alt

উপ-সম্পাদকীয়

নদী রক্ষায় চাই কার্যকর ব্যবস্থা

এনায়েত আলী বিশ্বাস

: মঙ্গলবার, ১৭ মে ২০২২

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। পানিই এর জীবন; কিন্তু ফারাক্কা ও তিস্তায় বাঁধের কারণে অন্যান্য নদ-নদী যেমন ভরাট হয়ে গেছে, তেমনি ভারতের পানির ঢল বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি তিস্তাসহ ভারতের অন্যান্য নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা অববাহীকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। মানুষ ফসল হারিয়ে আবার বিপর্যয়ের মুখে পতিত হয়েছে। নদী রক্ষায় কার্যকর তেমন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় উন্নয়ন অনেকখানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

পানি বাংলাদেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এই পানি ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। প্রায় প্রতি বছর বাংলাদেশে বন্যা হয়ে থাকে, আবার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড় জলোচ্ছ্বাসে সাগর থেকে লবণাক্ত পানি উজানে উঠে আসছে।

নদী রক্ষায় কার্যকর তেমন কোন ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৪০৫টি নদী ও ৫৭টি আন্তঃদেশীয় সংযোগ নদী রয়েছে। কিন্তু দূষণ ও দখল হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে নদীগুলো। বর্তমানে ২৩০টি নদী বহমান রয়েছে। দুঃখের বিষয়- দক্ষিণ অঞ্চলে ৩০টি নদীর মধ্যে কপোতাক্ষ, শিবসা ও পশুর নদীর মতো দুই-তৃতীয়াংশ নদী ভরাট হয়ে নৌ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এসব নদীতে ভাটির সময় লোকজন হেঁটে পার হয়। এই যখন ভাটি অঞ্চলের নদ-নদীর অবস্থা, তখন উত্তর অঞ্চলের নদ-নদীর অবস্থা সহজেই অনুমান করা যায়।

ফারাক্কাসহ উজানের অসংখ্য বাঁধ ও প্রকল্পের মাধ্যামে গঙ্গার পানি প্রত্যাহার চলতে থাকায় বাংলাদেশে পদ্মার বুকে প্রতিদিন বিস্তার ঘটে চলেছে চরের। এই চর খেয়ে ফেলছে পানির অংশ, ফলে সংকুচিত হয়ে চলেছে নদীর মূল প্রবাহ। তথ্যমতে, ভারত তার বহু সংখ্যাক সেচ ও পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মূল গঙ্গা এবং এর উপনদীগুলোর ৯০ ভাগ পানি সরিয়ে নিচ্ছে। এ কারণে নদীতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে মাত্র ১০ ভাগ। ৫৬ বছরের মধ্যে গঙ্গা নদীপ্রবাহ ২০ ভাগ হ্্রাস পেয়েছে।

শুধু ফারাক্কা নয়, গঙ্গা-পদ্মাকেন্দ্রিক বাঁধ, জলাধার, ক্রস ড্যাম, রেগুলেটরসহ অন্তত ৩৩টি মূল অবকাঠামো তৈরি করেছে ভারত। এর সঙ্গে রয়েছে আনুষঙ্গিক আরো অসংখ্যা ছোট-বড় কাঠামো। এ ধরনের প্রকল্পে হাজার হাজার কিলোমিটার খালের মাধ্যমে গঙ্গার পানি সরিয়ে নিয়ে সেচ দেয়ার ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ভারত।

বাংলাদেশে পানির অভাবে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাতে দেখা যায়- উত্তর অঞ্চলে প্রায় দুই কোটি মানুষ সেচের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দক্ষিণ অঞ্চলের প্রায় চার কোটি মানুষ ও এক-তৃতীয়াংশ এলাকা সেচের পানির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গঙ্গা প্রত্যক্ষ প্রকল্পের ৫৬ শতাংশ এলাকায় সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত লবণাক্ততার জন্য জমির উর্বরা শক্তি কমে গেছে। দেশের প্রায় ২১ শতাংশ অগভীর নলকূপ ও ৪২ শতাংশ গভীর নলকূপ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না।

১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি চুক্তির পর বাংলাদেশে গঙ্গার পানির অংশ দাঁড়িয়েছে সেকেন্ডে ২০ হাজার ঘনফুটের কম। অথচ ফারাক্কা বাঁধ চালুর আগে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ ৭০ হাজার কিউসেকের চেয়ে কম পানি পেত না। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় হাজার হাজার হস্তচালিত পাম্প অকেজো হয়ে গেছে। অথচ এত অসুবিধা সত্ত্বেও অর্ধশতাব্দীর পর ফারাক্কার বাঁধ নিয়ে এখনো পর্যালোচনা হয়নি।

একটি বাঁধ নির্মাণের ৪০ বছর পার হলে সেটি নিয়ে পর্যালোচনা বা রিভিউ করতে হয়। কিন্তু ফারাক্কা বাঁধের বয়স ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের যে ক্ষতি হয়েছে এখনই তা তুলে ধরতে হবে। গঙ্গা একটি আন্তর্জাতিক নদী। এ নদীর প্রতি বাংলাদেশের অধিকার আছে। এটা ভারতের একক বিষয় নয়, কারণ এটা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সেই কারণে এখনই গঙ্গা নদীর ওপর ভারতের এককভাবে বাঁধ নির্মাণের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরতে হবে।

[লেখক : শিক্ষক]

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নদী রক্ষায় চাই কার্যকর ব্যবস্থা

এনায়েত আলী বিশ্বাস

মঙ্গলবার, ১৭ মে ২০২২

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। পানিই এর জীবন; কিন্তু ফারাক্কা ও তিস্তায় বাঁধের কারণে অন্যান্য নদ-নদী যেমন ভরাট হয়ে গেছে, তেমনি ভারতের পানির ঢল বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি তিস্তাসহ ভারতের অন্যান্য নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা অববাহীকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। মানুষ ফসল হারিয়ে আবার বিপর্যয়ের মুখে পতিত হয়েছে। নদী রক্ষায় কার্যকর তেমন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় উন্নয়ন অনেকখানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

পানি বাংলাদেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এই পানি ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। প্রায় প্রতি বছর বাংলাদেশে বন্যা হয়ে থাকে, আবার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড় জলোচ্ছ্বাসে সাগর থেকে লবণাক্ত পানি উজানে উঠে আসছে।

নদী রক্ষায় কার্যকর তেমন কোন ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৪০৫টি নদী ও ৫৭টি আন্তঃদেশীয় সংযোগ নদী রয়েছে। কিন্তু দূষণ ও দখল হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে নদীগুলো। বর্তমানে ২৩০টি নদী বহমান রয়েছে। দুঃখের বিষয়- দক্ষিণ অঞ্চলে ৩০টি নদীর মধ্যে কপোতাক্ষ, শিবসা ও পশুর নদীর মতো দুই-তৃতীয়াংশ নদী ভরাট হয়ে নৌ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এসব নদীতে ভাটির সময় লোকজন হেঁটে পার হয়। এই যখন ভাটি অঞ্চলের নদ-নদীর অবস্থা, তখন উত্তর অঞ্চলের নদ-নদীর অবস্থা সহজেই অনুমান করা যায়।

ফারাক্কাসহ উজানের অসংখ্য বাঁধ ও প্রকল্পের মাধ্যামে গঙ্গার পানি প্রত্যাহার চলতে থাকায় বাংলাদেশে পদ্মার বুকে প্রতিদিন বিস্তার ঘটে চলেছে চরের। এই চর খেয়ে ফেলছে পানির অংশ, ফলে সংকুচিত হয়ে চলেছে নদীর মূল প্রবাহ। তথ্যমতে, ভারত তার বহু সংখ্যাক সেচ ও পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মূল গঙ্গা এবং এর উপনদীগুলোর ৯০ ভাগ পানি সরিয়ে নিচ্ছে। এ কারণে নদীতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে মাত্র ১০ ভাগ। ৫৬ বছরের মধ্যে গঙ্গা নদীপ্রবাহ ২০ ভাগ হ্্রাস পেয়েছে।

শুধু ফারাক্কা নয়, গঙ্গা-পদ্মাকেন্দ্রিক বাঁধ, জলাধার, ক্রস ড্যাম, রেগুলেটরসহ অন্তত ৩৩টি মূল অবকাঠামো তৈরি করেছে ভারত। এর সঙ্গে রয়েছে আনুষঙ্গিক আরো অসংখ্যা ছোট-বড় কাঠামো। এ ধরনের প্রকল্পে হাজার হাজার কিলোমিটার খালের মাধ্যমে গঙ্গার পানি সরিয়ে নিয়ে সেচ দেয়ার ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ভারত।

বাংলাদেশে পানির অভাবে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাতে দেখা যায়- উত্তর অঞ্চলে প্রায় দুই কোটি মানুষ সেচের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দক্ষিণ অঞ্চলের প্রায় চার কোটি মানুষ ও এক-তৃতীয়াংশ এলাকা সেচের পানির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গঙ্গা প্রত্যক্ষ প্রকল্পের ৫৬ শতাংশ এলাকায় সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত লবণাক্ততার জন্য জমির উর্বরা শক্তি কমে গেছে। দেশের প্রায় ২১ শতাংশ অগভীর নলকূপ ও ৪২ শতাংশ গভীর নলকূপ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না।

১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি চুক্তির পর বাংলাদেশে গঙ্গার পানির অংশ দাঁড়িয়েছে সেকেন্ডে ২০ হাজার ঘনফুটের কম। অথচ ফারাক্কা বাঁধ চালুর আগে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ ৭০ হাজার কিউসেকের চেয়ে কম পানি পেত না। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় হাজার হাজার হস্তচালিত পাম্প অকেজো হয়ে গেছে। অথচ এত অসুবিধা সত্ত্বেও অর্ধশতাব্দীর পর ফারাক্কার বাঁধ নিয়ে এখনো পর্যালোচনা হয়নি।

একটি বাঁধ নির্মাণের ৪০ বছর পার হলে সেটি নিয়ে পর্যালোচনা বা রিভিউ করতে হয়। কিন্তু ফারাক্কা বাঁধের বয়স ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের যে ক্ষতি হয়েছে এখনই তা তুলে ধরতে হবে। গঙ্গা একটি আন্তর্জাতিক নদী। এ নদীর প্রতি বাংলাদেশের অধিকার আছে। এটা ভারতের একক বিষয় নয়, কারণ এটা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সেই কারণে এখনই গঙ্গা নদীর ওপর ভারতের এককভাবে বাঁধ নির্মাণের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরতে হবে।

[লেখক : শিক্ষক]

back to top