alt

পাঠকের চিঠি

কাবাডি কেন পিছিয়ে?

: বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হিসেবে কাবাডির ইতিহাস বেশ পুরনো এবং গর্বের। ১৯৭২ সালে স্বাধীনতার পর কাবাডিকে জাতীয় খেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু সেই স্বীকৃতির পরেও, কাবাডি দেশের অন্যান্য খেলার মতো তেমন জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। অথচ একসময় গ্রামবাংলার প্রতিটি আনাচে-কানাচে কাবাডি খেলার ধুম ছিল। এটি ছিল গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেখানে উৎসবমুখর পরিবেশে কাবাডি খেলার আয়োজন হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে কাবাডি ধীরে ধীরে মানুষের মন থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে।

ক্রিকেট ও ফুটবলের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা কাবাডির এই অবনমনের অন্যতম কারণ হতে পারে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এই খেলাটি আর আকর্ষণীয় মনে হয় না। টিভির পর্দায় কাবাডি সম্প্রচার হলে তারা প্রায়শই এই খেলা এড়িয়ে যায়। অথচ কাবাডির সাথেই মিশে আছে দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তা সত্ত্বেও, তৃণমূল পর্যায়ে এর আয়োজন কমে যাওয়ায় খেলাটি তার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে।

কাবাডির পিছিয়ে পড়ার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, এই খেলার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। সরকারের আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় কাবাডিকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ১৯৯৯ সালে, কিন্তু এই সিদ্ধান্তের কার্যকর বাস্তবায়ন আজ চোখে পড়ে না। বর্তমান প্রজন্মের জন্য এই খেলার আয়োজন ও প্রশিক্ষণের সুযোগ যথেষ্ট নেই, ফলে তাদের মধ্যে এই খেলাটির প্রতি আগ্রহ তৈরি হচ্ছে না। পেশাদার কাবাডি খেলোয়াড়রা অনেক কম পারিশ্রমিক পান, যার ফলে তারা অন্য পেশায় ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছেন। সেই সাথে, প্রতিযোগিতামূলক লিগ আয়োজনের ক্ষেত্রেও নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা খেলোয়াড়দের আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে।

কিন্তু কাবাডির এই বেহাল দশা পরিবর্তন করা সম্ভব, যদি আমরা সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিতে পারি। প্রথমত, স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে নিয়মিত কাবাডির আয়োজন করতে হবে, যাতে তরুণ প্রজন্ম এই খেলাটির সাথে পরিচিত হতে পারে এবং আগ্রহী হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, পেশাদার কাবাডি খেলোয়াড়দের জন্য উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা, প্রশিক্ষণ এবং পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক লিগ আয়োজনের মাধ্যমে খেলাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।

এছাড়া, গণমাধ্যমেও কাবাডির প্রচারণা বাড়ানো উচিত। টেলিভিশনে নিয়মিতভাবে কাবাডি সম্প্রচার এবং এর প্রতিযোগিতাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখানো হলে জনগণের মধ্যে এই খেলার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উচিত কাবাডিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা এবং এই খেলায় নতুন প্রতিভা গড়ে তোলার জন্য বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়া।

আমাদের জাতীয় খেলাটি একসময় যে সম্মান ও মর্যাদা পেয়েছিল, তা ফিরিয়ে আনতে হলে সর্বস্তরে উদ্যোগ ও সচেতনতা প্রয়োজন। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগ কাবাডিকে তার হারানো গৌরব ফিরিয়ে দিতে পারে। কাবাডি শুধু একটি খেলা নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির অংশ, যা সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব।

ইকবাল মাহমুদ

শিক্ষার্থী, ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

মোরেলগঞ্জ পৌরসভার নাগরিক সেবা উন্নয়নে পদক্ষেপ নিন

ছবি

খেজুরের রস

ট্যাগিং সংস্কৃতির অবসান ঘটুক

আবাসন সংকট দূর করুন

আখাউড়া-আগরতলা ট্রেন চালু হবে কি ?

উচ্চশিক্ষা ও বেকারত্ব

ছবি

অবৈধ ইটভাটা : দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক

সংঘাত বন্ধ হোক

ছবি

কবে থামবে নদী দখল?

ছবি

কেমন আছে জাতীয় পাখি দোয়েল?

অতিথি পাখি শিকার নয়

নীরব ভূমিকায় কলেজ প্রশাসন

সড়ক দুর্ঘটনা

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা কোথায়

ব্রহ্মপুত্রের পাড় হারাচ্ছে সৌন্দর্য

ছবি

সবজির দাম, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, কৃষকের বঞ্চনা

ছবি

ছাদ বাগান

শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতন

ছবি

মেট্রোরেলের টিকেট ভোগান্তি

শব্দদূষণ রোধে উদ্যোগ নিন

শীতের আতঙ্ক নিপাহ ভাইরাস

ফ্লাইওভারে মিলছে না কাক্সিক্ষত সেবা

শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই

ছবি

ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিকাশ : আর্থিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি

পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন

সমাজ পরিবর্তন করে চিন্তার পরিবর্তন, নাকি চিন্তাধারার পরিবর্তন করে সমাজ পরিবর্তন?

বিদ্যালয়ের সংস্কার প্রয়োজন

ছবি

অতিথি পাখি শিকার বন্ধ হোক

আন্দোলন, ন্যায্যতার দাবি ও জনদুর্ভোগ

কক্সবাজারগামী ট্রেনের লাকসাম জংশনে যাত্রাবিরতি চাই

ছবি

যত্রতত্র বাস থামানো বন্ধ করুন

ছবি

বৈদ্যুতিক খুঁটি যেন মাকড়সার জাল

ছবি

কপ-২৯ সম্মেলন ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

ছবি

পরীক্ষাগুলো বিভাগীয় শহরে নেয়া হোক

খাল ও জলাশয়ের বদ্ধ পানি এডিস মশার উৎস

রাস্তা সংস্কার করুন

tab

পাঠকের চিঠি

কাবাডি কেন পিছিয়ে?

বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হিসেবে কাবাডির ইতিহাস বেশ পুরনো এবং গর্বের। ১৯৭২ সালে স্বাধীনতার পর কাবাডিকে জাতীয় খেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু সেই স্বীকৃতির পরেও, কাবাডি দেশের অন্যান্য খেলার মতো তেমন জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। অথচ একসময় গ্রামবাংলার প্রতিটি আনাচে-কানাচে কাবাডি খেলার ধুম ছিল। এটি ছিল গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেখানে উৎসবমুখর পরিবেশে কাবাডি খেলার আয়োজন হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে কাবাডি ধীরে ধীরে মানুষের মন থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে।

ক্রিকেট ও ফুটবলের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা কাবাডির এই অবনমনের অন্যতম কারণ হতে পারে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এই খেলাটি আর আকর্ষণীয় মনে হয় না। টিভির পর্দায় কাবাডি সম্প্রচার হলে তারা প্রায়শই এই খেলা এড়িয়ে যায়। অথচ কাবাডির সাথেই মিশে আছে দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তা সত্ত্বেও, তৃণমূল পর্যায়ে এর আয়োজন কমে যাওয়ায় খেলাটি তার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে।

কাবাডির পিছিয়ে পড়ার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, এই খেলার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। সরকারের আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় কাবাডিকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ১৯৯৯ সালে, কিন্তু এই সিদ্ধান্তের কার্যকর বাস্তবায়ন আজ চোখে পড়ে না। বর্তমান প্রজন্মের জন্য এই খেলার আয়োজন ও প্রশিক্ষণের সুযোগ যথেষ্ট নেই, ফলে তাদের মধ্যে এই খেলাটির প্রতি আগ্রহ তৈরি হচ্ছে না। পেশাদার কাবাডি খেলোয়াড়রা অনেক কম পারিশ্রমিক পান, যার ফলে তারা অন্য পেশায় ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছেন। সেই সাথে, প্রতিযোগিতামূলক লিগ আয়োজনের ক্ষেত্রেও নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা খেলোয়াড়দের আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে।

কিন্তু কাবাডির এই বেহাল দশা পরিবর্তন করা সম্ভব, যদি আমরা সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিতে পারি। প্রথমত, স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে নিয়মিত কাবাডির আয়োজন করতে হবে, যাতে তরুণ প্রজন্ম এই খেলাটির সাথে পরিচিত হতে পারে এবং আগ্রহী হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, পেশাদার কাবাডি খেলোয়াড়দের জন্য উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা, প্রশিক্ষণ এবং পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক লিগ আয়োজনের মাধ্যমে খেলাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।

এছাড়া, গণমাধ্যমেও কাবাডির প্রচারণা বাড়ানো উচিত। টেলিভিশনে নিয়মিতভাবে কাবাডি সম্প্রচার এবং এর প্রতিযোগিতাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখানো হলে জনগণের মধ্যে এই খেলার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উচিত কাবাডিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা এবং এই খেলায় নতুন প্রতিভা গড়ে তোলার জন্য বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়া।

আমাদের জাতীয় খেলাটি একসময় যে সম্মান ও মর্যাদা পেয়েছিল, তা ফিরিয়ে আনতে হলে সর্বস্তরে উদ্যোগ ও সচেতনতা প্রয়োজন। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগ কাবাডিকে তার হারানো গৌরব ফিরিয়ে দিতে পারে। কাবাডি শুধু একটি খেলা নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির অংশ, যা সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব।

ইকবাল মাহমুদ

শিক্ষার্থী, ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

back to top