মতিউর রহমান
মানুষ সামাজিক জীব। জীবনে উন্নতির জন্য আমাদের অন্যদের সাহচর্যের প্রয়োজন এবং পারস্পরিক সংযোগ ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুখের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে। অন্যদের সঙ্গে সামাজিকভাবে সংযুক্ত হওয়া আমাদের স্ট্রেস, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা কমাতে পারে, স্ব-মূল্যকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, আরাম এবং আনন্দ দিতে পারে, একাকিত্ব প্রতিরোধ করতে পারে এবং এমনকি আমাদের আয়ু বাড়িয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে, শক্তিশালী সামাজিক সংযোগের অভাব আমাদের মন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
আধুনিক যুগে, আমাদের মধ্যে অনেকেই একে অপরকে খুঁজে পেতে এবং সংযোগ করতে ফেসবুক, টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট, ইউটিউব, টিকটকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভর করি।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, যদিও এর প্রতিটিরই সুবিধা রয়েছে, তবে মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে সামাজিক যোগযোগমাধ্যম কখনই বাস্তবে মানুষের একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রতিস্থাপন হতে পারে না।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বাস্তবের ব্যক্তিগত বা সামাজিক যোগাযোগ ব্যক্তির মানসিক চাপ কমাতে, সুখ অনুভূতি উদ্দীপ্ত করতে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে এবং আরও ইতিবাচক বোধ তৈরি করতে যেভাবে সহায়তা করে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন বা যোগাযোগ তেমনটি করতে পারে না। উপরন্থ এটি মানুষের মধ্যে একাকিত্ব ও অহংবোধ বাড়িয়ে দেয়।
প্রযুক্তির এই উৎকৃষ্টতার যুগে মানুষকে কাছাকাছি আনার জন্য এমন কিছু অ্যাপসের ডিজাইন করা হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (সোশ্যাল মিডিয়া) হিসেবে চিহ্নিত। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সারা বিশ্বের ব্যাপক এক জনগোষ্ঠী বিভিন্নভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে
ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে।
সমাজ মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের মধ্যে একাকিত্ব এবং বিচ্ছিন্নতাবোধ তৈরি করছে, যা তাদের মধ্যে উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে বাড়িয়ে তুলছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে অত্যাধিক সময় ব্যয় করার কারণে মানুষের মধ্যে দুঃখ, অসন্তোষ, হতাশা বা একাকিত্বের অনুভূতি তীব্র হচ্ছে যা ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করছে।
গবেষকরা বলছেন, যেহেতু এটি একটি অপেক্ষাকৃত নতুন প্রযুক্তি, তাই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি, ভালো বা খারাপ সম্পর্কিত গবেষণা খুব কমই হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে যেসব গবেষণা হয়েছে সেসবে উল্লেখ করা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ব্যক্তি জীবনে বিষণ্নতা, উদ্বেগ, একাকিত্ব, আত্মক্ষতি এবং এমনকি আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার চিন্তা এমন কিছুর মধ্যে একটি শক্তিশালী যোগসূত্র পাওয়া গেছে।
গবেষকরা আরও বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে বিশেষ করে ফেসবুকে ব্যক্তি বা দল তাদের জীবনের চলমান ঘটনা বিশেষ করে কোন বিশেষ ইভেন্ট বা ঘটনা পোস্ট করেন- স্বাভাবিকভাবেই সে বা তারা সে সম্পর্কে তার বা তাদের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে কোন মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশা করেন।
এ ক্ষেত্রে যেসব প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়, তা ইতিবাচক বা নেতিবাচক হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নেতিবাচক বা বিপরীত প্রতিক্রিয়া ব্যক্তির মধ্যে অসহায়ত্ববোধ বা অনিরাপত্তাবোধ তৈরি করতে পারে। একইভাবে, এটি অন্যদের মধ্যে হিংসা, ঈর্ষা এবং অসন্তুষ্টির অনুভূতিগুলোকে বাড়িয়ে দেয়।
সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন বৈষম্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থায় সোশ্যাল মিডিয়া ধনী-দারিদ্র্যের মধ্যে বিভক্তি বাড়িয়ে দিয়ে ব্যক্তির মানসিক অবস্থার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। সোশ্যাল মিডিয়াকে কেন্দ্র করে সমাজের এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে অহমিকাবোধ তৈরি হচ্ছে। আমিই সেরা, আমিই উত্তম এমন মনোভাব সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন। সমাজে যারা ধনবান সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের জীবনযাত্রার ধরন যেমন বিদেশ ভ্রমণ, ভালো খাবার, ভালো বাড়ি, দামি গাড়ি, সন্তানদের ভালো স্কুলে পড়ালেখা, অবসর বা বিনোদন যাপনের আড়ম্বরপূর্ণতা, ইত্যাদির প্রদর্শনী সমাজে যারা পিছিয়ে রয়েছে তাদের মানসিক অবস্থার ওপর প্রভাব ফেলছে। তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশাবোধ তৈরি করছে।
তবে এসবের প্রেক্ষিতে কেউ যদি সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার কমিয়ে দেয় তাহলে তার মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ও কাজ করে। যারা ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মতো সাইটগুলো ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে এই অনুভূতি কাজ করে যে, সে হয়ত কিছু জিনিস মিস করছে-এমন ধারণা তার আত্মসম্মানকে প্রভাবিত করতে পারে, উদ্বেগ বাড়িয়ে দিতে পারে এবং আরও বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
গবেষণা বলছে ঋঙগঙ কোনো ব্যক্তিকে প্রতি কয়েক মিনিট অন্তর তার ফোন তুলতে বাধ্য করতে পারে, আপডেটের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া চেক করতে, অথবা ফোনের প্রতিটি মেসেজ বা বিফ টোনের প্রতি প্রতি সাড়া দিতে বাধ্য করতে পারে। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ার আপডেট চেক করতে গাড়ি চালানোর সময় ঝুঁকি নেয়া এবং রাত জেগে সোশ্যাল মিডিয়া ইন্টার-অ্যাকশনকে অগ্রাধিকার দিতে পারে।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ফেসবুক, স্ন্যাপচ্যাট এবং ইনস্টাগ্রামের বেশি ব্যবহার একাকিত্বের অনুভূতি হ্রাস করার পরিবর্তে বৃদ্ধি করে। তারা এও বলছে, ব্যক্তিগত সম্পর্কের তুলনায় সোশ্যাল মিডিয়া মিথস্ক্রিয়াকে ব্যক্তি যত বেশি অগ্রাধিকার দিবে, তত বেশি সে বা তারা উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার মতো মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০ শতাংশ কিশোর-কিশোরী সোশ্যাল মিডিয়ায় উৎপীড়িত হওয়ার অভিযোগ করে এবং অন্যান্য অনেক ব্যবহারকারী আপত্তিকর মন্তব্যের শিকার হয়। ফেসবুক ও টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো ক্ষতিকারক গুজব, মিথ্যা এবং অপব্যবহার ছড়ানোর জন্য হটস্পট হতে পারে, যা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক দাগ ফেলে দিতে পারে।
গবেষণা আরও বলছে, অন্তহীন সেলফি এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যক্তির সমস্ত অন্তর্নিহিত চিন্তাভাবনা শেয়ার করা একটি অস্বাস্থ্যকর আত্মকেন্দ্রিকতা তৈরি করতে পারে এবং তাকে বাস্তব জীবনের সংযোগ থেকে দূরে রাখতে পারে। সে পুরোপুরি সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার দ্বারা চালিত হতে পারে এবং তার অহংবোধ বাড়িয়ে দিতে পারে।
আমাদের দেশে এ সংক্রান্ত গবেষণা এখনো অপ্রতুল। সুতরাং সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে আরও গবেষণা পরিচালনা করবেন বলে আশা করা যায়।
[লেখক : গবেষক ও উন্নয়নকর্মী]
মতিউর রহমান
সোমবার, ০৮ আগস্ট ২০২২
মানুষ সামাজিক জীব। জীবনে উন্নতির জন্য আমাদের অন্যদের সাহচর্যের প্রয়োজন এবং পারস্পরিক সংযোগ ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুখের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে। অন্যদের সঙ্গে সামাজিকভাবে সংযুক্ত হওয়া আমাদের স্ট্রেস, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা কমাতে পারে, স্ব-মূল্যকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, আরাম এবং আনন্দ দিতে পারে, একাকিত্ব প্রতিরোধ করতে পারে এবং এমনকি আমাদের আয়ু বাড়িয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে, শক্তিশালী সামাজিক সংযোগের অভাব আমাদের মন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
আধুনিক যুগে, আমাদের মধ্যে অনেকেই একে অপরকে খুঁজে পেতে এবং সংযোগ করতে ফেসবুক, টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট, ইউটিউব, টিকটকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভর করি।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, যদিও এর প্রতিটিরই সুবিধা রয়েছে, তবে মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে সামাজিক যোগযোগমাধ্যম কখনই বাস্তবে মানুষের একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রতিস্থাপন হতে পারে না।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বাস্তবের ব্যক্তিগত বা সামাজিক যোগাযোগ ব্যক্তির মানসিক চাপ কমাতে, সুখ অনুভূতি উদ্দীপ্ত করতে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে এবং আরও ইতিবাচক বোধ তৈরি করতে যেভাবে সহায়তা করে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন বা যোগাযোগ তেমনটি করতে পারে না। উপরন্থ এটি মানুষের মধ্যে একাকিত্ব ও অহংবোধ বাড়িয়ে দেয়।
প্রযুক্তির এই উৎকৃষ্টতার যুগে মানুষকে কাছাকাছি আনার জন্য এমন কিছু অ্যাপসের ডিজাইন করা হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (সোশ্যাল মিডিয়া) হিসেবে চিহ্নিত। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সারা বিশ্বের ব্যাপক এক জনগোষ্ঠী বিভিন্নভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে
ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে।
সমাজ মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের মধ্যে একাকিত্ব এবং বিচ্ছিন্নতাবোধ তৈরি করছে, যা তাদের মধ্যে উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে বাড়িয়ে তুলছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে অত্যাধিক সময় ব্যয় করার কারণে মানুষের মধ্যে দুঃখ, অসন্তোষ, হতাশা বা একাকিত্বের অনুভূতি তীব্র হচ্ছে যা ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করছে।
গবেষকরা বলছেন, যেহেতু এটি একটি অপেক্ষাকৃত নতুন প্রযুক্তি, তাই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি, ভালো বা খারাপ সম্পর্কিত গবেষণা খুব কমই হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে যেসব গবেষণা হয়েছে সেসবে উল্লেখ করা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ব্যক্তি জীবনে বিষণ্নতা, উদ্বেগ, একাকিত্ব, আত্মক্ষতি এবং এমনকি আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার চিন্তা এমন কিছুর মধ্যে একটি শক্তিশালী যোগসূত্র পাওয়া গেছে।
গবেষকরা আরও বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে বিশেষ করে ফেসবুকে ব্যক্তি বা দল তাদের জীবনের চলমান ঘটনা বিশেষ করে কোন বিশেষ ইভেন্ট বা ঘটনা পোস্ট করেন- স্বাভাবিকভাবেই সে বা তারা সে সম্পর্কে তার বা তাদের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে কোন মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশা করেন।
এ ক্ষেত্রে যেসব প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়, তা ইতিবাচক বা নেতিবাচক হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নেতিবাচক বা বিপরীত প্রতিক্রিয়া ব্যক্তির মধ্যে অসহায়ত্ববোধ বা অনিরাপত্তাবোধ তৈরি করতে পারে। একইভাবে, এটি অন্যদের মধ্যে হিংসা, ঈর্ষা এবং অসন্তুষ্টির অনুভূতিগুলোকে বাড়িয়ে দেয়।
সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন বৈষম্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থায় সোশ্যাল মিডিয়া ধনী-দারিদ্র্যের মধ্যে বিভক্তি বাড়িয়ে দিয়ে ব্যক্তির মানসিক অবস্থার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। সোশ্যাল মিডিয়াকে কেন্দ্র করে সমাজের এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে অহমিকাবোধ তৈরি হচ্ছে। আমিই সেরা, আমিই উত্তম এমন মনোভাব সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন। সমাজে যারা ধনবান সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের জীবনযাত্রার ধরন যেমন বিদেশ ভ্রমণ, ভালো খাবার, ভালো বাড়ি, দামি গাড়ি, সন্তানদের ভালো স্কুলে পড়ালেখা, অবসর বা বিনোদন যাপনের আড়ম্বরপূর্ণতা, ইত্যাদির প্রদর্শনী সমাজে যারা পিছিয়ে রয়েছে তাদের মানসিক অবস্থার ওপর প্রভাব ফেলছে। তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশাবোধ তৈরি করছে।
তবে এসবের প্রেক্ষিতে কেউ যদি সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার কমিয়ে দেয় তাহলে তার মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ও কাজ করে। যারা ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মতো সাইটগুলো ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে এই অনুভূতি কাজ করে যে, সে হয়ত কিছু জিনিস মিস করছে-এমন ধারণা তার আত্মসম্মানকে প্রভাবিত করতে পারে, উদ্বেগ বাড়িয়ে দিতে পারে এবং আরও বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
গবেষণা বলছে ঋঙগঙ কোনো ব্যক্তিকে প্রতি কয়েক মিনিট অন্তর তার ফোন তুলতে বাধ্য করতে পারে, আপডেটের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া চেক করতে, অথবা ফোনের প্রতিটি মেসেজ বা বিফ টোনের প্রতি প্রতি সাড়া দিতে বাধ্য করতে পারে। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ার আপডেট চেক করতে গাড়ি চালানোর সময় ঝুঁকি নেয়া এবং রাত জেগে সোশ্যাল মিডিয়া ইন্টার-অ্যাকশনকে অগ্রাধিকার দিতে পারে।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ফেসবুক, স্ন্যাপচ্যাট এবং ইনস্টাগ্রামের বেশি ব্যবহার একাকিত্বের অনুভূতি হ্রাস করার পরিবর্তে বৃদ্ধি করে। তারা এও বলছে, ব্যক্তিগত সম্পর্কের তুলনায় সোশ্যাল মিডিয়া মিথস্ক্রিয়াকে ব্যক্তি যত বেশি অগ্রাধিকার দিবে, তত বেশি সে বা তারা উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার মতো মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০ শতাংশ কিশোর-কিশোরী সোশ্যাল মিডিয়ায় উৎপীড়িত হওয়ার অভিযোগ করে এবং অন্যান্য অনেক ব্যবহারকারী আপত্তিকর মন্তব্যের শিকার হয়। ফেসবুক ও টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো ক্ষতিকারক গুজব, মিথ্যা এবং অপব্যবহার ছড়ানোর জন্য হটস্পট হতে পারে, যা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক দাগ ফেলে দিতে পারে।
গবেষণা আরও বলছে, অন্তহীন সেলফি এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যক্তির সমস্ত অন্তর্নিহিত চিন্তাভাবনা শেয়ার করা একটি অস্বাস্থ্যকর আত্মকেন্দ্রিকতা তৈরি করতে পারে এবং তাকে বাস্তব জীবনের সংযোগ থেকে দূরে রাখতে পারে। সে পুরোপুরি সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার দ্বারা চালিত হতে পারে এবং তার অহংবোধ বাড়িয়ে দিতে পারে।
আমাদের দেশে এ সংক্রান্ত গবেষণা এখনো অপ্রতুল। সুতরাং সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে আরও গবেষণা পরিচালনা করবেন বলে আশা করা যায়।
[লেখক : গবেষক ও উন্নয়নকর্মী]