সন্ধ্যা রানী সাহা
গত ২৭ মার্চ ২০২২ সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দের সঙ্গে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্যের এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিলাম। বিষয় করোনাকালীন প্রাথমিক শিক্ষা। বক্তৃতাকালে আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলেছিলাম ‘সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চলেছেন’। আজকের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গ্রাম উন্নয়নেরও প্রতীক হিসেবে দণ্ডায়মান। বাইরের চাকচিক্য এবং ভেতরের সাজসজ্জা দেখে অতীত এবং আজকের পার্থক্য বেশ সুষ্পষ্ট। নির্মাণ ব্যয়, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ, মেরামত, সংস্কারের বরাদ্দ, শিক্ষকের বেতনভাতাদি, তদারকি বাবদ সরকারি অর্থে কর্মচারী নিয়োগ, বই বিতরণ, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি এবং উপবৃত্তি প্রদান, মেইনটেন্যান্স ইত্যাদি মিলিয়ে যেন এক একটি সোনার প্রাথমিক বিদ্যালয় উঁকি দিচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামকে দেদীপ্যমান করবে বলে। বিদ্যালয়ের এই যে দীপ্তি ছড়ানোর আকাক্সক্ষা তার সঙ্গে বিদ্যালয়ের অংশীজনদের (stake holder) একাত্মতা ঘোষণার সময় এসেছে। সময় এসেছে দেশের জনগণকে যথাযথ জনসম্পদে পরিণত করার। আমরা জানি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় উৎস প্রবাসীদের শ্রম। যেসব শ্রমিক বিদেশে কাজ করতে যান তাদের বেশিরভাগই উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে অদক্ষ। তারা সাধারণত নির্মাণ খাতে, রেস্তোরাঁয়, দোকানপাটে এবং গৃহকর্মে নিয়োজিত থাকে। আর তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে অদক্ষ জনশক্তির চাহিদা বিশ^বাজারে দিন দিন কমেই চলেছে। বর্তমান পেক্ষাপটে দক্ষতা ও মেধাভিত্তিক শ্রমবাজরে প্রবেশের লক্ষ্য নিয়ে এখন থেকেই অগ্রসর হতে হবে। আর্ন্তজাতিক শ্রমবাজারের প্রয়োজনকে বিবেচনায় রেখে সে অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। এজন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা সকলের জন্য অর্জন নিশ্চিত করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে আমাদের জনশক্তিকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগে দক্ষ হতে হবে। এজন্য আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজির বিকল্প নেই। সেটা অনুধাবন করেই সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই ইংরেজি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছে। কাজেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষার অবস্থা যাচাই করে তা মানসম্মত করার বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষায় কর্তব্যরত সকল পরিদর্শকের গুরুদায়িত্ব বলে মনে করি।
কয়েক দিন আগে বিদ্যালয়ের প্রবেশের পথ থেকে শুনতে পেলাম শিক্ষার্থীরা পড়ছে ‘এইচ-ও-ডব্লিউ (H-O-W) হাউ (How), ও-এল-ডি-(O-L-D) ওল্ড (Old), এ-আরই (A-R-E) আর (are) এবং ওয়াই ও ইউ (Y-O-U), ইউ (you)।’ শ্রেণীশিক্ষক আগে বলছেন, শিক্ষার্থীরা পড়ে সমস্বরে সমবেত ভাবে তা বলে চলেছে। শ্রেণিকক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে একজন শিক্ষার্থীকে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলাম, যড়ি how old are you? শিক্ষার্থীরা কেউ কোনো জবাব দিতে পারলো না। অথচ বাহির থেকে যে কেউ শোরগোল শুনে ভাববে অনেক লেখাপড়া চলছে শ্রেণিকক্ষে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ঘটে যাওয়া এমনতর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান শেষে বিদায় নিলাম। ২০ এপ্রিল, ২০২২ একটি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি বিষয়ের পাঠদান পর্যবেক্ষণকালে লক্ষ্য করলাম, My home district পাঠটি পড়াতে গিয়ে শিক্ষক বোর্ডে literature কে লিখেছেন literatur এবং শিখাচ্ছেনও তাই। এই গল্পে how far? অর্থাৎ কতদূরে প্রশ্নটি রয়েছে যা ইতোমধ্যে পড়ানো হয়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলাম যড়ি how far is Jamtoil railway station from here? কোন শিক্ষার্থী তার উত্তর দিতে পারলো না। শ্রেণিশিক্ষককে এ বিষয়ে অফিসকক্ষে বলতেই তিনি সদর্পে বলে উঠলেন ‘এতদিন তো অক্ষরই চিনতো না’। অর্থাৎ তিনি অনেক করেছেন। পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের এতদিনে ইংরেজি অক্ষর চিনিয়েছেন। আমরা সাধারণত বাংলা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকি। কিন্তু না। বাংলার মত ইংরেজিতেও যুগের প্রয়োজনে সকল শিক্ষার্থীকে সমান দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। আজকে আমরা যারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব পদে রয়েছি তারা কারা? তারা আগে ভাগে অভিভাবকদের তত্ত্ব¡াবধানে বাংলা এবং ইংরেজি রিডিং পড়তে শেখা সৌভাগ্যবানেরা। আর আজকে যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া শিখতে এসেছে তাদের অভিভাবক কারা? নিশ্চয়ই আমরা তাই তো? প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হচ্ছেন বর্তমানকালে শিশুর প্রথম এবং প্রধান অভিভাবক। এই অভিভাবককে যেমন নিজের উপলব্ধির মাত্রাটি বৃদ্ধি করতে হবে তেমনি তাকে সমাজের সর্বস্তর থেকে সহযোগিতা করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত বলে তাকে রাখতে হবে সব ধরনণর দুশ্চিন্তামুক্ত করে। নিয়োগদানকালেও মেধাবীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করতে হবে। আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি বই গুলি comunicative। বইগুলো শিক্ষক যেন শুদ্ধ উচ্চারণে পড়তে পারেন, বুঝতে পারেন এবং শিক্ষার্থীদের রহংinstruction দিতে পারেন তা যাচাই করে শিক্ষক নিয়োগ আবশ্যক। অন্যথায় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও এর কুপ্রভাব দৃশ্যমান থাকবে। আমাদের বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য নির্ধারিত ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতার ১০ নম্বর প্রান্তিক যোগ্যতাটি এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। আর তা হলো ‘বিদেশি ভাষা হিষেবে ইংরেজি ভাষায় মৌলিক দক্ষতা অর্জন ও ব্যবহার করা।’ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের এ যোগ্যতা অর্জন করিয়ে পঞ্চম শ্রেণী পার করে দিতে হবে।
শিক্ষকদের পিটিআই, উপজেলা রির্সোস সেন্টার, ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সমূহ থেকে ইতোমধ্যেই প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। তথাপি শিক্ষকবৃন্দের বেশিরভাগ এ বিষয়ে উদাসীন। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন বিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার যে ৪নং লক্ষ্য জাতিসংঘ কর্তৃক ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনযোগ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। একজন চিকিৎসককে সারা জীবন পড়তে হয়। একজন সংগীত/নৃত্য শিল্পীকে সারা বছর চর্চা করতে হয়। অনুরূপভাবে একজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে কী পড়াবেন তার জন্য নিজের পূর্ব প্রস্তুতিমূলক যথেষ্ট পড়াশুনা করার অভ্যাস রাখতে হবে। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে একজন শিক্ষক আজকের এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে বিশে^র সকল শিশুর শিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। তাহলে রাষ্ট্রও তাকে পুরস্কৃত করতে পারে। আজকাল শিশুদের হাতের নাগালে টেলিভিশন, Google ইউটিউব-ফেসবুক। সেখান থেকে ইচ্ছে করলে তারা অনেক কিছুই শিখতে পারে। সর্বোপরি পিতামাতা, অভিভাবক এমনকি সহপাঠির কাছ থেকেও তারা শিখছে। এমন অবস্থায় শিক্ষক ভুল শিখালে কিংবা না শিখালে শিশু পরবর্তীকালে যে কোনোভাবে সেসব হয়ত ঠিকই বুঝে ফেলবে। তখন কিন্তু শিক্ষককে আজকের না শেখানোর দায় থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে না। ভাবুন তো এমন হলে শিক্ষক হিসেবে নিজের মর্যাদা রক্ষার উপায় কী? ইংরেজিতে একটি কথা আছে ‘death is preferable to dishonour।’ একজন শিক্ষক অনায়াসে একজন শিশুর জীবনে আর্শিবাদ হয়ে উঠতে পারেন। শিশুকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যও তাই। এই লক্ষ্য অর্জনে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করতে হবে। রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী হয়ে এর ব্যত্যয় ঘটালে রাষ্ট্র নির্ধারিত আইনের আওতায় আমরা পড়ে যেতে পারি। সে সকল বিবেচনায় এনে যথানিয়মে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব সম্পাদন করা শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য মঙ্গলজনক। তাই আমরা যেন আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারি, সমাজে ন্যয্যতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন বিদ্যালয়ের সোনার আলোয় ভরিয়ে দিতে পারি। একথা সত্য এদেশের গরীব মানুষের সন্তান যারা তারাই মূলত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের মৌলিক চাহিদাগুলোর একটি হলো শিক্ষা। আমরা তাদের এই শিক্ষা নামক মৌলিক চাহিদাটি পূরণের মহান দায়িত্বে নিয়োজিত হতে পেরেছি। এ দায়িত্ব আমরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে সমাজে পরিবর্তন আনয়নের প্রতিজ্ঞা করতে পারি।
শিশু যখন পড়তে পারে ও কি পড়ছে তা বুঝতে পারে তখনই তার আরও পড়ার এবং জানার আকক্সক্ষা তৈরি হয়। সে তখন আর ঝড়ে পরে না। কাজেই শুধু চাকরির জন্য শিক্ষকতা নয় বরং শেখানোর জন্যই শিক্ষকতা-এই ধারণাকে দৃঢ়ভাবে লালন করতে হবে। আমাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা যাচাই করে শিক্ষক নিয়োগ হয় না। নিয়োগের পর শিক্ষকবৃন্দকে বিভিন্ন বিষয়ে সময়ে সময়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়। কাজেই সকল শিক্ষককেই সকল বিষয় পড়াতে হয়। এখানে সকলেই ইংরেজি পড়িয়ে থাকেন। ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমেই কেবল ভাষা শিখন ফলপ্রসূ হয়। ইংরেজি ভাষা আর্ন্তজাতিক ভাষা । পৃথিবীর সব দেশেই এ ভাষার কম বেশি ব্যবহার রয়েছে। তই এ ভাষাকে ভয় না করে শিক্ষক নিজে তা শিখে শিশুদের শেখাবেন। ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য যে চারটি দক্ষতার প্রয়োজন তা হলো Listening, Speaking, Reading, এবং Writing| শিক্ষক asking question and answer বা প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে পাঠ বিষয়ক ছোট ছোট সহজ প্রশ্ন করে এবং তার উত্তর আদায়ের মাধ্যমে শিশুদের ইংরেজি শেখাতে পারেন। শিশুরা যেন আনন্দঘন পরিবেশে শিখতে পারে সেজন্য পাঠ্যপুস্তকে কিছু Rhymes বা ছড়া এবং Poem বা কবিতা সংযোজিত হয়েছে। তালে তালে, ছন্দে ছন্দে Rhymes গুলো বলতে পারলেও শিশুরা আনন্দ ও আত্মতৃপ্তি লাভ করবে। এভাবে তারা ইংরেজি ভাষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। তারা ইংরেজি ভাষা সাবলীল ও স্পষ্ট উচ্চারণে বলতে পারবে। ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণিতে Listening ও Speaking ছাড়াও Reading এবং Writing Skill এর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইংরেজি ক্লাসে যথারীতি স্পষ্ট ও শুদ্ধ উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে অর্থ, ভাবার্থ এবং বানানসহ পাঠ বিষয়ক শিখন শেখানো কার্যাবলি সম্পাদন করতে হবে। আর এই গুরু দায়িত্বটি ন্যস্ত করা হয়েছে প্রধানত শিক্ষকদের ওপর। শব্দ এবং বাক্য মুখস্থ করানোর পরিবর্তে মুখের ভাষার ন্যূনতম ছন্দের একক বা Syllable অনুযায়ী ভেঙ্গে ভেঙ্গে এমনভাবে বানান করতে শিখাতে হবে যেন শিশু নিজ থেকে স্বাধীন এবং সাবলীলভাবে পড়তে পারে। এক বচন এবং বহুবচনের ধারণা দিতে হবে। ইংরেজি শব্দের বানান অনেক ক্ষেত্রেই উচ্চারণকে নির্দেশ করে না। উচ্চারণ সঠিকভাবে না শিখলে শিক্ষার্থী রেডিও টেলিভিশনে ইংরেজিতে প্রচারিত কোনো কিছু শুনে বুঝতে পারবে না। স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে সহজেই শিক্ষক নিজে উচ্চারণ যথাযথভাবে শিখে শিক্ষার্থীদের শিখাতে পারেন। শিক্ষক ব্রিটিশ ও আমেরিকান উচ্চারণের পার্থক্য, tense, parts of Speech, idiom, একাধিক শ্বাসাঘাতযুক্ত শব্দ, উপসর্গ প্রত্যয়ান্ত শব্দ, Syllable (যেমন-ac-com-mo-dation), প্রত্যয়যুক্ত শব্দ বা derivatives -(able, -ance, -ness, -ly, -ment ইত্যাদি), যৌগিকশব্দ বা compound word (brainstorm, brainwave), উপসর্গ, প্রত্যয়, পদান্বয়ী অব্যয়যুক্ত ক্রিয়াপদ/ verb with particle or a preposition ইত্যাদি সমন্ধে গভীর জ্ঞান অর্জন করবেন। তার studz এর উপর ভিত্তি করে শিখন শেখানোর কাজটি কীভাবে অতি সহজে তিনি পরিচালনা করবেন তার একটি সুস্পষ্ট প্রদর্শন যোগ্য পাঠ পরিকল্পনা/lesson plan ইংরেজি ক্লাসে অবশ্যই সঙ্গে নেবেন। ইংরেজি ক্লাসে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং শ্রেণি পর্যবেক্ষক/পরিদর্শকগণ সর্বদাই ইংরেজি ভাষায় কথা বলবেন, বাংলায় নয়। শিক্ষক উচ্চারণ স্থানগুলি সম্বন্ধে শিক্ষার্থীদের পরিষ্কার ধারণা দেবেন।
তিনি pen কীভাবে phen/ফেন (/pɛn/), ten কীভাবে then/ঠেন([ˈtɛn] ), cat Kxfv‡e khat/L¨vU ([ˈkæt] )-উচ্চারিত হয় তা মুখভঙ্গি স্পষ্টকরে শিক্ষার্থীদের শিখাবেন। কানে কম শুনতে পাওয়া/ শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের মুখভঙ্গি দেখে যেন শিখতে পারে সে ব্যবস্থা শিক্ষককে করতে হবে। মনে রাখবেন বাংলা “ট” এবং ইংরেজি “t" উচ্চারণে পার্থক্য রয়েছে। বাংলা “ট” মূর্ধণ্য বর্গীয়, এর উচ্চারণ স্থান মুর্ধা। উচ্চারণের নিয়ম অনুযায়ী একে বলা হয় retroflex, এর উচ্চারণের সময় জিহ্বার ডগা কিঞ্চিৎ বাঁকা হয়ে মুর্ধার দিকে উঠে যায়। ইংরেজি “t” বর্ণটি যে বিশুদ্ধ দন্তমূলীয় অর্থাৎ এটি উচ্চারণকালে জিহ্বার অগ্রভাগ দন্তমূলকে কীভাবে স্পর্শ করছে শিক্ষক তা মুখ খুলে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দেবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দকে যেমন পাঠ্য সকল বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে তেমনি খেলাধুলা, কাবিং, প্রাথমিক চিকিৎসা তথা first aid box এর ব্যবহারবিধি, অভিনয়, সংগীত, নৃত্য, গল্প, বলা (ইংরেজি এবং বাংলায়) ইত্যাদি সবই আয়ত্ব করতে হবে। শিশুরদের শিখন চাহিদা অনুযায়ী সুদক্ষ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে গঠন করার কাজে তিনি সদাব্যস্ত হয়ে থাকবেন। তিনি তার বুদ্ধি দিয়ে, বিবেক দিয়ে, হৃদয় দিয়ে, চারিত্রিক সততা দিয়ে, সহমর্মিতা দিয়ে, সাহস দিয়ে, একাগ্রতা দিয়ে, এবং দায়িত্ববোধের মত মৌলিক গুণাবলী দিয়ে নিজেকে সুসজ্জিত রাখবেন। তিনি যেমন জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ভালোবাসতে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করবেন। অনুরূপভাবে তিনি ইংরেজি ভাষায় শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তাদের বিশ্ব মানবাধিকার, আন্তর্জাতিকতাবোধ, বিশ্বভাতৃত্ববোধ ও বিশ্ব সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সহায়তা করবেন।
[লেখক : উপজেলা শিক্ষা অফিসার, কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ]
সন্ধ্যা রানী সাহা
সোমবার, ০৯ মে ২০২২
গত ২৭ মার্চ ২০২২ সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দের সঙ্গে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্যের এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিলাম। বিষয় করোনাকালীন প্রাথমিক শিক্ষা। বক্তৃতাকালে আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলেছিলাম ‘সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চলেছেন’। আজকের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গ্রাম উন্নয়নেরও প্রতীক হিসেবে দণ্ডায়মান। বাইরের চাকচিক্য এবং ভেতরের সাজসজ্জা দেখে অতীত এবং আজকের পার্থক্য বেশ সুষ্পষ্ট। নির্মাণ ব্যয়, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ, মেরামত, সংস্কারের বরাদ্দ, শিক্ষকের বেতনভাতাদি, তদারকি বাবদ সরকারি অর্থে কর্মচারী নিয়োগ, বই বিতরণ, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি এবং উপবৃত্তি প্রদান, মেইনটেন্যান্স ইত্যাদি মিলিয়ে যেন এক একটি সোনার প্রাথমিক বিদ্যালয় উঁকি দিচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামকে দেদীপ্যমান করবে বলে। বিদ্যালয়ের এই যে দীপ্তি ছড়ানোর আকাক্সক্ষা তার সঙ্গে বিদ্যালয়ের অংশীজনদের (stake holder) একাত্মতা ঘোষণার সময় এসেছে। সময় এসেছে দেশের জনগণকে যথাযথ জনসম্পদে পরিণত করার। আমরা জানি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় উৎস প্রবাসীদের শ্রম। যেসব শ্রমিক বিদেশে কাজ করতে যান তাদের বেশিরভাগই উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে অদক্ষ। তারা সাধারণত নির্মাণ খাতে, রেস্তোরাঁয়, দোকানপাটে এবং গৃহকর্মে নিয়োজিত থাকে। আর তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে অদক্ষ জনশক্তির চাহিদা বিশ^বাজারে দিন দিন কমেই চলেছে। বর্তমান পেক্ষাপটে দক্ষতা ও মেধাভিত্তিক শ্রমবাজরে প্রবেশের লক্ষ্য নিয়ে এখন থেকেই অগ্রসর হতে হবে। আর্ন্তজাতিক শ্রমবাজারের প্রয়োজনকে বিবেচনায় রেখে সে অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। এজন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা সকলের জন্য অর্জন নিশ্চিত করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে আমাদের জনশক্তিকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগে দক্ষ হতে হবে। এজন্য আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজির বিকল্প নেই। সেটা অনুধাবন করেই সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই ইংরেজি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছে। কাজেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষার অবস্থা যাচাই করে তা মানসম্মত করার বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষায় কর্তব্যরত সকল পরিদর্শকের গুরুদায়িত্ব বলে মনে করি।
কয়েক দিন আগে বিদ্যালয়ের প্রবেশের পথ থেকে শুনতে পেলাম শিক্ষার্থীরা পড়ছে ‘এইচ-ও-ডব্লিউ (H-O-W) হাউ (How), ও-এল-ডি-(O-L-D) ওল্ড (Old), এ-আরই (A-R-E) আর (are) এবং ওয়াই ও ইউ (Y-O-U), ইউ (you)।’ শ্রেণীশিক্ষক আগে বলছেন, শিক্ষার্থীরা পড়ে সমস্বরে সমবেত ভাবে তা বলে চলেছে। শ্রেণিকক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে একজন শিক্ষার্থীকে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলাম, যড়ি how old are you? শিক্ষার্থীরা কেউ কোনো জবাব দিতে পারলো না। অথচ বাহির থেকে যে কেউ শোরগোল শুনে ভাববে অনেক লেখাপড়া চলছে শ্রেণিকক্ষে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ঘটে যাওয়া এমনতর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান শেষে বিদায় নিলাম। ২০ এপ্রিল, ২০২২ একটি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি বিষয়ের পাঠদান পর্যবেক্ষণকালে লক্ষ্য করলাম, My home district পাঠটি পড়াতে গিয়ে শিক্ষক বোর্ডে literature কে লিখেছেন literatur এবং শিখাচ্ছেনও তাই। এই গল্পে how far? অর্থাৎ কতদূরে প্রশ্নটি রয়েছে যা ইতোমধ্যে পড়ানো হয়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলাম যড়ি how far is Jamtoil railway station from here? কোন শিক্ষার্থী তার উত্তর দিতে পারলো না। শ্রেণিশিক্ষককে এ বিষয়ে অফিসকক্ষে বলতেই তিনি সদর্পে বলে উঠলেন ‘এতদিন তো অক্ষরই চিনতো না’। অর্থাৎ তিনি অনেক করেছেন। পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের এতদিনে ইংরেজি অক্ষর চিনিয়েছেন। আমরা সাধারণত বাংলা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকি। কিন্তু না। বাংলার মত ইংরেজিতেও যুগের প্রয়োজনে সকল শিক্ষার্থীকে সমান দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। আজকে আমরা যারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব পদে রয়েছি তারা কারা? তারা আগে ভাগে অভিভাবকদের তত্ত্ব¡াবধানে বাংলা এবং ইংরেজি রিডিং পড়তে শেখা সৌভাগ্যবানেরা। আর আজকে যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া শিখতে এসেছে তাদের অভিভাবক কারা? নিশ্চয়ই আমরা তাই তো? প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হচ্ছেন বর্তমানকালে শিশুর প্রথম এবং প্রধান অভিভাবক। এই অভিভাবককে যেমন নিজের উপলব্ধির মাত্রাটি বৃদ্ধি করতে হবে তেমনি তাকে সমাজের সর্বস্তর থেকে সহযোগিতা করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত বলে তাকে রাখতে হবে সব ধরনণর দুশ্চিন্তামুক্ত করে। নিয়োগদানকালেও মেধাবীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করতে হবে। আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি বই গুলি comunicative। বইগুলো শিক্ষক যেন শুদ্ধ উচ্চারণে পড়তে পারেন, বুঝতে পারেন এবং শিক্ষার্থীদের রহংinstruction দিতে পারেন তা যাচাই করে শিক্ষক নিয়োগ আবশ্যক। অন্যথায় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও এর কুপ্রভাব দৃশ্যমান থাকবে। আমাদের বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য নির্ধারিত ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতার ১০ নম্বর প্রান্তিক যোগ্যতাটি এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। আর তা হলো ‘বিদেশি ভাষা হিষেবে ইংরেজি ভাষায় মৌলিক দক্ষতা অর্জন ও ব্যবহার করা।’ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের এ যোগ্যতা অর্জন করিয়ে পঞ্চম শ্রেণী পার করে দিতে হবে।
শিক্ষকদের পিটিআই, উপজেলা রির্সোস সেন্টার, ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সমূহ থেকে ইতোমধ্যেই প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। তথাপি শিক্ষকবৃন্দের বেশিরভাগ এ বিষয়ে উদাসীন। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন বিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার যে ৪নং লক্ষ্য জাতিসংঘ কর্তৃক ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনযোগ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। একজন চিকিৎসককে সারা জীবন পড়তে হয়। একজন সংগীত/নৃত্য শিল্পীকে সারা বছর চর্চা করতে হয়। অনুরূপভাবে একজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে কী পড়াবেন তার জন্য নিজের পূর্ব প্রস্তুতিমূলক যথেষ্ট পড়াশুনা করার অভ্যাস রাখতে হবে। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে একজন শিক্ষক আজকের এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে বিশে^র সকল শিশুর শিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। তাহলে রাষ্ট্রও তাকে পুরস্কৃত করতে পারে। আজকাল শিশুদের হাতের নাগালে টেলিভিশন, Google ইউটিউব-ফেসবুক। সেখান থেকে ইচ্ছে করলে তারা অনেক কিছুই শিখতে পারে। সর্বোপরি পিতামাতা, অভিভাবক এমনকি সহপাঠির কাছ থেকেও তারা শিখছে। এমন অবস্থায় শিক্ষক ভুল শিখালে কিংবা না শিখালে শিশু পরবর্তীকালে যে কোনোভাবে সেসব হয়ত ঠিকই বুঝে ফেলবে। তখন কিন্তু শিক্ষককে আজকের না শেখানোর দায় থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে না। ভাবুন তো এমন হলে শিক্ষক হিসেবে নিজের মর্যাদা রক্ষার উপায় কী? ইংরেজিতে একটি কথা আছে ‘death is preferable to dishonour।’ একজন শিক্ষক অনায়াসে একজন শিশুর জীবনে আর্শিবাদ হয়ে উঠতে পারেন। শিশুকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যও তাই। এই লক্ষ্য অর্জনে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করতে হবে। রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী হয়ে এর ব্যত্যয় ঘটালে রাষ্ট্র নির্ধারিত আইনের আওতায় আমরা পড়ে যেতে পারি। সে সকল বিবেচনায় এনে যথানিয়মে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব সম্পাদন করা শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য মঙ্গলজনক। তাই আমরা যেন আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারি, সমাজে ন্যয্যতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন বিদ্যালয়ের সোনার আলোয় ভরিয়ে দিতে পারি। একথা সত্য এদেশের গরীব মানুষের সন্তান যারা তারাই মূলত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের মৌলিক চাহিদাগুলোর একটি হলো শিক্ষা। আমরা তাদের এই শিক্ষা নামক মৌলিক চাহিদাটি পূরণের মহান দায়িত্বে নিয়োজিত হতে পেরেছি। এ দায়িত্ব আমরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে সমাজে পরিবর্তন আনয়নের প্রতিজ্ঞা করতে পারি।
শিশু যখন পড়তে পারে ও কি পড়ছে তা বুঝতে পারে তখনই তার আরও পড়ার এবং জানার আকক্সক্ষা তৈরি হয়। সে তখন আর ঝড়ে পরে না। কাজেই শুধু চাকরির জন্য শিক্ষকতা নয় বরং শেখানোর জন্যই শিক্ষকতা-এই ধারণাকে দৃঢ়ভাবে লালন করতে হবে। আমাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা যাচাই করে শিক্ষক নিয়োগ হয় না। নিয়োগের পর শিক্ষকবৃন্দকে বিভিন্ন বিষয়ে সময়ে সময়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়। কাজেই সকল শিক্ষককেই সকল বিষয় পড়াতে হয়। এখানে সকলেই ইংরেজি পড়িয়ে থাকেন। ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমেই কেবল ভাষা শিখন ফলপ্রসূ হয়। ইংরেজি ভাষা আর্ন্তজাতিক ভাষা । পৃথিবীর সব দেশেই এ ভাষার কম বেশি ব্যবহার রয়েছে। তই এ ভাষাকে ভয় না করে শিক্ষক নিজে তা শিখে শিশুদের শেখাবেন। ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য যে চারটি দক্ষতার প্রয়োজন তা হলো Listening, Speaking, Reading, এবং Writing| শিক্ষক asking question and answer বা প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে পাঠ বিষয়ক ছোট ছোট সহজ প্রশ্ন করে এবং তার উত্তর আদায়ের মাধ্যমে শিশুদের ইংরেজি শেখাতে পারেন। শিশুরা যেন আনন্দঘন পরিবেশে শিখতে পারে সেজন্য পাঠ্যপুস্তকে কিছু Rhymes বা ছড়া এবং Poem বা কবিতা সংযোজিত হয়েছে। তালে তালে, ছন্দে ছন্দে Rhymes গুলো বলতে পারলেও শিশুরা আনন্দ ও আত্মতৃপ্তি লাভ করবে। এভাবে তারা ইংরেজি ভাষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। তারা ইংরেজি ভাষা সাবলীল ও স্পষ্ট উচ্চারণে বলতে পারবে। ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণিতে Listening ও Speaking ছাড়াও Reading এবং Writing Skill এর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইংরেজি ক্লাসে যথারীতি স্পষ্ট ও শুদ্ধ উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে অর্থ, ভাবার্থ এবং বানানসহ পাঠ বিষয়ক শিখন শেখানো কার্যাবলি সম্পাদন করতে হবে। আর এই গুরু দায়িত্বটি ন্যস্ত করা হয়েছে প্রধানত শিক্ষকদের ওপর। শব্দ এবং বাক্য মুখস্থ করানোর পরিবর্তে মুখের ভাষার ন্যূনতম ছন্দের একক বা Syllable অনুযায়ী ভেঙ্গে ভেঙ্গে এমনভাবে বানান করতে শিখাতে হবে যেন শিশু নিজ থেকে স্বাধীন এবং সাবলীলভাবে পড়তে পারে। এক বচন এবং বহুবচনের ধারণা দিতে হবে। ইংরেজি শব্দের বানান অনেক ক্ষেত্রেই উচ্চারণকে নির্দেশ করে না। উচ্চারণ সঠিকভাবে না শিখলে শিক্ষার্থী রেডিও টেলিভিশনে ইংরেজিতে প্রচারিত কোনো কিছু শুনে বুঝতে পারবে না। স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে সহজেই শিক্ষক নিজে উচ্চারণ যথাযথভাবে শিখে শিক্ষার্থীদের শিখাতে পারেন। শিক্ষক ব্রিটিশ ও আমেরিকান উচ্চারণের পার্থক্য, tense, parts of Speech, idiom, একাধিক শ্বাসাঘাতযুক্ত শব্দ, উপসর্গ প্রত্যয়ান্ত শব্দ, Syllable (যেমন-ac-com-mo-dation), প্রত্যয়যুক্ত শব্দ বা derivatives -(able, -ance, -ness, -ly, -ment ইত্যাদি), যৌগিকশব্দ বা compound word (brainstorm, brainwave), উপসর্গ, প্রত্যয়, পদান্বয়ী অব্যয়যুক্ত ক্রিয়াপদ/ verb with particle or a preposition ইত্যাদি সমন্ধে গভীর জ্ঞান অর্জন করবেন। তার studz এর উপর ভিত্তি করে শিখন শেখানোর কাজটি কীভাবে অতি সহজে তিনি পরিচালনা করবেন তার একটি সুস্পষ্ট প্রদর্শন যোগ্য পাঠ পরিকল্পনা/lesson plan ইংরেজি ক্লাসে অবশ্যই সঙ্গে নেবেন। ইংরেজি ক্লাসে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং শ্রেণি পর্যবেক্ষক/পরিদর্শকগণ সর্বদাই ইংরেজি ভাষায় কথা বলবেন, বাংলায় নয়। শিক্ষক উচ্চারণ স্থানগুলি সম্বন্ধে শিক্ষার্থীদের পরিষ্কার ধারণা দেবেন।
তিনি pen কীভাবে phen/ফেন (/pɛn/), ten কীভাবে then/ঠেন([ˈtɛn] ), cat Kxfv‡e khat/L¨vU ([ˈkæt] )-উচ্চারিত হয় তা মুখভঙ্গি স্পষ্টকরে শিক্ষার্থীদের শিখাবেন। কানে কম শুনতে পাওয়া/ শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের মুখভঙ্গি দেখে যেন শিখতে পারে সে ব্যবস্থা শিক্ষককে করতে হবে। মনে রাখবেন বাংলা “ট” এবং ইংরেজি “t" উচ্চারণে পার্থক্য রয়েছে। বাংলা “ট” মূর্ধণ্য বর্গীয়, এর উচ্চারণ স্থান মুর্ধা। উচ্চারণের নিয়ম অনুযায়ী একে বলা হয় retroflex, এর উচ্চারণের সময় জিহ্বার ডগা কিঞ্চিৎ বাঁকা হয়ে মুর্ধার দিকে উঠে যায়। ইংরেজি “t” বর্ণটি যে বিশুদ্ধ দন্তমূলীয় অর্থাৎ এটি উচ্চারণকালে জিহ্বার অগ্রভাগ দন্তমূলকে কীভাবে স্পর্শ করছে শিক্ষক তা মুখ খুলে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দেবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দকে যেমন পাঠ্য সকল বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে তেমনি খেলাধুলা, কাবিং, প্রাথমিক চিকিৎসা তথা first aid box এর ব্যবহারবিধি, অভিনয়, সংগীত, নৃত্য, গল্প, বলা (ইংরেজি এবং বাংলায়) ইত্যাদি সবই আয়ত্ব করতে হবে। শিশুরদের শিখন চাহিদা অনুযায়ী সুদক্ষ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে গঠন করার কাজে তিনি সদাব্যস্ত হয়ে থাকবেন। তিনি তার বুদ্ধি দিয়ে, বিবেক দিয়ে, হৃদয় দিয়ে, চারিত্রিক সততা দিয়ে, সহমর্মিতা দিয়ে, সাহস দিয়ে, একাগ্রতা দিয়ে, এবং দায়িত্ববোধের মত মৌলিক গুণাবলী দিয়ে নিজেকে সুসজ্জিত রাখবেন। তিনি যেমন জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ভালোবাসতে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করবেন। অনুরূপভাবে তিনি ইংরেজি ভাষায় শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তাদের বিশ্ব মানবাধিকার, আন্তর্জাতিকতাবোধ, বিশ্বভাতৃত্ববোধ ও বিশ্ব সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সহায়তা করবেন।
[লেখক : উপজেলা শিক্ষা অফিসার, কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ]