ডোরিন চৌধুরী
বৈশ্বিক সংকটের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে ডলার মূল্যবৃদ্ধি। কয়েক মাস ধরে ডলার মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেট প্রতি ডলার ৯৪ টাকায় পৌঁছেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিতে এই রেট প্রায় ১০৪-১০৫ টাকা এবং ডলারের বাজার বা ‘ক্রেব মার্কেটে’ তা অসাদু ব্যবসায়ীদের দরুন প্রায় ১১৪-১১৫ টাকাতে বিক্রিরও খবর পাওয়া যাচ্ছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে যদি ‘উপসর্গ’ বা ‘সিম্পটম’ হিসেবে দেখা হয় তবে সমস্যা গিয়ে দাঁড়ায় ক্ষয়িষ্ণু রিজার্ভ ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি। তবে, বর্তমান ডলার সংকট এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেও শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয় বরং গোটা বিশ্বে ডলারের একটি সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেটিও একটি বড় কারণ। এই প্রসঙ্গেই আলোচনার অবতারণা, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ডলার সংকটের বর্তমান অবস্থা ও কারণগুলো কি? এবং এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায়গুলো কি হতে পারে?
বাংলাদেশের ডলার সংকট
মূলত, এশিয়ান ক্লিয়ারেন্স ইউনিয়নের (এসিইউ) আমদানি ব্যয় মেটানোর সময় বাংলাদেশের মোট রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪১ বিলিয়নে নেমে আসে। এরপর পুনরায় আমদানি ব্যয় মেটানোর পর তা ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। যদিও বিদ্যমান রিজার্ভ আগামী ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম এবং এখনো আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী যথেষ্ট, তবুও ক্ষয়িষ্ণু রিজার্ভের বিষয়টি সামনে চলেই আসে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নেয় ডলার ধরে রাখতে। আর তখন থেকেই ডলারের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
তবে এরও আগে থেকেই ধীরে ধীরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধীরে ধীরে কমছিল। মূলত, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ডলারের একটি ঘাটতি দেখা দেয়ায় এটি হচ্ছিল। মহামারীর ধাক্কা সামলে বিশ্ব বাণিজ্য স্বাভাবিক হওয়ায় সারাবিশ্বে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ আকস্মিক বৃদ্ধি পায়। ফলে, চাপ পড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা- ডলারের ওপর। ফলে, গ্রীনব্যাক বা ডলারের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছিল ক্রমশ।
এদিকে, আমদানি ব্যয়ের লাগামহীন বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্যও ডলারের সংকট তৈরি করে। আমদানি ব্যয় প্রায় ৪৬% বৃদ্ধি পেয়েছে মহামারীর পর থেকে। বর্তমানে আমদানি ব্যয় প্রায় ৭৫-৮০ বিলিয়নে পৌঁছেছে। ফলে, রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স, এবং দেশে আসা বিদেশি বিনিয়োগ সব মিলানোর পরও ডলারে একটি ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। তবে সমস্যাকে কেবল বাংলাদেশের একক হিসেবে দেখার সুযোগ নেই বরং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেই দেখতে হবে কেননা সমস্যার মূল সেখানেই গাঁথা রয়েছে।
ডলারের বৈশ্বিক সংকট
গোটা বিশ্বেই ডলারের অতিরিক্ত চাহিদার ফলে মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। খোদ দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান, ভারতসহ প্রায় সব দেশে ডলারের মূল্য অত্যধিক। পাকিস্তান এক ডলার ২৩৯ রুপিতে পৌঁছেছে, ভারতে তা পৌঁছেছে ৮০ রুপিতে, যা মহামারীর পূর্বে ৬৮-৬৯ টাকায় ছিল। তুরস্কেও লিরার মূল্যমানের রেকর্ড পতন ঘটেছে। দুবছরে একডলার তুরস্কে ৮লিরা থেকে ১৭.৯৫ লিরায় পৌঁছেছে। রেকর্ড পতনে নাম লিখিয়েছে ইউরোও যার মূল্য ২০ বছরে সর্বনিম্ন ০.৯৯ ডলারে পৌঁছে যায় জুলাই মাসে।
মূলত, মহামারী ও ইউক্রেন সংকটের ফলে ধেয়ে আসা ‘কমোডিটি শক’ এবং বিশ্ববাজারে আমদানিপণ্যের উচ্চমূল্যের ফলে মাত্রাতিরিক্ত আমদানি ব্যয় এর জন্য দায়ী। এছাড়াও প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব কিছু অভ্যন্তরীণ কারণ আছেই। সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হারবৃদ্ধি সহ বেশ কিছু পদক্ষেপও নিচ্ছে যার মধ্যে ব্যক্তি ও রাষ্ট্র পর্যায়ে অস্টারিটি- কৃচ্ছ্রসাধন বা মিতব্যয়ীর নীতিও নেয়া হচ্ছে। তবে, পুরো আলোচনায় যে বিষটি সবচেয়ে কম উঠে এসেছে তা হচ্ছে, তৃতীয়বিশ্বে লাগামহীন কনজ্যুমারিজম বা ভোগবাদ। তৃতীয় বিশ্বে সমাজে ভোগবাদের প্রসার ঘটলেও একইসঙ্গে সক্ষমতা গড়ে উঠেনি।
আশার বাণী
সংকটের ঘনঘটার মধ্যেও এক চিলতে রোদের মতো সুখবর দিয়েছে রেমিট্যান্স। জুলাই মাসে বৈধপথে প্রবাসী আয় এসেছে ২০৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা গত একবছরে সর্বোচ্চ। একই মাসে, আমদানি ঋণপত্র খোলার পরিমাণ ও কমেছে প্রায় ৩১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি নীতিমালাও ফল দেয়া শুরু করেছে। জুন ও জুলাই মাসে, মাসিক আমদানি ব্যয় ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৬ বিলিয়নে নেমে এসেছে। ফলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে।
অন্যদিকে, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি রোধে খোলাবাজারে ঝটিকা অভিযান চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে অতিরিক্ত দাম কমে আসছে। ইতোমধ্যে ডলার বাড়াতে ডলার আমানত রাখার ওপর ৪-৫% সুদ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকেও কড়াকড়ির আওতায় আনা হয়েছে। ফলে, সংকটের এই মুহূর্ত একটু স্বস্তি দেখা দিচ্ছে। তবে পথ এখনো অনেক বাকি!
উত্তরণের উপায়
পুঁজিবাজি অর্থব্যবস্থায় অর্থনৈতিক সংকট একটি চ্যালেঞ্জের মত। ১৯২৯ সালের ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’ থেকে শুরু করে ১৯৭০ এর কমোডিটি শক, ১৯৯৭ এর এশিয়ান সংকট এবং ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট বারবারই বৈশ্বিক অর্থ ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলেছে আবার মিলেছে পরিত্রাণও। পূর্বের কোন বড় সংকটই বাংলাদেশকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারেনি। একদিক দিয়ে বাংলাদেশের জন্য এটি যেমন সুখকর ঠিক তেমনি বাংলাদেশের জন্য বর্তমান সংকট এক নতুন অভিজ্ঞতাও বটে। সংকট মোকাবিলায় তাই চাই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং পরিস্থিতির গুরুত্বকে আমলে নেয়া।
এ ছাড়া, ডলারের উৎস এবং ডলার খরচের খাতগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে বৈধ পথে রেমিটেন্স আসা নিশ্চিত করতে হবে। অবৈধ লেনদেন বন্ধ করতেই হবে। এ ছাড়া রপ্তানি আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি কমানোর কোন বিকল্প নেই। সর্বোপরি, মিতব্যয়ীর অভ্যাস করতে হবে রাষ্ট্র ও ব্যক্তি পর্যায়ে। ক্রমবর্ধমান ভোগবাদকে মোকাবিলা করতে মিতব্যয়ী বেশ কার্যকর এবং যেকোন সংকটে তা ব্যক্তি ও পরিবারকে সংকট মোকাবেলায় টিকে থাকতে সাহায্য করে।
[লেখক : ডক্টরাল গবেষক, গ্রোনিয়েন বিশ্ববিদ্যালয়, নেদারল্যান্ডস]
ডোরিন চৌধুরী
শনিবার, ০৬ আগস্ট ২০২২
বৈশ্বিক সংকটের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে ডলার মূল্যবৃদ্ধি। কয়েক মাস ধরে ডলার মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেট প্রতি ডলার ৯৪ টাকায় পৌঁছেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিতে এই রেট প্রায় ১০৪-১০৫ টাকা এবং ডলারের বাজার বা ‘ক্রেব মার্কেটে’ তা অসাদু ব্যবসায়ীদের দরুন প্রায় ১১৪-১১৫ টাকাতে বিক্রিরও খবর পাওয়া যাচ্ছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে যদি ‘উপসর্গ’ বা ‘সিম্পটম’ হিসেবে দেখা হয় তবে সমস্যা গিয়ে দাঁড়ায় ক্ষয়িষ্ণু রিজার্ভ ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি। তবে, বর্তমান ডলার সংকট এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেও শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয় বরং গোটা বিশ্বে ডলারের একটি সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেটিও একটি বড় কারণ। এই প্রসঙ্গেই আলোচনার অবতারণা, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ডলার সংকটের বর্তমান অবস্থা ও কারণগুলো কি? এবং এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায়গুলো কি হতে পারে?
বাংলাদেশের ডলার সংকট
মূলত, এশিয়ান ক্লিয়ারেন্স ইউনিয়নের (এসিইউ) আমদানি ব্যয় মেটানোর সময় বাংলাদেশের মোট রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪১ বিলিয়নে নেমে আসে। এরপর পুনরায় আমদানি ব্যয় মেটানোর পর তা ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। যদিও বিদ্যমান রিজার্ভ আগামী ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম এবং এখনো আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী যথেষ্ট, তবুও ক্ষয়িষ্ণু রিজার্ভের বিষয়টি সামনে চলেই আসে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নেয় ডলার ধরে রাখতে। আর তখন থেকেই ডলারের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
তবে এরও আগে থেকেই ধীরে ধীরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধীরে ধীরে কমছিল। মূলত, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ডলারের একটি ঘাটতি দেখা দেয়ায় এটি হচ্ছিল। মহামারীর ধাক্কা সামলে বিশ্ব বাণিজ্য স্বাভাবিক হওয়ায় সারাবিশ্বে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ আকস্মিক বৃদ্ধি পায়। ফলে, চাপ পড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা- ডলারের ওপর। ফলে, গ্রীনব্যাক বা ডলারের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছিল ক্রমশ।
এদিকে, আমদানি ব্যয়ের লাগামহীন বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্যও ডলারের সংকট তৈরি করে। আমদানি ব্যয় প্রায় ৪৬% বৃদ্ধি পেয়েছে মহামারীর পর থেকে। বর্তমানে আমদানি ব্যয় প্রায় ৭৫-৮০ বিলিয়নে পৌঁছেছে। ফলে, রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স, এবং দেশে আসা বিদেশি বিনিয়োগ সব মিলানোর পরও ডলারে একটি ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। তবে সমস্যাকে কেবল বাংলাদেশের একক হিসেবে দেখার সুযোগ নেই বরং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেই দেখতে হবে কেননা সমস্যার মূল সেখানেই গাঁথা রয়েছে।
ডলারের বৈশ্বিক সংকট
গোটা বিশ্বেই ডলারের অতিরিক্ত চাহিদার ফলে মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। খোদ দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান, ভারতসহ প্রায় সব দেশে ডলারের মূল্য অত্যধিক। পাকিস্তান এক ডলার ২৩৯ রুপিতে পৌঁছেছে, ভারতে তা পৌঁছেছে ৮০ রুপিতে, যা মহামারীর পূর্বে ৬৮-৬৯ টাকায় ছিল। তুরস্কেও লিরার মূল্যমানের রেকর্ড পতন ঘটেছে। দুবছরে একডলার তুরস্কে ৮লিরা থেকে ১৭.৯৫ লিরায় পৌঁছেছে। রেকর্ড পতনে নাম লিখিয়েছে ইউরোও যার মূল্য ২০ বছরে সর্বনিম্ন ০.৯৯ ডলারে পৌঁছে যায় জুলাই মাসে।
মূলত, মহামারী ও ইউক্রেন সংকটের ফলে ধেয়ে আসা ‘কমোডিটি শক’ এবং বিশ্ববাজারে আমদানিপণ্যের উচ্চমূল্যের ফলে মাত্রাতিরিক্ত আমদানি ব্যয় এর জন্য দায়ী। এছাড়াও প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব কিছু অভ্যন্তরীণ কারণ আছেই। সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হারবৃদ্ধি সহ বেশ কিছু পদক্ষেপও নিচ্ছে যার মধ্যে ব্যক্তি ও রাষ্ট্র পর্যায়ে অস্টারিটি- কৃচ্ছ্রসাধন বা মিতব্যয়ীর নীতিও নেয়া হচ্ছে। তবে, পুরো আলোচনায় যে বিষটি সবচেয়ে কম উঠে এসেছে তা হচ্ছে, তৃতীয়বিশ্বে লাগামহীন কনজ্যুমারিজম বা ভোগবাদ। তৃতীয় বিশ্বে সমাজে ভোগবাদের প্রসার ঘটলেও একইসঙ্গে সক্ষমতা গড়ে উঠেনি।
আশার বাণী
সংকটের ঘনঘটার মধ্যেও এক চিলতে রোদের মতো সুখবর দিয়েছে রেমিট্যান্স। জুলাই মাসে বৈধপথে প্রবাসী আয় এসেছে ২০৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা গত একবছরে সর্বোচ্চ। একই মাসে, আমদানি ঋণপত্র খোলার পরিমাণ ও কমেছে প্রায় ৩১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি নীতিমালাও ফল দেয়া শুরু করেছে। জুন ও জুলাই মাসে, মাসিক আমদানি ব্যয় ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৬ বিলিয়নে নেমে এসেছে। ফলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে।
অন্যদিকে, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি রোধে খোলাবাজারে ঝটিকা অভিযান চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে অতিরিক্ত দাম কমে আসছে। ইতোমধ্যে ডলার বাড়াতে ডলার আমানত রাখার ওপর ৪-৫% সুদ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকেও কড়াকড়ির আওতায় আনা হয়েছে। ফলে, সংকটের এই মুহূর্ত একটু স্বস্তি দেখা দিচ্ছে। তবে পথ এখনো অনেক বাকি!
উত্তরণের উপায়
পুঁজিবাজি অর্থব্যবস্থায় অর্থনৈতিক সংকট একটি চ্যালেঞ্জের মত। ১৯২৯ সালের ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’ থেকে শুরু করে ১৯৭০ এর কমোডিটি শক, ১৯৯৭ এর এশিয়ান সংকট এবং ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট বারবারই বৈশ্বিক অর্থ ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলেছে আবার মিলেছে পরিত্রাণও। পূর্বের কোন বড় সংকটই বাংলাদেশকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারেনি। একদিক দিয়ে বাংলাদেশের জন্য এটি যেমন সুখকর ঠিক তেমনি বাংলাদেশের জন্য বর্তমান সংকট এক নতুন অভিজ্ঞতাও বটে। সংকট মোকাবিলায় তাই চাই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং পরিস্থিতির গুরুত্বকে আমলে নেয়া।
এ ছাড়া, ডলারের উৎস এবং ডলার খরচের খাতগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে বৈধ পথে রেমিটেন্স আসা নিশ্চিত করতে হবে। অবৈধ লেনদেন বন্ধ করতেই হবে। এ ছাড়া রপ্তানি আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি কমানোর কোন বিকল্প নেই। সর্বোপরি, মিতব্যয়ীর অভ্যাস করতে হবে রাষ্ট্র ও ব্যক্তি পর্যায়ে। ক্রমবর্ধমান ভোগবাদকে মোকাবিলা করতে মিতব্যয়ী বেশ কার্যকর এবং যেকোন সংকটে তা ব্যক্তি ও পরিবারকে সংকট মোকাবেলায় টিকে থাকতে সাহায্য করে।
[লেখক : ডক্টরাল গবেষক, গ্রোনিয়েন বিশ্ববিদ্যালয়, নেদারল্যান্ডস]