শাহ মো. জিয়াউদ্দিন
হঠাৎ বজ্রপাতের মতোই গত ৬ আগস্ট মধ্য রাতে বেড়ে গেল পেট্রোপণ্যের মূল্য। এই দাম বাড়ার বিষয়টি শুধু পেট্রোপণ্যের ওপর সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর প্রভাব হবে বহুমুখী। তা ছাড়া সরকার ঘোষণা দিয়ে সারের দাম বাড়িয়েছে প্রতি কেজি ১৬ টাকা থেকে ২২ টাকায়। সারের দাম বাড়ার শতকরা হার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশে এ ধরনের দাম বাড়ার ঘটনা বিরল। দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে দেখানো হয় ইউক্রেন যুদ্ধকে অজুহাত। সব পণ্য ও সেবার দাম বাড়ানোর জন্য ইউক্রেন যুদ্ধটি মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এটা ঠিক যে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে পড়বে। তাই বলে দেশের সাধারণ মানুষের ঘাড়ে সবকিছু চাপিয়ে দিয়ে সরকারি ব্যয় মেটাতে হবে, এটাও ঠিক নয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৫২ বছর। ৫২ বছরের বাংলাদেশ কতটা অর্থনৈতিক সম্পদ মজুত করতে পেরেছে? তা এখন দেখার বিষয়। নাকি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কোষাগার শূন্য হয়ে আছে। এক সময় কেন্দ্রীয় কোষাগারে টাকা ছিল, তা ছিল ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পর, কারণ সেই সময় দেশ ছিল যুদ্ধবিধস্ত, বর্তমানে তা নেই তারপরও কেন সরকারি মজুত দিয়ে সংকটকাল পার হওয়া যাবে না। কারণ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট একটি আপদকাল। এই আপদকাল স্থায়ী হয় না। প্রশ্নটা হচ্ছে স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও এসে কেন বাংলাদেশ আপদকালীন সময় মোকাবিলা করার মতো নিজস্ব সামর্থ তৈরি করতে পরিনি কেন? এটা সাধারণ মানুষের প্রশ্ন। শাসনযন্ত্রের স্টিয়ারিংটা যাদের হাতে, তাদের উচিত এর উত্তর দেয়া।
ইউক্রেন যুদ্ধের আগে করোনা মহামারীতেও দেখা গেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্যে প্রচারিত হয়েছে, রিজার্ভের পরিমাণ এত বিলিয়ন ছাড়িয়েছে, স্মরণাতীত কালের রিজার্ভ এখন দেশে। প্রশ্ন হচ্ছে এই রিজার্ভ গেল কোথায়? করোনা মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও প্রান্তিক কৃষকরা। বড় মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা পেয়েছেন করোনার প্রণোদনা। সরকারের প্রণোদনা পাওয়ার পরও শিল্প মালিক ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা করোনার অজুহাতে নিজেদের প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মী ছাঁটাই অব্যাহত রাখে। ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা হয়ে যায় বেকার। এই বেকার হওয়া মানুষগুলো গ্রামে ফিরে আসে। এরা মূলত প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও কৃষি শ্রমিক।
পেট্রোপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিটা সরাসরি বিরূপ প্রভাব ফেলবে দেশের কৃষকদের ওপর। প্রাকৃতিকভাবে সেচের ব্যবস্থা নেই। কৃষককে নির্ভর করতে হয় যান্ত্রিক সেচের ওপর। ভরা বর্ষা মৌসুমে বরেন্দ্র এলাকায় বৃষ্টি নেই, এ বছরের আমন চাষের আবাদটা যান্ত্রিক সেচ দিয়ে করতে হচ্ছে। কৃষকেরা এখন গরু দিয়ে জমি চাষ করেন না। চাষের জন্য ট্রাক্টর ব্যবহার করে থাকেন। এই ট্রাক্টর ডিজেলচালিত। ধান মাড়াই মেশিন ডিজেলচালিত। যে কোন কৃষিপণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজন ডিজেলে। তাই এই মূল্য বৃদ্ধিটা মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলবে কৃষি পণ্য উৎপাদনে। ডিজেলের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। গ্রামের হাটে ধান বিক্রি হয় ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকায়। ডিজেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধানের দাম বাড়ানো যদি তাহলে, ধানের দাম ৫০ শতাংশ বাড়ানো উচিত। এই হিসেবে গ্রামের হাটে প্রতি মণ ধানের মূল্য হতে হবে ২ হাজার টাকা। বর্তমানে ১ হাজার টাকা ধানের দাম থাকার পরও মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে আর এই দাম যদি ২ হাজার টাকা হয়, তাহলে মোটা চাল কমপক্ষে ১০০ টাকা কেজি হয়ে যাবে।
কারণ দেশের নাজুক কৃষি অর্থনীতিতে ডিজেলের দাম বাড়ানোটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। যখন ডিজেলের দাম ৪৪ টাকা করে ছিল তখন এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে খরচ হতো প্রায় ৮২০০ টাকা আর বিঘা প্রতি ফলন ১০-১২ মণ করে। এখন ডিজেলে দাম হলো ১১৫ টাকা, অর্থাৎ আড়াই গুণ বাড়ল , বিঘাপ্রতি খরচ হবে প্রায় ২০ হাজার ৫০০ টাকা। ধানের দাম না বাড়লে কৃষক তার উৎপাদন খরচ কোনভাবেই মেটাতে পারবে না। কারণ একদিকে ইউরিয়া সারের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের ডিলারা সরকারি রেটের চেয়ে বেশি মূল্যে সার বিক্রি করে থাকে কৃষকদের কাছে। মাঠ পর্যায়ের বিক্রির হিসাবটা বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে সারের দাম ৬০-৭০ শতাংশই প্রায় বেড়ে গেছে। এই ইউরিয়া সারের বেড়ে যাওয়া দামটাও যোগ হবে ধানের মোট উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে। সরকারিভাবে শিল্প পণ্য ও সেবার মূল্য নির্ধারণ করা হয় তার উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে। এই নির্ধারিত মূল্য মাঠ পর্যায়ে মানা হচ্ছে কি না, তার তদারকির জন্য কাজ করে সরকারি বেশ কয়েকটি দপ্তর।
কিন্তু দুর্ভাগ্য দেশের কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন খরচ অনুসারে তার মূল্য নির্ধারণটা সরকার করে না। তবে শুধু ধানের ক্ষেত্রে সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়, তবে মাঠ পর্যায়ে প্রান্তিক কৃষকরা সরকারি নির্ধারিত ধানের মূল্য পাচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করতে সরকারি টিমকে দেখা যায় না। দেশে প্রায় দেশের দুই কোটির বেশি কৃষক পরিবার রয়েছে। যদি প্রতিটি পরিবারে গড়ে চারজন করে সদস্য হয়, তাহলে দেথা যাবে মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি কৃষি খাতের ওপর নির্ভরশীল। এই হিসাবটা বিবেচনায় নিলে দেখা যায় সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কল্যাণে কাজ করছে না। সরকার যাদের জন্য কাজ করছে তারা মোট জনসংখ্যার সংখ্যালঘু। অথচ এই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ট্যাক্সের টাকা দিয়েই সরকারি ব্যয় ভার মিটানো হয়। ডিজেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। তাই শহরের পাইকারিরা কৃষকের উৎপাদিত শাকসব্জির মূল্য কমিয়ে দেয়। পাইকাররা ক্রয়মূল্যের সঙ্গে পরিবহন খরচ যোগ করে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে বলেই কৃষক তার ন্যয্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।
গত ৬ আগস্ট মানবজমিনে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় যে, ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য ব্যারল প্রতি দাঁড়িয়েছিল ১৩৯ ডলারে। পত্রিকার সংবাদটির মতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কমছে। অয়েল প্রাইস ডটকমের জানায় আন্তর্জাতিক বাজারে উভয় প্রকার তেলের দাম ১০০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। ৩০-০৭-২২ তারিখে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অপরিশোধিত তেল বিক্রি করছে ৮৮ দশমিক ৪৩ ডলারে। অপরদিকে ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেল বিক্রি করছে ৯৩ দশমিক ৯৫ ডলারে। এই হিসাবে সরকার যে ডিজেলের দাম বাড়িয়েছে তা ঠিক হয়নি। আরেকটি বিষয়, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কমলেও দেশের বাজারে তা কমতে কখনো দেখা যায় না। তাই দেখা যায়, উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে পড়ার মতো করে সব মূল্যবৃদ্ধির চাপটা পরে দেশের প্রান্তিক মানুষের ওপর। বর্তমানে মূল্য বৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রান্তিক কৃষকরা। সরকারের ভাবা উচিত কৃষিপণ্যের মূল্য বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতির হারও দ্রুত বেড়ে যাবে।
[লেখক : উন্নয়নকর্মী]
শাহ মো. জিয়াউদ্দিন
বুধবার, ১০ আগস্ট ২০২২
হঠাৎ বজ্রপাতের মতোই গত ৬ আগস্ট মধ্য রাতে বেড়ে গেল পেট্রোপণ্যের মূল্য। এই দাম বাড়ার বিষয়টি শুধু পেট্রোপণ্যের ওপর সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর প্রভাব হবে বহুমুখী। তা ছাড়া সরকার ঘোষণা দিয়ে সারের দাম বাড়িয়েছে প্রতি কেজি ১৬ টাকা থেকে ২২ টাকায়। সারের দাম বাড়ার শতকরা হার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশে এ ধরনের দাম বাড়ার ঘটনা বিরল। দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে দেখানো হয় ইউক্রেন যুদ্ধকে অজুহাত। সব পণ্য ও সেবার দাম বাড়ানোর জন্য ইউক্রেন যুদ্ধটি মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এটা ঠিক যে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে পড়বে। তাই বলে দেশের সাধারণ মানুষের ঘাড়ে সবকিছু চাপিয়ে দিয়ে সরকারি ব্যয় মেটাতে হবে, এটাও ঠিক নয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৫২ বছর। ৫২ বছরের বাংলাদেশ কতটা অর্থনৈতিক সম্পদ মজুত করতে পেরেছে? তা এখন দেখার বিষয়। নাকি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কোষাগার শূন্য হয়ে আছে। এক সময় কেন্দ্রীয় কোষাগারে টাকা ছিল, তা ছিল ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পর, কারণ সেই সময় দেশ ছিল যুদ্ধবিধস্ত, বর্তমানে তা নেই তারপরও কেন সরকারি মজুত দিয়ে সংকটকাল পার হওয়া যাবে না। কারণ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট একটি আপদকাল। এই আপদকাল স্থায়ী হয় না। প্রশ্নটা হচ্ছে স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও এসে কেন বাংলাদেশ আপদকালীন সময় মোকাবিলা করার মতো নিজস্ব সামর্থ তৈরি করতে পরিনি কেন? এটা সাধারণ মানুষের প্রশ্ন। শাসনযন্ত্রের স্টিয়ারিংটা যাদের হাতে, তাদের উচিত এর উত্তর দেয়া।
ইউক্রেন যুদ্ধের আগে করোনা মহামারীতেও দেখা গেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্যে প্রচারিত হয়েছে, রিজার্ভের পরিমাণ এত বিলিয়ন ছাড়িয়েছে, স্মরণাতীত কালের রিজার্ভ এখন দেশে। প্রশ্ন হচ্ছে এই রিজার্ভ গেল কোথায়? করোনা মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও প্রান্তিক কৃষকরা। বড় মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা পেয়েছেন করোনার প্রণোদনা। সরকারের প্রণোদনা পাওয়ার পরও শিল্প মালিক ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা করোনার অজুহাতে নিজেদের প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মী ছাঁটাই অব্যাহত রাখে। ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা হয়ে যায় বেকার। এই বেকার হওয়া মানুষগুলো গ্রামে ফিরে আসে। এরা মূলত প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও কৃষি শ্রমিক।
পেট্রোপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিটা সরাসরি বিরূপ প্রভাব ফেলবে দেশের কৃষকদের ওপর। প্রাকৃতিকভাবে সেচের ব্যবস্থা নেই। কৃষককে নির্ভর করতে হয় যান্ত্রিক সেচের ওপর। ভরা বর্ষা মৌসুমে বরেন্দ্র এলাকায় বৃষ্টি নেই, এ বছরের আমন চাষের আবাদটা যান্ত্রিক সেচ দিয়ে করতে হচ্ছে। কৃষকেরা এখন গরু দিয়ে জমি চাষ করেন না। চাষের জন্য ট্রাক্টর ব্যবহার করে থাকেন। এই ট্রাক্টর ডিজেলচালিত। ধান মাড়াই মেশিন ডিজেলচালিত। যে কোন কৃষিপণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজন ডিজেলে। তাই এই মূল্য বৃদ্ধিটা মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলবে কৃষি পণ্য উৎপাদনে। ডিজেলের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। গ্রামের হাটে ধান বিক্রি হয় ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকায়। ডিজেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধানের দাম বাড়ানো যদি তাহলে, ধানের দাম ৫০ শতাংশ বাড়ানো উচিত। এই হিসেবে গ্রামের হাটে প্রতি মণ ধানের মূল্য হতে হবে ২ হাজার টাকা। বর্তমানে ১ হাজার টাকা ধানের দাম থাকার পরও মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে আর এই দাম যদি ২ হাজার টাকা হয়, তাহলে মোটা চাল কমপক্ষে ১০০ টাকা কেজি হয়ে যাবে।
কারণ দেশের নাজুক কৃষি অর্থনীতিতে ডিজেলের দাম বাড়ানোটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। যখন ডিজেলের দাম ৪৪ টাকা করে ছিল তখন এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে খরচ হতো প্রায় ৮২০০ টাকা আর বিঘা প্রতি ফলন ১০-১২ মণ করে। এখন ডিজেলে দাম হলো ১১৫ টাকা, অর্থাৎ আড়াই গুণ বাড়ল , বিঘাপ্রতি খরচ হবে প্রায় ২০ হাজার ৫০০ টাকা। ধানের দাম না বাড়লে কৃষক তার উৎপাদন খরচ কোনভাবেই মেটাতে পারবে না। কারণ একদিকে ইউরিয়া সারের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের ডিলারা সরকারি রেটের চেয়ে বেশি মূল্যে সার বিক্রি করে থাকে কৃষকদের কাছে। মাঠ পর্যায়ের বিক্রির হিসাবটা বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে সারের দাম ৬০-৭০ শতাংশই প্রায় বেড়ে গেছে। এই ইউরিয়া সারের বেড়ে যাওয়া দামটাও যোগ হবে ধানের মোট উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে। সরকারিভাবে শিল্প পণ্য ও সেবার মূল্য নির্ধারণ করা হয় তার উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে। এই নির্ধারিত মূল্য মাঠ পর্যায়ে মানা হচ্ছে কি না, তার তদারকির জন্য কাজ করে সরকারি বেশ কয়েকটি দপ্তর।
কিন্তু দুর্ভাগ্য দেশের কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন খরচ অনুসারে তার মূল্য নির্ধারণটা সরকার করে না। তবে শুধু ধানের ক্ষেত্রে সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়, তবে মাঠ পর্যায়ে প্রান্তিক কৃষকরা সরকারি নির্ধারিত ধানের মূল্য পাচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করতে সরকারি টিমকে দেখা যায় না। দেশে প্রায় দেশের দুই কোটির বেশি কৃষক পরিবার রয়েছে। যদি প্রতিটি পরিবারে গড়ে চারজন করে সদস্য হয়, তাহলে দেথা যাবে মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি কৃষি খাতের ওপর নির্ভরশীল। এই হিসাবটা বিবেচনায় নিলে দেখা যায় সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কল্যাণে কাজ করছে না। সরকার যাদের জন্য কাজ করছে তারা মোট জনসংখ্যার সংখ্যালঘু। অথচ এই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ট্যাক্সের টাকা দিয়েই সরকারি ব্যয় ভার মিটানো হয়। ডিজেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। তাই শহরের পাইকারিরা কৃষকের উৎপাদিত শাকসব্জির মূল্য কমিয়ে দেয়। পাইকাররা ক্রয়মূল্যের সঙ্গে পরিবহন খরচ যোগ করে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে বলেই কৃষক তার ন্যয্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।
গত ৬ আগস্ট মানবজমিনে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় যে, ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য ব্যারল প্রতি দাঁড়িয়েছিল ১৩৯ ডলারে। পত্রিকার সংবাদটির মতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কমছে। অয়েল প্রাইস ডটকমের জানায় আন্তর্জাতিক বাজারে উভয় প্রকার তেলের দাম ১০০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। ৩০-০৭-২২ তারিখে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অপরিশোধিত তেল বিক্রি করছে ৮৮ দশমিক ৪৩ ডলারে। অপরদিকে ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেল বিক্রি করছে ৯৩ দশমিক ৯৫ ডলারে। এই হিসাবে সরকার যে ডিজেলের দাম বাড়িয়েছে তা ঠিক হয়নি। আরেকটি বিষয়, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কমলেও দেশের বাজারে তা কমতে কখনো দেখা যায় না। তাই দেখা যায়, উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে পড়ার মতো করে সব মূল্যবৃদ্ধির চাপটা পরে দেশের প্রান্তিক মানুষের ওপর। বর্তমানে মূল্য বৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রান্তিক কৃষকরা। সরকারের ভাবা উচিত কৃষিপণ্যের মূল্য বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতির হারও দ্রুত বেড়ে যাবে।
[লেখক : উন্নয়নকর্মী]