alt

উপ-সম্পাদকীয়

দাদা ও নানার বাড়ির সম্পত্তি কিভাবে উদ্ধার করবেন?

সিরাজ প্রামাণিক

: শুক্রবার, ২৬ মে ২০২৩

আপনি বাপ-দাদা বা নানার বাড়ির সম্পত্তি ওয়ারিশ সূত্রে পাবেন কিন্তু অন্যান্য ওয়ারিশরা তা আপনাকে বুঝে দিচ্ছে না, নানা ধরনের টালবাহানা করছেন কিংবা অন্যান্য শরিকরা জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন কিংবা প্রাপ্য অংশ কম দিচ্ছে কিংবা প্রাপ্য অংশ দিতে একেবারেই অস্বীকার করছে কিংবা অন্যান্য শরিকরা দাবিকৃত অংশ বণ্টন অস্বীকার করছে- তাহলে ওদের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ না করে আপনার প্রাপ্ত অংশ দাবি করে আদালতে বিভাগ বণ্টন মামলা করে দিন।

আইনটি পার্টিশন অ্যাক্ট-১৮৯৩ নামে পরিচিত। এ আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী বিভাগ বণ্টন মামলাটি করতে হয়। আগেই জানিয়ে রাখি- এ মামলাগুলো রক্তসম্পর্কীয় শরিকদের সঙ্গে বেশি হয়ে থাকে। আমরা সবাই জানি, সম্পত্তির শরিক দুই ধরনের। একটি হচ্ছে উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক আর দ্বিতীয়টি খরিদ সূত্রে শরিক।

বাটোয়ারা মামলা করার সময় সব অংশীদারকে মামলায় পক্ষভুক্ত করতে হয়। কোনো একজন শরিক বাদ থাকলে বণ্টননামা শুদ্ধ হয় না। এ মামলা করতে হলে কিন্তু সম্পত্তির মালিকানা সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র যেমন ভূমি জরিপ খতিয়ান, নামজারি খতিয়ান, মালিকানা দলিল, উত্তরাধিকার সনদ ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। কারণ নালিশি আর্জিতে সম্পত্তির মালিকানা অর্জনের বিবরণ যেমন খরিদ, দানসূত্রে কিংবা ওয়ারিশ সূত্রে কিনা, উত্তরাধিকার সূত্রে কিনা, যৌথ মালিকানার মাধ্যমে অর্জিত কিনা, দখলের পরিপ্রেক্ষিতে স্বত্ব অর্জন কিনা, বন্ধক বা অন্য কোনভাবে স্বত্ব অর্জন কিনা ইত্যাদি বিষয়সমূহ ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করতে হয়।

তবে আদালতের বাইরেও কিন্তু সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে ভাগবণ্টন করে বণ্টননামা দলিল করে নেয়া যেতে পারে। তবে দলিলটি অবশ্যই রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে। কারণ ওয়ারিশি সম্পত্তির নামজারি করতে, বিক্রি করতে, রেকর্ড করাতে, ব্যাংক থেকে লোন করাতে গেলে, ভবিষ্যতে মামলা মেকদ্দমা থেকে বাঁচতে বন্টননামা দলিল রেজিস্ট্রি অবশ্যই দরকার হবে।

এ মামলা করতে বিরোধ দেখা দেয়ার ছয় বছরের মধ্যে আদালতে যেতে হয়। নতুবা তামাদি দোষে বারিত হয়ে যায়। এই মোকদ্দমা চলাকালে কেউ মারা গেলে সেই মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশদের মামলায় পক্ষভুক্ত করে মামলা পরিচালনা করতে হয়। আপনাদের জানিয়ে রাখি, এ মামলায় দুইবার ডিক্রি হয়। প্রাথমিক ডিক্রির পর বণ্টন না করা দিলে আদালত অ্যাডভোকেট কমিশনার নিয়োগ করে অংশ নির্ধারণ করে দেন এবং চূড়ান্ত ডিক্রি প্রদান করেন।

বণ্টন ডিক্রি পাওয়ার পরও দখল না পেলে কিংবা পক্ষগণ দখল বুঝিয়ে না দিলে কিংবা হিস্যা বুঝিয়ে না দিলে ‘উচ্ছেদের মামলা’ করা যেতে পারে, স্বত্ব দখলের মামলা করা যেতে পারে। এছাড়া অংশীদারদের মধ্যে কিংবা দখলকারীদের মধ্যে কেউ আপনাকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দিলে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা যেতে পারে। ভয়-ভীতি-হুমকি ও জীবননাশের আশঙ্কায় আদালতে ফৌজদারি মামলাও করা যায়। বিভাগ বণ্টন মামলা করার আগে মনে রাখবেন, বর্তমান রেকর্ড যদি বাদীর নাম বা তার পূর্বসূরির নামে না থাকে কিংবা খতিয়ানে যেভাবে উল্লেখ আছে তা নালিশি সম্পত্তির সঙ্গে না মিলে থাকে তাহলে বাদীর স্বত্ব নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে।

সুতরাং স্বত্বের আবেদন না করে শুধু পার্টিশন মামলা করলে মামলা খারিজ হতে পারে। এ বিষয়ে ১৭ বিএলডি, ১৭৯ পৃষ্ঠায় অ্যাপিলেট ডিভিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত রয়েছে।

আর পার্টিশন মামলায় বর্তমান রেকর্ডেড মালিককে অবশ্যই পক্ষ করতে হবে। শরিকান সম্পত্তি বিক্রি হলে, যিনি কিনেছেন তাকেও আবশ্যকীয় পক্ষ করতে হয়। এজমালি ও বিভাগযোগ্য সম্পত্তি যে এলাকায় অবস্থিত, সেই এলাকার উপযুক্ত আদালতে এ মামলা দাখিল করতে হয়।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

চিকিৎসা যেন বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত না হয়

পথশিশু ও বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তির ব্যর্থতা

মেগা প্রকল্প : প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বচ্ছতা নিয়ে

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি

স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : উপগ্রহ চিত্র ও ওয়েবসাইটের অপরিহার্যতা

ক্ষমতা ও জনপ্রশাসন : আমলাতন্ত্রের ছায়াতলে আমজনতা

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

tab

উপ-সম্পাদকীয়

দাদা ও নানার বাড়ির সম্পত্তি কিভাবে উদ্ধার করবেন?

সিরাজ প্রামাণিক

শুক্রবার, ২৬ মে ২০২৩

আপনি বাপ-দাদা বা নানার বাড়ির সম্পত্তি ওয়ারিশ সূত্রে পাবেন কিন্তু অন্যান্য ওয়ারিশরা তা আপনাকে বুঝে দিচ্ছে না, নানা ধরনের টালবাহানা করছেন কিংবা অন্যান্য শরিকরা জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন কিংবা প্রাপ্য অংশ কম দিচ্ছে কিংবা প্রাপ্য অংশ দিতে একেবারেই অস্বীকার করছে কিংবা অন্যান্য শরিকরা দাবিকৃত অংশ বণ্টন অস্বীকার করছে- তাহলে ওদের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ না করে আপনার প্রাপ্ত অংশ দাবি করে আদালতে বিভাগ বণ্টন মামলা করে দিন।

আইনটি পার্টিশন অ্যাক্ট-১৮৯৩ নামে পরিচিত। এ আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী বিভাগ বণ্টন মামলাটি করতে হয়। আগেই জানিয়ে রাখি- এ মামলাগুলো রক্তসম্পর্কীয় শরিকদের সঙ্গে বেশি হয়ে থাকে। আমরা সবাই জানি, সম্পত্তির শরিক দুই ধরনের। একটি হচ্ছে উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক আর দ্বিতীয়টি খরিদ সূত্রে শরিক।

বাটোয়ারা মামলা করার সময় সব অংশীদারকে মামলায় পক্ষভুক্ত করতে হয়। কোনো একজন শরিক বাদ থাকলে বণ্টননামা শুদ্ধ হয় না। এ মামলা করতে হলে কিন্তু সম্পত্তির মালিকানা সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র যেমন ভূমি জরিপ খতিয়ান, নামজারি খতিয়ান, মালিকানা দলিল, উত্তরাধিকার সনদ ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। কারণ নালিশি আর্জিতে সম্পত্তির মালিকানা অর্জনের বিবরণ যেমন খরিদ, দানসূত্রে কিংবা ওয়ারিশ সূত্রে কিনা, উত্তরাধিকার সূত্রে কিনা, যৌথ মালিকানার মাধ্যমে অর্জিত কিনা, দখলের পরিপ্রেক্ষিতে স্বত্ব অর্জন কিনা, বন্ধক বা অন্য কোনভাবে স্বত্ব অর্জন কিনা ইত্যাদি বিষয়সমূহ ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করতে হয়।

তবে আদালতের বাইরেও কিন্তু সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে ভাগবণ্টন করে বণ্টননামা দলিল করে নেয়া যেতে পারে। তবে দলিলটি অবশ্যই রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে। কারণ ওয়ারিশি সম্পত্তির নামজারি করতে, বিক্রি করতে, রেকর্ড করাতে, ব্যাংক থেকে লোন করাতে গেলে, ভবিষ্যতে মামলা মেকদ্দমা থেকে বাঁচতে বন্টননামা দলিল রেজিস্ট্রি অবশ্যই দরকার হবে।

এ মামলা করতে বিরোধ দেখা দেয়ার ছয় বছরের মধ্যে আদালতে যেতে হয়। নতুবা তামাদি দোষে বারিত হয়ে যায়। এই মোকদ্দমা চলাকালে কেউ মারা গেলে সেই মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশদের মামলায় পক্ষভুক্ত করে মামলা পরিচালনা করতে হয়। আপনাদের জানিয়ে রাখি, এ মামলায় দুইবার ডিক্রি হয়। প্রাথমিক ডিক্রির পর বণ্টন না করা দিলে আদালত অ্যাডভোকেট কমিশনার নিয়োগ করে অংশ নির্ধারণ করে দেন এবং চূড়ান্ত ডিক্রি প্রদান করেন।

বণ্টন ডিক্রি পাওয়ার পরও দখল না পেলে কিংবা পক্ষগণ দখল বুঝিয়ে না দিলে কিংবা হিস্যা বুঝিয়ে না দিলে ‘উচ্ছেদের মামলা’ করা যেতে পারে, স্বত্ব দখলের মামলা করা যেতে পারে। এছাড়া অংশীদারদের মধ্যে কিংবা দখলকারীদের মধ্যে কেউ আপনাকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দিলে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা যেতে পারে। ভয়-ভীতি-হুমকি ও জীবননাশের আশঙ্কায় আদালতে ফৌজদারি মামলাও করা যায়। বিভাগ বণ্টন মামলা করার আগে মনে রাখবেন, বর্তমান রেকর্ড যদি বাদীর নাম বা তার পূর্বসূরির নামে না থাকে কিংবা খতিয়ানে যেভাবে উল্লেখ আছে তা নালিশি সম্পত্তির সঙ্গে না মিলে থাকে তাহলে বাদীর স্বত্ব নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে।

সুতরাং স্বত্বের আবেদন না করে শুধু পার্টিশন মামলা করলে মামলা খারিজ হতে পারে। এ বিষয়ে ১৭ বিএলডি, ১৭৯ পৃষ্ঠায় অ্যাপিলেট ডিভিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত রয়েছে।

আর পার্টিশন মামলায় বর্তমান রেকর্ডেড মালিককে অবশ্যই পক্ষ করতে হবে। শরিকান সম্পত্তি বিক্রি হলে, যিনি কিনেছেন তাকেও আবশ্যকীয় পক্ষ করতে হয়। এজমালি ও বিভাগযোগ্য সম্পত্তি যে এলাকায় অবস্থিত, সেই এলাকার উপযুক্ত আদালতে এ মামলা দাখিল করতে হয়।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]

back to top