alt

উপ-সম্পাদকীয়

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ কী

মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান

: শুক্রবার, ০৭ অক্টোবর ২০২২

গত ৪ অক্টোবর দুপুর থেকে হঠাৎ জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়। ব্ল্যাকআউট নেমে আসে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ বিভাগে। কোথাও সন্ধ্যা আবার কোথাও রাত অবধি বিদ্যুৎ ছিল না। একসঙ্গে চার বিভাগ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বিপর্যয় দেখা দেয় নানা খাতে। ছড়িয়ে পড়ে নানামুখী দুর্ভোগ।

বিদ্যুৎ না থাকায় রাজধানীর সড়কগুলোতে ছিল ভুতুড়ে অন্ধকার। বাসাবাড়িতে সংকট দেখা দেয় পানির। হাসপাতালগুলোতে দেখা দেয় বিপর্যয়। বিকল্প ব্যবস্থায় কিছু সেবা চালু রাখা হলেও গরমের কারণে সাধারণ রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন প্রতিষ্ঠান।

উচ্চ আদালতের কার্যক্রম চালানো হয় মোমবাতি জ্বালিয়ে। পরীক্ষার্থীদের পড়তে হয় দুর্ভোগে। বড় ভবনগুলোর জেনারেটর চালু রাখতে তেলের জন্য পেট্রোল পাম্পগুলোতে দীর্ঘ সারি দেখা যায়। বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক সিএনজি স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন গাড়িচালকরা। জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে টেলিকম সেক্টরে বিপর্যয় দেখা দেয়। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত মোবাইল সেবায় মারাত্মক বিঘেœর সৃষ্টি হয়। মোবাইল ফোনে কথা বলতে গেলে কলড্রপসহ ইন্টারনেটের গতিতেও ধীর লক্ষ্য করা গেছে। মোবাইল সেবায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় ঘটে রাজধানী ঢাকাতে।

গত মঙ্গলবার জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি হয়তো কারণ বের করে দীর্ঘ রিপোর্ট জমা দেবে, কিন্তু তার আগে গতানুগতিক ধারায় আমরা যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে না বলি এটাও ষড়যন্ত্রের কারণে ঘটেছে।

বিশেষ করে সারা দেশে যখন সনাতন ধর্মানুসারীদের বৃহত্তম ও ধর্ম অনুষ্ঠান দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে, সে সময় বিচ্ছিন্ন হওয়া এলাকার কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলেও রাত ১০টা পর্যন্ত বেশির ভাগ এলাকার পূজার বেদী ছিল আঁধারে। আর পুলিশ বিভাগ থেকে নাশকতার আশঙ্কা করায় এহেন বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে অতি উৎসাহী হয়ে কেউ বলেও ফেলতে পারে এটিও ষড়যন্ত্র। জানামতে এটাকে কেউ পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াতে পারেনি এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক দিক।

এই বিপর্যয় নিয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট কোন কারণ উল্লেখ করেনি। তবে ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সঞ্চালন কেন্দ্রে বিপর্যয় দেখা দিলে ভারতের সঙ্গে সঞ্চালন লাইন বন্ধ হয়ে যায়। জাতীয় গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ভারতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রক্রিয়া। একই সময় দেশের উৎপাদনে থাকা সব বিদ্যুৎকেন্দ্র একযোগে বন্ধ হয়ে গেলে, ধস নামে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ফলে সারা দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়।

তাহলে এবার বিশেষজ্ঞরা কি বলেন দেখা যাক। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা টেলিকম সেক্টরে সাইবার হামলার আশঙ্কার কথা জানান। তারা বলেন, জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের আগে টেলিকম সেক্টরে সম্ভবত সাইবার হামলা হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারেন। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই। টেলিকম সেক্টরের কর্মকর্তারা বলেন, এ ধরনের ঘটনাকে জাতীয় বিপর্যয় উল্লেখ করে নেটওয়ার্ক সচল রাখতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

তাহলে এটা কি সাইবার হামলার কারণে ঘটেছে? প্রকৃত কারণ হয়তো তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান করে বের করবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাধারণত বিপর্যয় ঘটলে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে তা সামলে ওঠা সম্ভব হয়। অতীতে এ ধরনের বহু উদাহরণ রয়েছে। তবে আজ বিপর্যয় কাটাতে যে সময় লেগেছে তাতে মনে হয়েছে এটা সাইবার হামলার ফল। এখনই যদি এসব বিষয়ে সঠিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। আমাদের বিশেষজ্ঞরা সাইবার হামলা হলে কি করণীয়, সে বিষয়ে নিশ্চয় দক্ষ। যারা এসব মেইনটেইন করেন তাদের যথাযথ অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এসব হামলার পেছনে মূল কারণ উদ্ঘাটন করে থাকেন বা যারা এসব নিয়ে কাজ করেন, তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে, ভুলের সুযোগ নিয়ে কিংবা অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে সাইবার হামলা হতে পারে।

আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে এর আগে সরকারি ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করে গত রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ। তন্মধ্যে বিটিসিএল, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ অন্যতম। আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ইনফ্রাস্ট্রাকচার যদি সাইবার হামলার শিকার হয় তাহলে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বেশিসংখ্যক তথ্য ও অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং যেগুলো জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

আমরা উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পৌঁছে যাব, আমরা মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের লক্ষ্য অর্জনে আশাতীত সাফল্যের কারণে আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জনে বাহবা পাচ্ছি, কিন্তু নিমিষেই তা কেমন করে থমকে যায় সেটাও জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ বিপর্যয় আমাদের দেখিয়ে দিল। বাংলাদেশে ডিজিটালের ধারালো ছুরি ব্যবহারে করতে না জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেভাবে ডিজিটাল চুরির মাধ্যমে কষ্টার্জিত ডলার নিমিষেই চুরি হয়ে গিয়েছিল একইভাবে গ্রিড বিপর্যয়ে সমূহ ক্ষতির জন্য সাইবার হামলার বিশেষজ্ঞ মতামতেও আমরা শংকিত।

বংলাদেশের মানুষের সক্ষমতা আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন আর দূরদর্শী নেতৃত্বে অর্জিত উন্নয়নের ধারা যেন সাইবার হামলায় বিপর্যস্ত না হয়, সে জন্য আমাদের তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা প্রতিরোধের সব পন্থা অনুসরণ করবেন বলে আশা করা যায়।

[লেখক : সাবেক পরিচালক, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র]

জামাই মেলা : উৎসব, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির রঙিন চিত্রপট

হারিয়ে যাওয়া ক্লাস, কঠোর মূল্যায়ন আর প্রশ্নের জটিলতায় নুয়ে পড়া এক প্রজন্ম

বৈষম্য দূর করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলুন

চিকিৎসা যেন বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত না হয়

পথশিশু ও বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তির ব্যর্থতা

মেগা প্রকল্প : প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বচ্ছতা নিয়ে

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি

স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : উপগ্রহ চিত্র ও ওয়েবসাইটের অপরিহার্যতা

ক্ষমতা ও জনপ্রশাসন : আমলাতন্ত্রের ছায়াতলে আমজনতা

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ কী

মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান

শুক্রবার, ০৭ অক্টোবর ২০২২

গত ৪ অক্টোবর দুপুর থেকে হঠাৎ জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়। ব্ল্যাকআউট নেমে আসে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ বিভাগে। কোথাও সন্ধ্যা আবার কোথাও রাত অবধি বিদ্যুৎ ছিল না। একসঙ্গে চার বিভাগ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বিপর্যয় দেখা দেয় নানা খাতে। ছড়িয়ে পড়ে নানামুখী দুর্ভোগ।

বিদ্যুৎ না থাকায় রাজধানীর সড়কগুলোতে ছিল ভুতুড়ে অন্ধকার। বাসাবাড়িতে সংকট দেখা দেয় পানির। হাসপাতালগুলোতে দেখা দেয় বিপর্যয়। বিকল্প ব্যবস্থায় কিছু সেবা চালু রাখা হলেও গরমের কারণে সাধারণ রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন প্রতিষ্ঠান।

উচ্চ আদালতের কার্যক্রম চালানো হয় মোমবাতি জ্বালিয়ে। পরীক্ষার্থীদের পড়তে হয় দুর্ভোগে। বড় ভবনগুলোর জেনারেটর চালু রাখতে তেলের জন্য পেট্রোল পাম্পগুলোতে দীর্ঘ সারি দেখা যায়। বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক সিএনজি স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন গাড়িচালকরা। জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে টেলিকম সেক্টরে বিপর্যয় দেখা দেয়। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত মোবাইল সেবায় মারাত্মক বিঘেœর সৃষ্টি হয়। মোবাইল ফোনে কথা বলতে গেলে কলড্রপসহ ইন্টারনেটের গতিতেও ধীর লক্ষ্য করা গেছে। মোবাইল সেবায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় ঘটে রাজধানী ঢাকাতে।

গত মঙ্গলবার জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি হয়তো কারণ বের করে দীর্ঘ রিপোর্ট জমা দেবে, কিন্তু তার আগে গতানুগতিক ধারায় আমরা যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে না বলি এটাও ষড়যন্ত্রের কারণে ঘটেছে।

বিশেষ করে সারা দেশে যখন সনাতন ধর্মানুসারীদের বৃহত্তম ও ধর্ম অনুষ্ঠান দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে, সে সময় বিচ্ছিন্ন হওয়া এলাকার কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলেও রাত ১০টা পর্যন্ত বেশির ভাগ এলাকার পূজার বেদী ছিল আঁধারে। আর পুলিশ বিভাগ থেকে নাশকতার আশঙ্কা করায় এহেন বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে অতি উৎসাহী হয়ে কেউ বলেও ফেলতে পারে এটিও ষড়যন্ত্র। জানামতে এটাকে কেউ পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াতে পারেনি এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক দিক।

এই বিপর্যয় নিয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট কোন কারণ উল্লেখ করেনি। তবে ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সঞ্চালন কেন্দ্রে বিপর্যয় দেখা দিলে ভারতের সঙ্গে সঞ্চালন লাইন বন্ধ হয়ে যায়। জাতীয় গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ভারতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রক্রিয়া। একই সময় দেশের উৎপাদনে থাকা সব বিদ্যুৎকেন্দ্র একযোগে বন্ধ হয়ে গেলে, ধস নামে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ফলে সারা দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়।

তাহলে এবার বিশেষজ্ঞরা কি বলেন দেখা যাক। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা টেলিকম সেক্টরে সাইবার হামলার আশঙ্কার কথা জানান। তারা বলেন, জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের আগে টেলিকম সেক্টরে সম্ভবত সাইবার হামলা হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারেন। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই। টেলিকম সেক্টরের কর্মকর্তারা বলেন, এ ধরনের ঘটনাকে জাতীয় বিপর্যয় উল্লেখ করে নেটওয়ার্ক সচল রাখতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

তাহলে এটা কি সাইবার হামলার কারণে ঘটেছে? প্রকৃত কারণ হয়তো তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান করে বের করবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাধারণত বিপর্যয় ঘটলে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে তা সামলে ওঠা সম্ভব হয়। অতীতে এ ধরনের বহু উদাহরণ রয়েছে। তবে আজ বিপর্যয় কাটাতে যে সময় লেগেছে তাতে মনে হয়েছে এটা সাইবার হামলার ফল। এখনই যদি এসব বিষয়ে সঠিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। আমাদের বিশেষজ্ঞরা সাইবার হামলা হলে কি করণীয়, সে বিষয়ে নিশ্চয় দক্ষ। যারা এসব মেইনটেইন করেন তাদের যথাযথ অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এসব হামলার পেছনে মূল কারণ উদ্ঘাটন করে থাকেন বা যারা এসব নিয়ে কাজ করেন, তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে, ভুলের সুযোগ নিয়ে কিংবা অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে সাইবার হামলা হতে পারে।

আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে এর আগে সরকারি ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করে গত রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ। তন্মধ্যে বিটিসিএল, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ অন্যতম। আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ইনফ্রাস্ট্রাকচার যদি সাইবার হামলার শিকার হয় তাহলে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বেশিসংখ্যক তথ্য ও অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং যেগুলো জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

আমরা উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পৌঁছে যাব, আমরা মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের লক্ষ্য অর্জনে আশাতীত সাফল্যের কারণে আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জনে বাহবা পাচ্ছি, কিন্তু নিমিষেই তা কেমন করে থমকে যায় সেটাও জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ বিপর্যয় আমাদের দেখিয়ে দিল। বাংলাদেশে ডিজিটালের ধারালো ছুরি ব্যবহারে করতে না জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেভাবে ডিজিটাল চুরির মাধ্যমে কষ্টার্জিত ডলার নিমিষেই চুরি হয়ে গিয়েছিল একইভাবে গ্রিড বিপর্যয়ে সমূহ ক্ষতির জন্য সাইবার হামলার বিশেষজ্ঞ মতামতেও আমরা শংকিত।

বংলাদেশের মানুষের সক্ষমতা আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন আর দূরদর্শী নেতৃত্বে অর্জিত উন্নয়নের ধারা যেন সাইবার হামলায় বিপর্যস্ত না হয়, সে জন্য আমাদের তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা প্রতিরোধের সব পন্থা অনুসরণ করবেন বলে আশা করা যায়।

[লেখক : সাবেক পরিচালক, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র]

back to top