আবু আফজাল সালেহ
বিভিন্ন দেশের বাতাসের মান নিয়ে গবেষণা করে আসছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। সম্প্রতি বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০১৮ গত সপ্তাহে প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যা কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসেছে। প্রতিবেদন তৈরিতে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের তিন হাজারের বেশি শহরের বাতাসের মান পর্যবেক্ষণ করেছে। যেখানে উন্নত দেশের শহর যেমন আছে তেমনই অনুন্নত দেশের শহরও তালিকায় আছে।
মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদানগুলোর অন্যতম বাতাসে বিদ্যমান পিএম২.৫ (পার্টিকুলেট ম্যাটার) বা অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মান অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটার বাতাসে এর সহনীয় মাত্রা ১০ মাইক্রোগ্রাম। যদিও ঢাকার বাতাসে পিএম২.৫-এর মাত্রা এ মানের অনেক উপরে (প্রায় দশগুণ), প্রতি ঘনমিটারে ৯৭ মাইক্রোগ্রামের বেশি। বিভিন্ন দেশের রাজধানীর বায়ুমান বিবেচনায় এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রাজধানীগুলোর মধ্যে এর চেয়ে বেশি পিএম২.৫-এর উপস্থিতি আছে কেবল দিল্লির বাতাসে। এ হিসাবে দিল্লির পর ঢাকা হচ্ছে সবচেয়ে দূষিত বাতাসের রাজধানী। রাজধানী হিসেবে ঢাকার পরই সবচেয়ে দূষিত বাতাস কাবুলের। যুদ্ধবিধ্বস্ত এ শহরটির বায়ুদূষণের মাত্রা ঢাকার চেয়ে অনেক কম। এ শহরটির বাতাসে পিএম২.৫-এর মাত্রা প্রতি ঘনমিটার ৬১ দশমিক ৮ মাইক্রোগ্রাম।
বাতাসে ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের সূক্ষ্ম কণাকে পিএম২.৫ বলা হয়। ডব্লিউএইচওর মান অনুযায়ী, বাতাসে পিএম২.৫-এর গ্রহণযোগ্য মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম। আর যুক্তরাষ্ট্রের মান অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১২ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণাকে নিরাপদ হিসেবে ধরা হয়। তবে ৩৫ দশমিক ৪ মাইক্রোগ্রামকে চলনসই বিবেচনা করা হয়। এর বেশি হলে অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম২.৫-এর পরিমাণ সর্বোচ্চ ১৫০ দশমিক ৪ মাইক্রোগ্রাম হলে ওই বাতাসকে ধরা হয় অস্বাস্থ্যকর হিসেবে। এ হিসেবে ঢাকার বাতাস মানব স্বাস্থ্যের জন্য অস্বাস্থ্যকর।
গত চার বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার একটি প্রকল্পের আওতায় ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বসিয়ে ঢাকার বাতাসে দূষণ ও বিপদের মাত্রা, সেই সঙ্গে তাৎক্ষণিক করণীয়ও জানান দিয়ে আসছে। ইন্টারনেটে এটি রিয়াল টাইম এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই), যেটাকে বাংলায় ‘সার্বক্ষণিক বায়ুমান সূচক’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে তার প্রতিবেদন খুবই নেতিবাচক। বিশেষ করে রাজধানীর বায়ুর দূষণ হার নিয়ে। বিশ্বে নির্ভরযোগ্য এ যন্ত্রের সূচকে দেখা যায়, ঢাকার বাতাসে দূষণ বা বিষের অবস্থা মারাত্মক। চব্বিশ ঘণ্টায়ও ইতিবাচক সবুজ সুচকে আসছে না। এমনকি বিপজ্জনক সূচক (কারও কারও জন্য অস্বাস্থ্যকর হলে) কমলাতেও না। বেশিরভাগ সময় বায়ুতে অতি বিপজ্জনক উপাদানের উপস্থিতি দেখাচ্ছে।
বায়ুমান থেকে জানা যায়, বায়ুতে কয়েকটি রং ও বাতাসে ভাসমান ক্ষতিকর বস্তুকণার (যেমন- ওজোন গ্যাস, হাইড্রোজেন সালফাইড, সিসা, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড) উপস্থিতির পরিমাণ দিয়েÑ বায়ুমান ভালো হলে সবুজ, মোটামুটি ভালো হলে হলুদ, কারও কারও জন্য অস্বাস্থ্যকর হলে কমলা, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর হলে লাল, অতি অস্বাস্থ্যকর হলে বেগুনি আর বিপজ্জনক হলে খয়েরি রং দিয়ে সূচকে চিহ্নিত করা হয়। ভাবার বিষয় হচ্ছে, দুপুরের পর থেকেই ঢাকার বাতাসে বিপজ্জনক উপাদানের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এমনকি ছুটির দিনেও সবুজ সংকেত আসছে না।
বায়ুদূষণের জন্য দায়ী অনেক কিছু। যানবাহনের ধোঁয়া ও ইটভাটা মূলত রাজধানীর বায়ুদূষণের প্রধান কারণ বলে গবেষণায় জানা যায়। তবে রাজধানীর বা আশপাশের ইটভাটাগুলো দায়ী বেশি। গবেষণায় পাওয়া গেছে ঢাকার বায়ুদূষণের শতকরা ৬২ ভাগ দায়ী এ কারণ দুটো। ইটভাটাগুলো বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। বায়ু দুষণের জন্য ইটভাটা ৩৪ ভাগ এবং মোটরযান ১৮ ভাগ দায়ী বলে এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে। বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ অনেক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, শুধু ঢাকাতেই এক বছরে ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সারা দেশের শহরাঞ্চলে মারা গেছে ৮০ হাজার। পরিবেশ দূষণের সমন্বিত নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনের ওপর।
ঢাকা শহরের ছয়টি বিদ্যালয়ের শিশুদের ফুসফুসের কার্যকারিতা নিয়ে ২০১৬ সালে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির আরবান ল্যাব। ফলাফলে দেখা যায়, বিদ্যালয়গুলোর ২৫ শতাংশ শিশুর ফুসফুস পূর্ণমাত্রায় কাজ করছে না। তাদের ফুসফুস ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ কাজ করছে। কয়েক বছর ধরেই ঢাকার বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতি সহনীয় মাত্রার উপরে রয়েছে। ক্ষতিকর বস্তুকণার এ উপস্থিতি না কমে উল্টো বাড়ছে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের তথ্য বিশ্লেষণেও দেখা যায়, ঢাকার বাতাসে অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণার পরিমাণ বেড়েছে।
বাংলাদেশে বায়ু, পানি ও পরিবেশ দূষণে বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৪২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.৭ ভাগ। পরিবেশ দূষণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু, রোগী আর বৃদ্ধরা। শুধু বায়ুদূষণে ক্ষতি হয় ২০ হাজার কোটি টাকা। ঢাকা শহরের ৬ লাখ মানুষ এখন সিসা দূষণের কবলে। ঢাকার পরই নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার। ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে বায়ুদূষণ সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
স্বাস্থ্যবিদদের অভিমত হচ্ছে- বায়ুতে থাকা সিসা মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটা কণা। সিসার উপস্থিতির প্রভাবে মানুষ দ্রুত বুড়িয়ে যায়, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়। বিশেষ করে শিশুরা দুর্বল বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বেড়ে ওঠে। এছাড়া বায়ুতে থাকা ক্ষতিকর বস্তুকণা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে ফুসফুস শক্ত হয়ে অক্সিজেন প্রবেশে বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে ক্যান্সারসহ নানা রোগ জন্ম নেয়। বাতাসে সহনীয় মাত্রার অতিরিক্ত অতিসূক্ষ্ম এ বস্তুকণা স্বল্প মেয়াদে মাথাব্যথা, শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ নানা ব্যাধির জন্য দায়ী বলে জানান চিকিৎসকরা। এর প্রভাবে দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ক্যান্সার, কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক অঙ্গও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মনে করেন তারা। বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি শ্বাসতন্ত্রের রোগ হয়। হাঁপানি রোগী হলে তাদের হাঁপানি বেড়ে যায়। আবার অনেকে নতুন করে হাঁপানি, শ্বাসতন্ত্রের অ্যালার্জি, হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত হয়। যক্ষ্মার মতো রোগগুলো বায়ুদূষণের কারণে বেড়ে যায়। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বেড়ে যায় নবজাতক ও শিশুদেরও। ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্যও দায়ী বায়ুদূষণ। বাড়ছে সালফার ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইডের মাত্রা। এতে নাজুক অবস্থায় পড়ে শিশু আর রোগীরা।
ইট প্রস্তুতের ধরন ও আগে-পরের বিষয়/পদ্ধতি নিয়ে পূর্বের ইট প্রস্তুত আইন ২০১৩ সংশোধন করা হয়েছে। ইটের বিকল্প হিসেবে ব্লক পদ্ধতিকে যাতে প্রমোট করা হয়, আইনের বিভিন্ন ধারায় তা সংযোজন করা হয়েছে। মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরির বিকল্প হিসেবে অপোড়ানো পদ্ধতি ব্লকের দিকে যেতে হবে। এজন্য আইনটি ব্যাপকভাবে আলোচনা ও পর্যালোচনা করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। কিন্তু বড় চিন্তার জায়গা হলো নির্মাণকাজ। যে যেভাবে পারছে নির্মাণকাজ করছে। এজন্য যুগোপযোগী আইন ও নীতিমালা তৈরি করতে হবে। যত্রতত্র ও ‘যে যেভাবে পারে’ নির্মাণ কাজে থেকে বিরত থাকার জন্য প্রশাসনকে বা কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। রপু মুনাফার কথা না ভেবে মালিক/সমিতি/ডেভেলপারদের দেশ ও ভবিষ্যতের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। শুধু বিবেককে জাগ্রত করলেও সরকারের কঠোর তদারকি লাগবে না। অবশ্য এ ব্যাপারে মালিক-সরকারি কর্তৃপক্ষকেই বিবেক জাগ্রত করতে হবে। শুধু একপক্ষ বিবেক জাগ্রত করে বেশিদূর অগ্রগতি সম্ভব নয়।
বাতাসে ক্ষতিকর এসব বস্তুকণা মিশছে মূলত যানবাহনের কালো ধোঁয়া, শিল্পের জ্বালানি, নির্মাণকাজ এবং কাঠ ও কয়লা পোড়ানোর ফলে। তবে ঢাকার বাতাসে অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণার উৎস হিসেবে যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও ইটভাটাকে প্রধানত দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। নির্মাণকাজের সময় নিয়ম না মেনে মাটি, বালিসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী দীর্ঘদিন যেখানে সেখানে ফেলে রাখা, রাস্তার দুই পাশে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা, সর্বোপরি যানবাহনের কালো ধোঁয়া বাতাসে অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণা বাড়িয়ে তুলছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, পিএম ২.৫ অতিসূক্ষ্ম হওয়ায় সহজেই মানুষের শ্বাসতন্ত্রে ঢুকে পড়ছে, পরবর্তী সময়ে যা পুরো শরীরকে আক্রান্ত করছে। এ থেকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদে এ বস্তুকণা মাথাব্যথা, হাঁপানিসহ শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ নানা ব্যাধির সৃষ্টি করছে। দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ক্যান্সার, কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শ্বাসতন্ত্র ছাড়াও বায়ুদূষণের কারণে কিডনি ও লিভারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের জন্যও দায়ী এ দূষণ।
আইকিউ এয়ারের প্রতিবেদনও বলছে, বছরে সাত লাখ অপরিণত মৃত্যুর জন্য দায়ী বায়ুদূষণ। বর্তমান বিশ্বে মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ এটি। বায়ুদূষণের অর্থনৈতিক ক্ষতিও ব্যাপক। ভয়াবহ বায়ুদূষণের কবলে আমাদের প্রিয় রাজধানী ঢাকা। সর্বশেষ নরওয়েভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির সহযোগিতায় পরিবেশ অধিদফতরের শুষ্ক মৌসুমের গবেষণায় ঢাকার বায়ুদূষণের ভয়াবহতা ওঠে এসেছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠিত বায়ুমান যন্ত্রের রিপোর্টেও ভয়াবহতা ওঠে এসেছিল।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ আছে। ২০১৮ সালে সংশোধনও করা হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বায়ুদূষণ বা পরিবেশ দূষণকল্পে বেশ কিছু আইন-বিধি-নীতিমালা রয়েছে। আইনসমূহ হচ্ছে- (০১) বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ (সংশোধনীসহ), (০২) পরিবেশ আদালত আইন-২০০০, (০৩) পরিবেশ আদালত আইন-২০১০, (০৪) বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন-২০১৭, (০৫) ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩, (৬) ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ সংশোধন আইন ২০১৮ (সংশোধনী) ইত্যাদি। তবে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না! আইন বাস্তবায়নে আরও কঠোর হতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। ইটভাটা মালিকপক্ষকেও আন্তরিকতা দেখাতে হবে। তাহলেই আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।
নিষিদ্ধ এলাকা ও জলাশয়ে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না বলে আইনে উল্লেখ আছে। ইটভাটা স্থাপনে হাসপাতাল-স্কুল-আবাসিক এলাকাগুলো নিষিদ্ধ। আবাসিক বলতে ৫০টি ঘর থাকলেই আবাসিক হিসেবে আইনে গণ্য করা হচ্ছে। এরকম স্থান থেকে কমপক্ষে ১ কিমি. দূরে ভাটা স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। আর যেসব স্থানে ছয় মাস পানি থাকে সে স্থানগুলোকে আইনে জলাশয় হিসেবে বলা হচ্ছে। কিন্তু কতদূর বাস্তবায়ন হচ্ছে তা আরিচা-ঢাকা রোডে বা ঢাকার আশপাশের রোডে দেখা যায়। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আইনভঙ্গকারীকে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে।
কমপক্ষে ১২০ ফিট চিমনি নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। এটা নিয়ে আরও ভাবতে হবে আমাদের। গতানুগতিক পদ্ধতিতে বায়ুদূষণের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। আশংকার বিষয় ইটভাটা থেকে বায়ুতে মেশা দূষিত উপাদানগুলো আবার মাটিতে মিশে যায় এবং মাটি দুষণ করে। এটা নিয়েও আমরা ভাবছি কম। ইট তৈরি করতে গেলে মাটির উপরিভাগ (ত্বক) নিয়ে আনতে হয়। এতে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাটির ক্ষয় হয়ে ভূমি ধ্বসের কারণ হচ্ছে। ইটভাটা থেকে বিষাক্ত কার্বনডাই অক্সাইড নির্গত হচ্ছে। বায়ুতে বেঁচে থাকার অক্সিজেনের মাত্রা আশঙ্কাজনকহারে কমিয়ে দিচ্ছে। এসবের জন্য দরকার সবুজায়ন। বৃক্ষ রোপণের কোন বিকল্প নেই। বিকল্প ইটের চিন্তা করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারও কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে। আর কিছু উদ্যোগ চালু হওয়ার পথে।
আর একটি বড় কারণ হচ্ছে যানবাহনের ধোঁয়া। ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহণ থেকে বাইয়ু দূষণ বেশি হচ্ছে। এ বিষয়ে লেখালেখিও হচ্ছে প্রচুর। এখানেও একই অবস্থা। আইন আছে। কিন্তু ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না বিভিন্ন কারণে। আমরা এক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শহরের গৃহীত উদ্যোগ অনুসরণ করতে পারি। যানবাহন থেকে পরিবেশের দূষণের মাত্রা বেশি। শব্দদূষণ, বায়ু দূষণ, আলো দূষণ প্রভৃতি ঘটে পরিবাহন খাত থেকে। ডিজেল ব্যবহার, নিয়মিত মেরামত না করা, লক্কড়-ঝক্কড় যান ইত্যাদি কারণে পরিবেশ দূষণের মাত্রা কম বেশি হয়। অতিরিক্ত যানবাহনের ওপরও দূষণমাত্রা নির্ভর করে। কয়েকটি শহর যানবাহনের চাপ কমিয়ে পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমিয়ে বা জিরোতে আনতে যানবাহন নিয়ে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। আমরা আমাদের দেশে বাস্তবায়ন করতে পারি।
নরওয়ের রাজধানীতে ডিজেল গাড়ি নিষিদ্ধের ব্যবস্থা করা হয়েছে ২০১৭ সালের ১৭ই জানুয়ারি থেকে। অবশ্য অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য সরকারি পরিসেবার যানবাহন ডিজেল হলেও চলতে পারে। ২০১৯ সাল থেকে সিটি সেন্টারে সরকারি পার্কিং কমিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। ২০২৪ সাল থেকে ফ্রান্সের রাজধানীতে ডিজেল গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ হবে; ২০৩০ সাল থেকে প্যারিসে ডিজেল বা পেট্রল, কোন ধরনের খনিজ তেলে চলা গাড়ি নিষিদ্ধ করা হবে। প্যারিসে শুধু ইলেকট্রিক গাড়ি চলবে। আমরা একটু গবেষণা করে অনুরূপ বা বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারি।
মানুষ গাড়ি নিয়ে শহরের কেন্দ্রে আসা কমিয়ে দেয়ার জন্য (একেবারেই প্রয়োজন ছাড়া) লন্ডনের কেন্দ্রে গাড়ি চালাতে গেলে দিনে ১০ পাউন্ড বা প্রায় ১৪ ডলার কিংবা ১১ ইউরো মাশুল গুনতে হয়। ২০০৩ সাল থেকে এই ‘কনজেশ্চান চার্জ’ বসানো হয়েছে। রাস্তায় লাগানো যন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির নাম্বারপ্লেট চিনে নিতে পারে অর্থাৎ ধরতে পারে, ‘ভিড়ের মাশুল’ দেয়া হয়েছে কিনা। ব্যত্যয় হলে ২৪০ পাউন্ড অবধি জরিমানা! কোপেনহেগেনে ২০১৯ সাল থেকে ডিজেল গাড়ি ঢোকা বন্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে। বর্তমানে ডেনমার্কের রাজধানীতে ৩০০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা শুধু সাইকেল আরোহীদের জন্য রাখা; শহরের অর্ধেক বাসিন্দা সাইকেলে চড়ে অফিস যান। আমরা এভাবে চিন্তা করতে পারি। একটি লেন শুধু সাইকেল আরোহীদের জন্য রাখতে পারি। এতে যানজট কমবে, সাইকেলে চড়ে অফিস, কর্মস্থলে যেতে পারবে। খরচ কমে যাবে, পরিবেশ দূষণের মাত্রা অনেক কমে যাবে। আর রাজধানীতে যানবাহন ব্যবহার কমিয়ে দিতে হবেই। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে দিতে হবে। সরকারি গাড়ি ব্যবহারে বা বরাদ্দে নতুন চিন্তা আনা যেতে পারে। যাতে করে একটি গাড়ি অনেকে ব্যবহার করতে পারেÑ সেটা চিন্তা করা যেতে পারে।
মাদ্রিদের রয়্যাল থিয়েটারের সামনের চত্বরটিতে ইতোমধ্যেই গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ, অন্যান্য এলাকাও ‘পেডেস্ট্রিয়ান জোন’ ঘোষণা করার প্রচেষ্টা চলেছে। লক্ষ্য হলো আগামী ৫ বছরের মধ্যে স্পেনের রাজধানীর গোটা কেন্দ্রীয় অংশটি শুধু পথচারীদের জন্য খোলা রাখা। এর কারণ হলো, মাদ্রিদের চারপাশে পাহাড় থাকার ফলে দূষিত বায়ু শহরেই আটকা পড়ে ও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। রাজধানীতে আমরা পথচারীদের জন্য আরও রাস্তা তৈরি করতে পারি। অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে। আমাদের রাজধানী ঢাকাতে ফুটপাত বেশির ভাগই অবৈধ দখলে।
ভবিষ্যতে হেলসিংকিতে সরকারি পরিবহন আরও ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে, কেননা, আগামী দশ বছরের মধ্যে সব ধরনের সরকারি পরিবহনকে একটি অ্যাপ-এ অন্তর্ভুক্ত করা হবে; বাস, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি মিনিবাসগুলোর কোন নির্দিষ্ট রুট থাকবে না। তারা অ্যাপ অনুযায়ী যাত্রী তুলে নিতে পারবে। এতে গাড়ির ব্যবহার সংখ্যা কমে যাবে।
ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লি কুয়াশা বা ধোঁয়ার জন্য আজ বিশ্বসেরা। দিল্লি একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পরিকল্পনা অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে দিল্লিতে যাবতীয় নতুন গাড়ি বিদ্যুৎ চালিত হবে। ডিজেল বা পেট্রলে চলা গাড়ি আস্তে আস্তে কমিয়ে জিরোতে আনতে এ পরিকল্পনা। আমরাও ভেবে দেখতে পারি দিল্লিকেন্দ্রিক এ পরিকল্পনা। আমাদের মতো করে।
শহরের উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রেও মানা হয় না পরিবেশ স¤পর্কিত সব আইন-কানুন। কিন্তু বাংলাদেশে এরকম চিন্তাভাবনা নেই বা খুব কম। এমনকি বায়ুদূষণে অতিবিপজ্জনক অবস্থায় থাকা খোদ রাজধানীর বাসিন্দাদেরও খুব কম উদ্যোগ/কর্মসূচি রয়েছে।
ঢাকার বাতাস ২৪ ঘণ্টাই বিপজ্জনক অস্বাস্থ্যকর। কিন্তু আগে থেকেই এ ধারা বজায় থাকলেও এর ভয়াবহতা নিয়ে বা জনসচেতনতা নিয়ে মিডিয়াতে আলোচনা হচ্ছে কম। গণমাধ্যমকে বেশি পরিমাণে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের দুর্দিনে গণমাধ্যমের ইতিবাচক অনেক ভূমিকা থাকে। এ বিষয়েও উচ্চকিত দেশের গণমাধ্যম তা আমরা আশা করি। ভয়াবহতার অবস্থা তুলে ধরে সচেতনতার কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে করণীয় কী কী তা তুলে ধরতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টিই পারে বিভিন্ন রকমের দূষণের ভয়াবহতা কমাতে। পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। নগরায়ণে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে হবে। সবুজ বিপ্লব দরকার। বনায়ন দরকার। পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা স্থাপন করতে হবে।
[লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট]
দৈনিক সংবাদ : ১২ মার্চ ২০১৯, মঙ্গলবার, ৬ এর পাতায় প্রকাশিত
আবু আফজাল সালেহ
মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০১৯
বিভিন্ন দেশের বাতাসের মান নিয়ে গবেষণা করে আসছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। সম্প্রতি বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০১৮ গত সপ্তাহে প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যা কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসেছে। প্রতিবেদন তৈরিতে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের তিন হাজারের বেশি শহরের বাতাসের মান পর্যবেক্ষণ করেছে। যেখানে উন্নত দেশের শহর যেমন আছে তেমনই অনুন্নত দেশের শহরও তালিকায় আছে।
মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদানগুলোর অন্যতম বাতাসে বিদ্যমান পিএম২.৫ (পার্টিকুলেট ম্যাটার) বা অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মান অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটার বাতাসে এর সহনীয় মাত্রা ১০ মাইক্রোগ্রাম। যদিও ঢাকার বাতাসে পিএম২.৫-এর মাত্রা এ মানের অনেক উপরে (প্রায় দশগুণ), প্রতি ঘনমিটারে ৯৭ মাইক্রোগ্রামের বেশি। বিভিন্ন দেশের রাজধানীর বায়ুমান বিবেচনায় এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রাজধানীগুলোর মধ্যে এর চেয়ে বেশি পিএম২.৫-এর উপস্থিতি আছে কেবল দিল্লির বাতাসে। এ হিসাবে দিল্লির পর ঢাকা হচ্ছে সবচেয়ে দূষিত বাতাসের রাজধানী। রাজধানী হিসেবে ঢাকার পরই সবচেয়ে দূষিত বাতাস কাবুলের। যুদ্ধবিধ্বস্ত এ শহরটির বায়ুদূষণের মাত্রা ঢাকার চেয়ে অনেক কম। এ শহরটির বাতাসে পিএম২.৫-এর মাত্রা প্রতি ঘনমিটার ৬১ দশমিক ৮ মাইক্রোগ্রাম।
বাতাসে ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের সূক্ষ্ম কণাকে পিএম২.৫ বলা হয়। ডব্লিউএইচওর মান অনুযায়ী, বাতাসে পিএম২.৫-এর গ্রহণযোগ্য মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম। আর যুক্তরাষ্ট্রের মান অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১২ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণাকে নিরাপদ হিসেবে ধরা হয়। তবে ৩৫ দশমিক ৪ মাইক্রোগ্রামকে চলনসই বিবেচনা করা হয়। এর বেশি হলে অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম২.৫-এর পরিমাণ সর্বোচ্চ ১৫০ দশমিক ৪ মাইক্রোগ্রাম হলে ওই বাতাসকে ধরা হয় অস্বাস্থ্যকর হিসেবে। এ হিসেবে ঢাকার বাতাস মানব স্বাস্থ্যের জন্য অস্বাস্থ্যকর।
গত চার বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার একটি প্রকল্পের আওতায় ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বসিয়ে ঢাকার বাতাসে দূষণ ও বিপদের মাত্রা, সেই সঙ্গে তাৎক্ষণিক করণীয়ও জানান দিয়ে আসছে। ইন্টারনেটে এটি রিয়াল টাইম এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই), যেটাকে বাংলায় ‘সার্বক্ষণিক বায়ুমান সূচক’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে তার প্রতিবেদন খুবই নেতিবাচক। বিশেষ করে রাজধানীর বায়ুর দূষণ হার নিয়ে। বিশ্বে নির্ভরযোগ্য এ যন্ত্রের সূচকে দেখা যায়, ঢাকার বাতাসে দূষণ বা বিষের অবস্থা মারাত্মক। চব্বিশ ঘণ্টায়ও ইতিবাচক সবুজ সুচকে আসছে না। এমনকি বিপজ্জনক সূচক (কারও কারও জন্য অস্বাস্থ্যকর হলে) কমলাতেও না। বেশিরভাগ সময় বায়ুতে অতি বিপজ্জনক উপাদানের উপস্থিতি দেখাচ্ছে।
বায়ুমান থেকে জানা যায়, বায়ুতে কয়েকটি রং ও বাতাসে ভাসমান ক্ষতিকর বস্তুকণার (যেমন- ওজোন গ্যাস, হাইড্রোজেন সালফাইড, সিসা, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড) উপস্থিতির পরিমাণ দিয়েÑ বায়ুমান ভালো হলে সবুজ, মোটামুটি ভালো হলে হলুদ, কারও কারও জন্য অস্বাস্থ্যকর হলে কমলা, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর হলে লাল, অতি অস্বাস্থ্যকর হলে বেগুনি আর বিপজ্জনক হলে খয়েরি রং দিয়ে সূচকে চিহ্নিত করা হয়। ভাবার বিষয় হচ্ছে, দুপুরের পর থেকেই ঢাকার বাতাসে বিপজ্জনক উপাদানের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এমনকি ছুটির দিনেও সবুজ সংকেত আসছে না।
বায়ুদূষণের জন্য দায়ী অনেক কিছু। যানবাহনের ধোঁয়া ও ইটভাটা মূলত রাজধানীর বায়ুদূষণের প্রধান কারণ বলে গবেষণায় জানা যায়। তবে রাজধানীর বা আশপাশের ইটভাটাগুলো দায়ী বেশি। গবেষণায় পাওয়া গেছে ঢাকার বায়ুদূষণের শতকরা ৬২ ভাগ দায়ী এ কারণ দুটো। ইটভাটাগুলো বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। বায়ু দুষণের জন্য ইটভাটা ৩৪ ভাগ এবং মোটরযান ১৮ ভাগ দায়ী বলে এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে। বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ অনেক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, শুধু ঢাকাতেই এক বছরে ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সারা দেশের শহরাঞ্চলে মারা গেছে ৮০ হাজার। পরিবেশ দূষণের সমন্বিত নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনের ওপর।
ঢাকা শহরের ছয়টি বিদ্যালয়ের শিশুদের ফুসফুসের কার্যকারিতা নিয়ে ২০১৬ সালে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির আরবান ল্যাব। ফলাফলে দেখা যায়, বিদ্যালয়গুলোর ২৫ শতাংশ শিশুর ফুসফুস পূর্ণমাত্রায় কাজ করছে না। তাদের ফুসফুস ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ কাজ করছে। কয়েক বছর ধরেই ঢাকার বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতি সহনীয় মাত্রার উপরে রয়েছে। ক্ষতিকর বস্তুকণার এ উপস্থিতি না কমে উল্টো বাড়ছে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের তথ্য বিশ্লেষণেও দেখা যায়, ঢাকার বাতাসে অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণার পরিমাণ বেড়েছে।
বাংলাদেশে বায়ু, পানি ও পরিবেশ দূষণে বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৪২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.৭ ভাগ। পরিবেশ দূষণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু, রোগী আর বৃদ্ধরা। শুধু বায়ুদূষণে ক্ষতি হয় ২০ হাজার কোটি টাকা। ঢাকা শহরের ৬ লাখ মানুষ এখন সিসা দূষণের কবলে। ঢাকার পরই নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার। ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে বায়ুদূষণ সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
স্বাস্থ্যবিদদের অভিমত হচ্ছে- বায়ুতে থাকা সিসা মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটা কণা। সিসার উপস্থিতির প্রভাবে মানুষ দ্রুত বুড়িয়ে যায়, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়। বিশেষ করে শিশুরা দুর্বল বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বেড়ে ওঠে। এছাড়া বায়ুতে থাকা ক্ষতিকর বস্তুকণা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে ফুসফুস শক্ত হয়ে অক্সিজেন প্রবেশে বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে ক্যান্সারসহ নানা রোগ জন্ম নেয়। বাতাসে সহনীয় মাত্রার অতিরিক্ত অতিসূক্ষ্ম এ বস্তুকণা স্বল্প মেয়াদে মাথাব্যথা, শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ নানা ব্যাধির জন্য দায়ী বলে জানান চিকিৎসকরা। এর প্রভাবে দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ক্যান্সার, কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক অঙ্গও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মনে করেন তারা। বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি শ্বাসতন্ত্রের রোগ হয়। হাঁপানি রোগী হলে তাদের হাঁপানি বেড়ে যায়। আবার অনেকে নতুন করে হাঁপানি, শ্বাসতন্ত্রের অ্যালার্জি, হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত হয়। যক্ষ্মার মতো রোগগুলো বায়ুদূষণের কারণে বেড়ে যায়। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বেড়ে যায় নবজাতক ও শিশুদেরও। ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্যও দায়ী বায়ুদূষণ। বাড়ছে সালফার ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইডের মাত্রা। এতে নাজুক অবস্থায় পড়ে শিশু আর রোগীরা।
ইট প্রস্তুতের ধরন ও আগে-পরের বিষয়/পদ্ধতি নিয়ে পূর্বের ইট প্রস্তুত আইন ২০১৩ সংশোধন করা হয়েছে। ইটের বিকল্প হিসেবে ব্লক পদ্ধতিকে যাতে প্রমোট করা হয়, আইনের বিভিন্ন ধারায় তা সংযোজন করা হয়েছে। মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরির বিকল্প হিসেবে অপোড়ানো পদ্ধতি ব্লকের দিকে যেতে হবে। এজন্য আইনটি ব্যাপকভাবে আলোচনা ও পর্যালোচনা করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। কিন্তু বড় চিন্তার জায়গা হলো নির্মাণকাজ। যে যেভাবে পারছে নির্মাণকাজ করছে। এজন্য যুগোপযোগী আইন ও নীতিমালা তৈরি করতে হবে। যত্রতত্র ও ‘যে যেভাবে পারে’ নির্মাণ কাজে থেকে বিরত থাকার জন্য প্রশাসনকে বা কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। রপু মুনাফার কথা না ভেবে মালিক/সমিতি/ডেভেলপারদের দেশ ও ভবিষ্যতের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। শুধু বিবেককে জাগ্রত করলেও সরকারের কঠোর তদারকি লাগবে না। অবশ্য এ ব্যাপারে মালিক-সরকারি কর্তৃপক্ষকেই বিবেক জাগ্রত করতে হবে। শুধু একপক্ষ বিবেক জাগ্রত করে বেশিদূর অগ্রগতি সম্ভব নয়।
বাতাসে ক্ষতিকর এসব বস্তুকণা মিশছে মূলত যানবাহনের কালো ধোঁয়া, শিল্পের জ্বালানি, নির্মাণকাজ এবং কাঠ ও কয়লা পোড়ানোর ফলে। তবে ঢাকার বাতাসে অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণার উৎস হিসেবে যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও ইটভাটাকে প্রধানত দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। নির্মাণকাজের সময় নিয়ম না মেনে মাটি, বালিসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী দীর্ঘদিন যেখানে সেখানে ফেলে রাখা, রাস্তার দুই পাশে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা, সর্বোপরি যানবাহনের কালো ধোঁয়া বাতাসে অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণা বাড়িয়ে তুলছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, পিএম ২.৫ অতিসূক্ষ্ম হওয়ায় সহজেই মানুষের শ্বাসতন্ত্রে ঢুকে পড়ছে, পরবর্তী সময়ে যা পুরো শরীরকে আক্রান্ত করছে। এ থেকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদে এ বস্তুকণা মাথাব্যথা, হাঁপানিসহ শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ নানা ব্যাধির সৃষ্টি করছে। দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ক্যান্সার, কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শ্বাসতন্ত্র ছাড়াও বায়ুদূষণের কারণে কিডনি ও লিভারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের জন্যও দায়ী এ দূষণ।
আইকিউ এয়ারের প্রতিবেদনও বলছে, বছরে সাত লাখ অপরিণত মৃত্যুর জন্য দায়ী বায়ুদূষণ। বর্তমান বিশ্বে মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ এটি। বায়ুদূষণের অর্থনৈতিক ক্ষতিও ব্যাপক। ভয়াবহ বায়ুদূষণের কবলে আমাদের প্রিয় রাজধানী ঢাকা। সর্বশেষ নরওয়েভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির সহযোগিতায় পরিবেশ অধিদফতরের শুষ্ক মৌসুমের গবেষণায় ঢাকার বায়ুদূষণের ভয়াবহতা ওঠে এসেছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠিত বায়ুমান যন্ত্রের রিপোর্টেও ভয়াবহতা ওঠে এসেছিল।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ আছে। ২০১৮ সালে সংশোধনও করা হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বায়ুদূষণ বা পরিবেশ দূষণকল্পে বেশ কিছু আইন-বিধি-নীতিমালা রয়েছে। আইনসমূহ হচ্ছে- (০১) বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ (সংশোধনীসহ), (০২) পরিবেশ আদালত আইন-২০০০, (০৩) পরিবেশ আদালত আইন-২০১০, (০৪) বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন-২০১৭, (০৫) ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩, (৬) ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ সংশোধন আইন ২০১৮ (সংশোধনী) ইত্যাদি। তবে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না! আইন বাস্তবায়নে আরও কঠোর হতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। ইটভাটা মালিকপক্ষকেও আন্তরিকতা দেখাতে হবে। তাহলেই আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।
নিষিদ্ধ এলাকা ও জলাশয়ে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না বলে আইনে উল্লেখ আছে। ইটভাটা স্থাপনে হাসপাতাল-স্কুল-আবাসিক এলাকাগুলো নিষিদ্ধ। আবাসিক বলতে ৫০টি ঘর থাকলেই আবাসিক হিসেবে আইনে গণ্য করা হচ্ছে। এরকম স্থান থেকে কমপক্ষে ১ কিমি. দূরে ভাটা স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। আর যেসব স্থানে ছয় মাস পানি থাকে সে স্থানগুলোকে আইনে জলাশয় হিসেবে বলা হচ্ছে। কিন্তু কতদূর বাস্তবায়ন হচ্ছে তা আরিচা-ঢাকা রোডে বা ঢাকার আশপাশের রোডে দেখা যায়। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আইনভঙ্গকারীকে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে।
কমপক্ষে ১২০ ফিট চিমনি নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। এটা নিয়ে আরও ভাবতে হবে আমাদের। গতানুগতিক পদ্ধতিতে বায়ুদূষণের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। আশংকার বিষয় ইটভাটা থেকে বায়ুতে মেশা দূষিত উপাদানগুলো আবার মাটিতে মিশে যায় এবং মাটি দুষণ করে। এটা নিয়েও আমরা ভাবছি কম। ইট তৈরি করতে গেলে মাটির উপরিভাগ (ত্বক) নিয়ে আনতে হয়। এতে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাটির ক্ষয় হয়ে ভূমি ধ্বসের কারণ হচ্ছে। ইটভাটা থেকে বিষাক্ত কার্বনডাই অক্সাইড নির্গত হচ্ছে। বায়ুতে বেঁচে থাকার অক্সিজেনের মাত্রা আশঙ্কাজনকহারে কমিয়ে দিচ্ছে। এসবের জন্য দরকার সবুজায়ন। বৃক্ষ রোপণের কোন বিকল্প নেই। বিকল্প ইটের চিন্তা করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারও কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে। আর কিছু উদ্যোগ চালু হওয়ার পথে।
আর একটি বড় কারণ হচ্ছে যানবাহনের ধোঁয়া। ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহণ থেকে বাইয়ু দূষণ বেশি হচ্ছে। এ বিষয়ে লেখালেখিও হচ্ছে প্রচুর। এখানেও একই অবস্থা। আইন আছে। কিন্তু ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না বিভিন্ন কারণে। আমরা এক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শহরের গৃহীত উদ্যোগ অনুসরণ করতে পারি। যানবাহন থেকে পরিবেশের দূষণের মাত্রা বেশি। শব্দদূষণ, বায়ু দূষণ, আলো দূষণ প্রভৃতি ঘটে পরিবাহন খাত থেকে। ডিজেল ব্যবহার, নিয়মিত মেরামত না করা, লক্কড়-ঝক্কড় যান ইত্যাদি কারণে পরিবেশ দূষণের মাত্রা কম বেশি হয়। অতিরিক্ত যানবাহনের ওপরও দূষণমাত্রা নির্ভর করে। কয়েকটি শহর যানবাহনের চাপ কমিয়ে পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমিয়ে বা জিরোতে আনতে যানবাহন নিয়ে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। আমরা আমাদের দেশে বাস্তবায়ন করতে পারি।
নরওয়ের রাজধানীতে ডিজেল গাড়ি নিষিদ্ধের ব্যবস্থা করা হয়েছে ২০১৭ সালের ১৭ই জানুয়ারি থেকে। অবশ্য অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য সরকারি পরিসেবার যানবাহন ডিজেল হলেও চলতে পারে। ২০১৯ সাল থেকে সিটি সেন্টারে সরকারি পার্কিং কমিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। ২০২৪ সাল থেকে ফ্রান্সের রাজধানীতে ডিজেল গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ হবে; ২০৩০ সাল থেকে প্যারিসে ডিজেল বা পেট্রল, কোন ধরনের খনিজ তেলে চলা গাড়ি নিষিদ্ধ করা হবে। প্যারিসে শুধু ইলেকট্রিক গাড়ি চলবে। আমরা একটু গবেষণা করে অনুরূপ বা বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারি।
মানুষ গাড়ি নিয়ে শহরের কেন্দ্রে আসা কমিয়ে দেয়ার জন্য (একেবারেই প্রয়োজন ছাড়া) লন্ডনের কেন্দ্রে গাড়ি চালাতে গেলে দিনে ১০ পাউন্ড বা প্রায় ১৪ ডলার কিংবা ১১ ইউরো মাশুল গুনতে হয়। ২০০৩ সাল থেকে এই ‘কনজেশ্চান চার্জ’ বসানো হয়েছে। রাস্তায় লাগানো যন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির নাম্বারপ্লেট চিনে নিতে পারে অর্থাৎ ধরতে পারে, ‘ভিড়ের মাশুল’ দেয়া হয়েছে কিনা। ব্যত্যয় হলে ২৪০ পাউন্ড অবধি জরিমানা! কোপেনহেগেনে ২০১৯ সাল থেকে ডিজেল গাড়ি ঢোকা বন্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে। বর্তমানে ডেনমার্কের রাজধানীতে ৩০০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা শুধু সাইকেল আরোহীদের জন্য রাখা; শহরের অর্ধেক বাসিন্দা সাইকেলে চড়ে অফিস যান। আমরা এভাবে চিন্তা করতে পারি। একটি লেন শুধু সাইকেল আরোহীদের জন্য রাখতে পারি। এতে যানজট কমবে, সাইকেলে চড়ে অফিস, কর্মস্থলে যেতে পারবে। খরচ কমে যাবে, পরিবেশ দূষণের মাত্রা অনেক কমে যাবে। আর রাজধানীতে যানবাহন ব্যবহার কমিয়ে দিতে হবেই। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে দিতে হবে। সরকারি গাড়ি ব্যবহারে বা বরাদ্দে নতুন চিন্তা আনা যেতে পারে। যাতে করে একটি গাড়ি অনেকে ব্যবহার করতে পারেÑ সেটা চিন্তা করা যেতে পারে।
মাদ্রিদের রয়্যাল থিয়েটারের সামনের চত্বরটিতে ইতোমধ্যেই গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ, অন্যান্য এলাকাও ‘পেডেস্ট্রিয়ান জোন’ ঘোষণা করার প্রচেষ্টা চলেছে। লক্ষ্য হলো আগামী ৫ বছরের মধ্যে স্পেনের রাজধানীর গোটা কেন্দ্রীয় অংশটি শুধু পথচারীদের জন্য খোলা রাখা। এর কারণ হলো, মাদ্রিদের চারপাশে পাহাড় থাকার ফলে দূষিত বায়ু শহরেই আটকা পড়ে ও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। রাজধানীতে আমরা পথচারীদের জন্য আরও রাস্তা তৈরি করতে পারি। অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে। আমাদের রাজধানী ঢাকাতে ফুটপাত বেশির ভাগই অবৈধ দখলে।
ভবিষ্যতে হেলসিংকিতে সরকারি পরিবহন আরও ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে, কেননা, আগামী দশ বছরের মধ্যে সব ধরনের সরকারি পরিবহনকে একটি অ্যাপ-এ অন্তর্ভুক্ত করা হবে; বাস, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি মিনিবাসগুলোর কোন নির্দিষ্ট রুট থাকবে না। তারা অ্যাপ অনুযায়ী যাত্রী তুলে নিতে পারবে। এতে গাড়ির ব্যবহার সংখ্যা কমে যাবে।
ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লি কুয়াশা বা ধোঁয়ার জন্য আজ বিশ্বসেরা। দিল্লি একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পরিকল্পনা অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে দিল্লিতে যাবতীয় নতুন গাড়ি বিদ্যুৎ চালিত হবে। ডিজেল বা পেট্রলে চলা গাড়ি আস্তে আস্তে কমিয়ে জিরোতে আনতে এ পরিকল্পনা। আমরাও ভেবে দেখতে পারি দিল্লিকেন্দ্রিক এ পরিকল্পনা। আমাদের মতো করে।
শহরের উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রেও মানা হয় না পরিবেশ স¤পর্কিত সব আইন-কানুন। কিন্তু বাংলাদেশে এরকম চিন্তাভাবনা নেই বা খুব কম। এমনকি বায়ুদূষণে অতিবিপজ্জনক অবস্থায় থাকা খোদ রাজধানীর বাসিন্দাদেরও খুব কম উদ্যোগ/কর্মসূচি রয়েছে।
ঢাকার বাতাস ২৪ ঘণ্টাই বিপজ্জনক অস্বাস্থ্যকর। কিন্তু আগে থেকেই এ ধারা বজায় থাকলেও এর ভয়াবহতা নিয়ে বা জনসচেতনতা নিয়ে মিডিয়াতে আলোচনা হচ্ছে কম। গণমাধ্যমকে বেশি পরিমাণে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের দুর্দিনে গণমাধ্যমের ইতিবাচক অনেক ভূমিকা থাকে। এ বিষয়েও উচ্চকিত দেশের গণমাধ্যম তা আমরা আশা করি। ভয়াবহতার অবস্থা তুলে ধরে সচেতনতার কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে করণীয় কী কী তা তুলে ধরতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টিই পারে বিভিন্ন রকমের দূষণের ভয়াবহতা কমাতে। পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। নগরায়ণে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে হবে। সবুজ বিপ্লব দরকার। বনায়ন দরকার। পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা স্থাপন করতে হবে।
[লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট]
দৈনিক সংবাদ : ১২ মার্চ ২০১৯, মঙ্গলবার, ৬ এর পাতায় প্রকাশিত