এস ডি সুব্রত
প্রতিবছরের মতো এবারও পালিত হচ্ছে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব। জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রাকে নিয়ে এ রথযাত্রা। উল্টো রথে মাসির বাড়ি থেকে তিন দেব-দেবী ফিরে আসবেন নিজের বাড়িতে। সনাতন ধর্মাবলম্বী তথা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম একটি বিখ্যাত ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে আয়োজিত হয় এ উৎসব। এ উৎসবের কেন্দ্রস্থল হচ্ছে ওড়িষ্যা বা ওড়শা রাজ্যের পুরিতে অবস্থিত জগন্নাথ দেবের প্রধান মন্দিরে। এ উৎসব ভারত, বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশে পালিত হয়ে আসছে।
রথযাত্রা হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের (হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের) দেবতা জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রার তিনটি সুসজ্জিত মূর্তি রথে চেপে পুরির জগন্নাথদেবের মন্দির থেকে মাসির বাড়িতে গুন্ডিচা যাত্রাকে বোঝায়। পুরীতে এই রথযাত্রা দেখতে সারা পৃথিবী থেকে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। জগন্নাথ, বললাম ও শুভদ্রার গুন্ডিচা মন্দিরে যা জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি হিসেবে খ্যাত সেখানে যাওয়াকে কেন্দ্র করে। রথযাত্রা শুরু হয়। সাত দিন মাসির বাড়ি থেকে পোঙা পিঠা খেয়ে আবার বাড়ির পথে ফিরে আসা যা উল্টো রথ নামে পরিচিত এবং এর মাধ্যমে এ উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
রথযাত্রার ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, এর শুরু সত্যযুগে। সে সময় ওড়িশার নাম ছিল মালবদেশ। মালবদেশের অবন্তী নগরে ইন্দ্রদ্ম্নু নামে সূর্যবংশীয় বিষ্ণু ভক্ত এক রাজা ছিলেন। যিনি ভগবান বিষ্ণুর এই জগন্নাথরুপী মূর্তির রথযাত্রা করার আদেশ পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে রাজা ইন্দ্রদ্ম্নু ওড়িশায় অবস্থিত পুরির এই জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ ও রথযাত্রা প্রচলন করেন। পুরির জগন্নাথদেবের রথযাত্রা প্রতিবছর আমরা দেখে থাকি। তার উদ্বোধন করেন সেখানকার রাজা। রাজত্ব না থাকলেও বংশপরম্পরায় পুরির রাজপরিবার আজও আছে। রাজপরিবারের উপাধি প্রাপ্ত রাজা উপস্থিত হয়ে জগন্নাথ, বড় ভাই বললাম, ছোট বোন শুভদ্রা দেবীর পরপর তিনটি রথের সামনে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান ও রথের সম্মুখভাগে সোনার ঝাড়– দিয়ে ঝাঁট দেয়ার পর পুরির রথের রশিতে টান পড়ে। শুরু হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা।
পুরির রথযাত্রায় তিনটি রথ সমুদ্রোপকূলবর্তী জগন্নাথ মন্দির থেকে দুই মাইল দূরে গুন্ডিচা মন্দিরে উদ্দেশে যাত্রা করে এবং সাত দিন পর উল্টো রথের মাধ্যমে ফিরে আসে। পুরির জগন্নাথদেবের রথযাত্রা অনুসরণে বাংলায় রথযাত্রার সূচনা হয়। চৈতন্য মহাপ্রভু নীলাচল থেকে এই ধারাটি বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। চৈতন্য ভক্ত বৈষ্ণবরা বাংলায় পুরির আদলে রথযাত্রার প্রচলন করেন। রথযাত্রার মাহাত্ম্য সম্পর্কে শাস্ত্রে আছে- ‘রথস্থ বামনং দৃষ্টা পূনর্জম্ন ন বিদ্যতে।’ অর্থাৎ রথের ওপর অধিষ্ঠিত বামন জগন্নাথ দেবকে দর্শন করলে তার পুনর্জম্ন হয় না।
তাই জগন্নাথ দেবের রথযাত্রায় রথের রশি টানাকে পুণ্যের কাজ হিসেবে গণ্য করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। রথ টানা শুরু হতেই আশ্চর্যভাবে অনেকটা ভারাক্রান্ত হয়ে ঘন দুঃখী মেঘ মাটির পৃথিবীতে বৃষ্টি হয়ে ঝরে। সেই বৃষ্টিতে ভিজে মাতোয়ারা হন সনাতন ভক্তরা। রথ থেকে রাস্তায় দাঁড়ানো দর্শনার্থীদের দিকে ছুড়ে দেয়া হয় কলা আর ধানের খই। ভক্তরা ভক্তি সহকারে রথরজ্জুর মাধ্যমে রথকে টেনে নিয়ে যান। রথ টানা মহাপুণ্য বলে সনাতন ধর্মে স্বীকৃত।
[ লেখক : প্রাবন্ধিক ]
এস ডি সুব্রত
শনিবার, ০২ জুলাই ২০২২
প্রতিবছরের মতো এবারও পালিত হচ্ছে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব। জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রাকে নিয়ে এ রথযাত্রা। উল্টো রথে মাসির বাড়ি থেকে তিন দেব-দেবী ফিরে আসবেন নিজের বাড়িতে। সনাতন ধর্মাবলম্বী তথা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম একটি বিখ্যাত ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে আয়োজিত হয় এ উৎসব। এ উৎসবের কেন্দ্রস্থল হচ্ছে ওড়িষ্যা বা ওড়শা রাজ্যের পুরিতে অবস্থিত জগন্নাথ দেবের প্রধান মন্দিরে। এ উৎসব ভারত, বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশে পালিত হয়ে আসছে।
রথযাত্রা হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের (হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের) দেবতা জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রার তিনটি সুসজ্জিত মূর্তি রথে চেপে পুরির জগন্নাথদেবের মন্দির থেকে মাসির বাড়িতে গুন্ডিচা যাত্রাকে বোঝায়। পুরীতে এই রথযাত্রা দেখতে সারা পৃথিবী থেকে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। জগন্নাথ, বললাম ও শুভদ্রার গুন্ডিচা মন্দিরে যা জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি হিসেবে খ্যাত সেখানে যাওয়াকে কেন্দ্র করে। রথযাত্রা শুরু হয়। সাত দিন মাসির বাড়ি থেকে পোঙা পিঠা খেয়ে আবার বাড়ির পথে ফিরে আসা যা উল্টো রথ নামে পরিচিত এবং এর মাধ্যমে এ উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
রথযাত্রার ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, এর শুরু সত্যযুগে। সে সময় ওড়িশার নাম ছিল মালবদেশ। মালবদেশের অবন্তী নগরে ইন্দ্রদ্ম্নু নামে সূর্যবংশীয় বিষ্ণু ভক্ত এক রাজা ছিলেন। যিনি ভগবান বিষ্ণুর এই জগন্নাথরুপী মূর্তির রথযাত্রা করার আদেশ পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে রাজা ইন্দ্রদ্ম্নু ওড়িশায় অবস্থিত পুরির এই জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ ও রথযাত্রা প্রচলন করেন। পুরির জগন্নাথদেবের রথযাত্রা প্রতিবছর আমরা দেখে থাকি। তার উদ্বোধন করেন সেখানকার রাজা। রাজত্ব না থাকলেও বংশপরম্পরায় পুরির রাজপরিবার আজও আছে। রাজপরিবারের উপাধি প্রাপ্ত রাজা উপস্থিত হয়ে জগন্নাথ, বড় ভাই বললাম, ছোট বোন শুভদ্রা দেবীর পরপর তিনটি রথের সামনে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান ও রথের সম্মুখভাগে সোনার ঝাড়– দিয়ে ঝাঁট দেয়ার পর পুরির রথের রশিতে টান পড়ে। শুরু হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা।
পুরির রথযাত্রায় তিনটি রথ সমুদ্রোপকূলবর্তী জগন্নাথ মন্দির থেকে দুই মাইল দূরে গুন্ডিচা মন্দিরে উদ্দেশে যাত্রা করে এবং সাত দিন পর উল্টো রথের মাধ্যমে ফিরে আসে। পুরির জগন্নাথদেবের রথযাত্রা অনুসরণে বাংলায় রথযাত্রার সূচনা হয়। চৈতন্য মহাপ্রভু নীলাচল থেকে এই ধারাটি বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। চৈতন্য ভক্ত বৈষ্ণবরা বাংলায় পুরির আদলে রথযাত্রার প্রচলন করেন। রথযাত্রার মাহাত্ম্য সম্পর্কে শাস্ত্রে আছে- ‘রথস্থ বামনং দৃষ্টা পূনর্জম্ন ন বিদ্যতে।’ অর্থাৎ রথের ওপর অধিষ্ঠিত বামন জগন্নাথ দেবকে দর্শন করলে তার পুনর্জম্ন হয় না।
তাই জগন্নাথ দেবের রথযাত্রায় রথের রশি টানাকে পুণ্যের কাজ হিসেবে গণ্য করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। রথ টানা শুরু হতেই আশ্চর্যভাবে অনেকটা ভারাক্রান্ত হয়ে ঘন দুঃখী মেঘ মাটির পৃথিবীতে বৃষ্টি হয়ে ঝরে। সেই বৃষ্টিতে ভিজে মাতোয়ারা হন সনাতন ভক্তরা। রথ থেকে রাস্তায় দাঁড়ানো দর্শনার্থীদের দিকে ছুড়ে দেয়া হয় কলা আর ধানের খই। ভক্তরা ভক্তি সহকারে রথরজ্জুর মাধ্যমে রথকে টেনে নিয়ে যান। রথ টানা মহাপুণ্য বলে সনাতন ধর্মে স্বীকৃত।
[ লেখক : প্রাবন্ধিক ]