alt

উপ-সম্পাদকীয়

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও আদিবাসী

মিথুশিলাক মুরমু

: বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩

বাংলাদেশ জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ। বিশ্বের অনেক দেশে জনসংখ্য বৃদ্ধি দুঃশ্চিন্তার কারণ। আবার কোথাও কোথাও জনসংখ্যা বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হচ্ছে। চীন জনবহুল দেশগুলোর অন্যতম। ১৪১ কোটি ১৮ লাখ মানুষের দেশ। সেখানে জন্মহার কমে যাওয়ায় বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এতে হয়তো স্বল্প মেয়াদে চীনের জন্য কোনো সমস্যা তৈরি করবে না; তবে জনসংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলে ২০৩০ খ্রিস্টাব্দের পর ধাক্কা খাবে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। দেশটিতে ২০২২ খ্রিস্টাব্দের তুলনায় ৮ লাখ ৫০ হাজার কম শিশু জন্মেছে। গত ৬০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম শিশু জন্মের হার কমলো। ‘এক সন্তান নীতি’র কারণে দেশটিতে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। জাতিসংঘ বলছে, চীনে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা চলতি শতকে ৬০ শতাংশের বেশি কমবে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ছিল ৩৭ দশমিক ১২ এবং ২০২০ খ্রিস্টাব্দে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪৪ দশমিক ১৪ শতাংশে। অবশ্য কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, ‘জনসংখ্যা হ্রাসের সমস্যা সমাধানের জন্য চীনের হাতে এখনো যথেষ্ট মানুষ ও সময় রয়েছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে তারা বিপদে পড়ছে না।’

আরেকটি দেশ জাপানেরও জন্মহার কমে যাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে দেশটির সরকার। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, জাপানের জন্মহার বৃদ্ধির জন্য এখনই ব্যবস্থা নেয়ার উপযুক্ত সময়। এখন ব্যবস্থা না নিলে দেরি হয়ে যাবে। তাই অপেক্ষা করার সময় নেই। ইতোমধ্যে জাপান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সি জনসংখ্যার দেশ হয়ে গেছে। সরকার শিশু জন্মহার বাড়াতে হরেক রকমের সুবিধাদি দিয়ে উৎসাহিত করছে। নগদ অর্থসহ বিশেষ সুবিধাদি দেয়ার পরও জাপানিদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে সে দেশের সরকার।

সমীক্ষানুযায়ী, শিশুর লালন-পালনের ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশগুলোর একটি জাপান। এ কারণে অনেকেই সন্তান নিতে চান না। দেশটির প্রধানমন্ত্রী পার্লামেণ্ট অধিবেশনের শুরুতেই উদ্বিগ্ন হৃদয়ে বলেছেন, ‘আমাদের জাতি সামাজিক ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখতে পারে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। শিশুর জন্ম এবং পালন সংক্রান্ত নীতি এখনই নিতে হবে। এটি এমন একটি বিষয়, যার জন্য আর অপেক্ষা করা যায় না। আগামী জুনের মধ্যে শিশু পালন বিষয়ক বাজেট দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা জমা দেবেন তিনি। এপ্রিলে সমস্যাটির তদারক করার জন্য একটি নতুন শিশু ও পরিবার সরকারি সংস্থা স্থাপন করা হবে।’

সরকারি হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দটি জন্মহার কমে যাওয়ার রেকর্ড সবাই ভেঙেছে। প্রত্যাশার চেয়ে আট লাখ কম শিশুর জন্ম হয়েছে, একইভাবে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দেও জন্মহার কমে গিয়েছিল। দেশটিতে ভবিষ্যতে আরও জন্মহার কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে; কারণ সেখানকার মানুষের গড় বয়স দাঁড়িয়েছে ৪৯। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক মানুষের বাস মোনাকোতে। এরপরই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সি মানুষের দেশ জাপান। জাপানের ইউওয়া পপুলেশন রিসার্চ অনুসারে শিশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে জাপান বিশ্বের তৃতীয় ব্যয়বহুল দেশ, দ্বিতীয় হচ্ছে কোরিয়া; আর শীর্ষে রয়েছে চীন।

পাশর্^বর্তী দেশ ভারতের সিকিম রাজ্যের রাজ্য সরকার নারী সরকারি কর্মকর্তাদের একাধিক সন্তান নিতে উৎসাহিত করে চলেছে। প্রস্তাব করা হয়েছে- একটির বেশি সন্তান নিলে পাওয়া যাবে বাড়তি বেতন। বাড়িতে সন্তান লালন-পালনের জন্য সহায়তাকারী রাখলে তার বেতনও রাজ্য সরকার দেবে। সহায়তাকারী নারীর বয়স অনূর্ধ্ব-৪০ হবে, বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি মাসে ১০ হাজার রুপি। ভারতের সবচেয়ে কম জনসংখ্যা বৃদ্ধি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাংয়ের এই অভিনব উদ্যোগ সময়োপযোগী বলে মনে করেন অনেকে। তার প্রস্তাবনা অনুযায়ী, নারী সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দ্বিতীয় সন্তান নিলে এক দফা বেতন বাড়বে। এর বেশি সন্তান নিলে বেতন আরও বাড়ানো হবে।

সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘স্থানীয় মানুষের মধ্যে সন্তান নেয়ার প্রবণতা খুবই কম। এটা সিকিমের জন্য বড় একটি সমস্যা। এই প্রবণতা দূরীকরণে আমাদের অবশ্যই কিছু করতে হবে।’ সিকিমের জনসংখ্যা মাত্র ৭ লাখ, রাজ্যটি জন্মহার (টিএফআর) নিয়ে সমস্যা ভূগছে। রাজ্য সরকারের তথ্যানুযায়ী, গত বছর ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে সিকিমের টিআরএফ সবচেয়ে কম ১.১ ছিলো। সিকিমের আদিবাসী ভুটিয়া ও লিমবু সম্প্রদায়ের একাধিক সন্তান নেয়া প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এজন্য গত বছরের নভেম্বরে রাজ্য সরকারের পক্ষে আদিবাসী সম্প্রদায়ের নারীদের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ও প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে।

ঢাকায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট পরিচালিত ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের শেষে হওয়া ভাষাগত জরিপের তথ্য অনুযায়ী- আদিবাসীদের ৪০টি মাতৃভাষার মধ্যে ১৪টি ভাষা ও জনগোষ্ঠী বিপন্নের তালিকায়। আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলো হচ্ছে- কন্দ, খাড়িয়া, কোডা, সৌরা, মুন্ডারী, কোল, মালতো, খুমি, পাংখোয়া, রেংমিটচা, চাক, খিয়াং, লুসাই ও লালেং। ২০২২ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৫০ হাজার ১৫৯ জন; যাদের মধ্যে ৮ লাখ ২৪ হাজার ৭১৫ জন পুরুষ ও ৮ লাখ ২৫ হাজার ৪০৮ জন নারী। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে জনসংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ১৪১, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১.১০ শতাংশ। এরমধ্যে ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৭ জন পুরুষ ও ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬৬৪ জন নারী। দেখা গেছে, গত ১১ বছরে আদিবাসীর জনসংখ্যা মাত্র ৬৪ হাজার বেড়েছে এবং তা দেশের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশেরও নিচে নেমেছে।

সহজ হিসাব হচ্ছে- বাংলাদেশের প্রত্যেকটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীই বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। বৈশি^ক মহামারীকালীন সরকার প্রান্তিক পর্যায়ের আদিবাসীদের রক্ষার জন্যেও কোনো উল্লেখযোগ্য কার্যসূচি নিতে পারেনি। শহরের বিজলীর আলো থেকে দূরে ছিলো বিধায় কিছতা হলেও প্রাণে বেঁচেছে। আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী, ভাষা ও তাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বাঁচাতে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। অনেক দেশ রয়েছে যারা বিলুপ্তপ্রায় জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে তাদের জন্মহার বাড়াতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশও আদিবাসীদের চিহ্নিত করেছে, ভাষাকে রক্ষার তাগিদ অনুভব করছে।

তাহলে দেরি নয়; এখনই উপযুক্ত সময়। বিলুপ্তপ্রায় আদিবাসীদের জনসংখ্যা বাড়াতে নানান উদ্যোগ, কর্মসূচি গ্রহণ করুন; এটি ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই। বিশ্বের মাতৃভাষা রক্ষায় যেরূপ প্রচেষ্টা প্রশংসিত হয়েছে, বিলুপ্তপ্রায় আদিবাসীর জনসংখ্যা বাড়ানোর দৃষ্টান্তও বিশ^বাসীর কাছে সমাদৃত হবে।

[লেখক : কলামিস্ট]

রপ্তানি বহুমুখীকরণে তথ্যপ্রযুক্তি খাত

আদিবাসীকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা ও পুলিশের ভূমিকা

ছবি

ডেঙ্গু রোধে মানসিকতার পরিবর্তন দরকার

ছবি

পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটনের সম্ভাবনা

ছবি

নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না কেন

ছবি

বায়ুদূষণের ক্ষতি

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আর প্রয়োজন আছে কি

জীবন পাতার অনেক খবর রয়ে যাবে অগোচরে

বিশ্ব আলঝেইমার্স দিবস

ছবি

দ্রব্যমূল্যের চাপে পিষ্ট জনজীবন

বৈষম্যমুক্ত নিরাপদ সমাজ গঠন কেন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি

কষ্টে আছে নিম্নবিত্ত মানুষ

কোর্ট ম্যারেজ সম্পর্কে ভুল ধারণা

ছবি

কৃষির রূপান্তর : প্রাপ্তির মধ্যে অপ্রাপ্তিও আছে

শিক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিক অবক্ষয়

হরিনামের মায়াময় আবেদন

ছবি

হাওর অর্থনীতি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা

ছবি

ড. ইউনূসকে নিয়ে এত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কেন

শিক্ষার কোনো গন্ডি নেই

দেশীয় গাছ কি গুরুত্ব হারাচ্ছে

বলা, শোনা এবং লেখার অধিকার

ছবি

আলুর দাম ও ভোক্তার ভোগান্তি

ছবি

ঘুরে দাঁড়ানো শ্রীলঙ্কার কাছে শেখার কি কিছু আছে

ছবি

প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী হেমনগর জমিদার বাড়ি

আদিবাসীদের অর্জন

ছবি

ভাষা প্রশ্নে আমাদের আবেগ এবং কর্মপ্রয়াস

ছবি

অরিগ্যানোর উপকারিতা

একাত্তরের গণহত্যার খণ্ডচিত্র

প্রাথমিক চিকিৎসা ও জনসচেতনতা

মানবিক শিল্পবিপ্লব

একাত্তরের গণহত্যার খন্ডচিত্র

বিমানবন্দরে লকার থেকে সোনা গায়েব

একটি সহজ সুযোগ হাতছাড়া হলো

একাত্তরের গণহত্যার খন্ডচিত্র

বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও আদিবাসী

মিথুশিলাক মুরমু

বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩

বাংলাদেশ জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ। বিশ্বের অনেক দেশে জনসংখ্য বৃদ্ধি দুঃশ্চিন্তার কারণ। আবার কোথাও কোথাও জনসংখ্যা বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হচ্ছে। চীন জনবহুল দেশগুলোর অন্যতম। ১৪১ কোটি ১৮ লাখ মানুষের দেশ। সেখানে জন্মহার কমে যাওয়ায় বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এতে হয়তো স্বল্প মেয়াদে চীনের জন্য কোনো সমস্যা তৈরি করবে না; তবে জনসংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলে ২০৩০ খ্রিস্টাব্দের পর ধাক্কা খাবে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। দেশটিতে ২০২২ খ্রিস্টাব্দের তুলনায় ৮ লাখ ৫০ হাজার কম শিশু জন্মেছে। গত ৬০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম শিশু জন্মের হার কমলো। ‘এক সন্তান নীতি’র কারণে দেশটিতে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। জাতিসংঘ বলছে, চীনে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা চলতি শতকে ৬০ শতাংশের বেশি কমবে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ছিল ৩৭ দশমিক ১২ এবং ২০২০ খ্রিস্টাব্দে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪৪ দশমিক ১৪ শতাংশে। অবশ্য কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, ‘জনসংখ্যা হ্রাসের সমস্যা সমাধানের জন্য চীনের হাতে এখনো যথেষ্ট মানুষ ও সময় রয়েছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে তারা বিপদে পড়ছে না।’

আরেকটি দেশ জাপানেরও জন্মহার কমে যাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে দেশটির সরকার। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, জাপানের জন্মহার বৃদ্ধির জন্য এখনই ব্যবস্থা নেয়ার উপযুক্ত সময়। এখন ব্যবস্থা না নিলে দেরি হয়ে যাবে। তাই অপেক্ষা করার সময় নেই। ইতোমধ্যে জাপান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সি জনসংখ্যার দেশ হয়ে গেছে। সরকার শিশু জন্মহার বাড়াতে হরেক রকমের সুবিধাদি দিয়ে উৎসাহিত করছে। নগদ অর্থসহ বিশেষ সুবিধাদি দেয়ার পরও জাপানিদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে সে দেশের সরকার।

সমীক্ষানুযায়ী, শিশুর লালন-পালনের ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশগুলোর একটি জাপান। এ কারণে অনেকেই সন্তান নিতে চান না। দেশটির প্রধানমন্ত্রী পার্লামেণ্ট অধিবেশনের শুরুতেই উদ্বিগ্ন হৃদয়ে বলেছেন, ‘আমাদের জাতি সামাজিক ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখতে পারে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। শিশুর জন্ম এবং পালন সংক্রান্ত নীতি এখনই নিতে হবে। এটি এমন একটি বিষয়, যার জন্য আর অপেক্ষা করা যায় না। আগামী জুনের মধ্যে শিশু পালন বিষয়ক বাজেট দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা জমা দেবেন তিনি। এপ্রিলে সমস্যাটির তদারক করার জন্য একটি নতুন শিশু ও পরিবার সরকারি সংস্থা স্থাপন করা হবে।’

সরকারি হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দটি জন্মহার কমে যাওয়ার রেকর্ড সবাই ভেঙেছে। প্রত্যাশার চেয়ে আট লাখ কম শিশুর জন্ম হয়েছে, একইভাবে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দেও জন্মহার কমে গিয়েছিল। দেশটিতে ভবিষ্যতে আরও জন্মহার কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে; কারণ সেখানকার মানুষের গড় বয়স দাঁড়িয়েছে ৪৯। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক মানুষের বাস মোনাকোতে। এরপরই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সি মানুষের দেশ জাপান। জাপানের ইউওয়া পপুলেশন রিসার্চ অনুসারে শিশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে জাপান বিশ্বের তৃতীয় ব্যয়বহুল দেশ, দ্বিতীয় হচ্ছে কোরিয়া; আর শীর্ষে রয়েছে চীন।

পাশর্^বর্তী দেশ ভারতের সিকিম রাজ্যের রাজ্য সরকার নারী সরকারি কর্মকর্তাদের একাধিক সন্তান নিতে উৎসাহিত করে চলেছে। প্রস্তাব করা হয়েছে- একটির বেশি সন্তান নিলে পাওয়া যাবে বাড়তি বেতন। বাড়িতে সন্তান লালন-পালনের জন্য সহায়তাকারী রাখলে তার বেতনও রাজ্য সরকার দেবে। সহায়তাকারী নারীর বয়স অনূর্ধ্ব-৪০ হবে, বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি মাসে ১০ হাজার রুপি। ভারতের সবচেয়ে কম জনসংখ্যা বৃদ্ধি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাংয়ের এই অভিনব উদ্যোগ সময়োপযোগী বলে মনে করেন অনেকে। তার প্রস্তাবনা অনুযায়ী, নারী সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দ্বিতীয় সন্তান নিলে এক দফা বেতন বাড়বে। এর বেশি সন্তান নিলে বেতন আরও বাড়ানো হবে।

সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘স্থানীয় মানুষের মধ্যে সন্তান নেয়ার প্রবণতা খুবই কম। এটা সিকিমের জন্য বড় একটি সমস্যা। এই প্রবণতা দূরীকরণে আমাদের অবশ্যই কিছু করতে হবে।’ সিকিমের জনসংখ্যা মাত্র ৭ লাখ, রাজ্যটি জন্মহার (টিএফআর) নিয়ে সমস্যা ভূগছে। রাজ্য সরকারের তথ্যানুযায়ী, গত বছর ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে সিকিমের টিআরএফ সবচেয়ে কম ১.১ ছিলো। সিকিমের আদিবাসী ভুটিয়া ও লিমবু সম্প্রদায়ের একাধিক সন্তান নেয়া প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এজন্য গত বছরের নভেম্বরে রাজ্য সরকারের পক্ষে আদিবাসী সম্প্রদায়ের নারীদের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ও প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে।

ঢাকায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট পরিচালিত ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের শেষে হওয়া ভাষাগত জরিপের তথ্য অনুযায়ী- আদিবাসীদের ৪০টি মাতৃভাষার মধ্যে ১৪টি ভাষা ও জনগোষ্ঠী বিপন্নের তালিকায়। আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলো হচ্ছে- কন্দ, খাড়িয়া, কোডা, সৌরা, মুন্ডারী, কোল, মালতো, খুমি, পাংখোয়া, রেংমিটচা, চাক, খিয়াং, লুসাই ও লালেং। ২০২২ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৫০ হাজার ১৫৯ জন; যাদের মধ্যে ৮ লাখ ২৪ হাজার ৭১৫ জন পুরুষ ও ৮ লাখ ২৫ হাজার ৪০৮ জন নারী। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে জনসংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ১৪১, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১.১০ শতাংশ। এরমধ্যে ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৭ জন পুরুষ ও ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬৬৪ জন নারী। দেখা গেছে, গত ১১ বছরে আদিবাসীর জনসংখ্যা মাত্র ৬৪ হাজার বেড়েছে এবং তা দেশের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশেরও নিচে নেমেছে।

সহজ হিসাব হচ্ছে- বাংলাদেশের প্রত্যেকটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীই বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। বৈশি^ক মহামারীকালীন সরকার প্রান্তিক পর্যায়ের আদিবাসীদের রক্ষার জন্যেও কোনো উল্লেখযোগ্য কার্যসূচি নিতে পারেনি। শহরের বিজলীর আলো থেকে দূরে ছিলো বিধায় কিছতা হলেও প্রাণে বেঁচেছে। আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী, ভাষা ও তাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বাঁচাতে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। অনেক দেশ রয়েছে যারা বিলুপ্তপ্রায় জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে তাদের জন্মহার বাড়াতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশও আদিবাসীদের চিহ্নিত করেছে, ভাষাকে রক্ষার তাগিদ অনুভব করছে।

তাহলে দেরি নয়; এখনই উপযুক্ত সময়। বিলুপ্তপ্রায় আদিবাসীদের জনসংখ্যা বাড়াতে নানান উদ্যোগ, কর্মসূচি গ্রহণ করুন; এটি ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই। বিশ্বের মাতৃভাষা রক্ষায় যেরূপ প্রচেষ্টা প্রশংসিত হয়েছে, বিলুপ্তপ্রায় আদিবাসীর জনসংখ্যা বাড়ানোর দৃষ্টান্তও বিশ^বাসীর কাছে সমাদৃত হবে।

[লেখক : কলামিস্ট]

back to top