সাঈদ চৌধুরী
দিন কয়েক আগে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় একজন রংমিস্ত্রি রং করতে গিয়ে বিদ্যুতের তারে আটকে গিয়ে প্রাণ হারালেন। ঝুলে পড়লেন বিদ্যুতের তারে, আগুন লেগে শরীর ঝলসে ধোঁয়া বের হয়ে প্রাণ পাখি আকাশের দিকে ভয়ে ছুটে পালালো!
তিনি একজন মানুষ ছিলেন! আমরা বাস্তবিক জীবনে তাকে মানুষ হিসেবে মনে করতেও ভুলে গেছি। অপমৃত্যুর দায় নিয়ে তিনি বেঁচে থাকলে শাস্তিও দেয়া যেতে পারতো হয়ত!পল্লী বিদ্যুৎ ব্যাখ্যা দিল আগে জানালে তারা বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে দিত, যে বাড়ির হয়ে কাজ করছিলেন সে বাড়ির মালিক বললেন অসাবধানবসতই বিষয়টি ঘটে গেছে! মানে কেউ দোষী নয়! সবাই যার যার মতো দায় এড়াতে গিয়ে নিজের যে সামান্য কিছু দায়িত্ব ছিল তাও হয়ত ভুলে গিয়েছেন। কেউ আইনে তাদেও শাস্তির ব্যাপারে প্রয়োনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও তুলল না।
ঠিক এই কিছু আগের একটি কথা। ফুটফুটে একটি শিশু বাড়িতে মায়ের হাতে নাস্তা কওে বাবার হাত ধরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে আনন্দে স্কুলে যাচ্চিল।
ঠিক এমন সময় পুরো অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে পাশে থাকা একটি পুরোনো দেয়াল ধসে বাবার আঙ্গুল ধরে হাঁটা শিশুটি মারা গিয়েছিল! কি নির্মম! কারও বিরুদ্ধেই এ দোষ প্রমাণ করা গেল না! দায়িত্বরত সবাই আগে থেকেই অনেক অনেক ডকুমেন্ট তৈরি করে রেখেছেন। সুতরাং সবাই নির্দোষ! শুধু নির্দোষই নয় যেন শিশুটি মরেই তাদের ঝামেলা শুরু হয়েছে এমন একটা অসহ্য যন্ত্রণাময় ভাব তাদেন চোখে-মুখে!
কোন সংবাদমাধ্যমেই বিদ্যুতে নিহত এ মানুষটির পরিবারের কথা প্রকাশ করল না! এখানে কেউ অনিরাপদে মারা গেলে কারও কোন দোষ নেই। আমরা যখন বায়ারদের চাপে বলি ফ্যাক্টরি কমপ্লায়েন্স করে চালাই তখন বড্ড অপরাধ বোধ হয় এই ভেবে যে যদি কোন চাপ না থাকত তবে হয়ত আমাদের শ্রমিকদের জীবনও এমনই অনিরাপদভাবেই দেখতো মালিকরা!
একটি সিটি করপোরেশন অথবা পৌরসভা বা ইউনিয়নের সামগ্রিক প্রশাসনিক ক্ষমতা এবং এর বিপরীতে নিরাপত্তার দায় কতটুকু মেনে চলেন আমাদের প্রশাসকেরা? তারা কি তবে এ বিষয়গুলো নিয়ে কোন জবাব দিতে প্রস্তুত নয়! যখন বক্তব্যে পুরোপুরি অস্পষ্ট এবং এবারই শুধু আইনের আওতায় আনা হলো যে পরিবারে একজন মানুষ আয় করেন সে পরিবারে এমন দুর্ঘটনা মানে হচ্ছে পুরো পরিবারটিই ছিটকে পড়া। প্রতিদিনই এমন মৃত্যু ঘটছে। সড়কে মরছে, কাজ করতে গিয়ে মরছে, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এক্সিডেন্টের কারণে মৃত্যু ঘটেই যাচ্ছে প্রতিনিয়ত!
সেদিন থার্টি ফাস্ট নাইটে যা হলো! পটকা ফুটছে, ফানুস উড়ছে আর কান্নার শব্দ, হইহুল্লোরে মিশে একার হয়ে কত ক্ষতিই না হলো! পটকার শব্দে ছোট্ট একজন শিশু মারা গেল। শিশুটির বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে তার ঠোঁট কাঁপা কান্না দেখে মনে হচ্ছিল আমরা যেন আর সভ্য নই। টেলিভিশনে একজন ডাক্তারের গম্ভিরভাবে বলতে শুনলাম বিকট শব্দ শিশুর মস্তিষ্ক এবং হার্টকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। শহর কি নিষিদ্ধ করতে পারল বিকট শব্দ? আমাদের মাওনায় বাড়ির দেয়াল ঘেঁষে যে বিদ্যুতের তার তা কি উঠিয়ে দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ? কেউ কি এমন কিছু ভেবেছে ?
আনসার রোড হতে গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ির এখানে রাস্তার পাশে আট থেকে ১০ ফিট গর্ত করে ড্রেনের কাজ চালানো হচ্ছে। সারা বাংলাদেশের অনেক জায়গায়ই এমন অবস্থা! কবে শেষ হবে, কবে গর্ত বন্ধ হবে তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। ঠিকাদার বলে এক ধরনের কথা আর প্রকৌশলী বলে আরেক ধরনের কথা! এই গর্তের ওপর দিয়ে খুব ভয়ে স্কুলের বাচ্চারা পাড় হয়! ছোট্ট ছোট্ট পাগুলো হঠাৎ ফসকে গেলেই চূড়ান্ত মৃত্যু, আরেকটি ফুলের পতন! দেয়ালগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে পাশে দেয়ালগুলোও। অথচ কেউ দেখে না! তবে কি এখানেও বড় দুর্ঘটনার পর আরেকটি ব্যাখ্যা শুনব আমরা?
আমাদের বৈশিষ্ট্য হলো আমরা যত তাড়াতাড়ি ভুলে যেতে পারি! কিন্তু শিশুটির পরিবার অথবা যে লোকটি বিদ্যুতের তারে ঝুলেছিল প্রায় ঘণ্টা দেড়েক তার সন্তান?
কি ভাবনা রেখে গেল তারা? তারাও তো শিখল এ সমাজে নিরাপত্তার জায়গাটি শুধুই ভাগ্য নামক পরিহাস দখল করে আছে!
আমরা কি আদৌ সভ্য মানুষ হতে পারব? কেউই কি দেখাবে কোন সুষ্ঠু নিয়মের পথ?
[লেখক : রসায়নবিদ]
সাঈদ চৌধুরী
রোববার, ১৬ জানুয়ারী ২০২২
দিন কয়েক আগে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় একজন রংমিস্ত্রি রং করতে গিয়ে বিদ্যুতের তারে আটকে গিয়ে প্রাণ হারালেন। ঝুলে পড়লেন বিদ্যুতের তারে, আগুন লেগে শরীর ঝলসে ধোঁয়া বের হয়ে প্রাণ পাখি আকাশের দিকে ভয়ে ছুটে পালালো!
তিনি একজন মানুষ ছিলেন! আমরা বাস্তবিক জীবনে তাকে মানুষ হিসেবে মনে করতেও ভুলে গেছি। অপমৃত্যুর দায় নিয়ে তিনি বেঁচে থাকলে শাস্তিও দেয়া যেতে পারতো হয়ত!পল্লী বিদ্যুৎ ব্যাখ্যা দিল আগে জানালে তারা বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে দিত, যে বাড়ির হয়ে কাজ করছিলেন সে বাড়ির মালিক বললেন অসাবধানবসতই বিষয়টি ঘটে গেছে! মানে কেউ দোষী নয়! সবাই যার যার মতো দায় এড়াতে গিয়ে নিজের যে সামান্য কিছু দায়িত্ব ছিল তাও হয়ত ভুলে গিয়েছেন। কেউ আইনে তাদেও শাস্তির ব্যাপারে প্রয়োনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও তুলল না।
ঠিক এই কিছু আগের একটি কথা। ফুটফুটে একটি শিশু বাড়িতে মায়ের হাতে নাস্তা কওে বাবার হাত ধরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে আনন্দে স্কুলে যাচ্চিল।
ঠিক এমন সময় পুরো অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে পাশে থাকা একটি পুরোনো দেয়াল ধসে বাবার আঙ্গুল ধরে হাঁটা শিশুটি মারা গিয়েছিল! কি নির্মম! কারও বিরুদ্ধেই এ দোষ প্রমাণ করা গেল না! দায়িত্বরত সবাই আগে থেকেই অনেক অনেক ডকুমেন্ট তৈরি করে রেখেছেন। সুতরাং সবাই নির্দোষ! শুধু নির্দোষই নয় যেন শিশুটি মরেই তাদের ঝামেলা শুরু হয়েছে এমন একটা অসহ্য যন্ত্রণাময় ভাব তাদেন চোখে-মুখে!
কোন সংবাদমাধ্যমেই বিদ্যুতে নিহত এ মানুষটির পরিবারের কথা প্রকাশ করল না! এখানে কেউ অনিরাপদে মারা গেলে কারও কোন দোষ নেই। আমরা যখন বায়ারদের চাপে বলি ফ্যাক্টরি কমপ্লায়েন্স করে চালাই তখন বড্ড অপরাধ বোধ হয় এই ভেবে যে যদি কোন চাপ না থাকত তবে হয়ত আমাদের শ্রমিকদের জীবনও এমনই অনিরাপদভাবেই দেখতো মালিকরা!
একটি সিটি করপোরেশন অথবা পৌরসভা বা ইউনিয়নের সামগ্রিক প্রশাসনিক ক্ষমতা এবং এর বিপরীতে নিরাপত্তার দায় কতটুকু মেনে চলেন আমাদের প্রশাসকেরা? তারা কি তবে এ বিষয়গুলো নিয়ে কোন জবাব দিতে প্রস্তুত নয়! যখন বক্তব্যে পুরোপুরি অস্পষ্ট এবং এবারই শুধু আইনের আওতায় আনা হলো যে পরিবারে একজন মানুষ আয় করেন সে পরিবারে এমন দুর্ঘটনা মানে হচ্ছে পুরো পরিবারটিই ছিটকে পড়া। প্রতিদিনই এমন মৃত্যু ঘটছে। সড়কে মরছে, কাজ করতে গিয়ে মরছে, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এক্সিডেন্টের কারণে মৃত্যু ঘটেই যাচ্ছে প্রতিনিয়ত!
সেদিন থার্টি ফাস্ট নাইটে যা হলো! পটকা ফুটছে, ফানুস উড়ছে আর কান্নার শব্দ, হইহুল্লোরে মিশে একার হয়ে কত ক্ষতিই না হলো! পটকার শব্দে ছোট্ট একজন শিশু মারা গেল। শিশুটির বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে তার ঠোঁট কাঁপা কান্না দেখে মনে হচ্ছিল আমরা যেন আর সভ্য নই। টেলিভিশনে একজন ডাক্তারের গম্ভিরভাবে বলতে শুনলাম বিকট শব্দ শিশুর মস্তিষ্ক এবং হার্টকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। শহর কি নিষিদ্ধ করতে পারল বিকট শব্দ? আমাদের মাওনায় বাড়ির দেয়াল ঘেঁষে যে বিদ্যুতের তার তা কি উঠিয়ে দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ? কেউ কি এমন কিছু ভেবেছে ?
আনসার রোড হতে গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ির এখানে রাস্তার পাশে আট থেকে ১০ ফিট গর্ত করে ড্রেনের কাজ চালানো হচ্ছে। সারা বাংলাদেশের অনেক জায়গায়ই এমন অবস্থা! কবে শেষ হবে, কবে গর্ত বন্ধ হবে তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। ঠিকাদার বলে এক ধরনের কথা আর প্রকৌশলী বলে আরেক ধরনের কথা! এই গর্তের ওপর দিয়ে খুব ভয়ে স্কুলের বাচ্চারা পাড় হয়! ছোট্ট ছোট্ট পাগুলো হঠাৎ ফসকে গেলেই চূড়ান্ত মৃত্যু, আরেকটি ফুলের পতন! দেয়ালগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে পাশে দেয়ালগুলোও। অথচ কেউ দেখে না! তবে কি এখানেও বড় দুর্ঘটনার পর আরেকটি ব্যাখ্যা শুনব আমরা?
আমাদের বৈশিষ্ট্য হলো আমরা যত তাড়াতাড়ি ভুলে যেতে পারি! কিন্তু শিশুটির পরিবার অথবা যে লোকটি বিদ্যুতের তারে ঝুলেছিল প্রায় ঘণ্টা দেড়েক তার সন্তান?
কি ভাবনা রেখে গেল তারা? তারাও তো শিখল এ সমাজে নিরাপত্তার জায়গাটি শুধুই ভাগ্য নামক পরিহাস দখল করে আছে!
আমরা কি আদৌ সভ্য মানুষ হতে পারব? কেউই কি দেখাবে কোন সুষ্ঠু নিয়মের পথ?
[লেখক : রসায়নবিদ]