alt

উপ-সম্পাদকীয়

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি

রহমান মৃধা

: শনিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৩

আজও মনে পড়ে উদাস করা সেই নকশি কাঁথার মাঠের কথা। কখন যে সূর্যি ডুবে যেত, অনেক সময় ভুলেই যেতাম সহপাঠীদের সঙ্গে খেলতে খেলতে। এসব কথা দূরপরবাসে থেকে থেকে যখন মনে আসে, তখন সেই কিশোরী দিনগুলো স্বপ্নে রঙিন হয়ে মাঝে মাঝে চোখের জলে ভাসে। তারপর আয়নার সামনে গিয়ে হঠাৎ যখন নিজের ছবি দেখি, মনে হয় সে তো বহু দিন আগের কথা। সেই স্মৃতি ঝলমল দিনগুলো বহু আগে ফেলে জীবনের অনেকটা পথ পার করে চলে এসেছি, যার ফলে হয়তো আমার প্রাণে এখন আর সোনার বাংলা গড়ার কথা বাজে না, বাজে না ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা। তবে নতুন নতুন স্বপ্ন এসে হৃদয়ে দোলা দেয়, দোলা দেয় সমাজ, জাতি তথা দেশের মানুষের মাঝে। এখন যেমন দোলা দিয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হবে। কালের বিবর্তনে মনের থেকে অনেক কথা, অনেক ছবি হারিয়ে ফেলি, তাই হারিয়ে ফেলেছি ছেলেবেলার সেই স্বপ্নকে যেমন বাংলাকে সোনার বাংলা করব। সেসব কথা অনেক দূরে ফেলে এসেছি! আমার ভাবনায় ঢুকেছে তাহলে তখন কী শুধু স্বপ্ন দেখেছি! যাই হোক না কেন একটি কথা বুঝেছি সেটা হলো স্বপ্ন পূরণ করা লক্ষ্য নয় লক্ষ্য পূরণ করাটা স্বপ্ন হতে হবে। এখন এই স্বপ্ন আর লক্ষ্য কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করব এটাই এখন প্রশ্ন?

ব্যাল্যান্স বা ভারসাম্য কী? কীভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব? আদৌ সম্ভব কি তা নিয়ন্ত্রণ করা? মানবজাতির দৈনন্দিন জীবনের ২৪ ঘণ্টাকে যদি তিন ভাগে ভাগ করি যেমন ৮ ঘণ্টা ঘুম, ৮ ঘণ্টা কাজ, বাকি ৮ ঘণ্টা যা খুশি তাই করা। ব্যাল্যান্সটি বেশ নিয়ন্ত্রণে। এখন যেহেতু আমরা সামাজিক জীব এবং বাস করছি পৃথিবীতে। যেখানে রয়েছে নানা ধরনের বাধাবিঘ্ন বা সুবিধা-অসুবিধা। সব মিলে সম্ভব হয়ে উঠেছে কি ব্যাল্যান্স ঠিক রাখা? উঠছে না। তখন আমরা হয় অ্যাডজাস্ট করে চলি অথবা অনিয়মের মধ্যে দিয়ে চলি। যেমন ৮ ঘণ্টা কাজের জায়গা হয় ১০ ঘণ্টা বা কোন সময় ৬ ঘণ্টা। যার কারণে বাকি যে ১৬ ঘণ্টা ছিল, তাও ছিল ৮ ঘণ্টা করে তা আর ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। ফলে ব্যাল্যান্স যেভাবে থাকার কথা তা থাকছে না। ব্যাল্যান্স যখন তার গতিতে চলতে পারছে না তখন হচ্ছে ডেভিয়েশন বা চ্যুতি। আর এই ডেভিয়েশন তৈরি করছে উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ বা ঘটছে নতুনত্বের আবির্ভাব। যা হয় সমাজের জন্য কখনও মঙ্গলজনক বা অমঙ্গলজনক।

বাংলাদেশে ট্রাফিক নিয়ম না মানার কারণে বয়ে গেল ঝড় দেশজুড়ে। স্কুলের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা চোখের ভেতর আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দিল সবার ভুল ত্রুটি। দেখা গেল দুই তিন সপ্তাহ না যেতেই চলে এলো ঈদুল আজহা। তাই হঠাৎ সবাইকে তার আপনজনের কাছে যেতে হবে তাও একই সময়ে। কী করা! ট্রাফিকের নিয়ম অনুযায়ী সীমিত যানবাহন চলাচলের ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে পুরোদেশে। আমরা তা ছোটবড় সবাই জানি। কিন্তু হঠাৎ অকেশনালি বর্তমান চাহিদার তুলনায় দেখা গেল সম্ভব হয়ে উঠছে না নিয়মমাফিক ও নিরাপদে যানবাহন চালানো। পৃথিবীর কোথাও এমনটি নিয়ম নেই যে গাড়ির বা ট্রেনের ছাদে করে যাত্রী চলাচল করতে পারে। তবুও সরকার, যানবাহনের মালিক এবং জনগণ হঠাৎ সব নিয়মকানুনের কোরবানি দিয়ে যার যা খুশি তাই করছে কোনো বাধা ছাড়া। সবাই জানে যে একটি অঘটন ঘটলে কী পরিমাণ প্রাণ হারাবে মানুষ। তারপরও হচ্ছে কি ভারসাম্য রক্ষা করা? তবুও সরকার, যানবাহনের মালিক এবং জনগণ হঠাৎ সব নিয়ম কানুনের কোরবানি দিয়ে যার যার খুশি তাই করছে কোন বাধা ছাড়া। সবাই জানে যে একটি অঘটন ঘটলে কী পরিমাণ প্রাণ হারাবে মানুষ। তারপরও হচ্ছে কি ভারসাম্য রক্ষা করা? হচ্ছে না। কারণ কী? সব সময় যদি “hand to mouth” কনসেপ্ট ব্যবহার করা হয় তখন এমনটিই ঘটে থাকে। যে সমস্যাগুলো আমাদের নিজেদের তৈরি সে সমস্যার সমাধান করতে হলে আমাদের শর্ট এবং লং টার্ম পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এগোতে হবে।

একটি দেশ চালাতে হলে সেই দেশের ভৌগলিক ক্যাপাসিটি বা ক্যাপাবিলিটি সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণ জ্ঞান থাকতে হবে। আছে কি সেটা আমাদের? তাহলে কীভাবে সবকিছুই ঢাকাতে স্থাপন করা হচ্ছে দিনের পর দিন? পুরো দেশের সব কিছুই হতে হবে ঢাকাতে। তার প্রমাণ নৌ-বাহিনীর হেড কোয়াটার, বনজ সম্পদের হেড কোয়াটার, কবরস্থানের হেড কোয়াটার সব কিছুই ঢাকাতে। তাহলে শুধু ট্রাফিক নয় সর্বক্ষেত্রে সমস্যা একই হবে বা হচ্ছে। এর থেকে রেহাই পেতে হলে ঢাকাকে ফাঁকা করতে হবে প্রথমে এবং তা সম্ভব ডিসেন্ট্রালাইজেশনের মধ্যে দিয়ে। ৬৪টি জেলার ভূমি ও অবকাঠামোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা খুবই প্রয়োজন।

হাজার হাজার কোটি ডলার খরচ করে স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে মহাকাশে। সেই স্যাটেলাইটের যুগে আছে কী দরকার সবকিছু এক জাগায় থাকা? রাজধানীকে দুষণমুক্ত এবং বসবাসের উপযুক্ত করতে হলে সত্ত্বর সরাতে হবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে। যা কোনো অবস্থাতেই ঢাকাতে থাকার কথা নয়। এতে করে উন্নত হবে পুরো দেশ এবং দেশের জনসংখ্যার ডিস্টিবিউশন ও লজিস্টিকের ভারসাম্যতা থাকবে নিয়ন্ত্রণে। মানবজাতির অধঃপতন তখনই ঘটে যখন তারা শুধু নিজেকে নিয়ে এবং ক্ষণিকের সময়টুকু নিয়ে ভাবে। তারা যখন নতুন প্রজন্মদের ভুলে যায় তখনই হিসাবের গড়মিলটা বড় আকারে দেখা দেয়।

৬৪টি জেলার ভূমি ও অবকাঠামোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা খুবই প্রয়োজন

ধরা যাক, বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে নতুন সরকার যদি কালই গঠন করা হয়, কী মনে হয়? আগামী রমজান মাসে কেউ কি ছাদে করে নিয়ম ভেঙে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাবে না? নিয়মের বাইরে কিছু করবে না? না তা হবে না। কিছু লোক পাল্টাবে, তাদের ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধার জন্য তারা কিছু নিয়মকে অনিয়মের আওতায় আনবে। সঙ্গে নতুন সমস্যা এবং আগের পুরনো সমস্যার বোঝা বাড়াতে থাকবে। সহজ ভাষাতে বলতে হয় ব্যাংকে ঋণ রয়েছে, নতুন ঋণ নিয়ে কিছু পুরনো ঋণ শোধ দেয়া। সঙ্গে সুদে মূলে নতুন ঋণের বোঝা বাড়ানো। উদাহরণ, গ্রামীণ ব্যাংকের ধার শোধ করতে ব্র্যাক ব্যাংকে যেতে হবে তারপর আশা ব্যাংকে এবং সর্বশেষে হতে হবে সর্বহারা!

এমনটি যদি জাতির ম্যানেজমেন্ট স্টাইল হয়, তাহলে বাংলাকে সোনার বাংলা করা হবে কি? হবে স্মার্ট বাংলাদেশ? হবে না। বাংলা হবে কোটি কোটি মানুষের অভিশাপের বাংলা, দুর্নীতির বাংলা, অন্যায় অত্যাচারের বাংলা। ঋণমুক্ত, অভাবমুক্ত, স্মার্ট ও সুন্দর সোনার বাংলা পেতে হলে মানবতা ও মনুষ্যত্বের ভারসাম্য রক্ষা করা দরকার আগে এবং এর জন্য দরকার সবার মাইন্ডসেট পরিবর্তন। তা না হলে সম্ভব হবে না বাংলাদেশের ভারসাম্য বা ব্যাল্যান্স নিয়ন্ত্রণ করা। নতুন বছর, আসুন নতুন করে ভাবি এবং সত্যিকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি।

[লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি

রহমান মৃধা

শনিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৩

আজও মনে পড়ে উদাস করা সেই নকশি কাঁথার মাঠের কথা। কখন যে সূর্যি ডুবে যেত, অনেক সময় ভুলেই যেতাম সহপাঠীদের সঙ্গে খেলতে খেলতে। এসব কথা দূরপরবাসে থেকে থেকে যখন মনে আসে, তখন সেই কিশোরী দিনগুলো স্বপ্নে রঙিন হয়ে মাঝে মাঝে চোখের জলে ভাসে। তারপর আয়নার সামনে গিয়ে হঠাৎ যখন নিজের ছবি দেখি, মনে হয় সে তো বহু দিন আগের কথা। সেই স্মৃতি ঝলমল দিনগুলো বহু আগে ফেলে জীবনের অনেকটা পথ পার করে চলে এসেছি, যার ফলে হয়তো আমার প্রাণে এখন আর সোনার বাংলা গড়ার কথা বাজে না, বাজে না ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা। তবে নতুন নতুন স্বপ্ন এসে হৃদয়ে দোলা দেয়, দোলা দেয় সমাজ, জাতি তথা দেশের মানুষের মাঝে। এখন যেমন দোলা দিয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হবে। কালের বিবর্তনে মনের থেকে অনেক কথা, অনেক ছবি হারিয়ে ফেলি, তাই হারিয়ে ফেলেছি ছেলেবেলার সেই স্বপ্নকে যেমন বাংলাকে সোনার বাংলা করব। সেসব কথা অনেক দূরে ফেলে এসেছি! আমার ভাবনায় ঢুকেছে তাহলে তখন কী শুধু স্বপ্ন দেখেছি! যাই হোক না কেন একটি কথা বুঝেছি সেটা হলো স্বপ্ন পূরণ করা লক্ষ্য নয় লক্ষ্য পূরণ করাটা স্বপ্ন হতে হবে। এখন এই স্বপ্ন আর লক্ষ্য কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করব এটাই এখন প্রশ্ন?

ব্যাল্যান্স বা ভারসাম্য কী? কীভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব? আদৌ সম্ভব কি তা নিয়ন্ত্রণ করা? মানবজাতির দৈনন্দিন জীবনের ২৪ ঘণ্টাকে যদি তিন ভাগে ভাগ করি যেমন ৮ ঘণ্টা ঘুম, ৮ ঘণ্টা কাজ, বাকি ৮ ঘণ্টা যা খুশি তাই করা। ব্যাল্যান্সটি বেশ নিয়ন্ত্রণে। এখন যেহেতু আমরা সামাজিক জীব এবং বাস করছি পৃথিবীতে। যেখানে রয়েছে নানা ধরনের বাধাবিঘ্ন বা সুবিধা-অসুবিধা। সব মিলে সম্ভব হয়ে উঠেছে কি ব্যাল্যান্স ঠিক রাখা? উঠছে না। তখন আমরা হয় অ্যাডজাস্ট করে চলি অথবা অনিয়মের মধ্যে দিয়ে চলি। যেমন ৮ ঘণ্টা কাজের জায়গা হয় ১০ ঘণ্টা বা কোন সময় ৬ ঘণ্টা। যার কারণে বাকি যে ১৬ ঘণ্টা ছিল, তাও ছিল ৮ ঘণ্টা করে তা আর ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। ফলে ব্যাল্যান্স যেভাবে থাকার কথা তা থাকছে না। ব্যাল্যান্স যখন তার গতিতে চলতে পারছে না তখন হচ্ছে ডেভিয়েশন বা চ্যুতি। আর এই ডেভিয়েশন তৈরি করছে উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ বা ঘটছে নতুনত্বের আবির্ভাব। যা হয় সমাজের জন্য কখনও মঙ্গলজনক বা অমঙ্গলজনক।

বাংলাদেশে ট্রাফিক নিয়ম না মানার কারণে বয়ে গেল ঝড় দেশজুড়ে। স্কুলের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা চোখের ভেতর আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দিল সবার ভুল ত্রুটি। দেখা গেল দুই তিন সপ্তাহ না যেতেই চলে এলো ঈদুল আজহা। তাই হঠাৎ সবাইকে তার আপনজনের কাছে যেতে হবে তাও একই সময়ে। কী করা! ট্রাফিকের নিয়ম অনুযায়ী সীমিত যানবাহন চলাচলের ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে পুরোদেশে। আমরা তা ছোটবড় সবাই জানি। কিন্তু হঠাৎ অকেশনালি বর্তমান চাহিদার তুলনায় দেখা গেল সম্ভব হয়ে উঠছে না নিয়মমাফিক ও নিরাপদে যানবাহন চালানো। পৃথিবীর কোথাও এমনটি নিয়ম নেই যে গাড়ির বা ট্রেনের ছাদে করে যাত্রী চলাচল করতে পারে। তবুও সরকার, যানবাহনের মালিক এবং জনগণ হঠাৎ সব নিয়মকানুনের কোরবানি দিয়ে যার যা খুশি তাই করছে কোনো বাধা ছাড়া। সবাই জানে যে একটি অঘটন ঘটলে কী পরিমাণ প্রাণ হারাবে মানুষ। তারপরও হচ্ছে কি ভারসাম্য রক্ষা করা? তবুও সরকার, যানবাহনের মালিক এবং জনগণ হঠাৎ সব নিয়ম কানুনের কোরবানি দিয়ে যার যার খুশি তাই করছে কোন বাধা ছাড়া। সবাই জানে যে একটি অঘটন ঘটলে কী পরিমাণ প্রাণ হারাবে মানুষ। তারপরও হচ্ছে কি ভারসাম্য রক্ষা করা? হচ্ছে না। কারণ কী? সব সময় যদি “hand to mouth” কনসেপ্ট ব্যবহার করা হয় তখন এমনটিই ঘটে থাকে। যে সমস্যাগুলো আমাদের নিজেদের তৈরি সে সমস্যার সমাধান করতে হলে আমাদের শর্ট এবং লং টার্ম পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এগোতে হবে।

একটি দেশ চালাতে হলে সেই দেশের ভৌগলিক ক্যাপাসিটি বা ক্যাপাবিলিটি সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণ জ্ঞান থাকতে হবে। আছে কি সেটা আমাদের? তাহলে কীভাবে সবকিছুই ঢাকাতে স্থাপন করা হচ্ছে দিনের পর দিন? পুরো দেশের সব কিছুই হতে হবে ঢাকাতে। তার প্রমাণ নৌ-বাহিনীর হেড কোয়াটার, বনজ সম্পদের হেড কোয়াটার, কবরস্থানের হেড কোয়াটার সব কিছুই ঢাকাতে। তাহলে শুধু ট্রাফিক নয় সর্বক্ষেত্রে সমস্যা একই হবে বা হচ্ছে। এর থেকে রেহাই পেতে হলে ঢাকাকে ফাঁকা করতে হবে প্রথমে এবং তা সম্ভব ডিসেন্ট্রালাইজেশনের মধ্যে দিয়ে। ৬৪টি জেলার ভূমি ও অবকাঠামোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা খুবই প্রয়োজন।

হাজার হাজার কোটি ডলার খরচ করে স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে মহাকাশে। সেই স্যাটেলাইটের যুগে আছে কী দরকার সবকিছু এক জাগায় থাকা? রাজধানীকে দুষণমুক্ত এবং বসবাসের উপযুক্ত করতে হলে সত্ত্বর সরাতে হবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে। যা কোনো অবস্থাতেই ঢাকাতে থাকার কথা নয়। এতে করে উন্নত হবে পুরো দেশ এবং দেশের জনসংখ্যার ডিস্টিবিউশন ও লজিস্টিকের ভারসাম্যতা থাকবে নিয়ন্ত্রণে। মানবজাতির অধঃপতন তখনই ঘটে যখন তারা শুধু নিজেকে নিয়ে এবং ক্ষণিকের সময়টুকু নিয়ে ভাবে। তারা যখন নতুন প্রজন্মদের ভুলে যায় তখনই হিসাবের গড়মিলটা বড় আকারে দেখা দেয়।

৬৪টি জেলার ভূমি ও অবকাঠামোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা খুবই প্রয়োজন

ধরা যাক, বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে নতুন সরকার যদি কালই গঠন করা হয়, কী মনে হয়? আগামী রমজান মাসে কেউ কি ছাদে করে নিয়ম ভেঙে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাবে না? নিয়মের বাইরে কিছু করবে না? না তা হবে না। কিছু লোক পাল্টাবে, তাদের ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধার জন্য তারা কিছু নিয়মকে অনিয়মের আওতায় আনবে। সঙ্গে নতুন সমস্যা এবং আগের পুরনো সমস্যার বোঝা বাড়াতে থাকবে। সহজ ভাষাতে বলতে হয় ব্যাংকে ঋণ রয়েছে, নতুন ঋণ নিয়ে কিছু পুরনো ঋণ শোধ দেয়া। সঙ্গে সুদে মূলে নতুন ঋণের বোঝা বাড়ানো। উদাহরণ, গ্রামীণ ব্যাংকের ধার শোধ করতে ব্র্যাক ব্যাংকে যেতে হবে তারপর আশা ব্যাংকে এবং সর্বশেষে হতে হবে সর্বহারা!

এমনটি যদি জাতির ম্যানেজমেন্ট স্টাইল হয়, তাহলে বাংলাকে সোনার বাংলা করা হবে কি? হবে স্মার্ট বাংলাদেশ? হবে না। বাংলা হবে কোটি কোটি মানুষের অভিশাপের বাংলা, দুর্নীতির বাংলা, অন্যায় অত্যাচারের বাংলা। ঋণমুক্ত, অভাবমুক্ত, স্মার্ট ও সুন্দর সোনার বাংলা পেতে হলে মানবতা ও মনুষ্যত্বের ভারসাম্য রক্ষা করা দরকার আগে এবং এর জন্য দরকার সবার মাইন্ডসেট পরিবর্তন। তা না হলে সম্ভব হবে না বাংলাদেশের ভারসাম্য বা ব্যাল্যান্স নিয়ন্ত্রণ করা। নতুন বছর, আসুন নতুন করে ভাবি এবং সত্যিকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি।

[লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

back to top