alt

উপ-সম্পাদকীয়

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ জরুরি

শারফুদ্দিন আহমেদ

: শনিবার, ০৭ মে ২০২২

থ্যালাসেমিয়ার মতো মরণব্যাধি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতেই প্রতি বছর ৮ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। থ্যালাসেমিয়া এক ধরনের বংশগত রক্ত স্বল্পতার রোগ। এ রোগে আমাদের রক্তের ভিতরে যে লোহিত কণিকা তা ভেঙে যায়। দেশে প্রধানত দুই ধরনের থ্যালাসেমিয়া দেখা যায়, যাদের ক্ষেত্রে সাধারণত রক্ত পরিসঞ্চালন দরকার হয়। এর বাইরেও হরেকরকম থ্যালাসেমিয়া আছে। যাদের অধিকাংশেরই নিয়মিত রক্ত লাগে না।

থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের শরীরের রক্তের মূল্যবান উপাদান হিমোগ্লোবিন ঠিকমতো তৈরি হয় না। ফলে শিশুর স্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে শরীরের দরকারি অঙ্গ যেমন- প্লিহা, যকৃত বড় হয়ে যায় এবং কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে। মুখমন্ডলের হাড়ের অস্থিমজ্জা বিকৃত হওয়ার কারণে শিশুর চেহারা বিশেষ রূপধারণ করে।

থ্যালাসেমিয়া রোগীদের অন্যের রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। বারবার রক্ত নেয়ার একটি বিপজ্জনক পাশর্^প্রতিক্রিয়া হলো বিভিন্ন প্রত্যঙ্গে অতিরিক্ত লৌহ জমে যাওয়া। এর ফলে যকৃত বিকল হয়ে রোগী মারাও যেতে পারে। এ ধরনের জটিলতা প্রতিরোধে আয়রন চিলেশন থেরাপি দেওয়া হয় অতিরিক্ত লৌহ বের করে দেয়ার জন্য। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন থ্যালাসেমিয়ার একটি কার্যকরী চিকিৎসা; যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে এর চিকিৎসা সবসময় সফল নাও হতে পারে। এছাড়া জিন থেরাপি এবং স্টেম সেল থেরাপিও থ্যালাসেমিয়ার একটি কার্যকরী চিকিৎসা।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো প্রতিরোধ। এ ব্যাপারে আমাদের সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। না হলে হয়তো ভবিষ্যতে কোন একদিন দেখা যাবে বাংলাদেশের সমস্ত লোক থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক বা রোগী। তখন চিত্রটি কেমন হবে? সেই পরিস্থিতির যাতে আমাদের সম্মুখীন হতে না হয়, এজন্য আমাদের করণীয় অনেক।

থ্যালাসেমিয়া একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। এ রোগের দুজন বাহকের মধ্যে বিয়ে নিরুৎসাহিত এবং প্রতিহত করার মাধ্যমে সমাজে নতুন থ্যালাসেমিয়া শিশুর জন্ম হ্রাস করা যায়। সুতরাং আর দেরি না করে আজই থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়ের জন্য হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস নামক পরীক্ষাটি করান এবং আপনার শিশুকে এর অভিশাপ থেকে মুক্ত রাখুন।

এছাড়া ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অর্থাৎ যেসব পরিবারে স্বামী বা স্ত্রী দুজনই এ রোগের বাহক তারা গর্ভস্থ ভ্রণ পরীক্ষার মাধ্যমে সম্ভাব্য থ্যালসেমিয়া শিশু নির্ণয় এবং তা পরিহার করতে পারেন। গর্ভাবস্থার ১৬ থেকে ১৮ সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষাটি করালে ভালো হয়।

প্রতিরোধের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির সময় লোকের রক্তে হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস পরীক্ষা করা যায়। স্কুলে ভর্তির সময় বাচ্চাদের এবং বাবা-মায়ের পরীক্ষা করা যায় এবং রেকর্ড নথিভুক্ত করা যায়। অনেক রকম স্ক্রিনিং টেস্ট আছে। প্রাথমিক কর্তব্য হলো একটি স্ক্রিনিং টেস্ট ঠিক করা এবং সেই পথে এগোনো। বসে থেকে কালক্ষেপণ হবে ভয়াবহ আত্মহনন। প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন- মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা যেখানে মানুষ স্বাভাবিকভাবে সমবেত হয় সেগুলোকেও কাজে লাগানো যায়। যেমন আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিবাহ বন্ধ করা। এসব ব্যবস্থা যদি আমরা নিতে পারি তাহলে হয়তো থ্যালাসেমিয়ার বিস্তার থেকে আমরা রেহাই পাব।

[লেখক : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়]

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ জরুরি

শারফুদ্দিন আহমেদ

শনিবার, ০৭ মে ২০২২

থ্যালাসেমিয়ার মতো মরণব্যাধি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতেই প্রতি বছর ৮ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। থ্যালাসেমিয়া এক ধরনের বংশগত রক্ত স্বল্পতার রোগ। এ রোগে আমাদের রক্তের ভিতরে যে লোহিত কণিকা তা ভেঙে যায়। দেশে প্রধানত দুই ধরনের থ্যালাসেমিয়া দেখা যায়, যাদের ক্ষেত্রে সাধারণত রক্ত পরিসঞ্চালন দরকার হয়। এর বাইরেও হরেকরকম থ্যালাসেমিয়া আছে। যাদের অধিকাংশেরই নিয়মিত রক্ত লাগে না।

থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের শরীরের রক্তের মূল্যবান উপাদান হিমোগ্লোবিন ঠিকমতো তৈরি হয় না। ফলে শিশুর স্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে শরীরের দরকারি অঙ্গ যেমন- প্লিহা, যকৃত বড় হয়ে যায় এবং কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে। মুখমন্ডলের হাড়ের অস্থিমজ্জা বিকৃত হওয়ার কারণে শিশুর চেহারা বিশেষ রূপধারণ করে।

থ্যালাসেমিয়া রোগীদের অন্যের রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। বারবার রক্ত নেয়ার একটি বিপজ্জনক পাশর্^প্রতিক্রিয়া হলো বিভিন্ন প্রত্যঙ্গে অতিরিক্ত লৌহ জমে যাওয়া। এর ফলে যকৃত বিকল হয়ে রোগী মারাও যেতে পারে। এ ধরনের জটিলতা প্রতিরোধে আয়রন চিলেশন থেরাপি দেওয়া হয় অতিরিক্ত লৌহ বের করে দেয়ার জন্য। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন থ্যালাসেমিয়ার একটি কার্যকরী চিকিৎসা; যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে এর চিকিৎসা সবসময় সফল নাও হতে পারে। এছাড়া জিন থেরাপি এবং স্টেম সেল থেরাপিও থ্যালাসেমিয়ার একটি কার্যকরী চিকিৎসা।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো প্রতিরোধ। এ ব্যাপারে আমাদের সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। না হলে হয়তো ভবিষ্যতে কোন একদিন দেখা যাবে বাংলাদেশের সমস্ত লোক থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক বা রোগী। তখন চিত্রটি কেমন হবে? সেই পরিস্থিতির যাতে আমাদের সম্মুখীন হতে না হয়, এজন্য আমাদের করণীয় অনেক।

থ্যালাসেমিয়া একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। এ রোগের দুজন বাহকের মধ্যে বিয়ে নিরুৎসাহিত এবং প্রতিহত করার মাধ্যমে সমাজে নতুন থ্যালাসেমিয়া শিশুর জন্ম হ্রাস করা যায়। সুতরাং আর দেরি না করে আজই থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়ের জন্য হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস নামক পরীক্ষাটি করান এবং আপনার শিশুকে এর অভিশাপ থেকে মুক্ত রাখুন।

এছাড়া ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অর্থাৎ যেসব পরিবারে স্বামী বা স্ত্রী দুজনই এ রোগের বাহক তারা গর্ভস্থ ভ্রণ পরীক্ষার মাধ্যমে সম্ভাব্য থ্যালসেমিয়া শিশু নির্ণয় এবং তা পরিহার করতে পারেন। গর্ভাবস্থার ১৬ থেকে ১৮ সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষাটি করালে ভালো হয়।

প্রতিরোধের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির সময় লোকের রক্তে হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস পরীক্ষা করা যায়। স্কুলে ভর্তির সময় বাচ্চাদের এবং বাবা-মায়ের পরীক্ষা করা যায় এবং রেকর্ড নথিভুক্ত করা যায়। অনেক রকম স্ক্রিনিং টেস্ট আছে। প্রাথমিক কর্তব্য হলো একটি স্ক্রিনিং টেস্ট ঠিক করা এবং সেই পথে এগোনো। বসে থেকে কালক্ষেপণ হবে ভয়াবহ আত্মহনন। প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন- মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা যেখানে মানুষ স্বাভাবিকভাবে সমবেত হয় সেগুলোকেও কাজে লাগানো যায়। যেমন আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিবাহ বন্ধ করা। এসব ব্যবস্থা যদি আমরা নিতে পারি তাহলে হয়তো থ্যালাসেমিয়ার বিস্তার থেকে আমরা রেহাই পাব।

[লেখক : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top