alt

উপ-সম্পাদকীয়

মার্কিন ভিসানীতি : লক্ষ্য কি শুধুই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন?

শামসুন নাহার

: বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩

গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রিদেশীয় সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েনের নতুন বার্তা দিচ্ছিল। যা নেট পাড়া, রাজনীতি ও কূটনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। অনেক কূটনীতিক বোদ্ধা এবং গণমাধ্যম বাংলাদেশ নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ছে তা-ই নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছিলো।উদ্বেগ যখন চরমে, ঠিক তখনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল যখন পারষ্পরিক রেষারেষিতে ব্যস্ত, তখন মার্কিন ভিসানীতি বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে এক নিদারুণ চপেটাঘাত। রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকেই নতুন ভিসানীতি কে স্বাগত জানিয়েছেন। আবার অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করছেন কারা কারা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার গুজব ছড়াচ্ছেন মার্কিন ভিসানীতি বাংলাদেশের ওপর নতুন আরেক নিষেধাজ্ঞা।

নতুন মার্কিন ভিসানীতিতে কী আছে সেগুলো জেনে নেয়া যাক :

২০২২ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই মার্কিন ভিসা নীতি বাংলাদেশের উপর আরোপ করা হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার জানিয়েছে। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর, নিয়মতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক করার মাধ্যমে জবাবদিহিতামূলক সরকার গঠনের উদ্দেশ্যেই মার্কিন এই ভিসা নীতি।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্টনি ব্লিঙ্কেন ২৪ মে বাংলাদেশের নির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের ভিসা দেয়ার উপর কড়াকড়ি আরোপ করেন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাদের কাছে যদি মনে হয়, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে কেউ বাধা সৃষ্টি করেছেন, তাহলে তার ভিসা দেয়া হবে না। নতুন ভিসানীতি ঘোষণার বিষয়টি মে মাসের ৩ তারিখে বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

একটি বেসরকারি টিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা ডোনাল্ড লু বলেছেন, এটি কোনো ‘স্যাংশন’ নয়। একটি নতুন ভিসা নীতিমালা ঘোষিত হয়েছে, যার লক্ষ্য বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে যাতে কোনো অনিয়ম না ঘটে, তা নিশ্চিত করা।

সাম্প্রতিক সময়ে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডার ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে নির্বাচন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভিসানীতি কেমন ভূমিকা পালন করবে, তা দেখা সময়ের ব্যাপার

গত ২৪ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্টনি ব্লিঙ্কেন তার টুইটার পোস্টে বলেন, ‘আজ আমি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রচারের জন্য একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি। এই নীতির অধীনে যারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকেবে তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের উপর নতুন ভিসানীতি আরোপ করতে পারি।’

কারা এই ভিসানীতির আওতায় থাকবেন, সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য—যে কেউই এই ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় পড়তে পারেন। এমনকি জড়িত ব্যক্তিদের স্ত্রী, স্বামী বা সন্তানেরাও ভিসা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।’

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সাবেক কূটনীতিক জন ডেনিলোউইজ, যিনি বর্তমানে ওয়াশিংটনভিত্তিক নিউজ পোর্টাল সাউথ এশিয়া পারসপেক্টিভসের (এসএপি) এডিটর-অ্যাট-লার্জ এই প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে যারা ‘বর্তমান অবস্থা’ বহাল রাখতে চায়, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর ক্ষেত্রে মার্কিন ভিসার কড়াকড়ি। যা পরবর্তীতে ‘যথেষ্ট ফলপ্রসূ’ না-ও হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। ভিসা নীতি যাদের ওপর প্রয়োগ করা হতে পারে, তাদের নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের ভ্রমণ সীমিত হয়ে এলে তবেই ভিসা নীতির কিছু ফল মিললেও মিলতে পারে বলে তার বিশ্বাস। 

শুধু কি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নাকি কৌশলগত কারণ?

বাংলাদেশের ওপর মার্কিন ভিসানীতির পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেন এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা মন্তব্য করেছেন যে, ‘পাকিস্তানে নির্বাচিত সরকারকে জোরপূর্বক অপসারণ করা হয়। নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়, এবং একটি সম্পূর্ণ অনির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও থাইল্যান্ডে, প্রায় এক দশকের সামরিক শাসনের পর, সম্প্রতি গণতন্ত্রীরা নির্বাচিত হয়েছে, কিন্তু সামরিক বাহিনী তাদের ক্ষমতায় আসতে দেয় না। বিশ্বের সামনে নগ্নভাবে এসব অগণতান্ত্রিক ঘটনা ঘটছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়গুলিতে ফোকাস করেনি, কারণ তাদের অগণতান্ত্রিক সরকার তাদের স্বার্থ পূরণ করে।’

ইতিহাস ঘাটলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে নিজদের পুতুল সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর অহরহ নজির পাওয়া যাবে। এশিয়ার মানুষের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে ধারণা কিংবা অভিজ্ঞতার কোনোটিরই কমতি নেই। তারা যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত ভূমিকার জন্য বাংলাদেশে পাকিস্তানের গণহত্যা, ১৯৭৫ সালে সিআইর পরোক্ষ মদদে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশে সেনাশাসন প্রতিষ্ঠা করা, ভিয়েতনাম, লাওস এবং কম্বোডিয়া যেখানে তিনি যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত যুদ্ধ এবং ইন্দোনেশিয়ায় সক্রিয়ভাবে সুহার্তকে সহযোগিতা করে গণহত্যার পটভূমির রচনা করেছিলেন। লাতিন আমেরিকায় তাদের কুখ্যাতি সম্ভবত অতুলনীয়। জেনারেল অগাস্টো পিনোচেট সিআইএর ব্যাপক সমর্থনে ১৯৭৩ সালে চিলির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সালভাদর আলেন্দেকে উৎখাত এবং হত্যা করে।

আবার আরব বসন্তের ফুলঝুরি ছিটিয়ে আরব দেশগুলোতে নিজেদের পাপেট সরকার প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র কার্পণ্য করেনি। মিসরের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুসরিকে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেদের পছন্দের জেনারেল সিসিকে ক্ষমতায় বসায়। নিজেরা মুখে মুখে গণতন্ত্রের বুলি আওড়ালেও মধ্যপ্রাচ্যের রাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহ বেশি তাদের।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, খনিজ সম্পদ, জনসম্পদ, বিনিয়োগের পরিবেশ এবং উদীয়মান অর্থনীতি বিশ্বের সবাই পরাশক্তির কাছেই আকর্ষণীয়। ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারে বাংলাদেশ যেকোনো দেশের জন্যই আশীর্বাদস্বরূপ। বাংলাদেশের জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী নীতি এবং সবাই পরাশক্তির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত লেগেছে বলে অনেকেই মনে করেন।

আবার ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের শক্ত অবস্থান এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা শঙ্কিত। যার কারণে, নিজেদের দলে ভেড়াতেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে আসছে। বিবিসির এক সাক্ষাৎকারে রাজনৈতিক-অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কোনো একটি দেশের দেন-দরবারের সক্ষমতা বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে- ক্রয় ক্ষমতা, অভ্যন্তরীণ বাজারের আয়তন এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের সক্ষমতা। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক প্রধানত ষ্ট্রাটেজিক, বাজার বা বিনিয়োগ নয়। বরঞ্চ বাজারের ওপর যেটুক নির্ভরতা তা প্রায় পুরোটাই বাংলাদেশের। ২০ থেকে ২৫ শতাংশ তৈরি পোশাক এক যুক্তরাষ্ট্রে যায়, ফলে বাজারের প্রয়োজন শুধু বাংলাদেশের।’

জনশ্রুতি আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি গড়তে চেয়েছিল। কিন্ত, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান না করে দেন ।আবার ২০০৪ এবং ২০১২ সালে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি কিংবা মার্কিন বাহিনী মোতায়েনের খবর শোনা যায়। কিন্তু, বাংলাদেশ সরকার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই ব্যাপারটা অস্বীকার করে আসছে।

আবার সাম্প্রতিক সময়ে নতুন ব্যবসায়িক পদক্ষেপ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল ও গ্যাস কোম্পানি এক্সনমোবিল কর্পোরেশন বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার সমস্ত উন্মুক্ত গভীর পানির অফশোর ব্লক ও কিছু অনশোর ব্লকে গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।এছাড়াও, বিশ্বের আরও পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলোও বাংলাদেশে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে, নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এক ধরনের কৌশল হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন।

গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে চীনের দ্বন্দ নতুন রূপে ধারণ করলে বাংলাদেশের

অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য তাদের চাপ ছিলো। যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চল অর্থাৎ ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার এবং চীনের ইন্দো এশিয়ান ফোরামকে আটকানোর জন্যই একটি মুক্ত, সংযুক্ত, সমৃদ্ধ এবং সুরক্ষিত ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই বাংলাদেশকে তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে অংশীজন হওয়ার জন্য তাদবির চালিয়েছিল। কিন্তু, বাংলাদেশ কোনো মেরুকরণ কিংবা উস্কানিমূলক কৌশল ঘোষণা না করে স্বাধীন, নিরপেক্ষ, অঅনুকরণীয় অবাধ, মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ইন্দো প্যাসিফিক রূপরেখা ঘোষণা করেছে; যা যুক্তরাষ্ট্রের মনঃক্ষুণ্ণের অন্যতম কারণ হিসেবে ধারণা করা যেতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডার ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে নির্বাচন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভিসানীতি কেমন ভূমিকা পালন করবে, তা দেখা সময়ের ব্যাপার। নেটিজেনদের মতো বলতে চাই, যুক্তরাষ্ট্রের যদি সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ এবং মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে, তাহলে এ দেশের মানুষের স্বার্থেই যারা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থপাচার করে বিলাসী জীবনযাপন করছে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে বাংলাদেশ সরকারকে অতিসত্বর ফেরত দিক।

[লেখক : পিএইচডি শিক্ষার্থী, গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়]

বিয়ের কিছু লোকাচার ও অপব্যয় প্রসঙ্গে

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে রক্ষা করুন

তরুণদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব

শিশুমৃত্যু রোধে করণীয় কী

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও মনঃসমীক্ষণ

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও বাস্তবতা

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনি প্রতিকার ও বাস্তবতা

তথ্য-উপাত্তের গরমিলে বাজারে অস্থিরতা, অর্থনীতিতে বিভ্রান্তি

দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব

ইরানে কট্টরপন্থার সাময়িক পরাজয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কী

ক্ষমতার সাতকাহন

জলবায়ু সংকট : আমাদের উপলব্ধি

নারী-পুরুষ চুড়ি পরি, দেশের অন্যায় দূর করি!

ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার

ছবি

সাধারণ মানুষেরা বড় অসাধারণ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও কারিগরি শিক্ষা

মাদক রুখতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

পারিবারিক অপরাধপ্রবণতা ও কয়েকটি প্রশ্ন

ডারউইনকে খুঁজে পেয়েছি

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফসল উৎপাদন করা জরুরি

পিএসসি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াবে কীভাবে

এত উন্নয়নের পরও বাসযোগ্যতায় কেন পিছিয়েই থাকছে ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য কি কেউ নেই?

জলবায়ু রক্ষায় কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে

অধরার হাতে সমর্পিত ক্ষমতা

প্রসঙ্গ : কোটাবিরোধী আন্দোলন

রম্যগদ্য : যে করিবে চালাকি, বুঝিবে তার জ্বালা কী

একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলার পরিণতি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কেন শ্রেণীকক্ষের বাইরে

মেধা নিয়ে কম মেধাবীর ভাবনা

প্রজাতন্ত্রের সেবক কেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বনে যান

ছবি

বাইডেন কি দলে বোঝা হয়ে যাচ্ছেন?

ছবি

দুই যুগের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সাপ উপকারী প্রাণীও বটে!

ছবি

বাস্তববাদী রাজনীতিক জ্যোতি বসু

tab

উপ-সম্পাদকীয়

মার্কিন ভিসানীতি : লক্ষ্য কি শুধুই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন?

শামসুন নাহার

বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩

গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রিদেশীয় সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েনের নতুন বার্তা দিচ্ছিল। যা নেট পাড়া, রাজনীতি ও কূটনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। অনেক কূটনীতিক বোদ্ধা এবং গণমাধ্যম বাংলাদেশ নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ছে তা-ই নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছিলো।উদ্বেগ যখন চরমে, ঠিক তখনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল যখন পারষ্পরিক রেষারেষিতে ব্যস্ত, তখন মার্কিন ভিসানীতি বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে এক নিদারুণ চপেটাঘাত। রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকেই নতুন ভিসানীতি কে স্বাগত জানিয়েছেন। আবার অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করছেন কারা কারা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার গুজব ছড়াচ্ছেন মার্কিন ভিসানীতি বাংলাদেশের ওপর নতুন আরেক নিষেধাজ্ঞা।

নতুন মার্কিন ভিসানীতিতে কী আছে সেগুলো জেনে নেয়া যাক :

২০২২ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই মার্কিন ভিসা নীতি বাংলাদেশের উপর আরোপ করা হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার জানিয়েছে। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর, নিয়মতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক করার মাধ্যমে জবাবদিহিতামূলক সরকার গঠনের উদ্দেশ্যেই মার্কিন এই ভিসা নীতি।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্টনি ব্লিঙ্কেন ২৪ মে বাংলাদেশের নির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের ভিসা দেয়ার উপর কড়াকড়ি আরোপ করেন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাদের কাছে যদি মনে হয়, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে কেউ বাধা সৃষ্টি করেছেন, তাহলে তার ভিসা দেয়া হবে না। নতুন ভিসানীতি ঘোষণার বিষয়টি মে মাসের ৩ তারিখে বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

একটি বেসরকারি টিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা ডোনাল্ড লু বলেছেন, এটি কোনো ‘স্যাংশন’ নয়। একটি নতুন ভিসা নীতিমালা ঘোষিত হয়েছে, যার লক্ষ্য বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে যাতে কোনো অনিয়ম না ঘটে, তা নিশ্চিত করা।

সাম্প্রতিক সময়ে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডার ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে নির্বাচন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভিসানীতি কেমন ভূমিকা পালন করবে, তা দেখা সময়ের ব্যাপার

গত ২৪ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্টনি ব্লিঙ্কেন তার টুইটার পোস্টে বলেন, ‘আজ আমি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রচারের জন্য একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি। এই নীতির অধীনে যারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকেবে তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের উপর নতুন ভিসানীতি আরোপ করতে পারি।’

কারা এই ভিসানীতির আওতায় থাকবেন, সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য—যে কেউই এই ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় পড়তে পারেন। এমনকি জড়িত ব্যক্তিদের স্ত্রী, স্বামী বা সন্তানেরাও ভিসা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।’

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সাবেক কূটনীতিক জন ডেনিলোউইজ, যিনি বর্তমানে ওয়াশিংটনভিত্তিক নিউজ পোর্টাল সাউথ এশিয়া পারসপেক্টিভসের (এসএপি) এডিটর-অ্যাট-লার্জ এই প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে যারা ‘বর্তমান অবস্থা’ বহাল রাখতে চায়, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর ক্ষেত্রে মার্কিন ভিসার কড়াকড়ি। যা পরবর্তীতে ‘যথেষ্ট ফলপ্রসূ’ না-ও হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। ভিসা নীতি যাদের ওপর প্রয়োগ করা হতে পারে, তাদের নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের ভ্রমণ সীমিত হয়ে এলে তবেই ভিসা নীতির কিছু ফল মিললেও মিলতে পারে বলে তার বিশ্বাস। 

শুধু কি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নাকি কৌশলগত কারণ?

বাংলাদেশের ওপর মার্কিন ভিসানীতির পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেন এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা মন্তব্য করেছেন যে, ‘পাকিস্তানে নির্বাচিত সরকারকে জোরপূর্বক অপসারণ করা হয়। নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়, এবং একটি সম্পূর্ণ অনির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও থাইল্যান্ডে, প্রায় এক দশকের সামরিক শাসনের পর, সম্প্রতি গণতন্ত্রীরা নির্বাচিত হয়েছে, কিন্তু সামরিক বাহিনী তাদের ক্ষমতায় আসতে দেয় না। বিশ্বের সামনে নগ্নভাবে এসব অগণতান্ত্রিক ঘটনা ঘটছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়গুলিতে ফোকাস করেনি, কারণ তাদের অগণতান্ত্রিক সরকার তাদের স্বার্থ পূরণ করে।’

ইতিহাস ঘাটলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে নিজদের পুতুল সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর অহরহ নজির পাওয়া যাবে। এশিয়ার মানুষের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে ধারণা কিংবা অভিজ্ঞতার কোনোটিরই কমতি নেই। তারা যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত ভূমিকার জন্য বাংলাদেশে পাকিস্তানের গণহত্যা, ১৯৭৫ সালে সিআইর পরোক্ষ মদদে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশে সেনাশাসন প্রতিষ্ঠা করা, ভিয়েতনাম, লাওস এবং কম্বোডিয়া যেখানে তিনি যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত যুদ্ধ এবং ইন্দোনেশিয়ায় সক্রিয়ভাবে সুহার্তকে সহযোগিতা করে গণহত্যার পটভূমির রচনা করেছিলেন। লাতিন আমেরিকায় তাদের কুখ্যাতি সম্ভবত অতুলনীয়। জেনারেল অগাস্টো পিনোচেট সিআইএর ব্যাপক সমর্থনে ১৯৭৩ সালে চিলির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সালভাদর আলেন্দেকে উৎখাত এবং হত্যা করে।

আবার আরব বসন্তের ফুলঝুরি ছিটিয়ে আরব দেশগুলোতে নিজেদের পাপেট সরকার প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র কার্পণ্য করেনি। মিসরের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুসরিকে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেদের পছন্দের জেনারেল সিসিকে ক্ষমতায় বসায়। নিজেরা মুখে মুখে গণতন্ত্রের বুলি আওড়ালেও মধ্যপ্রাচ্যের রাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহ বেশি তাদের।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, খনিজ সম্পদ, জনসম্পদ, বিনিয়োগের পরিবেশ এবং উদীয়মান অর্থনীতি বিশ্বের সবাই পরাশক্তির কাছেই আকর্ষণীয়। ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারে বাংলাদেশ যেকোনো দেশের জন্যই আশীর্বাদস্বরূপ। বাংলাদেশের জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী নীতি এবং সবাই পরাশক্তির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত লেগেছে বলে অনেকেই মনে করেন।

আবার ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের শক্ত অবস্থান এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা শঙ্কিত। যার কারণে, নিজেদের দলে ভেড়াতেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে আসছে। বিবিসির এক সাক্ষাৎকারে রাজনৈতিক-অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কোনো একটি দেশের দেন-দরবারের সক্ষমতা বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে- ক্রয় ক্ষমতা, অভ্যন্তরীণ বাজারের আয়তন এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের সক্ষমতা। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক প্রধানত ষ্ট্রাটেজিক, বাজার বা বিনিয়োগ নয়। বরঞ্চ বাজারের ওপর যেটুক নির্ভরতা তা প্রায় পুরোটাই বাংলাদেশের। ২০ থেকে ২৫ শতাংশ তৈরি পোশাক এক যুক্তরাষ্ট্রে যায়, ফলে বাজারের প্রয়োজন শুধু বাংলাদেশের।’

জনশ্রুতি আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি গড়তে চেয়েছিল। কিন্ত, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান না করে দেন ।আবার ২০০৪ এবং ২০১২ সালে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি কিংবা মার্কিন বাহিনী মোতায়েনের খবর শোনা যায়। কিন্তু, বাংলাদেশ সরকার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই ব্যাপারটা অস্বীকার করে আসছে।

আবার সাম্প্রতিক সময়ে নতুন ব্যবসায়িক পদক্ষেপ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল ও গ্যাস কোম্পানি এক্সনমোবিল কর্পোরেশন বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার সমস্ত উন্মুক্ত গভীর পানির অফশোর ব্লক ও কিছু অনশোর ব্লকে গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।এছাড়াও, বিশ্বের আরও পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলোও বাংলাদেশে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে, নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এক ধরনের কৌশল হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন।

গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে চীনের দ্বন্দ নতুন রূপে ধারণ করলে বাংলাদেশের

অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য তাদের চাপ ছিলো। যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চল অর্থাৎ ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার এবং চীনের ইন্দো এশিয়ান ফোরামকে আটকানোর জন্যই একটি মুক্ত, সংযুক্ত, সমৃদ্ধ এবং সুরক্ষিত ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই বাংলাদেশকে তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে অংশীজন হওয়ার জন্য তাদবির চালিয়েছিল। কিন্তু, বাংলাদেশ কোনো মেরুকরণ কিংবা উস্কানিমূলক কৌশল ঘোষণা না করে স্বাধীন, নিরপেক্ষ, অঅনুকরণীয় অবাধ, মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ইন্দো প্যাসিফিক রূপরেখা ঘোষণা করেছে; যা যুক্তরাষ্ট্রের মনঃক্ষুণ্ণের অন্যতম কারণ হিসেবে ধারণা করা যেতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডার ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে নির্বাচন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভিসানীতি কেমন ভূমিকা পালন করবে, তা দেখা সময়ের ব্যাপার। নেটিজেনদের মতো বলতে চাই, যুক্তরাষ্ট্রের যদি সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ এবং মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে, তাহলে এ দেশের মানুষের স্বার্থেই যারা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থপাচার করে বিলাসী জীবনযাপন করছে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে বাংলাদেশ সরকারকে অতিসত্বর ফেরত দিক।

[লেখক : পিএইচডি শিক্ষার্থী, গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top