alt

উপ-সম্পাদকীয়

জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার কখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হন

সিরাজ প্রামাণিক

: বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট ২০২১

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস-এ (বিসিএস) ম্যাজিস্ট্রেট নামে কোন পদ নেই। বিসিএস (প্রসাশন) ক্যাডার পদে যাঁরা যোগদান করেন, তারা কিন্তু জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। প্রশাসনিক কাজই তাদের মূল কাজ এবং তাদের পদবি হলো সহকারী কমিশনার (প্রশাসন), মোটেই ম্যাজিস্ট্রেট নয়। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১০(৫) ধারায় বলা হয়েছে যে, সরকার প্রয়োজন মনে করলে বিসিএস (প্রসাশন) নিযুক্ত কোন ব্যক্তিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দান এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিতে পারবেন। কাজেই বিসিএস (প্রশাসন) এডমিন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্তরা মোটেই এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মূল পদ নয় বরং দায়িত্বপ্রাপ্ত দায়িত্ব।

তারা যখন এ দায়িত্ব পালন করেন তখন সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড যোগ্য অপরাধের বিচার করতে পারেন। তবে অপরাধমূলক কাজটি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সংঘটিত হতে হবে এবং স্বেচ্ছায় অপরাধমূলক কাজটি স্বীকার করতে হবে। নতুবা তিনি কোন প্রকার কারাদন্ডের আদেশ দিতে পারবেন না। এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, ২০০৯-এর ৬ ধারায় স্পষ্ট করে লেখা আছে। যদিও এ নির্বাহী কর্মকর্তাদের দ্বারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ইতোমধ্যে হাইকোর্ট বিভাগ অবৈধ ঘোষণা করেছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য আপিল বিভাগে আপিল পেন্ডিং রয়েছে। তবে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া ত্রুটিপূর্ণ ৯৮ ভাগ রায় বাতিল করে দেন দায়রা জজ আদালত।

ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত মুখোমুখি বিজ্ঞ বিচারকের সামনে তাদের নিযুক্ত আইনজীবী দ্বারা মামলা প্রমাণ বা মিথ্যা প্রমাণে আইনি লড়াই করে। উপস্থাপিত সাক্ষ্য প্রমাণের আলোকে বিজ্ঞ বিচারক তার সুচিন্তিত এবং সুসিদ্ধান্তিত রায় প্রদান করে। অথচ মোবাইল কোর্ট আইন সেই সব বিষয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে। মোবাইল কোর্টে বিচার ও দন্ড প্রদানের প্রাক্কালে কোনো জনসাধরণকে উক্ত স্থানে র‌্যাব, পুলিশ এবং বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাউকেই থাকতে দেন না। মোবাইল কোর্টের এহেন আচরণ জনসম্মুখে বিচার অস্বীকার করে, যা সংবিধানের ৩৫(৩) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে চলেছেন। মানবাধিকার আইনের নীতিমালা মতে, একজন অভিযুক্তকে অবশ্যই নিম্নলিখিত সুযোগ দিতে হবে।

ক) সুস্পষ্ট অভিযোগ লিখিতভাবে আনতে হবে। খ) অভিযোগ সমর্থনে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। গ) অভিযোগ প্রমাণে সাক্ষীদের জবানবন্দি নিতে হবে। ঘ) অভিযুক্তকে অভিযোগকারী ও তার সাক্ষীদের জেরার সুযোগ দিতে হবে। ঙ) অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য প্রস্তুুতির পর্যাপ্ত সুযোগ ও সময় দিতে হবে। চ) অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজ পছন্দ মোতাবেক বিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগের এবং পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। ছ) আত্মপক্ষ সমর্থনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাক্ষ্য ও সাক্ষী উপস্থাপনের সুযোগ দিতে হবে।

তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মূল কাজ হলো- লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্স বাতিলকরণ, প্রসিকিউশন অনুমোদন বা প্রত্যাহারকরণ ইত্যাদি যেসব কাজের প্রকৃতি প্রশাসনিক বা নির্বাহী ধরনের তা সম্পাদন করা। শুধু ‘ম্যাজিস্ট্রেট’ বলতে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে বোঝায়। ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা 4A(a) তে বিষয়গুলো স্পষ্ট করে বলা আছে। কাজেই কেউ যদি পরিচয় দেন ‘আমি ম্যাজিস্ট্রেট।’ ধরে নিতে হবে তিনি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। কোন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিজেকে শুধু ‘ম্যাজিস্ট্রেট’ হিসেবে পরিচয় দিতে পারেন না। কারণ একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বেতন স্কেল আর যিনি বিসিএসের মাধ্যমে সহকারী কমিশনার (প্রশাসন) হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন, তার বেতন স্কেল এক নয়।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

seraj.pramanik@gmail.com

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবন

বজ্রপাত ও তালগাছ : প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কুষ্ঠ ও বৈষম্য : মানবাধিকারের প্রশ্নে একটি অবহেলিত অধ্যায়

ছবি

প্রান্তজনের বাংলাদেশ

অতীতের ছায়ায় নতুন বাংলাদেশ : দুর্নীতি, উগ্রপন্থা ও সরকারের দায়

সাইবার নিরাপত্তা : অদৃশ্য যুদ্ধের সামনে আমাদের প্রস্তুতি

ছবি

বাহান্নর গর্ভে জন্ম নেয়া এক ঝড়ের পাখি

প্রবাসী শ্রমিক : অর্থের যন্ত্র নয়, রাষ্ট্রের সহযোদ্ধা

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ

ভোগবাদের বিরুদ্ধে পোপ ফ্রান্সিসের জলবায়ু বার্তা

রম্যগদ্য : হাসি নিষেধ...

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : দাবি ও সমাধানের পথ

সিরিয়ার পতন কিভাবে আমেরিকার স্বার্থকে হুমকিতে ফেলছে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার সন্ধানে

tab

উপ-সম্পাদকীয়

জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার কখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হন

সিরাজ প্রামাণিক

বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট ২০২১

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস-এ (বিসিএস) ম্যাজিস্ট্রেট নামে কোন পদ নেই। বিসিএস (প্রসাশন) ক্যাডার পদে যাঁরা যোগদান করেন, তারা কিন্তু জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। প্রশাসনিক কাজই তাদের মূল কাজ এবং তাদের পদবি হলো সহকারী কমিশনার (প্রশাসন), মোটেই ম্যাজিস্ট্রেট নয়। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১০(৫) ধারায় বলা হয়েছে যে, সরকার প্রয়োজন মনে করলে বিসিএস (প্রসাশন) নিযুক্ত কোন ব্যক্তিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দান এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিতে পারবেন। কাজেই বিসিএস (প্রশাসন) এডমিন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্তরা মোটেই এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মূল পদ নয় বরং দায়িত্বপ্রাপ্ত দায়িত্ব।

তারা যখন এ দায়িত্ব পালন করেন তখন সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড যোগ্য অপরাধের বিচার করতে পারেন। তবে অপরাধমূলক কাজটি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সংঘটিত হতে হবে এবং স্বেচ্ছায় অপরাধমূলক কাজটি স্বীকার করতে হবে। নতুবা তিনি কোন প্রকার কারাদন্ডের আদেশ দিতে পারবেন না। এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, ২০০৯-এর ৬ ধারায় স্পষ্ট করে লেখা আছে। যদিও এ নির্বাহী কর্মকর্তাদের দ্বারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ইতোমধ্যে হাইকোর্ট বিভাগ অবৈধ ঘোষণা করেছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য আপিল বিভাগে আপিল পেন্ডিং রয়েছে। তবে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া ত্রুটিপূর্ণ ৯৮ ভাগ রায় বাতিল করে দেন দায়রা জজ আদালত।

ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত মুখোমুখি বিজ্ঞ বিচারকের সামনে তাদের নিযুক্ত আইনজীবী দ্বারা মামলা প্রমাণ বা মিথ্যা প্রমাণে আইনি লড়াই করে। উপস্থাপিত সাক্ষ্য প্রমাণের আলোকে বিজ্ঞ বিচারক তার সুচিন্তিত এবং সুসিদ্ধান্তিত রায় প্রদান করে। অথচ মোবাইল কোর্ট আইন সেই সব বিষয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে। মোবাইল কোর্টে বিচার ও দন্ড প্রদানের প্রাক্কালে কোনো জনসাধরণকে উক্ত স্থানে র‌্যাব, পুলিশ এবং বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাউকেই থাকতে দেন না। মোবাইল কোর্টের এহেন আচরণ জনসম্মুখে বিচার অস্বীকার করে, যা সংবিধানের ৩৫(৩) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে চলেছেন। মানবাধিকার আইনের নীতিমালা মতে, একজন অভিযুক্তকে অবশ্যই নিম্নলিখিত সুযোগ দিতে হবে।

ক) সুস্পষ্ট অভিযোগ লিখিতভাবে আনতে হবে। খ) অভিযোগ সমর্থনে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। গ) অভিযোগ প্রমাণে সাক্ষীদের জবানবন্দি নিতে হবে। ঘ) অভিযুক্তকে অভিযোগকারী ও তার সাক্ষীদের জেরার সুযোগ দিতে হবে। ঙ) অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য প্রস্তুুতির পর্যাপ্ত সুযোগ ও সময় দিতে হবে। চ) অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজ পছন্দ মোতাবেক বিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগের এবং পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। ছ) আত্মপক্ষ সমর্থনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাক্ষ্য ও সাক্ষী উপস্থাপনের সুযোগ দিতে হবে।

তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মূল কাজ হলো- লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্স বাতিলকরণ, প্রসিকিউশন অনুমোদন বা প্রত্যাহারকরণ ইত্যাদি যেসব কাজের প্রকৃতি প্রশাসনিক বা নির্বাহী ধরনের তা সম্পাদন করা। শুধু ‘ম্যাজিস্ট্রেট’ বলতে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে বোঝায়। ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা 4A(a) তে বিষয়গুলো স্পষ্ট করে বলা আছে। কাজেই কেউ যদি পরিচয় দেন ‘আমি ম্যাজিস্ট্রেট।’ ধরে নিতে হবে তিনি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। কোন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিজেকে শুধু ‘ম্যাজিস্ট্রেট’ হিসেবে পরিচয় দিতে পারেন না। কারণ একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বেতন স্কেল আর যিনি বিসিএসের মাধ্যমে সহকারী কমিশনার (প্রশাসন) হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন, তার বেতন স্কেল এক নয়।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

seraj.pramanik@gmail.com

back to top