alt

উপ-সম্পাদকীয়

সব বাণিজ্যই দখল করে নিচ্ছে কর্পোরেট হাউস

এ এ জাফর ইকবাল

: শুক্রবার, ১৯ মে ২০২৩
image

রান্নাঘর থেকে শুরু করে সব বাণিজ্যে কর্পোরেট হাউসগুলো বাজার দখলের এক অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতায় নেমেছে

রান্নাঘর থেকে শুরু করে সব বাণিজ্যে কর্পোরেট হাউসগুলো বাজার দখলের এক অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতায় নেমেছে। অর্থনীতির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। সীমিত আয়ের স্বল্প সঙ্গতির মানুষ অসহায় হয়ে পড়ছে বাজার ব্যবস্থার কাছে।

নগরনন্দিনীদের এখন আর পরিচিতি নেই রান্নাঘরের দীর্ঘদিনের অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী শিলপাটার সঙ্গে। পয়সা খরচ করে হাতের কাছেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের খাবারের রেডিমিক্স মসল্লা। এমনকি মানুষের রুচি ও পছন্দের বিরিয়ানি-খিচুরিতে রেডিমিক্স এসেছে কর্পোরেট হাউসগুলোর বদৌলতে।

রাঙামাটির হলুদ, বগুড়ার মরিচ কিংবা ফরিদপুরের ধনে গুঁড়াও পাওয়া যাচ্ছে শুধু পয়সা খরচ করলেই শহরের সব প্রান্তে মনোহরি দোকানগুলোতে। লবণে আয়োডিনের প্রয়োজন। সে প্রয়োজন মিটিয়ে এখন প্যকেটজাত লবণে পাওয়া যাচ্ছে ভিটামিনের সংমিশ্রণ। এতে লাভ-ক্ষতি কার হচ্ছে আপাতত হিসাব করছে না কেউ; কিন্তু লাগামহীন এই বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা পণ্য বাজারে স্বাভাবিক বাজারজাতকরণে প্রচলিত নিয়ম অতি দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই আধুনিক মোড়কে চটকদারি বিজ্ঞাপন হারাতে বসেছে পণ্যের গুণগতমানের বাজার।

ধনে, মরিচ এবং হলুদ উৎপাদক কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে আর বাজারে ছুটতে হচ্ছে না। কর্পোরেট হাউসগুলো আগাম দাদন দিয়ে কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ারদের মাধ্যমে কিনে নিচ্ছে উৎপাদিত ফসল। পরিশ্রম কমেছে কৃষকদের। মুনাফা কিছু কম হলেও উৎপাদিত পণ্যের বাই-ব্যাক গ্যারান্টিতে আপাতত তারা খুশি।

প্রশ্ন হচ্ছে নকল-ভেজাল নিয়ে। এ ধরনের দ্রুত বাজার সম্প্রসারণ স্বাভাবিকভাবে গ্রাস করে চলেছে গুণগতমানের বিষয়াবলী। অনেক পণ্যই আছে যার আসলটা আর বাজারে নেই। ভেজালগুলোর মধ্যে কোনটায় কম, কোনটায় বেশি ভেজাল, তা-ও কেউ খতিয়ে দেখছে না।

প্রসঙ্গক্রমে এক-আটটির উদাহরণ না হলেই নয়। লেক্সাস বিস্কুট, বছর পাঁচেক আগে এই বিস্কুটটি আমদানি হয়ে আসতো। এখন বিদেশি আমদানি করা বিস্কুট বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। পাঁচটি দেশি কোম্পানি বাণিজ্যিক নাম অপরিবর্তিত রেখে বাজারজাত করছে এই বিস্কুট। মোড়ক দেখে বোঝার উপায় নাই কোনটির গুণগতমান কেমন। খেলে বোঝা যায়, কোনটিতেই আমদানিকৃত বিস্কুটের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেনি কেউ। অথচ সবার আছে আইএসও সার্টিফিকেট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আইএসও সনদ যারা দেয় তাদের কারিগরি সঙ্গতি নেই এ সমস্ত পণ্যের গুণগতমান যাচাই করবার। সরকারের সীমিত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিস্কুট উৎপাদকরা চাতুরি করছেন বাজার দখলের কারসাজিতে। সবগুলো পণ্যেরই একই দাম। নাম ও মোড়কের ডিজাইনে তেমন কোন পার্থক্য নেই। একই পণ্যের এত বাজারজাতকরণের সুযোগ কেন দেয়া হলো, কে তার ব্যাখ্যা দেন!

নকল-ভেজাল পণ্য উৎপাদনে আমাদের ব্যবসায়ীদের উৎসাহী করে তুলেছে দুই বৃহৎ শক্তি যথাক্রমে চীন ও ভারত। চীনে এবং ভারতে যে কোন পণ্য তারা অন্য দেশে সরবরাহ করে থাকে গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক। এক্ষেত্রে পণ্যের গুণগতমান নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আপস করতে হয়। বাণিজ্য বিস্তারের নতুন কৌশল সম্পর্কে সরকার কতটুকু সজাগ সে সম্বন্ধে আমাদের খুব একটা ধারণা নেই। তবে অনুমান করা যায়, সরকারের নিয়ম-কানুনগুলো অতীতের ধারাবাহিকতায় চলে আসছে; যে কারণে কর্পোরেট হাউসগুলোর বাণিজ্যিক ফাঁকি ধরার কৌশল সম্পর্কে তারা কতটুকুই বা অবগত!

বাজারজাতকরণের আধুনিকতা নিত্যনতুন ছলনা কাজে লাগিয়ে করছে নতুন নতুন অপচেষ্টা। আকর্ষনীয় মোড়ক আর চটকদারি বিজ্ঞাপন ভোক্তাদের অনায়াসেই ধাঁধাঁয় ফেলে দিচ্ছে। চাতুরির কাছে তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য। কেউ কি বলতে পারেন, লবণে ভিটামিনের কি প্রয়োজন? একই তো প্রশ্ন, সয়াবিন তেলের ভিটামিন সংমিশ্রণ সম্পর্কে। কে খুঁজে দেখেছে সয়াবিনে আদৌ ভিটামিন মেশানো হচ্ছে কিনা। এভাবে ভিটামিন মানবদেহের উপকারে আসবে, কে তা বলতে পারে? ভোক্তা আনন্দে কিনে নিচ্ছে বোতলজাত সয়াবিন তেল যা বিক্রেতার বিজ্ঞাপনে ভিটামিনসমৃদ্ধ বলে প্রচার চালানো হচ্ছে।

প্রায় বছর দু’য়েক আগের একটি ঘটনা বলতে হচ্ছে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে একদিন গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে গিয়ে দেখি, তিনি ওয়ার্ড ভিজিট করছেন। ওয়ার্ডের অ্যাটেনডেন্ট নার্সরা রোগীর শিয়রে প্রাপ্ত হরলিক্সের বোতল নিয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করে সেগুলো লুকাচ্ছেন। পরবর্তীতে ডা. জাফরুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তাকে বিষয়টি তুলে ধরলাম। সহাস্যে তিনি বললেন, কোন ভালো চিকিৎসক কিংবা পুষ্টিবিজ্ঞানী কখনই কোন রোগীকে এই দামি পানীয় গ্রহণে পরামর্শ দেয় না। কেন তারা এটা কিনে খায়, কে জানে! উল্টো এ পণ্য পেট খারাপের উপকরণ। তাই কোন রোগীর শিয়রে হরলিক্স দেখলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। বুঝলাম, কথাটা শতকরা একশ ভাগ সঠিক। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে হরলিক্সকে জনপ্রিয় করার কৌশল খাটানো হয়েছে তা নির্ঘাত একধরনের চাতুরিবিশেষ। প্রসূতির জন্য হরলিক্স, শিশুর জন্য হরলিক্স, ভিটামিনের জন্য হরলিক্স দেখলে মনে হয়, এ কোন রোগীর পথ্য নয়, একেবারেই স্বর্গীয় অমৃতবিশেষ। এটা ভন্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কোন কারণে কি পরিমাণে হরলিক্স আমদানি হয়, কে তার হিসাব নেয়। এটা ব্যক্তিপর্যায়ে অপচয়। এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও অপচয়।

স্থানীয় উৎপাদনে পণ্য বাজারজাতকরণে কম-বেশি নমনীয়তার প্রয়োজন থাকলেও যে সমস্ত পণ্য একেবারেই আমদানিকৃত, সেগুলো আমদানির ব্যাপারে রক্ষণশীলতা অপরিহার্য। প্রয়োজন নেই সে সমস্ত পণ্য আমদানিতে এমন কিছু নীতিমালা দরকার, যা অর্থ ব্যয়ে কম-বেশি রক্ষণশীলতা বজায় থাকে। কি প্রয়োজন হরলিক্স আমদানি করার? এটা তো তেমন কোন নিত্য-ব্যবহার্য পণ্য নয়। হরলিক্সের উদাহরণটি একমাত্র উদাহরণ নয়। এমন ধরনের আরো অনেক অপ্রয়োজনীয় পণ্য আছে যা আমদানি করা ধনী ও বিলাসী শ্রেণীকে সহযোগিতা করার নামান্তর। আঙুর, আপেল কিংবা গাড়ি আমদানিতে সরকার রক্ষণশীল হলেও হরলিক্স আমদানিতে কেন নয়? বিষয়টি প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় নেয়া উচিত।

কর্পোরেট হাউসগুলোর নিত্য-নতুন চাতুরি এই অবধারিতভাবেই বাজার দখলের এক অসাধু এবং অসৎ প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

ধনে, মরিচ এবং হলুদ উৎপাদক কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে আর বাজারে ছুটতে হচ্ছে না। কর্পোরেট হাউসগুলো আগাম দাদন দিয়ে কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ারদের মাধ্যমে কিনে নিচ্ছে উৎপাদিত ফসল। পরিশ্রম কমেছে কৃষকদের। মুনাফা কিছু কম হলেও উৎপাদিত পণ্যের বাই-ব্যাক গ্যারান্টিতে আপাতত তারা খুশি

ব্যবসায় কর্পোরেট হাউস আধুনিক এবং বিজ্ঞানসম্মত। বাজার অর্থনীতিতে এটা প্রয়োজন আছে। ব্যক্তি মালিকানায় যদি ব্যবসায় সাফল্য আসে তাহলে অবধারিতভাবেই জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সৃজনশীল জনহিতকর ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের অর্থনীতিতে কর্পোরেট হাউসগুলোর বিস্তার ও বিকাশ লাভ করেছিল ’৬০-এর দশকে। সে সময় টাঙ্গাইলের আর পি সাহা এবং চট্টগ্রামের এ কে খান গ্রুপের মতো মাত্র জনাপাঁচেক বাঙালি ছিল এ ব্যবসায়। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ আমাদের কর্পোরেট ব্যবসা ধ্বংস করে দেয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ২০ বছর পর শুরু হয়েছে কর্পোরেট ব্যবসার নতুন অগ্রযাত্রা। আমাদের বহু আগে ভারতে টাটা, বিরলা, আদভানি এবং এ ধরনের আরো অনেক কর্পোরেট হাউস যাত্রা শুরু হরে। তাদের যাত্রায় কোন ব্যাঘাত ঘটেনি। ওই কর্পোরেট হাউজগুলো জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবাই সময় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। ফলে অর্থনীতিতে তাদের অবদান রাষ্ট্রের কাছে যেমন স্মরণযোগ্য ঠিক তেমনি জনসাধারণের কাছেও প্রশংসিত। জামশেদ জি টাটার টাটা কোম্পানি বর্তমানে রতন টাটা পর্যন্ত পৌঁছেছে। কোথাও ছেদ পড়েনি কখনো। অসংখ্য জনহিতকর কাজ করেছে, ভবিষ্যতে আরো অনেক কিছু করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে তারা ঢুকে পড়েছে আন্তর্জাতিক বলয়ে। সরকার যেমন তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে ঠিক তেমনি জনগণও সমীহ করে। অথচ আমাদের দেশে ঘটছে ভিন্ন কিছুর প্রসার। রাতারাতি টাকার মালিক হবার জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতায় তারা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। অনেক ক্ষেত্রে তাদের চাপের কাছে সরকারও অসহায়। তারা জনগণের প্রত্যাশাকে সামান্য মাত্রও মূল্যায়ন করে না। মানুষের আর্থিক সংকটের দুর্দিনে তারা হয়ে ওঠে একেবারে হায়েনার মতো স্বার্থলোভী। অতি-সম্প্রতি দফায় দফায় বেড়েছে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম। সরকার পারল না বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে। পারবেই বা কেন! যারা এ পণ্য আমদানি করে, বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে। কি করে পারবে সরকার?

এ দেশে মানুষ যেমন সীমিত সঙ্গতির চৌকাঠ মাড়াতে পারেনি, ঠিক তেমনি সরকারেরও আছে সঙ্গতির সীমাবদ্ধতা। এ অবস্থায় কর্পোরেট হাউসগুলোকে বিস্তার ও বিকাশে কম-বেশি নমনীয়তা প্রদর্শন জাতীয় অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য। এ কারণেই পুঁজি বিনিয়োগসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা কর্পোরেট হাউসগুলোর জন্য অবারিত রাখার বিকল্প নেই। তবে লাগামহীনভাবে কর্পোরেট হাউসগুলোর এই অগ্রযাত্রা অবারিতভবেই ঝুঁকি ও নিয়ন্ত্রণহীনতা সঠিক নয়। চিনি শিল্প ও পাট শিল্পের মতো সরকারি কারখানায় তালা লাগিয়ে বেসকারি উদ্যোক্তাদের বেসামাল অগ্রযাত্রা নির্দিষ্ট সময়ের পরে পুরো অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। এখানে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন এবং নিয়ন্ত্রণটি হতে হবে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সুদূরপ্রসারি। তা না হলে বাজার ও সরকার অবশ্যই বিপাকে পড়বে অদূর ভবিষ্যতে।

কর্পোরেট হাউসগুলোর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আধুনিক এবং নতুন পরিকল্পনার প্রয়োজন। প্রয়োজন আছে কর্পোরেট হাউসের; কিন্তু আমাদের দেশে যেভাবে এ ব্যবসার বিস্তার ও সম্প্রসারণ ঘটছে, ঠিক সেভাবে নয়, জনহিতকর এবং জনকল্যাণকর ভবিষ্যতের লাগাম এখন খুবই প্রয়োজন। যদি তা করা হয়, একমাত্র তাহলেই জাতীয় অর্থনীতিতে সুষম এবং পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। অন্যথায় যে জেনারেশনে উত্থান, ঠিক সেই জেনারেশনেই কর্পোরেট হাউসগুলোর অকালমৃত্যু ঘটবে।

[লেখক : সাবেক ব্যাংকার]

বিয়ের কিছু লোকাচার ও অপব্যয় প্রসঙ্গে

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে রক্ষা করুন

তরুণদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব

শিশুমৃত্যু রোধে করণীয় কী

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও মনঃসমীক্ষণ

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও বাস্তবতা

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনি প্রতিকার ও বাস্তবতা

তথ্য-উপাত্তের গরমিলে বাজারে অস্থিরতা, অর্থনীতিতে বিভ্রান্তি

দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব

ইরানে কট্টরপন্থার সাময়িক পরাজয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কী

ক্ষমতার সাতকাহন

জলবায়ু সংকট : আমাদের উপলব্ধি

নারী-পুরুষ চুড়ি পরি, দেশের অন্যায় দূর করি!

ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার

ছবি

সাধারণ মানুষেরা বড় অসাধারণ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও কারিগরি শিক্ষা

মাদক রুখতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

পারিবারিক অপরাধপ্রবণতা ও কয়েকটি প্রশ্ন

ডারউইনকে খুঁজে পেয়েছি

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফসল উৎপাদন করা জরুরি

পিএসসি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াবে কীভাবে

এত উন্নয়নের পরও বাসযোগ্যতায় কেন পিছিয়েই থাকছে ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য কি কেউ নেই?

জলবায়ু রক্ষায় কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে

অধরার হাতে সমর্পিত ক্ষমতা

প্রসঙ্গ : কোটাবিরোধী আন্দোলন

রম্যগদ্য : যে করিবে চালাকি, বুঝিবে তার জ্বালা কী

একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলার পরিণতি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কেন শ্রেণীকক্ষের বাইরে

মেধা নিয়ে কম মেধাবীর ভাবনা

প্রজাতন্ত্রের সেবক কেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বনে যান

ছবি

বাইডেন কি দলে বোঝা হয়ে যাচ্ছেন?

ছবি

দুই যুগের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সাপ উপকারী প্রাণীও বটে!

ছবি

বাস্তববাদী রাজনীতিক জ্যোতি বসু

tab

উপ-সম্পাদকীয়

সব বাণিজ্যই দখল করে নিচ্ছে কর্পোরেট হাউস

এ এ জাফর ইকবাল

image

রান্নাঘর থেকে শুরু করে সব বাণিজ্যে কর্পোরেট হাউসগুলো বাজার দখলের এক অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতায় নেমেছে

শুক্রবার, ১৯ মে ২০২৩

রান্নাঘর থেকে শুরু করে সব বাণিজ্যে কর্পোরেট হাউসগুলো বাজার দখলের এক অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতায় নেমেছে। অর্থনীতির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। সীমিত আয়ের স্বল্প সঙ্গতির মানুষ অসহায় হয়ে পড়ছে বাজার ব্যবস্থার কাছে।

নগরনন্দিনীদের এখন আর পরিচিতি নেই রান্নাঘরের দীর্ঘদিনের অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী শিলপাটার সঙ্গে। পয়সা খরচ করে হাতের কাছেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের খাবারের রেডিমিক্স মসল্লা। এমনকি মানুষের রুচি ও পছন্দের বিরিয়ানি-খিচুরিতে রেডিমিক্স এসেছে কর্পোরেট হাউসগুলোর বদৌলতে।

রাঙামাটির হলুদ, বগুড়ার মরিচ কিংবা ফরিদপুরের ধনে গুঁড়াও পাওয়া যাচ্ছে শুধু পয়সা খরচ করলেই শহরের সব প্রান্তে মনোহরি দোকানগুলোতে। লবণে আয়োডিনের প্রয়োজন। সে প্রয়োজন মিটিয়ে এখন প্যকেটজাত লবণে পাওয়া যাচ্ছে ভিটামিনের সংমিশ্রণ। এতে লাভ-ক্ষতি কার হচ্ছে আপাতত হিসাব করছে না কেউ; কিন্তু লাগামহীন এই বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা পণ্য বাজারে স্বাভাবিক বাজারজাতকরণে প্রচলিত নিয়ম অতি দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই আধুনিক মোড়কে চটকদারি বিজ্ঞাপন হারাতে বসেছে পণ্যের গুণগতমানের বাজার।

ধনে, মরিচ এবং হলুদ উৎপাদক কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে আর বাজারে ছুটতে হচ্ছে না। কর্পোরেট হাউসগুলো আগাম দাদন দিয়ে কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ারদের মাধ্যমে কিনে নিচ্ছে উৎপাদিত ফসল। পরিশ্রম কমেছে কৃষকদের। মুনাফা কিছু কম হলেও উৎপাদিত পণ্যের বাই-ব্যাক গ্যারান্টিতে আপাতত তারা খুশি।

প্রশ্ন হচ্ছে নকল-ভেজাল নিয়ে। এ ধরনের দ্রুত বাজার সম্প্রসারণ স্বাভাবিকভাবে গ্রাস করে চলেছে গুণগতমানের বিষয়াবলী। অনেক পণ্যই আছে যার আসলটা আর বাজারে নেই। ভেজালগুলোর মধ্যে কোনটায় কম, কোনটায় বেশি ভেজাল, তা-ও কেউ খতিয়ে দেখছে না।

প্রসঙ্গক্রমে এক-আটটির উদাহরণ না হলেই নয়। লেক্সাস বিস্কুট, বছর পাঁচেক আগে এই বিস্কুটটি আমদানি হয়ে আসতো। এখন বিদেশি আমদানি করা বিস্কুট বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। পাঁচটি দেশি কোম্পানি বাণিজ্যিক নাম অপরিবর্তিত রেখে বাজারজাত করছে এই বিস্কুট। মোড়ক দেখে বোঝার উপায় নাই কোনটির গুণগতমান কেমন। খেলে বোঝা যায়, কোনটিতেই আমদানিকৃত বিস্কুটের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেনি কেউ। অথচ সবার আছে আইএসও সার্টিফিকেট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আইএসও সনদ যারা দেয় তাদের কারিগরি সঙ্গতি নেই এ সমস্ত পণ্যের গুণগতমান যাচাই করবার। সরকারের সীমিত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিস্কুট উৎপাদকরা চাতুরি করছেন বাজার দখলের কারসাজিতে। সবগুলো পণ্যেরই একই দাম। নাম ও মোড়কের ডিজাইনে তেমন কোন পার্থক্য নেই। একই পণ্যের এত বাজারজাতকরণের সুযোগ কেন দেয়া হলো, কে তার ব্যাখ্যা দেন!

নকল-ভেজাল পণ্য উৎপাদনে আমাদের ব্যবসায়ীদের উৎসাহী করে তুলেছে দুই বৃহৎ শক্তি যথাক্রমে চীন ও ভারত। চীনে এবং ভারতে যে কোন পণ্য তারা অন্য দেশে সরবরাহ করে থাকে গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক। এক্ষেত্রে পণ্যের গুণগতমান নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আপস করতে হয়। বাণিজ্য বিস্তারের নতুন কৌশল সম্পর্কে সরকার কতটুকু সজাগ সে সম্বন্ধে আমাদের খুব একটা ধারণা নেই। তবে অনুমান করা যায়, সরকারের নিয়ম-কানুনগুলো অতীতের ধারাবাহিকতায় চলে আসছে; যে কারণে কর্পোরেট হাউসগুলোর বাণিজ্যিক ফাঁকি ধরার কৌশল সম্পর্কে তারা কতটুকুই বা অবগত!

বাজারজাতকরণের আধুনিকতা নিত্যনতুন ছলনা কাজে লাগিয়ে করছে নতুন নতুন অপচেষ্টা। আকর্ষনীয় মোড়ক আর চটকদারি বিজ্ঞাপন ভোক্তাদের অনায়াসেই ধাঁধাঁয় ফেলে দিচ্ছে। চাতুরির কাছে তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য। কেউ কি বলতে পারেন, লবণে ভিটামিনের কি প্রয়োজন? একই তো প্রশ্ন, সয়াবিন তেলের ভিটামিন সংমিশ্রণ সম্পর্কে। কে খুঁজে দেখেছে সয়াবিনে আদৌ ভিটামিন মেশানো হচ্ছে কিনা। এভাবে ভিটামিন মানবদেহের উপকারে আসবে, কে তা বলতে পারে? ভোক্তা আনন্দে কিনে নিচ্ছে বোতলজাত সয়াবিন তেল যা বিক্রেতার বিজ্ঞাপনে ভিটামিনসমৃদ্ধ বলে প্রচার চালানো হচ্ছে।

প্রায় বছর দু’য়েক আগের একটি ঘটনা বলতে হচ্ছে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে একদিন গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে গিয়ে দেখি, তিনি ওয়ার্ড ভিজিট করছেন। ওয়ার্ডের অ্যাটেনডেন্ট নার্সরা রোগীর শিয়রে প্রাপ্ত হরলিক্সের বোতল নিয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করে সেগুলো লুকাচ্ছেন। পরবর্তীতে ডা. জাফরুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তাকে বিষয়টি তুলে ধরলাম। সহাস্যে তিনি বললেন, কোন ভালো চিকিৎসক কিংবা পুষ্টিবিজ্ঞানী কখনই কোন রোগীকে এই দামি পানীয় গ্রহণে পরামর্শ দেয় না। কেন তারা এটা কিনে খায়, কে জানে! উল্টো এ পণ্য পেট খারাপের উপকরণ। তাই কোন রোগীর শিয়রে হরলিক্স দেখলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। বুঝলাম, কথাটা শতকরা একশ ভাগ সঠিক। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে হরলিক্সকে জনপ্রিয় করার কৌশল খাটানো হয়েছে তা নির্ঘাত একধরনের চাতুরিবিশেষ। প্রসূতির জন্য হরলিক্স, শিশুর জন্য হরলিক্স, ভিটামিনের জন্য হরলিক্স দেখলে মনে হয়, এ কোন রোগীর পথ্য নয়, একেবারেই স্বর্গীয় অমৃতবিশেষ। এটা ভন্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কোন কারণে কি পরিমাণে হরলিক্স আমদানি হয়, কে তার হিসাব নেয়। এটা ব্যক্তিপর্যায়ে অপচয়। এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও অপচয়।

স্থানীয় উৎপাদনে পণ্য বাজারজাতকরণে কম-বেশি নমনীয়তার প্রয়োজন থাকলেও যে সমস্ত পণ্য একেবারেই আমদানিকৃত, সেগুলো আমদানির ব্যাপারে রক্ষণশীলতা অপরিহার্য। প্রয়োজন নেই সে সমস্ত পণ্য আমদানিতে এমন কিছু নীতিমালা দরকার, যা অর্থ ব্যয়ে কম-বেশি রক্ষণশীলতা বজায় থাকে। কি প্রয়োজন হরলিক্স আমদানি করার? এটা তো তেমন কোন নিত্য-ব্যবহার্য পণ্য নয়। হরলিক্সের উদাহরণটি একমাত্র উদাহরণ নয়। এমন ধরনের আরো অনেক অপ্রয়োজনীয় পণ্য আছে যা আমদানি করা ধনী ও বিলাসী শ্রেণীকে সহযোগিতা করার নামান্তর। আঙুর, আপেল কিংবা গাড়ি আমদানিতে সরকার রক্ষণশীল হলেও হরলিক্স আমদানিতে কেন নয়? বিষয়টি প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় নেয়া উচিত।

কর্পোরেট হাউসগুলোর নিত্য-নতুন চাতুরি এই অবধারিতভাবেই বাজার দখলের এক অসাধু এবং অসৎ প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

ধনে, মরিচ এবং হলুদ উৎপাদক কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে আর বাজারে ছুটতে হচ্ছে না। কর্পোরেট হাউসগুলো আগাম দাদন দিয়ে কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ারদের মাধ্যমে কিনে নিচ্ছে উৎপাদিত ফসল। পরিশ্রম কমেছে কৃষকদের। মুনাফা কিছু কম হলেও উৎপাদিত পণ্যের বাই-ব্যাক গ্যারান্টিতে আপাতত তারা খুশি

ব্যবসায় কর্পোরেট হাউস আধুনিক এবং বিজ্ঞানসম্মত। বাজার অর্থনীতিতে এটা প্রয়োজন আছে। ব্যক্তি মালিকানায় যদি ব্যবসায় সাফল্য আসে তাহলে অবধারিতভাবেই জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সৃজনশীল জনহিতকর ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের অর্থনীতিতে কর্পোরেট হাউসগুলোর বিস্তার ও বিকাশ লাভ করেছিল ’৬০-এর দশকে। সে সময় টাঙ্গাইলের আর পি সাহা এবং চট্টগ্রামের এ কে খান গ্রুপের মতো মাত্র জনাপাঁচেক বাঙালি ছিল এ ব্যবসায়। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ আমাদের কর্পোরেট ব্যবসা ধ্বংস করে দেয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ২০ বছর পর শুরু হয়েছে কর্পোরেট ব্যবসার নতুন অগ্রযাত্রা। আমাদের বহু আগে ভারতে টাটা, বিরলা, আদভানি এবং এ ধরনের আরো অনেক কর্পোরেট হাউস যাত্রা শুরু হরে। তাদের যাত্রায় কোন ব্যাঘাত ঘটেনি। ওই কর্পোরেট হাউজগুলো জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবাই সময় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। ফলে অর্থনীতিতে তাদের অবদান রাষ্ট্রের কাছে যেমন স্মরণযোগ্য ঠিক তেমনি জনসাধারণের কাছেও প্রশংসিত। জামশেদ জি টাটার টাটা কোম্পানি বর্তমানে রতন টাটা পর্যন্ত পৌঁছেছে। কোথাও ছেদ পড়েনি কখনো। অসংখ্য জনহিতকর কাজ করেছে, ভবিষ্যতে আরো অনেক কিছু করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে তারা ঢুকে পড়েছে আন্তর্জাতিক বলয়ে। সরকার যেমন তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে ঠিক তেমনি জনগণও সমীহ করে। অথচ আমাদের দেশে ঘটছে ভিন্ন কিছুর প্রসার। রাতারাতি টাকার মালিক হবার জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতায় তারা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। অনেক ক্ষেত্রে তাদের চাপের কাছে সরকারও অসহায়। তারা জনগণের প্রত্যাশাকে সামান্য মাত্রও মূল্যায়ন করে না। মানুষের আর্থিক সংকটের দুর্দিনে তারা হয়ে ওঠে একেবারে হায়েনার মতো স্বার্থলোভী। অতি-সম্প্রতি দফায় দফায় বেড়েছে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম। সরকার পারল না বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে। পারবেই বা কেন! যারা এ পণ্য আমদানি করে, বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে। কি করে পারবে সরকার?

এ দেশে মানুষ যেমন সীমিত সঙ্গতির চৌকাঠ মাড়াতে পারেনি, ঠিক তেমনি সরকারেরও আছে সঙ্গতির সীমাবদ্ধতা। এ অবস্থায় কর্পোরেট হাউসগুলোকে বিস্তার ও বিকাশে কম-বেশি নমনীয়তা প্রদর্শন জাতীয় অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য। এ কারণেই পুঁজি বিনিয়োগসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা কর্পোরেট হাউসগুলোর জন্য অবারিত রাখার বিকল্প নেই। তবে লাগামহীনভাবে কর্পোরেট হাউসগুলোর এই অগ্রযাত্রা অবারিতভবেই ঝুঁকি ও নিয়ন্ত্রণহীনতা সঠিক নয়। চিনি শিল্প ও পাট শিল্পের মতো সরকারি কারখানায় তালা লাগিয়ে বেসকারি উদ্যোক্তাদের বেসামাল অগ্রযাত্রা নির্দিষ্ট সময়ের পরে পুরো অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। এখানে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন এবং নিয়ন্ত্রণটি হতে হবে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সুদূরপ্রসারি। তা না হলে বাজার ও সরকার অবশ্যই বিপাকে পড়বে অদূর ভবিষ্যতে।

কর্পোরেট হাউসগুলোর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আধুনিক এবং নতুন পরিকল্পনার প্রয়োজন। প্রয়োজন আছে কর্পোরেট হাউসের; কিন্তু আমাদের দেশে যেভাবে এ ব্যবসার বিস্তার ও সম্প্রসারণ ঘটছে, ঠিক সেভাবে নয়, জনহিতকর এবং জনকল্যাণকর ভবিষ্যতের লাগাম এখন খুবই প্রয়োজন। যদি তা করা হয়, একমাত্র তাহলেই জাতীয় অর্থনীতিতে সুষম এবং পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। অন্যথায় যে জেনারেশনে উত্থান, ঠিক সেই জেনারেশনেই কর্পোরেট হাউসগুলোর অকালমৃত্যু ঘটবে।

[লেখক : সাবেক ব্যাংকার]

back to top