সিরাজ প্রামাণিক
মুসলিম এবং হিন্দু আইনে মায়ের সম্পত্তিতে মেয়ে, ছেলে ও স্বামীর অংশ নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। আবার হিন্দু আইনে বিধবা তার স্বামীর সম্পত্তি কতটুকু পাবে এবং সেটা কখন বিক্রি করতে পারবে আর কখন বিক্রি করতে পারবে না-এসব নিয়েও নানা মুখরোচক গল্প রয়েছে।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তি পুরুষ অথবা নারী যিনিই হোন না কেন, তার সম্পত্তিতে ছেলে ও মেয়ে একইভাবে সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকেন। মৃত ব্যক্তির যদি সন্তান থাকে তবে স্বামী পাবে এক চতুর্থাংশ আর মৃত ব্যক্তির সন্তানসন্ততি বা পুত্রের সন্তানসন্ততি বা তার নিম্নে কেউ না থাকে, তবে স্বামী পবে ১/২ অংশ। এই সম্পত্তি স্বামীকে দেয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলে ও মেয়ের মধ্যে ২:১ হারে বাটোয়ারা হবে। অর্থাৎ ছেলেরা পাবে ডাবল আর মেয়েরা ছেলের অর্ধেক পরিমাণ পাবে।
যদি মেয়ে না থাকে তবে বাকি সম্পূর্ণ অংশ ছেলে পাবে। আরও স্পষ্ট করে বলি, মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী একজন মেয়ে ৩ নিয়মে মৃত ব্যক্তির সম্পদ পেয়ে থাকে।
১। যদি একজন মেয়ে হয় তবে দুইভাগের একভাগ (১/২) অংশ পাবে অর্থাৎ বাকি সম্পত্তির অর্ধেক মেয়ে পাবে।
২। যদি একাধিক মেয়ে হয় তবে সবাই তিন ভাগের দুই ভাগ (২/৩) অংশ পাবে।
৩। যদি মৃত ব্যক্তির ছেলেমেয়ে উভয়েই থাকে, তবে ছেলে যে পরিমাণ পাবে, মেয়ে তার অর্ধেক পাবে। কাজেই ‘মায়ের সম্পত্তি মেয়েরা বেশি পাবে’ এই ধারণাটি ভুল।
এবার আসি হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে। হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী কোন পুরুষ মারা গেলে তার সম্পত্তির ওপর প্রথমে পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র এবং বিধবার অগ্রাধিকার। এদের অনুপস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে কন্যা, দৌহিত্র্য, পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্ররা সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন। কিন্তু কোন হিন্দু মহিলা মারা গেলে তার সম্পত্তি বণ্টনের দুটি নিয়ম রয়েছে।
কোন মহিলা যদি উত্তরাধিকার সূত্রে কোন সম্পত্তির মালিক হন তাহলে তার মৃত্যুর পর সেই সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে যার নিকট হতে পেয়েছিলেন তার নিকট আত্মীয়দের নিকট ফিরে যাবে।
উত্তরাধিকার ব্যতীত অন্য কোনভাবে যদি কোন সম্পত্তির মালিক হন, তাহলে সেই সম্পত্তি মালিকানার ধরন অনুযায়ী তার উত্তরাধিকারদের মধ্য বণ্টিত হবে। ১৯৩৭ সালের হিন্দু আইন অনুযায়ী মেয়েরা কোন সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নয়। তবে বিধবা হওয়ার পর সন্তান নাবালক থাকা অবস্থায় শুধু বসতি বাড়ির অধিকারী হয়।
দীর্ঘ ৮৩ বছরেও হিন্দু আইনে আর কোন পরিবর্তন না আসায় ২০২০ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণা করেছে যে, হিন্দু বিধবারা স্বামীর সব শ্রেণীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে। ১৯৩৭ সালের হিন্দু আইন অনুযায়ী বিধবা প্রাপ্ত সম্পত্তি কোন প্রকার বিক্রি, হস্তান্তর করতে পারবে না। শুধু ভোগদখলকৃত বলে গণ্য হবে।
তবে একজন হিন্দু বিধবা কি কি উদ্দেশ্যে তার স্বামীর সম্পত্তি চূড়ান্তভাবে বিক্রি হস্তান্তর করতে পারবে, সে সম্পর্কে দিকনির্দেশনা ছিল। যেমন স্বামীর দাহ এবং শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করতে গিয়ে টাকার প্রয়োজন হলে জমি বিক্রি করতে পারবেন, স্বামীর আত্মার শান্তির জন্য ধর্মীয় ও দাতব্য কাজ করতে গিয়ে, মৃত স্বামীর ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে, প্রভেট, সাকসেসন সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে গিয়ে, সরকারি বকেয়া কর বা রাজস্ব পরিশোধে, যুক্তিসংগতভাবে নিজের ভরণপোষণ ম্যানেজ করতে গিয়ে, পারিবারিক ব্যবসা বা অন্য কোন পারিবারিক প্রয়োজনে দেনা হয়ে থাকলে, তা পরিশোধ করতে গিয়ে মৃত স্বামীর আত্মীয়দের যেমন-মেয়ে, ছেলের মেয়ে, ছেলের ছেলের মেয়ে ইত্যাদি বিয়ের খরচ মেটানো ও যৌতুক প্রদান করতে গিয়ে, সম্পত্তির উন্নতিকল্পে, সম্পত্তি রক্ষার জন্য, মামলা মোকদ্দমার খরচ মেটাতে গিয়ে বিধবা তার স্বামীর সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবেন।
এরপর সর্বশেষ রায় অনুযায়ী একজন হিন্দু বিধবা তার মৃত স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে অংশ পাওয়ার অধিকারী এমনকি মৃত ব্যক্তির মৃত পুত্র (যিনি তার পূর্বে মারা গেছেন) বিধবা স্ত্রী তার সম্পত্তিতে অধিকারী হিসেবে হিস্যা পাওয়ার অধিকারী যেমনটি তার ছেলে জীবিত থাকলে পেত। একজন হিন্দু বিধবা আইনে যে কোন সম্পত্তিতে পূর্ণাঙ্গ মালিক ও যে কোন অংশীদারিত্বসহ অংশীদারী হওয়ার অথবা বিভাগ বণ্টন এবং অগ্রক্রয়ের দাবিদার হওয়ার অধিকারী। (সিভিল রিভিশন নং ২৪৭৭/২০০৪)।
[লেখক : আইনজীবী]
সিরাজ প্রামাণিক
শনিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২২
মুসলিম এবং হিন্দু আইনে মায়ের সম্পত্তিতে মেয়ে, ছেলে ও স্বামীর অংশ নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। আবার হিন্দু আইনে বিধবা তার স্বামীর সম্পত্তি কতটুকু পাবে এবং সেটা কখন বিক্রি করতে পারবে আর কখন বিক্রি করতে পারবে না-এসব নিয়েও নানা মুখরোচক গল্প রয়েছে।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তি পুরুষ অথবা নারী যিনিই হোন না কেন, তার সম্পত্তিতে ছেলে ও মেয়ে একইভাবে সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকেন। মৃত ব্যক্তির যদি সন্তান থাকে তবে স্বামী পাবে এক চতুর্থাংশ আর মৃত ব্যক্তির সন্তানসন্ততি বা পুত্রের সন্তানসন্ততি বা তার নিম্নে কেউ না থাকে, তবে স্বামী পবে ১/২ অংশ। এই সম্পত্তি স্বামীকে দেয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলে ও মেয়ের মধ্যে ২:১ হারে বাটোয়ারা হবে। অর্থাৎ ছেলেরা পাবে ডাবল আর মেয়েরা ছেলের অর্ধেক পরিমাণ পাবে।
যদি মেয়ে না থাকে তবে বাকি সম্পূর্ণ অংশ ছেলে পাবে। আরও স্পষ্ট করে বলি, মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী একজন মেয়ে ৩ নিয়মে মৃত ব্যক্তির সম্পদ পেয়ে থাকে।
১। যদি একজন মেয়ে হয় তবে দুইভাগের একভাগ (১/২) অংশ পাবে অর্থাৎ বাকি সম্পত্তির অর্ধেক মেয়ে পাবে।
২। যদি একাধিক মেয়ে হয় তবে সবাই তিন ভাগের দুই ভাগ (২/৩) অংশ পাবে।
৩। যদি মৃত ব্যক্তির ছেলেমেয়ে উভয়েই থাকে, তবে ছেলে যে পরিমাণ পাবে, মেয়ে তার অর্ধেক পাবে। কাজেই ‘মায়ের সম্পত্তি মেয়েরা বেশি পাবে’ এই ধারণাটি ভুল।
এবার আসি হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে। হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী কোন পুরুষ মারা গেলে তার সম্পত্তির ওপর প্রথমে পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র এবং বিধবার অগ্রাধিকার। এদের অনুপস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে কন্যা, দৌহিত্র্য, পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্ররা সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন। কিন্তু কোন হিন্দু মহিলা মারা গেলে তার সম্পত্তি বণ্টনের দুটি নিয়ম রয়েছে।
কোন মহিলা যদি উত্তরাধিকার সূত্রে কোন সম্পত্তির মালিক হন তাহলে তার মৃত্যুর পর সেই সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে যার নিকট হতে পেয়েছিলেন তার নিকট আত্মীয়দের নিকট ফিরে যাবে।
উত্তরাধিকার ব্যতীত অন্য কোনভাবে যদি কোন সম্পত্তির মালিক হন, তাহলে সেই সম্পত্তি মালিকানার ধরন অনুযায়ী তার উত্তরাধিকারদের মধ্য বণ্টিত হবে। ১৯৩৭ সালের হিন্দু আইন অনুযায়ী মেয়েরা কোন সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নয়। তবে বিধবা হওয়ার পর সন্তান নাবালক থাকা অবস্থায় শুধু বসতি বাড়ির অধিকারী হয়।
দীর্ঘ ৮৩ বছরেও হিন্দু আইনে আর কোন পরিবর্তন না আসায় ২০২০ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণা করেছে যে, হিন্দু বিধবারা স্বামীর সব শ্রেণীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে। ১৯৩৭ সালের হিন্দু আইন অনুযায়ী বিধবা প্রাপ্ত সম্পত্তি কোন প্রকার বিক্রি, হস্তান্তর করতে পারবে না। শুধু ভোগদখলকৃত বলে গণ্য হবে।
তবে একজন হিন্দু বিধবা কি কি উদ্দেশ্যে তার স্বামীর সম্পত্তি চূড়ান্তভাবে বিক্রি হস্তান্তর করতে পারবে, সে সম্পর্কে দিকনির্দেশনা ছিল। যেমন স্বামীর দাহ এবং শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করতে গিয়ে টাকার প্রয়োজন হলে জমি বিক্রি করতে পারবেন, স্বামীর আত্মার শান্তির জন্য ধর্মীয় ও দাতব্য কাজ করতে গিয়ে, মৃত স্বামীর ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে, প্রভেট, সাকসেসন সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে গিয়ে, সরকারি বকেয়া কর বা রাজস্ব পরিশোধে, যুক্তিসংগতভাবে নিজের ভরণপোষণ ম্যানেজ করতে গিয়ে, পারিবারিক ব্যবসা বা অন্য কোন পারিবারিক প্রয়োজনে দেনা হয়ে থাকলে, তা পরিশোধ করতে গিয়ে মৃত স্বামীর আত্মীয়দের যেমন-মেয়ে, ছেলের মেয়ে, ছেলের ছেলের মেয়ে ইত্যাদি বিয়ের খরচ মেটানো ও যৌতুক প্রদান করতে গিয়ে, সম্পত্তির উন্নতিকল্পে, সম্পত্তি রক্ষার জন্য, মামলা মোকদ্দমার খরচ মেটাতে গিয়ে বিধবা তার স্বামীর সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবেন।
এরপর সর্বশেষ রায় অনুযায়ী একজন হিন্দু বিধবা তার মৃত স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে অংশ পাওয়ার অধিকারী এমনকি মৃত ব্যক্তির মৃত পুত্র (যিনি তার পূর্বে মারা গেছেন) বিধবা স্ত্রী তার সম্পত্তিতে অধিকারী হিসেবে হিস্যা পাওয়ার অধিকারী যেমনটি তার ছেলে জীবিত থাকলে পেত। একজন হিন্দু বিধবা আইনে যে কোন সম্পত্তিতে পূর্ণাঙ্গ মালিক ও যে কোন অংশীদারিত্বসহ অংশীদারী হওয়ার অথবা বিভাগ বণ্টন এবং অগ্রক্রয়ের দাবিদার হওয়ার অধিকারী। (সিভিল রিভিশন নং ২৪৭৭/২০০৪)।
[লেখক : আইনজীবী]