alt

উপ-সম্পাদকীয়

‘স্যার’ সম্বোধন নিয়ে তুলকালাম কান্ড

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

: শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩

সম্প্রতি ‘স্যার’ সম্বোধন নিয়ে রংপুরের একটি ঘটনা বেশ আলোড়ন তুলেছে। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুখকে সেখানকার জেলা প্রশাসক ‘স্যার’ বলতে বাধ্য করায় তিনি ও তার ছোট্ট মেয়ে প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানালে তা অনলাইনে ভাইরাল হয়। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন না করায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের ওপর চড়াও হন আরেক সরকারি কর্মকর্তা। একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্যার না বলায় এক ব্যবসায়ীকে লাঠিপেটা করা হয়েছিল বলে সংবাদ প্রচার হয়েছিল, স্যার না বলায় এক সাংবাদিকদের ওপর চটেছিলেন প্রশাসনের আরেক কর্মকর্তা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুয়েকজন ব্যতীত প্রায় সবাইই সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নানা ধরনের পোস্ট দিচ্ছেন। এই অবস্থান নেয়ার মনস্তাত্ত্বিক কারণ হচ্ছে- ক্ষমতাবান ও ধনী লোকেরা হেনস্তা হলে সাধারণ মানুষ খুশি হয়। তাদের ক্ষমতার দাপট দেখে জনগণ তাদের ওপর রুষ্ট। ক্ষমতার দাপট থাকায় স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরাও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং থানার ওসিকে স্যার সম্বোধন করতে বাধ্য হয়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় কর্মচারী-কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ না বলায় অনেকে বিপদে পড়েছেন, অনেকে ‘স্যার’ না বলায় প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই মানুষ সরকারি অফিসে গেলেই পিয়ন ছাড়া সবাইকে ‘স্যার’ ডাকে। ‘ভাই’ ‘আপা’ ইত্যাদি সম্বোধনও অফিস-আদালতে গ্রহণযোগ্য হয় না, ভাই সম্বোধনে আমলাদের মধ্যে আপত্তি, বিরক্তি, অস্বস্তি পরিলক্ষিত হয়, প্রশাসক হয়ে সবাই জনগণের কাছ থেকে ‘স্যার’ শোনার জন্য আগ্রহান্বিত।

‘স্যার’ সম্বোধন করতে হয় না এই বিষয়টি আমি প্রথম লক্ষ্য করি ১৯৮৯ সনে। সেন্ট্রাল ব্যাংকিং কোর্সে যোগ দিতে আমি এই সালে মালয়েশীয়া গমন করি, সেখানকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক নিগারা মালয়েশীয়া’র প্রশিক্ষণ একাডেমিতে ঢুকে লক্ষ্য করি যে, অফিসের কর্মচারী-কর্মকর্তারা তাদের বিভাগীয় প্রধানকে নাম ধরে সম্বোধন করছে। আমার কাছে এমন সম্বোধন স্বাভাবিক মনে হয়নি, কয়েকদিন আমি লজ্জায় কাউকে সম্বোধনই করিনি। প্রশিক্ষণের শেষ দিন গভর্নরের আমন্ত্রণে সবাই প্রশিক্ষণার্থী ব্যাংক নিগারা ভবনের ছাদে আয়োজিত ডিনারে যোগ দিই, সেখানে এক জুনিয়র মেয়ে কর্মকর্তা গভর্নরকে নাম ধরে সম্বোধন করে তার সঙ্গে নাচতে আহ্বান করল; গভর্নর কোন অজুহাত না দেখিয়ে তার সঙ্গে নাচলেন।

প্রশিক্ষণ একাডেমির প্রধান নারী, তিনিও আমাকে তার সঙ্গে নাচার আহ্বান জানালেন, কিন্তু আমি সম্মত হইনি, কারণ পা-হাত কোনটাতেই নাচের ভঙ্গি নেই। গভর্নর আমার কাছে এসে মৃদু স্বরে বললেন, ‘কেউ এমন অনুষ্ঠানে নাচতে চাইলে তার চাওয়াটাকে সম্মান দেখাতে হয়’। আমি তো ‘স্যার’ বলতে অভ্যস্ত, আমার এক বছরের ফাউন্ডেশন ট্রেনিং-এ শেখানো হয়েছে সব সম্মান ‘স্যার’ শব্দটির মধ্যে, কারো আহ্বানে নাচতে হবে তা তো শেখানো হয়নি।

আমার বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। ১৯২৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফেনী জিএ একাডেমি স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে ১৯২৬ সালে ফেনীর জিএমহাট এলাকায় একটি মাইনর স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। আমার বাবাকে বাবার বয়সী লোকদেরও ‘স্যার’ সম্বোধন করতে শুনেছি। অবসর জীবনে লাঠি হাতে নিয়ে তিনি যখন রাস্তা দিয়ে বাজারে আসতেন তখন তার পেছনে তার ছাত্রদের লম্বা লাইন পড়ে যেত, কেউ তাকে অতিক্রম করে দ্রুত হেঁটে সম্মুখে যাওয়ার কথা চিন্তাও করেননি, এমন কী যারা সাইকেলে চড়ে বাজারে যেতেন তারাও সাইকেল থেকে নেমে সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে বাবার পেছন পেছন আসতেন। চাকরি জীবনে আমি তিনটি স্কুলের পরিচালনা কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলাম, আমিও সবাই পুরুষ শিক্ষককে ‘স্যার’ সম্বোধন করেছি, এখনো শিক্ষক শুনলেই ‘স্যার’ বলি। আমার এই সম্বোধন স্বতঃস্ফূর্ত, কেউ বাধ্য করে না।

‘স্যার’ কোন অপাঙ্ক্তেয় শব্দ নয়। নারী-পুরুষ উভয়কে স্যার বলা যায়। কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে কাউকে ‘স্যার’ বললে তাতে শুধু সম্বোধনের আমেজ থাকে, কিন্তু কেউ যদি ‘স্যার’ সম্বোধনটি জোর করে আদায় করার চেষ্টা করেন তা কর্তৃত্ববাদী আচরণের পর্যায়ভুক্ত

আমরা অফিসেও ‘স্যার’ সম্বোধন করতে অভ্যস্ত ছিলাম, অবসর গ্রহণের পরও তাদের ‘স্যার’ ডাকি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ‘স্যার’ সম্বোধনের বাইরে কিছু কল্পনা করতে পারেন না। আমার ভাগ্য ভালো ছিল না, মোটামুটি বড় অফিসারই ছিলাম, কিন্তু ‘স্যার’ সম্বোধন খুব কম শুনেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলাম বিধায় সবাই ‘জিয়া ভাই’ ডাকত। এমন ‘ভাই’ সম্বোধনে আমি কখনো বিব্রত হইনি, খারাপও লাগেনি।কিন্তু আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সম্মুখে যখন কোন অধস্তন কর্মচারী আমাকে ‘ভাই’ ডাকত তখন আমাকে তার জন্য জবাবদিহি করতে হতো; আমার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অভিযোগ ছিল, আমি অফিসের ডেকোরাম নষ্ট করছি।আমাকে সবাই ‘ভাই’ ডাকলেও আমি কখনো একই পদমর্যাদার আমার জ্যেষ্ঠ কোন কর্মকর্তাকেও ‘ভাই’ ডাকিনি। অফিসের ডেকোরাম রক্ষার্থে একই ব্যাচের সহকর্মী সময়ের ব্যবধানে পদের পার্থক্য হওয়ায় একজন আরেকজনকে বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘স্যার’ বলতেও শুনেছি।

গ্রামাঞ্চলে মান্যগণ্য ব্যক্তিদের ‘কাজি সাহেব’, ‘ভূঁইয়া সাহেব’, ‘চৌধুরী সাহেব’ ইত্যাদি বংশ মর্যাদা অনুযায়ী সম্বোধন করার রীতি চালু আছে। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ‘স্যার’ সম্বোধনটির প্রচলন রয়েছে। নিম্নবিত্তের লোকেরা তাদের প্রশিক্ষকদের সম্বোধন করে বলেন ‘ওস্তাদ’ বা ‘বস’। কিছুটা ঘনিষ্ঠতা থাকলে ‘ডিসি সাহেব’, ‘সচিব সাহেব’ ইত্যাদি পদ নামেও অনেকে সম্বোধন করে থাকেন। রাজনৈতিক নেতাদের কর্মীরা ডাকে ‘লিডার’। ইমাম, মাওলানা, আলেম, মাদ্রাসার শিক্ষক এবং বিচারকদের সাধারণ মানুষ ‘হুজুর’ ডাকেন। মন্ত্রী বা বড় আমলার স্ত্রীদের ‘ম্যাডাম’ ডাকার রীতি প্রচলিত রয়েছে। উচ্চ আদালতে আইনজীবীরা ‘মাই লর্ড’, ‘মি লর্ড’ বলে বিচারকদের সম্বোধন করে থাকেন। সম্বোধনের চেয়েও বড় কষ্টকর হচ্ছে সব আসামিকে বয়স-লিঙ্গ নির্বিশেষে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ভারতের বার কাউন্সিল ঔপনিবেশিকতার এই সবাই সম্বোধন ও কষ্টদায়ক রীতি বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আমলারা ‘স্যার’ ব্যতীত অন্য কোন সম্বোধন সহ্য করতে পারেন না।

ঢাকার সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম, তাদের আমলারাও সহ্য করেন। পেশাগত কারণে সাংবাদিকদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিবের ব্যক্তিগত পরিচয় থাকে বিধায় তারা আমলাদের খুব বেশি পাত্তা দেয় না, তারা আমলাদের ভাই ও আপা সম্বোধন করে থাকেন; এটা আমলাদের মতো ঢাকার সাংবাদিকদের একটা অহংকারবোধ। সাংবাদিকদের কেউ ঘাটাতে চান না। তাই বলে মফস্বলের সাংবাদিকরাও একই মর্যাদার অধিকারী নয়। ইউর অনার’, ‘ইয়োর ম্যাজেস্টি’, ‘ইউর এক্সেলেন্সি’ শব্দগুচ্ছ রাজা-রাণী, রাষ্ট্রপতি এবং রাষ্ট্রদূতদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ‘জাঁহাপনা’ সম্বোধনটি এখন শুধু নাটক সিনেমায় শোনা যায়। ‘মাননীয়’ দরখাস্ত বা আবেদনপত্রে বহুল ব্যবহৃত শব্দ। ‘স্যার’ সম্বোধনের সাথে ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণার যোগসাজশ রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।বৃটিশ কলোনিগুলোতে ‘স্যার’ সম্বোধন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ‘স্যার’-এর বিকল্প যুৎসই বিকল্প শব্দ হিসেবে ‘জনাব’, ‘মহাশয়’, ‘মহাত্মন’ ইত্যাদি কখনো গৃহীত হয়নি। মিস্টার যোগ করে নাম ধরে সম্বোধন করার রীতি আমাদের দেশে কখনো চালু হবে বলেও মনে হয় না।

বঙ্গবন্ধু আমলাদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘সেবা নিতে আসা জনগণের টাকায় তোমাদের বেতন হয়’। সংবিধান অনুযায়ী ‘সবাই সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য’। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের সবাই ‘কর্মচারী’, ‘কর্মকর্তা’ বলে কোনো শব্দ নেই।কিন্তু এই কর্মচারী কখন কিভাবে যে ‘কর্মকর্তা’ হয়ে গেল তার ইতিহাস আমার জানা নেই। কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা থেকেই আমলারা সংবিধানের কর্মচারী থাকতে চাইলেন না, হয়ে গেলেন কর্মকর্তা। সরকারে নিয়োজিত লোকদের সংবিধানে ‘কর্মচারী’ হিসেবে উল্লেখ করার প্রধান কারণ হচ্ছে তাদের জনগণের সেবক হিসেবে পরিচিত করা, তাদের মধ্যে যেন ক্ষমতার অহংকারবোধ না জন্মায়। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের স্যার বা ম্যাডাম বলে সম্বোধন করার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই মর্মে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের মন্তব্যও আমলাদের টলাতে পারেনি।

‘স্যার’ কোন অপাঙ্ক্তেয় শব্দ নয়। নারী-পুরুষ উভয়কে স্যার বলা যায়। কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে কাউকে ‘স্যার’ বললে তাতে শুধু সম্বোধনের আমেজ থাকে, কিন্তু কেউ যদি ‘স্যার’ সম্বোধনটি জোর করে আদায় করার চেষ্টা করেন তা কর্তৃত্ববাদী আচরণের পর্যায়ভুক্ত। ভারতে নাকি একজন অধস্তন কর্মচারী-কর্মকর্তা তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে কথোপকথনে ১৬ বার স্যার ডাকেন, আমাদের দেশে সম্ভবত আরও বেশি। আমি ডেকেছি, এখনো ডাকি- অবসর গ্রহণের পর একটু কমেছে। আইন করে এই মানসিকতার পরিবর্তন করা যাবে না, এই মানসিক দীনতা শুধু আমলাদের মধ্যে নয়, সমাজের সর্বত্র বিরাজমান।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত একজন চিকিৎসককে ‘স্যার’ না ডেকে ‘দাদা’ ডাকায় একজন স্ট্রোকের রোগীকে চিকিৎসা না দেয়ার অভিযোগ ওঠেছিল। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ডিউটি চিকিৎসকদের কক্ষের দরজায় সাদা কাগজে সাইনপেন দিয়ে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘ডাক্তারদের স্যার অথবা ম্যাডাম বলে ডাকবেন’। ডাক্তারকে রোগী পয়সা দেয়, কিন্তু রোগীকে ডাক্তারের কাছে ম্রিয়মান হয়ে থাকতে হয়। সাদা পোশাকে আসামি ধরতে আসা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে শুধু পরিচয়পত্রটি দেখার সাহস কোন সাধারণ লোকের আছে? নেই। নেই বলেই ক্ষমতাবানদের ‘স্যার’ ডাকা আইন করেও বন্ধ করা যাবে না।

[লেখক: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]

জামাই মেলা : উৎসব, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির রঙিন চিত্রপট

হারিয়ে যাওয়া ক্লাস, কঠোর মূল্যায়ন আর প্রশ্নের জটিলতায় নুয়ে পড়া এক প্রজন্ম

বৈষম্য দূর করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলুন

চিকিৎসা যেন বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত না হয়

পথশিশু ও বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তির ব্যর্থতা

মেগা প্রকল্প : প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বচ্ছতা নিয়ে

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি

স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : উপগ্রহ চিত্র ও ওয়েবসাইটের অপরিহার্যতা

ক্ষমতা ও জনপ্রশাসন : আমলাতন্ত্রের ছায়াতলে আমজনতা

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

tab

উপ-সম্পাদকীয়

‘স্যার’ সম্বোধন নিয়ে তুলকালাম কান্ড

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩

সম্প্রতি ‘স্যার’ সম্বোধন নিয়ে রংপুরের একটি ঘটনা বেশ আলোড়ন তুলেছে। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুখকে সেখানকার জেলা প্রশাসক ‘স্যার’ বলতে বাধ্য করায় তিনি ও তার ছোট্ট মেয়ে প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানালে তা অনলাইনে ভাইরাল হয়। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন না করায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের ওপর চড়াও হন আরেক সরকারি কর্মকর্তা। একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্যার না বলায় এক ব্যবসায়ীকে লাঠিপেটা করা হয়েছিল বলে সংবাদ প্রচার হয়েছিল, স্যার না বলায় এক সাংবাদিকদের ওপর চটেছিলেন প্রশাসনের আরেক কর্মকর্তা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুয়েকজন ব্যতীত প্রায় সবাইই সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নানা ধরনের পোস্ট দিচ্ছেন। এই অবস্থান নেয়ার মনস্তাত্ত্বিক কারণ হচ্ছে- ক্ষমতাবান ও ধনী লোকেরা হেনস্তা হলে সাধারণ মানুষ খুশি হয়। তাদের ক্ষমতার দাপট দেখে জনগণ তাদের ওপর রুষ্ট। ক্ষমতার দাপট থাকায় স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরাও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং থানার ওসিকে স্যার সম্বোধন করতে বাধ্য হয়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় কর্মচারী-কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ না বলায় অনেকে বিপদে পড়েছেন, অনেকে ‘স্যার’ না বলায় প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই মানুষ সরকারি অফিসে গেলেই পিয়ন ছাড়া সবাইকে ‘স্যার’ ডাকে। ‘ভাই’ ‘আপা’ ইত্যাদি সম্বোধনও অফিস-আদালতে গ্রহণযোগ্য হয় না, ভাই সম্বোধনে আমলাদের মধ্যে আপত্তি, বিরক্তি, অস্বস্তি পরিলক্ষিত হয়, প্রশাসক হয়ে সবাই জনগণের কাছ থেকে ‘স্যার’ শোনার জন্য আগ্রহান্বিত।

‘স্যার’ সম্বোধন করতে হয় না এই বিষয়টি আমি প্রথম লক্ষ্য করি ১৯৮৯ সনে। সেন্ট্রাল ব্যাংকিং কোর্সে যোগ দিতে আমি এই সালে মালয়েশীয়া গমন করি, সেখানকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক নিগারা মালয়েশীয়া’র প্রশিক্ষণ একাডেমিতে ঢুকে লক্ষ্য করি যে, অফিসের কর্মচারী-কর্মকর্তারা তাদের বিভাগীয় প্রধানকে নাম ধরে সম্বোধন করছে। আমার কাছে এমন সম্বোধন স্বাভাবিক মনে হয়নি, কয়েকদিন আমি লজ্জায় কাউকে সম্বোধনই করিনি। প্রশিক্ষণের শেষ দিন গভর্নরের আমন্ত্রণে সবাই প্রশিক্ষণার্থী ব্যাংক নিগারা ভবনের ছাদে আয়োজিত ডিনারে যোগ দিই, সেখানে এক জুনিয়র মেয়ে কর্মকর্তা গভর্নরকে নাম ধরে সম্বোধন করে তার সঙ্গে নাচতে আহ্বান করল; গভর্নর কোন অজুহাত না দেখিয়ে তার সঙ্গে নাচলেন।

প্রশিক্ষণ একাডেমির প্রধান নারী, তিনিও আমাকে তার সঙ্গে নাচার আহ্বান জানালেন, কিন্তু আমি সম্মত হইনি, কারণ পা-হাত কোনটাতেই নাচের ভঙ্গি নেই। গভর্নর আমার কাছে এসে মৃদু স্বরে বললেন, ‘কেউ এমন অনুষ্ঠানে নাচতে চাইলে তার চাওয়াটাকে সম্মান দেখাতে হয়’। আমি তো ‘স্যার’ বলতে অভ্যস্ত, আমার এক বছরের ফাউন্ডেশন ট্রেনিং-এ শেখানো হয়েছে সব সম্মান ‘স্যার’ শব্দটির মধ্যে, কারো আহ্বানে নাচতে হবে তা তো শেখানো হয়নি।

আমার বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। ১৯২৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফেনী জিএ একাডেমি স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে ১৯২৬ সালে ফেনীর জিএমহাট এলাকায় একটি মাইনর স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। আমার বাবাকে বাবার বয়সী লোকদেরও ‘স্যার’ সম্বোধন করতে শুনেছি। অবসর জীবনে লাঠি হাতে নিয়ে তিনি যখন রাস্তা দিয়ে বাজারে আসতেন তখন তার পেছনে তার ছাত্রদের লম্বা লাইন পড়ে যেত, কেউ তাকে অতিক্রম করে দ্রুত হেঁটে সম্মুখে যাওয়ার কথা চিন্তাও করেননি, এমন কী যারা সাইকেলে চড়ে বাজারে যেতেন তারাও সাইকেল থেকে নেমে সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে বাবার পেছন পেছন আসতেন। চাকরি জীবনে আমি তিনটি স্কুলের পরিচালনা কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলাম, আমিও সবাই পুরুষ শিক্ষককে ‘স্যার’ সম্বোধন করেছি, এখনো শিক্ষক শুনলেই ‘স্যার’ বলি। আমার এই সম্বোধন স্বতঃস্ফূর্ত, কেউ বাধ্য করে না।

‘স্যার’ কোন অপাঙ্ক্তেয় শব্দ নয়। নারী-পুরুষ উভয়কে স্যার বলা যায়। কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে কাউকে ‘স্যার’ বললে তাতে শুধু সম্বোধনের আমেজ থাকে, কিন্তু কেউ যদি ‘স্যার’ সম্বোধনটি জোর করে আদায় করার চেষ্টা করেন তা কর্তৃত্ববাদী আচরণের পর্যায়ভুক্ত

আমরা অফিসেও ‘স্যার’ সম্বোধন করতে অভ্যস্ত ছিলাম, অবসর গ্রহণের পরও তাদের ‘স্যার’ ডাকি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ‘স্যার’ সম্বোধনের বাইরে কিছু কল্পনা করতে পারেন না। আমার ভাগ্য ভালো ছিল না, মোটামুটি বড় অফিসারই ছিলাম, কিন্তু ‘স্যার’ সম্বোধন খুব কম শুনেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলাম বিধায় সবাই ‘জিয়া ভাই’ ডাকত। এমন ‘ভাই’ সম্বোধনে আমি কখনো বিব্রত হইনি, খারাপও লাগেনি।কিন্তু আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সম্মুখে যখন কোন অধস্তন কর্মচারী আমাকে ‘ভাই’ ডাকত তখন আমাকে তার জন্য জবাবদিহি করতে হতো; আমার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অভিযোগ ছিল, আমি অফিসের ডেকোরাম নষ্ট করছি।আমাকে সবাই ‘ভাই’ ডাকলেও আমি কখনো একই পদমর্যাদার আমার জ্যেষ্ঠ কোন কর্মকর্তাকেও ‘ভাই’ ডাকিনি। অফিসের ডেকোরাম রক্ষার্থে একই ব্যাচের সহকর্মী সময়ের ব্যবধানে পদের পার্থক্য হওয়ায় একজন আরেকজনকে বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘স্যার’ বলতেও শুনেছি।

গ্রামাঞ্চলে মান্যগণ্য ব্যক্তিদের ‘কাজি সাহেব’, ‘ভূঁইয়া সাহেব’, ‘চৌধুরী সাহেব’ ইত্যাদি বংশ মর্যাদা অনুযায়ী সম্বোধন করার রীতি চালু আছে। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ‘স্যার’ সম্বোধনটির প্রচলন রয়েছে। নিম্নবিত্তের লোকেরা তাদের প্রশিক্ষকদের সম্বোধন করে বলেন ‘ওস্তাদ’ বা ‘বস’। কিছুটা ঘনিষ্ঠতা থাকলে ‘ডিসি সাহেব’, ‘সচিব সাহেব’ ইত্যাদি পদ নামেও অনেকে সম্বোধন করে থাকেন। রাজনৈতিক নেতাদের কর্মীরা ডাকে ‘লিডার’। ইমাম, মাওলানা, আলেম, মাদ্রাসার শিক্ষক এবং বিচারকদের সাধারণ মানুষ ‘হুজুর’ ডাকেন। মন্ত্রী বা বড় আমলার স্ত্রীদের ‘ম্যাডাম’ ডাকার রীতি প্রচলিত রয়েছে। উচ্চ আদালতে আইনজীবীরা ‘মাই লর্ড’, ‘মি লর্ড’ বলে বিচারকদের সম্বোধন করে থাকেন। সম্বোধনের চেয়েও বড় কষ্টকর হচ্ছে সব আসামিকে বয়স-লিঙ্গ নির্বিশেষে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ভারতের বার কাউন্সিল ঔপনিবেশিকতার এই সবাই সম্বোধন ও কষ্টদায়ক রীতি বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আমলারা ‘স্যার’ ব্যতীত অন্য কোন সম্বোধন সহ্য করতে পারেন না।

ঢাকার সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম, তাদের আমলারাও সহ্য করেন। পেশাগত কারণে সাংবাদিকদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিবের ব্যক্তিগত পরিচয় থাকে বিধায় তারা আমলাদের খুব বেশি পাত্তা দেয় না, তারা আমলাদের ভাই ও আপা সম্বোধন করে থাকেন; এটা আমলাদের মতো ঢাকার সাংবাদিকদের একটা অহংকারবোধ। সাংবাদিকদের কেউ ঘাটাতে চান না। তাই বলে মফস্বলের সাংবাদিকরাও একই মর্যাদার অধিকারী নয়। ইউর অনার’, ‘ইয়োর ম্যাজেস্টি’, ‘ইউর এক্সেলেন্সি’ শব্দগুচ্ছ রাজা-রাণী, রাষ্ট্রপতি এবং রাষ্ট্রদূতদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ‘জাঁহাপনা’ সম্বোধনটি এখন শুধু নাটক সিনেমায় শোনা যায়। ‘মাননীয়’ দরখাস্ত বা আবেদনপত্রে বহুল ব্যবহৃত শব্দ। ‘স্যার’ সম্বোধনের সাথে ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণার যোগসাজশ রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।বৃটিশ কলোনিগুলোতে ‘স্যার’ সম্বোধন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ‘স্যার’-এর বিকল্প যুৎসই বিকল্প শব্দ হিসেবে ‘জনাব’, ‘মহাশয়’, ‘মহাত্মন’ ইত্যাদি কখনো গৃহীত হয়নি। মিস্টার যোগ করে নাম ধরে সম্বোধন করার রীতি আমাদের দেশে কখনো চালু হবে বলেও মনে হয় না।

বঙ্গবন্ধু আমলাদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘সেবা নিতে আসা জনগণের টাকায় তোমাদের বেতন হয়’। সংবিধান অনুযায়ী ‘সবাই সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য’। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের সবাই ‘কর্মচারী’, ‘কর্মকর্তা’ বলে কোনো শব্দ নেই।কিন্তু এই কর্মচারী কখন কিভাবে যে ‘কর্মকর্তা’ হয়ে গেল তার ইতিহাস আমার জানা নেই। কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা থেকেই আমলারা সংবিধানের কর্মচারী থাকতে চাইলেন না, হয়ে গেলেন কর্মকর্তা। সরকারে নিয়োজিত লোকদের সংবিধানে ‘কর্মচারী’ হিসেবে উল্লেখ করার প্রধান কারণ হচ্ছে তাদের জনগণের সেবক হিসেবে পরিচিত করা, তাদের মধ্যে যেন ক্ষমতার অহংকারবোধ না জন্মায়। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের স্যার বা ম্যাডাম বলে সম্বোধন করার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই মর্মে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের মন্তব্যও আমলাদের টলাতে পারেনি।

‘স্যার’ কোন অপাঙ্ক্তেয় শব্দ নয়। নারী-পুরুষ উভয়কে স্যার বলা যায়। কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে কাউকে ‘স্যার’ বললে তাতে শুধু সম্বোধনের আমেজ থাকে, কিন্তু কেউ যদি ‘স্যার’ সম্বোধনটি জোর করে আদায় করার চেষ্টা করেন তা কর্তৃত্ববাদী আচরণের পর্যায়ভুক্ত। ভারতে নাকি একজন অধস্তন কর্মচারী-কর্মকর্তা তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে কথোপকথনে ১৬ বার স্যার ডাকেন, আমাদের দেশে সম্ভবত আরও বেশি। আমি ডেকেছি, এখনো ডাকি- অবসর গ্রহণের পর একটু কমেছে। আইন করে এই মানসিকতার পরিবর্তন করা যাবে না, এই মানসিক দীনতা শুধু আমলাদের মধ্যে নয়, সমাজের সর্বত্র বিরাজমান।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত একজন চিকিৎসককে ‘স্যার’ না ডেকে ‘দাদা’ ডাকায় একজন স্ট্রোকের রোগীকে চিকিৎসা না দেয়ার অভিযোগ ওঠেছিল। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ডিউটি চিকিৎসকদের কক্ষের দরজায় সাদা কাগজে সাইনপেন দিয়ে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘ডাক্তারদের স্যার অথবা ম্যাডাম বলে ডাকবেন’। ডাক্তারকে রোগী পয়সা দেয়, কিন্তু রোগীকে ডাক্তারের কাছে ম্রিয়মান হয়ে থাকতে হয়। সাদা পোশাকে আসামি ধরতে আসা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে শুধু পরিচয়পত্রটি দেখার সাহস কোন সাধারণ লোকের আছে? নেই। নেই বলেই ক্ষমতাবানদের ‘স্যার’ ডাকা আইন করেও বন্ধ করা যাবে না।

[লেখক: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]

back to top