alt

উপ-সম্পাদকীয়

এসএসসির ফল শিক্ষার প্রকৃত মূল্যায়নের কথা বলে কি

মাছুম বিল্লাহ

: শুক্রবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২২

দেশ করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো এসএসসি পরীক্ষায় বসল শিক্ষার্থীরা। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২০ লক্ষাধিক। প্রথম দিনে পরীক্ষা দিয়েছে ১৯ লাখ ৫ হাজারের কিছু বেশি। প্রথম দিন ৩৩ হাজার ৮৬০ জনের অনুপস্থিতির ঘটনা উদ্বেগজনক। ১৫ সেপ্টেম্বর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিনটি কেটেছিল নানা ঘটনা-অঘটনের মধ্য দিয়ে। এদিন কিছু কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হয়েছিল। ২৬ জন পরীক্ষার্থী প্রথম দিনই বহিষ্কৃত হয়েছিল অসদুপায় অবলম্বনের কারণে। নড়াইলে ভুল প্রশ্নপত্র দেওয়ার কারণে যশোর বোর্ডের বাংলা দ্বিতীয়পত্রের এমসিকিউ অংশের পরীক্ষাই স্থগিত করতে হয়েছিল। অন্যান্যবার সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হলেও এবার বেলা ১১টায় পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে তিরিশ মিনিট আগে কেন্দ্রে ঢুকতে হয়েছিল।

এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ২০২১ সালে মাধ্যমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষায় পৌনে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। এদের মধ্যে ৪৭ হাজার ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হয়েছিল এবং ৭৮ হাজার শিক্ষার্থী শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে। এই প্রতিবেদন পূর্ণাঙ্গ ছিল না কারণ মাত্র এগারো হাজার ৬৭৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য থেকে এ ফিগার এসেছিল যদিও আমাদের পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি। নিবন্ধন করার পর কোন শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকার অর্থ হলো শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোন কোন পরীক্ষার্থী গরহাজির থাকলে সেটি ভিন্নকথা। কিন্তু দারিদ্রের কারণে বাল্যবিয়ে হওয়া আর ছেলেদের শিশুশ্রমে নিযুক্ত হওয়া কিন্তু উদ্বেগের বিষয়। যারা শিক্ষার নয়টি ধাপ পেরিয়ে এসএসসি পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেছে তাদের প্রত্যেকে যাতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। করোনার ধাক্কা আমরা মোটামুটি কাটিয়ে ঊঠেছি কিন্তু করোনার যে অভিঘাত শিক্ষায় পড়েছে তা কাটিয়ে ঊঠতে আরও সময় লাগবে। এজন্য যেমন টেকসই কর্মসূচি নিতে হবে তেমনি তার বাস্তবায়নেও সবাইকে এগিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

মাধ্যমিকের এই পরীক্ষার্থীরা ২০২০ সালে নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া শুরুর মাত্র আড়াই মাসের মাথায় করোনার কারনে তাদের সরাসারি ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সালে দশম শ্রেণি শেষ করা পর্যন্ত সরাসরি ক্লাস করার সুযোগ তারা খুব কমই পেয়েছে। অনলাইন আর অ্যসাইনমেন্টভিত্তিক লেখাপড়াই ছিল তাদের প্রধান অবলম্বন। এরপরও তারা স্বাভাবিক সময় বা ২০১৯ ও ২০২০ সালের পরীক্ষার্থীদের চেয়ে এই ব্যাচটির পাসের হার বেশি। ২০১৯ সালের পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ আর ২০২০ সালে ছিল ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। শুধু পাসের হারে নয়, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যার তুলনায়ও এবার ভালো করেছে এই ব্যাচটি। এই ব্যাচকে করোনার ব্যাচ বলেই অভিহিত করেছেন কেউ কেউ। এই ব্যাচের পরীক্ষার্থীরা বেশ ভালো করেছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তারা জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালের পরীক্ষার্থীদের চেয়ে এদের পাসে০র হার বেশি। তবে গত বছরের তুলনায় এবার হার কমেছে। এসএসসিসহ ১১টি বোর্ডে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ; যা গত বছর ছিল ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আর সর্বোচ্চ সাফল্য হিসেবে বিবেচিত জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ শিক্ষার্থী। গত বছর ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল।

২০২০ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন আর ২০১৯ সালে এক লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন। অর্থাৎ গত বছর বা তিন বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করা শিক্ষার্থীদের তুলনায় পাসের হার কম হলেও আগের ৪ বছরের মধ্যে এবার পাসের হার সর্বোচ্চ। আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অতীতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। আমরা যারা শিক্ষা নিয়ে কাজ করি তাদের সামনের প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার পরেই একটি প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দেয় আর সেটি হচেছ কত শতাংশ পরীক্ষার্থী পাশ করেছে আর কত শতাংশ পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এই দুটো মানদন্ড কি আসলেই শিক্ষার কাক্সিক্ষত মানের কথা বলে? এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সাথে আন্তর্জাতিক পরীক্ষা হচ্ছে ‘ও’ লেভেল যেখানে কোন ধরনের প্রশ্ন রিপিট করা হয় না, যেখানে কোন ধরনের প্রশ্ন শুধু মুখস্ত করে কিংবা দেখাদেখি করে টিক দিয়ে পাশের হার কিংবা জিপিএ-৫-কে ভারি করা হয় না। একজন শিক্ষার্থী যখন ‘ও’ লেভেল পরীক্ষায় একটি বিষয়ে ‘এ’ প্লাস পায় তখন কোন ধরনের প্রশ্ন ছাড়া ধরে নেওয়া হয় যে, সে ওই বিষয়টিতে আসলেই ভালো। সে আন্তর্জাতিক যে কোন ধরনের কম্পিটিশনে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারে। আমাদের এসএসসির এ প্লাস কিন্তু সে কথা বলে না। এখানে এখনও প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটে, প্রশ্ন ফাঁস করা নিয়ে অনেকেই ব্যস্ত থাকে। এখন প্রশ্ন কমন পরানো নিয়ে অনেকেই পান্ডিত্য জাহির করে।

এখন একটু চোখ বুলানো যাক এবার পরীক্ষায় এত ভালো করার কী কী কারণ ছিল। এগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস। এছাড়া আছে প্রশ্নপত্রে অধিকসংখ্যক বিকল্প থেকে পছন্দের সুযোগ, ৫০-এর মধ্যে দেওয়া পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ১০০-তে রূপান্তর, কঠিন বিষয়ে অবলীলায় ৯০ শতাংশের ওপরে প্রাপ্তি এবং সাবজেক্ট ম্যাপিং।

গত বছরও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছিল। বাংলা, ইংরেজি, গণিতের মতো বিষয় বাদ দিয়ে কেবল বিজ্ঞান, বিজনেস স্টাডিজ আর মানবিকের ঐচ্ছিক তিন বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু এবার সংক্ষিপ্ত ঐচ্ছিক বিষয়ের সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, চতুর্থ বিষয়সহ নয়টি পত্রের পরীক্ষা নেওয়া হয়। গত বছর বাকি নয় বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং বা জেএসসি-জেডিসিতে প্রাপ্ত নম্বর প্রাপ্তির প্রবণতা অনুযায়ী নম্বর দেওয়া হয়। কিন্তু এবার এ সুযোগ দেওয়া হয় মাত্র তিন বিষয়ে। এবার যে তিন বিষয়কে সাবজেক্ট ম্যাপিংও আওতায় নেওয়া হয়, সেগুলো মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কঠিন বিষয়গুলোর একটি। যেহেতু এটি পরীক্ষায় বসতে হয়, তাই পাসের হার এবং জিপিএ-৫-এ ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

ইংরেজি ও গণিত মাধ্যমিক পর্যায়ে একটি ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কারণ এ দুটি বিষয়ে একমাত্র স্বনামধন্য কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিগুলোতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকই নেই। শিক্ষার্থীরা স্বভাবতই এ দুটি বিষয়ের দুর্বলতা নিয়ে উচ্চ-মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা স্তর পার করে। অথচ পাবলিক পরীক্ষা পাসের হারে কোন এক জাদুর পরশে দেখা যায় এ দুটো বিষয়ে পাসের হার আকাশছোঁয়া। তার মানে কী? আমাদের শিক্ষার্থীর সৃজনশীল, তারা দেশের বাইরে গিয়ে কিংবা দেশেও বিভিন্নভাবে তাদের মেধার ও সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে অথচ তাদের সিস্টেম্যাটিক্যালি দুর্বল মূল্যায়নের দিক দিয়ে যেতে হয় আর তাদের ফল নিয়ে তাই অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। বিষয়টিতে নজর দেওয়া একান্তই প্রয়োজন।

[লেখক : প্রেসিডেন্ট, ইংলিশ টিচার্স

অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ]

দক্ষ মানবসম্পদ ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার

আফ্রিকায় হঠাৎ কেন যুক্তরাষ্ট্রের ঝোঁক?

ঢাকা মহানগর ও বুড়িগঙ্গা

জামাই মেলা : উৎসব, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির রঙিন চিত্রপট

হারিয়ে যাওয়া ক্লাস, কঠোর মূল্যায়ন আর প্রশ্নের জটিলতায় নুয়ে পড়া এক প্রজন্ম

বৈষম্য দূর করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলুন

চিকিৎসা যেন বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত না হয়

পথশিশু ও বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তির ব্যর্থতা

মেগা প্রকল্প : প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বচ্ছতা নিয়ে

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি

স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : উপগ্রহ চিত্র ও ওয়েবসাইটের অপরিহার্যতা

ক্ষমতা ও জনপ্রশাসন : আমলাতন্ত্রের ছায়াতলে আমজনতা

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

tab

উপ-সম্পাদকীয়

এসএসসির ফল শিক্ষার প্রকৃত মূল্যায়নের কথা বলে কি

মাছুম বিল্লাহ

শুক্রবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২২

দেশ করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো এসএসসি পরীক্ষায় বসল শিক্ষার্থীরা। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২০ লক্ষাধিক। প্রথম দিনে পরীক্ষা দিয়েছে ১৯ লাখ ৫ হাজারের কিছু বেশি। প্রথম দিন ৩৩ হাজার ৮৬০ জনের অনুপস্থিতির ঘটনা উদ্বেগজনক। ১৫ সেপ্টেম্বর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিনটি কেটেছিল নানা ঘটনা-অঘটনের মধ্য দিয়ে। এদিন কিছু কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হয়েছিল। ২৬ জন পরীক্ষার্থী প্রথম দিনই বহিষ্কৃত হয়েছিল অসদুপায় অবলম্বনের কারণে। নড়াইলে ভুল প্রশ্নপত্র দেওয়ার কারণে যশোর বোর্ডের বাংলা দ্বিতীয়পত্রের এমসিকিউ অংশের পরীক্ষাই স্থগিত করতে হয়েছিল। অন্যান্যবার সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হলেও এবার বেলা ১১টায় পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে তিরিশ মিনিট আগে কেন্দ্রে ঢুকতে হয়েছিল।

এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ২০২১ সালে মাধ্যমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষায় পৌনে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। এদের মধ্যে ৪৭ হাজার ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হয়েছিল এবং ৭৮ হাজার শিক্ষার্থী শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে। এই প্রতিবেদন পূর্ণাঙ্গ ছিল না কারণ মাত্র এগারো হাজার ৬৭৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য থেকে এ ফিগার এসেছিল যদিও আমাদের পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি। নিবন্ধন করার পর কোন শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকার অর্থ হলো শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোন কোন পরীক্ষার্থী গরহাজির থাকলে সেটি ভিন্নকথা। কিন্তু দারিদ্রের কারণে বাল্যবিয়ে হওয়া আর ছেলেদের শিশুশ্রমে নিযুক্ত হওয়া কিন্তু উদ্বেগের বিষয়। যারা শিক্ষার নয়টি ধাপ পেরিয়ে এসএসসি পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেছে তাদের প্রত্যেকে যাতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। করোনার ধাক্কা আমরা মোটামুটি কাটিয়ে ঊঠেছি কিন্তু করোনার যে অভিঘাত শিক্ষায় পড়েছে তা কাটিয়ে ঊঠতে আরও সময় লাগবে। এজন্য যেমন টেকসই কর্মসূচি নিতে হবে তেমনি তার বাস্তবায়নেও সবাইকে এগিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

মাধ্যমিকের এই পরীক্ষার্থীরা ২০২০ সালে নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া শুরুর মাত্র আড়াই মাসের মাথায় করোনার কারনে তাদের সরাসারি ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সালে দশম শ্রেণি শেষ করা পর্যন্ত সরাসরি ক্লাস করার সুযোগ তারা খুব কমই পেয়েছে। অনলাইন আর অ্যসাইনমেন্টভিত্তিক লেখাপড়াই ছিল তাদের প্রধান অবলম্বন। এরপরও তারা স্বাভাবিক সময় বা ২০১৯ ও ২০২০ সালের পরীক্ষার্থীদের চেয়ে এই ব্যাচটির পাসের হার বেশি। ২০১৯ সালের পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ আর ২০২০ সালে ছিল ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। শুধু পাসের হারে নয়, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যার তুলনায়ও এবার ভালো করেছে এই ব্যাচটি। এই ব্যাচকে করোনার ব্যাচ বলেই অভিহিত করেছেন কেউ কেউ। এই ব্যাচের পরীক্ষার্থীরা বেশ ভালো করেছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তারা জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালের পরীক্ষার্থীদের চেয়ে এদের পাসে০র হার বেশি। তবে গত বছরের তুলনায় এবার হার কমেছে। এসএসসিসহ ১১টি বোর্ডে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ; যা গত বছর ছিল ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আর সর্বোচ্চ সাফল্য হিসেবে বিবেচিত জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ শিক্ষার্থী। গত বছর ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল।

২০২০ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন আর ২০১৯ সালে এক লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন। অর্থাৎ গত বছর বা তিন বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করা শিক্ষার্থীদের তুলনায় পাসের হার কম হলেও আগের ৪ বছরের মধ্যে এবার পাসের হার সর্বোচ্চ। আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অতীতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। আমরা যারা শিক্ষা নিয়ে কাজ করি তাদের সামনের প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার পরেই একটি প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দেয় আর সেটি হচেছ কত শতাংশ পরীক্ষার্থী পাশ করেছে আর কত শতাংশ পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এই দুটো মানদন্ড কি আসলেই শিক্ষার কাক্সিক্ষত মানের কথা বলে? এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সাথে আন্তর্জাতিক পরীক্ষা হচ্ছে ‘ও’ লেভেল যেখানে কোন ধরনের প্রশ্ন রিপিট করা হয় না, যেখানে কোন ধরনের প্রশ্ন শুধু মুখস্ত করে কিংবা দেখাদেখি করে টিক দিয়ে পাশের হার কিংবা জিপিএ-৫-কে ভারি করা হয় না। একজন শিক্ষার্থী যখন ‘ও’ লেভেল পরীক্ষায় একটি বিষয়ে ‘এ’ প্লাস পায় তখন কোন ধরনের প্রশ্ন ছাড়া ধরে নেওয়া হয় যে, সে ওই বিষয়টিতে আসলেই ভালো। সে আন্তর্জাতিক যে কোন ধরনের কম্পিটিশনে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারে। আমাদের এসএসসির এ প্লাস কিন্তু সে কথা বলে না। এখানে এখনও প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটে, প্রশ্ন ফাঁস করা নিয়ে অনেকেই ব্যস্ত থাকে। এখন প্রশ্ন কমন পরানো নিয়ে অনেকেই পান্ডিত্য জাহির করে।

এখন একটু চোখ বুলানো যাক এবার পরীক্ষায় এত ভালো করার কী কী কারণ ছিল। এগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস। এছাড়া আছে প্রশ্নপত্রে অধিকসংখ্যক বিকল্প থেকে পছন্দের সুযোগ, ৫০-এর মধ্যে দেওয়া পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ১০০-তে রূপান্তর, কঠিন বিষয়ে অবলীলায় ৯০ শতাংশের ওপরে প্রাপ্তি এবং সাবজেক্ট ম্যাপিং।

গত বছরও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছিল। বাংলা, ইংরেজি, গণিতের মতো বিষয় বাদ দিয়ে কেবল বিজ্ঞান, বিজনেস স্টাডিজ আর মানবিকের ঐচ্ছিক তিন বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু এবার সংক্ষিপ্ত ঐচ্ছিক বিষয়ের সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, চতুর্থ বিষয়সহ নয়টি পত্রের পরীক্ষা নেওয়া হয়। গত বছর বাকি নয় বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং বা জেএসসি-জেডিসিতে প্রাপ্ত নম্বর প্রাপ্তির প্রবণতা অনুযায়ী নম্বর দেওয়া হয়। কিন্তু এবার এ সুযোগ দেওয়া হয় মাত্র তিন বিষয়ে। এবার যে তিন বিষয়কে সাবজেক্ট ম্যাপিংও আওতায় নেওয়া হয়, সেগুলো মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কঠিন বিষয়গুলোর একটি। যেহেতু এটি পরীক্ষায় বসতে হয়, তাই পাসের হার এবং জিপিএ-৫-এ ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

ইংরেজি ও গণিত মাধ্যমিক পর্যায়ে একটি ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কারণ এ দুটি বিষয়ে একমাত্র স্বনামধন্য কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিগুলোতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকই নেই। শিক্ষার্থীরা স্বভাবতই এ দুটি বিষয়ের দুর্বলতা নিয়ে উচ্চ-মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা স্তর পার করে। অথচ পাবলিক পরীক্ষা পাসের হারে কোন এক জাদুর পরশে দেখা যায় এ দুটো বিষয়ে পাসের হার আকাশছোঁয়া। তার মানে কী? আমাদের শিক্ষার্থীর সৃজনশীল, তারা দেশের বাইরে গিয়ে কিংবা দেশেও বিভিন্নভাবে তাদের মেধার ও সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে অথচ তাদের সিস্টেম্যাটিক্যালি দুর্বল মূল্যায়নের দিক দিয়ে যেতে হয় আর তাদের ফল নিয়ে তাই অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। বিষয়টিতে নজর দেওয়া একান্তই প্রয়োজন।

[লেখক : প্রেসিডেন্ট, ইংলিশ টিচার্স

অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ]

back to top