এম এইচ খান মঞ্জু
নিয়ন্ত্রণহীন মোটরসাইকেল। বেপরোয়া এদের চালকরা। নিয়মকানুন ও ট্রাফিক আইন মানতে অনীহা তাদের অধিকাংশের। ফলে যত্রতত্র দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় অনেকে মারা যাচ্ছে। অনেকে চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনা অন্য অনেক দেশের তুলনায় বেশি।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও তাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সঙ্গতকারণেই এ দুর্ঘটনা ও মৃত্যু রোখার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে ব্যাপকভাবে। কী কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে সেটা খতিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি। দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালকদের একটা বড় অংশ টিনএজার। এরা নিয়মনীতি ও ট্রাফিক আইনের ধার ধারে না। এক মোটরসাইকেলে দুজন-তিনজন পর্যন্ত চলাচল করে। হেলমেট পর্যন্ত ব্যবহার করে না।
মোটরসাইকেল রাজনৈতিক ক্ষমতা ও পেশিশক্তি প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটা বেড়েছে। উদ্ধত, বেপরোয়া ও উচ্ছৃঙ্খল টিনএজারদের মোটরসাইকেল নিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া তাই এখন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। উপরন্তু কয়েক বছর হলো মোটরসাইকেলের অ্যাপভিত্তিক সার্ভিস চালু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোন নিয়মকানুক ও নিয়ন্ত্রণ নেই।
দেশে মোট কত মোটরসাইকেল চলাচল করে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। সারা দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৮০ হাজার ৪৮৮। এর বাইরে অনিবন্ধিত মোটরসাইকেলও রয়েছে। এ সংখ্যা আরও কয়েক লাখ হতে পারে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল কেনা যাবে না, এমন বিধি থাকলেও এখন তা কার্যকর নেই। ফলে যে কেউ লাইসেন্স থাক বা না থাক মোটরসাইকেল কিনতে পারছে। এতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মোটরসাইকেল ড্রাইভিং জানে না, এরূপ লোকদের হাতে গিয়ে পড়ছে।
ঢাকার মতো জনবহুল শহরে মোটরসাইকেল চালানোর জন্য যেরূপ দক্ষতা প্রয়োজন তা তাদের নেই। ফলে যে কোনো সময় তাদের দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, লাইসেন্স করা ৯ লাখ ১৪ হাজার ৮১৭টি মোটরসাইকেল ঢাকা শহরে চলাচল করছে। লাইসেন্স ছাড়া কত মোটরসাইকেল চলাচল করছে, সেটা কেউ বলতে পারে না। রিকশার দৌরাত্ম্য ঢাকা শহরে যাতায়াত করা যায় না। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে মোটরসাইকেল। এই দ্বিচক্র যন্ত্রযান যানজটের এই শহরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা দিলেও দুর্ঘটনার ব্যাপক ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।
ঈদের ছুটিকালীন সময়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১০৪৭ জন। এদের প্রায় অর্ধেক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ভর্তি হয়েছে। মোটরসাইকেল অনেক সময় যানজটেরও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ঢাকাসহ সড়ক-মহাসড়ক, এমনকি গ্রামে-গঞ্জে পর্যন্ত মোটরসাইকেলের আধিক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে। মোটরসাইকেল একটি যন্ত্রবিশেষ। এর কোনো দোষ নেই। দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির জন্য দায়ী এর চালকরা এবং ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি-বিচ্যুতি। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মোটরসাইকেল চালনার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত। মোটরসাইকেল যেই চালাবে তার ক্ষেত্রে লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করতে হবে। ট্রাফিক আইন ও বিধি যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না।
মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ ঝুঁকি কমাতে হলে ব্যক্তিগত ও সরকারি উভয় পক্ষে কতগুলো দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। মোটরসাইকেলচালকদেরই বুঝতে হবে যে ট্রাফিক আইনের সব বিধান মেনে সতর্কতার সঙ্গে মোটরসাইকেল না চালালে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই দুর্ঘটনার প্রথম শিকার নিজেকেই হতে হয়। অঙ্গহানির আশঙ্কা থাকে, যাতে সারা জীবনের জন্য কর্মক্ষমতা হারাতে হতে পারে।
মোটরসাইকেলচালকদের ট্রাফিক আইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে ট্রাফিক পুলিশকে তৎপর হতে হবে। লাইসেন্সহীন ও ত্রুটিপূর্ণ মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। মোটরসাইকেলের চালক ও অন্য আরোহীকে অবশ্যই হেলমেট পরতে হবে; ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে। বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা।
[লেখক : প্রাক্তন প্রিন্সিপাল, এম এইচ খান ডিগ্রি কলেজ, গোপালগঞ্জ]
এম এইচ খান মঞ্জু
শনিবার, ২১ মে ২০২২
নিয়ন্ত্রণহীন মোটরসাইকেল। বেপরোয়া এদের চালকরা। নিয়মকানুন ও ট্রাফিক আইন মানতে অনীহা তাদের অধিকাংশের। ফলে যত্রতত্র দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় অনেকে মারা যাচ্ছে। অনেকে চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনা অন্য অনেক দেশের তুলনায় বেশি।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও তাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সঙ্গতকারণেই এ দুর্ঘটনা ও মৃত্যু রোখার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে ব্যাপকভাবে। কী কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে সেটা খতিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি। দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালকদের একটা বড় অংশ টিনএজার। এরা নিয়মনীতি ও ট্রাফিক আইনের ধার ধারে না। এক মোটরসাইকেলে দুজন-তিনজন পর্যন্ত চলাচল করে। হেলমেট পর্যন্ত ব্যবহার করে না।
মোটরসাইকেল রাজনৈতিক ক্ষমতা ও পেশিশক্তি প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটা বেড়েছে। উদ্ধত, বেপরোয়া ও উচ্ছৃঙ্খল টিনএজারদের মোটরসাইকেল নিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া তাই এখন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। উপরন্তু কয়েক বছর হলো মোটরসাইকেলের অ্যাপভিত্তিক সার্ভিস চালু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোন নিয়মকানুক ও নিয়ন্ত্রণ নেই।
দেশে মোট কত মোটরসাইকেল চলাচল করে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। সারা দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৮০ হাজার ৪৮৮। এর বাইরে অনিবন্ধিত মোটরসাইকেলও রয়েছে। এ সংখ্যা আরও কয়েক লাখ হতে পারে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল কেনা যাবে না, এমন বিধি থাকলেও এখন তা কার্যকর নেই। ফলে যে কেউ লাইসেন্স থাক বা না থাক মোটরসাইকেল কিনতে পারছে। এতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মোটরসাইকেল ড্রাইভিং জানে না, এরূপ লোকদের হাতে গিয়ে পড়ছে।
ঢাকার মতো জনবহুল শহরে মোটরসাইকেল চালানোর জন্য যেরূপ দক্ষতা প্রয়োজন তা তাদের নেই। ফলে যে কোনো সময় তাদের দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, লাইসেন্স করা ৯ লাখ ১৪ হাজার ৮১৭টি মোটরসাইকেল ঢাকা শহরে চলাচল করছে। লাইসেন্স ছাড়া কত মোটরসাইকেল চলাচল করছে, সেটা কেউ বলতে পারে না। রিকশার দৌরাত্ম্য ঢাকা শহরে যাতায়াত করা যায় না। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে মোটরসাইকেল। এই দ্বিচক্র যন্ত্রযান যানজটের এই শহরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা দিলেও দুর্ঘটনার ব্যাপক ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।
ঈদের ছুটিকালীন সময়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১০৪৭ জন। এদের প্রায় অর্ধেক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ভর্তি হয়েছে। মোটরসাইকেল অনেক সময় যানজটেরও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ঢাকাসহ সড়ক-মহাসড়ক, এমনকি গ্রামে-গঞ্জে পর্যন্ত মোটরসাইকেলের আধিক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে। মোটরসাইকেল একটি যন্ত্রবিশেষ। এর কোনো দোষ নেই। দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির জন্য দায়ী এর চালকরা এবং ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি-বিচ্যুতি। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মোটরসাইকেল চালনার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত। মোটরসাইকেল যেই চালাবে তার ক্ষেত্রে লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করতে হবে। ট্রাফিক আইন ও বিধি যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না।
মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ ঝুঁকি কমাতে হলে ব্যক্তিগত ও সরকারি উভয় পক্ষে কতগুলো দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। মোটরসাইকেলচালকদেরই বুঝতে হবে যে ট্রাফিক আইনের সব বিধান মেনে সতর্কতার সঙ্গে মোটরসাইকেল না চালালে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই দুর্ঘটনার প্রথম শিকার নিজেকেই হতে হয়। অঙ্গহানির আশঙ্কা থাকে, যাতে সারা জীবনের জন্য কর্মক্ষমতা হারাতে হতে পারে।
মোটরসাইকেলচালকদের ট্রাফিক আইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে ট্রাফিক পুলিশকে তৎপর হতে হবে। লাইসেন্সহীন ও ত্রুটিপূর্ণ মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। মোটরসাইকেলের চালক ও অন্য আরোহীকে অবশ্যই হেলমেট পরতে হবে; ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে। বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা।
[লেখক : প্রাক্তন প্রিন্সিপাল, এম এইচ খান ডিগ্রি কলেজ, গোপালগঞ্জ]