alt

উপ-সম্পাদকীয়

পরিবেশ রক্ষায় জলাভূমির গুরুত্ব

জিল্লুর রহমান

: শনিবার, ০২ এপ্রিল ২০২২

প্রবাদ ছিল, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ। কিন্তু ধীরে ধীরে জলাশয় ভরাট হওয়ায় আমরা মাছে ভাতে বাঙালির পুরোনো গৌরব হারিয়ে ফেলেছি। জীবন-জীবিকা ও পরিবেশের সুরক্ষা হুমকির সম্মুখীন।

পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, হাওর-বাঁওড়সহ প্রাকৃতিক জলাধারগুলো ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। এ ছাড়া পরিবেশকে শীতল রাখা, বর্ষা মৌসুমে বন্যা প্রতিরোধ, শহরে জলাবদ্ধতা নিরসন, পানির চাহিদা পূরণ ও আবর্জনা পরিশোধনে জলাভূমিগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।

কিন্তু দুঃখের বিষয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শহরে-গ্রামে এখন জলাভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ নিজেদের ইচ্ছেমতো জলাভূমিগুলো ভরাট করছেন। এদেশে নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, হাওর-বাঁওড়ের অভাব নেই, শুধু সংরক্ষণ করার অভাব! গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও শহর পর্যায়ে একের পর এক জলাভূমিগুলো ভরাট করা হচ্ছে।

‘প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০’ অনুযায়ী কোনো পুকুর-জলাশয়, নদী-খাল ভরাট করা সম্পূর্ণ বেআইনি। আবার বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ অনুযায়ী জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি, এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর বা জলাধার ভরাট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় বর্তমানে আইন অমান্য করে বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো ধ্বংস করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছেন। এর ফলে জলাভূমির ওপর নির্ভরশীল মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

শহরাঞ্চলে সুষ্ঠুভাবে বসবাসের জন্য জলাভূমির ব্যাপক প্রয়োজন রয়েছে। কেননা জলাভূমিগুলো নগরের তাৎক্ষণিক পানি সরবরাহের সবচেয়ে বড় উৎস। ২০১০ সালে যখন ঢাকার ‘ড্যাপ’ (ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা) বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়া হয়েছিল, তখন ভাবা হয়েছিল ঢাকার চারপাশের জলাভূমিগুলো রক্ষা পাবে। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ভূমিদস্যুতা ও প্রভাবশালীদের চাপে একের পর এক জলাভূমি হারিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে।

রাজধানী ঢাকা শহরে এক সময় প্রায় ২ হাজার পুকুর, ৫২টি খাল ও অসংখ্য ঝিল ছিল। কিন্তু এর বেশির ভাগই এখন আবাসনের চাহিদা মেটাতে নিচু জায়গা ভরাট করতে গিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। শুধু ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে বছরে প্রায় ৫ হাজার একর জলাভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। আর এভাবে সারা দেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৪২ হাজার একর জলাধার ভরাট করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা শহরে জলাভূমি ভরাটের বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বেশির ভাগ খাল ও নিচু জায়গা ভরাট করে ফেলার ফলে এখন একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় পড়তে হয় নগরবাসীকে।

‘নদ-নদীর দেশ’ হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশ থেকে একের পর এক জলাভূমি হারিয়ে যাওয়া মানে জেনে-বুঝে দেশের ক্ষতি ডেকে আনা। জলাভূমিগুলো হারিয়ে যাওয়ার ফলে জলাভূমি নির্ভর প্রান্তিক মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। জলাভূমিগুলো আমাদের সম্পদ, জীববৈচিত্র্যের আধার। জলবায়ু পরিবর্তনের এই পরিবর্তনশীল বাস্তবতায় জলাধারগুলো রক্ষা করা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

[লেখক : ব্যাংকার]

দক্ষ মানবসম্পদ ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার

আফ্রিকায় হঠাৎ কেন যুক্তরাষ্ট্রের ঝোঁক?

ঢাকা মহানগর ও বুড়িগঙ্গা

জামাই মেলা : উৎসব, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির রঙিন চিত্রপট

হারিয়ে যাওয়া ক্লাস, কঠোর মূল্যায়ন আর প্রশ্নের জটিলতায় নুয়ে পড়া এক প্রজন্ম

বৈষম্য দূর করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলুন

চিকিৎসা যেন বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত না হয়

পথশিশু ও বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তির ব্যর্থতা

মেগা প্রকল্প : প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বচ্ছতা নিয়ে

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি

স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : উপগ্রহ চিত্র ও ওয়েবসাইটের অপরিহার্যতা

ক্ষমতা ও জনপ্রশাসন : আমলাতন্ত্রের ছায়াতলে আমজনতা

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

tab

উপ-সম্পাদকীয়

পরিবেশ রক্ষায় জলাভূমির গুরুত্ব

জিল্লুর রহমান

শনিবার, ০২ এপ্রিল ২০২২

প্রবাদ ছিল, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ। কিন্তু ধীরে ধীরে জলাশয় ভরাট হওয়ায় আমরা মাছে ভাতে বাঙালির পুরোনো গৌরব হারিয়ে ফেলেছি। জীবন-জীবিকা ও পরিবেশের সুরক্ষা হুমকির সম্মুখীন।

পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, হাওর-বাঁওড়সহ প্রাকৃতিক জলাধারগুলো ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। এ ছাড়া পরিবেশকে শীতল রাখা, বর্ষা মৌসুমে বন্যা প্রতিরোধ, শহরে জলাবদ্ধতা নিরসন, পানির চাহিদা পূরণ ও আবর্জনা পরিশোধনে জলাভূমিগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।

কিন্তু দুঃখের বিষয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শহরে-গ্রামে এখন জলাভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ নিজেদের ইচ্ছেমতো জলাভূমিগুলো ভরাট করছেন। এদেশে নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, হাওর-বাঁওড়ের অভাব নেই, শুধু সংরক্ষণ করার অভাব! গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও শহর পর্যায়ে একের পর এক জলাভূমিগুলো ভরাট করা হচ্ছে।

‘প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০’ অনুযায়ী কোনো পুকুর-জলাশয়, নদী-খাল ভরাট করা সম্পূর্ণ বেআইনি। আবার বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ অনুযায়ী জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি, এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর বা জলাধার ভরাট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় বর্তমানে আইন অমান্য করে বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো ধ্বংস করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছেন। এর ফলে জলাভূমির ওপর নির্ভরশীল মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

শহরাঞ্চলে সুষ্ঠুভাবে বসবাসের জন্য জলাভূমির ব্যাপক প্রয়োজন রয়েছে। কেননা জলাভূমিগুলো নগরের তাৎক্ষণিক পানি সরবরাহের সবচেয়ে বড় উৎস। ২০১০ সালে যখন ঢাকার ‘ড্যাপ’ (ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা) বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়া হয়েছিল, তখন ভাবা হয়েছিল ঢাকার চারপাশের জলাভূমিগুলো রক্ষা পাবে। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ভূমিদস্যুতা ও প্রভাবশালীদের চাপে একের পর এক জলাভূমি হারিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে।

রাজধানী ঢাকা শহরে এক সময় প্রায় ২ হাজার পুকুর, ৫২টি খাল ও অসংখ্য ঝিল ছিল। কিন্তু এর বেশির ভাগই এখন আবাসনের চাহিদা মেটাতে নিচু জায়গা ভরাট করতে গিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। শুধু ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে বছরে প্রায় ৫ হাজার একর জলাভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। আর এভাবে সারা দেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৪২ হাজার একর জলাধার ভরাট করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা শহরে জলাভূমি ভরাটের বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বেশির ভাগ খাল ও নিচু জায়গা ভরাট করে ফেলার ফলে এখন একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় পড়তে হয় নগরবাসীকে।

‘নদ-নদীর দেশ’ হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশ থেকে একের পর এক জলাভূমি হারিয়ে যাওয়া মানে জেনে-বুঝে দেশের ক্ষতি ডেকে আনা। জলাভূমিগুলো হারিয়ে যাওয়ার ফলে জলাভূমি নির্ভর প্রান্তিক মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। জলাভূমিগুলো আমাদের সম্পদ, জীববৈচিত্র্যের আধার। জলবায়ু পরিবর্তনের এই পরিবর্তনশীল বাস্তবতায় জলাধারগুলো রক্ষা করা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

[লেখক : ব্যাংকার]

back to top