অরূপরতন চৌধুরী
৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। ১৯৮৭ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৩ সালে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান।’ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রুত নগরায়ন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে এ বছরের প্রতিপাদ্যটি যথার্থ। কারণ ‘খাদ্য দ্রব্য’ যে কোন সময়ে জীবন বাঁচাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ; কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে যেন এটি দুঃপ্রাপ্য হতে চলেছে। টাকা, ডলার, পাউন্ড পকেটে নিয়ে ঘুরতে হবে, খাদ্য মিলবে না! হতে পারে এমন দিন আসন্ন।
প্রসঙ্গত, অনেক সময় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অর্থ এবং অপরিহার্যতা থাকা সত্ত্বেও খাদ্য বা জরুরি পণ্য আমদানি সম্ভব হয় না। প্রতিটা দেশের নিজস্ব খাদ্য চাহিদা মেটানোর নিজস্ব পলিসি আছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো এবং পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করে তবেই বড় বড় খাদ্য উৎপাদনকারী রাষ্ট্রগুলো রপ্তানি করে থাকে। যদিও অনেক দরিদ্রতম দেশে খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। তথাপিও সার্বিকভাবে বৈশ্বিক খাদ্য দুর্ভিক্ষ না থাকলেও সমগ্র বিশ্ব সে পথেই হাঁটছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, ইলিশ মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম এবং কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়। ধান, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয়। এছাড়া চা এবং ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ চতুর্থ। আম উৎপাদনে সপ্তম এবং মোট ফল উৎপাদনে ২৮তম দেশ বাংলাদেশ। অনেকের কাছে তথ্যগুলো অজানা হতে পারে, তবে সত্যি হচ্ছে- বাংলাদেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি। এ দেশের আবহাওয়া এবং উর্বর মাটিতে কৃষক সোনা ফলায়। তারপরও বিপুল অর্থ ব্যয়ে আমাদের অনেক কৃষি পণ্য সামগ্রী আমদানি করতে হয়। তাই খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের দেশীয় উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে। এ পথে আবর্জনা পরিস্কার করাও বাঞ্ছনীয়।
‘আবর্জনা’ রূপক অর্থে ব্যবহৃত হলেও প্রকৃতপক্ষে কৃষিজ উৎপাদনে কিছু ক্ষতিকর চাষাবাদকে বোঝানো হয়েছে। ‘তামাক’ এ আবর্জনার মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে দেশে মোট আবাদযোগ্য জমি রয়েছে ৮৮ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর। স্বাধীনতা পরবর্তী এই অনেক অনাবাদী পতিত জমি কৃষি উৎপাদনের আওতায় আসলেও জনসংখ্যার আধিক্য, দ্রুত এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবসহ নানাবিধ কারণে তা প্রকৃতপক্ষে কমে গেছে। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনের তুলনায় আবাদী জমি অনেক কম। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যের অভাব অদূর ভবিষ্যতেই একটি বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। তাই সময় থাকতে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে তামাক চাষ হচ্ছে; যা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এবং এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে খাদ্য সংকট তৈরি করতে পারে। তামাক চাষ মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস করে যেটা সর্বজন স্বীকৃত। এমনকি কৃষকও সেটা জানে। তামাক চাষের কারণে খাদ্য শস্য চাষের জমি কমে যাচ্ছে। দেখা যায়, দেশের যে সব জেলায় তামাক চাষ হয় সেখানে পুষ্টিকর খাদ্য সংকট রয়েছে। পরিবেশ প্রাণিকুলেও তামাক চাষের বিরূপ প্রভাব দেখা যাচ্ছে। তামাক পোড়ানোর ফলে বাংলাদেশে ৩০% বন উজাড় হচ্ছে। পার্বত্য এলাকায় তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাত কারণে বনভূমি উজাড় হচ্ছে। শুধুমাত্র তামাক প্রক্রিয়াজাত করতে প্রতি বছর ২৯ লাখ ৩২ হাজার গাছ পোড়ানো হয়। এক একর জমিতে যে পরিমাণ তামাক উৎপন্ন হয় এটি শুকানোর জন্য প্রয়োজন প্রায় ৫ টন কাঠ। উপরন্তু তামাক চাষে ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক জীববৈচিত্র্য, প্রাণীচক্রের ক্ষতিসাধন করেছে। তামাক চাষপ্রবণ এলাকায় মানুষের মধ্যে বিশেষত- গর্ভবতীদের নানাবিধ স্বাস্থ্যগত সমস্যা, প্রতিবন্ধী, বিকলাঙ্গ সন্তান জন্ম দেয়। ওই সমস্ত এলাকায় প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী বেশি হয়ে থাকে। কারণ তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে নারী, শিশুরা জড়িত থাকে।
বৈশ্বিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তামাক চাষ সারা পৃথিবীর ২-৪ শতাংশ বন উজাড়ের জন্য দায়ী। ২০১৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিন-আপ বাংলাদেশসহ ৯২টি দেশের সাগর থেকে যে বর্জ্য সংগ্রহ করে, তার মধ্যে ১ম স্থানে রয়েছে সিগারেট ফিল্টার। তামাক চাষের পরিমাণ জমি তৈরিতে প্রচুর বনাঞ্চল ধ্বংস করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ১৯৭০ সাল থেকে তামাকের কারণে বিশ্বব্যাপী (গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলে) আনুমানিক ১.৫ বিলিয়ন হেক্টর বন বিলুপ্ত হয়ে গেছে; যা ২০% বার্ষিক গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির প্রধান কারণ!
এত ভয়াবহতার পরেও তামাক চাষ লাভজনক এবং তামাককে অর্থকরী ফসল হিসেবে জাহির করার প্রবণতা সব সময় লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আদতে তামাক চাষ তামাক কোম্পানির জন্য লাভজনক, কৃষকের জন্য নয়। যদি কৃষকের জন্য তামাক চাষ লাভজনকই হতো তাহলে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল, কুষ্টিয়া, বান্দরবানসহ তামাক চাষপ্রবণ এলাকাগুলোতে দরিদ্র মানুষ থাকত না। এসব জেলাগুলো অনুন্নত থাকতো না। তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের লোভনীয় ফাঁদে ফেলে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। কারণ ‘তামাক’ তাদের ব্যবসার প্রধান কাঁচামাল। যেকোনো উপায়ে ব্যবসার কাঁচামালের জোগান নিশ্চিত করতে চাইবে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো। আমার আপনার কিংবা রাষ্ট্রের কী ক্ষতি সেটা তাদের মাথা ব্যথার কারণ নয়।
তামাকের ক্ষতি আমাদের মাথা ব্যথা। তাই কৃষকদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত এবং বিকল্প ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করার মাধ্যমে তামাক চাষ হতে ফিরিয়ে আনতে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে আপিল বিভাগ থেকে নির্দেশনা রয়েছে, সেটা অনুসরণ জরুরি। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা-১২ তে তামাক উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে বিশেষত তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে একটি নীতি প্রণয়নের নির্দেশনা রয়েছে। যতদূর জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে নীতিটি চূড়ান্ত করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশে তামাক চাষ নির্মূল অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কারণ আমাদের খাদ্য সংকট প্রতিরোধ এবং তামাকের করাল গ্রাস থেকে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তামাকমুক্ত করতে হবে দেশ।
[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস)]
অরূপরতন চৌধুরী
মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩
৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। ১৯৮৭ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৩ সালে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান।’ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রুত নগরায়ন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে এ বছরের প্রতিপাদ্যটি যথার্থ। কারণ ‘খাদ্য দ্রব্য’ যে কোন সময়ে জীবন বাঁচাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ; কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে যেন এটি দুঃপ্রাপ্য হতে চলেছে। টাকা, ডলার, পাউন্ড পকেটে নিয়ে ঘুরতে হবে, খাদ্য মিলবে না! হতে পারে এমন দিন আসন্ন।
প্রসঙ্গত, অনেক সময় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অর্থ এবং অপরিহার্যতা থাকা সত্ত্বেও খাদ্য বা জরুরি পণ্য আমদানি সম্ভব হয় না। প্রতিটা দেশের নিজস্ব খাদ্য চাহিদা মেটানোর নিজস্ব পলিসি আছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো এবং পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করে তবেই বড় বড় খাদ্য উৎপাদনকারী রাষ্ট্রগুলো রপ্তানি করে থাকে। যদিও অনেক দরিদ্রতম দেশে খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। তথাপিও সার্বিকভাবে বৈশ্বিক খাদ্য দুর্ভিক্ষ না থাকলেও সমগ্র বিশ্ব সে পথেই হাঁটছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, ইলিশ মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম এবং কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়। ধান, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয়। এছাড়া চা এবং ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ চতুর্থ। আম উৎপাদনে সপ্তম এবং মোট ফল উৎপাদনে ২৮তম দেশ বাংলাদেশ। অনেকের কাছে তথ্যগুলো অজানা হতে পারে, তবে সত্যি হচ্ছে- বাংলাদেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি। এ দেশের আবহাওয়া এবং উর্বর মাটিতে কৃষক সোনা ফলায়। তারপরও বিপুল অর্থ ব্যয়ে আমাদের অনেক কৃষি পণ্য সামগ্রী আমদানি করতে হয়। তাই খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের দেশীয় উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে। এ পথে আবর্জনা পরিস্কার করাও বাঞ্ছনীয়।
‘আবর্জনা’ রূপক অর্থে ব্যবহৃত হলেও প্রকৃতপক্ষে কৃষিজ উৎপাদনে কিছু ক্ষতিকর চাষাবাদকে বোঝানো হয়েছে। ‘তামাক’ এ আবর্জনার মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে দেশে মোট আবাদযোগ্য জমি রয়েছে ৮৮ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর। স্বাধীনতা পরবর্তী এই অনেক অনাবাদী পতিত জমি কৃষি উৎপাদনের আওতায় আসলেও জনসংখ্যার আধিক্য, দ্রুত এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবসহ নানাবিধ কারণে তা প্রকৃতপক্ষে কমে গেছে। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনের তুলনায় আবাদী জমি অনেক কম। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যের অভাব অদূর ভবিষ্যতেই একটি বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। তাই সময় থাকতে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে তামাক চাষ হচ্ছে; যা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এবং এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে খাদ্য সংকট তৈরি করতে পারে। তামাক চাষ মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস করে যেটা সর্বজন স্বীকৃত। এমনকি কৃষকও সেটা জানে। তামাক চাষের কারণে খাদ্য শস্য চাষের জমি কমে যাচ্ছে। দেখা যায়, দেশের যে সব জেলায় তামাক চাষ হয় সেখানে পুষ্টিকর খাদ্য সংকট রয়েছে। পরিবেশ প্রাণিকুলেও তামাক চাষের বিরূপ প্রভাব দেখা যাচ্ছে। তামাক পোড়ানোর ফলে বাংলাদেশে ৩০% বন উজাড় হচ্ছে। পার্বত্য এলাকায় তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাত কারণে বনভূমি উজাড় হচ্ছে। শুধুমাত্র তামাক প্রক্রিয়াজাত করতে প্রতি বছর ২৯ লাখ ৩২ হাজার গাছ পোড়ানো হয়। এক একর জমিতে যে পরিমাণ তামাক উৎপন্ন হয় এটি শুকানোর জন্য প্রয়োজন প্রায় ৫ টন কাঠ। উপরন্তু তামাক চাষে ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক জীববৈচিত্র্য, প্রাণীচক্রের ক্ষতিসাধন করেছে। তামাক চাষপ্রবণ এলাকায় মানুষের মধ্যে বিশেষত- গর্ভবতীদের নানাবিধ স্বাস্থ্যগত সমস্যা, প্রতিবন্ধী, বিকলাঙ্গ সন্তান জন্ম দেয়। ওই সমস্ত এলাকায় প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী বেশি হয়ে থাকে। কারণ তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে নারী, শিশুরা জড়িত থাকে।
বৈশ্বিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তামাক চাষ সারা পৃথিবীর ২-৪ শতাংশ বন উজাড়ের জন্য দায়ী। ২০১৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিন-আপ বাংলাদেশসহ ৯২টি দেশের সাগর থেকে যে বর্জ্য সংগ্রহ করে, তার মধ্যে ১ম স্থানে রয়েছে সিগারেট ফিল্টার। তামাক চাষের পরিমাণ জমি তৈরিতে প্রচুর বনাঞ্চল ধ্বংস করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ১৯৭০ সাল থেকে তামাকের কারণে বিশ্বব্যাপী (গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলে) আনুমানিক ১.৫ বিলিয়ন হেক্টর বন বিলুপ্ত হয়ে গেছে; যা ২০% বার্ষিক গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির প্রধান কারণ!
এত ভয়াবহতার পরেও তামাক চাষ লাভজনক এবং তামাককে অর্থকরী ফসল হিসেবে জাহির করার প্রবণতা সব সময় লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আদতে তামাক চাষ তামাক কোম্পানির জন্য লাভজনক, কৃষকের জন্য নয়। যদি কৃষকের জন্য তামাক চাষ লাভজনকই হতো তাহলে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল, কুষ্টিয়া, বান্দরবানসহ তামাক চাষপ্রবণ এলাকাগুলোতে দরিদ্র মানুষ থাকত না। এসব জেলাগুলো অনুন্নত থাকতো না। তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের লোভনীয় ফাঁদে ফেলে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। কারণ ‘তামাক’ তাদের ব্যবসার প্রধান কাঁচামাল। যেকোনো উপায়ে ব্যবসার কাঁচামালের জোগান নিশ্চিত করতে চাইবে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো। আমার আপনার কিংবা রাষ্ট্রের কী ক্ষতি সেটা তাদের মাথা ব্যথার কারণ নয়।
তামাকের ক্ষতি আমাদের মাথা ব্যথা। তাই কৃষকদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত এবং বিকল্প ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করার মাধ্যমে তামাক চাষ হতে ফিরিয়ে আনতে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে আপিল বিভাগ থেকে নির্দেশনা রয়েছে, সেটা অনুসরণ জরুরি। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা-১২ তে তামাক উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে বিশেষত তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে একটি নীতি প্রণয়নের নির্দেশনা রয়েছে। যতদূর জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে নীতিটি চূড়ান্ত করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশে তামাক চাষ নির্মূল অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কারণ আমাদের খাদ্য সংকট প্রতিরোধ এবং তামাকের করাল গ্রাস থেকে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তামাকমুক্ত করতে হবে দেশ।
[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস)]