alt

উপ-সম্পাদকীয়

ডায়ানার সাক্ষাৎকার বিতর্ক : ঘটনা ও তদন্ত

জন ওয়্যার

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : শনিবার, ০৫ জুন ২০২১

(গতকালের পর)

কিলিকের সঙ্গে বশিরের এই নিয়ে পরে তর্কাতর্কি হয় বিবিসির ক্যান্টিনে। সংক্ষিপ্ত ও তিক্ত সেই আলাপে কিলিককে বশির জানিয়ে দেন এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই তার।

এরপর কিলিক তার দুই সহকর্মী প্যানারোমার সাবেক ডেপুটি এডিটর হ্যারি ডীন এবং রিপোর্টার টম ম্যানগোল্ডকে নিয়ে হিউলেটের সঙ্গে দেখা করতে যান। এই তিনজনেরই মনে আছে, সেই সময় তাদের এডিটর তাদের বলে দেন যে এটা তাদের ভাবার বিষয় না। ডীন তাকে জিজ্ঞেস করেন তিনি ব্যাংক স্টেটমেন্টগুলোর কথা জানেন কিনা। উত্তরে হিউলেট তাদের বলেন তা তার মনে পড়ছে না। তবে সেখান থেকে চলে আসার আগে হিউলেটকে স্পেন্সারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন কিলিক। স্পেন্সার হিউলেটকে কল করেছিলেন। কিন্তু হিউলেট বা বিবিসির অন্য কেউই বিষয়টি আর খতিয়ে দেখেননি। বিবিসির এই ব্যর্থতাটাকেই বড় করে দেখছেন লর্ড ডাইসন।

লর্ড ডাইসন বলছেন, পুরো চিত্রটা অনেকাংশেই বদলে যেতো যদি তাদের কেউ আর্ল স্পেনসারের সঙ্গে একটু কথা বলার প্রয়োজন মনে করতেন।

ডীনের মনে পড়ে হিউলেট পরে তাকে বলেছিলেন ওই ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখানোর তথ্যগুলো সঠিক ছিল। তিনি ডীনকে বলেন ব্যাংক স্টেটমেন্টে যেসব নাম এসেছে সেগুলো এক ধরনের কাকতাল। আর এই কথাটিই, ধারণা করা হচ্ছে বশিরের বানানো।

বশিরের বারবার অবস্থান বদল

বিবিসি প্যানারোমার সাবেক প্রডিউসার পিটার মলয় স্মরণ করেন প্যানারোমার ক্রিসমাস পার্টিতে উইসলার খুবই কাঁপছিলেন। তিনি বিবিসিকে জানান তার বাসায় কেউ একজন ঢুকেছিল এবং ভূয়া ব্যাংক স্টেটমেন্টের গ্রাফিক্সটি যে ডিস্কে ছিল তা পাওয়া যাচ্ছে না। তখন আরেকটা বিষয় পরিস্কার হয় হিউলেট আগে এ বিষয়ে তার লাইন ম্যানেজার টিম গারডামকে কিছুই জানাননি। তাদের সহকর্মী টিম সুটার ২০০১ সালে বলেন, গারডাম এ নিয়ে রাগলেও দায়িত্বশীল আচরণ করে গেছেন। হিউলেট তাদের বলেছিলেন, ডায়ানার সাক্ষাৎকার নিয়ৈ কোনো অনিয়ম হয়নি।

এরপর বশিরের সঙ্গে কথা বলেন গারডাম, হিউলেট ও সুটার। বশির তাদের আশ্বস্ত করেন ওই ব্যাংক স্টেটমেন্ট ডায়ানা বা অন্য কাউকে দেখানো হয়নি। তিনি বলেন, এগুলো দিয়ে ডায়ানাকে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি করানো যেতো না। বরং এসব তথ্য স্বয়ং ডায়ানাই দিয়েছিলেন, বলেন বশির।

বশিরের সঙ্গে ওই মিটিং সম্পর্কে গারডামের নোটে দেখা যায়, গারডাম খুবই বিভ্রান্ত হন কেন তাহলে বশির সেগুলো বানানোর ঝামেলাতে গেলেন তা ভেবে। তারা বশিরের কাছে জানতে চান তিনি এ বিষয়ে ডায়ানার কাছ থেকে একটা লিখিত এনে দিতে পারবেন কিনা। পরের দিন বশির ডায়ানার কাছ থেকে একটা চিঠি নিয়ে আসেন বশির, যেটিতে লেখা ছিল, আমি নিশ্চিত করছি, সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আমার ওপর কোনো চাপ ছিল না। আমাকে বশিরের পক্ষ থেকে এমন কোনো ডকুমেন্ট দেখানো হয়নি যা আমি আগে দেখিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়ে আমি সন্তুষ্ট এবং আমি এর পক্ষে আছি।

ডায়ানার এই চিঠির কারণে বিবিসি কর্তৃপক্ষের সন্দেহ স্তিমিত হয়। সাড়া জাগানো সেই অনুষ্ঠান নিয়ে নিরাপদ বোধ করতে শুরু করে তারা। কিন্তু তারপরও সেখানে মার্টিন বশির যে মিথ্যা বলে থাকতে পারেন তা নিয়ে সংশয় থেকে যায়।

গারডামকে বশির বলেছিলেন যে তার সঙ্গে ডায়ানার প্রথম সাক্ষাৎ হয় সেপ্টেম্বরেরর শেষ দিকে। টনি হলের কাছে যে ঘটনার যে বিবরণী দেওয়া হয়েছিল তাতে এটা আছে। কিন্তু গারডামকে তো ম্যাট উইসলার বলেছিলেন, ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট তিনি বানিয়েছিলেন আগস্টের শেষ বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে। মানে তারও তিন সপ্তাহ আগে।

যদিও বশির তাদের ঘ্টনার তারিখগুলো দিয়েছে, তবুও হিউলেট বা বিবিসি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি লক্ষ্য করেননি ডায়ানার কাছ থেকে বশিরের তথ্যগুলো জানার কথা না। কেননা আগে তাদের তাদের দেখাই হয়নি। এমনকি এই ফাঁকটা গারডামও ধরতে পারেননি। পারলে বশিরের কাছে সে বিষয়ে জানতে চাইতে পারতেন বলে বিবিসির কাছে আফসোস করেন তিনি। বশির এই নথিগুলো ডায়ানাকে সাক্ষাৎকারে দিতে রাজি করানোর কাজে ব্যবহার করেছেন, উইসলারের এই অভিযোগের ওপরই গুরুত্ব দিয়েছিলেন গারডাম। আর বশিরেরর মাথায় হয়তো ছিল তিনি যদি তার তথ্যগুলোর উৎস হিসেবে ডায়ানার কথা বলেন তাহলে বিষয়টি নিয়ে আর এগোবে না বিবিসি। হয়েছিলও তাই।

পেনফোল্ডের নাম মিথ্যেমিথ্যি বসিয়েও বশির বিবিসির সন্দেহ এড়াতে পেরেছিলেন। তার অজুহাত ছিল যে দুটো প্রতিষ্ঠান ওয়ালারকে ডায়ানার ওপর নজরদারি করার জন্য টাকা দিচ্ছে, তার একটি জার্সিতে অবস্থিত। পেনফোল্ডও যেহেতু জার্সিভিত্তিক, তাই বশির সেই নামটি ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্টে বসিয়ে দিয়েছিলেন।

বশিরের জানা থাকার কথা এবাবে পেনফোল্ডসের নাম ব্যবহার করে পার পাওয়া যাবে না, কেননা এই প্রতিষ্ঠানের নাম আাগের অনুষ্ঠানেই এসেছে। তাহলে কেন হিউলেট হ্যারি ডীনকে আশ্বস্ত করেছিলেন কোনো অনিয়ম হয়নি? গারডামের নোটেও উল্লেখ নেই হিউলেটের এই স্ববিরোধের কথা।

বশিরকে গারডাম জিজ্ঞেস করেছিলেন তাহলে কেনইবা তিনি ওই গ্রাফিক্সগুলো করিয়েছিলেন। বশির তাকে বলেছেন, সেগুলো শুধুই তথ্যগুলো সংরক্ষণ করার জন্য। তাহলে শুধু এর জন্য একজন গ্রাফিক ডিজাইনারকে সারারাত কাজ করানোর হলো কেন? যথেষ্ট ব্যাখ্যার নেই এর জবাবেও। বিশেষ করে ২৫০ পাউন্ড খরচ করে এই গ্রাফিক্স করানো, তারপর উইলারকে দিয়ে সেই কাগজ হিথ্রো বিমানবন্দরে কুরিয়ার করার ব্যবস্থা – কেন? এসব তথ্য তার নিজের নোটবুকে টুকে রাখাই যথেষ্ট ছিল।

যাই হোক, যত অসম্ভবই মনে হোক না কেনো আজকের দিনে, ডায়ানার চিঠিতে কিন্তু বিবিসি কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত হয়েছিল। সেই চিঠি আসার পর সুটার হাফ ছেঁড়ে বলেছিলেন, যাক আমরা পরের ক্রিসমাসের ভালভাবে পালন করতে পারবো। তিনি বিবিসিকে বলেন, আমাদের একটা ভয় ছিল, কিন্তু তা কেটে গিয়েছিল। কিন্তু বিবিসিকে ক্ষমা করতে পারেননি আর্ল স্পেন্সার। তিনি বলেন, ডায়ানার সঙ্গে মিথ্যা বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি জানতেন না যে তার সাক্ষাৎকার নেওয়ার গোটা প্রক্রিয়াটিই মিথ্যার মাধ্যমে করা হয়েছিল এবং তাকে বিপন্ন করে তোলা হয়েছিল।

যাই হোক, বিবিসি কর্তৃপক্ষ যদি ভেবে থাকে যে ঘটনা সেখানেই শেষ তাহলে তারা ভুল করেছিল। কেননা সেই ঘটনা আবার নাড়াচাড়া দেয় মেইল অন সানডে পত্রিকা। গত গত ২১ মার্চ তারা যোগাযোগ করে আর্ল স্পেন্সারের সঙ্গে। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয় কীভাবে মার্টিন বশির তার বোনের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল এবং সেই সাক্ষাৎকারটি পেয়েছিল তা নিয়ে তারা [মেইল] তদন্ত করছে। তারা স্পেন্সারকে আরো জানায় মার্টিন বশির তাদের ভূয়া সরকারি কাগজপত্র দেখিয়েছিল এবং প্রাসাদের ফোনের কথাবার্তা শোনার চেষ্টা করছিল। বিবিসির মতে, মেইল কিছু একটা করতে চেয়েছে এটা পরিস্কার, কিন্তু তারা মার্টিন বশিরের দেখানো নথি সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে তা ভুল ছিল।

ট্যাবলয়েডের কথাবার্তা বিশ্বাস না হওয়ায় স্পেন্সার তখন বিবিসিতে ফোন করে। বিষয়টির গভীরে আরো কী আছে তা তদন্ত করে দেখার জন্য। স্পেন্সারকে তখন হিউলেটকে ধরিয়ে দেওয়া হয়। স্পেনসার তাকে বলেন মার্টিন বশিরকে তিনি ডায়ানার সঙ্গে ১৯ সেপ্টেম্বর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। বশির তখন ভয়াবহ সব অভিযোগ করেছিলেন, অনেক প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্র ও সাংবাদিক, সেন্ট জেমস প্যালেসের প্রবীণ ব্যক্তিবর্গ, এবং গোয়েন্দা সংস্থায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে।

তখন হিউলেটের সুযোগ ছিল স্পেন্সারকে জিজ্ঞেস করা বশির তাকে কোনো ব্যাংক স্টেটমেন্টে দেখিয়েছিলেন কিনা। তিনি তা করেছিলেন কি না তা নিশ্চিত নয়। তবে মেইল যেহেতু জালিয়াতির কথা বলেছে হিউলেটকে গারডাম এ বিষয়ে মার্টিন বশিরকে জিজ্ঞেস করতে বলেন।

আবারও বশির অস্বীকার করেন তিনি এরকম কিছিুই কাউকে দেখাননি, এমনকি স্পেনসারকেও না।

পরের বছর ২৩শে মার্চ মেইলের পক্ষ থেকে গারডামকে ফোন করা হয়। তারপর তার সঙ্গে দেখা করতে আসে তারা। গারডাম আবার বশিরকে ফোন করেন, তিনি কি স্পেন্সারকে কোনো কাগজ দেখিয়েছিলেন। বশির তা আবার অস্বীকার করেন। গারডাম ও হিউলেট দুজনের কাছেই। গারডাম আবার জিজ্ঞেস করে বিকেলে। গণমাধ্যমে খোঁড়াখুঁড়ির ভয়ে বশির কিছুটা আড়ালে চলে যান। পরে তিনি স্বীকার করেন তিনি দেখিয়েছিলেন। চারবার তার সঙ্গে যোগাযোগের পর তিনি একথা স্বীকার করলেন। রেগেমেগে বশিরকে গারডাম বললেন বিবিসি এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার অবস্থান পর্যালোচনা করতে হবে। অসমাপ্ত

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ডায়ানার সাক্ষাৎকার বিতর্ক : ঘটনা ও তদন্ত

জন ওয়্যার

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

শনিবার, ০৫ জুন ২০২১

(গতকালের পর)

কিলিকের সঙ্গে বশিরের এই নিয়ে পরে তর্কাতর্কি হয় বিবিসির ক্যান্টিনে। সংক্ষিপ্ত ও তিক্ত সেই আলাপে কিলিককে বশির জানিয়ে দেন এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই তার।

এরপর কিলিক তার দুই সহকর্মী প্যানারোমার সাবেক ডেপুটি এডিটর হ্যারি ডীন এবং রিপোর্টার টম ম্যানগোল্ডকে নিয়ে হিউলেটের সঙ্গে দেখা করতে যান। এই তিনজনেরই মনে আছে, সেই সময় তাদের এডিটর তাদের বলে দেন যে এটা তাদের ভাবার বিষয় না। ডীন তাকে জিজ্ঞেস করেন তিনি ব্যাংক স্টেটমেন্টগুলোর কথা জানেন কিনা। উত্তরে হিউলেট তাদের বলেন তা তার মনে পড়ছে না। তবে সেখান থেকে চলে আসার আগে হিউলেটকে স্পেন্সারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন কিলিক। স্পেন্সার হিউলেটকে কল করেছিলেন। কিন্তু হিউলেট বা বিবিসির অন্য কেউই বিষয়টি আর খতিয়ে দেখেননি। বিবিসির এই ব্যর্থতাটাকেই বড় করে দেখছেন লর্ড ডাইসন।

লর্ড ডাইসন বলছেন, পুরো চিত্রটা অনেকাংশেই বদলে যেতো যদি তাদের কেউ আর্ল স্পেনসারের সঙ্গে একটু কথা বলার প্রয়োজন মনে করতেন।

ডীনের মনে পড়ে হিউলেট পরে তাকে বলেছিলেন ওই ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখানোর তথ্যগুলো সঠিক ছিল। তিনি ডীনকে বলেন ব্যাংক স্টেটমেন্টে যেসব নাম এসেছে সেগুলো এক ধরনের কাকতাল। আর এই কথাটিই, ধারণা করা হচ্ছে বশিরের বানানো।

বশিরের বারবার অবস্থান বদল

বিবিসি প্যানারোমার সাবেক প্রডিউসার পিটার মলয় স্মরণ করেন প্যানারোমার ক্রিসমাস পার্টিতে উইসলার খুবই কাঁপছিলেন। তিনি বিবিসিকে জানান তার বাসায় কেউ একজন ঢুকেছিল এবং ভূয়া ব্যাংক স্টেটমেন্টের গ্রাফিক্সটি যে ডিস্কে ছিল তা পাওয়া যাচ্ছে না। তখন আরেকটা বিষয় পরিস্কার হয় হিউলেট আগে এ বিষয়ে তার লাইন ম্যানেজার টিম গারডামকে কিছুই জানাননি। তাদের সহকর্মী টিম সুটার ২০০১ সালে বলেন, গারডাম এ নিয়ে রাগলেও দায়িত্বশীল আচরণ করে গেছেন। হিউলেট তাদের বলেছিলেন, ডায়ানার সাক্ষাৎকার নিয়ৈ কোনো অনিয়ম হয়নি।

এরপর বশিরের সঙ্গে কথা বলেন গারডাম, হিউলেট ও সুটার। বশির তাদের আশ্বস্ত করেন ওই ব্যাংক স্টেটমেন্ট ডায়ানা বা অন্য কাউকে দেখানো হয়নি। তিনি বলেন, এগুলো দিয়ে ডায়ানাকে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি করানো যেতো না। বরং এসব তথ্য স্বয়ং ডায়ানাই দিয়েছিলেন, বলেন বশির।

বশিরের সঙ্গে ওই মিটিং সম্পর্কে গারডামের নোটে দেখা যায়, গারডাম খুবই বিভ্রান্ত হন কেন তাহলে বশির সেগুলো বানানোর ঝামেলাতে গেলেন তা ভেবে। তারা বশিরের কাছে জানতে চান তিনি এ বিষয়ে ডায়ানার কাছ থেকে একটা লিখিত এনে দিতে পারবেন কিনা। পরের দিন বশির ডায়ানার কাছ থেকে একটা চিঠি নিয়ে আসেন বশির, যেটিতে লেখা ছিল, আমি নিশ্চিত করছি, সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আমার ওপর কোনো চাপ ছিল না। আমাকে বশিরের পক্ষ থেকে এমন কোনো ডকুমেন্ট দেখানো হয়নি যা আমি আগে দেখিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়ে আমি সন্তুষ্ট এবং আমি এর পক্ষে আছি।

ডায়ানার এই চিঠির কারণে বিবিসি কর্তৃপক্ষের সন্দেহ স্তিমিত হয়। সাড়া জাগানো সেই অনুষ্ঠান নিয়ে নিরাপদ বোধ করতে শুরু করে তারা। কিন্তু তারপরও সেখানে মার্টিন বশির যে মিথ্যা বলে থাকতে পারেন তা নিয়ে সংশয় থেকে যায়।

গারডামকে বশির বলেছিলেন যে তার সঙ্গে ডায়ানার প্রথম সাক্ষাৎ হয় সেপ্টেম্বরেরর শেষ দিকে। টনি হলের কাছে যে ঘটনার যে বিবরণী দেওয়া হয়েছিল তাতে এটা আছে। কিন্তু গারডামকে তো ম্যাট উইসলার বলেছিলেন, ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট তিনি বানিয়েছিলেন আগস্টের শেষ বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে। মানে তারও তিন সপ্তাহ আগে।

যদিও বশির তাদের ঘ্টনার তারিখগুলো দিয়েছে, তবুও হিউলেট বা বিবিসি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি লক্ষ্য করেননি ডায়ানার কাছ থেকে বশিরের তথ্যগুলো জানার কথা না। কেননা আগে তাদের তাদের দেখাই হয়নি। এমনকি এই ফাঁকটা গারডামও ধরতে পারেননি। পারলে বশিরের কাছে সে বিষয়ে জানতে চাইতে পারতেন বলে বিবিসির কাছে আফসোস করেন তিনি। বশির এই নথিগুলো ডায়ানাকে সাক্ষাৎকারে দিতে রাজি করানোর কাজে ব্যবহার করেছেন, উইসলারের এই অভিযোগের ওপরই গুরুত্ব দিয়েছিলেন গারডাম। আর বশিরেরর মাথায় হয়তো ছিল তিনি যদি তার তথ্যগুলোর উৎস হিসেবে ডায়ানার কথা বলেন তাহলে বিষয়টি নিয়ে আর এগোবে না বিবিসি। হয়েছিলও তাই।

পেনফোল্ডের নাম মিথ্যেমিথ্যি বসিয়েও বশির বিবিসির সন্দেহ এড়াতে পেরেছিলেন। তার অজুহাত ছিল যে দুটো প্রতিষ্ঠান ওয়ালারকে ডায়ানার ওপর নজরদারি করার জন্য টাকা দিচ্ছে, তার একটি জার্সিতে অবস্থিত। পেনফোল্ডও যেহেতু জার্সিভিত্তিক, তাই বশির সেই নামটি ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্টে বসিয়ে দিয়েছিলেন।

বশিরের জানা থাকার কথা এবাবে পেনফোল্ডসের নাম ব্যবহার করে পার পাওয়া যাবে না, কেননা এই প্রতিষ্ঠানের নাম আাগের অনুষ্ঠানেই এসেছে। তাহলে কেন হিউলেট হ্যারি ডীনকে আশ্বস্ত করেছিলেন কোনো অনিয়ম হয়নি? গারডামের নোটেও উল্লেখ নেই হিউলেটের এই স্ববিরোধের কথা।

বশিরকে গারডাম জিজ্ঞেস করেছিলেন তাহলে কেনইবা তিনি ওই গ্রাফিক্সগুলো করিয়েছিলেন। বশির তাকে বলেছেন, সেগুলো শুধুই তথ্যগুলো সংরক্ষণ করার জন্য। তাহলে শুধু এর জন্য একজন গ্রাফিক ডিজাইনারকে সারারাত কাজ করানোর হলো কেন? যথেষ্ট ব্যাখ্যার নেই এর জবাবেও। বিশেষ করে ২৫০ পাউন্ড খরচ করে এই গ্রাফিক্স করানো, তারপর উইলারকে দিয়ে সেই কাগজ হিথ্রো বিমানবন্দরে কুরিয়ার করার ব্যবস্থা – কেন? এসব তথ্য তার নিজের নোটবুকে টুকে রাখাই যথেষ্ট ছিল।

যাই হোক, যত অসম্ভবই মনে হোক না কেনো আজকের দিনে, ডায়ানার চিঠিতে কিন্তু বিবিসি কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত হয়েছিল। সেই চিঠি আসার পর সুটার হাফ ছেঁড়ে বলেছিলেন, যাক আমরা পরের ক্রিসমাসের ভালভাবে পালন করতে পারবো। তিনি বিবিসিকে বলেন, আমাদের একটা ভয় ছিল, কিন্তু তা কেটে গিয়েছিল। কিন্তু বিবিসিকে ক্ষমা করতে পারেননি আর্ল স্পেন্সার। তিনি বলেন, ডায়ানার সঙ্গে মিথ্যা বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি জানতেন না যে তার সাক্ষাৎকার নেওয়ার গোটা প্রক্রিয়াটিই মিথ্যার মাধ্যমে করা হয়েছিল এবং তাকে বিপন্ন করে তোলা হয়েছিল।

যাই হোক, বিবিসি কর্তৃপক্ষ যদি ভেবে থাকে যে ঘটনা সেখানেই শেষ তাহলে তারা ভুল করেছিল। কেননা সেই ঘটনা আবার নাড়াচাড়া দেয় মেইল অন সানডে পত্রিকা। গত গত ২১ মার্চ তারা যোগাযোগ করে আর্ল স্পেন্সারের সঙ্গে। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয় কীভাবে মার্টিন বশির তার বোনের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল এবং সেই সাক্ষাৎকারটি পেয়েছিল তা নিয়ে তারা [মেইল] তদন্ত করছে। তারা স্পেন্সারকে আরো জানায় মার্টিন বশির তাদের ভূয়া সরকারি কাগজপত্র দেখিয়েছিল এবং প্রাসাদের ফোনের কথাবার্তা শোনার চেষ্টা করছিল। বিবিসির মতে, মেইল কিছু একটা করতে চেয়েছে এটা পরিস্কার, কিন্তু তারা মার্টিন বশিরের দেখানো নথি সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে তা ভুল ছিল।

ট্যাবলয়েডের কথাবার্তা বিশ্বাস না হওয়ায় স্পেন্সার তখন বিবিসিতে ফোন করে। বিষয়টির গভীরে আরো কী আছে তা তদন্ত করে দেখার জন্য। স্পেন্সারকে তখন হিউলেটকে ধরিয়ে দেওয়া হয়। স্পেনসার তাকে বলেন মার্টিন বশিরকে তিনি ডায়ানার সঙ্গে ১৯ সেপ্টেম্বর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। বশির তখন ভয়াবহ সব অভিযোগ করেছিলেন, অনেক প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্র ও সাংবাদিক, সেন্ট জেমস প্যালেসের প্রবীণ ব্যক্তিবর্গ, এবং গোয়েন্দা সংস্থায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে।

তখন হিউলেটের সুযোগ ছিল স্পেন্সারকে জিজ্ঞেস করা বশির তাকে কোনো ব্যাংক স্টেটমেন্টে দেখিয়েছিলেন কিনা। তিনি তা করেছিলেন কি না তা নিশ্চিত নয়। তবে মেইল যেহেতু জালিয়াতির কথা বলেছে হিউলেটকে গারডাম এ বিষয়ে মার্টিন বশিরকে জিজ্ঞেস করতে বলেন।

আবারও বশির অস্বীকার করেন তিনি এরকম কিছিুই কাউকে দেখাননি, এমনকি স্পেনসারকেও না।

পরের বছর ২৩শে মার্চ মেইলের পক্ষ থেকে গারডামকে ফোন করা হয়। তারপর তার সঙ্গে দেখা করতে আসে তারা। গারডাম আবার বশিরকে ফোন করেন, তিনি কি স্পেন্সারকে কোনো কাগজ দেখিয়েছিলেন। বশির তা আবার অস্বীকার করেন। গারডাম ও হিউলেট দুজনের কাছেই। গারডাম আবার জিজ্ঞেস করে বিকেলে। গণমাধ্যমে খোঁড়াখুঁড়ির ভয়ে বশির কিছুটা আড়ালে চলে যান। পরে তিনি স্বীকার করেন তিনি দেখিয়েছিলেন। চারবার তার সঙ্গে যোগাযোগের পর তিনি একথা স্বীকার করলেন। রেগেমেগে বশিরকে গারডাম বললেন বিবিসি এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার অবস্থান পর্যালোচনা করতে হবে। অসমাপ্ত

back to top