি। পরে ডায়ানা তার ভাইকে একটি চিরকূটে লিখে পাঠান, প্রিয় কার্লোস (ঘরে এই নামেই ডাকা হয় আর্ল স্পেন্সারকে), আজ সকালে তুমি ফোনে আমাকে যে বিষয়গুলো বললে, সেগেুলো আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। আমার চারপাশে এগুলোই হচ্ছে। তারা স্পেন্সারদের দুর্বল ভেবেছে। অনেক স্নেহ রইল। অসমাপ্ত

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ডায়ানার সাক্ষাৎকার বিতর্ক : ঘটনা ও তদন্ত

জন ওয়্যার

বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১

(গতকালের পর)

আর্ল স্পেন্সারের সঙ্গে বশিরের যোগাযোগ

বশিরের পরিকল্পনার মধ্যে প্রথমে ছিল ডায়ানার ভাই আর্ল স্পেন্সারকে বিশ্বাস করানো যে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে, যা তিনি চার্লস ও ডায়ানার কাছের মানুষদের কাছ থেকে এবং উচ্চপর্যায়ের লোকজনের কাছ থেকে জেনেছেন।

১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট স্পেন্সারের সহকারীকে ফোন করে বশির বলেন কোন সাক্ষাৎকার বা তথ্য নয়, শুধু ১৫ মিনিটের জন্য স্পেন্সারের সঙ্গে কথা বলতে চান তিনি। এরপর তিনি তাদের একটি চিঠি পাঠান। এতে তিনি লেখেন গত তিন মাস ধরে তিনি গণমাধ্যমের আচরণ লক্ষ করছেন এবং অনুসন্ধানে স্পেন্সারের পরিবারের ব্যাপারে তাদের অতি আগ্রহের বিষয়ে অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন। যদিও এই তিন মাস বশির আসলে প্যানারোমার অনুষ্ঠান নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন।

বশিরের ভাবখানা এমন ছিল যে তিনি নিজেও সংবাদামাধ্যমের বিরুদ্ধে লড়ছেন। যদিবা স্পেন্সারেরা তার প্রস্তাব লুফৈ নেয় সেই হিসেব থেকেই তিনি তাদের বলেন যে তার কাছে এমন কিছু তথ্য আছে যেগুলোর বিষয়ে তারা আগ্রহী হতে পারেন। চিঠির কোন উত্তর না পেয়ে বশির আবার তাদের ২৯ আগস্ট কল করেন। তখন ডায়ানার ভাই তাকে বলেন ৬টার সময় তাদের দেখা হতে পারে।

স্পেন্সারের কাছ থেকে হঠাৎ করে এমন সাড়া পাওয়ায় নিশ্চয়ই অবাক হয়েছিলেন বশির। ডায়ানার সঙ্গে দেখার করার সুযোগ পেতে স্পেন্সারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতেই কিনা বশির বানিয়ে বানিয়ে বলেন, আপনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনীর সাবেক প্রধান সাবেক সেনাসদস্য অ্যালান ওয়ালারকে ধনকুবের রুপার্ড মারডকের নিউজ ইন্টারন্যাশনাল এবং গোয়ন্দাসংস্থাগুলো নিয়মিত পয়সা দিচ্ছে আপনাদের পরিবারের তথ্য দেয়ার জন্য। এ বিষয়ে স্পেন্সারকে প্রমাণাদি দেখানোর কথাও বলেন বশির। ওই মিটিংয়ে দেখাতে পারেননি, কারণ তখনো তা তৈরি হয়নি।

সেই তথ্য প্রমাণ ঠিক কবে বশির তৈরি করেছিলেন তা নিশ্চিত হতে পারেননি ডাইসন। তবে বিবিসির নিজস্ব অনুসন্ধানে দেখা গেছে স্পেন্সারের সঙ্গে সাক্ষাতের পরপরই বশির তৈরি করেছিলেন সেই তথ্যপ্রমাণ। সেই সাক্ষাতে স্পেন্সার সম্মত হন আলাপ চলতে পারে। তাদের পরবর্তী সাক্ষাতের তারিখ ধার্য হয় আলথর্পে। দুদিন পরে, অর্থাৎ ৩১ আগস্ট সাড়ে ১১টায়।

ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট

সেই তথ্যপ্রমাণের জন্য মার্টিন বশির যোগাযোগ করেন তার এক সাবেক সহকর্মী ম্যাট উইসলারেরর সঙ্গে। উইসলারকে বশির বলেন, হাতে যা কাজকর্ম আছে তা রেখে দিতে। কেননা তার কাজটা করতে হবে আগে। হাতে সময় নেই। তবে বশির তাকে এ বিষয়ে প্রথম কবে ফোন দিয়েছিলেন তা মনে করতে পারেননি। শুধু বলেছেন, সময়টা আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি হবে।

উইসলারের ব্যবসায়িক অংশীদার বিবিসিকে জানান এটা নটিং হিলস কার্নিভালের কাছাকাছি সময় হবে। ওই কার্নিভাল শেষ হয় ২৮ তারিখে।

তিনি জানান বশির কাজটির জন্য প্রথম তার সঙ্গেই যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু এক রাতের মধ্যেই করতে হবে বলে রাজি হননি উইলারের ওই ব্যবসায়িক অংশীদার। তিনিই বশিরকে উইসলারের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলেন।

উইসলার ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার দুজনেই পরিষ্কারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কল করেন বশির। যেহেতু স্পেন্সারের ডায়েরিতে উল্লেখ আছে, বশিরের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল ২৯ তারিখ সন্ধ্যায়। তার মানে হচ্ছে স্পেন্সারের সঙ্গে সেই সাক্ষাতের পরপরই বশির তাদের কল করেনে।

উইসলার বলেন, বশির তার ফ্ল্যাটে আসেন। বলেন, অ্যালান ওয়ালারের দুটো ব্যাংক স্টেটমেন্ট তিনি দেখেছেন একটা ৮ মার্চের - চার হাজার পাউন্ড, নিউজ ইন্টারন্যাশনাল থেকে পাওয়া। আরেকটা ৬৫০০ পাউন্ডের, জার্সিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পেনফোল্ডস কনসাল্টেন্ট দিয়েছে।

উইসলারকে বশির বলেননি যে তিনি প্রিন্সেস ডায়ানাকে নিয়ে কোন কাজ করছেন। শুধু বলেছেন তিনি যা করতে যাচ্ছেন তা অনেক বড় ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত। ডিজাইনার উইসলার তখন ধরেই নিয়েছিলেন বশির হয়তো ওয়ালারের সত্যিকারের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখেছেন। বশিরকে উইসলার বলেন, কাজটি করতে তার পুরো রাত লেগে যাবে। উইসলার বিবিসিকে বলেন বশির তাকে বলেন পরের দিন বিমানে করে তিনি এক জায়গায় যাবেন। তাই উইসলার যেন গ্রাফিক্সের কাজটি করে সকালে ৭টার দিকে মধ্যে তাকে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। অনুমান করা যায় বশির এগুলো আলথর্পে স্পেনসারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার আগেই হাতে পেতে চান। সেই সাক্ষাৎকারের বিষয়ে স্পেন্সারের নোটে লেখা আছে, বশির তাকে ওয়ালারের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখান যেখানে ওই দুটি লেনদেনের উল্লেখ আছে। স্পেন্সারকে বশির বলেন পেনফোল্ডসকে সামনে রেখে কাজ করে গোয়েন্দা সংস্থা জিসিএইচকিউ।

তবে বশিরকে স্পেন্সার বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেন চার্লসের ব্যক্তিগত সহকারী কমান্ডার রিচার্ড আয়লার্ড ডায়ানার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন এটা শোনার পর। স্পেনসারের নোটে টুকে রাখা আছে, বশির তাকে বলেছেন আয়লার্ড তাদের কথাবার্তা গোপনে হস্তান্তর করেছেন। তিনি সাংবাদিক জনাথন ডিম্বেলেলেকে বলেছেন, আমরা চার্লস-ডায়ানার ব্যাপারটা একদম শেষ করতে চলেছি। এস্পার-ওস্পার কিছু একটা হবে।

তবে বশিরের কাছ থেকে শোনা কথাগুলো অন্যরকম ঠেকে স্পেন্সারের কাছে। সেজন্যই পরে তিনি প্যানারোমার স্টিভ হিউলেটের সঙ্গে যোগযোগ করেন। তাকে জিজ্ঞেস করেন বশিরকে বিশ্বাস করা যায় কিনা। তখন হিউলেট তাকে জানান বশির প্যানারোমার ‘অন্যতম সেরা’ কর্মী।

ডায়ানার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো বশিরকে

১৪ সেপ্টেম্বর বশির এবং স্পেন্সারের দেখা হলো আলথর্পে। তখন বশির একে একে সব অভিযোগ তুলে ধরলেন। যেমন, ডায়ানার ব্যক্তিগত সহকারী প্যাট্রিক জেফসনের সঙ্গে আয়লার্ডের যোগসাজশ। ডায়ানার গতিবিধির ওপর নজরদারি রাখার জন্য আয়লার্ড ও জেফসন যে গোয়েন্দাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তার প্রমাণ হিসেবে এফোর সাইজের কাগজের নথি বের করে দেখালেন বশির।

তবে ডাইসনের কাছে এসব কাগজ দেখানোর কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন বশির। তবে বশিরের সঙ্গে সাক্ষাতে স্পেন্সার যে নোট নেন, সেখানে কিন্তু ঠিকই লেখা আছে বশির তাকে বলছেন প্যাট্রিক জেফসন আয়লার্ডের ভালো বন্ধু, তাদের মধ্যে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল ইত্যাদি। ডায়ানা তার স্বামীর পক্ষের লোকজনের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে যেসব ভীতির কথা বলতেন, তার সঙ্গে তাদেরকে বশিরের কাছ থেকে স্পেন্সার যেসব কথা শুনেছেন বলে দাবি করছেন তার সঙ্গে মিলে যায়।

বশিরের কাছ থেকে যেসব ষড়যন্ত্রের কথা শুনছিলেন তা নিয়ে কোনো কিছু ভাবতে পারছিলেন না ধারণাই করতে পারছিল না স্পেন্সার। তার কাছে মনে হলো তার বোনেরই বরং সরাসরি এগুলো শোনা উচিত বশিরের কাছ থেকে। তাই টেলিফোন করে ডায়ানাকে বশিরের সঙ্গে বসার পরামর্শ দিলেন তিনি। পরে ডায়ানা তার ভাইকে একটি চিরকূটে লিখে পাঠান, প্রিয় কার্লোস (ঘরে এই নামেই ডাকা হয় আর্ল স্পেন্সারকে), আজ সকালে তুমি ফোনে আমাকে যে বিষয়গুলো বললে, সেগেুলো আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। আমার চারপাশে এগুলোই হচ্ছে। তারা স্পেন্সারদের দুর্বল ভেবেছে। অনেক স্নেহ রইল। অসমাপ্ত

back to top