আফসান চৌধুরী
১
২০০৮ সালে আমি ছিলাম কানাডায়। এই সময় একটি মার্কিন কলেজে-ভীষণ পয়সাওয়ালা-আমি ভিজিটিং প্রফেসর নিযুক্ত হই এক সেমেস্টারের জন্য। কিন্তু মার্কিন ভিসা অফিস না করে দেয়, কারণ আমার নাম কালো তালিকায়। কেন কালো তালিকায়? ‘সম্ভবত জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে এই লোকের’। তবে মার্কিন ভিসা অফিসের লোক আমাকে দেখে খুব ভয় পেয়েছে বলে মনে হলো না। দারুন স্বাভাবিক। মানে জঙ্গি হলে তো...। ভিসা না পাওয়ায় ভীষণ মন খারাপ আমার, কারণ রুজি...।
২
বাসায় ফিরে সেই কলেজে জানালাম। তারা এক ঘন্টায় জানাল আমাকে নিতে চেষ্টা শুরু হয়েছে। দিন পাঁচেক পর মার্কিন ভিসা অফিস থেকে ফোন করে জানানো হলো আমার ভিসা রেডি। আমি তাজ্জব। আমার ‘জঙ্গি’ পরিচয় থেকে মুক্তি পেয়ে গেলাম মাত্র পাঁচ দিনে!
৩
পরে সেই কলেজের বোর্ড সদস্য, যিনি এই তদবিরের কাজটা করেন, তিনি আমাকে চিঠি (ইমেইল) লিখেন, কিছুটা ’সরি’ বলে মার্কিনিদের পক্ষ হয়ে। চিঠির সাথে অন্য চিঠির থ্রেড (সূত্র) ছিল। দেখলাম একেবারে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ২/৩ নম্বরের কাছে লেখা চিঠি আমাকে নিয়ে।
৪
যিনি লিখছেন তিনি এর আগে ওই দপ্তরে একই পদে ছিলেন। তিনি বলছেন, ’এই লোক জঙ্গি তার প্রমাণ নেই...’ ইত্যাদি ইত্যাদি। যেটা আমার মনে আছে সেটা হল, ওই স্টেইট ডিপার্টমেন্টের লোক লিখেছে, ‘তার ফাইল আমার টেবিলে এসে গেছে’। কেমন গা ছম ছম করেছিল চিঠিটা পড়ে।
৫
যাই হোক আমি গেলাম এবং ৩ মাস যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে ফেরত এলাম। নো প্রব্লেম। একবার মনে হয়েছিল, বোস্টন থেকে মেইন যাবার ফ্লাইটে খুব কম যাত্রী ছিল। কিন্তু আমার পাশে বসা ছিল বেশ গাট্টাগোট্টা মার্কা এক লোক। অনেকে বলল, এর মানে আমি নজরদারিতে ছিলাম। মানে আমি যেতে পারি কিন্তু চোখে চোখে রাখতে হবে টাইপের। ঢাকায় তার ছয় মাস আগে আমি শেনজেনসহ (ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ) মার্কিন ভিসা পেয়েছিলাম। এর মধ্যে আমি ‘জঙ্গি হলাম কী করে’ জানি না।
৬
আমরা যারপর নাই অদক্ষ তবে ওরাও মৃদু অদক্ষ নাহলে আমারে জঙ্গি বানায় কী করে ? আর লাইনের খেলা ওই দেশেও চলে। জয় বাবা লাইনবাজি। এই ৩ মাসে যা কামাই করেছি সেই টাকায় কানাডায় এক বছর ধরে সংসার চালিয়েছি।
[লেখক: মুক্তিযুদ্ধের গবেষক, সাংবাদিক ]
আফসান চৌধুরী
বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩
১
২০০৮ সালে আমি ছিলাম কানাডায়। এই সময় একটি মার্কিন কলেজে-ভীষণ পয়সাওয়ালা-আমি ভিজিটিং প্রফেসর নিযুক্ত হই এক সেমেস্টারের জন্য। কিন্তু মার্কিন ভিসা অফিস না করে দেয়, কারণ আমার নাম কালো তালিকায়। কেন কালো তালিকায়? ‘সম্ভবত জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে এই লোকের’। তবে মার্কিন ভিসা অফিসের লোক আমাকে দেখে খুব ভয় পেয়েছে বলে মনে হলো না। দারুন স্বাভাবিক। মানে জঙ্গি হলে তো...। ভিসা না পাওয়ায় ভীষণ মন খারাপ আমার, কারণ রুজি...।
২
বাসায় ফিরে সেই কলেজে জানালাম। তারা এক ঘন্টায় জানাল আমাকে নিতে চেষ্টা শুরু হয়েছে। দিন পাঁচেক পর মার্কিন ভিসা অফিস থেকে ফোন করে জানানো হলো আমার ভিসা রেডি। আমি তাজ্জব। আমার ‘জঙ্গি’ পরিচয় থেকে মুক্তি পেয়ে গেলাম মাত্র পাঁচ দিনে!
৩
পরে সেই কলেজের বোর্ড সদস্য, যিনি এই তদবিরের কাজটা করেন, তিনি আমাকে চিঠি (ইমেইল) লিখেন, কিছুটা ’সরি’ বলে মার্কিনিদের পক্ষ হয়ে। চিঠির সাথে অন্য চিঠির থ্রেড (সূত্র) ছিল। দেখলাম একেবারে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ২/৩ নম্বরের কাছে লেখা চিঠি আমাকে নিয়ে।
৪
যিনি লিখছেন তিনি এর আগে ওই দপ্তরে একই পদে ছিলেন। তিনি বলছেন, ’এই লোক জঙ্গি তার প্রমাণ নেই...’ ইত্যাদি ইত্যাদি। যেটা আমার মনে আছে সেটা হল, ওই স্টেইট ডিপার্টমেন্টের লোক লিখেছে, ‘তার ফাইল আমার টেবিলে এসে গেছে’। কেমন গা ছম ছম করেছিল চিঠিটা পড়ে।
৫
যাই হোক আমি গেলাম এবং ৩ মাস যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে ফেরত এলাম। নো প্রব্লেম। একবার মনে হয়েছিল, বোস্টন থেকে মেইন যাবার ফ্লাইটে খুব কম যাত্রী ছিল। কিন্তু আমার পাশে বসা ছিল বেশ গাট্টাগোট্টা মার্কা এক লোক। অনেকে বলল, এর মানে আমি নজরদারিতে ছিলাম। মানে আমি যেতে পারি কিন্তু চোখে চোখে রাখতে হবে টাইপের। ঢাকায় তার ছয় মাস আগে আমি শেনজেনসহ (ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ) মার্কিন ভিসা পেয়েছিলাম। এর মধ্যে আমি ‘জঙ্গি হলাম কী করে’ জানি না।
৬
আমরা যারপর নাই অদক্ষ তবে ওরাও মৃদু অদক্ষ নাহলে আমারে জঙ্গি বানায় কী করে ? আর লাইনের খেলা ওই দেশেও চলে। জয় বাবা লাইনবাজি। এই ৩ মাসে যা কামাই করেছি সেই টাকায় কানাডায় এক বছর ধরে সংসার চালিয়েছি।
[লেখক: মুক্তিযুদ্ধের গবেষক, সাংবাদিক ]