alt

উপ-সম্পাদকীয়

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা : বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অন্তরায়

ডোরিন চৌধুরি

: রোববার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২২

ইউক্রেন সংকটের পর থেকে স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী একটি বহুল আলোচিত শব্দ হয়ে উঠেছে। অনেকের মতে, এটি পশ্চিমা বিশ্বের জন্য তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যরাষ্ট্রকে বাধ্য করার একটি নতুন হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ইতোমধ্যে বিশ্বের আনাচে-কানাচে পৌঁছে গেছে। নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে বা লেনদেন মাধ্যম থেকে রাশিয়াকে বাদ দেয়ায় রাশিয়ার বিশ্বের অন্যান্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যও ব্যাহত হয়েছে।

তবে যাই হোক, রাশিয়া আর্থিক অবরোধ দ্রুত কাটিয়ে উঠেছে। চীন এবং রাশিয়াও তাদের নির্ভরতা কমাতে বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা খুঁজছে। মোটা দাগে, পশ্চিমা স্যাংশনগুলো বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানের পথ ক্রমশ জটিল করে তুলছে, এবং গ্রেট পাওয়ার বা পরাশক্তিগুলোর মাঝে দা-কুমড়া সম্পর্ক তৈরি করছে। গত দশক থেকে, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকার বিষয়ক স্যাংশন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এক দশক পর এই নিষেধাজ্ঞাগুলো খুব কম ক্ষেত্রেই সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। বরং এ ধরনের স্যাংশন মাল্টিল্যাটেরালিজম বা বহুপাক্ষিকতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞার এই ধরনের ওয়েপনাইজেশন বা অস্ত্রায়ণ আমাদের বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

সমষ্টিগত বৈশ্বিক সমস্যা কী? কালেক্টলিভ গ্লোবাল প্রবলেমস বা সমষ্টিগত বৈশ্বিক সমস্যা বলতে সেসব সমস্যাগুলোকে বোঝায় যা গোটাবিশ্ব একসঙ্গে মুখোমুখি হয়। এই ধরনের সমস্যাগুলো ইতোমধ্যে রয়েছে এবং প্রায় সব দেশেই এর প্রভাব পড়ছে। একবিংশ শতাব্দিতে মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র এমন ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। মানবাধিকারের অবক্ষয় এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের উল্টোযাত্রা আমাদের জন্য নতুন সমষ্টিগত বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

চলমান বৈশ্বিক মন্দা, পণ্য সংকট, এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতিও নতুন বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মহামারীর পর হতে। পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক ও মানবাধিকার বিষয়ক নিষেধাজ্ঞাগুলো পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। পশ্চিমাদের ‘ওয়ান সাইজ ফিটস অল’ বা ‘সবার জন্য একই সমাধান’-এর মতো বিশ্বাস গোটাবিশ্বে বরং বিভ্রান্তি বাড়াচ্ছে এবং সমস্যা সমাধানে বৈশ্বিক সহযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। চলমান জ্বালানি সংকট এরই ফল।

যাই হোক, যৌথ সমস্যা সমাধানের জন্য মাল্টিল্যাটেরালিজম বা বহুপাক্ষিকতা সর্বোত্তম পথ। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা এবং কর্তৃত্বের জন্য পরাশক্তিদের রেষারেষি বিশ্বে মেরুকরণ বয়ে আনছে এবং বহুপাক্ষিকতার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। নিষেধাজ্ঞার অস্ত্রায়ণ যুদ্ধকালীন নিষেধাজ্ঞাগুলো বৈশ্বিক মোড়লরা একটি হাতিয়ার হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল যেহেতু তারা বৈশ্বিক এবং দ্বিপক্ষীয় অর্থনীতিতে উল্লেখ যোগ্যভাবে অবদান রাখে।

১৯২০ ও ১৯৩০ এর দশকে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধ থামাতে বা যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়াতে সামরিক শক্তির বিকল্প হিসেবে এটি তৈরি করেছিল প্রতিপক্ষকে বাধ্য করার জন্য। তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের বিশ্বাস ছিল যে এটি যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়াতে একটি কার্যকর হাতিয়ার; কিন্তু এটি ১৯৩০-এর দশকে যুদ্ধ পরিস্থিতি বাদেও শান্তিকালীন এটি ব্যবহার করা হয়েছিল। ‘দ্য ইকোনমিক ওয়েপন : দ্য রাইজ অব স্যাংশনস অ্যাজ আ টুল অফ মডার্ন ওয়ার’-এর লেখক নিকোলাস মুলডারের মতে, মিত্রশক্তির নিষেধাজ্ঞার এ ধরনের ব্যবহার সেই সময়ে ইউরোপীয় ফ্যাসিবাদীদের আরও উগ্রবাদী করে তুলেছিল।

মুলডার মনে করেন বর্তমানেও পরিস্থিতি তখনকার পরিস্থিতির মতো একই রকম। গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়নের এই যুগে এবং বিশ্বব্যাপী একই অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রসার ঘটায় বর্তমানে দেশগুলোর মধ্যে একটি কমপ্লেক্স ইন্টারডিপেন্ডেন্স বা আন্তঃনির্ভরশীলতা তৈরি করেছে। এই আন্তঃনির্ভরশীলতা রাষ্ট্রগুলোকে তাদের বৈদেশিক ব্যবসা ও বিনিময় পরিচালনার জন্য একটি অভিন্ন কাঠামোর ওপর নির্ভর করে দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে সুইফটের মতো পেমেন্ট গেটওয়ে, আন্তঃব্যাংক ডলার ট্রানজেকশন ব্যবস্থার কথা বলা যেতে পারে। গোটা ব্যবস্থায় পশ্চিমাদের বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থাগুলোর যথেচ্ছা ব্যবহার এখন এটির সম্পর্কে সন্দিহান করে তুলছে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোকে। বিশেষ করে রাশিয়া এবং চীনকে। একই সঙ্গে এ ধরনের সন্দেহ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদকেও শক্তিশালী করে তুলছে। এবং আন্তঃনির্ভরশীলতা থাকায় কোন একটি দেশের বিরুদ্ধে দেয়া নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি সাধারণ মানুষকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।

উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসার পর থেকে নিষেধাজ্ঞার যথেচ্ছ ব্যবহার বাড়ে। নিজ স্বার্থে দেয়া নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা-নিষেধাজ্ঞা গোটা বিশ্বকে আরও জটিল করে তুলেছে। ২০১৬ এবং ২০১৯ এর মধ্যে, ট্রাম্পের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী মোট নিষেধাজ্ঞার ৪০% একাই দিয়েছিল। নিষেধাজ্ঞার ওপর মার্কিনীদের এমন নির্ভরতাও ধীরে ধীরে এটিকে একটি অস্ত্রে রূপান্তরিত করেছে। বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতিতেও নিষেধাজ্ঞার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যেহেতু তিনি গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারকে কেন্দ্র করে তার পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করেছেন।

প্রশ্নের মুখে নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা গত কয়েক বছরে, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকার বিষয়ক নিষেধাজ্ঞাগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এগুলোর অনেকগুলোই জনস্বার্থে ছিল না, বরং জাতীয় স্বার্থে দেয়া হয়েছিল। ফলে নিষেধাজ্ঞার ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রেই আরও ব্যাপক ভূমিকা রাখার জায়গা বন্ধ করে দিয়েছিল। যেমন- ২০১৭ সালে যখন গণহত্যা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা হয়েছিল, তখন পশ্চিমারা শুধুমাত্র মায়ানমারের জেনারেলদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছিল। পশ্চিমারা ভেবেছিল যে এটি তাদের লক্ষ্যপূরণ সহজতর করবে যেহেতু মায়ানমারে তাদের স্বার্থ রয়েছে। সমস্যার ৫ বছর পর মনে হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে পশ্চিমারা তখন আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারত। আবার ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশে র‌্যাব ও এর ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বাইডেন প্রশাসন। কিন্তু মনে হচ্ছে যে অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে মার্কিন মিত্রদের দ্বারা সংঘটিত লঙ্ঘনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

আব্দেল ফাত্তাহ সিসির মিশর কিংবা দখলদার ইসরায়েলের নির্মমতার বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোন স্যাংশনই দেখেনি বিশ্ব। বাইডেনের সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা পরিকল্পনা দেখে বোঝা যায় যে, এগুলো বিশ্ব অর্থনীতিকে ব্যবহার করেই নির্মিত। উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়াকে বৈশ্বিক লেনদেন প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেয়ার চেষ্টা করেছিল।

অর্থাৎ একঘরে করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। চীন এবং রাশিয়া উভয়ই বিষয়টি অনুধাবন করেছে ইতোমধ্যে এবং এটি এড়াতে একটি বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করছে। রুবেল এবং ইউয়ানকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা এই ধরনের চেষ্টারই একটি উদাহরণ। তাই বলা যায় যে, নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব রাজনীতিতে বিভ্রান্তি ও অশান্তি সৃষ্টি করছে। ফলে কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাগুলো কেবল জাতিগুলোর মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করেছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাকফায়ার করেছে বা হিতে বিপরীত হয়েছে।

গ্লোবাল স্যাংশন ডেটাবেজ নামক একটি সংস্থা ১৯৫০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ১১০০টি নিষেধাজ্ঞা নথিভুক্ত করেছে। ডাটাবেজটি বিশ্লেষণ করে বলছে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলোর সবচেয়ে বেশি ছিল মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রকেন্দ্রিক নিষেধাজ্ঞা। যাই হোক, মাত্র ৪২% ক্ষেত্রেই নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে সফল হয়েছিল। অর্থাৎ একটি বড় অংশই ব্যর্থ হয়েছে উদ্দেশ্য সফলে। নিষেধাজ্ঞা কি তবে একটি অন্তরায়?

গত এক দশকে স্বার্থসংশ্লিষ্ট নিষেধাজ্ঞা জনসাধারণের কল্যাণ বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু এটি বিশ্ব রাজনীতিতে আরও মেরুকরণ করছে। এটি পরাশক্তিগুলোর মধ্যে বিদ্যমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো সম্পর্কেও অবিশ্বাস তৈরি করেছে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও পরাশক্তিগুলোর মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। রাশিয়া ও চীনের মতো শক্তিগুলো এর মোকাবিলায় বিকল্প অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য হচ্ছে। এ ধরনের কর্ম ও পাল্টা-পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির অভিন্নতাকেও চ্যালেঞ্জ করছে। আবার ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস ও মেরুকরণের কারণে বহুপাক্ষিকতা সংকটের মুখে পড়েছে। চলমান অর্থনৈতিক মন্দা, মহামারী পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলার জন্য বহুপাক্ষিক সমাধান খোঁজা প্রয়োজন।

কিন্তু অবিশ্বাস এই সমাধান খোঁজার চেষ্টাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। সুতরাং নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্ব অর্থনীতির যথেচ্ছ ব্যবহার আমাদের সম্মিলিত বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর জন্যও চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। অতএব নিষেধাজ্ঞাগুলো পরিষেবার চেয়ে বড় ক্ষতি করছে।

শান্তির সময় নিষেধাজ্ঞা একটি হাতিয়ার হওয়া উচিত নয়। সামরিক সংঘাত এড়াতে এটি শুধুমাত্র যুদ্ধকালীনের জন্য সংরক্ষিত থাকা উচিত। নিষেধাজ্ঞার অস্ত্রায়ণ এবং বিশ্ব অর্থনীতির এক তরফা ‘অপব্যবহার’ এবং শান্তিকালীন এর ব্যবহার আমাদের বহুপাক্ষিকতাকে হুমকির মুখে ফেলে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে, এটি বিদ্যমান বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য একটি গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে। যেহেতু বিশ্ব একটি কঠিন সময় পার করছে, সংকট নিরসনে পরাশক্তিগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। কেননা তাদের সিদ্ধান্তগুলো সমস্ত দেশকে প্রভাবিত করে- এ যেন রাজায় রাজায় যুদ্ধ, উলুখাগড়ার প্রাণান্ত!

[লেখক : ডক্টরাল গবেষক, গ্রোনিয়েন বিশ্ববিদ্যালয়, নেদারল্যান্ডস]

বিয়ের কিছু লোকাচার ও অপব্যয় প্রসঙ্গে

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে রক্ষা করুন

তরুণদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব

শিশুমৃত্যু রোধে করণীয় কী

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও মনঃসমীক্ষণ

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও বাস্তবতা

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনি প্রতিকার ও বাস্তবতা

তথ্য-উপাত্তের গরমিলে বাজারে অস্থিরতা, অর্থনীতিতে বিভ্রান্তি

দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব

ইরানে কট্টরপন্থার সাময়িক পরাজয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কী

ক্ষমতার সাতকাহন

জলবায়ু সংকট : আমাদের উপলব্ধি

নারী-পুরুষ চুড়ি পরি, দেশের অন্যায় দূর করি!

ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার

ছবি

সাধারণ মানুষেরা বড় অসাধারণ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও কারিগরি শিক্ষা

মাদক রুখতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

পারিবারিক অপরাধপ্রবণতা ও কয়েকটি প্রশ্ন

ডারউইনকে খুঁজে পেয়েছি

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফসল উৎপাদন করা জরুরি

পিএসসি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াবে কীভাবে

এত উন্নয়নের পরও বাসযোগ্যতায় কেন পিছিয়েই থাকছে ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য কি কেউ নেই?

জলবায়ু রক্ষায় কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে

অধরার হাতে সমর্পিত ক্ষমতা

প্রসঙ্গ : কোটাবিরোধী আন্দোলন

রম্যগদ্য : যে করিবে চালাকি, বুঝিবে তার জ্বালা কী

একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলার পরিণতি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কেন শ্রেণীকক্ষের বাইরে

মেধা নিয়ে কম মেধাবীর ভাবনা

প্রজাতন্ত্রের সেবক কেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বনে যান

ছবি

বাইডেন কি দলে বোঝা হয়ে যাচ্ছেন?

ছবি

দুই যুগের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সাপ উপকারী প্রাণীও বটে!

ছবি

বাস্তববাদী রাজনীতিক জ্যোতি বসু

tab

উপ-সম্পাদকীয়

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা : বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অন্তরায়

ডোরিন চৌধুরি

রোববার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২২

ইউক্রেন সংকটের পর থেকে স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী একটি বহুল আলোচিত শব্দ হয়ে উঠেছে। অনেকের মতে, এটি পশ্চিমা বিশ্বের জন্য তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যরাষ্ট্রকে বাধ্য করার একটি নতুন হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ইতোমধ্যে বিশ্বের আনাচে-কানাচে পৌঁছে গেছে। নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে বা লেনদেন মাধ্যম থেকে রাশিয়াকে বাদ দেয়ায় রাশিয়ার বিশ্বের অন্যান্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যও ব্যাহত হয়েছে।

তবে যাই হোক, রাশিয়া আর্থিক অবরোধ দ্রুত কাটিয়ে উঠেছে। চীন এবং রাশিয়াও তাদের নির্ভরতা কমাতে বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা খুঁজছে। মোটা দাগে, পশ্চিমা স্যাংশনগুলো বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানের পথ ক্রমশ জটিল করে তুলছে, এবং গ্রেট পাওয়ার বা পরাশক্তিগুলোর মাঝে দা-কুমড়া সম্পর্ক তৈরি করছে। গত দশক থেকে, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকার বিষয়ক স্যাংশন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এক দশক পর এই নিষেধাজ্ঞাগুলো খুব কম ক্ষেত্রেই সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। বরং এ ধরনের স্যাংশন মাল্টিল্যাটেরালিজম বা বহুপাক্ষিকতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞার এই ধরনের ওয়েপনাইজেশন বা অস্ত্রায়ণ আমাদের বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

সমষ্টিগত বৈশ্বিক সমস্যা কী? কালেক্টলিভ গ্লোবাল প্রবলেমস বা সমষ্টিগত বৈশ্বিক সমস্যা বলতে সেসব সমস্যাগুলোকে বোঝায় যা গোটাবিশ্ব একসঙ্গে মুখোমুখি হয়। এই ধরনের সমস্যাগুলো ইতোমধ্যে রয়েছে এবং প্রায় সব দেশেই এর প্রভাব পড়ছে। একবিংশ শতাব্দিতে মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র এমন ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। মানবাধিকারের অবক্ষয় এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের উল্টোযাত্রা আমাদের জন্য নতুন সমষ্টিগত বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

চলমান বৈশ্বিক মন্দা, পণ্য সংকট, এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতিও নতুন বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মহামারীর পর হতে। পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক ও মানবাধিকার বিষয়ক নিষেধাজ্ঞাগুলো পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। পশ্চিমাদের ‘ওয়ান সাইজ ফিটস অল’ বা ‘সবার জন্য একই সমাধান’-এর মতো বিশ্বাস গোটাবিশ্বে বরং বিভ্রান্তি বাড়াচ্ছে এবং সমস্যা সমাধানে বৈশ্বিক সহযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। চলমান জ্বালানি সংকট এরই ফল।

যাই হোক, যৌথ সমস্যা সমাধানের জন্য মাল্টিল্যাটেরালিজম বা বহুপাক্ষিকতা সর্বোত্তম পথ। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা এবং কর্তৃত্বের জন্য পরাশক্তিদের রেষারেষি বিশ্বে মেরুকরণ বয়ে আনছে এবং বহুপাক্ষিকতার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। নিষেধাজ্ঞার অস্ত্রায়ণ যুদ্ধকালীন নিষেধাজ্ঞাগুলো বৈশ্বিক মোড়লরা একটি হাতিয়ার হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল যেহেতু তারা বৈশ্বিক এবং দ্বিপক্ষীয় অর্থনীতিতে উল্লেখ যোগ্যভাবে অবদান রাখে।

১৯২০ ও ১৯৩০ এর দশকে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধ থামাতে বা যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়াতে সামরিক শক্তির বিকল্প হিসেবে এটি তৈরি করেছিল প্রতিপক্ষকে বাধ্য করার জন্য। তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের বিশ্বাস ছিল যে এটি যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়াতে একটি কার্যকর হাতিয়ার; কিন্তু এটি ১৯৩০-এর দশকে যুদ্ধ পরিস্থিতি বাদেও শান্তিকালীন এটি ব্যবহার করা হয়েছিল। ‘দ্য ইকোনমিক ওয়েপন : দ্য রাইজ অব স্যাংশনস অ্যাজ আ টুল অফ মডার্ন ওয়ার’-এর লেখক নিকোলাস মুলডারের মতে, মিত্রশক্তির নিষেধাজ্ঞার এ ধরনের ব্যবহার সেই সময়ে ইউরোপীয় ফ্যাসিবাদীদের আরও উগ্রবাদী করে তুলেছিল।

মুলডার মনে করেন বর্তমানেও পরিস্থিতি তখনকার পরিস্থিতির মতো একই রকম। গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়নের এই যুগে এবং বিশ্বব্যাপী একই অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রসার ঘটায় বর্তমানে দেশগুলোর মধ্যে একটি কমপ্লেক্স ইন্টারডিপেন্ডেন্স বা আন্তঃনির্ভরশীলতা তৈরি করেছে। এই আন্তঃনির্ভরশীলতা রাষ্ট্রগুলোকে তাদের বৈদেশিক ব্যবসা ও বিনিময় পরিচালনার জন্য একটি অভিন্ন কাঠামোর ওপর নির্ভর করে দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে সুইফটের মতো পেমেন্ট গেটওয়ে, আন্তঃব্যাংক ডলার ট্রানজেকশন ব্যবস্থার কথা বলা যেতে পারে। গোটা ব্যবস্থায় পশ্চিমাদের বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থাগুলোর যথেচ্ছা ব্যবহার এখন এটির সম্পর্কে সন্দিহান করে তুলছে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোকে। বিশেষ করে রাশিয়া এবং চীনকে। একই সঙ্গে এ ধরনের সন্দেহ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদকেও শক্তিশালী করে তুলছে। এবং আন্তঃনির্ভরশীলতা থাকায় কোন একটি দেশের বিরুদ্ধে দেয়া নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি সাধারণ মানুষকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।

উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসার পর থেকে নিষেধাজ্ঞার যথেচ্ছ ব্যবহার বাড়ে। নিজ স্বার্থে দেয়া নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা-নিষেধাজ্ঞা গোটা বিশ্বকে আরও জটিল করে তুলেছে। ২০১৬ এবং ২০১৯ এর মধ্যে, ট্রাম্পের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী মোট নিষেধাজ্ঞার ৪০% একাই দিয়েছিল। নিষেধাজ্ঞার ওপর মার্কিনীদের এমন নির্ভরতাও ধীরে ধীরে এটিকে একটি অস্ত্রে রূপান্তরিত করেছে। বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতিতেও নিষেধাজ্ঞার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যেহেতু তিনি গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারকে কেন্দ্র করে তার পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করেছেন।

প্রশ্নের মুখে নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা গত কয়েক বছরে, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকার বিষয়ক নিষেধাজ্ঞাগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এগুলোর অনেকগুলোই জনস্বার্থে ছিল না, বরং জাতীয় স্বার্থে দেয়া হয়েছিল। ফলে নিষেধাজ্ঞার ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রেই আরও ব্যাপক ভূমিকা রাখার জায়গা বন্ধ করে দিয়েছিল। যেমন- ২০১৭ সালে যখন গণহত্যা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা হয়েছিল, তখন পশ্চিমারা শুধুমাত্র মায়ানমারের জেনারেলদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছিল। পশ্চিমারা ভেবেছিল যে এটি তাদের লক্ষ্যপূরণ সহজতর করবে যেহেতু মায়ানমারে তাদের স্বার্থ রয়েছে। সমস্যার ৫ বছর পর মনে হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে পশ্চিমারা তখন আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারত। আবার ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশে র‌্যাব ও এর ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বাইডেন প্রশাসন। কিন্তু মনে হচ্ছে যে অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে মার্কিন মিত্রদের দ্বারা সংঘটিত লঙ্ঘনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

আব্দেল ফাত্তাহ সিসির মিশর কিংবা দখলদার ইসরায়েলের নির্মমতার বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোন স্যাংশনই দেখেনি বিশ্ব। বাইডেনের সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা পরিকল্পনা দেখে বোঝা যায় যে, এগুলো বিশ্ব অর্থনীতিকে ব্যবহার করেই নির্মিত। উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়াকে বৈশ্বিক লেনদেন প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেয়ার চেষ্টা করেছিল।

অর্থাৎ একঘরে করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। চীন এবং রাশিয়া উভয়ই বিষয়টি অনুধাবন করেছে ইতোমধ্যে এবং এটি এড়াতে একটি বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করছে। রুবেল এবং ইউয়ানকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা এই ধরনের চেষ্টারই একটি উদাহরণ। তাই বলা যায় যে, নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব রাজনীতিতে বিভ্রান্তি ও অশান্তি সৃষ্টি করছে। ফলে কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাগুলো কেবল জাতিগুলোর মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করেছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাকফায়ার করেছে বা হিতে বিপরীত হয়েছে।

গ্লোবাল স্যাংশন ডেটাবেজ নামক একটি সংস্থা ১৯৫০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ১১০০টি নিষেধাজ্ঞা নথিভুক্ত করেছে। ডাটাবেজটি বিশ্লেষণ করে বলছে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলোর সবচেয়ে বেশি ছিল মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রকেন্দ্রিক নিষেধাজ্ঞা। যাই হোক, মাত্র ৪২% ক্ষেত্রেই নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে সফল হয়েছিল। অর্থাৎ একটি বড় অংশই ব্যর্থ হয়েছে উদ্দেশ্য সফলে। নিষেধাজ্ঞা কি তবে একটি অন্তরায়?

গত এক দশকে স্বার্থসংশ্লিষ্ট নিষেধাজ্ঞা জনসাধারণের কল্যাণ বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু এটি বিশ্ব রাজনীতিতে আরও মেরুকরণ করছে। এটি পরাশক্তিগুলোর মধ্যে বিদ্যমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো সম্পর্কেও অবিশ্বাস তৈরি করেছে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও পরাশক্তিগুলোর মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। রাশিয়া ও চীনের মতো শক্তিগুলো এর মোকাবিলায় বিকল্প অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য হচ্ছে। এ ধরনের কর্ম ও পাল্টা-পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির অভিন্নতাকেও চ্যালেঞ্জ করছে। আবার ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস ও মেরুকরণের কারণে বহুপাক্ষিকতা সংকটের মুখে পড়েছে। চলমান অর্থনৈতিক মন্দা, মহামারী পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলার জন্য বহুপাক্ষিক সমাধান খোঁজা প্রয়োজন।

কিন্তু অবিশ্বাস এই সমাধান খোঁজার চেষ্টাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। সুতরাং নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্ব অর্থনীতির যথেচ্ছ ব্যবহার আমাদের সম্মিলিত বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর জন্যও চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। অতএব নিষেধাজ্ঞাগুলো পরিষেবার চেয়ে বড় ক্ষতি করছে।

শান্তির সময় নিষেধাজ্ঞা একটি হাতিয়ার হওয়া উচিত নয়। সামরিক সংঘাত এড়াতে এটি শুধুমাত্র যুদ্ধকালীনের জন্য সংরক্ষিত থাকা উচিত। নিষেধাজ্ঞার অস্ত্রায়ণ এবং বিশ্ব অর্থনীতির এক তরফা ‘অপব্যবহার’ এবং শান্তিকালীন এর ব্যবহার আমাদের বহুপাক্ষিকতাকে হুমকির মুখে ফেলে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে, এটি বিদ্যমান বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য একটি গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে। যেহেতু বিশ্ব একটি কঠিন সময় পার করছে, সংকট নিরসনে পরাশক্তিগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। কেননা তাদের সিদ্ধান্তগুলো সমস্ত দেশকে প্রভাবিত করে- এ যেন রাজায় রাজায় যুদ্ধ, উলুখাগড়ার প্রাণান্ত!

[লেখক : ডক্টরাল গবেষক, গ্রোনিয়েন বিশ্ববিদ্যালয়, নেদারল্যান্ডস]

back to top