alt

উপ-সম্পাদকীয়

প্রত্যাশা পূরণে চাই গতিময় প্রশাসন

এ এ জাফর ইকবাল

: শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩

জনগণ যা চায়, সরকারও তা করতে আগ্রহী; কিন্তু প্রয়োজনীয় গতির অভাব প্রশাসনের। এতেই সরকারের জবাবদিহিতা অনেকাংশে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

সবাই চায় জনবল শক্তিতে পরিণত হোক এবং জাতীয় আয়ের পথ সুগম হোক। সরকারও তা চায়; কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, সরকার ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে প্রশাসনের প্রস্তুতি অনেকটাই পিছিয়ে। নির্বাচন আসছে। সরকারকেও প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। সুফল যা তারা এতোদিনে অর্জন করেছিলেন তার সবটুকুই প্রতিফলিত হোক দেশের সবাই পর্যায়ে। এটাই হবে আগামী নির্বাচনে বৈতরণী পারে সরকারের অন্যতম উপাদান। অথচ লক্ষ্য করা গেছে, সরকার ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজের গতি নেই সাফল্য অর্জনে সঠিক বাস্তবায়নে। বিষয়টি নিয়ে সরকার অবশ্য এখন ভাবছে না। ততোা গুরুত্ব সামনে আসেনি। তবে এখন থেকে গুরুত্ব প্রস্তুতি না থাকলে এভাবে সফলতা পাওয়া হয়তোবা সম্ভব না-ও হতে পারে।

সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল জনসংখ্যার বৃহদাংশকে প্রবাসে পাঠিয়ে জাতীয় আয়ের সরল বিকাশ ঘটানো। অল্প সময়ে এই উদ্যোগই সফলতা বয়ে আনতে পারে।

করোনা ও বিশ^ অর্থসংকট জনবল রপ্তানিতে যে বন্ধ্যত্ব এনে দিয়েছিল দুই বছরেরও বেশি সময়। সময়টা পার হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুতি যা-ই থাক না কেন, তার সবটুকু কাজে লাগিয়ে মাঠ তৈরি হয়েছে। আগের চাইতে বর্তমানে অধিক লোক কাজের সন্ধানে বিদেশ যাচ্ছে। লোকের হিসেব পাওয়া গেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত টাকা আসলেও আয়ের হিসেবটি দৃশ্যমান নয়। এতে করে বোঝা যাচ্ছে না, লোক পাঠানোর গতি বাড়লেও অর্থ আয়ের পরিমাণ কেন পরিমিত নয়?

টাকা কিন্তু আসছে। টাকা আসার কারণেই গতি ফিরেছে জাতীয় অর্থনীতিতে। কিন্তু কিভাবে কতো টাকা আসছে তার হিসেব কেন পাওয়া যাচ্ছে না? এর জবাব যা সবাই স্বীকার করছে, টাকা আসছে বৈধ পথে নয়, অবৈধপথে। যারা টাকা পাঠাচ্ছে এবং যে মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে টাকা আসছে, তা দৃশ্যমান নয় বলেই প্রকৃত হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না। কেন, কীভাবে আসছে টাকা? বৈধ পথগুলো কি কি কারণে অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না? সরকারের চেষ্টার ত্রুটি নেই। একাধিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতি শ’তে আড়াই টাকা পর্যন্ত পারিতোষিক দেয়া হচ্ছে কিন্তু তাতেও হচ্ছে না। অবৈধ পথের বিস্তার বেড়ে উঠছে অপ্রতিরোধ্যভাবে। বৈধ পথ পরিহার করছে রেমিটেন্স-প্রেরক এবং এবং গ্রাহকরা কিন্তু কেন? জবাবও আছে। অথচ যারা এগুলো কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয় দায়িত্বে আছেন, তারা সেগুলো আমলে নিচ্ছেন না। রাত-দুপুরে কিংবা কোন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে প্রাপকের পছন্দমতো জায়গায় রেমিটেন্স পৌঁছে দেয়ার সুযোগ নেই বৈধপথের কর্মীদের। এমনকি তারা অনেক সময় সঠিক তথ্যটি দিতে পারছে না রেমিটেন্সের গ্রাহকদের।

কে টাকা পাঠাচ্ছে, কোথা থেকে টাকা পাঠাচ্ছে এবং কতো টাকা পাঠিয়েছে- তার সঠিক তথ্য যথাসময়ে পাচ্ছে না গ্রাহক। এমনকি গ্রাহকের কোথায় টাকা প্রয়োজন এবং কি ধররের [নোটের মূল্যমান হিসেবে] টাকা প্রয়োজন তার কোন আগাম নির্দেশনা কেউ সংগ্রহ করছে না। টাকা আসার খবর পাওয়া যাওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংক যেসমস্ত দিনে খোলা থাকে, এই সমস্ত দিনে গ্রাহককে টাকা সংগ্রহ করতে হচ্ছে ব্যাংক থেকে। এতে সময় এবং যাতায়াতের খরচ দুটোই বহন করতে হচ্ছে গ্রাহককে। এটাই নিয়ম এবং নিয়মের ধারাবাহিকতা। উপেক্ষিত হচ্ছে প্রাপকের সবাই ইচ্ছা এবং অনিচ্ছা। এতে প্রাপক নতুন এবং অবৈধ পথেই অধিক ঝুঁকে পড়েছে ও তাতে জাতীয় অর্থনীতির সঠিক পরিসংখ্যান এখনো অপ্রকাশিতই থেকে যাচ্ছে।

এখানেই শেষ নয়। স্থানীয় হুন্ডি ব্যবসায়ীরা প্রাপকের চাহিদা মোতাবেক তাদের দেয়া সময়সূচি অনুসারে টাকাও পৌঁছে দিচ্ছে। শুধু এ প্রান্তে নয়, অপরপ্রান্তে যারা টাকা পাঠাচ্ছে, তাদের কাছেও হুন্ডি কোম্পানিগুলো খবর পাওয়ামাত্র নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে অর্থ আহরণে। এক্ষেত্রে শতকরা আড়াই টাকা পারিতোষিক নিতান্তই অপরিমিত।

লিখতে গিয়ে যখন যে সমস্ত তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে সেগুলো অবশ্যই জানেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগে রেমিটেন্স ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। খুব সহজেও পারবেন না। কারণ, প্রচলিত নিয়ম ও ধারাবাহিকতা যা অনুসরণ করা হচ্ছে তার বাইরে গিয়ে পরিবর্তণ আনার সুযোগ সীমিত। তারপরও চেষ্টা করতে হবে। কারণ, এভাবে লেনদেন কোন অবস্থাতে নিরাপদ নয়। একটি পথ আছে এবং সেটি নতুন পথ। যারা অবৈধপথে কেবল মোবাইল টেলিফোনকে অবলম্বন করে এ ব্যবসা করছেন, তাদের বৈধতা দিতে হবে। যদি তা দেয়া হয় তাহলে ব্যবসাটি নিরাপদ হবে, জবাবদিহিতা বাড়বে এবং সরকারের আয়ের পথ সুগম হবে। অন্যদিকে দেশে এবং বিদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে যারা এ ব্যবসা করছেন তাদের মধ্যে। এতে নতুন কিছু লোক নিয়োগ পাবে এবং সরকার একটি স্বচ্ছতা পেয়ে যাবে অনায়াসে।

বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল সচিবালয়ের কর্তৃপক্ষকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের নির্ভরযোগ্য দু’একজন যা বললেন, তার অর্থ হলো, কেউ তার সরকারকে জানান দেয়নি, এভাবে নতুন পথ বেছে নেয়ার। উত্তর দেয়া হয়নি লেখার মাধ্যমে, উত্তরটা জানিয়ে দেয়া গেল। এগুলো সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে। কারণ সরকারের দায় আছে জনস্বার্থ সংরক্ষণে নতুন নতুন পথ বেছে বের করা। একমাত্র যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রেই এই ব্যবসার প্রসার ঘটেনি, পুরো মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপজুড়ে যেখানে বাঙালিরা বেশি বসবাস করেন, সেখানেও এর প্রচার ও প্রসার ব্যাপক। সময়ের ব্যবধানে এর প্রসার আরো বাড়বে, জনবল রপ্তানীকে অবলম্বন করে। এ ব্যবসা ব্যাংকের মাধ্যমে বিস্তার ঘটানোর সুযোগ সীমিত।

এবার আসুন ভিন্ন প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ থেকে পর্যাপ্ত ইলিশ মাছ ভারতে যায়। কিছু যায় বৈধপথে সড়ক দিয়ে, অধিকাংশই যায় সাগরপথে, সুন্দরবন অতিক্রম করে। কতকটা সরকার জানেন, অনেকটাই জানেন না। এ তথ্যটুকু পুর্ণাঙ্গ খবর নয়। আসল খবর হলো, ভারতে বাংলাদেশের ইলিশ, বাংলাদেশের বাজারের চাইতে সস্তা। অবাক করা কান্ড। আরো অবাক করার ঘটনা হলো সাগরের ইলিশ, মোহনার ইলিশ এবং নদীর ইলিশে আমরা যেমন পার্থক্য খুঁজে ফিরি, ঠিক তার চাইতে বেশি এটা প্রচলিত ভারতে।

বাংলাদেশের ইলিশ যে দামে বাজারজাত হচ্ছে, তার চাইতে সস্তায় তা ভারতে পাওয়া যাওয়ার কারণগুলো বেশ চমৎকার। ভালো ইলিশ ভারতে পাওয়া যায়, তার কারণ হলো, যারা মাছ পাঠান, তারা মাছ বাছাই করেন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। তাদের সে সুযোগও আছে। আমাদের জেলেরা যে সময়ে যে মাছ ধরে, তার চাইতে অধিক সময় তাদের মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হয় বিধি-নিষেধের কারণে। এই অলস সময়ে ব্যয় করার মতো সঞ্চয় তাদের হাতে থাকে না। ফলে তাদেরকে মুখাপেক্ষী হতে হয় সরকারের দেয়া বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার ওপর ও ব্যাংক ঋণের ওপর। এটা একটা কঠিন কাজ আমাদের দেশে। এই কঠিন সময়টিকে বেছে বেছে কাজে লাগান মাছ দাদনকারীরা। তারা পর্যাপ্ত দাদন দেয়। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর এবং লক্ষ্মীপুর এলাকায় কয়েক হাজার দাদনকারী নির্ধারিত মূল্যে অর্থ দাদন করে। দাদনের টাকা কিছুটা নিজের হলেও বাকিটা আসে ভারত থেকে অবৈধ পথে। পরিমাণ সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে অনেক। টাকা দেয়ার সময় মাছের দাম আগাম নির্ধারণ করা থাকে। মাছ ধরার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে সাগরেই সেগুলো সংগৃহীত হয় মহাজনের যন্ত্রচালিত নৌযান দিয়ে। বাছাই করা মাছ দ্রুত চলে যায় মহাজনদের আড়তে আড়তে। সেখান থেকে হিমায়িত প্যাকেটজাত হয়ে দ্রুততম সময়ে পাঠানো হয় ভারতে। অল্প সময়ের ভেতরেই তা বাজারজাতকরণ করা হয়। এতে রপ্তানি করা মাছের গুণ যেমন থাকে ভাল, মাছও তেমন তরতাজা থাকে। তাই সেগুলো ভারতে আমাদের চাইতে সস্তা।

জনগণ যা চায়, সরকারও তা করতে আগ্রহী; কিন্তু প্রয়োজনীয় গতির অভাব প্রশাসনের। এতেই সরকারের জবাবদিহিতা অনেকাংশে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

সবাই চায় জনবল শক্তিতে পরিণত হোক এবং জাতীয় আয়ের পথ সুগম হোক। সরকারও তা চায়; কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, সরকার ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে প্রশাসনের প্রস্তুতি অনেকটাই পিছিয়ে। নির্বাচন আসছে। সরকারকেও প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। সুফল যা তারা এতোদিনে অর্জন করেছিলেন তার সবটুকুই প্রতিফলিত হোক দেশের সবাই পর্যায়ে। এটাই হবে আগামী নির্বাচনে বৈতরণী পারে সরকারের অন্যতম উপাদান। অথচ লক্ষ্য করা গেছে, সরকার ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজের গতি নেই সাফল্য অর্জনে সঠিক বাস্তবায়নে। বিষয়টি নিয়ে সরকার অবশ্য এখন ভাবছে না। ততোা গুরুত্ব সামনে আসেনি। তবে এখন থেকে গুরুত্ব প্রস্তুতি না থাকলে এভাবে সফলতা পাওয়া হয়তোবা সম্ভব না-ও হতে পারে।

সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল জনসংখ্যার বৃহদাংশকে প্রবাসে পাঠিয়ে জাতীয় আয়ের সরল বিকাশ ঘটানো। অল্প সময়ে এই উদ্যোগই সফলতা বয়ে আনতে পারে।

করোনা ও বিশ^ অর্থসংকট জনবল রপ্তানিতে যে বন্ধ্যত্ব এনে দিয়েছিল দুই বছরেরও বেশি সময়। সময়টা পার হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুতি যা-ই থাক না কেন, তার সবটুকু কাজে লাগিয়ে মাঠ তৈরি হয়েছে। আগের চাইতে বর্তমানে অধিক লোক কাজের সন্ধানে বিদেশ যাচ্ছে। লোকের হিসেব পাওয়া গেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত টাকা আসলেও আয়ের হিসেবটি দৃশ্যমান নয়। এতে করে বোঝা যাচ্ছে না, লোক পাঠানোর গতি বাড়লেও অর্থ আয়ের পরিমাণ কেন পরিমিত নয়?

টাকা কিন্তু আসছে। টাকা আসার কারণেই গতি ফিরেছে জাতীয় অর্থনীতিতে। কিন্তু কিভাবে কতো টাকা আসছে তার হিসেব কেন পাওয়া যাচ্ছে না? এর জবাব যা সবাই স্বীকার করছে, টাকা আসছে বৈধ পথে নয়, অবৈধপথে। যারা টাকা পাঠাচ্ছে এবং যে মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে টাকা আসছে, তা দৃশ্যমান নয় বলেই প্রকৃত হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না। কেন, কীভাবে আসছে টাকা? বৈধ পথগুলো কি কি কারণে অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না? সরকারের চেষ্টার ত্রুটি নেই। একাধিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতি শ’তে আড়াই টাকা পর্যন্ত পারিতোষিক দেয়া হচ্ছে কিন্তু তাতেও হচ্ছে না। অবৈধ পথের বিস্তার বেড়ে উঠছে অপ্রতিরোধ্যভাবে। বৈধ পথ পরিহার করছে রেমিটেন্স-প্রেরক এবং এবং গ্রাহকরা কিন্তু কেন? জবাবও আছে। অথচ যারা এগুলো কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয় দায়িত্বে আছেন, তারা সেগুলো আমলে নিচ্ছেন না। রাত-দুপুরে কিংবা কোন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে প্রাপকের পছন্দমতো জায়গায় রেমিটেন্স পৌঁছে দেয়ার সুযোগ নেই বৈধপথের কর্মীদের। এমনকি তারা অনেক সময় সঠিক তথ্যটি দিতে পারছে না রেমিটেন্সের গ্রাহকদের।

কে টাকা পাঠাচ্ছে, কোথা থেকে টাকা পাঠাচ্ছে এবং কতো টাকা পাঠিয়েছে- তার সঠিক তথ্য যথাসময়ে পাচ্ছে না গ্রাহক। এমনকি গ্রাহকের কোথায় টাকা প্রয়োজন এবং কি ধররের [নোটের মূল্যমান হিসেবে] টাকা প্রয়োজন তার কোন আগাম নির্দেশনা কেউ সংগ্রহ করছে না। টাকা আসার খবর পাওয়া যাওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংক যেসমস্ত দিনে খোলা থাকে, এই সমস্ত দিনে গ্রাহককে টাকা সংগ্রহ করতে হচ্ছে ব্যাংক থেকে। এতে সময় এবং যাতায়াতের খরচ দুটোই বহন করতে হচ্ছে গ্রাহককে। এটাই নিয়ম এবং নিয়মের ধারাবাহিকতা। উপেক্ষিত হচ্ছে প্রাপকের সবাই ইচ্ছা এবং অনিচ্ছা। এতে প্রাপক নতুন এবং অবৈধ পথেই অধিক ঝুঁকে পড়েছে ও তাতে জাতীয় অর্থনীতির সঠিক পরিসংখ্যান এখনো অপ্রকাশিতই থেকে যাচ্ছে।

এখানেই শেষ নয়। স্থানীয় হুন্ডি ব্যবসায়ীরা প্রাপকের চাহিদা মোতাবেক তাদের দেয়া সময়সূচি অনুসারে টাকাও পৌঁছে দিচ্ছে। শুধু এ প্রান্তে নয়, অপরপ্রান্তে যারা টাকা পাঠাচ্ছে, তাদের কাছেও হুন্ডি কোম্পানিগুলো খবর পাওয়ামাত্র নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে অর্থ আহরণে। এক্ষেত্রে শতকরা আড়াই টাকা পারিতোষিক নিতান্তই অপরিমিত।

লিখতে গিয়ে যখন যে সমস্ত তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে সেগুলো অবশ্যই জানেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগে রেমিটেন্স ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। খুব সহজেও পারবেন না। কারণ, প্রচলিত নিয়ম ও ধারাবাহিকতা যা অনুসরণ করা হচ্ছে তার বাইরে গিয়ে পরিবর্তণ আনার সুযোগ সীমিত। তারপরও চেষ্টা করতে হবে। কারণ, এভাবে লেনদেন কোন অবস্থাতে নিরাপদ নয়। একটি পথ আছে এবং সেটি নতুন পথ। যারা অবৈধপথে কেবল মোবাইল টেলিফোনকে অবলম্বন করে এ ব্যবসা করছেন, তাদের বৈধতা দিতে হবে। যদি তা দেয়া হয় তাহলে ব্যবসাটি নিরাপদ হবে, জবাবদিহিতা বাড়বে এবং সরকারের আয়ের পথ সুগম হবে। অন্যদিকে দেশে এবং বিদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে যারা এ ব্যবসা করছেন তাদের মধ্যে। এতে নতুন কিছু লোক নিয়োগ পাবে এবং সরকার একটি স্বচ্ছতা পেয়ে যাবে অনায়াসে।

বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল সচিবালয়ের কর্তৃপক্ষকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের নির্ভরযোগ্য দু’একজন যা বললেন, তার অর্থ হলো, কেউ তার সরকারকে জানান দেয়নি, এভাবে নতুন পথ বেছে নেয়ার। উত্তর দেয়া হয়নি লেখার মাধ্যমে, উত্তরটা জানিয়ে দেয়া গেল। এগুলো সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে। কারণ সরকারের দায় আছে জনস্বার্থ সংরক্ষণে নতুন নতুন পথ বেছে বের করা। একমাত্র যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রেই এই ব্যবসার প্রসার ঘটেনি, পুরো মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপজুড়ে যেখানে বাঙালিরা বেশি বসবাস করেন, সেখানেও এর প্রচার ও প্রসার ব্যাপক। সময়ের ব্যবধানে এর প্রসার আরো বাড়বে, জনবল রপ্তানীকে অবলম্বন করে। এ ব্যবসা ব্যাংকের মাধ্যমে বিস্তার ঘটানোর সুযোগ সীমিত।

এবার আসুন ভিন্ন প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ থেকে পর্যাপ্ত ইলিশ মাছ ভারতে যায়। কিছু যায় বৈধপথে সড়ক দিয়ে, অধিকাংশই যায় সাগরপথে, সুন্দরবন অতিক্রম করে। কতকটা সরকার জানেন, অনেকটাই জানেন না। এ তথ্যটুকু পুর্ণাঙ্গ খবর নয়। আসল খবর হলো, ভারতে বাংলাদেশের ইলিশ, বাংলাদেশের বাজারের চাইতে সস্তা। অবাক করা কান্ড। আরো অবাক করার ঘটনা হলো সাগরের ইলিশ, মোহনার ইলিশ এবং নদীর ইলিশে আমরা যেমন পার্থক্য খুঁজে ফিরি, ঠিক তার চাইতে বেশি এটা প্রচলিত ভারতে।

বাংলাদেশের ইলিশ যে দামে বাজারজাত হচ্ছে, তার চাইতে সস্তায় তা ভারতে পাওয়া যাওয়ার কারণগুলো বেশ চমৎকার। ভালো ইলিশ ভারতে পাওয়া যায়, তার কারণ হলো, যারা মাছ পাঠান, তারা মাছ বাছাই করেন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। তাদের সে সুযোগও আছে। আমাদের জেলেরা যে সময়ে যে মাছ ধরে, তার চাইতে অধিক সময় তাদের মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হয় বিধি-নিষেধের কারণে। এই অলস সময়ে ব্যয় করার মতো সঞ্চয় তাদের হাতে থাকে না। ফলে তাদেরকে মুখাপেক্ষী হতে হয় সরকারের দেয়া বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার ওপর ও ব্যাংক ঋণের ওপর। এটা একটা কঠিন কাজ আমাদের দেশে। এই কঠিন সময়টিকে বেছে বেছে কাজে লাগান মাছ দাদনকারীরা। তারা পর্যাপ্ত দাদন দেয়। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর এবং লক্ষ্মীপুর এলাকায় কয়েক হাজার দাদনকারী নির্ধারিত মূল্যে অর্থ দাদন করে। দাদনের টাকা কিছুটা নিজের হলেও বাকিটা আসে ভারত থেকে অবৈধ পথে। পরিমাণ সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে অনেক। টাকা দেয়ার সময় মাছের দাম আগাম নির্ধারণ করা থাকে। মাছ ধরার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে সাগরেই সেগুলো সংগৃহীত হয় মহাজনের যন্ত্রচালিত নৌযান দিয়ে। বাছাই করা মাছ দ্রুত চলে যায় মহাজনদের আড়তে আড়তে। সেখান থেকে হিমায়িত প্যাকেটজাত হয়ে দ্রুততম সময়ে পাঠানো হয় ভারতে। অল্প সময়ের ভেতরেই তা বাজারজাতকরণ করা হয়। এতে রপ্তানি করা মাছের গুণ যেমন থাকে ভাল, মাছও তেমন তরতাজা থাকে। তাই সেগুলো ভারতে আমাদের চাইতে সস্তা।

সবাই চায় জনবল শক্তিতে পরিণত হোক এবং জাতীয় আয়ের পথ সুগম হোক। সরকারও তা চায়; কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, সরকার ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে প্রশাসনের প্রস্তুতি অনেকটাই পিছিয়ে

এ ব্যবসাটিও প্রসার ঘটেছে মাত্র বছর দশেক আগে। সময়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাড়ছে ব্যাপ্তি। এখানেও লাগাম টানা দরকার জাতীয় স্বার্থে। কারণ, ইলিশ রপ্তানী নিয়ে নানা কথা শোনা গেলেও বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না কেউ। অথবা জেনেও জেগে ঘুমাচ্ছে নতুন ঝামেলা থেকে দূরে থাকার জন্য। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, একটি জাতীয় ইলিশ রপ্তানি নীতিমালা। এখন তো স্থলপথের চাইতেও বেশি নজরদারি চলছে নৌপথে। সাগরে নদীতে নেমেছে কোস্টগার্ড। সুতরাং ইলিশ রপ্তানী এবং বিপণন প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা খুব কঠিন কাজ নয়। সরকার এবং নীতি-নির্ধারকরা উদ্যোগী হলে অতি অল্প সময়ে তা কাজে লাগানো যায় অনায়াসে। সরকারের টাকশাল যেমন বাড়তি অর্থের জোগান পাবে, ঠিক তেমনি অভাবী জেলে সম্প্রদায়ও পাবে নতুনকরে স্বচ্ছলতার সুযোগ।

মাত্র দুইটি উদাহরণ দিয়েই পরিসমাপ্তি টানতে হচ্ছে পরিমীত পরিসরে লেখাটি শেষ করার। শুধু পরিসমাপ্তিতে বলতে হচ্ছে এমন আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলি সম্পর্কে সরকার ও কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নেয়া অতি প্রয়োজন জাতীয় অর্থনীতি ও উন্নয়নে নতুন পথের বিস্তার ও বিকাশ ঘটানোর কাজে। অবশ্যই সেগুলো বিশেষজ্ঞদের খুঁজতে হবে এবং কাজে লাগানোর আগ্রহ তৈরি করতে হবে।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার]

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

আউশ ধান : পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব ফসল

ছবি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের কৃষি

ছবি

‘হৃৎ কলমের’ পাখি এবং আমাদের জেগে ওঠা

ছবি

ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

প্রসঙ্গ : নিত্যপণ্যের দাম

ছবি

টঙ্ক আন্দোলনের কুমুদিনী হাজং

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে চাই বিকেন্দ্রীকরণ

দূষণমুক্ত পানির বিকল্প নাই

রম্যগদ্য : ‘দুনিয়ার বাঙালি এক হও”

tab

উপ-সম্পাদকীয়

প্রত্যাশা পূরণে চাই গতিময় প্রশাসন

এ এ জাফর ইকবাল

শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩

জনগণ যা চায়, সরকারও তা করতে আগ্রহী; কিন্তু প্রয়োজনীয় গতির অভাব প্রশাসনের। এতেই সরকারের জবাবদিহিতা অনেকাংশে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

সবাই চায় জনবল শক্তিতে পরিণত হোক এবং জাতীয় আয়ের পথ সুগম হোক। সরকারও তা চায়; কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, সরকার ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে প্রশাসনের প্রস্তুতি অনেকটাই পিছিয়ে। নির্বাচন আসছে। সরকারকেও প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। সুফল যা তারা এতোদিনে অর্জন করেছিলেন তার সবটুকুই প্রতিফলিত হোক দেশের সবাই পর্যায়ে। এটাই হবে আগামী নির্বাচনে বৈতরণী পারে সরকারের অন্যতম উপাদান। অথচ লক্ষ্য করা গেছে, সরকার ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজের গতি নেই সাফল্য অর্জনে সঠিক বাস্তবায়নে। বিষয়টি নিয়ে সরকার অবশ্য এখন ভাবছে না। ততোা গুরুত্ব সামনে আসেনি। তবে এখন থেকে গুরুত্ব প্রস্তুতি না থাকলে এভাবে সফলতা পাওয়া হয়তোবা সম্ভব না-ও হতে পারে।

সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল জনসংখ্যার বৃহদাংশকে প্রবাসে পাঠিয়ে জাতীয় আয়ের সরল বিকাশ ঘটানো। অল্প সময়ে এই উদ্যোগই সফলতা বয়ে আনতে পারে।

করোনা ও বিশ^ অর্থসংকট জনবল রপ্তানিতে যে বন্ধ্যত্ব এনে দিয়েছিল দুই বছরেরও বেশি সময়। সময়টা পার হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুতি যা-ই থাক না কেন, তার সবটুকু কাজে লাগিয়ে মাঠ তৈরি হয়েছে। আগের চাইতে বর্তমানে অধিক লোক কাজের সন্ধানে বিদেশ যাচ্ছে। লোকের হিসেব পাওয়া গেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত টাকা আসলেও আয়ের হিসেবটি দৃশ্যমান নয়। এতে করে বোঝা যাচ্ছে না, লোক পাঠানোর গতি বাড়লেও অর্থ আয়ের পরিমাণ কেন পরিমিত নয়?

টাকা কিন্তু আসছে। টাকা আসার কারণেই গতি ফিরেছে জাতীয় অর্থনীতিতে। কিন্তু কিভাবে কতো টাকা আসছে তার হিসেব কেন পাওয়া যাচ্ছে না? এর জবাব যা সবাই স্বীকার করছে, টাকা আসছে বৈধ পথে নয়, অবৈধপথে। যারা টাকা পাঠাচ্ছে এবং যে মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে টাকা আসছে, তা দৃশ্যমান নয় বলেই প্রকৃত হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না। কেন, কীভাবে আসছে টাকা? বৈধ পথগুলো কি কি কারণে অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না? সরকারের চেষ্টার ত্রুটি নেই। একাধিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতি শ’তে আড়াই টাকা পর্যন্ত পারিতোষিক দেয়া হচ্ছে কিন্তু তাতেও হচ্ছে না। অবৈধ পথের বিস্তার বেড়ে উঠছে অপ্রতিরোধ্যভাবে। বৈধ পথ পরিহার করছে রেমিটেন্স-প্রেরক এবং এবং গ্রাহকরা কিন্তু কেন? জবাবও আছে। অথচ যারা এগুলো কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয় দায়িত্বে আছেন, তারা সেগুলো আমলে নিচ্ছেন না। রাত-দুপুরে কিংবা কোন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে প্রাপকের পছন্দমতো জায়গায় রেমিটেন্স পৌঁছে দেয়ার সুযোগ নেই বৈধপথের কর্মীদের। এমনকি তারা অনেক সময় সঠিক তথ্যটি দিতে পারছে না রেমিটেন্সের গ্রাহকদের।

কে টাকা পাঠাচ্ছে, কোথা থেকে টাকা পাঠাচ্ছে এবং কতো টাকা পাঠিয়েছে- তার সঠিক তথ্য যথাসময়ে পাচ্ছে না গ্রাহক। এমনকি গ্রাহকের কোথায় টাকা প্রয়োজন এবং কি ধররের [নোটের মূল্যমান হিসেবে] টাকা প্রয়োজন তার কোন আগাম নির্দেশনা কেউ সংগ্রহ করছে না। টাকা আসার খবর পাওয়া যাওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংক যেসমস্ত দিনে খোলা থাকে, এই সমস্ত দিনে গ্রাহককে টাকা সংগ্রহ করতে হচ্ছে ব্যাংক থেকে। এতে সময় এবং যাতায়াতের খরচ দুটোই বহন করতে হচ্ছে গ্রাহককে। এটাই নিয়ম এবং নিয়মের ধারাবাহিকতা। উপেক্ষিত হচ্ছে প্রাপকের সবাই ইচ্ছা এবং অনিচ্ছা। এতে প্রাপক নতুন এবং অবৈধ পথেই অধিক ঝুঁকে পড়েছে ও তাতে জাতীয় অর্থনীতির সঠিক পরিসংখ্যান এখনো অপ্রকাশিতই থেকে যাচ্ছে।

এখানেই শেষ নয়। স্থানীয় হুন্ডি ব্যবসায়ীরা প্রাপকের চাহিদা মোতাবেক তাদের দেয়া সময়সূচি অনুসারে টাকাও পৌঁছে দিচ্ছে। শুধু এ প্রান্তে নয়, অপরপ্রান্তে যারা টাকা পাঠাচ্ছে, তাদের কাছেও হুন্ডি কোম্পানিগুলো খবর পাওয়ামাত্র নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে অর্থ আহরণে। এক্ষেত্রে শতকরা আড়াই টাকা পারিতোষিক নিতান্তই অপরিমিত।

লিখতে গিয়ে যখন যে সমস্ত তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে সেগুলো অবশ্যই জানেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগে রেমিটেন্স ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। খুব সহজেও পারবেন না। কারণ, প্রচলিত নিয়ম ও ধারাবাহিকতা যা অনুসরণ করা হচ্ছে তার বাইরে গিয়ে পরিবর্তণ আনার সুযোগ সীমিত। তারপরও চেষ্টা করতে হবে। কারণ, এভাবে লেনদেন কোন অবস্থাতে নিরাপদ নয়। একটি পথ আছে এবং সেটি নতুন পথ। যারা অবৈধপথে কেবল মোবাইল টেলিফোনকে অবলম্বন করে এ ব্যবসা করছেন, তাদের বৈধতা দিতে হবে। যদি তা দেয়া হয় তাহলে ব্যবসাটি নিরাপদ হবে, জবাবদিহিতা বাড়বে এবং সরকারের আয়ের পথ সুগম হবে। অন্যদিকে দেশে এবং বিদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে যারা এ ব্যবসা করছেন তাদের মধ্যে। এতে নতুন কিছু লোক নিয়োগ পাবে এবং সরকার একটি স্বচ্ছতা পেয়ে যাবে অনায়াসে।

বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল সচিবালয়ের কর্তৃপক্ষকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের নির্ভরযোগ্য দু’একজন যা বললেন, তার অর্থ হলো, কেউ তার সরকারকে জানান দেয়নি, এভাবে নতুন পথ বেছে নেয়ার। উত্তর দেয়া হয়নি লেখার মাধ্যমে, উত্তরটা জানিয়ে দেয়া গেল। এগুলো সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে। কারণ সরকারের দায় আছে জনস্বার্থ সংরক্ষণে নতুন নতুন পথ বেছে বের করা। একমাত্র যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রেই এই ব্যবসার প্রসার ঘটেনি, পুরো মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপজুড়ে যেখানে বাঙালিরা বেশি বসবাস করেন, সেখানেও এর প্রচার ও প্রসার ব্যাপক। সময়ের ব্যবধানে এর প্রসার আরো বাড়বে, জনবল রপ্তানীকে অবলম্বন করে। এ ব্যবসা ব্যাংকের মাধ্যমে বিস্তার ঘটানোর সুযোগ সীমিত।

এবার আসুন ভিন্ন প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ থেকে পর্যাপ্ত ইলিশ মাছ ভারতে যায়। কিছু যায় বৈধপথে সড়ক দিয়ে, অধিকাংশই যায় সাগরপথে, সুন্দরবন অতিক্রম করে। কতকটা সরকার জানেন, অনেকটাই জানেন না। এ তথ্যটুকু পুর্ণাঙ্গ খবর নয়। আসল খবর হলো, ভারতে বাংলাদেশের ইলিশ, বাংলাদেশের বাজারের চাইতে সস্তা। অবাক করা কান্ড। আরো অবাক করার ঘটনা হলো সাগরের ইলিশ, মোহনার ইলিশ এবং নদীর ইলিশে আমরা যেমন পার্থক্য খুঁজে ফিরি, ঠিক তার চাইতে বেশি এটা প্রচলিত ভারতে।

বাংলাদেশের ইলিশ যে দামে বাজারজাত হচ্ছে, তার চাইতে সস্তায় তা ভারতে পাওয়া যাওয়ার কারণগুলো বেশ চমৎকার। ভালো ইলিশ ভারতে পাওয়া যায়, তার কারণ হলো, যারা মাছ পাঠান, তারা মাছ বাছাই করেন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। তাদের সে সুযোগও আছে। আমাদের জেলেরা যে সময়ে যে মাছ ধরে, তার চাইতে অধিক সময় তাদের মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হয় বিধি-নিষেধের কারণে। এই অলস সময়ে ব্যয় করার মতো সঞ্চয় তাদের হাতে থাকে না। ফলে তাদেরকে মুখাপেক্ষী হতে হয় সরকারের দেয়া বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার ওপর ও ব্যাংক ঋণের ওপর। এটা একটা কঠিন কাজ আমাদের দেশে। এই কঠিন সময়টিকে বেছে বেছে কাজে লাগান মাছ দাদনকারীরা। তারা পর্যাপ্ত দাদন দেয়। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর এবং লক্ষ্মীপুর এলাকায় কয়েক হাজার দাদনকারী নির্ধারিত মূল্যে অর্থ দাদন করে। দাদনের টাকা কিছুটা নিজের হলেও বাকিটা আসে ভারত থেকে অবৈধ পথে। পরিমাণ সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে অনেক। টাকা দেয়ার সময় মাছের দাম আগাম নির্ধারণ করা থাকে। মাছ ধরার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে সাগরেই সেগুলো সংগৃহীত হয় মহাজনের যন্ত্রচালিত নৌযান দিয়ে। বাছাই করা মাছ দ্রুত চলে যায় মহাজনদের আড়তে আড়তে। সেখান থেকে হিমায়িত প্যাকেটজাত হয়ে দ্রুততম সময়ে পাঠানো হয় ভারতে। অল্প সময়ের ভেতরেই তা বাজারজাতকরণ করা হয়। এতে রপ্তানি করা মাছের গুণ যেমন থাকে ভাল, মাছও তেমন তরতাজা থাকে। তাই সেগুলো ভারতে আমাদের চাইতে সস্তা।

জনগণ যা চায়, সরকারও তা করতে আগ্রহী; কিন্তু প্রয়োজনীয় গতির অভাব প্রশাসনের। এতেই সরকারের জবাবদিহিতা অনেকাংশে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

সবাই চায় জনবল শক্তিতে পরিণত হোক এবং জাতীয় আয়ের পথ সুগম হোক। সরকারও তা চায়; কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, সরকার ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে প্রশাসনের প্রস্তুতি অনেকটাই পিছিয়ে। নির্বাচন আসছে। সরকারকেও প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। সুফল যা তারা এতোদিনে অর্জন করেছিলেন তার সবটুকুই প্রতিফলিত হোক দেশের সবাই পর্যায়ে। এটাই হবে আগামী নির্বাচনে বৈতরণী পারে সরকারের অন্যতম উপাদান। অথচ লক্ষ্য করা গেছে, সরকার ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজের গতি নেই সাফল্য অর্জনে সঠিক বাস্তবায়নে। বিষয়টি নিয়ে সরকার অবশ্য এখন ভাবছে না। ততোা গুরুত্ব সামনে আসেনি। তবে এখন থেকে গুরুত্ব প্রস্তুতি না থাকলে এভাবে সফলতা পাওয়া হয়তোবা সম্ভব না-ও হতে পারে।

সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল জনসংখ্যার বৃহদাংশকে প্রবাসে পাঠিয়ে জাতীয় আয়ের সরল বিকাশ ঘটানো। অল্প সময়ে এই উদ্যোগই সফলতা বয়ে আনতে পারে।

করোনা ও বিশ^ অর্থসংকট জনবল রপ্তানিতে যে বন্ধ্যত্ব এনে দিয়েছিল দুই বছরেরও বেশি সময়। সময়টা পার হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুতি যা-ই থাক না কেন, তার সবটুকু কাজে লাগিয়ে মাঠ তৈরি হয়েছে। আগের চাইতে বর্তমানে অধিক লোক কাজের সন্ধানে বিদেশ যাচ্ছে। লোকের হিসেব পাওয়া গেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত টাকা আসলেও আয়ের হিসেবটি দৃশ্যমান নয়। এতে করে বোঝা যাচ্ছে না, লোক পাঠানোর গতি বাড়লেও অর্থ আয়ের পরিমাণ কেন পরিমিত নয়?

টাকা কিন্তু আসছে। টাকা আসার কারণেই গতি ফিরেছে জাতীয় অর্থনীতিতে। কিন্তু কিভাবে কতো টাকা আসছে তার হিসেব কেন পাওয়া যাচ্ছে না? এর জবাব যা সবাই স্বীকার করছে, টাকা আসছে বৈধ পথে নয়, অবৈধপথে। যারা টাকা পাঠাচ্ছে এবং যে মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে টাকা আসছে, তা দৃশ্যমান নয় বলেই প্রকৃত হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না। কেন, কীভাবে আসছে টাকা? বৈধ পথগুলো কি কি কারণে অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না? সরকারের চেষ্টার ত্রুটি নেই। একাধিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতি শ’তে আড়াই টাকা পর্যন্ত পারিতোষিক দেয়া হচ্ছে কিন্তু তাতেও হচ্ছে না। অবৈধ পথের বিস্তার বেড়ে উঠছে অপ্রতিরোধ্যভাবে। বৈধ পথ পরিহার করছে রেমিটেন্স-প্রেরক এবং এবং গ্রাহকরা কিন্তু কেন? জবাবও আছে। অথচ যারা এগুলো কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয় দায়িত্বে আছেন, তারা সেগুলো আমলে নিচ্ছেন না। রাত-দুপুরে কিংবা কোন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে প্রাপকের পছন্দমতো জায়গায় রেমিটেন্স পৌঁছে দেয়ার সুযোগ নেই বৈধপথের কর্মীদের। এমনকি তারা অনেক সময় সঠিক তথ্যটি দিতে পারছে না রেমিটেন্সের গ্রাহকদের।

কে টাকা পাঠাচ্ছে, কোথা থেকে টাকা পাঠাচ্ছে এবং কতো টাকা পাঠিয়েছে- তার সঠিক তথ্য যথাসময়ে পাচ্ছে না গ্রাহক। এমনকি গ্রাহকের কোথায় টাকা প্রয়োজন এবং কি ধররের [নোটের মূল্যমান হিসেবে] টাকা প্রয়োজন তার কোন আগাম নির্দেশনা কেউ সংগ্রহ করছে না। টাকা আসার খবর পাওয়া যাওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংক যেসমস্ত দিনে খোলা থাকে, এই সমস্ত দিনে গ্রাহককে টাকা সংগ্রহ করতে হচ্ছে ব্যাংক থেকে। এতে সময় এবং যাতায়াতের খরচ দুটোই বহন করতে হচ্ছে গ্রাহককে। এটাই নিয়ম এবং নিয়মের ধারাবাহিকতা। উপেক্ষিত হচ্ছে প্রাপকের সবাই ইচ্ছা এবং অনিচ্ছা। এতে প্রাপক নতুন এবং অবৈধ পথেই অধিক ঝুঁকে পড়েছে ও তাতে জাতীয় অর্থনীতির সঠিক পরিসংখ্যান এখনো অপ্রকাশিতই থেকে যাচ্ছে।

এখানেই শেষ নয়। স্থানীয় হুন্ডি ব্যবসায়ীরা প্রাপকের চাহিদা মোতাবেক তাদের দেয়া সময়সূচি অনুসারে টাকাও পৌঁছে দিচ্ছে। শুধু এ প্রান্তে নয়, অপরপ্রান্তে যারা টাকা পাঠাচ্ছে, তাদের কাছেও হুন্ডি কোম্পানিগুলো খবর পাওয়ামাত্র নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে অর্থ আহরণে। এক্ষেত্রে শতকরা আড়াই টাকা পারিতোষিক নিতান্তই অপরিমিত।

লিখতে গিয়ে যখন যে সমস্ত তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে সেগুলো অবশ্যই জানেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগে রেমিটেন্স ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। খুব সহজেও পারবেন না। কারণ, প্রচলিত নিয়ম ও ধারাবাহিকতা যা অনুসরণ করা হচ্ছে তার বাইরে গিয়ে পরিবর্তণ আনার সুযোগ সীমিত। তারপরও চেষ্টা করতে হবে। কারণ, এভাবে লেনদেন কোন অবস্থাতে নিরাপদ নয়। একটি পথ আছে এবং সেটি নতুন পথ। যারা অবৈধপথে কেবল মোবাইল টেলিফোনকে অবলম্বন করে এ ব্যবসা করছেন, তাদের বৈধতা দিতে হবে। যদি তা দেয়া হয় তাহলে ব্যবসাটি নিরাপদ হবে, জবাবদিহিতা বাড়বে এবং সরকারের আয়ের পথ সুগম হবে। অন্যদিকে দেশে এবং বিদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে যারা এ ব্যবসা করছেন তাদের মধ্যে। এতে নতুন কিছু লোক নিয়োগ পাবে এবং সরকার একটি স্বচ্ছতা পেয়ে যাবে অনায়াসে।

বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল সচিবালয়ের কর্তৃপক্ষকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের নির্ভরযোগ্য দু’একজন যা বললেন, তার অর্থ হলো, কেউ তার সরকারকে জানান দেয়নি, এভাবে নতুন পথ বেছে নেয়ার। উত্তর দেয়া হয়নি লেখার মাধ্যমে, উত্তরটা জানিয়ে দেয়া গেল। এগুলো সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে। কারণ সরকারের দায় আছে জনস্বার্থ সংরক্ষণে নতুন নতুন পথ বেছে বের করা। একমাত্র যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রেই এই ব্যবসার প্রসার ঘটেনি, পুরো মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপজুড়ে যেখানে বাঙালিরা বেশি বসবাস করেন, সেখানেও এর প্রচার ও প্রসার ব্যাপক। সময়ের ব্যবধানে এর প্রসার আরো বাড়বে, জনবল রপ্তানীকে অবলম্বন করে। এ ব্যবসা ব্যাংকের মাধ্যমে বিস্তার ঘটানোর সুযোগ সীমিত।

এবার আসুন ভিন্ন প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ থেকে পর্যাপ্ত ইলিশ মাছ ভারতে যায়। কিছু যায় বৈধপথে সড়ক দিয়ে, অধিকাংশই যায় সাগরপথে, সুন্দরবন অতিক্রম করে। কতকটা সরকার জানেন, অনেকটাই জানেন না। এ তথ্যটুকু পুর্ণাঙ্গ খবর নয়। আসল খবর হলো, ভারতে বাংলাদেশের ইলিশ, বাংলাদেশের বাজারের চাইতে সস্তা। অবাক করা কান্ড। আরো অবাক করার ঘটনা হলো সাগরের ইলিশ, মোহনার ইলিশ এবং নদীর ইলিশে আমরা যেমন পার্থক্য খুঁজে ফিরি, ঠিক তার চাইতে বেশি এটা প্রচলিত ভারতে।

বাংলাদেশের ইলিশ যে দামে বাজারজাত হচ্ছে, তার চাইতে সস্তায় তা ভারতে পাওয়া যাওয়ার কারণগুলো বেশ চমৎকার। ভালো ইলিশ ভারতে পাওয়া যায়, তার কারণ হলো, যারা মাছ পাঠান, তারা মাছ বাছাই করেন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। তাদের সে সুযোগও আছে। আমাদের জেলেরা যে সময়ে যে মাছ ধরে, তার চাইতে অধিক সময় তাদের মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হয় বিধি-নিষেধের কারণে। এই অলস সময়ে ব্যয় করার মতো সঞ্চয় তাদের হাতে থাকে না। ফলে তাদেরকে মুখাপেক্ষী হতে হয় সরকারের দেয়া বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার ওপর ও ব্যাংক ঋণের ওপর। এটা একটা কঠিন কাজ আমাদের দেশে। এই কঠিন সময়টিকে বেছে বেছে কাজে লাগান মাছ দাদনকারীরা। তারা পর্যাপ্ত দাদন দেয়। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর এবং লক্ষ্মীপুর এলাকায় কয়েক হাজার দাদনকারী নির্ধারিত মূল্যে অর্থ দাদন করে। দাদনের টাকা কিছুটা নিজের হলেও বাকিটা আসে ভারত থেকে অবৈধ পথে। পরিমাণ সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে অনেক। টাকা দেয়ার সময় মাছের দাম আগাম নির্ধারণ করা থাকে। মাছ ধরার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে সাগরেই সেগুলো সংগৃহীত হয় মহাজনের যন্ত্রচালিত নৌযান দিয়ে। বাছাই করা মাছ দ্রুত চলে যায় মহাজনদের আড়তে আড়তে। সেখান থেকে হিমায়িত প্যাকেটজাত হয়ে দ্রুততম সময়ে পাঠানো হয় ভারতে। অল্প সময়ের ভেতরেই তা বাজারজাতকরণ করা হয়। এতে রপ্তানি করা মাছের গুণ যেমন থাকে ভাল, মাছও তেমন তরতাজা থাকে। তাই সেগুলো ভারতে আমাদের চাইতে সস্তা।

সবাই চায় জনবল শক্তিতে পরিণত হোক এবং জাতীয় আয়ের পথ সুগম হোক। সরকারও তা চায়; কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, সরকার ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে প্রশাসনের প্রস্তুতি অনেকটাই পিছিয়ে

এ ব্যবসাটিও প্রসার ঘটেছে মাত্র বছর দশেক আগে। সময়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাড়ছে ব্যাপ্তি। এখানেও লাগাম টানা দরকার জাতীয় স্বার্থে। কারণ, ইলিশ রপ্তানী নিয়ে নানা কথা শোনা গেলেও বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না কেউ। অথবা জেনেও জেগে ঘুমাচ্ছে নতুন ঝামেলা থেকে দূরে থাকার জন্য। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, একটি জাতীয় ইলিশ রপ্তানি নীতিমালা। এখন তো স্থলপথের চাইতেও বেশি নজরদারি চলছে নৌপথে। সাগরে নদীতে নেমেছে কোস্টগার্ড। সুতরাং ইলিশ রপ্তানী এবং বিপণন প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা খুব কঠিন কাজ নয়। সরকার এবং নীতি-নির্ধারকরা উদ্যোগী হলে অতি অল্প সময়ে তা কাজে লাগানো যায় অনায়াসে। সরকারের টাকশাল যেমন বাড়তি অর্থের জোগান পাবে, ঠিক তেমনি অভাবী জেলে সম্প্রদায়ও পাবে নতুনকরে স্বচ্ছলতার সুযোগ।

মাত্র দুইটি উদাহরণ দিয়েই পরিসমাপ্তি টানতে হচ্ছে পরিমীত পরিসরে লেখাটি শেষ করার। শুধু পরিসমাপ্তিতে বলতে হচ্ছে এমন আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলি সম্পর্কে সরকার ও কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নেয়া অতি প্রয়োজন জাতীয় অর্থনীতি ও উন্নয়নে নতুন পথের বিস্তার ও বিকাশ ঘটানোর কাজে। অবশ্যই সেগুলো বিশেষজ্ঞদের খুঁজতে হবে এবং কাজে লাগানোর আগ্রহ তৈরি করতে হবে।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার]

back to top