alt

পাঠকের চিঠি

মাধ্যমিক থেকেই চাই কর্মমুখী শিক্ষা

: বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদ-, আর সেই মেরুদ- তিলে তিলে ক্ষয় করছে সার্টিফিকেটীয় শিক্ষা। শিক্ষা ছাড়া মানব জীবন অপূর্ণ। কথায় আছে যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সেই জাতি তত বেশি উন্নত; কিন্তু যে শিক্ষা বাস্তব জীবনে কাজে লাগেনা, সে শিক্ষা অর্থহীন। এধরনের শিক্ষায় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা বাড়তে থাকে। জীবন ভিত্তিক কর্মমুখী শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা।

কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে বলা হয় সেই শিক্ষা, যা জীবনের বাস্তব কর্মের সাথে প্রায়োগিকভাবে সম্পৃক্ত। এটি কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষা, যা দেশের বাস্তব সমস্যা সমাধানের উপযোগী করে তৈরি করা হয়। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন পেশায় নিজেকে দক্ষ করে তুলতে পারে।

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে যে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত তা প্রায় এক যুগ ধরে প্রশ্নবিদ্ধ। কী দিচ্ছে এই শিক্ষা? কী লাভ হচ্ছে এই শিক্ষা নিয়ে? যেখানে একজন ছাত্র ১৭-১৮ বছর ধরে মাস্টার্স শেষ করার পর চাকরির পরীক্ষায়, ভাইভাতে তাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে অভিজ্ঞতা আছে কী? কম্পিউটার জানা আছে?

তাহলে ১৭-১৮ বছর ধরে যে মাস্টার্স শেষ করলো ক্লাস বাই ক্লাস সর্বোচ্চ রেজাল্ট করলো তার কি কোনো মূল্য নেই? বাস্তবে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে এসবের কোনো মূল্যায়ন করা হচ্ছে না?

দেশের সরকারি অফিস থেকে শুরু করে শীর্ষ স্থানীয় বেসরকারি অফিসগুলোতেও দেখা হয় অভিজ্ঞতা, প্রাধান্য দেওয়া হয় কম্পিউটার শিক্ষাকে।

বিবিএসের হিসাবে আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ। তার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এই কর্মমুখী শিক্ষা এখনো পর্যন্ত অবাস্তবায়ন। দেশের সরকারি, বেসরকারী অফিসের শূন্য পদের থেকেও দেশে শিক্ষিতের হার বেড়ে চলেছে ফলে চাকরির বজার এখন সংকটকের মুখে, দিশেহারা হয়ে থাকতে হচ্ছে বেকার নেই কর্মসংস্থান এভাবেই প্রতিবছর লাখ লাখ বেকার সংখ্যা বাড়ছে।

বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা এখনও অনেকাংশে কর্মমুখী শিক্ষার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। এটি প্রায়োগিক ও বিজ্ঞানসম্মত না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেরানিগিরির প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা শেষে বেকার থাকে। শুধু ডিগ্রির পেছনে ছুটে প্রকৃত দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় বেকারত্বের অভিশাপ ঘিরে ধরছে শিক্ষার্থীদের। ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও তারা তেমন কোনো অবদান রাখতে পারছে না। এ সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য কর্মমুখী শিক্ষা খুবই জরুরি।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মূলত মুখস্থ বিদ্যার ওপর নির্ভরশীলতা দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় পাস করার জন্য যা মুখস্থ করে, তা বাস্তব জীবনে খুব একটা কাজে আসে না। পুঁথিগত শিক্ষা জীবনের সাথে সম্পৃক্ত নয় বলে অনেক ক্ষেত্রে এটি শিক্ষার্থীদের পঙ্গুত্ব বয়ে আনে। ফলে দক্ষ পেশাজীবী, কারিগর, বিজ্ঞানী তৈরির প্রয়োজনীয়তা পূরণে এ শিক্ষাব্যবস্থা ব্যর্থ। ঔপনিবেশিক শাসনামলের প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থীরা কেরানি হওয়ার দিকেই বেশি ঝুঁকে থাকে।

দেশের প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ এমনকি অনেক মাদ্রাসায় ও রয়েছে কম্পিউটার ল্যাব কিন্তু সেখানে পুরো বছর জুড়ে শেখানো হয় কম্পিউটার কিভাবে অন- অফ করতে হবে, শেখানো হয় কিভাবে মাউস ধরতে হবে। যুগের সাথে সাথে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও শিক্ষাব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন সময়ে ‘স্যাডলার কমিশন’, ‘কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন’, ‘বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষা কমিশন’, ‘কাজী জাফর/বাতেন কমিশন’ এবং সর্বশেষ মজিদ খানের শিক্ষানীতি গঠন করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বা বাস্তবক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়নি। তাই যদি হবে তাহলে দেশে কেন এত বেকারত্ব? কেন এত কর্মের জন্য হাহাকার? কেন এতদিন কর্মমুখী শিক্ষা বাস্তবায়ন করা হলো না? এই বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে শুধু ডিগ্রী দেয় সিজিপিএর সার্টিফিকেট দেয়, কোনো কর্মের সুযোগ তৈরিই করে দেয়না, দেয়না চাকরি বা কোনো কাজ, পাওয়া যায়না কর্মসংস্থান।

বিশ্বের উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তাকালে তাদের পরিকল্পিত এবং কর্মমুখী শিক্ষার বাস্তব কর্মকা- লক্ষ্য করা যায়। উন্নত দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কেরানি হওয়ার সুযোগ নেই। আছে বিজ্ঞানী হওয়ার এবং কর্মের মন্ত্রে দীক্ষা নেওয়ার সুযোগ। ব্রিটেন, আমেরিকা, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এসব দেশ কর্মমুখী বা উৎপাদনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে নিজেদের ভাগ্যকে প্রসন্ন করেছে। বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মমুখী শিক্ষা চালু করে তারা আজ উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করছে।

অথচ তাদের দিকে তাকালে খুব সহজেই বোঝা যায় এই সময়ে এসেও আমারা তাদের থেকে কয়েক যুগ পিছিয়ে আছি। দেশের এই অর্থনৈতিক দুরবস্থায় যে শিক্ষার মধ্যে শিক্ষার্থীরা নির্ভরতা খুঁজে পাবে, যে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেরা নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবে এমন শিক্ষাব্যবস্থা খুবই জরুরি।

সময়ের স্রোতে বিশ্ব ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে, আর সেই সঙ্গে শিক্ষার রূপরেখাও। যে জীবনে শিক্ষা নেই, তা কেবলই নিরর্থক। অথচ, যে শিক্ষায় বাস্তব জীবনের প্রয়োগ নেই, সেটাও পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা হতে পারে না। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দৈনন্দিন জীবনধারার সাথে সংগতিহীন ছিল। এর ফলে জীবনধারণের সাথে সামঞ্জস্যহীন শিক্ষা, বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের এক বিশাল চক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা খুবই জরুরি।

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কর্মসংস্থানের চাপ বাড়ছে। এতে করে কর্মসংস্থানহীন যুব শক্তির সংখ্যাও বাড়ছে। এই যুব শক্তিকে কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে পারলে আর্থিক সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব। সেজন্য দেশের পাঠ্যপুস্তক গুলো থেকে সিরাজউদ্দৌলা, ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজি, শায়েস্তা খান এরকম নবাব, স¤্রাট, মহানায়কদের পুরনো দিনের ইতিহাস সরিয়ে গঠনমূলক বাস্তবমুখী, উৎপাদনমুখী কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার পাঠক্রম চালু করে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।

মো. ইলিয়াস

শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, রুপসা কলেজ, খুলনা।

ছাতারপাইয়ায় রাস্তা সংস্কার জরুরি

বইয়ের আলোয় দূর হোক অন্ধকার

পোস্তগোলা রাস্তার শোচনীয় অবস্থা

কৃষক কাঁদে, ভোক্তাও কাঁদে

হতাশার আরেক নাম ভর্তি পরীক্ষা

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে ক্ষতিগ্রস্তদের লিজ দলিল দিন

ছবি

সাতার শেখা জরুরি

গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া : শিক্ষার্থীদের জন্য স্বস্তি নাকি ভোগান্তি?

ছবি

বন্ধ করা হোক ফিটনেসবিহীন যানবাহন

ছবি

অমর একুশে বইমেলা

মানুষের দাবি ও জনদুর্ভোগ

ছবি

মেট্রোরেল স্টেশনে বিড়ম্বনা কেন?

ট্রেন চলাচল বন্ধ : সংকট সমাধানে আলোচনা করতে হবে

ছবি

খেলার মাঠের অভাবে শিশুর মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে

ল্যাম্পপোস্ট মেরামত করুন

পর্যটকদের নিরাপত্তা

শীতে গরম পানি ব্যবহার করা ও আগুন পোহাতে সচেতন হতে হবে

ছিন্নমূল শীতার্তদের দিকে নজর দেয়া উচিত

ছবি

রোজায় নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিন

নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা জরুরি

ছাত্র সংসদ চালু করা এখন সময়ের দাবি

রেলপথের অনেক সিগন্যালেরই আয়ূষ্কাল শেষ

ছবি

ভোজ্যতেলের বাজারে তদারকি প্রয়োজন

ছবি

সড়কে বেপরোয়া বাইক

বেকারত্বের ফাঁদ

ভূমিকম্প মোকাবিলায় কি আমরা প্রস্তুত

জাল নোট

ছবি

এইচএমপিভি সংক্রমণ : আতঙ্ক নয়, সচেতনতার প্রয়োজন

ছবি

অপরিকল্পিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি

মুন্সীগঞ্জের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনিয়ম

ছবি

এনসিটিবির হাতে ‘গাছের পাতা’ ছেঁড়া হলো

কঠিন অধ্যবসায়, সাবলীল জীবন

উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে ভ্যাটের বোঝা

বিমানবন্দরে নিরাপত্তাকর্মীদের বাড়াবাড়ি

যমজ সন্তান ভর্তিতে ভোগান্তি

পাবলিক লাইব্রেরি সমৃদ্ধ করুন

tab

পাঠকের চিঠি

মাধ্যমিক থেকেই চাই কর্মমুখী শিক্ষা

বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদ-, আর সেই মেরুদ- তিলে তিলে ক্ষয় করছে সার্টিফিকেটীয় শিক্ষা। শিক্ষা ছাড়া মানব জীবন অপূর্ণ। কথায় আছে যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সেই জাতি তত বেশি উন্নত; কিন্তু যে শিক্ষা বাস্তব জীবনে কাজে লাগেনা, সে শিক্ষা অর্থহীন। এধরনের শিক্ষায় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা বাড়তে থাকে। জীবন ভিত্তিক কর্মমুখী শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা।

কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে বলা হয় সেই শিক্ষা, যা জীবনের বাস্তব কর্মের সাথে প্রায়োগিকভাবে সম্পৃক্ত। এটি কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষা, যা দেশের বাস্তব সমস্যা সমাধানের উপযোগী করে তৈরি করা হয়। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন পেশায় নিজেকে দক্ষ করে তুলতে পারে।

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে যে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত তা প্রায় এক যুগ ধরে প্রশ্নবিদ্ধ। কী দিচ্ছে এই শিক্ষা? কী লাভ হচ্ছে এই শিক্ষা নিয়ে? যেখানে একজন ছাত্র ১৭-১৮ বছর ধরে মাস্টার্স শেষ করার পর চাকরির পরীক্ষায়, ভাইভাতে তাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে অভিজ্ঞতা আছে কী? কম্পিউটার জানা আছে?

তাহলে ১৭-১৮ বছর ধরে যে মাস্টার্স শেষ করলো ক্লাস বাই ক্লাস সর্বোচ্চ রেজাল্ট করলো তার কি কোনো মূল্য নেই? বাস্তবে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে এসবের কোনো মূল্যায়ন করা হচ্ছে না?

দেশের সরকারি অফিস থেকে শুরু করে শীর্ষ স্থানীয় বেসরকারি অফিসগুলোতেও দেখা হয় অভিজ্ঞতা, প্রাধান্য দেওয়া হয় কম্পিউটার শিক্ষাকে।

বিবিএসের হিসাবে আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ। তার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এই কর্মমুখী শিক্ষা এখনো পর্যন্ত অবাস্তবায়ন। দেশের সরকারি, বেসরকারী অফিসের শূন্য পদের থেকেও দেশে শিক্ষিতের হার বেড়ে চলেছে ফলে চাকরির বজার এখন সংকটকের মুখে, দিশেহারা হয়ে থাকতে হচ্ছে বেকার নেই কর্মসংস্থান এভাবেই প্রতিবছর লাখ লাখ বেকার সংখ্যা বাড়ছে।

বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা এখনও অনেকাংশে কর্মমুখী শিক্ষার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। এটি প্রায়োগিক ও বিজ্ঞানসম্মত না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেরানিগিরির প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা শেষে বেকার থাকে। শুধু ডিগ্রির পেছনে ছুটে প্রকৃত দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় বেকারত্বের অভিশাপ ঘিরে ধরছে শিক্ষার্থীদের। ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও তারা তেমন কোনো অবদান রাখতে পারছে না। এ সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য কর্মমুখী শিক্ষা খুবই জরুরি।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মূলত মুখস্থ বিদ্যার ওপর নির্ভরশীলতা দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় পাস করার জন্য যা মুখস্থ করে, তা বাস্তব জীবনে খুব একটা কাজে আসে না। পুঁথিগত শিক্ষা জীবনের সাথে সম্পৃক্ত নয় বলে অনেক ক্ষেত্রে এটি শিক্ষার্থীদের পঙ্গুত্ব বয়ে আনে। ফলে দক্ষ পেশাজীবী, কারিগর, বিজ্ঞানী তৈরির প্রয়োজনীয়তা পূরণে এ শিক্ষাব্যবস্থা ব্যর্থ। ঔপনিবেশিক শাসনামলের প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থীরা কেরানি হওয়ার দিকেই বেশি ঝুঁকে থাকে।

দেশের প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ এমনকি অনেক মাদ্রাসায় ও রয়েছে কম্পিউটার ল্যাব কিন্তু সেখানে পুরো বছর জুড়ে শেখানো হয় কম্পিউটার কিভাবে অন- অফ করতে হবে, শেখানো হয় কিভাবে মাউস ধরতে হবে। যুগের সাথে সাথে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও শিক্ষাব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন সময়ে ‘স্যাডলার কমিশন’, ‘কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন’, ‘বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষা কমিশন’, ‘কাজী জাফর/বাতেন কমিশন’ এবং সর্বশেষ মজিদ খানের শিক্ষানীতি গঠন করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বা বাস্তবক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়নি। তাই যদি হবে তাহলে দেশে কেন এত বেকারত্ব? কেন এত কর্মের জন্য হাহাকার? কেন এতদিন কর্মমুখী শিক্ষা বাস্তবায়ন করা হলো না? এই বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে শুধু ডিগ্রী দেয় সিজিপিএর সার্টিফিকেট দেয়, কোনো কর্মের সুযোগ তৈরিই করে দেয়না, দেয়না চাকরি বা কোনো কাজ, পাওয়া যায়না কর্মসংস্থান।

বিশ্বের উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তাকালে তাদের পরিকল্পিত এবং কর্মমুখী শিক্ষার বাস্তব কর্মকা- লক্ষ্য করা যায়। উন্নত দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কেরানি হওয়ার সুযোগ নেই। আছে বিজ্ঞানী হওয়ার এবং কর্মের মন্ত্রে দীক্ষা নেওয়ার সুযোগ। ব্রিটেন, আমেরিকা, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এসব দেশ কর্মমুখী বা উৎপাদনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে নিজেদের ভাগ্যকে প্রসন্ন করেছে। বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মমুখী শিক্ষা চালু করে তারা আজ উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করছে।

অথচ তাদের দিকে তাকালে খুব সহজেই বোঝা যায় এই সময়ে এসেও আমারা তাদের থেকে কয়েক যুগ পিছিয়ে আছি। দেশের এই অর্থনৈতিক দুরবস্থায় যে শিক্ষার মধ্যে শিক্ষার্থীরা নির্ভরতা খুঁজে পাবে, যে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেরা নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবে এমন শিক্ষাব্যবস্থা খুবই জরুরি।

সময়ের স্রোতে বিশ্ব ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে, আর সেই সঙ্গে শিক্ষার রূপরেখাও। যে জীবনে শিক্ষা নেই, তা কেবলই নিরর্থক। অথচ, যে শিক্ষায় বাস্তব জীবনের প্রয়োগ নেই, সেটাও পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা হতে পারে না। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দৈনন্দিন জীবনধারার সাথে সংগতিহীন ছিল। এর ফলে জীবনধারণের সাথে সামঞ্জস্যহীন শিক্ষা, বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের এক বিশাল চক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা খুবই জরুরি।

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কর্মসংস্থানের চাপ বাড়ছে। এতে করে কর্মসংস্থানহীন যুব শক্তির সংখ্যাও বাড়ছে। এই যুব শক্তিকে কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে পারলে আর্থিক সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব। সেজন্য দেশের পাঠ্যপুস্তক গুলো থেকে সিরাজউদ্দৌলা, ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজি, শায়েস্তা খান এরকম নবাব, স¤্রাট, মহানায়কদের পুরনো দিনের ইতিহাস সরিয়ে গঠনমূলক বাস্তবমুখী, উৎপাদনমুখী কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার পাঠক্রম চালু করে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।

মো. ইলিয়াস

শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, রুপসা কলেজ, খুলনা।

back to top