alt

উপ-সম্পাদকীয়

ডিজিটাল বাংলাদেশ : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

মোস্তাফা জব্বার

: সোমবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২২

দুই

বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের বড় ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে ১৯৯৬ সাল থেকে। তবে ৯৬ সালের বিদায়ী বিএনপি সরকার এ বিষয়ে সামান্যতম উদ্যোগও গ্রহণ করেনি। এর আগের পুরো পাঁচটি বছর তারা এই খাতে নিষ্ক্রিয়তার মাঝে ডুবে থাকে। অথচ সারা দুনিয়ায় তখন তথ্যপ্রযুক্তির জোয়ার এসেছিল। সেই সময়ে প্রথম কিছুটা সচেতনতা সৃষ্টি হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণে। শুধু তাউ নয় ৭৫ পরবর্তী ৯৬-এর আগের সরকারগুলোও তথ্যপ্রযুক্তির জন্য কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এরপর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবর্ণ সময়ের সূচনা হয় শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বিগত শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারটি ঘটনা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে- সেই চারটিরই নেতৃত্ব ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের।

১) ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ অনলাইন ইন্টারনেটের যুগে পা রাখে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এর সূচনা হলেও বস্তুত আওয়ামী লীগ সরকার একে সুসংহত করে এবং আমরা অনলাইন ইন্টারনেটের যুগে বসবাস করা শুরু করি।

২) ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে মোবাইল প্রযুক্তিকে উন্মুক্ত করা হয়। এটিও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি মাইলফলক কাজ। এই কাজটি না করা হলে আজকের মোবাইল বিপ্লব আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারতাম না।

৩) ১৯৯৭ সালে সরকার বাংলাদেশ থেকে সফটওয়্যার রপ্তানি বাড়ানো বিষয়ে সুপারিশ করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন সেই টাস্কফোর্সের সদস্যরা (লেখক নিজেও এর সদস্য ছিলেন) সরকারের কাছে কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার করাসহ মোট ৪৫টি সুপারিশ পেশ করে এবং সরকার সেই সুপারিশগুলো গ্রহণ করে তার সবকটি সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক প্রয়াস গ্রহণ করে। সেই বছরেরই ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সফটওয়্যার কেমন করে রপ্তানি করা যায় তার ওপর একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয় যাতে ভারতের সফটওয়্যার সমিতি নাসকমের নির্বাহীপরিচালক প্রয়াত দেওয়াং মেহতা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে মেহতাকে তার বক্তব্য অনুসরণ করার পরিপূর্ণ আশ্বাস প্রদান করা হয়। এই সেমিনারে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১৯৯৮ সালের ৪ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় সফটওয়্যারকে শুল্কমুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাসহ যুগান্তকারী কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যার একটি উল্লেখযোগ্য বাস্তবায়ন হচ্ছে ৯৮-৯৯ সালের বাজেটে কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক ও কর প্রত্যাহার।

৪) ১৯৯৮-৯৯ সালের বাজেটে কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রভাবে এই প্রযুক্তি সহজলভ্য ও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মাঝে আসে। এই কাজটির প্রভাবেই আজ আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলতে পারছি।

আমি আগেই বলেছি, এই কয়টি বড় কাজই করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন তিনি প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রতি তার ব্যক্তিগত আগ্রহ ও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শ এসব সিদ্ধান্ত নিতে তাকে উৎসাহিত করেছে। একই সময়ে তিনি দেশে কম্পিউটার শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৯২ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে লড়াই করতে করতে ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশে নবম-দশম শ্রেণীতে কম্পিউটার বিষয়টি পাঠ্য করা হয়। ১৯৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষা বিষয়টি পাঠ্য হয়। এই দুটি কাজ করতে বিএনপি সরকার এত বেশি সময় নেয় যে, এই বিলম্বের জন্য পুরো জাতি অন্তত ৩ বছর পিছিয়ে যায়। বেগম জিয়ার সরকার ইচ্ছা করলেই ১৯৯৩ সালে নবম শ্রেণীতে এই বিষয়টি পাঠ্য করতে পারত। ১৯৯২ সালেই বিষয়টির পাঠক্রম তৈরি হয়ে গিয়েছিল। একই কারণে ১৯৯৩ বা ১৯৯৪ সালে বিষয়টি একাদশ শ্রেণীতে পাঠ্য হতে পারত। কিন্তু তখনকার সরকার সেটিও করেনি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর উচ্চতর পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষায় একটি বিপ্লব আসে। বছরে ১০ হাজার প্রোগ্রামার তৈরির লক্ষ্য নিয়ে শেখ হাসিনার সরকার সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই সময়েই কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও স্নাতক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিষয়ের আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে সেটি দ্বিগুণ করা হয়। সেই সময়েই সফটওয়্যার এবং সেবা রপ্তানির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয় এবং একটি তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিষয়টি চালু করা থেকে শুরু করে আইসিটির অবকাঠামো তৈরিতে সরকারের ভূমিকা ছিল ইতিবাচক।

তার প্রথম শাসনকালে শেখ হাসিনার অমর কীর্তি হচ্ছে ৯১ সালে নিজে কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, তার দলকে কম্পিউটারের যুগে নেয়া এবং ৯৬ সালের নির্বাচনকে ডিজিটাল পদ্ধতির নির্বাচনে পরিণত করা।

৫) বিগত শতকের শেষ দিকে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি, বেসিস ও আইএসপিএবির জন্ম হয়। এই সব সমিতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে, ১৯৮৭ সালের ২৬ জানুয়ারি জন্ম নেয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি কম্পিউটারকে জনপ্রিয়, সহজলভ্য ও ব্যবহারযোগ্য করার জন্য দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মকা- পরিচালনা করে আসছে। ১৯৯২ সালে নিবন্ধিত হওয়ার পর ১৯৯৩ সালে প্রথম কম্পিউটারের মেলার আয়োজন করা থেকে শুরু করে কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার, ডিজিটাল যন্ত্রে বাংলা ভাষা প্রমিতকরণ, কম্পিউটার শিক্ষার প্রসার, ইন্টারনেটের বিকাশ, রাষ্ট্র-সমাজ-ব্যক্তির জীবনের ডিজিটাল রূপান্তর এবং শিক্ষায় কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহারসহ সব নীতিনির্ধারণী কাজে এই সমিতির ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। ২০০৮ সালে সমিতি এজন্য রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের ভূষিত হয়। এখন এই সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি আঞ্চলিক কমিটিগুলোও ব্যাপকভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসারে কাজ করছে। তবে এটি উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সমিতি যে ভূমিকা পালন করতে পেরেছে সেটি এর আগে এমনকি তার পরের ২০০১-০৭ সময়কালের সরকারও পারেনি। ১৯৯৬-২০০১ সময়কালে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি কার্যত তাদের সব প্রস্তাবাবলি ও দাবি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়। ২০০৯ সালের পর সমিতি আবারও একটি আইসিটিবান্ধব সরকার পাওয়ার ফলে যুগান্তকারী অবদান রাখতে সক্ষম হয়। বিগত এক যুগে সফটওয়্যার খাতের বিকাশে বেসিস, ইন্টারনেট খাতের বিকাশে আইএসপিএবি, মোবাইল খাতের বিকাশে এমটব এবং কলসেন্টারের বিকাশে বাকো তাদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

তবে আওয়ামী লীগের মতো আইসিটিবান্ধব সরকার না পেলে এসব সমিতিও তাদের কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে না। ১৯৯৬-২০০১ সময়কাল তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলও জন্ম নেয় বিগত শতকে। ১৯৮৩ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে জাতীয় কম্পিউটার কমিটির জন্ম হয়। সেটি পরে ১৯৯০ সালের বিসিসি আইনের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে রূপান্তরিত হয়। সেই সময়ে কোন কোন ক্ষেত্রে এর ভূমিকা ছিল বিভ্রান্তিকর। তবে ১৯৯৬ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকার এই সংস্থাটিকে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের সহায়ক একটি সংস্থায় পরিণত করে। ২০২২ সালে আমরা খুব সহজেই এটি উপলব্ধি করতে পারি যে, ৯৬-০১, ২০০৯-২১ সময়কালে এই সংস্থাটির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ যেসব কাজ করে তার সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। সার্বিকভাবে এই কথাটি বলতেই হবে যে, বিগত শতকে শেখ হাসিনা লীগ সরকারের প্রথম পাঁচ বছর ছিল দেশে এই খাতের বিকাশের উল্লেখযোগ্য প্রথম সময়। অন্যদিকে অন্যসরকারগুলো এই খাতটির গুরুত্ব তেমনভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়নি।

তবে বেসরকারি খাত ১৯৮৭ সালের পর থেকে তাদের মতো করে নিজেদের পথ তৈরি করে চলেছে। বেসরকারি খাতের প্রচেষ্টা বেগম জিয়া ও এরশাদের সরকারসমূহের ব্যর্থতাকে অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছে। সেই সময়ে দেশের জনগণ একুশ শতকে যাত্রা করার জন্য আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। হতে পারত যে, আমাদের প্রস্তুতি আরও সুসংহত ও কাঠামোগতভাবে সমৃদ্ধ করা যেত। বিশেষ করে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময় থেকে বেগম জিয়ার সময়কাল পর্যন্ত আমাদের এই ক্ষেত্রে আগ্রহ আরও বেশি থাকতে পারত। তৎকালে সরকারের সহায়তা পরিকল্পিত ও সুসংবদ্ধ হতে পারত। আইসিটির জন্য অবকাঠামো তৈরি, আইন ও নীতিগত সহায়তা প্রদান এবং আইসিটি শিক্ষার প্রসারে বেগম জিয়া ও এরশাদ সরকার ন্যূনতম পদক্ষেপ নিলে আমরা আরও অনেক আগেই এই খাতে অগ্রগতির পথে যেতে পারতাম। ভারত সেই সময়ে আইসিটি শিক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালার আলোকে অত্যন্ত বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আশির দশকে তারা আইআইটিগুলো প্রতিষ্ঠা করে, যে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের এই খাতের শক্ত ভিত রচনা করে। আমাদের দেশের সরকারও ৭৬-৯৬ সময়কালে আইসিটিকে আরও ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে পারত। সেই সময়ে দুনিযা জোড়া ক্রমান্বয়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটে। আশির দশকেই সাধারণ মানুষের হাতে কম্পিউটার পৌঁছায় ব্যাপকভাবে। কিন্তু বাংলাদেশে তেমনভাবে তার প্রভাব পড়েনি। বিশেষ করে, ১৯৯২ সালে আমরা যখন বিনা মূল্যে সি-মি-উই ৩-এ যুক্ত হবার অফার পাই তখন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা মোটেই যুক্তিসঙ্গত কাজ ছিল না। এই একটি মাত্র ব্যর্থতার দায় পুরো জাতিকে অনেকটা পথ পিছিয়ে দিয়েছে। প্রায় দেড় দশক এজন্য আমরা অপেক্ষা করেছি একটি সাবমেরিন ক্যাবল লাইনে যুক্ত হওয়ার জন্য। এই অপূরণীয় ক্ষতি আমাদের জন্য একটি বড় দুঃখজনক ঘটনা।

ঘটনাচক্রে শেখ হাসিনার হাতে এই শতক শুরু হলেও দেশ পরিচালনার জন্য এই শতকের প্রথম দশকের রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকে বেগম খালেদা জিয়ারই হাতে। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০০১ সালের শেষ প্রান্তিক পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করলেও ২০০১ সালের শেষ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া দেশ পরিচালনা করেন। আইসিটি খাতে তার শাসনকালের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ছিল বাংলাদেশের জন্য ২০০৩ সালে একটি আইসিটি পলিসি প্রণয়ন ও সিমিউই-৪ এর সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করা। তবে ২০০৩ সালের পলিসিটি এতোই ত্রুটিপূর্ণ ছিল যে, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেটিকে নতুন করে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যা ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকারের নীতিমালা হিসেবে গৃহীত হয়। সেই নীতিমালাটির সবচেয়ে বড় ক্রটি ছিল যে, তাতে কোন কর্ম পরিকল্পনা বা টাইমলাইন ছিল না। প্রস্তাবিত নীতিসমূহকে বাস্তবায়ন করবে তারও কোন সিদ্ধান্ত তাতে ছিল না। ফলে কাগজের নীতিমালা কাগুজেই থেকে যায়। অন্যদিকে ১৯৯২ সালে যে সাবমেরিন ক্যাবল লাইনে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব বেগম জিয়া প্রত্যাখ্যান করেন সেটি তিনি বাস্তবায়ন করেন ২০০৬ সালে। এতে দেশের অতিরিক্ত ব্যয় হয় ২১০ কোটি টাকা। তবে সাবমেরিন ক্যাবল কী কাজে লাগবে বা এটি দেশকে কোন পথে নিয়ে যাবে তার কোন নির্দেশনা বেগম জিয়ার সরকার দেয়নি। কার্যত এই সংযোগটি বাংলাদেশের অবকাঠামোর তালিকায় এলেও একে কার্যকর হতে হয় ২০০৯ সালের পর থেকে। কারণ, তখনই এর প্রকৃত ব্যবহার শুরু হয়। ব্যান্ডউইথের আকাশচুম্বি দাম রেখে বেগম জিয়ার সরকার তাকে সাধারণ মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রেখে দেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার একে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মাঝে নিয়ে আসেন।

[লেখক : ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী]

ঢাকা। ২৬ মার্চ, ২০১৯।

আপডেট : ১৫ জানুয়ারি, ২০২২।

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ডিজিটাল বাংলাদেশ : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

মোস্তাফা জব্বার

সোমবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২২

দুই

বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের বড় ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে ১৯৯৬ সাল থেকে। তবে ৯৬ সালের বিদায়ী বিএনপি সরকার এ বিষয়ে সামান্যতম উদ্যোগও গ্রহণ করেনি। এর আগের পুরো পাঁচটি বছর তারা এই খাতে নিষ্ক্রিয়তার মাঝে ডুবে থাকে। অথচ সারা দুনিয়ায় তখন তথ্যপ্রযুক্তির জোয়ার এসেছিল। সেই সময়ে প্রথম কিছুটা সচেতনতা সৃষ্টি হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণে। শুধু তাউ নয় ৭৫ পরবর্তী ৯৬-এর আগের সরকারগুলোও তথ্যপ্রযুক্তির জন্য কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এরপর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবর্ণ সময়ের সূচনা হয় শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বিগত শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারটি ঘটনা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে- সেই চারটিরই নেতৃত্ব ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের।

১) ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ অনলাইন ইন্টারনেটের যুগে পা রাখে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এর সূচনা হলেও বস্তুত আওয়ামী লীগ সরকার একে সুসংহত করে এবং আমরা অনলাইন ইন্টারনেটের যুগে বসবাস করা শুরু করি।

২) ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে মোবাইল প্রযুক্তিকে উন্মুক্ত করা হয়। এটিও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি মাইলফলক কাজ। এই কাজটি না করা হলে আজকের মোবাইল বিপ্লব আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারতাম না।

৩) ১৯৯৭ সালে সরকার বাংলাদেশ থেকে সফটওয়্যার রপ্তানি বাড়ানো বিষয়ে সুপারিশ করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন সেই টাস্কফোর্সের সদস্যরা (লেখক নিজেও এর সদস্য ছিলেন) সরকারের কাছে কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার করাসহ মোট ৪৫টি সুপারিশ পেশ করে এবং সরকার সেই সুপারিশগুলো গ্রহণ করে তার সবকটি সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক প্রয়াস গ্রহণ করে। সেই বছরেরই ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সফটওয়্যার কেমন করে রপ্তানি করা যায় তার ওপর একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয় যাতে ভারতের সফটওয়্যার সমিতি নাসকমের নির্বাহীপরিচালক প্রয়াত দেওয়াং মেহতা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে মেহতাকে তার বক্তব্য অনুসরণ করার পরিপূর্ণ আশ্বাস প্রদান করা হয়। এই সেমিনারে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১৯৯৮ সালের ৪ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় সফটওয়্যারকে শুল্কমুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাসহ যুগান্তকারী কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যার একটি উল্লেখযোগ্য বাস্তবায়ন হচ্ছে ৯৮-৯৯ সালের বাজেটে কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক ও কর প্রত্যাহার।

৪) ১৯৯৮-৯৯ সালের বাজেটে কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রভাবে এই প্রযুক্তি সহজলভ্য ও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মাঝে আসে। এই কাজটির প্রভাবেই আজ আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলতে পারছি।

আমি আগেই বলেছি, এই কয়টি বড় কাজই করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন তিনি প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রতি তার ব্যক্তিগত আগ্রহ ও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শ এসব সিদ্ধান্ত নিতে তাকে উৎসাহিত করেছে। একই সময়ে তিনি দেশে কম্পিউটার শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৯২ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে লড়াই করতে করতে ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশে নবম-দশম শ্রেণীতে কম্পিউটার বিষয়টি পাঠ্য করা হয়। ১৯৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষা বিষয়টি পাঠ্য হয়। এই দুটি কাজ করতে বিএনপি সরকার এত বেশি সময় নেয় যে, এই বিলম্বের জন্য পুরো জাতি অন্তত ৩ বছর পিছিয়ে যায়। বেগম জিয়ার সরকার ইচ্ছা করলেই ১৯৯৩ সালে নবম শ্রেণীতে এই বিষয়টি পাঠ্য করতে পারত। ১৯৯২ সালেই বিষয়টির পাঠক্রম তৈরি হয়ে গিয়েছিল। একই কারণে ১৯৯৩ বা ১৯৯৪ সালে বিষয়টি একাদশ শ্রেণীতে পাঠ্য হতে পারত। কিন্তু তখনকার সরকার সেটিও করেনি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর উচ্চতর পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষায় একটি বিপ্লব আসে। বছরে ১০ হাজার প্রোগ্রামার তৈরির লক্ষ্য নিয়ে শেখ হাসিনার সরকার সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই সময়েই কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও স্নাতক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিষয়ের আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে সেটি দ্বিগুণ করা হয়। সেই সময়েই সফটওয়্যার এবং সেবা রপ্তানির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয় এবং একটি তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিষয়টি চালু করা থেকে শুরু করে আইসিটির অবকাঠামো তৈরিতে সরকারের ভূমিকা ছিল ইতিবাচক।

তার প্রথম শাসনকালে শেখ হাসিনার অমর কীর্তি হচ্ছে ৯১ সালে নিজে কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, তার দলকে কম্পিউটারের যুগে নেয়া এবং ৯৬ সালের নির্বাচনকে ডিজিটাল পদ্ধতির নির্বাচনে পরিণত করা।

৫) বিগত শতকের শেষ দিকে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি, বেসিস ও আইএসপিএবির জন্ম হয়। এই সব সমিতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে, ১৯৮৭ সালের ২৬ জানুয়ারি জন্ম নেয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি কম্পিউটারকে জনপ্রিয়, সহজলভ্য ও ব্যবহারযোগ্য করার জন্য দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মকা- পরিচালনা করে আসছে। ১৯৯২ সালে নিবন্ধিত হওয়ার পর ১৯৯৩ সালে প্রথম কম্পিউটারের মেলার আয়োজন করা থেকে শুরু করে কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার, ডিজিটাল যন্ত্রে বাংলা ভাষা প্রমিতকরণ, কম্পিউটার শিক্ষার প্রসার, ইন্টারনেটের বিকাশ, রাষ্ট্র-সমাজ-ব্যক্তির জীবনের ডিজিটাল রূপান্তর এবং শিক্ষায় কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহারসহ সব নীতিনির্ধারণী কাজে এই সমিতির ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। ২০০৮ সালে সমিতি এজন্য রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের ভূষিত হয়। এখন এই সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি আঞ্চলিক কমিটিগুলোও ব্যাপকভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসারে কাজ করছে। তবে এটি উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সমিতি যে ভূমিকা পালন করতে পেরেছে সেটি এর আগে এমনকি তার পরের ২০০১-০৭ সময়কালের সরকারও পারেনি। ১৯৯৬-২০০১ সময়কালে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি কার্যত তাদের সব প্রস্তাবাবলি ও দাবি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়। ২০০৯ সালের পর সমিতি আবারও একটি আইসিটিবান্ধব সরকার পাওয়ার ফলে যুগান্তকারী অবদান রাখতে সক্ষম হয়। বিগত এক যুগে সফটওয়্যার খাতের বিকাশে বেসিস, ইন্টারনেট খাতের বিকাশে আইএসপিএবি, মোবাইল খাতের বিকাশে এমটব এবং কলসেন্টারের বিকাশে বাকো তাদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

তবে আওয়ামী লীগের মতো আইসিটিবান্ধব সরকার না পেলে এসব সমিতিও তাদের কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে না। ১৯৯৬-২০০১ সময়কাল তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলও জন্ম নেয় বিগত শতকে। ১৯৮৩ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে জাতীয় কম্পিউটার কমিটির জন্ম হয়। সেটি পরে ১৯৯০ সালের বিসিসি আইনের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে রূপান্তরিত হয়। সেই সময়ে কোন কোন ক্ষেত্রে এর ভূমিকা ছিল বিভ্রান্তিকর। তবে ১৯৯৬ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকার এই সংস্থাটিকে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের সহায়ক একটি সংস্থায় পরিণত করে। ২০২২ সালে আমরা খুব সহজেই এটি উপলব্ধি করতে পারি যে, ৯৬-০১, ২০০৯-২১ সময়কালে এই সংস্থাটির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ যেসব কাজ করে তার সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। সার্বিকভাবে এই কথাটি বলতেই হবে যে, বিগত শতকে শেখ হাসিনা লীগ সরকারের প্রথম পাঁচ বছর ছিল দেশে এই খাতের বিকাশের উল্লেখযোগ্য প্রথম সময়। অন্যদিকে অন্যসরকারগুলো এই খাতটির গুরুত্ব তেমনভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়নি।

তবে বেসরকারি খাত ১৯৮৭ সালের পর থেকে তাদের মতো করে নিজেদের পথ তৈরি করে চলেছে। বেসরকারি খাতের প্রচেষ্টা বেগম জিয়া ও এরশাদের সরকারসমূহের ব্যর্থতাকে অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছে। সেই সময়ে দেশের জনগণ একুশ শতকে যাত্রা করার জন্য আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। হতে পারত যে, আমাদের প্রস্তুতি আরও সুসংহত ও কাঠামোগতভাবে সমৃদ্ধ করা যেত। বিশেষ করে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময় থেকে বেগম জিয়ার সময়কাল পর্যন্ত আমাদের এই ক্ষেত্রে আগ্রহ আরও বেশি থাকতে পারত। তৎকালে সরকারের সহায়তা পরিকল্পিত ও সুসংবদ্ধ হতে পারত। আইসিটির জন্য অবকাঠামো তৈরি, আইন ও নীতিগত সহায়তা প্রদান এবং আইসিটি শিক্ষার প্রসারে বেগম জিয়া ও এরশাদ সরকার ন্যূনতম পদক্ষেপ নিলে আমরা আরও অনেক আগেই এই খাতে অগ্রগতির পথে যেতে পারতাম। ভারত সেই সময়ে আইসিটি শিক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালার আলোকে অত্যন্ত বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আশির দশকে তারা আইআইটিগুলো প্রতিষ্ঠা করে, যে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের এই খাতের শক্ত ভিত রচনা করে। আমাদের দেশের সরকারও ৭৬-৯৬ সময়কালে আইসিটিকে আরও ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে পারত। সেই সময়ে দুনিযা জোড়া ক্রমান্বয়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটে। আশির দশকেই সাধারণ মানুষের হাতে কম্পিউটার পৌঁছায় ব্যাপকভাবে। কিন্তু বাংলাদেশে তেমনভাবে তার প্রভাব পড়েনি। বিশেষ করে, ১৯৯২ সালে আমরা যখন বিনা মূল্যে সি-মি-উই ৩-এ যুক্ত হবার অফার পাই তখন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা মোটেই যুক্তিসঙ্গত কাজ ছিল না। এই একটি মাত্র ব্যর্থতার দায় পুরো জাতিকে অনেকটা পথ পিছিয়ে দিয়েছে। প্রায় দেড় দশক এজন্য আমরা অপেক্ষা করেছি একটি সাবমেরিন ক্যাবল লাইনে যুক্ত হওয়ার জন্য। এই অপূরণীয় ক্ষতি আমাদের জন্য একটি বড় দুঃখজনক ঘটনা।

ঘটনাচক্রে শেখ হাসিনার হাতে এই শতক শুরু হলেও দেশ পরিচালনার জন্য এই শতকের প্রথম দশকের রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকে বেগম খালেদা জিয়ারই হাতে। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০০১ সালের শেষ প্রান্তিক পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করলেও ২০০১ সালের শেষ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া দেশ পরিচালনা করেন। আইসিটি খাতে তার শাসনকালের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ছিল বাংলাদেশের জন্য ২০০৩ সালে একটি আইসিটি পলিসি প্রণয়ন ও সিমিউই-৪ এর সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করা। তবে ২০০৩ সালের পলিসিটি এতোই ত্রুটিপূর্ণ ছিল যে, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেটিকে নতুন করে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যা ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকারের নীতিমালা হিসেবে গৃহীত হয়। সেই নীতিমালাটির সবচেয়ে বড় ক্রটি ছিল যে, তাতে কোন কর্ম পরিকল্পনা বা টাইমলাইন ছিল না। প্রস্তাবিত নীতিসমূহকে বাস্তবায়ন করবে তারও কোন সিদ্ধান্ত তাতে ছিল না। ফলে কাগজের নীতিমালা কাগুজেই থেকে যায়। অন্যদিকে ১৯৯২ সালে যে সাবমেরিন ক্যাবল লাইনে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব বেগম জিয়া প্রত্যাখ্যান করেন সেটি তিনি বাস্তবায়ন করেন ২০০৬ সালে। এতে দেশের অতিরিক্ত ব্যয় হয় ২১০ কোটি টাকা। তবে সাবমেরিন ক্যাবল কী কাজে লাগবে বা এটি দেশকে কোন পথে নিয়ে যাবে তার কোন নির্দেশনা বেগম জিয়ার সরকার দেয়নি। কার্যত এই সংযোগটি বাংলাদেশের অবকাঠামোর তালিকায় এলেও একে কার্যকর হতে হয় ২০০৯ সালের পর থেকে। কারণ, তখনই এর প্রকৃত ব্যবহার শুরু হয়। ব্যান্ডউইথের আকাশচুম্বি দাম রেখে বেগম জিয়ার সরকার তাকে সাধারণ মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রেখে দেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার একে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মাঝে নিয়ে আসেন।

[লেখক : ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী]

ঢাকা। ২৬ মার্চ, ২০১৯।

আপডেট : ১৫ জানুয়ারি, ২০২২।

back to top