alt

উপ-সম্পাদকীয়

নিয়মের বেড়াজালে ‘অপারেশন জ্যাকপট’

বশীর আহমেদ

: শনিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৩

‘অপারেশন জ্যাকপট হলো মানবযুদ্ধের ইতিহাসে সবচাইতে ব্যাপক ও সমকালীন নৌ-কমান্ডো অপারেশনগুলোর একটি।’

এই মূল্যায়ন বিশ্বের সুবিখ্যাত নৌ-সমরবিদদের; যা করে দেখিয়েছে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা একাত্তরের রক্তঝরা রণাঙ্গনে। নৌ-যুদ্ধের অতি সংক্ষিপ্ত কমান্ডো প্রশিক্ষণ আর সমরাস্ত্র বলতে লিম্পেট মাইন, কমান্ডো নাইফ এবং সাঁতারের ফিন্স নিয়ে মুক্তিবাহিনীর অকুতোভয় নৌ-কমান্ডোরা সুপ্রশিক্ষিত পেশাদার পাকিস্তানি নেভাল সার্ভিসকে চরমভাবে নাস্তানাবুদ করেছেন এই বাংলার সাগর সীমানায়।

মুক্তিযুদ্ধের দুনিয়া কাঁপানো সেই অপারেশন জ্যাকপট এখন সারাপৃথিবীর নেভাল একাডেমিগুলো সবচাইতে রিচ সাবজেক্ট হিসেবে শিক্ষার্থী ক্যাডেটদের পড়িয়ে থাকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই গৌরবোজ্জ্বল ইভেন্টে নৌ-কমান্ডোদের আত্মত্যাগের কথা অনেক আগেই সেলুলয়েডবন্দী হতে পারত। কিন্তু আত্মবিস্মৃতির ধারাবাহিকতায় উদ্যোগের অভাবে তা হয়নি।

কেন হয়নি সেই উত্তর খুঁজলে- এটা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এখন যে নাটকীয়তা চলছে, তার সুলুক সন্ধান করলেই বোধকরি বুঝে নেয়া যাবে।

স্বনামধন্য ফিল্মমেকার বলা হলেও মূলত বাইজি নাচের পোশাকি সিনেমার সফল পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর মতো একজন পরিচালক এবং প্রযোজনা সংস্থা- কিবরিয়া ফিল্মস এই ঐতিহাসিক আর্ট ফিল্মের জন্য মনোনীত হতে চলেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও সূর্য দীঘল বাড়ীর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জনকারী ফিল্ম প্রযোজনাকারী প্রতিষ্ঠান এই ছবি তৈরিতে অংশ নিতে আগ্রহী ছিলেন।

আরও শোনা যাচ্ছে ঠুনকো অজুহাতে তাদের খেদিয়ে ঝন্টু দাদা জিন্দাবাদ হতে চলেছে!

অপারেশন জ্যাকপট পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালেই, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে আর চট্টগ্রাম পোর্টের অর্থায়নে। এজন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছিল যথারীতি। ছবির শুভ মহরতের দিনক্ষণও নির্ধারিত হয়েছিল। কিন্তু ‘আমলা-জটিলতা’র ঘোরপ্যাচে ফেলে অনাহুত কূটকৌশল খাটিয়ে তা আর বাস্তবের মুখ দেখতে দেয়া হয়নি।

অতঃপর বুড়িগঙ্গায় পানি গড়িয়েছে অনেক। একজন সংশপ্তক- যিনি এর স্বপ্নদ্রষ্টা, তবু তিনি হাল ছাড়েননি। ফলে অপারেশন জ্যাকপট চলচ্চিত্রের জন্য আবারও টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। এবং কাকতালীয়ভাবে, ঠিক আগের মতোই অযৌক্তিক কিছু নতুন অজুহাতের আলামত আগের মতোই ফনা তুলেছে- যেন এটা মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র হতে না পারে। যেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার চাইতে এটি হয় ঝন্টু দাদার ট্রেডিশনাল বাইজি নাচের গোলমেলে হৈ-হুজ্জোত।

জাতীয় পুরাকীর্তি অথবা ইতিহাস অনুসন্ধান ও সংরক্ষণে নিশ্চয়ই ব্যতিক্রমী বিধিবিধান রয়েছে; যেখানে সাধারণত প্রচলিত বিধানগুলো প্রয়োগ নিষ্প্রয়োজন। তা না হলে শুধুমাত্র ১ টাকা বাজার মূল্যমানের তাম্রমুদ্রা খুঁজতে লাখো টাকা খরচ করা সম্ভব হতো না। বলাবাহুল্য, আলোচ্য চলচ্চিত্র নিঃসন্দেহে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন। এর বেলায় ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের আটপৌরে বিধান প্রযোজ্য হওয়ার কথা নয়। তবুও বিধিবিধান যাদের পছন্দ, তাদের সন্তুষ্টি বিধানে তা মানা যেতে পারে কেবল ওইটুকুই; যা মূল কাজের অন্তরায় যেন না ঘটায়।

কিন্তু যতদূর জানা গেছে, এই চলচ্চিত্রের উদ্যোমী অবহাওয়া এক খোঁড়া অজুহাত সামনে এনে অনিশ্চিতির মুখে ফেলার জবর আয়োজন সম্পন্নের পথে। ফলে আবারও ব্যর্থ হতে চলেছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অপারেশন জ্যাকপট নির্মানের ক্লান্তিহীন যোদ্ধা একজন জনপ্রিয় বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিকের প্রায় অর্ধযুগের সীমাহীন পেরেশানি।

এটা নিয়ে কিছু লিখতে আর ইচ্ছেও করে না। লিখে কলম ভোঁতা হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাধিকারীকরা এই করে কী মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল নৌ-কমান্ডো অপারেশন জ্যাকপট অবলম্বনে আর্টফিল্ম বানাবেন- ভাবতেও অবাক লাগে।

[লেখক: সাংবাদিক]

চিকিৎসা যেন বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত না হয়

পথশিশু ও বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তির ব্যর্থতা

মেগা প্রকল্প : প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বচ্ছতা নিয়ে

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি

স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : উপগ্রহ চিত্র ও ওয়েবসাইটের অপরিহার্যতা

ক্ষমতা ও জনপ্রশাসন : আমলাতন্ত্রের ছায়াতলে আমজনতা

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নিয়মের বেড়াজালে ‘অপারেশন জ্যাকপট’

বশীর আহমেদ

শনিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৩

‘অপারেশন জ্যাকপট হলো মানবযুদ্ধের ইতিহাসে সবচাইতে ব্যাপক ও সমকালীন নৌ-কমান্ডো অপারেশনগুলোর একটি।’

এই মূল্যায়ন বিশ্বের সুবিখ্যাত নৌ-সমরবিদদের; যা করে দেখিয়েছে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা একাত্তরের রক্তঝরা রণাঙ্গনে। নৌ-যুদ্ধের অতি সংক্ষিপ্ত কমান্ডো প্রশিক্ষণ আর সমরাস্ত্র বলতে লিম্পেট মাইন, কমান্ডো নাইফ এবং সাঁতারের ফিন্স নিয়ে মুক্তিবাহিনীর অকুতোভয় নৌ-কমান্ডোরা সুপ্রশিক্ষিত পেশাদার পাকিস্তানি নেভাল সার্ভিসকে চরমভাবে নাস্তানাবুদ করেছেন এই বাংলার সাগর সীমানায়।

মুক্তিযুদ্ধের দুনিয়া কাঁপানো সেই অপারেশন জ্যাকপট এখন সারাপৃথিবীর নেভাল একাডেমিগুলো সবচাইতে রিচ সাবজেক্ট হিসেবে শিক্ষার্থী ক্যাডেটদের পড়িয়ে থাকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই গৌরবোজ্জ্বল ইভেন্টে নৌ-কমান্ডোদের আত্মত্যাগের কথা অনেক আগেই সেলুলয়েডবন্দী হতে পারত। কিন্তু আত্মবিস্মৃতির ধারাবাহিকতায় উদ্যোগের অভাবে তা হয়নি।

কেন হয়নি সেই উত্তর খুঁজলে- এটা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এখন যে নাটকীয়তা চলছে, তার সুলুক সন্ধান করলেই বোধকরি বুঝে নেয়া যাবে।

স্বনামধন্য ফিল্মমেকার বলা হলেও মূলত বাইজি নাচের পোশাকি সিনেমার সফল পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর মতো একজন পরিচালক এবং প্রযোজনা সংস্থা- কিবরিয়া ফিল্মস এই ঐতিহাসিক আর্ট ফিল্মের জন্য মনোনীত হতে চলেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও সূর্য দীঘল বাড়ীর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জনকারী ফিল্ম প্রযোজনাকারী প্রতিষ্ঠান এই ছবি তৈরিতে অংশ নিতে আগ্রহী ছিলেন।

আরও শোনা যাচ্ছে ঠুনকো অজুহাতে তাদের খেদিয়ে ঝন্টু দাদা জিন্দাবাদ হতে চলেছে!

অপারেশন জ্যাকপট পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালেই, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে আর চট্টগ্রাম পোর্টের অর্থায়নে। এজন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছিল যথারীতি। ছবির শুভ মহরতের দিনক্ষণও নির্ধারিত হয়েছিল। কিন্তু ‘আমলা-জটিলতা’র ঘোরপ্যাচে ফেলে অনাহুত কূটকৌশল খাটিয়ে তা আর বাস্তবের মুখ দেখতে দেয়া হয়নি।

অতঃপর বুড়িগঙ্গায় পানি গড়িয়েছে অনেক। একজন সংশপ্তক- যিনি এর স্বপ্নদ্রষ্টা, তবু তিনি হাল ছাড়েননি। ফলে অপারেশন জ্যাকপট চলচ্চিত্রের জন্য আবারও টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। এবং কাকতালীয়ভাবে, ঠিক আগের মতোই অযৌক্তিক কিছু নতুন অজুহাতের আলামত আগের মতোই ফনা তুলেছে- যেন এটা মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র হতে না পারে। যেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার চাইতে এটি হয় ঝন্টু দাদার ট্রেডিশনাল বাইজি নাচের গোলমেলে হৈ-হুজ্জোত।

জাতীয় পুরাকীর্তি অথবা ইতিহাস অনুসন্ধান ও সংরক্ষণে নিশ্চয়ই ব্যতিক্রমী বিধিবিধান রয়েছে; যেখানে সাধারণত প্রচলিত বিধানগুলো প্রয়োগ নিষ্প্রয়োজন। তা না হলে শুধুমাত্র ১ টাকা বাজার মূল্যমানের তাম্রমুদ্রা খুঁজতে লাখো টাকা খরচ করা সম্ভব হতো না। বলাবাহুল্য, আলোচ্য চলচ্চিত্র নিঃসন্দেহে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন। এর বেলায় ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের আটপৌরে বিধান প্রযোজ্য হওয়ার কথা নয়। তবুও বিধিবিধান যাদের পছন্দ, তাদের সন্তুষ্টি বিধানে তা মানা যেতে পারে কেবল ওইটুকুই; যা মূল কাজের অন্তরায় যেন না ঘটায়।

কিন্তু যতদূর জানা গেছে, এই চলচ্চিত্রের উদ্যোমী অবহাওয়া এক খোঁড়া অজুহাত সামনে এনে অনিশ্চিতির মুখে ফেলার জবর আয়োজন সম্পন্নের পথে। ফলে আবারও ব্যর্থ হতে চলেছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অপারেশন জ্যাকপট নির্মানের ক্লান্তিহীন যোদ্ধা একজন জনপ্রিয় বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিকের প্রায় অর্ধযুগের সীমাহীন পেরেশানি।

এটা নিয়ে কিছু লিখতে আর ইচ্ছেও করে না। লিখে কলম ভোঁতা হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাধিকারীকরা এই করে কী মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল নৌ-কমান্ডো অপারেশন জ্যাকপট অবলম্বনে আর্টফিল্ম বানাবেন- ভাবতেও অবাক লাগে।

[লেখক: সাংবাদিক]

back to top