সাহিত্য ও সাংবাদিকতা, দুটি আলাদা ক্ষেত্র। তবে তাদের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ও গভীর সম্পর্ক আছে। সাহিত্য সাধারণত সমাজ, সংস্কৃতি ও অনুভূতির গভিরতাকে তুলে ধরে অন্যদিকে সাংবাদিকতা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত খবর, তথ্য ও ঘটনা নির্ভুল ভাবে উপস্থাপন করে। তবে, উভয়ের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য যেমন উদ্দেশ্য, পদ্ধতি ও সামগ্রী থাকলেও, তা সত্ত্বেও তারা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং একে অপরকে সমৃদ্ধ করে।
গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা। সাহিত্যের উদ্দেশ্য হলো মনুষ্যজীবনের সঠিক চিত্র প্রকাশ করা, পাঠককে একটি অনুভূতির পৃথিবীতে নিয়ে যাওয়া।
অন্যদিকে, সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য হলো তথ্য সরবরাহ করা, সমাজের কাছে ঘটনার সঠিক চিত্র উপস্থাপন করা, এবং জনগণের মনের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
একটি সত্য ঘটনা, বিশেষ করে যেটি সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যদি সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয় তবে সেটি সাহিত্যের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সাংবাদিকতা যখন সাহিত্যিক আঙ্গিকে রচিত হয়, তখন সেটি পাঠককে শুধু তথ্যই দেয় না, বরং সেই ঘটনার প্রতি অনুভূতিও তৈরি করে।
একটি সার্থক সাংবাদকে সৃজনশীলভাবে উপস্থাপন করা হলে সেটি তথ্যের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পও হয়ে ওঠে। সাহিত্যের মতো, সাংবাদিকতাও কখনও কখনও একটি গল্পের মতো, অর্থাৎ এখানের চরিত্র, পরিস্থিতি ও স্থানগুলির বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার মাধ্যমে ঘটনার গুরুত্ব বোঝানো হয়। বিভিন্ন ধরনের টেলিভিশন প্রতিবেদন, খবরের প্রবন্ধ এবং ব্লগ পোস্টে উপস্থাপনা এমন হতে পারে যেন পাঠক বা দর্শক এক ধরনের গল্পের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বর্ণনা, চরিত্র নির্মাণ, পরিস্থিতির বর্ণনা এগুলো সাংবাদিকতার মধ্যে শৈল্পিক উপাদান হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। এই মিশ্রণ সংবাদমাধ্যমের সামগ্রিক মান উন্নত করতে সাহায্য করে এবং পাঠক বা দর্শকের অভিজ্ঞতাকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যায়।
সাহিত্য এবং সাংবাদিকতা উভয়েই সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধি ও সমাজের সমস্যা তুলে ধরে। সাহিত্যে, লেখকরা একদিকে যেমন সমাজের সমস্যা, অন্ধকার দিক এবং মানবিক বিপর্যয় তুলে ধরেন, তেমনি সাংবাদিকরাও সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি, সমস্যাগুলো এবং ঘটনা যথাযথভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে দেন।
যেমন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষ চন্দ্র বোস, মল্লিকদাস, একে গোপালান প্রমুখ সাহিত্যে বিপ্লবী চেতনা সৃষ্টি করেছেন। একইভাবে সাংবাদিকতা থেকেও ওই সময়কার বিপ্লবের খবর জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
সাহিত্য ও সাংবাদিকতার মধ্যে আরেকটি মিল হলো শব্দের শক্তি। সাহিত্যের প্রতিটি শব্দ নতুন একটি কল্পনার সৃষ্টি করে এবং পাঠককে নতুন এক দুনিয়ায় নিয়ে যায়। একইভাবে, সাংবাদিকতার শব্দও মানুষের মধ্যে চেতনা ও সচেতনতা তৈরি করতে সক্ষম। সাংবাদিকরা যখন তাদের লেখনির মাধ্যমে ঘটনার বিশ্লেষণ করেন, তখন তারা তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি ঘটনার অবস্থাও বর্ণনা করে।
এখানে একটি মূল পার্থক্যও রয়েছে, যেটি হচ্ছে সাহিত্যে শব্দের ব্যাপকতা, প্রতীকী রূপের ব্যবহার যেখানে পাঠক বা দর্শক গভীর কল্পনার আবেশ সৃষ্টি করতে পারে, অন্যদিকে সাংবাদিকতা অধিকাংশ সময় নির্দিষ্ট ও সীমাবদ্ধ তথ্য উপস্থাপন করে।
উন্নত বিশ্বের অনেক সাহিত্যে সাংবাদিকতার ভূমিকা অপরিসীম। মুজিবনগরের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কালীন সাংবাদিকতার ভূমিকা যেমন অবিস্মরণীয়, তেমনি সাহিত্যও এই বিপ্লবের একটি শক্তিশালী অংশ। সাহিত্য লিখিত ও সাংবাদিকতার মাধ্যমে প্রকাশিত, উভয় ক্ষেত্রেই সমাজের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটানোর একটি বিপ্লবী কার্যক্ষমতা রয়েছে। সাহিত্যের মাধ্যমে আমরা সএ সময় সমাজের বৃহত্তর ও গভীর সমস্যাগুলি উপলব্ধি করতে পারি, আর সাংবাদিকতার মাধ্যমে সেই সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধানও খুঁজে পাওয়া যায়।
বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় সাংবাদিকতার ক্ষেত্র যেমন পরিবর্তিত হচ্ছে, তেমনি সাহিত্যের প্রকাশের মাধ্যমগুলোও এক নতুন মোড় নিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া, নিউজ পোর্টাল এবং ই-জার্নালগুলো সাহিত্যের প্রকাশ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাহিত্যের শিল্পসম্মত দৃষ্টিকোণ এবং সাংবাদিকতার তথ্যবহুল নির্ভুলতা উভয়েই মানবজীবনের অঙ্গীকারের রূপান্তর ঘটায়। তারা সমাজের নানান দিক প্রতিফলিত করার মাধ্যমে পাঠক বা দর্শককে নতুন পৃথিবী এবং চিন্তা প্রদান করে।
ইকবাল মাহমুদ
ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
সাহিত্য ও সাংবাদিকতা, দুটি আলাদা ক্ষেত্র। তবে তাদের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ও গভীর সম্পর্ক আছে। সাহিত্য সাধারণত সমাজ, সংস্কৃতি ও অনুভূতির গভিরতাকে তুলে ধরে অন্যদিকে সাংবাদিকতা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত খবর, তথ্য ও ঘটনা নির্ভুল ভাবে উপস্থাপন করে। তবে, উভয়ের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য যেমন উদ্দেশ্য, পদ্ধতি ও সামগ্রী থাকলেও, তা সত্ত্বেও তারা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং একে অপরকে সমৃদ্ধ করে।
গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা। সাহিত্যের উদ্দেশ্য হলো মনুষ্যজীবনের সঠিক চিত্র প্রকাশ করা, পাঠককে একটি অনুভূতির পৃথিবীতে নিয়ে যাওয়া।
অন্যদিকে, সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য হলো তথ্য সরবরাহ করা, সমাজের কাছে ঘটনার সঠিক চিত্র উপস্থাপন করা, এবং জনগণের মনের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
একটি সত্য ঘটনা, বিশেষ করে যেটি সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যদি সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয় তবে সেটি সাহিত্যের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সাংবাদিকতা যখন সাহিত্যিক আঙ্গিকে রচিত হয়, তখন সেটি পাঠককে শুধু তথ্যই দেয় না, বরং সেই ঘটনার প্রতি অনুভূতিও তৈরি করে।
একটি সার্থক সাংবাদকে সৃজনশীলভাবে উপস্থাপন করা হলে সেটি তথ্যের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পও হয়ে ওঠে। সাহিত্যের মতো, সাংবাদিকতাও কখনও কখনও একটি গল্পের মতো, অর্থাৎ এখানের চরিত্র, পরিস্থিতি ও স্থানগুলির বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার মাধ্যমে ঘটনার গুরুত্ব বোঝানো হয়। বিভিন্ন ধরনের টেলিভিশন প্রতিবেদন, খবরের প্রবন্ধ এবং ব্লগ পোস্টে উপস্থাপনা এমন হতে পারে যেন পাঠক বা দর্শক এক ধরনের গল্পের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বর্ণনা, চরিত্র নির্মাণ, পরিস্থিতির বর্ণনা এগুলো সাংবাদিকতার মধ্যে শৈল্পিক উপাদান হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। এই মিশ্রণ সংবাদমাধ্যমের সামগ্রিক মান উন্নত করতে সাহায্য করে এবং পাঠক বা দর্শকের অভিজ্ঞতাকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যায়।
সাহিত্য এবং সাংবাদিকতা উভয়েই সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধি ও সমাজের সমস্যা তুলে ধরে। সাহিত্যে, লেখকরা একদিকে যেমন সমাজের সমস্যা, অন্ধকার দিক এবং মানবিক বিপর্যয় তুলে ধরেন, তেমনি সাংবাদিকরাও সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি, সমস্যাগুলো এবং ঘটনা যথাযথভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে দেন।
যেমন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষ চন্দ্র বোস, মল্লিকদাস, একে গোপালান প্রমুখ সাহিত্যে বিপ্লবী চেতনা সৃষ্টি করেছেন। একইভাবে সাংবাদিকতা থেকেও ওই সময়কার বিপ্লবের খবর জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
সাহিত্য ও সাংবাদিকতার মধ্যে আরেকটি মিল হলো শব্দের শক্তি। সাহিত্যের প্রতিটি শব্দ নতুন একটি কল্পনার সৃষ্টি করে এবং পাঠককে নতুন এক দুনিয়ায় নিয়ে যায়। একইভাবে, সাংবাদিকতার শব্দও মানুষের মধ্যে চেতনা ও সচেতনতা তৈরি করতে সক্ষম। সাংবাদিকরা যখন তাদের লেখনির মাধ্যমে ঘটনার বিশ্লেষণ করেন, তখন তারা তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি ঘটনার অবস্থাও বর্ণনা করে।
এখানে একটি মূল পার্থক্যও রয়েছে, যেটি হচ্ছে সাহিত্যে শব্দের ব্যাপকতা, প্রতীকী রূপের ব্যবহার যেখানে পাঠক বা দর্শক গভীর কল্পনার আবেশ সৃষ্টি করতে পারে, অন্যদিকে সাংবাদিকতা অধিকাংশ সময় নির্দিষ্ট ও সীমাবদ্ধ তথ্য উপস্থাপন করে।
উন্নত বিশ্বের অনেক সাহিত্যে সাংবাদিকতার ভূমিকা অপরিসীম। মুজিবনগরের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কালীন সাংবাদিকতার ভূমিকা যেমন অবিস্মরণীয়, তেমনি সাহিত্যও এই বিপ্লবের একটি শক্তিশালী অংশ। সাহিত্য লিখিত ও সাংবাদিকতার মাধ্যমে প্রকাশিত, উভয় ক্ষেত্রেই সমাজের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটানোর একটি বিপ্লবী কার্যক্ষমতা রয়েছে। সাহিত্যের মাধ্যমে আমরা সএ সময় সমাজের বৃহত্তর ও গভীর সমস্যাগুলি উপলব্ধি করতে পারি, আর সাংবাদিকতার মাধ্যমে সেই সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধানও খুঁজে পাওয়া যায়।
বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় সাংবাদিকতার ক্ষেত্র যেমন পরিবর্তিত হচ্ছে, তেমনি সাহিত্যের প্রকাশের মাধ্যমগুলোও এক নতুন মোড় নিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া, নিউজ পোর্টাল এবং ই-জার্নালগুলো সাহিত্যের প্রকাশ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাহিত্যের শিল্পসম্মত দৃষ্টিকোণ এবং সাংবাদিকতার তথ্যবহুল নির্ভুলতা উভয়েই মানবজীবনের অঙ্গীকারের রূপান্তর ঘটায়। তারা সমাজের নানান দিক প্রতিফলিত করার মাধ্যমে পাঠক বা দর্শককে নতুন পৃথিবী এবং চিন্তা প্রদান করে।
ইকবাল মাহমুদ
ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়