alt

উপ-সম্পাদকীয়

অনগ্রসর আদিবাসী জাতি

বাবুল রবি দাস

: রোববার, ০৭ আগস্ট ২০২২

সমাজ-বিজ্ঞান ও নৃ-তত্ত্বের ইতিহাস প্রায় একশ থেকে একশত পঞ্চাশ বছরের হবে। নৃ-বিজ্ঞানীদের মতে, মানবসমাজ কতগুলো পরিবর্তনের স্তর বা ধাপের মধ্য দিয়ে বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। পরিবর্তনের প্রত্যেকটি ধাপ; বলাবাহুল্য, বহু হাজার বছর স্থায়ী হয়েছে। নৃ-বিজ্ঞানীরা বিশেষ করে মর্গান দীর্ঘদিনের গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে দেখালেন যে, মানুষের বিভিন্ন স্তরের অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে তাদের সামাজিক রীতিনীতি, আচারবিধি এবং চিন্তাধারাও বিভিন্ন প্রকার ছিল এবং অধিকন্তু মানুষ যখন এক প্রকার অর্থনৈতিক জীবনধারণ থেকে পরবর্তী অর্থনৈতিক জীবনধারণের স্তরে এসেছে, তখন তার সামাজিক আচারবিধি, রীতিনীতি, চিন্তাধারাও পরিবর্তন হয়েছে।

পৃথিবীর অধিকাংশ আদিম অধিবাসী নানা পরিবর্তনের স্তরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে বর্তমান সভ্য অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। কিন্তু কিছু সংখ্যক অধিবাসী পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের আদিম অবস্থায় রয়ে গেল, বা তাদের খুব সামান্যই পরিবর্তন হলো। এসব আদিম মানুষের অস্তিত্বের খবর যখন সভ্য মানুষ পেল, তখন নৃ-বিজ্ঞানীরা তাদের দেশে গিয়ে তাদের মতোই বাস করে আদিম মানুষের সমাজব্যবস্থা ও রীতিনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হলেন। এসব আদিম মানুষের জীবনধারণ, সমাজব্যবস্থা, ধর্মীয় বিশ্বাস ইত্যাদি সম্পর্কে যথার্থ খবর সংগ্রহ করা সহজ ছিল না। প্রধান অন্তরায় ছিল যাতায়াতের অসুবিধে, আদিম মানুষের দুর্বোধ্য ভাষা ও সভ্য মানুষের প্রতি তাদের ভয়। দুর্গম ও নিবিড় অরণ্যে অথবা ভয়সঙ্কুল মহাসাগরের বুকে ছোট দ্বীপে আদিম মানুষ নৃ-বিজ্ঞানীকে সাদরে গ্রহণ করেনি-আদিম মানুষের সমাজ ব্যবস্থা জানতে গিয়ে অনেকে জীবন পর্যন্ত হারিয়েছেন; তবু মানুষ জ্ঞানের সাধনায় নিরস্ত হয়নি। বহু নৃ-বিজ্ঞানীর অমানুষিক কষ্ট স্বীকার, অপূর্ব ত্যাগ এবং এমনকি কারও কারও জীবনদানের ফলে আজ আমরা আমাদের পূর্বপুরুষ আদিম মানুষের কথা জানতে পেরেছি।

পৃথিবীর আদিম অধিবাসীদের জীবনযাত্রা, সমাজব্যবস্থা ও চিন্তাধারাকে নীচ বা খাটো করে দেখা অত্যন্ত অন্যায় হবে। আদিম মানুষের সামাজিক রীতিনীতি, আচারবিধি ও চিন্তাধারা সভ্য মানুষের মতো নয়, তার জন্য সময়ের ব্যবধান ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ইত্যাদি নানা কারণ দায়ী; অধিকন্তু এই বিভিন্নতা মানবজাতির ইতিহাসে এক এক স্তরের এক একটা অবস্থা মাত্র-তার সঙ্গে ভালো বা মন্দের কোন সমন্ধ নেই। এ সত্যটি বর্তমান সমাজবিজ্ঞানী ও নৃ-বিজ্ঞানীদের মধ্যে স্বীকৃত। মানুষের ইতিহাসের বিভিন্ন সময় মানুষের প্রয়োজন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্ব স্পষ্ট করে বলতে হলে কয়েকটি উদাহরণ দিতে হয়। শীতের দেশের মানুষ গরম কাপড় পরিধান করে, গরম দেশের মানুষ পাতলা সুতির কাপড় গায়ে দেয়, আবার যেসব সুতার বা কাপড়ের আবিষ্কার হয়নি তখন মানুষ উলঙ্গ থাকত। এই উলঙ্গ থাকা অবস্থাটি মানুষের দোষ নয়, মানব জাতির পরিবর্তনের ইতিহাসের সভ্যতার বিভিন্ন স্তরের একটি স্তর বা অবস্থা মাত্র।

তেমনি খাদ্য বা সামাজিক আচারবিধির ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য। শীতের দেশের এস্কিমোরা কাঁচা মাংস খায়, আমরা সেদ্ধ মাংস খাই; সাপ, ব্যাঙ, ফড়িং সব কিছুই এক অঞ্চলের মানুষের খাদ্য, অন্য অঞ্চলের বা অন্য সমাজের মানুষের অখাদ্য। এ ধরনের বহুবিধ উদাহরণ রয়েছে।

মানুষের সমাজে পরিবর্তন এসেছে ঠিকই, তবে আদিম মানুষের ছিটেফোঁটা আচার বিধি ও রীতিনীতির কোথাও একটু বা পরিবর্তিত হয়ে, কোথাও বা পূর্বে অবস্থাই এখনো সভ্য মানুষের মধ্যে দেখা যায়। আমাদের আজকের সমাজেও তা রয়েছে। পৃথিবী পরিবর্তনশীল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা উপজাতি বা আদিবাসী যে নামেই তাদের ডাকিনা কেন? সুযোগ সুবিধা বা শিক্ষা-দিক্ষার অনগ্রসর বলেই তাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আদিম মানুষ বলা হয়। তাদের প্রতি সব প্রকার সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে জ্ঞান বিজ্ঞানে অগ্রগামী করা হোক। বর্তমান সরকার নীতি হচ্ছে কাউকে পেছনে রেখে উন্নয়ন নয়। সব আদিবাসী বা দলিত বঞ্চিত, ব্রাত্যজন বা অন্ত্যজনগোষ্ঠী দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাক ও শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান গড়িমায় এগিয়ে আসুক এই প্রত্যাশা কামনা করি।

[লেখক : আইনজীবী]

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

tab

উপ-সম্পাদকীয়

অনগ্রসর আদিবাসী জাতি

বাবুল রবি দাস

রোববার, ০৭ আগস্ট ২০২২

সমাজ-বিজ্ঞান ও নৃ-তত্ত্বের ইতিহাস প্রায় একশ থেকে একশত পঞ্চাশ বছরের হবে। নৃ-বিজ্ঞানীদের মতে, মানবসমাজ কতগুলো পরিবর্তনের স্তর বা ধাপের মধ্য দিয়ে বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। পরিবর্তনের প্রত্যেকটি ধাপ; বলাবাহুল্য, বহু হাজার বছর স্থায়ী হয়েছে। নৃ-বিজ্ঞানীরা বিশেষ করে মর্গান দীর্ঘদিনের গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে দেখালেন যে, মানুষের বিভিন্ন স্তরের অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে তাদের সামাজিক রীতিনীতি, আচারবিধি এবং চিন্তাধারাও বিভিন্ন প্রকার ছিল এবং অধিকন্তু মানুষ যখন এক প্রকার অর্থনৈতিক জীবনধারণ থেকে পরবর্তী অর্থনৈতিক জীবনধারণের স্তরে এসেছে, তখন তার সামাজিক আচারবিধি, রীতিনীতি, চিন্তাধারাও পরিবর্তন হয়েছে।

পৃথিবীর অধিকাংশ আদিম অধিবাসী নানা পরিবর্তনের স্তরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে বর্তমান সভ্য অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। কিন্তু কিছু সংখ্যক অধিবাসী পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের আদিম অবস্থায় রয়ে গেল, বা তাদের খুব সামান্যই পরিবর্তন হলো। এসব আদিম মানুষের অস্তিত্বের খবর যখন সভ্য মানুষ পেল, তখন নৃ-বিজ্ঞানীরা তাদের দেশে গিয়ে তাদের মতোই বাস করে আদিম মানুষের সমাজব্যবস্থা ও রীতিনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হলেন। এসব আদিম মানুষের জীবনধারণ, সমাজব্যবস্থা, ধর্মীয় বিশ্বাস ইত্যাদি সম্পর্কে যথার্থ খবর সংগ্রহ করা সহজ ছিল না। প্রধান অন্তরায় ছিল যাতায়াতের অসুবিধে, আদিম মানুষের দুর্বোধ্য ভাষা ও সভ্য মানুষের প্রতি তাদের ভয়। দুর্গম ও নিবিড় অরণ্যে অথবা ভয়সঙ্কুল মহাসাগরের বুকে ছোট দ্বীপে আদিম মানুষ নৃ-বিজ্ঞানীকে সাদরে গ্রহণ করেনি-আদিম মানুষের সমাজ ব্যবস্থা জানতে গিয়ে অনেকে জীবন পর্যন্ত হারিয়েছেন; তবু মানুষ জ্ঞানের সাধনায় নিরস্ত হয়নি। বহু নৃ-বিজ্ঞানীর অমানুষিক কষ্ট স্বীকার, অপূর্ব ত্যাগ এবং এমনকি কারও কারও জীবনদানের ফলে আজ আমরা আমাদের পূর্বপুরুষ আদিম মানুষের কথা জানতে পেরেছি।

পৃথিবীর আদিম অধিবাসীদের জীবনযাত্রা, সমাজব্যবস্থা ও চিন্তাধারাকে নীচ বা খাটো করে দেখা অত্যন্ত অন্যায় হবে। আদিম মানুষের সামাজিক রীতিনীতি, আচারবিধি ও চিন্তাধারা সভ্য মানুষের মতো নয়, তার জন্য সময়ের ব্যবধান ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ইত্যাদি নানা কারণ দায়ী; অধিকন্তু এই বিভিন্নতা মানবজাতির ইতিহাসে এক এক স্তরের এক একটা অবস্থা মাত্র-তার সঙ্গে ভালো বা মন্দের কোন সমন্ধ নেই। এ সত্যটি বর্তমান সমাজবিজ্ঞানী ও নৃ-বিজ্ঞানীদের মধ্যে স্বীকৃত। মানুষের ইতিহাসের বিভিন্ন সময় মানুষের প্রয়োজন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্ব স্পষ্ট করে বলতে হলে কয়েকটি উদাহরণ দিতে হয়। শীতের দেশের মানুষ গরম কাপড় পরিধান করে, গরম দেশের মানুষ পাতলা সুতির কাপড় গায়ে দেয়, আবার যেসব সুতার বা কাপড়ের আবিষ্কার হয়নি তখন মানুষ উলঙ্গ থাকত। এই উলঙ্গ থাকা অবস্থাটি মানুষের দোষ নয়, মানব জাতির পরিবর্তনের ইতিহাসের সভ্যতার বিভিন্ন স্তরের একটি স্তর বা অবস্থা মাত্র।

তেমনি খাদ্য বা সামাজিক আচারবিধির ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য। শীতের দেশের এস্কিমোরা কাঁচা মাংস খায়, আমরা সেদ্ধ মাংস খাই; সাপ, ব্যাঙ, ফড়িং সব কিছুই এক অঞ্চলের মানুষের খাদ্য, অন্য অঞ্চলের বা অন্য সমাজের মানুষের অখাদ্য। এ ধরনের বহুবিধ উদাহরণ রয়েছে।

মানুষের সমাজে পরিবর্তন এসেছে ঠিকই, তবে আদিম মানুষের ছিটেফোঁটা আচার বিধি ও রীতিনীতির কোথাও একটু বা পরিবর্তিত হয়ে, কোথাও বা পূর্বে অবস্থাই এখনো সভ্য মানুষের মধ্যে দেখা যায়। আমাদের আজকের সমাজেও তা রয়েছে। পৃথিবী পরিবর্তনশীল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা উপজাতি বা আদিবাসী যে নামেই তাদের ডাকিনা কেন? সুযোগ সুবিধা বা শিক্ষা-দিক্ষার অনগ্রসর বলেই তাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আদিম মানুষ বলা হয়। তাদের প্রতি সব প্রকার সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে জ্ঞান বিজ্ঞানে অগ্রগামী করা হোক। বর্তমান সরকার নীতি হচ্ছে কাউকে পেছনে রেখে উন্নয়ন নয়। সব আদিবাসী বা দলিত বঞ্চিত, ব্রাত্যজন বা অন্ত্যজনগোষ্ঠী দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাক ও শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান গড়িমায় এগিয়ে আসুক এই প্রত্যাশা কামনা করি।

[লেখক : আইনজীবী]

back to top