alt

উপ-সম্পাদকীয়

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সিটিজেনস চার্টার প্রসঙ্গে

সন্ধ্যা রানী সাহা

: সোমবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
image

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিটিজেনস চার্টার সম্পর্কে দেশের মানুষের বিশাল একটি অংশ কিছুই জানে না

সরকার গৃহীত নানা পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশে সাক্ষর জনগণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী ২০২০ সালে ১৫ বছরের বেশি বয়সি মানুষের স্বাক্ষরতার হার ছিল ৭৫.৬%। ২৪.৪% নিরক্ষর এবং ২৫% দরিদ্র (বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন মতে)। এই দেশের নাগরিকরা তাদের সন্তানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিষয়ে ততটা মনোযোগ দিতে পারেন না। আবার যারা সন্তানদের শিক্ষার দিকে অধিকতর মনোযোগ দিয়ে থাকেন তাদের আকাক্সক্ষা আকাশচুম্বি। সন্তানের পরীক্ষায় অ+ প্রাপ্তি, যথাযথ উচ্চ শিক্ষা এবং তারপরে উচ্চ বেতনের চাকরি ও বিলাসবহুল জীবনযাপনের স্বপ্নে তারা বিভোর। সন্তানকে তারা শৈশব/কৈশোর কিছুই উপভোগ করতে দিতে তারা রাজি নয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে দেখা যায়। অভিভাবক এবং সমাজের চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা ছেড়ে দেয়। কারও কারও মধ্যে মেধা-বিকৃতির সম্ভাবনা দেখা দেয়। কেউ বা আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে পারে। সুতরাং এসব বিষয়ে অভিভাবকদের বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সচেতন করা প্রয়োজন। আবার বিদ্যালয়ের কিছু কিছু শিক্ষক শিশুদের পরীক্ষায় পাশ করানোর জন্য পুরোপুরি না বুঝিয়ে (অনেক ক্ষেত্রে) লাইন বাই লাইন পড়া মুখস্থ করতে বাধ্য করছেন। এই যে না বুঝে পাঠ্যপুস্তক মুখস্থ করা! এটাও পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের মানবিক বৈকল্য সৃষ্টি এবং বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার কারণ হতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে শিক্ষার্থীদের জীবন বিপণ্ন হওয়ার আশঙ্কাও অমূলক নয়। এসবই উচ্চাভিলাসী অভিভাবক এবং শিক্ষকদের এক ধরনের অবহেলার নিদর্শন ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশ্বব্যাপী নানান আন্তঃসম্পর্ক ও মানব অগ্রগতির এই যুগে পাঠ্যপুস্তকগুলো পড়তে না পারা, পড়ে বুঝতে না পারা এবং সাধারণ হিসাব নিকাশ করতে না পারা শিক্ষার্থীদের জন্য মোটেও শুভ নয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক যেমন শিক্ষার্থীদের ইতিহাস, বিজ্ঞান, গণিত ইত্যাদি শিক্ষা দেয় তেমনি শিক্ষা দেয় নৈতিকতা, মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা এবং দায়িত্বশীলতা। যা শিক্ষার্থীদের নিজেদের, তাদের পরিবার, তাদের দেশের এমনকি বিশে^র জন্যও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই পাঠ্যপুস্তকগুলো সাবলীলভাবে পড়া শেখাতে হবে। সমতুল্য অন্যান্য ভালো পুস্তক শিক্ষার্থীরা যেন নির্দ্বিধায় পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে সে ব্যবস্থাও বিদ্যালয়ে থাকতে হবে।

শিক্ষক এবং পরিদর্শকরা সবাই বিষয়গুলো যে বোঝেন না এমন নয় কিন্তু জীবনযাত্রার মানের আকাশ-পাতাল তফাৎ থাকার কারণে সম্ভবত কেউই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দরিদ্র এবং নিরক্ষর পিতামাতার সন্তানদের দায়িত্ব সেভাবে গ্রহণ করতে চান না। অথচ সহজ-সরল অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়ে ভাবেন যে শিক্ষকরা পিতৃ/মাতৃ¯েœহে তাদের সন্তানদের লালন পালন করছেন। তাই তারা বিদ্যালয়ে উঁকি দেয়ারও প্রয়োজন বোধ করেন না। ফলে এ ধরনের শিক্ষার্থীদের মানুষ হওয়ার পেছনে শুধু পেশাদার শিক্ষক এবং পরিদর্শকদের ভূমিকাই গুরুত্ব পাচ্ছে। সহজ-সরল অভিভাবকরা এখানে ক্ষমতাহীন এবং অসহায়। তাই মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন উভয় প্রয়াসের লক্ষ্যে অভিভাবকদের ক্ষমতা ও তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা দরকার। অবশ্য অভিভাবকদের ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে চারজন অভিভাবক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা রেখেছে কিন্তু বাস্তবে ম্যানেজমেন্ট কমিটি বিদ্যালয়ের শিখন-শেখানো কাজে তেমন মনোযোগী নয়। করোনাকালে এই কমিটিকে ক্ষেত্র বিশেষে প্রায় নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা যায়। শিক্ষক অভিভাবক সমিতি বলে যে কমিটি রয়েছে সেটি আরও নিষ্কিয়। সুতরাং কোনো প্রতিনিধি নয়। সরাসরি সহজ-সরল অভিভাবকদের ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। তাহলে বিদ্যালয়ে কী পড়ানো হবে, কিসের বিনিময়ে পড়ানো হবে, কীভাবে পড়ানো হবে, সবাই শিশুর শিখনফল অর্জন বিদ্যালয় কর্তৃক কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, শিখনফল অর্জন করানো না হলে কোথায় অভিযোগ করতে হবে এসব বিষয়ে তারা সচেতন হয়ে উঠবে। বিদ্যালয়ের অন্যান্য সেবাগুলো কিভাবে প্রদান করা হবে, সবাই অভিভাবকদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা সহজ হবে। কারণ অভিভাবকদের আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র হ্রাসের ক্ষেত্রে তাদের সন্তানদের যথাযথ প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের বিষয়টি ওতপ্রতোভাবে জড়িত। প্রমাণস্বরূপ চীনে উৎপাদিত ও বহির্বিশে^ রপ্তানিকৃত দ্রব্য সামগ্রীর মধ্যে এমন অনেক জিনিসই আছে যা কিছু স্বাক্ষর ও বিদ্যালয় শিক্ষায় শিক্ষিতদের দ্বারা তৈরি হয়েছে, দক্ষ শ্রমিকের দ্বারা নয়। এসব দ্রব্য রপ্তানি করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারকে ব্যবহার করার জন্য চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পণ্যের উৎপাদন, সঠিক মান বজায় রাখা ও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অর্থনৈতিক কর্তব্য সমন্ধে সবাইর সচেনতা অত্যাবশ্যক। এসব কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে।

যে চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যালয় অভিভাবক এবং অন্যান্য ংঃধশব যড়ষফবৎ দের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে বিদ্যালযের শিখন শেখানোসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করতে পারে তার নাম সিটিজেন চার্টার বা নাগরিক সনদ। সিটিজেন চার্টার সুশাসনের অন্যতম স্তম্ভ। সিটিজেনস চার্টার প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের জন্য সরকারি সেবাপ্রাপ্তি সহজতর করা এবং সেবার মানোন্নয়ন করা। এছাড়া অন্য উদ্দেশ্যেসমূহ হলো- জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের প্রত্যাশার সঙ্গে সম্মতি রেখে উত্তরোত্তর সেবার মান বৃদ্ধি করা। জনগণকে তাদের প্রাপ্য অধিকার সম্পর্কে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ক্ষমতায়িত করা। যাতে করে তারা সেবা প্রদানকারীদের কাছে সে সব অধিকার দাবি করতে পারে। সেবা প্রদানকারীদের সামর্থ্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে তাদের আচরণের উন্নয়ন এবং প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের সৌজন্যতার সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো। সেবার মানোন্নয়ন, জনগণের অংশগ্রহণ, অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রভৃৃতি উদ্যেগের মাধ্যমে জনগনের আস্থা অর্জন। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যে সব সেবা জনসাধারণকে প্রদান করা হয় তা হলোÑ (১) শিশু ভর্তি (২) বিনামূল্যে বই বিতরণ (৩) উপবৃত্তির খসড়া তালিকা প্রণয়ন (৪) স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটি এবং পিটিএ (চধৎবহঃং ঞবধপযবৎ অংংড়পরধঃরড়হ) কমিটি গঠন/পুনর্গঠন (৫) ছাড়পত্রের জন্য আবেদন নিষ্পত্তি (৬) সনদপত্রের জন্য আবেদন নিষ্পত্তি (৭) বিভিন্ন প্রকারে দরখাস্ত/আবেদন (৮) শ্রেণীতে পাঠদান নিশ্চিত ও ফলপ্রসূকরণ (৯) তথ্য প্রদান/সরবারহ (১০) বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন (১১) ঝখওচ (ঝপযড়ড়ষ খবাবষ ওসঢ়ৎড়াববহঃ চষধহ) পরিকল্পনা প্রণয়ন (১২) সবাই শিক্ষার্থীর প্রতিদিন উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ (১৩) ঝরে পড়া রোধ ইত্যাদি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এতসব কাজের মধ্যে প্রধান কাজটি হলো শ্রেণীতে পাঠদান নিশ্চিত ও ফলপ্রসূকরণ (৮ নং)।

এই প্রধান কাজটি বিদ্যালয়ের সিটিজেনস চার্টারের জন্য নির্ধারিত ছকের শেষের দিকে অতি অল্প কথায় উল্লেখ করা হয়ে থাকে এবং বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে কোনো সিটিজেনস চার্টার অনুসরণ করা হয় না। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিটিজেন চার্টার বা নাগরিক সনদ সম্পর্কে দেশের জনগণের বিশাল একটি অংশ কিছুই জানে না। শিশুদের উন্নত ভবিষ্যৎ গঠনের প্রথম সূচনা যে প্রাথমিক শিক্ষার মধ্যে নিহিত তাও না বুঝে শুধু সরকার প্রদত্ত শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি এবং বছরের শুরুতে নতুন বই লাভের আশায় দরিদ্র, নিরক্ষর, অসহায় তাঁতি, জেলে, দিনমজুর তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে। প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তেমন প্রচার-প্রচারণা চালানো হয় না। ডিসেম্বর মাসের শেষে প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আগামী বছরের শিশু ভর্তির উদ্দেশ্যে শিশু জরিপ সম্পন্ন করে। এটি তাদের ৎড়ঁঃরহব ড়িৎশ। এ সময় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কী সেবা দেয়া হবে? কীভাবে দেয়া হবে, শিক্ষা লাভের গুরুত্ব কী? শিক্ষকদের যোগ্যতা কী? এসব বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয় না। যার ফলে অন্যান্য প্রকারের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় (বাংলাদেশে ১০ ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে)। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ নিজ থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধিকল্পে অন্যান্য প্রকারের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো করে শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে চান না। তারা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে এলে ভর্তি করবেন। অর্থাৎ তারা শুধু চাকরি করবেন। প্রতিষ্ঠানে আসবেন যাবেন। জনসাধারণের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখবেন এবং দিন শেষে বিদায় নেবেন। সবাই শিক্ষার্থী প্রতিদিন বিদ্যালয়ের এলো কিনা? এ বিষয়েও তারা দায়িত্ব নিতে চান না। প্রতিদিনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষগুলোতে কিছু শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। এ বিষয়ে শিক্ষকদের মধ্যে কোন অস্থিরতা কাজ করে না। আজকের মোবাইল ফোনের যুগে একটু সদিচ্ছা থাকলে শিক্ষকরা এইটুকু সহানুভূতি অনায়াসে দেখাতে পারেন। সবাই শিক্ষার্থীর প্রতিদিনকার উপস্থিতি নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব হলেও তারা তা করেন না। এতে করে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চির ব্যবধান যেন অবশ্যম্ভাবী হতে চলেছে। শুধু কী তাই? উপস্থিত শিক্ষার্থীদের পাঠের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এসবের প্রধান কারণ হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সিটিজেনস চার্টার অনুসরণ না করা।

অতএব সবাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ক্যাচমেন্ট এরিয়ার জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে জনগণের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সিটিজেনস চার্টার প্রণয়ন করতে হবে। জনসাধারণের করের টাকায় বেতন নিয়ে তাদের থেকে দূরে থাকা চলবে না। জনসাধারণকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে সেবাদানের খুঁটিনাটি বিষয় বুঝতে দিতে হবে। বিদ্যালয়ের স্টেক হোল্ডার হিসেবে তাদের ক্ষমতায়ন করতে হবে। সময়মতো স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে সমাজে শিক্ষকতার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহকে যে কোনো মূল্যে শিশুবান্ধব বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করতে হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই শিশুবান্ধব বিদ্যালয় পরিচালনায় সংগীত, চারু ও কারুকলা এবং শারীরিক শিক্ষায় পারদর্শী হবেন। তারা বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সমাজ বিজ্ঞান এবং প্রাথমিক বিজ্ঞানসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠ্য সবাই বিষয়ে পারদর্শী হবেন। অধিকন্তু তারা শিশু মনোবিজ্ঞান, শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, শ্রেণীকক্ষ শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনা, শিক্ষামূলক গণমাধ্যমের ব্যবহার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে অবহিত থাকবেন। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে সভা পরিচালনায় দক্ষ হবেন। শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি অনুযায়ী সহযোগিতা করবেন। তাদের বাড়ির কাজ মূল্যায়ন করবেন। পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করবেন। পাঠের বিষয় বোঝানোর জন্য জীবন ঘনিষ্ঠ উপকরণাদি এবং যথাযথ উদাহরণ উপস্থাপন করবেন। শিক্ষকরা কম্পিউটার, প্রাসঙ্গিক পুস্তক এবং চলচ্চিত্র ব্যবহার করে প্রাণবন্ত শিখন-শেখানো কার্যাবলী পরিচালনা করবেন। শিক্ষকরা নিজেদের কাজ এবং সরকারের প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, প্রান্তিক যোগ্যতা, শিক্ষাক্রম ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সর্ম্পকে ক্যাচমেন্ট এরিয়ার জনসাধারণের সঙ্গে সভা করে সর্বসম্মতিক্রমে একটি জনবান্ধব সিটিজেনস চার্টার প্রণয়ন করে তা অনুসরণের মাধ্যমে বিদ্যালয়কে বিশ^মানের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিণত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। মনে রাখবেন শিক্ষার্থীরা হলো বিদ্যালয়ের প্রাণ। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্টেক হোল্ডাররা বিশেষত অভিভাবকরা এবং শিক্ষকরা সবাই মিলে এই প্রাণকে রক্ষা করবেন।

[লেখক: উপজেলা শিক্ষা অফিসার, কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ]

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সিটিজেনস চার্টার প্রসঙ্গে

সন্ধ্যা রানী সাহা

image

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিটিজেনস চার্টার সম্পর্কে দেশের মানুষের বিশাল একটি অংশ কিছুই জানে না

সোমবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

সরকার গৃহীত নানা পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশে সাক্ষর জনগণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী ২০২০ সালে ১৫ বছরের বেশি বয়সি মানুষের স্বাক্ষরতার হার ছিল ৭৫.৬%। ২৪.৪% নিরক্ষর এবং ২৫% দরিদ্র (বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন মতে)। এই দেশের নাগরিকরা তাদের সন্তানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিষয়ে ততটা মনোযোগ দিতে পারেন না। আবার যারা সন্তানদের শিক্ষার দিকে অধিকতর মনোযোগ দিয়ে থাকেন তাদের আকাক্সক্ষা আকাশচুম্বি। সন্তানের পরীক্ষায় অ+ প্রাপ্তি, যথাযথ উচ্চ শিক্ষা এবং তারপরে উচ্চ বেতনের চাকরি ও বিলাসবহুল জীবনযাপনের স্বপ্নে তারা বিভোর। সন্তানকে তারা শৈশব/কৈশোর কিছুই উপভোগ করতে দিতে তারা রাজি নয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে দেখা যায়। অভিভাবক এবং সমাজের চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা ছেড়ে দেয়। কারও কারও মধ্যে মেধা-বিকৃতির সম্ভাবনা দেখা দেয়। কেউ বা আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে পারে। সুতরাং এসব বিষয়ে অভিভাবকদের বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সচেতন করা প্রয়োজন। আবার বিদ্যালয়ের কিছু কিছু শিক্ষক শিশুদের পরীক্ষায় পাশ করানোর জন্য পুরোপুরি না বুঝিয়ে (অনেক ক্ষেত্রে) লাইন বাই লাইন পড়া মুখস্থ করতে বাধ্য করছেন। এই যে না বুঝে পাঠ্যপুস্তক মুখস্থ করা! এটাও পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের মানবিক বৈকল্য সৃষ্টি এবং বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার কারণ হতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে শিক্ষার্থীদের জীবন বিপণ্ন হওয়ার আশঙ্কাও অমূলক নয়। এসবই উচ্চাভিলাসী অভিভাবক এবং শিক্ষকদের এক ধরনের অবহেলার নিদর্শন ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশ্বব্যাপী নানান আন্তঃসম্পর্ক ও মানব অগ্রগতির এই যুগে পাঠ্যপুস্তকগুলো পড়তে না পারা, পড়ে বুঝতে না পারা এবং সাধারণ হিসাব নিকাশ করতে না পারা শিক্ষার্থীদের জন্য মোটেও শুভ নয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক যেমন শিক্ষার্থীদের ইতিহাস, বিজ্ঞান, গণিত ইত্যাদি শিক্ষা দেয় তেমনি শিক্ষা দেয় নৈতিকতা, মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা এবং দায়িত্বশীলতা। যা শিক্ষার্থীদের নিজেদের, তাদের পরিবার, তাদের দেশের এমনকি বিশে^র জন্যও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই পাঠ্যপুস্তকগুলো সাবলীলভাবে পড়া শেখাতে হবে। সমতুল্য অন্যান্য ভালো পুস্তক শিক্ষার্থীরা যেন নির্দ্বিধায় পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে সে ব্যবস্থাও বিদ্যালয়ে থাকতে হবে।

শিক্ষক এবং পরিদর্শকরা সবাই বিষয়গুলো যে বোঝেন না এমন নয় কিন্তু জীবনযাত্রার মানের আকাশ-পাতাল তফাৎ থাকার কারণে সম্ভবত কেউই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দরিদ্র এবং নিরক্ষর পিতামাতার সন্তানদের দায়িত্ব সেভাবে গ্রহণ করতে চান না। অথচ সহজ-সরল অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়ে ভাবেন যে শিক্ষকরা পিতৃ/মাতৃ¯েœহে তাদের সন্তানদের লালন পালন করছেন। তাই তারা বিদ্যালয়ে উঁকি দেয়ারও প্রয়োজন বোধ করেন না। ফলে এ ধরনের শিক্ষার্থীদের মানুষ হওয়ার পেছনে শুধু পেশাদার শিক্ষক এবং পরিদর্শকদের ভূমিকাই গুরুত্ব পাচ্ছে। সহজ-সরল অভিভাবকরা এখানে ক্ষমতাহীন এবং অসহায়। তাই মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন উভয় প্রয়াসের লক্ষ্যে অভিভাবকদের ক্ষমতা ও তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা দরকার। অবশ্য অভিভাবকদের ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে চারজন অভিভাবক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা রেখেছে কিন্তু বাস্তবে ম্যানেজমেন্ট কমিটি বিদ্যালয়ের শিখন-শেখানো কাজে তেমন মনোযোগী নয়। করোনাকালে এই কমিটিকে ক্ষেত্র বিশেষে প্রায় নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা যায়। শিক্ষক অভিভাবক সমিতি বলে যে কমিটি রয়েছে সেটি আরও নিষ্কিয়। সুতরাং কোনো প্রতিনিধি নয়। সরাসরি সহজ-সরল অভিভাবকদের ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। তাহলে বিদ্যালয়ে কী পড়ানো হবে, কিসের বিনিময়ে পড়ানো হবে, কীভাবে পড়ানো হবে, সবাই শিশুর শিখনফল অর্জন বিদ্যালয় কর্তৃক কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, শিখনফল অর্জন করানো না হলে কোথায় অভিযোগ করতে হবে এসব বিষয়ে তারা সচেতন হয়ে উঠবে। বিদ্যালয়ের অন্যান্য সেবাগুলো কিভাবে প্রদান করা হবে, সবাই অভিভাবকদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা সহজ হবে। কারণ অভিভাবকদের আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র হ্রাসের ক্ষেত্রে তাদের সন্তানদের যথাযথ প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের বিষয়টি ওতপ্রতোভাবে জড়িত। প্রমাণস্বরূপ চীনে উৎপাদিত ও বহির্বিশে^ রপ্তানিকৃত দ্রব্য সামগ্রীর মধ্যে এমন অনেক জিনিসই আছে যা কিছু স্বাক্ষর ও বিদ্যালয় শিক্ষায় শিক্ষিতদের দ্বারা তৈরি হয়েছে, দক্ষ শ্রমিকের দ্বারা নয়। এসব দ্রব্য রপ্তানি করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারকে ব্যবহার করার জন্য চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পণ্যের উৎপাদন, সঠিক মান বজায় রাখা ও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অর্থনৈতিক কর্তব্য সমন্ধে সবাইর সচেনতা অত্যাবশ্যক। এসব কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে।

যে চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যালয় অভিভাবক এবং অন্যান্য ংঃধশব যড়ষফবৎ দের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে বিদ্যালযের শিখন শেখানোসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করতে পারে তার নাম সিটিজেন চার্টার বা নাগরিক সনদ। সিটিজেন চার্টার সুশাসনের অন্যতম স্তম্ভ। সিটিজেনস চার্টার প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের জন্য সরকারি সেবাপ্রাপ্তি সহজতর করা এবং সেবার মানোন্নয়ন করা। এছাড়া অন্য উদ্দেশ্যেসমূহ হলো- জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের প্রত্যাশার সঙ্গে সম্মতি রেখে উত্তরোত্তর সেবার মান বৃদ্ধি করা। জনগণকে তাদের প্রাপ্য অধিকার সম্পর্কে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ক্ষমতায়িত করা। যাতে করে তারা সেবা প্রদানকারীদের কাছে সে সব অধিকার দাবি করতে পারে। সেবা প্রদানকারীদের সামর্থ্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে তাদের আচরণের উন্নয়ন এবং প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের সৌজন্যতার সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো। সেবার মানোন্নয়ন, জনগণের অংশগ্রহণ, অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রভৃৃতি উদ্যেগের মাধ্যমে জনগনের আস্থা অর্জন। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যে সব সেবা জনসাধারণকে প্রদান করা হয় তা হলোÑ (১) শিশু ভর্তি (২) বিনামূল্যে বই বিতরণ (৩) উপবৃত্তির খসড়া তালিকা প্রণয়ন (৪) স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটি এবং পিটিএ (চধৎবহঃং ঞবধপযবৎ অংংড়পরধঃরড়হ) কমিটি গঠন/পুনর্গঠন (৫) ছাড়পত্রের জন্য আবেদন নিষ্পত্তি (৬) সনদপত্রের জন্য আবেদন নিষ্পত্তি (৭) বিভিন্ন প্রকারে দরখাস্ত/আবেদন (৮) শ্রেণীতে পাঠদান নিশ্চিত ও ফলপ্রসূকরণ (৯) তথ্য প্রদান/সরবারহ (১০) বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন (১১) ঝখওচ (ঝপযড়ড়ষ খবাবষ ওসঢ়ৎড়াববহঃ চষধহ) পরিকল্পনা প্রণয়ন (১২) সবাই শিক্ষার্থীর প্রতিদিন উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ (১৩) ঝরে পড়া রোধ ইত্যাদি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এতসব কাজের মধ্যে প্রধান কাজটি হলো শ্রেণীতে পাঠদান নিশ্চিত ও ফলপ্রসূকরণ (৮ নং)।

এই প্রধান কাজটি বিদ্যালয়ের সিটিজেনস চার্টারের জন্য নির্ধারিত ছকের শেষের দিকে অতি অল্প কথায় উল্লেখ করা হয়ে থাকে এবং বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে কোনো সিটিজেনস চার্টার অনুসরণ করা হয় না। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিটিজেন চার্টার বা নাগরিক সনদ সম্পর্কে দেশের জনগণের বিশাল একটি অংশ কিছুই জানে না। শিশুদের উন্নত ভবিষ্যৎ গঠনের প্রথম সূচনা যে প্রাথমিক শিক্ষার মধ্যে নিহিত তাও না বুঝে শুধু সরকার প্রদত্ত শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি এবং বছরের শুরুতে নতুন বই লাভের আশায় দরিদ্র, নিরক্ষর, অসহায় তাঁতি, জেলে, দিনমজুর তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে। প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তেমন প্রচার-প্রচারণা চালানো হয় না। ডিসেম্বর মাসের শেষে প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আগামী বছরের শিশু ভর্তির উদ্দেশ্যে শিশু জরিপ সম্পন্ন করে। এটি তাদের ৎড়ঁঃরহব ড়িৎশ। এ সময় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কী সেবা দেয়া হবে? কীভাবে দেয়া হবে, শিক্ষা লাভের গুরুত্ব কী? শিক্ষকদের যোগ্যতা কী? এসব বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয় না। যার ফলে অন্যান্য প্রকারের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় (বাংলাদেশে ১০ ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে)। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ নিজ থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধিকল্পে অন্যান্য প্রকারের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো করে শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে চান না। তারা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে এলে ভর্তি করবেন। অর্থাৎ তারা শুধু চাকরি করবেন। প্রতিষ্ঠানে আসবেন যাবেন। জনসাধারণের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখবেন এবং দিন শেষে বিদায় নেবেন। সবাই শিক্ষার্থী প্রতিদিন বিদ্যালয়ের এলো কিনা? এ বিষয়েও তারা দায়িত্ব নিতে চান না। প্রতিদিনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষগুলোতে কিছু শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। এ বিষয়ে শিক্ষকদের মধ্যে কোন অস্থিরতা কাজ করে না। আজকের মোবাইল ফোনের যুগে একটু সদিচ্ছা থাকলে শিক্ষকরা এইটুকু সহানুভূতি অনায়াসে দেখাতে পারেন। সবাই শিক্ষার্থীর প্রতিদিনকার উপস্থিতি নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব হলেও তারা তা করেন না। এতে করে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চির ব্যবধান যেন অবশ্যম্ভাবী হতে চলেছে। শুধু কী তাই? উপস্থিত শিক্ষার্থীদের পাঠের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এসবের প্রধান কারণ হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সিটিজেনস চার্টার অনুসরণ না করা।

অতএব সবাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ক্যাচমেন্ট এরিয়ার জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে জনগণের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সিটিজেনস চার্টার প্রণয়ন করতে হবে। জনসাধারণের করের টাকায় বেতন নিয়ে তাদের থেকে দূরে থাকা চলবে না। জনসাধারণকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে সেবাদানের খুঁটিনাটি বিষয় বুঝতে দিতে হবে। বিদ্যালয়ের স্টেক হোল্ডার হিসেবে তাদের ক্ষমতায়ন করতে হবে। সময়মতো স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে সমাজে শিক্ষকতার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহকে যে কোনো মূল্যে শিশুবান্ধব বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করতে হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই শিশুবান্ধব বিদ্যালয় পরিচালনায় সংগীত, চারু ও কারুকলা এবং শারীরিক শিক্ষায় পারদর্শী হবেন। তারা বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সমাজ বিজ্ঞান এবং প্রাথমিক বিজ্ঞানসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠ্য সবাই বিষয়ে পারদর্শী হবেন। অধিকন্তু তারা শিশু মনোবিজ্ঞান, শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, শ্রেণীকক্ষ শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনা, শিক্ষামূলক গণমাধ্যমের ব্যবহার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে অবহিত থাকবেন। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে সভা পরিচালনায় দক্ষ হবেন। শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি অনুযায়ী সহযোগিতা করবেন। তাদের বাড়ির কাজ মূল্যায়ন করবেন। পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করবেন। পাঠের বিষয় বোঝানোর জন্য জীবন ঘনিষ্ঠ উপকরণাদি এবং যথাযথ উদাহরণ উপস্থাপন করবেন। শিক্ষকরা কম্পিউটার, প্রাসঙ্গিক পুস্তক এবং চলচ্চিত্র ব্যবহার করে প্রাণবন্ত শিখন-শেখানো কার্যাবলী পরিচালনা করবেন। শিক্ষকরা নিজেদের কাজ এবং সরকারের প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, প্রান্তিক যোগ্যতা, শিক্ষাক্রম ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সর্ম্পকে ক্যাচমেন্ট এরিয়ার জনসাধারণের সঙ্গে সভা করে সর্বসম্মতিক্রমে একটি জনবান্ধব সিটিজেনস চার্টার প্রণয়ন করে তা অনুসরণের মাধ্যমে বিদ্যালয়কে বিশ^মানের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিণত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। মনে রাখবেন শিক্ষার্থীরা হলো বিদ্যালয়ের প্রাণ। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্টেক হোল্ডাররা বিশেষত অভিভাবকরা এবং শিক্ষকরা সবাই মিলে এই প্রাণকে রক্ষা করবেন।

[লেখক: উপজেলা শিক্ষা অফিসার, কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ]

back to top