alt

উপ-সম্পাদকীয়

মুক্তির সংগ্রামে বুদ্ধিজীবীদের অবদান

আর কে চৌধুরী

: মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর হিসেবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানি হানাদারদের জিঘাংসার প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়। বাঙালি জাতির জাগরণে অগ্রণী ভূমিকার কারণে বুদ্ধিজীবীদের নিধন করা হয় সুপরিকল্পিতভাবে। ২৫ মার্চ রাতেই প্রাণ হারান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা অধ্যাপকসহ শতাধিক বুদ্ধিজীবী। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে ধারাবাহিকভাবে এ হত্যাকান্ড অব্যাহত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয়ের মাত্র এক দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর আলবদর বাহিনীর সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে ব্যাপকসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে।

বুদ্ধিজীবীরা হলেন জাতির বিবেক। তারা অন্ধকারে আলো জ্বালান। একটি জাতিকে মেধাগত দিক থেকে এগিয়ে নেন। পাকিস্তানিরা ও তাদের বশংবদরা এটিকে অপরাধ বলে ভেবেছিল। যে কারণে মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন তাদের প্রতিহিংসার শিকার। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোয় যখন পাকিস্তানিদের পরাজয় অনিবার্য হয়ে ওঠে তখনো জোরেশোরে চলে বুদ্ধিজীবী হত্যা। এমনকি পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের দুই দিন আগেও বেশ কজন বুদ্ধিজীবীকে চোখ বেঁধে তাদের বাসভবন থেকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর সদস্যরা। রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাদের চোখ ও হাত বাঁধা ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়।

পরাধীনতার গ্লানি মুছে বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণে আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছিলেন এ দেশের বুদ্ধিজীবীরা। মুক্তির সংগ্রাম আর বিজয় অর্জনের পথেও বুদ্ধিজীবীদের অবদান ছিল অসামান্য। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই তারা পাকিস্তানিদের মুখোশ খুলে দিতে শুরু করেন এবং পাকিস্তানিদের সীমাহীন শোষণ ও বৈষম্যের নানা দিক তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে জাগিয়ে তোলেন। তাই তারা পাকিস্তানি শাসক ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন। ৯ মাস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েও খুনিরা যখন বুঝে যায় পরাজয় আসন্ন তখন তারা বাঙালি জাতিকে মেধা ও মননে পঙ্গু করে দেওয়ার শেষ অপচেষ্টায় নামে। তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত বুদ্ধিজীবীদের ওপর। আর এ কাজে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চেয়েও বেশি নির্মমতার পরিচয় দেয় জামায়াতে ইসলামীর অনুসারীরা এবং তাদের নিয়ে গঠিত রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে এনে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দেশে যে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল তার প্রমাণ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো। এগুলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পরের প্রজন্মের যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখতে উদ্যোগী হবেন তখন তাদের জন্য এসব গণকবর ও বধ্যভূমি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে, এতে সন্দেহ নেই। সর্বোপরি দেশের জন্য যারা সেদিন প্রাণ হারিয়েছিলেন তাদের আত্মত্যাগের স্মৃতি চিরজাগরুক রাখা জাতি হিসেবেই আমাদের অনিবার্য কর্তব্য।

বড়ই পরিতাপের বিষয়, এ কর্তব্যটি আমরা যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারিনি। এখনো দেশের সবগুলো গণকবর ও বধ্যভূমি শনাক্ত করা যায়নি। যেগুলো শনাক্ত করা হয়েছে তার সবগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি। যেগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে তার বেশির ভাগেরই অবস্থা প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পরিচর্যার ব্যবস্থা না থাকায় বেহাল। ফলে দেশের গণকবর ও বধ্যভূমির সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। জনবসতির সম্প্রসারণ, অবকাঠামো নির্মাণ ও ভূমিদখলের প্রবণতায় দেশের বহু গণকবর ও বধ্যভূমি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এছাড়া অনেক জায়গায় গণকবর ও বধ্যভূমিতে কোনো স্মৃতিসৌধ নির্মাণ বা সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিয়ে শুধু জায়গাটি শনাক্ত করে এ বিষয়ে নির্দেশিকা দিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে অনেক জায়গা বেদখল হয়েছে বা দখলের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তাই এখন সময় এসেছে বধ্যভূমিগুলো সংস্কারের।

[লেখক : মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা]

কেন এত তরুণ দেশ ছাড়তে চাচ্ছে

রেলওয়ে পরিচালনায় আমলাতন্ত্রের প্রভাব

রম্যগদ্য : ‘গোপালগঞ্জ, বাংলার গোপালগঞ্জ...’

দেশি মাছ রক্ষায় অভয়াশ্রম

আলুর বাজার বিপর্যয় : কৃষকের ভাগ্যে লোকসান

ছবি

নীল নদের পানি নীল নয়

বিশ্ব বাঘ দিবস

ঢাকার কি রিস্ক এনালাইসিস করা আছে?

ছবি

সোনার হরফে লেখা অনন্য শিক্ষকের নাম

পরীক্ষার পর পরীক্ষা, কিন্তু কোথায় মূল্যায়ন ও মূল্যবোধের ভিত্তি?

বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেন বাদ কেন?

সময়ের স্বৈরতন্ত্র : প্রতীক্ষা, ক্ষমতা ও জীবনের অসমতা

জলবায়ু পরিবর্তন মডেলে গণিতের ব্যবহার

দুর্ঘটনাজনিত দুর্যোগ-পরবর্তী করণীয় কী?

ডেঙ্গু, জিকা আর চিকুনগুনিয়া : একই উৎস, ত্রিমুখী সংকট

কেন থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?

দুর্নীতি নির্মূল করা কি সম্ভব?

দরকার মানসম্মত শিক্ষা

ইসরায়েলের যুদ্ধনীতি ও বিশ্ব নিরাপত্তার সংকট

রম্যগদ্য : ‘বেইমান রাইট ব্রাদার্স’

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা : আইনি কাঠামো, সংকট ও সম্ভাবনার দিক

ছবি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

দুর্যোগে অবিবেচকদেরকে কি দায়িত্বশীল ভাবা যায়?

ওয়াসার পদ্মা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট : এক জীবন্ত বোটানিক্যাল গার্ডেন

রেলপথের দুর্দশা : সমন্বিত পরিকল্পনা না হলে বিপর্যয় অনিবার্য

বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র নাকি ক্ষমতার অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ?

পিরোজপুরের স্কুলটির ফলাফল বিপর্যয় এবং আচরণগত অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ

কোনো শাসকই অপরাজেয় নয়

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি : বাঙালিকে রুচির দৈন্যে টেনে নামানো হচ্ছে

জনসংখ্যা ও যুবশক্তির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

রাষ্ট্রের কাছে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই

পার্বত্য চট্টগ্রাম : প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

ইউরেশিয়ায় তৃতীয় বিকল্প গালফ কূটনীতি

‘বিপ্লবী সংস্কার’ কি সম্ভব

রম্যগদ্য : ‘ব্যাংক, ব্যাংক নয়’

মবতন্ত্রের জয়

tab

উপ-সম্পাদকীয়

মুক্তির সংগ্রামে বুদ্ধিজীবীদের অবদান

আর কে চৌধুরী

মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর হিসেবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানি হানাদারদের জিঘাংসার প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়। বাঙালি জাতির জাগরণে অগ্রণী ভূমিকার কারণে বুদ্ধিজীবীদের নিধন করা হয় সুপরিকল্পিতভাবে। ২৫ মার্চ রাতেই প্রাণ হারান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা অধ্যাপকসহ শতাধিক বুদ্ধিজীবী। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে ধারাবাহিকভাবে এ হত্যাকান্ড অব্যাহত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয়ের মাত্র এক দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর আলবদর বাহিনীর সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে ব্যাপকসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে।

বুদ্ধিজীবীরা হলেন জাতির বিবেক। তারা অন্ধকারে আলো জ্বালান। একটি জাতিকে মেধাগত দিক থেকে এগিয়ে নেন। পাকিস্তানিরা ও তাদের বশংবদরা এটিকে অপরাধ বলে ভেবেছিল। যে কারণে মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন তাদের প্রতিহিংসার শিকার। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোয় যখন পাকিস্তানিদের পরাজয় অনিবার্য হয়ে ওঠে তখনো জোরেশোরে চলে বুদ্ধিজীবী হত্যা। এমনকি পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের দুই দিন আগেও বেশ কজন বুদ্ধিজীবীকে চোখ বেঁধে তাদের বাসভবন থেকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর সদস্যরা। রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাদের চোখ ও হাত বাঁধা ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়।

পরাধীনতার গ্লানি মুছে বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণে আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছিলেন এ দেশের বুদ্ধিজীবীরা। মুক্তির সংগ্রাম আর বিজয় অর্জনের পথেও বুদ্ধিজীবীদের অবদান ছিল অসামান্য। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই তারা পাকিস্তানিদের মুখোশ খুলে দিতে শুরু করেন এবং পাকিস্তানিদের সীমাহীন শোষণ ও বৈষম্যের নানা দিক তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে জাগিয়ে তোলেন। তাই তারা পাকিস্তানি শাসক ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন। ৯ মাস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েও খুনিরা যখন বুঝে যায় পরাজয় আসন্ন তখন তারা বাঙালি জাতিকে মেধা ও মননে পঙ্গু করে দেওয়ার শেষ অপচেষ্টায় নামে। তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত বুদ্ধিজীবীদের ওপর। আর এ কাজে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চেয়েও বেশি নির্মমতার পরিচয় দেয় জামায়াতে ইসলামীর অনুসারীরা এবং তাদের নিয়ে গঠিত রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে এনে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দেশে যে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল তার প্রমাণ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো। এগুলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পরের প্রজন্মের যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখতে উদ্যোগী হবেন তখন তাদের জন্য এসব গণকবর ও বধ্যভূমি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে, এতে সন্দেহ নেই। সর্বোপরি দেশের জন্য যারা সেদিন প্রাণ হারিয়েছিলেন তাদের আত্মত্যাগের স্মৃতি চিরজাগরুক রাখা জাতি হিসেবেই আমাদের অনিবার্য কর্তব্য।

বড়ই পরিতাপের বিষয়, এ কর্তব্যটি আমরা যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারিনি। এখনো দেশের সবগুলো গণকবর ও বধ্যভূমি শনাক্ত করা যায়নি। যেগুলো শনাক্ত করা হয়েছে তার সবগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি। যেগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে তার বেশির ভাগেরই অবস্থা প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পরিচর্যার ব্যবস্থা না থাকায় বেহাল। ফলে দেশের গণকবর ও বধ্যভূমির সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। জনবসতির সম্প্রসারণ, অবকাঠামো নির্মাণ ও ভূমিদখলের প্রবণতায় দেশের বহু গণকবর ও বধ্যভূমি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এছাড়া অনেক জায়গায় গণকবর ও বধ্যভূমিতে কোনো স্মৃতিসৌধ নির্মাণ বা সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিয়ে শুধু জায়গাটি শনাক্ত করে এ বিষয়ে নির্দেশিকা দিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে অনেক জায়গা বেদখল হয়েছে বা দখলের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তাই এখন সময় এসেছে বধ্যভূমিগুলো সংস্কারের।

[লেখক : মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা]

back to top