alt

উপ-সম্পাদকীয়

নির্বাচনই কি একমাত্র লক্ষ্য?

অমিত রায় চৌধুরী

: বুধবার, ১৮ মে ২০২২

নব্বইয়ের পর বিশ্বব্যবস্থায় মধ্যবিত্তের মনে হয়তো সমৃদ্ধির স্বপ্ন উঁকি মেরেছিল। ঠান্ডাযুদ্ধের অবসানে গড়ে ওঠা বিশ্বায়িত সমাজ টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আলোর রেখাগুলো আজ কেমন যেন মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। মহামারীর দাপট, মহাযুদ্ধের ভ্রুকুটি, জ্বালানির সংকট, মূল্যস্ফীতি-সবকিছু মিলিয়েই একটা বৈশ্বিক অস্থিরতা আড়াল করছে সম্ভাবনার দুয়ারগুলো। এমন জটিল পরিস্থিতিতে সব দেশই চায় শান্তি ও স্থিতি, যা উন্নয়নের ধারাকে বজায় রাখার আশ্বাস দেয়। তবে এই মুহূর্তে আমাদের ভাবনার কেন্দ্রে রয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার উপায় উদ্ভাবন। উঠে আসছে নানা প্রশ্ন। দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ কিংবা অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ নির্বাচনই তর্কের তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি মনে হতে পারে। সংশয় জাগে-এভাবেই কি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সব শর্ত পূরণ করা যায়? গণতান্ত্রিক সমাজের কি একমাত্র আকাক্সক্ষা শুধুই নির্বাচন বা কোন দলের ক্ষমতা দখল? অবশ্যই নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা কেতাবি মতে জনমতের প্রতিফলন ঘটায়। জীবনমান উন্নয়নের যে চিত্রকল্প সমাজ নির্মাণ করে, তা রূপায়নের সুযোগ সৃষ্টি করে। আমরা কি তেমন কোন পরম্পরা বয়ে এনেছি, যা সমাজকে ভরসা জোগায় বা সংকট থেকে মুক্তির পথ দেখায়?

বিবর্তনের পথে সভ্যতা নানা মতবাদের সাক্ষী হয়েছে। গেল শতকই দেখেছে সমাজতন্ত্রের জোয়ার। তত্ত্বের দ্যূতিতে ঝলসে উঠেছিল বিশ্ব। শ্রেণীহীন সমাজ অলীক স্বপ্নই থেকে গেছে। বরং একরৈখিক রাষ্ট্রবাদ আর ভিন্নকণ্ঠকে রুদ্ধ করার কৌশল বিশ্বকে হতাশই করেছে। শেষমেশ ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রও শ্রেয়তর মনে হয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায়। মজবুত সামাজিক নিরাপত্তার বন্দোবস্ত গণতন্ত্রের কল্যাণকামী উদ্দেশ্য প্রমাণ করে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের মূল শর্তই জনগণের সার্বভৌমত্ব। পন্থা যাই হোক, লক্ষ্য সমষ্টিগত কল্যাণ। শ্রেণী, গোষ্ঠী, সমাজ, সম্প্রদায় দেখবে না রাষ্ট্র। সবার অধিকারের প্রতি সমান সম্মান প্রদর্শন করবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। শুধু এদেশে নয়, গোটা বিশ্বের নানা প্রান্তেই আজ গণতন্ত্রের সময়টাও ভালো যাচ্ছে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীকে তুষ্ট করার জন্য রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মূল্যবোধ অগ্রাহ্য হচ্ছে। সাম্য, ন্যায় বিচার কৌশলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে। জনতুষ্টিকরণের রাজনীতি থেকেই উদ্ভব ঘটছে কর্তৃত্ববাদ।

বিশ্বে অনেক নেতাই আজ জনপ্রিয়। প্রচলিত মানদন্ডে সমাজের এই আবেগ পরিমাপ করা দুরূহ। এই ভালোবাসার পেছনে নিশ্চয়ই বিজ্ঞান আছে। নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ভাবনায়, কল্পনায়, বিশ্বাসে তাদের জায়গা পাকা। হতে পারে এর যৌক্তিক ভিতও আছে। প্রাচ্য হতে প্রতীচ্য-সর্বত্রই এমন নেতৃত্বের আধিপত্য চলছে। কারও বিরুদ্ধে উগ্র জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তুলে জাতি বিদ্বেষ চাঙ্গা করার অভিযোগ, কোথাও সীমাহীন দুর্নীতি, কেউ বা দোর্দ- স্বৈরশাসনের লৌহদ- বহন করে চলেছেন যুগের পর যুগ। এমন নানা রকম দুর্নাম পায়ে ঠেলে বছরের পর বছর তারা মসনদ আগলে রেখেছেন। প্রতিবেশী রাজ্যে দেখেছি-বড় বড় স্ক্যামের নজির ভোটের রসায়নে কোন প্রভাবই ফেলতে পারেনি। বরং ভোটের মাঠে ভোট কুশলী নামে নতুন খেলোয়াড়ের দেখা মিলেছে। সেফোলজিতে এদের ভূমিকাও হয়তো এক দিন নির্ণায়ক স্বীকৃতি পেয়ে যাবে। এসব স্ট্র্যাটেজিস্ট সময়মতো মাঠে নামেন কৌশলের ডালি সাজিয়ে। নীতি-আদর্শ সটকে পড়ে পেছনের সারিতে। রাজনীতির দলবদল চলে খেলার মাঠে ক্লাব বদলের মতো। পাকিস্তানের বিষয়টি আলাদা। স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই দুর্ভাগা জনগণ গণতন্ত্রের আস্বাদ পায় নি। ব্যবস্থার ধাঁচটাই নাগরিক চাহিদার আদলটাকে পাল্টে ফেলতে পেরেছে। যেমন পেরেছে আফগানিস্থান, পারস্য, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। একসময় যে সব দেশে সমাজতন্ত্র দাপিয়ে বেড়িয়েছে, সেখানেও গণতন্ত্র শক্ত জমি পায়নি। বাংলার মাটি ঐতিহ্যগতভাবে যুক্তি ও বুদ্ধির সমর্থনে পরিপাটি। দেশ পরিচালনায় নিষ্ক্রিয় দর্শকের আসনে বসা বাঙালির মজ্জায় নেই। সে কারণেই হয়তো নির্বাচন নিয়ে এত আলোচনা, এত তর্ক।

দেখার বিষয়-রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো মজবুত হলে নাগরিক তার সুবিধা কতটা ভোগ করে। উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ, ভারত-জাপানের মতো দেশ অব্যাহতভাবে গণতন্ত্র চর্চা করেছে। এরপরও ইউরোপ-আমেরিকায় প্রতিষ্ঠানগুলো যতটা শক্তি সঞ্চয় করেছে, এশিয়ার দেশগুলোতে তা পারেনি। তবুও এ কথা বলা যায়-বিরোধী দলগুলো মুখে নানা কথা বললেও কার্যত তারা সবাই বিচারব্যবস্থা বা নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রেখেছে। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে-উন্নত গনতান্ত্রিক দেশগুলিতে ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। ভোটার উপস্থিতিও নির্বাচনে বেশি থাকে না। নাগরিক দায়িত্ব পালনে তারা যথেষ্ট সততার পরিচয় দিতে পেরেছে কিনা, এমন বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়, নির্বাচনে জয়-পরাজয় অন্তত তাদের যাপিত জীবনে তাৎক্ষণিক কোন প্রভাব ফেলে না। ব্যক্তি, সমাজ কিংবা পেশাগত ক্যারিয়ারেও কোন আঁচ পড়ার ঝুঁকি নেই। নির্বাচিত প্রতিনিধি সাংবিধানিক নৈতিকতা উপেক্ষা করে না। তাদের গৃহীত কোন কার্যক্রম স্বাধীনতা, দেশ কিংবা জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সংঘর্ষপূর্ণ হয় না। নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যদি কোন কাঠামোগত পরিবর্তন হয়, জনজীবনে তার প্রভাব থাকে খুবই নগণ্য। সবচেয়ে বড় কথা-প্রতিহিংসায় আক্রান্ত হওয়া এখানে অলীক ভাবনা। আমাদের বাস্তবতায় তা সম্পূর্ণ উল্টো। নির্বাচনে বিজয়ী সবকিছুই দখল করতে পারে। বিজয় যদি ভারী হয়, তবে তো আর কথাই নেই। হয়তো সংকটের শেকড় অনেকটাই এখানে নিহিত।

রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম হলেও ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে রাষ্ট্রের চরিত্র পাল্টে গেছে। আর বদলের যে প্রকরণ, তাও খুব নির্মম। ৭৫-র মধ্য আগস্ট ট্র্যাজেডির লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রের ধারণাটাই মুছে দেয়া। সবচেয়ে বড় চালাকি-উদ্দেশ্য ছিল পরাজিত রাজনৈতিক এজেন্ডার পুনর্বাসন, মুখোশ ছিল গণতন্ত্র। জাতির পিতাকে হত্যা করা হলো এই অজুহাতে। আবার সেই জঘন্য অপরাধ দায়মুক্তি পেল গণতন্ত্রের কথিত ত্রাণকর্তাদের হাতে। এভাবেই আদর্শকে বিদায় করে সমাজে জায়গা করে নিল সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও ধর্মীয় উগ্রবাদ। নব্য বেনিয়া গোষ্ঠীর নাটকীয় বিকাশ সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে তছনছ করে ফেলল। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান পাকিস্তানি মডেলে দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত হতে সময় নেয়নি।

গণতান্ত্রিক সমাজের কি একমাত্র আকাক্সক্ষা শুধুই নির্বাচন বা কোন দলের ক্ষমতা দখল?

নব্বই-এ গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলন নতুন ভরসা জোগালেও লক্ষ্য অর্জিত হলো না। বরং রাষ্ট্রীয় সেবা গণমুখী চরিত্র হারাল। শিক্ষা কাঠামোকে শুধু বিভক্ত নয়, আদর্শ বিচ্যুতও করা হয়। প্রতি উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি করার ঘোষণা এলো জাতীয় সংসদে, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হলো না। ব্রিজ-রাস্তা নির্মাণের অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি আলোর মুখ দেখল না। রেল বিলুপ্তির পথে হেঁটেছে। নদী-রেল-সড়ক দখলের মহোৎসব চলেছে। মঙ্গা নামক নতুন শব্দ কৃষির সাফল্যকে ম্লান করেছে। বিদ্যুৎ-সার চূড়ান্ত রাষ্ট্রীয় অবহেলার শিকার হয়েছে। ভারী শিল্প বন্ধ হয়েছে। খেলাপি ঋণ ব্যবসার চরিত্রকে বদলে ফেলেছে। নির্বাচন ব্যবস্থা হাসির খোরাক হয়েছে।

এদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি ক্ষমতায় দীর্ঘদিন। আর তাদের নিয়েই বা মানুষ কী ভাবছে? কান পাতলেই শোনা যায়-শেখ হাসিনায় ভরসা আছে। প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী তিনি। কিন্তু দল বা সংগঠন কি জনগণ থেকে খানিকটা দূরে সরে এসেছে? সমাজের বৃহত্তর অংশ কি রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়ছে? মানুষের মনে কি অগোচরে জায়গা করে নিচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা? কর্তৃত্ব, বিত্ত ও ভোগের লিপ্সা হয়তো নীতি-নৈতিকতাকে সাইড লাইনেই পাঠিয়েছে। নিজেকে সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার অক্লান্ত প্রচেষ্টা। টাকা পাচার, দুর্নীতি-অপচয় যেন কিছুতেই জব্দ হচ্ছে না। জনগণ বিরক্ত, কিন্তু সরকার পরিবর্তন চায়, এমনও নয়। কেননা অতীত অভিজ্ঞতা ভালো না। জিনিসপত্রের দাম ও সামাজিক স্থিতি সহনীয় থাকলে রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাতে জনগণ রাজি নয়। এ কারণে সুবিধা পাচ্ছে মৌলবাদ, অশুভ অগণতান্ত্রিক শক্তি। বিরোধী পরিসর শূন্য থাকায় দুর্বল হচ্ছে রাজনীতি। মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান এমনকি রাষ্ট্রের প্রতি মমত্ব সৃষ্টির কোন পরিকল্পিত উদ্যোগ চোখে পড়ে না। সরকারের সাফল্যের গল্পও জনতার কাছে নিয়ে যাওয়ার গরজ দেখি না। দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ বা বিচারবোধে কে প্রগতিশীল, কে প্রতিক্রিয়াশীল-তাও বোঝা মুশকিল। এমন একটা বিভ্রান্ত মনোভূমি বেড়ে উঠেছে বর্তমান আমলেই, যা খুবই হতাশাজনক।

অনেক রাষ্ট্র বিজ্ঞানীর মতে-সুশাসনের ব্যারোমিটার হলো কোন দেশের সংখ্যালঘু, নারী বা ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতা বা নিরাপত্তার ব্যবস্থা। নানা অজুহাতে এ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুর জীবন ও সম্পত্তি বিপন্ন হয়েছে। অপরাধী দায়মুক্তি পায় বলে সহিংসতার মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সমাজ প্রতিনিয়ত ছোট বড় কত অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে চলে, কিন্তু নারী বা সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে সামান্য ইস্যু পেলেই পৌরুষ জেগে ওঠে। নৈতিকতা, মতাদর্শ বা ধর্মীয় দর্শন-কোন কিছুই রুখতে পারে না তাদের এই প্রবল পরাক্রম। অথচ এসব পোশাকি পরিচয়ই আবার আধিপত্য বিস্তার কিংবা সম্পদ দখলের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। মনে রাখতে হবে-অসহিষ্ণুতা কোন সীমা মানে না। যদি কিনা অপরাধীর কঠোর শাস্তি দৃশ্যমান না হয়। সবাই একমত-হিংস্রতা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলছে। মুক্তিযুদ্ধকালে পাক বাহিনীর বীভৎস বর্বরতার সাক্ষী হয়েছিল শান্তিপ্রিয় এ জনগোষ্ঠী। অপরাধের চরিত্রই হয়তো সংক্রমণশীল। এক অপরাধ অন্য অপরাধের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। সাম্প্রতিককালের ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ, নারীর ওপর সহিংসতা, পুড়িয়ে গণহত্যা-সমাজের জন্য এমনই কোন অশনি সংকেত কিনা, ভেবে দেখা জরুরি।

মৌলিক কিছু ইস্যুতে নির্বাচনের আগেই সংলাপ হতে পারে। পদ্ধতিগত বিষয়েও পর্যালোচনায় দোষ নেই। দরকার পারস্পরিক আস্থা। স্বল্পদর্শী সমাধান নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ও দেশের ভাবমূর্তি বিবেচনায় রেখে সংকটের স্থায়ী নিষ্পত্তির পথ খুঁজতে হবে। শুধু নির্বাচন প্রক্রিয়া নয়, দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, কৃষি, প্রযুক্তি, বিদেশনীতি এমনকি রাষ্ট্রের চরিত্র-সব বিষয়েই খোলামনে আলোচনা দরকার। পেশি ও বিত্তের দাপট বাগে আনতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীর শাস্তি যেন ক্ষমতাসীনের করুণার ওপর নির্ভর না করে। সুশীল সমাজের একাংশকে নির্বাচন নিয়ে যতটা সক্রিয় মনে হয়, টেকসই বন্দোবস্তের জন্য তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সব পক্ষের সততা ও ঐকমত্য চাই। নির্বাচনের আগে শান্তির এই অপরিহার্য শর্তগুলো আলোচনার টেবিলেই মীমাংসা জরুরি।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ]

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নির্বাচনই কি একমাত্র লক্ষ্য?

অমিত রায় চৌধুরী

বুধবার, ১৮ মে ২০২২

নব্বইয়ের পর বিশ্বব্যবস্থায় মধ্যবিত্তের মনে হয়তো সমৃদ্ধির স্বপ্ন উঁকি মেরেছিল। ঠান্ডাযুদ্ধের অবসানে গড়ে ওঠা বিশ্বায়িত সমাজ টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আলোর রেখাগুলো আজ কেমন যেন মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। মহামারীর দাপট, মহাযুদ্ধের ভ্রুকুটি, জ্বালানির সংকট, মূল্যস্ফীতি-সবকিছু মিলিয়েই একটা বৈশ্বিক অস্থিরতা আড়াল করছে সম্ভাবনার দুয়ারগুলো। এমন জটিল পরিস্থিতিতে সব দেশই চায় শান্তি ও স্থিতি, যা উন্নয়নের ধারাকে বজায় রাখার আশ্বাস দেয়। তবে এই মুহূর্তে আমাদের ভাবনার কেন্দ্রে রয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার উপায় উদ্ভাবন। উঠে আসছে নানা প্রশ্ন। দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ কিংবা অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ নির্বাচনই তর্কের তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি মনে হতে পারে। সংশয় জাগে-এভাবেই কি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সব শর্ত পূরণ করা যায়? গণতান্ত্রিক সমাজের কি একমাত্র আকাক্সক্ষা শুধুই নির্বাচন বা কোন দলের ক্ষমতা দখল? অবশ্যই নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা কেতাবি মতে জনমতের প্রতিফলন ঘটায়। জীবনমান উন্নয়নের যে চিত্রকল্প সমাজ নির্মাণ করে, তা রূপায়নের সুযোগ সৃষ্টি করে। আমরা কি তেমন কোন পরম্পরা বয়ে এনেছি, যা সমাজকে ভরসা জোগায় বা সংকট থেকে মুক্তির পথ দেখায়?

বিবর্তনের পথে সভ্যতা নানা মতবাদের সাক্ষী হয়েছে। গেল শতকই দেখেছে সমাজতন্ত্রের জোয়ার। তত্ত্বের দ্যূতিতে ঝলসে উঠেছিল বিশ্ব। শ্রেণীহীন সমাজ অলীক স্বপ্নই থেকে গেছে। বরং একরৈখিক রাষ্ট্রবাদ আর ভিন্নকণ্ঠকে রুদ্ধ করার কৌশল বিশ্বকে হতাশই করেছে। শেষমেশ ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রও শ্রেয়তর মনে হয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায়। মজবুত সামাজিক নিরাপত্তার বন্দোবস্ত গণতন্ত্রের কল্যাণকামী উদ্দেশ্য প্রমাণ করে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের মূল শর্তই জনগণের সার্বভৌমত্ব। পন্থা যাই হোক, লক্ষ্য সমষ্টিগত কল্যাণ। শ্রেণী, গোষ্ঠী, সমাজ, সম্প্রদায় দেখবে না রাষ্ট্র। সবার অধিকারের প্রতি সমান সম্মান প্রদর্শন করবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। শুধু এদেশে নয়, গোটা বিশ্বের নানা প্রান্তেই আজ গণতন্ত্রের সময়টাও ভালো যাচ্ছে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীকে তুষ্ট করার জন্য রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মূল্যবোধ অগ্রাহ্য হচ্ছে। সাম্য, ন্যায় বিচার কৌশলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে। জনতুষ্টিকরণের রাজনীতি থেকেই উদ্ভব ঘটছে কর্তৃত্ববাদ।

বিশ্বে অনেক নেতাই আজ জনপ্রিয়। প্রচলিত মানদন্ডে সমাজের এই আবেগ পরিমাপ করা দুরূহ। এই ভালোবাসার পেছনে নিশ্চয়ই বিজ্ঞান আছে। নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ভাবনায়, কল্পনায়, বিশ্বাসে তাদের জায়গা পাকা। হতে পারে এর যৌক্তিক ভিতও আছে। প্রাচ্য হতে প্রতীচ্য-সর্বত্রই এমন নেতৃত্বের আধিপত্য চলছে। কারও বিরুদ্ধে উগ্র জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তুলে জাতি বিদ্বেষ চাঙ্গা করার অভিযোগ, কোথাও সীমাহীন দুর্নীতি, কেউ বা দোর্দ- স্বৈরশাসনের লৌহদ- বহন করে চলেছেন যুগের পর যুগ। এমন নানা রকম দুর্নাম পায়ে ঠেলে বছরের পর বছর তারা মসনদ আগলে রেখেছেন। প্রতিবেশী রাজ্যে দেখেছি-বড় বড় স্ক্যামের নজির ভোটের রসায়নে কোন প্রভাবই ফেলতে পারেনি। বরং ভোটের মাঠে ভোট কুশলী নামে নতুন খেলোয়াড়ের দেখা মিলেছে। সেফোলজিতে এদের ভূমিকাও হয়তো এক দিন নির্ণায়ক স্বীকৃতি পেয়ে যাবে। এসব স্ট্র্যাটেজিস্ট সময়মতো মাঠে নামেন কৌশলের ডালি সাজিয়ে। নীতি-আদর্শ সটকে পড়ে পেছনের সারিতে। রাজনীতির দলবদল চলে খেলার মাঠে ক্লাব বদলের মতো। পাকিস্তানের বিষয়টি আলাদা। স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই দুর্ভাগা জনগণ গণতন্ত্রের আস্বাদ পায় নি। ব্যবস্থার ধাঁচটাই নাগরিক চাহিদার আদলটাকে পাল্টে ফেলতে পেরেছে। যেমন পেরেছে আফগানিস্থান, পারস্য, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। একসময় যে সব দেশে সমাজতন্ত্র দাপিয়ে বেড়িয়েছে, সেখানেও গণতন্ত্র শক্ত জমি পায়নি। বাংলার মাটি ঐতিহ্যগতভাবে যুক্তি ও বুদ্ধির সমর্থনে পরিপাটি। দেশ পরিচালনায় নিষ্ক্রিয় দর্শকের আসনে বসা বাঙালির মজ্জায় নেই। সে কারণেই হয়তো নির্বাচন নিয়ে এত আলোচনা, এত তর্ক।

দেখার বিষয়-রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো মজবুত হলে নাগরিক তার সুবিধা কতটা ভোগ করে। উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ, ভারত-জাপানের মতো দেশ অব্যাহতভাবে গণতন্ত্র চর্চা করেছে। এরপরও ইউরোপ-আমেরিকায় প্রতিষ্ঠানগুলো যতটা শক্তি সঞ্চয় করেছে, এশিয়ার দেশগুলোতে তা পারেনি। তবুও এ কথা বলা যায়-বিরোধী দলগুলো মুখে নানা কথা বললেও কার্যত তারা সবাই বিচারব্যবস্থা বা নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রেখেছে। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে-উন্নত গনতান্ত্রিক দেশগুলিতে ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। ভোটার উপস্থিতিও নির্বাচনে বেশি থাকে না। নাগরিক দায়িত্ব পালনে তারা যথেষ্ট সততার পরিচয় দিতে পেরেছে কিনা, এমন বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়, নির্বাচনে জয়-পরাজয় অন্তত তাদের যাপিত জীবনে তাৎক্ষণিক কোন প্রভাব ফেলে না। ব্যক্তি, সমাজ কিংবা পেশাগত ক্যারিয়ারেও কোন আঁচ পড়ার ঝুঁকি নেই। নির্বাচিত প্রতিনিধি সাংবিধানিক নৈতিকতা উপেক্ষা করে না। তাদের গৃহীত কোন কার্যক্রম স্বাধীনতা, দেশ কিংবা জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সংঘর্ষপূর্ণ হয় না। নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যদি কোন কাঠামোগত পরিবর্তন হয়, জনজীবনে তার প্রভাব থাকে খুবই নগণ্য। সবচেয়ে বড় কথা-প্রতিহিংসায় আক্রান্ত হওয়া এখানে অলীক ভাবনা। আমাদের বাস্তবতায় তা সম্পূর্ণ উল্টো। নির্বাচনে বিজয়ী সবকিছুই দখল করতে পারে। বিজয় যদি ভারী হয়, তবে তো আর কথাই নেই। হয়তো সংকটের শেকড় অনেকটাই এখানে নিহিত।

রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম হলেও ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে রাষ্ট্রের চরিত্র পাল্টে গেছে। আর বদলের যে প্রকরণ, তাও খুব নির্মম। ৭৫-র মধ্য আগস্ট ট্র্যাজেডির লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রের ধারণাটাই মুছে দেয়া। সবচেয়ে বড় চালাকি-উদ্দেশ্য ছিল পরাজিত রাজনৈতিক এজেন্ডার পুনর্বাসন, মুখোশ ছিল গণতন্ত্র। জাতির পিতাকে হত্যা করা হলো এই অজুহাতে। আবার সেই জঘন্য অপরাধ দায়মুক্তি পেল গণতন্ত্রের কথিত ত্রাণকর্তাদের হাতে। এভাবেই আদর্শকে বিদায় করে সমাজে জায়গা করে নিল সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও ধর্মীয় উগ্রবাদ। নব্য বেনিয়া গোষ্ঠীর নাটকীয় বিকাশ সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে তছনছ করে ফেলল। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান পাকিস্তানি মডেলে দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত হতে সময় নেয়নি।

গণতান্ত্রিক সমাজের কি একমাত্র আকাক্সক্ষা শুধুই নির্বাচন বা কোন দলের ক্ষমতা দখল?

নব্বই-এ গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলন নতুন ভরসা জোগালেও লক্ষ্য অর্জিত হলো না। বরং রাষ্ট্রীয় সেবা গণমুখী চরিত্র হারাল। শিক্ষা কাঠামোকে শুধু বিভক্ত নয়, আদর্শ বিচ্যুতও করা হয়। প্রতি উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি করার ঘোষণা এলো জাতীয় সংসদে, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হলো না। ব্রিজ-রাস্তা নির্মাণের অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি আলোর মুখ দেখল না। রেল বিলুপ্তির পথে হেঁটেছে। নদী-রেল-সড়ক দখলের মহোৎসব চলেছে। মঙ্গা নামক নতুন শব্দ কৃষির সাফল্যকে ম্লান করেছে। বিদ্যুৎ-সার চূড়ান্ত রাষ্ট্রীয় অবহেলার শিকার হয়েছে। ভারী শিল্প বন্ধ হয়েছে। খেলাপি ঋণ ব্যবসার চরিত্রকে বদলে ফেলেছে। নির্বাচন ব্যবস্থা হাসির খোরাক হয়েছে।

এদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি ক্ষমতায় দীর্ঘদিন। আর তাদের নিয়েই বা মানুষ কী ভাবছে? কান পাতলেই শোনা যায়-শেখ হাসিনায় ভরসা আছে। প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী তিনি। কিন্তু দল বা সংগঠন কি জনগণ থেকে খানিকটা দূরে সরে এসেছে? সমাজের বৃহত্তর অংশ কি রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়ছে? মানুষের মনে কি অগোচরে জায়গা করে নিচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা? কর্তৃত্ব, বিত্ত ও ভোগের লিপ্সা হয়তো নীতি-নৈতিকতাকে সাইড লাইনেই পাঠিয়েছে। নিজেকে সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার অক্লান্ত প্রচেষ্টা। টাকা পাচার, দুর্নীতি-অপচয় যেন কিছুতেই জব্দ হচ্ছে না। জনগণ বিরক্ত, কিন্তু সরকার পরিবর্তন চায়, এমনও নয়। কেননা অতীত অভিজ্ঞতা ভালো না। জিনিসপত্রের দাম ও সামাজিক স্থিতি সহনীয় থাকলে রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাতে জনগণ রাজি নয়। এ কারণে সুবিধা পাচ্ছে মৌলবাদ, অশুভ অগণতান্ত্রিক শক্তি। বিরোধী পরিসর শূন্য থাকায় দুর্বল হচ্ছে রাজনীতি। মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান এমনকি রাষ্ট্রের প্রতি মমত্ব সৃষ্টির কোন পরিকল্পিত উদ্যোগ চোখে পড়ে না। সরকারের সাফল্যের গল্পও জনতার কাছে নিয়ে যাওয়ার গরজ দেখি না। দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ বা বিচারবোধে কে প্রগতিশীল, কে প্রতিক্রিয়াশীল-তাও বোঝা মুশকিল। এমন একটা বিভ্রান্ত মনোভূমি বেড়ে উঠেছে বর্তমান আমলেই, যা খুবই হতাশাজনক।

অনেক রাষ্ট্র বিজ্ঞানীর মতে-সুশাসনের ব্যারোমিটার হলো কোন দেশের সংখ্যালঘু, নারী বা ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতা বা নিরাপত্তার ব্যবস্থা। নানা অজুহাতে এ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুর জীবন ও সম্পত্তি বিপন্ন হয়েছে। অপরাধী দায়মুক্তি পায় বলে সহিংসতার মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সমাজ প্রতিনিয়ত ছোট বড় কত অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে চলে, কিন্তু নারী বা সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে সামান্য ইস্যু পেলেই পৌরুষ জেগে ওঠে। নৈতিকতা, মতাদর্শ বা ধর্মীয় দর্শন-কোন কিছুই রুখতে পারে না তাদের এই প্রবল পরাক্রম। অথচ এসব পোশাকি পরিচয়ই আবার আধিপত্য বিস্তার কিংবা সম্পদ দখলের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। মনে রাখতে হবে-অসহিষ্ণুতা কোন সীমা মানে না। যদি কিনা অপরাধীর কঠোর শাস্তি দৃশ্যমান না হয়। সবাই একমত-হিংস্রতা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলছে। মুক্তিযুদ্ধকালে পাক বাহিনীর বীভৎস বর্বরতার সাক্ষী হয়েছিল শান্তিপ্রিয় এ জনগোষ্ঠী। অপরাধের চরিত্রই হয়তো সংক্রমণশীল। এক অপরাধ অন্য অপরাধের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। সাম্প্রতিককালের ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ, নারীর ওপর সহিংসতা, পুড়িয়ে গণহত্যা-সমাজের জন্য এমনই কোন অশনি সংকেত কিনা, ভেবে দেখা জরুরি।

মৌলিক কিছু ইস্যুতে নির্বাচনের আগেই সংলাপ হতে পারে। পদ্ধতিগত বিষয়েও পর্যালোচনায় দোষ নেই। দরকার পারস্পরিক আস্থা। স্বল্পদর্শী সমাধান নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ও দেশের ভাবমূর্তি বিবেচনায় রেখে সংকটের স্থায়ী নিষ্পত্তির পথ খুঁজতে হবে। শুধু নির্বাচন প্রক্রিয়া নয়, দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, কৃষি, প্রযুক্তি, বিদেশনীতি এমনকি রাষ্ট্রের চরিত্র-সব বিষয়েই খোলামনে আলোচনা দরকার। পেশি ও বিত্তের দাপট বাগে আনতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীর শাস্তি যেন ক্ষমতাসীনের করুণার ওপর নির্ভর না করে। সুশীল সমাজের একাংশকে নির্বাচন নিয়ে যতটা সক্রিয় মনে হয়, টেকসই বন্দোবস্তের জন্য তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সব পক্ষের সততা ও ঐকমত্য চাই। নির্বাচনের আগে শান্তির এই অপরিহার্য শর্তগুলো আলোচনার টেবিলেই মীমাংসা জরুরি।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ]

back to top