মিহির কুমার রায়
হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যা নতুন কোন ঘটনা নয়। সেখানে প্রতি বছরই কমবেশি অকাল বন্য হয়ে থাকে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষকের পাকা ধান। এ বছরের মার্চ মাসে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের প্রায় পাঁচ হাজার একর জমির ধান হঠাৎ করে তলিয়ে যায়। অনেক বাঁধে দেখা দিয়েছিল ফাটল। কৃষক ও এলাকাবাসী দিনরাত বাঁধের পাশে থেকে নিজেরাই বিনা শ্রমে বাঁধে মাটি কেটেছিল।
হাওরাঞ্চল থেকে যে ধান উৎপাদন হয়ে চাল আকারে দেশের কেন্দ্রীয় স্টকে জমা হয়। যার আর্থিক মূল্য ৩ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। দেশের সার্বিক উন্নয়নে হাওরাঞ্চল থেকে শতকরা ১৮ ভাগ চাল খাদ্য নিরাপত্তায় সংযোজন হয়। শতকরা ২২ ভাগ গবাদিপশু এই অঞ্চলে লালিত পালিত হয়। মৎস্যসম্পদে ভরপুর এই অঞ্চল দেশের আমিষের চাহিদা পূরণে এক গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে বর্ষার আগের দুটি মাসেই কৃষকরা একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকে- পাহাড়ি ঢলের বন্যার পানি কখন আসবে? যেমন, এ বছর প্রথমেই সুনামগঞ্জ জেলার ছোট-বড় শতাধিক হাওড়ের মধ্যে ১৫টিতেই সীমান্তে ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে পানি। তলিয়ে নিয়েছিল আনুমানিক ৭ হাজার হেক্টর বোরো ফসল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ১২টি বাঁধ ভেঙে ৪৩৫০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছে। সময়মতো বাঁধের কাজ শেষ না করা, অর্থছাড় না করা, প্রকৃত কৃষকদের পিআইসির অন্তর্ভুক্ত না করার ফলেই দুর্বল বাঁধের কাজ হওয়ায় ইত্যাদি এমন অভিযোগ হাওরবাসীর।
বন্যার ক্ষয়ক্ষতির একটি হিসাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর প্রাথমিক হিসাবমতে, ২১ মে পর্যন্ত ১ হাজার ৬৬০ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা, বোরো ধান ১ হাজার ৭০৪ হেক্টর ও ১ হাজার ৫৩৮ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এর প্রায় ৫৩৬ কিলোমিটার সড়ক। সব মিলিয়ে বন্যায় ১ হাজার ৩৩৭ টন মাছ ও ১২১ টন পোনা বেরিয়ে গিয়েছে যার ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সিলেট নগরীর সুরমার তীরঘেঁষা কাজিরবাজার এলাকায় রয়েছে অর্ধশতাধিক অটো রাইস মিল যেগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গুদামে রাখা সারি সারি ধান-চালের বস্তা বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে হাওরে বাঁধ ভেঙে ফসলহানির জন্য নদীর নাব্য হারানো বড় কারণ বলে জানিয়েছেন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা। ২০১২ সালে পাউবো সুরমা নদী খননের জন্য একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন সুরমা নদীর নৌপথ পুনরায় চালুর জন্য খননের উদ্যোগ নিলে পাউবোর সেই প্রকল্প আর বাস্তবায়িত হয়নি। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর মূল ভারতের বরাক হওয়ায় দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয় রয়েছে বলে জানান পাউবোর কর্মকর্তারা। এখন আবার নদী খননের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান পাউবোর স্থানীয় প্রকৌশলীরা। তারা বলেন, নদী খননের কোন বিকল্প নেই, এরি মধ্যে অঞ্চলের নদীগুলো খননের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং এবং সেন্টার ফল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওলজিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস।
গত পাঁচ দশকেও সিলেটের প্রধান নদী সুরমা খনন করা হয়নি। যার ফলে তলদেশ ভরাট হয়ে শুষ্ক মৌসুমে শতাধিক স্থানে ছোট ছোট চর জাগে। যার কারণে উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ভরে যায় নদীর দুই পাড়। গত ১২ বছরে খাল উদ্ধারের নামে ৮৬৯ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। অথচ সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। তাহলে সমস্যাটা কোথায়, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। চলতি বছর সিলেট এলাকায় এটি দ্বিতীয় দফা বন্যা। প্রথম দফায় সিলেটে খুব বেশি ক্ষতি না হলেও সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে যায়। কৃষকেরা আধা পাকা ধান কাটতে বাধ্য হন। সেই ক্ষতি পুষিয়ে না উঠতেই দ্বিতীয় দফা বন্যায় বিভাগীয় শহরসহ সিলেটের ১৩টি উপজেলা, সুনামগঞ্জের ৬টি উপজেলা প্লাবিত হয়।
হাওরে অকাল বন্যায় সরকারের দায় কি তা নিরুপণ করার সময় এসেছে । এ ব্যাপারে সবারই দায়বদ্ধতা রয়েছে যার বিশ্লেষণ প্রয়োজন যেমন : মেঘালয় ও অসমে যে বৃষ্টি হয় তার একটা অংশ সংশ্লিষ্ট নদীগুলো হয়ে বাংলাদেশের হাওরেই এসে জমা হয়। অতএব এ দুর্যোগ ঠেকানো সহজ ব্যাপার নয়। এটাও তো ঠিক যে, সীমান্তের ওপারে বছরে কোন সময়ে কতটুকু বৃষ্টি হয়, তার রেকর্ড আমাদের অজানা নয়। আবার সেখানে আগামী কয়েক দিন কী পরিমাণ বৃষ্টি হতে পারে, তারও আগাম তথ্য জানাও দুই দেশের মধ্যে বন্যা বা আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় চুক্তি থাকার কারণে পাওয়া খুব একটা কঠিন বিষয় নয়। এসব তথ্য জানা থাকলে পাহাড়ি ঢল ঠেকানো না হোক, তার কারণে যাতে কম ক্ষয়ক্ষতি হয়, অন্তত সে ব্যবস্থা নেয়া যায় নিশ্চয়ই।
সময়ের আবর্তে পলি সংযোজিত হয়ে হাওড়ের জলাশয়গুলোর ভরাট হওয়ায় অল্প বর্ষায় প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি নিরসন এবং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে এই জলাধারগুলোর নাব্য বৃদ্ধি, বাঁধ নির্মাণের টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়। হাওর এলাকায় প্রাণপ্রবাহ হিসেবে চিহ্নিত নদী ও খালগুলো খনন করা দরকার। হাওরে পানির স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ করে যত্রতত্র রাস্তা ও অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় মানুষের সম্মিলিত পরামর্শে নির্ধারিত সময়ে বাঁধ নির্মাণসম্পন্ন ও প্রয়োজনমাফিক উঁচু করতে হবে।
হাওরে একমাত্র নির্ভরশীল ফসল বোরো ধান চাষের বাইরে বিকল্প কৃষিশিল্প অর্থনীতি ও নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। হাওর ও বিলসংলগ্ন এলাকায় খাসজমি বরাদ্দ বন্ধ করে সরকারিভাবে স্থানীয় জলজ উদ্ভিদ ও বৃক্ষের সমারোহে সবুজায়নের উদ্যোগ নেয়া দরকার। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের যুগে ৭টি জেলা বেষ্টিত হাওর এলাকার এক ফসলি জমিতে কেন এতদিনেও কৃষকদের যান্ত্রিকীকরণের ছোঁয়া (চাষাবাদ, মাড়াই, বাজারজাতকরণ) লাগেনি তা অনুসন্ধান করতে হবে।
বর্তমানে সারা দেশে কৃষিকাজে শ্রমিক সংকট একটি সাধারণ চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সনাতনী ধারার কৃষির জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জ তো বটেই। এ ক্ষেত্রে এলাকার সম্পদশালী অনুপস্থিত জমির মালিক, যারা জমি বর্গা দিয়ে শহরে বসবাস করছেন, তাদের সঙ্গে সেখানে মৌসুমি শ্রমিকদেরও আবাসনের থাকা খাওয়া চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকবে। কাজ শেষে ভাগের ধান ও মজুরি নিয়ে নিরাপদে যাতে বাড়ি ফিরতে পারে, সে জন্য নিরাপদ ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
[লেখক : ডিন, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা]
মিহির কুমার রায়
বুধবার, ২৫ মে ২০২২
হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যা নতুন কোন ঘটনা নয়। সেখানে প্রতি বছরই কমবেশি অকাল বন্য হয়ে থাকে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষকের পাকা ধান। এ বছরের মার্চ মাসে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের প্রায় পাঁচ হাজার একর জমির ধান হঠাৎ করে তলিয়ে যায়। অনেক বাঁধে দেখা দিয়েছিল ফাটল। কৃষক ও এলাকাবাসী দিনরাত বাঁধের পাশে থেকে নিজেরাই বিনা শ্রমে বাঁধে মাটি কেটেছিল।
হাওরাঞ্চল থেকে যে ধান উৎপাদন হয়ে চাল আকারে দেশের কেন্দ্রীয় স্টকে জমা হয়। যার আর্থিক মূল্য ৩ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। দেশের সার্বিক উন্নয়নে হাওরাঞ্চল থেকে শতকরা ১৮ ভাগ চাল খাদ্য নিরাপত্তায় সংযোজন হয়। শতকরা ২২ ভাগ গবাদিপশু এই অঞ্চলে লালিত পালিত হয়। মৎস্যসম্পদে ভরপুর এই অঞ্চল দেশের আমিষের চাহিদা পূরণে এক গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে বর্ষার আগের দুটি মাসেই কৃষকরা একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকে- পাহাড়ি ঢলের বন্যার পানি কখন আসবে? যেমন, এ বছর প্রথমেই সুনামগঞ্জ জেলার ছোট-বড় শতাধিক হাওড়ের মধ্যে ১৫টিতেই সীমান্তে ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে পানি। তলিয়ে নিয়েছিল আনুমানিক ৭ হাজার হেক্টর বোরো ফসল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ১২টি বাঁধ ভেঙে ৪৩৫০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছে। সময়মতো বাঁধের কাজ শেষ না করা, অর্থছাড় না করা, প্রকৃত কৃষকদের পিআইসির অন্তর্ভুক্ত না করার ফলেই দুর্বল বাঁধের কাজ হওয়ায় ইত্যাদি এমন অভিযোগ হাওরবাসীর।
বন্যার ক্ষয়ক্ষতির একটি হিসাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর প্রাথমিক হিসাবমতে, ২১ মে পর্যন্ত ১ হাজার ৬৬০ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা, বোরো ধান ১ হাজার ৭০৪ হেক্টর ও ১ হাজার ৫৩৮ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এর প্রায় ৫৩৬ কিলোমিটার সড়ক। সব মিলিয়ে বন্যায় ১ হাজার ৩৩৭ টন মাছ ও ১২১ টন পোনা বেরিয়ে গিয়েছে যার ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সিলেট নগরীর সুরমার তীরঘেঁষা কাজিরবাজার এলাকায় রয়েছে অর্ধশতাধিক অটো রাইস মিল যেগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গুদামে রাখা সারি সারি ধান-চালের বস্তা বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে হাওরে বাঁধ ভেঙে ফসলহানির জন্য নদীর নাব্য হারানো বড় কারণ বলে জানিয়েছেন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা। ২০১২ সালে পাউবো সুরমা নদী খননের জন্য একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন সুরমা নদীর নৌপথ পুনরায় চালুর জন্য খননের উদ্যোগ নিলে পাউবোর সেই প্রকল্প আর বাস্তবায়িত হয়নি। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর মূল ভারতের বরাক হওয়ায় দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয় রয়েছে বলে জানান পাউবোর কর্মকর্তারা। এখন আবার নদী খননের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান পাউবোর স্থানীয় প্রকৌশলীরা। তারা বলেন, নদী খননের কোন বিকল্প নেই, এরি মধ্যে অঞ্চলের নদীগুলো খননের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং এবং সেন্টার ফল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওলজিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস।
গত পাঁচ দশকেও সিলেটের প্রধান নদী সুরমা খনন করা হয়নি। যার ফলে তলদেশ ভরাট হয়ে শুষ্ক মৌসুমে শতাধিক স্থানে ছোট ছোট চর জাগে। যার কারণে উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ভরে যায় নদীর দুই পাড়। গত ১২ বছরে খাল উদ্ধারের নামে ৮৬৯ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। অথচ সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। তাহলে সমস্যাটা কোথায়, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। চলতি বছর সিলেট এলাকায় এটি দ্বিতীয় দফা বন্যা। প্রথম দফায় সিলেটে খুব বেশি ক্ষতি না হলেও সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে যায়। কৃষকেরা আধা পাকা ধান কাটতে বাধ্য হন। সেই ক্ষতি পুষিয়ে না উঠতেই দ্বিতীয় দফা বন্যায় বিভাগীয় শহরসহ সিলেটের ১৩টি উপজেলা, সুনামগঞ্জের ৬টি উপজেলা প্লাবিত হয়।
হাওরে অকাল বন্যায় সরকারের দায় কি তা নিরুপণ করার সময় এসেছে । এ ব্যাপারে সবারই দায়বদ্ধতা রয়েছে যার বিশ্লেষণ প্রয়োজন যেমন : মেঘালয় ও অসমে যে বৃষ্টি হয় তার একটা অংশ সংশ্লিষ্ট নদীগুলো হয়ে বাংলাদেশের হাওরেই এসে জমা হয়। অতএব এ দুর্যোগ ঠেকানো সহজ ব্যাপার নয়। এটাও তো ঠিক যে, সীমান্তের ওপারে বছরে কোন সময়ে কতটুকু বৃষ্টি হয়, তার রেকর্ড আমাদের অজানা নয়। আবার সেখানে আগামী কয়েক দিন কী পরিমাণ বৃষ্টি হতে পারে, তারও আগাম তথ্য জানাও দুই দেশের মধ্যে বন্যা বা আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় চুক্তি থাকার কারণে পাওয়া খুব একটা কঠিন বিষয় নয়। এসব তথ্য জানা থাকলে পাহাড়ি ঢল ঠেকানো না হোক, তার কারণে যাতে কম ক্ষয়ক্ষতি হয়, অন্তত সে ব্যবস্থা নেয়া যায় নিশ্চয়ই।
সময়ের আবর্তে পলি সংযোজিত হয়ে হাওড়ের জলাশয়গুলোর ভরাট হওয়ায় অল্প বর্ষায় প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি নিরসন এবং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে এই জলাধারগুলোর নাব্য বৃদ্ধি, বাঁধ নির্মাণের টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়। হাওর এলাকায় প্রাণপ্রবাহ হিসেবে চিহ্নিত নদী ও খালগুলো খনন করা দরকার। হাওরে পানির স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ করে যত্রতত্র রাস্তা ও অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় মানুষের সম্মিলিত পরামর্শে নির্ধারিত সময়ে বাঁধ নির্মাণসম্পন্ন ও প্রয়োজনমাফিক উঁচু করতে হবে।
হাওরে একমাত্র নির্ভরশীল ফসল বোরো ধান চাষের বাইরে বিকল্প কৃষিশিল্প অর্থনীতি ও নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। হাওর ও বিলসংলগ্ন এলাকায় খাসজমি বরাদ্দ বন্ধ করে সরকারিভাবে স্থানীয় জলজ উদ্ভিদ ও বৃক্ষের সমারোহে সবুজায়নের উদ্যোগ নেয়া দরকার। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের যুগে ৭টি জেলা বেষ্টিত হাওর এলাকার এক ফসলি জমিতে কেন এতদিনেও কৃষকদের যান্ত্রিকীকরণের ছোঁয়া (চাষাবাদ, মাড়াই, বাজারজাতকরণ) লাগেনি তা অনুসন্ধান করতে হবে।
বর্তমানে সারা দেশে কৃষিকাজে শ্রমিক সংকট একটি সাধারণ চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সনাতনী ধারার কৃষির জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জ তো বটেই। এ ক্ষেত্রে এলাকার সম্পদশালী অনুপস্থিত জমির মালিক, যারা জমি বর্গা দিয়ে শহরে বসবাস করছেন, তাদের সঙ্গে সেখানে মৌসুমি শ্রমিকদেরও আবাসনের থাকা খাওয়া চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকবে। কাজ শেষে ভাগের ধান ও মজুরি নিয়ে নিরাপদে যাতে বাড়ি ফিরতে পারে, সে জন্য নিরাপদ ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
[লেখক : ডিন, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা]