গীতিগুচ্ছ
নির্মলেন্দু গুণ
অশোকের মালা পলাশের মালা শিমুলের মালা নয় গো,
ফুলের মালা কি বর্ণমালার মালার মতন হয় গো।
আমরা গেঁথেছি ফুলের বদলে বর্ণমালার এ-মালিকা,
ভাষাই মোদের জীবন-মরণ, স্বপ্ন আশার চালিকা।
এই ভাষার জন্য করিয়াছি জয় মরণের মতো ভয় গো।
ফাগুনের লাল ফুলের মতন আগুনের রং পরিয়া,
ফেব্রুয়ারির পথে-পথে কত তাজা প্রাণ গেছে ঝরিয়া।
আর কোন দেশে ভাষার লাগিয়া এত প্রাণ হয় ক্ষয় গো।
মাতৃরূপিণী যে ভাষার লাগি শহীদেরা দিল প্রাণ,
তাদের স্মরণে গেয়ে যাই এই বর্ণমালার গান।
এই গানে হোক মাতৃভূমিতে মুক্তির অভ্যুদয় গো।
নাম রাখি ভালোবাসা
মহাদেব সাহা
আমি যা-কিছু ভালোবাসি তার নাম
রাখি ভালোবাসা,
যা কিছু সুন্দর তার নাম রাখি
ভালোবাসা;
নদীকে বলি ভালোবাসা, মধ্যরাতের আকাশকে
বলি ভালোবাসা,
ঝমঝম বৃষ্টিকে বলি ভালোবাসা
উত্তমাশা, তাকে বলি ভালোবাসা;
ভালোবাসা গরিবের মাত্র সম্বল
অপার অগাধ মনোবল,
ভালোবাসা দিয়ে আমি পৃথিবী কিনেছি
কলম্বাসের মতো নতুন দ্বীপ
চিনেছি;
এক বিন্দু ভালোবাসা পেলে আমি
সব ভুলে যাই,
তাই তো তোমার নাম রাখি ভালোবাসা,
ভালোবাসা, ভালোবাসা, এই নিয়ে
জীবন কাটাই।
ছবি দেখছি
জাহিদ হায়দার
বাক্ বন্ধ করে
দেখছি নির্বাক ছবি।
ক্ষমা করবেন জহির রায়হান,
‘জীবন থেকে নেয়া’ বলেছিল অনেক স্লোগান।
দেখছি ‘রোমান হলিডে’
নিয়মে হারালো প্রেম অড্রে হেপবার্ন।
যুদ্ধে কন্যা ধর্ষিতা
ক্ষতবিক্ষত ‘টু উইমেন।’
ক্ষমা চাই সোফিয়া লোরেন,
কান্নার শব্দ শুনছি না।
দেখছি ‘আকালের সন্ধানে’।
সন্ধান নীরবে বলছে কথা।
ধন্যবাদ মৃণাল সেন।
চ্যাপলিন খাচ্ছেন জুতো,
শব্দ দিতে পারলে বুঝতাম,
আমাকে কী বলছেন।
সন্ধ্যাপ্রদীপ
মুনীর সিরাজ
কখন উঠলো জ¦লে সন্ধ্যার প্রদীপ, ¯িœগ্ধ আলোর কান্তি।
সে আলোকস্পর্শে নিভৃত মনেব কোণে কুয়াশার শীতল
ছোঁয়ার মতো প্রশান্তি নেমে আসে। অন্ধকারে স্থির
মোমের শিখার মতো আলোকোজ্জ্বল হরিণীর দীপ্তি মাখা
চোখে কিসের প্রশান্তি নামে হৃদয় গভীরে। সন্ধ্যার প্রদীপ
হয়ে কখন নিঃশব্দে কোনো এক অতলস্পর্শীর ফুটে ওঠা
আলো, মধুর হাসির কম্পন, ফুলের সৌরভ মাখা কান্তির
এমন বিকাশ, এমনই বিশ্বাস জাগে মনের গভীরে, মনে হয়
কীভাবে সম্ভব হতে পারে, যা শুধু হতেই পারে কেবল কল্পনা?
কে দিয়েছে আমার দু’হাতে তুলে এমন প্রদীপ? অনিঃশেষ
¯িœগ্ধ আলোতে সেই অবিরাম ক্লান্তিহীন অবগাহন করে
যেতে যেতে, নিঃশ্বাস ফুরিয়ে গেলেও বেদনারা বহুদূর
থেকে আমাকে বিদায় দিয়ে যাবে। জীবনের সমস্ত অবসাদ
দূর করে, এমন প্রশান্তির কথা কেবা এঁকে দিতে পারে
মহাকালের মুহূর্ত সীমায়। কখন উঠলো জ¦লে সন্ধ্যার প্রদীপ!
বসন্তের গাঁথা
হাসান কল্লোল
বসন্তের মালা গলায় পরেছো
তোমার মালার ফুল টোল-খাওয়া
পাহারের মাঝে খেলে ভীষণ ঊল্লাসে
তুমি ঘোরো মাটির মায়ায় আমাকে
পাথর ভেবে নিঃসঙ্গতায় ফেলে!
সর্বহারার দেহেও তো বসন্তের
বাতাস লাগে
তার প্রেম জেগে ওঠে তোমাকে
না পেলে শতগুণ বিলাপে
এতসব বোঝো সূর্যমুখী সনাতন কবির
বিরহ বোঝো না! দেখো
বসন্তের বাউল বাতাসে ভাসে
একতারার বেদনা
অপ্রকৃতিতস্থ সময়ের ভাজে তোমার
ভালবাসার আভুল দুলতে দাও!
আমাকে বাঁচিয়ে রাখো
আর কিছুকাল ফাগুনের গেরুয়া ড্রয়ারে
খুলে খুলে প্রতিবার দেখবে রমণী
আমি বেঁচে আছি হাতে তোমারই
ঊপেক্ষার বনতুলসী ফুল
আর পাঁজরে শিমুল পলাশ!!
সত্যালাপ
মঈনউদ্দিন মুনশী
উৎসব উল্লাস দেখলে আমার ভ্রম হয়
এটা বিজয় না শৃঙ্খল?
স্বাধীনতার স্লোগান শুনলে আমার ভ্রম হয়
এটা ভোরের ঊষা না উত্তাল ঝড়?
বৈসাদৃশ্য নিপাত স্লোগান শুনলে আমার ভ্রম হয়
এটা সত্যি না প্রবঞ্চনা?
বাংলাদেশে স্বপ্নের বিদ্রোহ!
এর বিনাশ নেই,
জনমে মৃত্যুতে-
দেশ যতদিন থাকবে ততদিন।
তুল সময়, তবু আছি-
এই সব বিভেদ, প্রতারণা,
মার খাওয়া মানুষ,
হীন-স্বার্থ শাসকের স্বাভাবিক কথা-
তবু, আছে বাংলার পলিমাটি,
নিসর্গের স্বপ্নময় আলপনা, ভেজা ঘাসের ধ্রুপদী ঘ্রাণ-
তাই, কবিতার পা-ুলিপি।
তিন হাজার সাল
মিহির মুসাকী
সম্পর্ক যদি নবায়িত হতো
তাহলে অনেক তুমি আর আমি
ফিটনেসবিহীন গাড়ির মতো ছুটে বেড়াতো
লাইসেন্সহীন বেওয়ারিশ রাস্তায়।
কিন্তু অনেক আগেই
পেরিয়ে গেছে নবায়নকাল,
আমার সকাল হলেও দেখি
তোমার বিকাল!
জলের অতলদেশে গভীরতম কাদায়
যে মাছেরা থাকে মুখ লুকিয়ে
তাকে পায় না কোনো শিকারী,
তুমিও কি সেভাবে লুকাও
আছে কি তেমন অভিমানবাড়ি?
নাকি অনন্ত আঁধারে
ক্রন্দন শুনে বুঝে নিতে হয়
এখন বিরহকাল!
তখনো বুঝিনি এখনো বুঝি না
বুঝবো না কোনোদিন
যখন তিন হাজার সাল!
পৃথিবীর হাড়গোড়
মোহাম্মদ হোসাইন
অবিশ্রান্ত হেঁটে যাই। আমার হেঁটে যাওয়া কাউকে তাড়িত করে না। কারও কিছু হয় না তাতে! যেন কেউ নই, কিচ্ছু নই। তবু হেঁটে যেতে থাকি। এভাবে একাকী হেঁটে যাওয়া কি ভালো? ভালো থাকা কি ভালো? কিংবা মন্দ থাকা...!
আজকাল খুব বিশ্রী রকমের ভালো থাকা-থাকি...
খুব কদাকার রকমের কিছু! কারোরই মুখের দিকে
তাকাতে পারি না। কখনও কখনও মৃত মানুষের মুখ দেখে ফেলি! রোদ হেলে পড়লে যেমন দেখায় ঠিক তেমনটিই দেখায় বিম্বিত ছায়ার মতো!
মূঢ় হয়ে গেলে
পৃথিবী একা হয়ে যায়
আমার চারপাশে এখন হাড়গোড়-
পৃথিবীর, নক্ষত্রের...
ভ্রুক্ষেপিত বর্ণমালা
মাহফুজ আল-হোসেন
উপেক্ষার মর্মপীড়াদায়ক প্রহরগুলো কেন জানি না এখন আর উদ্বিগ্ন করে না একটুও;
অপ্রত্যাশিত অনায্য অবহেলায় ভুঁইচাপা ভালোবাসার হিরণ¥য় স্নিগ্ধ হরফগুলো সকলের অলক্ষ্যে সমাহিত হয়েছে মস্তিষ্কের পাললিক শিলাস্তরে;
ভ্রƒক্ষেপিত থোকা থোকা বর্ণমালাগুলো বেদনার্ত হতে হতে ক্রমশ সুসংহত আর সুস্মিত হয়েছে ঝালাই করা ঝলসিত সময়ের কমলাতপ্ত পথপরিক্রমা?;
অডিসিউসের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সমুদ্রযাত্রা থেকে ওরা অভিঘাত সহনশীলতার পাঠ নিয়েছে মনোযোগী বিদ্যার্থীর মতোই;
ইথাকায় ফিরে গিয়ে অন্যের অঙ্কশায়িনীরূপে পরিবর্তিত পেনেলোপির সাক্ষাৎ যদি ভাগ্যক্রমে মিলেও যায়,
আর কিছু না হোক তার প্রসাধন চর্চিত অবতল অবয়ব আর দিঘল কালো অপলক চোখের দিকে তাকিয়ে ‘হাই’ বলা যেতেই পারে!
আর, সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ টগবগে টেলিমেকাসের সাথে অনির্ধারিত আলাপচারিতা জুড়ে থাকবে- গণউপেক্ষা থেকে উৎসারিত নির্বীজ রাষ্ট্রচিন্তার নয়া থিসিস...
রক্তবীজের বৃত্ত
চয়ন শায়েরী
যখন সহজ কথা বলি-
দিই অসাধারণ উপমা,
তুমি বলো: ‘কেমন কেমন কথানামা
গা ছাড়া ছন্নছাড়া’
যখনই জটিল বিন্যাসে আঁকি
ছবিকল্প শব্দের তুলিতে
আঁচড় কেটেছি নক্ষত্রের রেখাচিত্রে-
তুমি বলো : ‘এসব কীসব!
জীবনের গল্প কই কবি?’
তখন প্রেমের কবিতা শিকেয় তুলে
আইডেনটিটি খুঁজি নিজের ভেতরে
দেশপ্রেম চেগে ওঠে,
পতাকার ক্যানভাসে বিমূর্ত ধারণা খুঁজে ফিরি-
দেখি, এ কী হাল হয়েছে পতাকার!
চাপাতির এককোপে
দেশপ্রেম দেহটার বুক থেকে
হৃৎপি- উপড়ে ফেলেছে-
ওখানে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে
একটা রক্তবীজের বৃত্ত;
পতাকার ক্যানভাসে বিমূর্ত ধারণা
মূর্ত হতে দেখি-
আসুরিক কল্পনার রং
শব্দের তুলির আঁচড়ে বাক্সময় হয়,
দেশটার বুকে চাপাতির কোপে আঁকা
রক্তবীজের বৃত্তে;
- যেন পতাকার রক্তবীজ
কিংবা রক্তবীজের পতাকা
আমাদের রক্ত রক্তম খেলার আইডেনটিটি;
এবারও তোমার মন্তব্যপ্রশ্ন:
‘এসব উত্তর-আধুনিক কবিতা বুঝি না-
সরল ভাষায় লিখতে পারো না?’
বলি: ‘দেশপ্রেম মযে কী, কীভাবে বোঝাব!
কবিতা লিখতে পারি-
কবিতা বুঝাতে পারব না।’
মায়ের ভাষা
হাইকেল হাশমী
আমার মায়ের কণ্ঠে উচ্চারিত
সেই প্রথম শব্দ-
এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে
আমার শোনা প্রথম শব্দ
তার উষ্ণতা আজও আমাকে ঢেকে রেখেছে।
শৈশব থেকে যৌবন
যৌবন থেকে বার্ধক্য
আমার মায়ের ভাষা আমার চিরসঙ্গী
হাসি কান্নার ভাষা
দুঃখ আনন্দের ভাষা
রাতের ঝাপসা আলোতে গল্প শোনার ভাষা
মায়ের কণ্ঠে ঘুমপাড়ানি গান
বাবার কন্ঠে দোয়া আর প্রার্থনার নরম ভাষা।
আমার ভাষা বহন করে
আমার পূর্বপুরুষের আকাক্সক্ষার চিহ্ন
তাদের সংগ্রাম, তাদের প্রতিবাদের ইতিহাস
তাদের গান, কবিতার প্রাণোচ্ছলতার কথা
আমার ভাষার প্রতিটি শব্দে মিশে আছে রক্তের আভা।
শব্দশিকারী
অশোক কর
নিভৃত অক্ষরে সেই তোমাকেই লেখার চেষ্টা করি,
তুমি সেই উদাসী বাউল, কোথায় হারিয়ে যাও দূরে
শব্দ-জ্বোনাকিরা আলোকিত ওড়ে তোমাকে ঘিরে
পিছু পিছু উড়ে আসে মন্ত্রমুগ্ধ সুরেলা বাতাস
তোমাকে ঘিরেই যতো উন্মাদনা
তোমাকে ঘিরেই শব্দ-কোলাহল
আমার লেখা শব্দগুলো তখন অচেনা পা-ুলিপি
নিষ্প্রভ সাদা পৃষ্ঠা, বুঝি ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ¤্রয়িমাণ!
মনে হয় অক্ষরেরা কবির নয়, শুধুই কবিতার,
মোহ-মুগ্ধ জটিলতায় রক্তাক্ত হতে হয় কবিকেই
চেনা পথ ছেড়ে স্বপ্নাহত সে হেঁটে যায় নিরুদ্দেশ
ফিরে আসে চন্দ্রাহত সে স্বপ্নবিলাস সাথে নিয়ে
কবি তখন এক প্রহান্তরের আগন্তুক
কবি তখন এক অবিনাশী স্বপ্নচারী
অলিক গন্তব্যে উন্মুখ ছুঁটে চলা এক শব্দ-শিকারী
নিভৃত অক্ষরে সেই তোমাকেই লেখার চেষ্টা করি!
বিদায়ী আলিঙ্গন
ভাগ্যধন বড়ুয়া
এই দেখা যদি শেষ দেখা হয় আমাদের!
গভীর অবলোকনে অনুভবে রেখে
নীরবে আঁকি মুখরেখা কলিজায়
একই বিষুবরেখায় দূরত্ব বহুত, মনে অভিঘাত!
আড়ষ্টতায় কথা নেই, চোখাচোখি নির্নিমেষ
কুশল সংবাদ নিবে কি? লুকোচুরি, না দেখার ভান
গোপনে ঘূর্ণন চলে লুপ্তপ্রায় আকরিক স্মৃতি
খননে উজ্জ্বল আরও দরোজায় হাজির...
এই দেখা যদি আর কখনও না হয়
মিলনপর্বের পর বিরহে কী কথা হলো?
কেন আলিঙ্গনে জড়ানো হাত ছাড়াতে দীর্ঘবিলম্ব
সাক্ষী শুধু দেহ-মন, ঘন শ্বাস, আরোপিত সূর্যছায়া...
প্রবাহ বাতাস বলেছিল কি এই শেষ দেখা?
আকাশমুখী বৃক্ষ ছায়া প্রলম্বিত করে কী বলেছিল?
কোনো মানে খুঁজতে যাইনি আমি, শুধুই হৃৎকম্প শুনেছি
আমার প্রদত্ত কথা তোমার সমীপে জমা থাক,
ভুলে যেও তোমার আসন্ন বসন্তে...
আর দেখা যদি না হয়;
আমাদের বলা শব্দগুলো মিশে যাবে কি বাহিত হাওয়ায়?
তরঙ্গিত ফেনা চরের বুকে এসে যে সমস্ত কথার সাক্ষী হয়েছিল
মনের চোরা¯্রােত কি সমুদ্রের চোরাবালিতে আটকায়?
গাঙচিল জানে সব, সূর্যাস্তের লাল আভায় ভুলে গেলে ভালো
কেউ আর না জানুক, আমাদের বিদায়ী আলিঙ্গন ক্ষণ!
পুনশ্চের মতো লেখা অবশিষ্ট অনুভব স্নায়ুকোষে বোবা
বিরান দুচোখ শুধু চেয়ে থাকে
রকিবুল হাসান
অভিমানে ফিরে যায় নদীতিকা স্রোতে- কিছুই প্রয়োজন নেই
ভোরের কুসুম ঘ্রাণ দরোজায় দাঁড়ানো মায়ের মুখ
পাখিদের গান বাড়ির উঠোন ঘাসফুলের পোটনি
গড়াই নদীর বুক উপচানো সুবাসিত গৈরিক স্বপ্নমুখশ্রী
রমণীর বেণীতে দোলখাওয়া সবুজ কবিতা লাবণ্যপঙ্ক্তি;
অনাদরে কাঁদে কূলকিনারাহীন দুঃখভর্তি মহুয়া যৌবন।
অভিমানে পথেরা পথের ঠিকানা ভুলে ভুল পথে চলে যায়
সকালের রোদে ঢেউখেলা পুকুরের সোহাগী সোনালি বুক
টিনের চালের শিশিরের নিশুতিকা গান- ঘুমভাঙা মধ্যরাত
কী যে মমতায় আলপথে ভেজাচুলে জড়ানো আকুতি
নিভে যায় অচেনা অগ্নিতে- নিঃসঙ্গতায় কাঁদে পায়ের নূপুর।
চকচকে আভিজাত্যে মা ভেসে যায় দুঃখের সাগরে
ঘরভর্তি মঁ মঁ মুগ্ধ গন্ধ দুর্গন্ধে নিহত হয়
হাছন-লালন ভেসে যায়- পরাণ জুড়ানো গান ভেসে যায়
হাওর-বাঁওড়ের শাপলা জড়ানো মৃত্তিকাকুসুম হারিয়ে যায়
মা আমার বিরান দুচোখে শুধু চেয়ে থাকে- মরা নদী মরে মরে।
আমি বাংলায় গান গাই
শুক্লা গাঙ্গুলি
যে পংক্তিমালা ভেসে যায় দূরে-
আমি তাকে আসন বিছিয়ে
হাতজোড় করে ধরে রাখি, সবিশেষে
মায়ের ন্যাতা-কাঁথার কাঠের তোরঙ্গে
যে শব্দগুলো স্বরবর্ণ আর ব?্যঞ্জনবর্ণে
বিভক্ত আ-কার ই-কার সহ-
আজ নত হই তার সামনে
আধুনিক মিডিয়া আমার বুকের ভিতর
আঁচর কেটে নাড়ী ধরে দেয় টান-
আমি চিৎকারে বলি
বাংলা আমার গর্ভধারিণী
বাংলা আমার মান-
আমি বাংলায় গাই গান
আমি বাংলায় গাই গান
একুশে ফেব্রুয়ারি
মুশাররাত
আমার জানালায়
যতখানি রোদ আসে
অলীক আলোয় যতটা স্বপ্ন
ভেসে থাকে আকাশে
যতটা লালে পুঞ্জীভূত
অসীম বেদনারাশি
উদাস হাওয়ার কর্কটে
ভাসে পাতাদের মরা হাসি
ফাল্গুনে মধু গুঞ্জরণে
সুখের দীর্ঘশ্বাস
শিমুলে, পলাশে জমাট রক্ত
প্রতিবাদে জোর আভাস
ততোটাই তুমি আমার চেতনে
আমার স্মরণে, আমার মননে
বুক ভরে প্রেমে বলতে পারা
তোমায় ভালোবাসি
একুশে ফেব্রুয়ারির বুকেই
বাংলাদেশের হাসি।
সোনার বাংলা
হাবিবা রোজী
চতুর্দশপদী কবিতা
অন্ত্যমিল: শেকসপিয়রীয় রীতি
গলায় শাপলার মালা, কদম খোঁপায়,
গ্রীষ্ম ঋতু মধুমাস, বর্ষা জলে ঢাকা।
পদ্মফুল পরি যেনো, পা দু’টি ডোবায়,
শরৎ শিশিরভেজা কাশফুলে আঁকা।
হরিৎ সোনালু রঙা, হৈমন্তী শরীর,
শীতে রিক্ত সন্ন্যাসিনী জবুথবু মেয়ে
বসন্তে ফুলেল সাজ ফাল্গুনী পরীর,
গুনগুন সুর করে পাখি ওঠে গেয়ে।
ষড়ঋতু ছয় রঙে তার ছবি আঁকে,
অ, আ, ক, খ কলতানে মিঠে মিঠে বোল।
অপার উজল ধারা, তটিনীর বাঁকে,
প্রাণমন সে জাগায়, আনন্দে দে দোল।
শ্যামল মায়াবী মুখ, আহা মরি মরি!
আমার সোনার বাংলা, প্রিয় নাম স্মরি।
ও ভাষা, ও বর্ণমালা
অদ্বৈত মারুত
সতত নদী নিরবধি ঢেউ তোলা গান সারাবেলা
সতেজ সবুজপাতা-পাখি ডাকাডাকি পুষ্পমেলা।
দুলে ওঠে সর্ষেপাতা, ধুলো- ও মন হাওয়া
ফুসফুস আমার বাংলা ভাষা, রক্তদাগে পাওয়া।
ও দুখিনী বর্ণমালা, বিশুদ্ধ প্রেম; ঝিঁঝিপোকা
দুলে ওঠা স্বপ্ন- নরম রোদে শিশির গন্ধ শোঁকা
মায়ের কোমল মুখখানা আর বোনের কানের দুল
জ্যোৎস্নাদেয়াল রোজ জ্বালাতে ফোটে রঙিন ফুল।
ও আমার বর্ণমালা রক্তজবা, কৃষ্ণচূড়া ফুলের ভেলা
ফাগুন দিনে আগুন তবু মিষ্টি বুলি কী সুরেলা!
এ দুচোখে বিষণœ রাত; সূর্যমিনার উঠলে ডোবে
একা হলে বুকটা ক্ষোভে জ্বলে ওঠে খুব নীরবে।
ও ভাষা-মা, বর্ণমালা
তোমার মনে অপরিসীম দুঃখ জমা
ভুল নদীমুখ ভুলের অসুখ-
করিও ক্ষমা, করিও ক্ষমা, করিও ক্ষমা
ও বর্ণ, ভাষা ও-মা।
আর কোন দিন
দিলীপ কির্ত্তুনিয়া
অন্তত বাংলা ভাষাকে আর কোনো দিন
লাল রঙে ঢাকতে দেবো না।
সেই যে একবার ঢেকেছিল উনিশ শ’ বাহান্নয়
ভিনভাষী ছোবলে
বুক পেতে দিয়েছিলাম ঠেকিয়ে
রক্তের বিছানা পেতে।
ভাষা আমার উজ্জ্বল পরিষ্কার
রক্তস্নাত তারপর থেকে।
ভাষার উজ্জ্বলতা এখন পৃথিবী ব্যেপে।
চৈতন্যে শীস-০২
পারভেজ আহসান
জলের কম্পন
চৈতন্যের দেয়ালে আলোর প্রপাত
আঙিনায় ফোটে রক্ত কুসুম
প্রতœছায়ায় মাগধী প্রাকৃত
লোহিত জলের উর্বরতায় বেড়ে ওঠে
সোনালি গাছ
উড়ে যায় পিঞ্জরভাঙা পাখির দল
কলস্বর হয় রৌদ্রের গান।
আগুনের বৃষ্টি
সঞ্জয় দেওয়ান
বুকে তপ্ত রোদের আঁচড় ছিল;
স্মৃতিতে ছিল দগ্ধ নারীর আর্তনাদ।
বিচ্ছিন্ন বালক ঘুঘুর দামে ফাঁদ কিনে
হাওয়ার শরীরে ওড়ায় রূপকথার ঘুড়ি।
বনবালকের পায়ে শিকল পরায় কামফুল,
নোনা জলের পুঁথি কেড়ে নেয় কর্পোরেট ঘুম।
কিশোরের মুখ বন্ধ করে দেয় শোষকের কালো হাত,
দেখায় রক্তচক্ষু, চালায় কার্তুজ!
বুক চিতিয়ে দেয় অকুতোভয় বায়ান্ন!
তারপর...
ফাগুনের নদী লাল হয়ে যায়;
রক্তরঙা পলাশ বনে আগুনের বৃষ্টি নামে।
রক্তে লেখা একুশ
নজরুল সাজু
রক্তে লেখা একুশ আসে,
ঝরা পাতা নয়,
বাংলা মাটির বুকের ভিতর
আগুন জ্বলে রয়।
শহীদের রক্ত রঙিন চাদর
ঢেকে দিল পথ,
ভাষার দাবি, মায়ের ডাক,
টলিয়ে দিল রথ।
সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার,
অমর তারা ইতিহাসে,
তাদের ত্যাগে, তাদের প্রাণে
বাংলা হাসে, বাংলা বাঁচে।
অমর একুশ, ভুলবো না আর,
শিকল ভাঙার গান,
বাংলা আমার হৃদয়জুড়ে,
আমার প্রাণের প্রাণ।
অদম্য সে বর্ণমালা
হাসান হাফিজ
ফাল্গুনের বুকে আছে মাতৃওম অগ্নির উত্তাপ
ভাষা তুমি ভালোবাসা, তুমি নদী-হাওয়া
আরো আছে আকাশের অফুরন্ত নীল
বর্ণমালা তোমার রক্তের রঙে ¯িœগ্ধ হলো
প্রতিবাদী তারুণ্য মিছিল
আগ্নেয় আবেগে পুড়লো স্বৈরাচার,
পরাধীনতার গ্লানি, দূষিত শৃঙ্খল
রক্ত¯্রােত বহে গেল নদীর নিয়মে অবিরল
প্রাণ পেল ভাষা
জেগে উঠলো আশা
বিশ্বমানবের হলো সে ঐতিহ্য
নিবৃত্তি সমাপ্তি পেল শতেক জিজ্ঞাসা
বাংলা বর্ণমালা তুমি রক্তের আখর হলে
দিন দিন হয়ে উঠলে অদম্য অপরাজেয়
আকাশের উচ্চতায় ¯িœগ্ধ সমুজ্জ্বল
দেশ কথা
নাসির আহমেদ
তুমি যে আমার ধমনীর ধ্বনি উতলা ¯্রােতস্বিনী
স্বদেশ সত্তা তোমার কাছেই ঋণী। তোমাকে ভাবলে
রক্তে ছলকে ওঠে বিদ্যুৎ ঝলসানো তরবারি!
বাঙালি আমি যে এই পরিচয় জানালো ফেব্রুয়ারি।
মায়ের মুখের প্রথম আদর আবেগী উচ্চারণ:
“বাবাসোনা তুই মানিক-রতন, আমার বুকের ধন”!
ধমনীর ধ্বনি কবিতা এবং তুমি প্রাণবায়ু আজো
হৃদয়ে-মননে দূরাগত কোনো সুরের মতোই বাজো।
সেই সুদূরের সুরের মায়ায় ঘরছাড়া এই বিভাগী হৃদয়
স্বার্থান্ধতা মুছে ফেলে একতারায় কেবলই দেশকথা কয়।
ধ্বনি তুমি এক উপান্ত গৃহকাহিনী
আবদুর রাজ্জাক
তুমি এক ধ্বনি, গোপন ধ্বনি এক বিহ্বল ধ্বনি।
কোলে তোমার পাকা ফল, বারবার চুমু খাও তারে, বলো:
সুখলতা রে! তুই আমার পুঁইলতা ভুঁই।
শুধু এক মৃত্যু, শুধু এক দূর অন্ধকার সব ছেয়ে দিয়ে গেছে।
তোমার প্রভু কৃপণ নন, তার কোনো ভুল হয় না-
সে কোনো ঋণ রাখে না।
তোমার বুকে তার সোনাঝরা হাসি, তোমার দগ্ধ হৃদয়
আগুনের পাখনা মেলে উড়ছে- তাহারই খোঁজে,
মেঘ-বিদ্যুৎ, শনশন হাওয়া তার কোনো হদিস জানে না।
তুমি কোনো স্বপ্ন দেখো না,
স্বপ্নহীন ঘুমাও এক আগুনের বিছানায়।
তোমার কোলে তার পাকাফল ওঁয়া ওয়াঁ করে, ক্ষুধায় কাঁদে।
খেয়ে না খেয়ে দিন যায় তোমার, তুমি এখন দিনেও কালা,
রাতেও কালা, দুখি এক বোবা-কালা।
একটি বড় বাড়ি থাকবে
দুলাল সরকার
অবিভক্ত একটি বড় বাড়ি থাকবে, মন থাকবে-
শিউলি সাদা উঠোন থাকবে,
হেঁটে বেড়াবার মুক্তি থাকবে, তারা মুগ্ধ
আকাশ থাকবে, পড়ার মতো একটি বিরাট
জীবন থাকবে, হাসি থাকবে, একুশ নামে
আমাদের এক পরিচয় থাকবে; মাঠে যাবার
আলোট থাকবে, কষ্ট লেখার কাগজ থাকবে
একটি বিশাল স্বপ্ন থাকবে- প্রজাপতির
রঙিন পাখায় আঙুল রাখার জায়গা
থাকবে- যা সত্য তা বলার মতো সাহস থাকবে-
পথের পাশে একটি বড়
বকুল গাছে নিঃশঙ্ক সব পাখি থাকবে।
আরেকটি রাগ ভৈরব
বাদল বিহারী চক্রবর্তী
কেনো পালাতে চাইছো?
জানি, দিবসের প্রথম প্রহরের সঙ্গীতটি
গাইতে পারোনি বলে-
অকালবোধনে তোমার পলায়নপর মনোবৃত্তি...
কিন্তু চাইলেই কি তা পারা যায়!
দ্যাখো, শাল-পিয়ালী বনে আজ
কতো পাখির গুঞ্জরন-ওরা গাইছে;
কারো সঙ্গে সুর মেলাবার ধার
ধারে না ওরা... কে জানে, কোনটি প্রেমের,
কোনটি দ্রোহের! আবার
কোনটিই বা ওদের আধ্যাত্মিকতার
আবরণে ঢাকা...
হ্যাঁ, সব প্রাণিরই রয়েছে আশাবরি
বিলাবল কিংবা অন্য কোনো ভায়রো...
ভাবছো তোমার সেটা নেই?
কিন্তু আমি তো রয়েছি; তুমি যে
ডেকে এনে একদিন আমাকে
পথের বাইরের এই কাব্য-জনারণ্যে
দাঁড় করালে... মধ্যাকাশ হতে ক্রমে
পশ্চিমে হেলে পড়া সূর্যালোকেরও
সৌন্দর্যের যে মুগ্ধতা, শান্ত হয়ে যাওয়া
কলকাকলির অবারিত স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় সুতীব্র যে ইমন-
সেখান থেকেই না-হয় শুরু হোক
তোমার আরেকটি ভোরের প্রত্যাশায় আরেকটি রাগ ভৈরব...
কর্নেল তোমাকেই বলছি
শারমিন সুলতানা রীনা
যুদ্ধের ময়দানে প্রস্তুতি
শত্রুর হাত থেকে বাঁচাতে হবে সীমান্ত
বাঁচাতে হবে দেশ, সার্বভৌমত্ব
মানচিত্রের সম্মান
ঠিক তখনি হাজার সেনা সদস্যে
পরিবেষ্টিত
দৃষ্টি আটকে যায় তোমার দিকে
তোমার ইউনিফর্মে আবৃত শরীর জুড়ে
বারুদের তেজ
সমুদ্রের দুরন্ত ঢেউয়ের মতো
দুর্দান্ত ব্যাক্তিত্ব।
দেশকে শত্রুমুক্ত করতে নিবেদিত প্রাণ
বিজয়ের বেশে স্বাধীনতা অথবা নিথর দেহে
ফিরে আসা
অদম্য এই প্রত্যেয়ে এগিয়েছো
অস্ত্র হাতে
জীবন মৃত্যুর দোলাচলের মিছিল
অতঃপর কারো দেহ বিদীর্ণ হয়ে
রক্ত বন্যায় ভেসে গেলো পথ
কেউ ফিরে এলো সহযোদ্ধার লাশ কাঁধে নিয়ে
কর্নেল তোমাকেই বলছি
একদিন যে জীবনটা বিলিয়ে দিতে শপথ নিয়েছিলে
আজ সেই জীবনটাই তোমার কাছে বড় বেশি দামী
নিজেকে মূল্যবান করতে তুচ্ছ এক
নারীর কাছেই কেন পরাজিত হলে?
তোমার কৃতিত্ব
মাহমুদুজ্জামান জামী
তোমাকে ভাবার মতো
কারো সময় না থাকলেও
কাল সারাদিন তোমাকে ভেবেই
আমার কেটে গেছে দীর্ঘ সময়!
অথচ প্রতিদিন এখন চারিদিকে
নতুন খবর-
অস্থির বাতাসে
ঘুরে ঘুরে ক্যামেরার সামনে আর
শিরোনামে বৈচিত্র্য এনেছে!
যখন শব্দের সুতীব্র চিৎকার
যখন যন্ত্রের অসহ্য উল্লাস
যখন পুষ্প অকালেই বৃন্তচ্যুত
এবং আমার সকাল
প্রারম্ভেই মেঘাচ্ছন্ন
তখনও কী জাদুময়তায়
আমার হৃদয়ে তুমি
বিছিয়ে রেখেছো প্রেমের অমলিন চাদর!
উষ্ণতার সাঁকো
আকেল হায়দার
কে তুমি দেবী?
প্রতিমার মতো বাঁকা চোখে হাসো-
হয়ে ওঠো বিন্দু বিন্দু সুমধুর ভুল!
হাত ধরো-
ভাসাও, আল্পনাবোনা কথার ভেলায়
ডোবাও, কাকচক্ষুজল চোখের মায়ায়।
আমাকে স্পর্শ কর পাগল পাগল
তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে অঙ্কুরিত হোক
আমার আদিজন্মের শাঁস।
তুমি এলে অরণ্য আলো পাবে
তুমি ছুঁয়ে দিলে মাঠ হবে নদী
তোমার চুম্বনে ফুল হবে কুড়ি
হৃদয়ে ঔরসিত-হবে স্বর্গোদ্যান।
তোমাকে আঁকতে গিয়ে ঋতুবাঁক-
মেঘেরা ভিজছে সঙ্গমের সুখে
চোখ মেলে দেখি উষ্ণতার সাঁকো
ফাগুনের ধ্বনি-ফুলবৃষ্টি বুকে।
শুল্ক মুক্ত ক্ষমতার প্রেম
আমিরুল হাছান
প্রেম কিংবা প্রণয় হয়নি কৃষকের মাটির সাথে
তারপর হালচাষের জন্য এঁটেল মাটিকে আঘাত
মাটির সমস্ত বর্ণনায় ক্রন্দন করে
হাহাকার শ্রাবণের মাস আর শোকাহত মন
দোয়াত কলমে স্বাক্ষরিত কাবিন হয়নি
সবে মাত্র অতিথি পরিচয় পর্ব আর সর্ব ছায়া
এরই মাঝে মাটি আমার অবৈধ গর্ভবতী
কেও বোঝে না আর্তনাদ। দায়িত্বটা কার?
বৈষম্যের চাদরে পুরু পৃথিবী নগ্ন আর শুল্কমুক্ত ক্ষমতার প্রেম।
যেখানে অনেক কিছুই নেই প্রশ্ন লাঠিম হয়
সেখানে কষ্টটাও অযৌক্তিক অপরাধ
প্রেম হয়, কথা হয়, বাধন হয় তারপর উত্তরাধিকার
কিছুই হয়নি বিশেষ প্রেমের বিধিনিষেধ
আমরা অনেক আদর্শলিপির পাঠ গবেষণা করি
তাইতো রেস্টুরেন্টে আমি স্যুপ খাই শিস্ দিয়ে
আর দুধ হাসিতে ভিটে ছাড়া হই আমরা।
শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
গীতিগুচ্ছ
নির্মলেন্দু গুণ
অশোকের মালা পলাশের মালা শিমুলের মালা নয় গো,
ফুলের মালা কি বর্ণমালার মালার মতন হয় গো।
আমরা গেঁথেছি ফুলের বদলে বর্ণমালার এ-মালিকা,
ভাষাই মোদের জীবন-মরণ, স্বপ্ন আশার চালিকা।
এই ভাষার জন্য করিয়াছি জয় মরণের মতো ভয় গো।
ফাগুনের লাল ফুলের মতন আগুনের রং পরিয়া,
ফেব্রুয়ারির পথে-পথে কত তাজা প্রাণ গেছে ঝরিয়া।
আর কোন দেশে ভাষার লাগিয়া এত প্রাণ হয় ক্ষয় গো।
মাতৃরূপিণী যে ভাষার লাগি শহীদেরা দিল প্রাণ,
তাদের স্মরণে গেয়ে যাই এই বর্ণমালার গান।
এই গানে হোক মাতৃভূমিতে মুক্তির অভ্যুদয় গো।
নাম রাখি ভালোবাসা
মহাদেব সাহা
আমি যা-কিছু ভালোবাসি তার নাম
রাখি ভালোবাসা,
যা কিছু সুন্দর তার নাম রাখি
ভালোবাসা;
নদীকে বলি ভালোবাসা, মধ্যরাতের আকাশকে
বলি ভালোবাসা,
ঝমঝম বৃষ্টিকে বলি ভালোবাসা
উত্তমাশা, তাকে বলি ভালোবাসা;
ভালোবাসা গরিবের মাত্র সম্বল
অপার অগাধ মনোবল,
ভালোবাসা দিয়ে আমি পৃথিবী কিনেছি
কলম্বাসের মতো নতুন দ্বীপ
চিনেছি;
এক বিন্দু ভালোবাসা পেলে আমি
সব ভুলে যাই,
তাই তো তোমার নাম রাখি ভালোবাসা,
ভালোবাসা, ভালোবাসা, এই নিয়ে
জীবন কাটাই।
ছবি দেখছি
জাহিদ হায়দার
বাক্ বন্ধ করে
দেখছি নির্বাক ছবি।
ক্ষমা করবেন জহির রায়হান,
‘জীবন থেকে নেয়া’ বলেছিল অনেক স্লোগান।
দেখছি ‘রোমান হলিডে’
নিয়মে হারালো প্রেম অড্রে হেপবার্ন।
যুদ্ধে কন্যা ধর্ষিতা
ক্ষতবিক্ষত ‘টু উইমেন।’
ক্ষমা চাই সোফিয়া লোরেন,
কান্নার শব্দ শুনছি না।
দেখছি ‘আকালের সন্ধানে’।
সন্ধান নীরবে বলছে কথা।
ধন্যবাদ মৃণাল সেন।
চ্যাপলিন খাচ্ছেন জুতো,
শব্দ দিতে পারলে বুঝতাম,
আমাকে কী বলছেন।
সন্ধ্যাপ্রদীপ
মুনীর সিরাজ
কখন উঠলো জ¦লে সন্ধ্যার প্রদীপ, ¯িœগ্ধ আলোর কান্তি।
সে আলোকস্পর্শে নিভৃত মনেব কোণে কুয়াশার শীতল
ছোঁয়ার মতো প্রশান্তি নেমে আসে। অন্ধকারে স্থির
মোমের শিখার মতো আলোকোজ্জ্বল হরিণীর দীপ্তি মাখা
চোখে কিসের প্রশান্তি নামে হৃদয় গভীরে। সন্ধ্যার প্রদীপ
হয়ে কখন নিঃশব্দে কোনো এক অতলস্পর্শীর ফুটে ওঠা
আলো, মধুর হাসির কম্পন, ফুলের সৌরভ মাখা কান্তির
এমন বিকাশ, এমনই বিশ্বাস জাগে মনের গভীরে, মনে হয়
কীভাবে সম্ভব হতে পারে, যা শুধু হতেই পারে কেবল কল্পনা?
কে দিয়েছে আমার দু’হাতে তুলে এমন প্রদীপ? অনিঃশেষ
¯িœগ্ধ আলোতে সেই অবিরাম ক্লান্তিহীন অবগাহন করে
যেতে যেতে, নিঃশ্বাস ফুরিয়ে গেলেও বেদনারা বহুদূর
থেকে আমাকে বিদায় দিয়ে যাবে। জীবনের সমস্ত অবসাদ
দূর করে, এমন প্রশান্তির কথা কেবা এঁকে দিতে পারে
মহাকালের মুহূর্ত সীমায়। কখন উঠলো জ¦লে সন্ধ্যার প্রদীপ!
বসন্তের গাঁথা
হাসান কল্লোল
বসন্তের মালা গলায় পরেছো
তোমার মালার ফুল টোল-খাওয়া
পাহারের মাঝে খেলে ভীষণ ঊল্লাসে
তুমি ঘোরো মাটির মায়ায় আমাকে
পাথর ভেবে নিঃসঙ্গতায় ফেলে!
সর্বহারার দেহেও তো বসন্তের
বাতাস লাগে
তার প্রেম জেগে ওঠে তোমাকে
না পেলে শতগুণ বিলাপে
এতসব বোঝো সূর্যমুখী সনাতন কবির
বিরহ বোঝো না! দেখো
বসন্তের বাউল বাতাসে ভাসে
একতারার বেদনা
অপ্রকৃতিতস্থ সময়ের ভাজে তোমার
ভালবাসার আভুল দুলতে দাও!
আমাকে বাঁচিয়ে রাখো
আর কিছুকাল ফাগুনের গেরুয়া ড্রয়ারে
খুলে খুলে প্রতিবার দেখবে রমণী
আমি বেঁচে আছি হাতে তোমারই
ঊপেক্ষার বনতুলসী ফুল
আর পাঁজরে শিমুল পলাশ!!
সত্যালাপ
মঈনউদ্দিন মুনশী
উৎসব উল্লাস দেখলে আমার ভ্রম হয়
এটা বিজয় না শৃঙ্খল?
স্বাধীনতার স্লোগান শুনলে আমার ভ্রম হয়
এটা ভোরের ঊষা না উত্তাল ঝড়?
বৈসাদৃশ্য নিপাত স্লোগান শুনলে আমার ভ্রম হয়
এটা সত্যি না প্রবঞ্চনা?
বাংলাদেশে স্বপ্নের বিদ্রোহ!
এর বিনাশ নেই,
জনমে মৃত্যুতে-
দেশ যতদিন থাকবে ততদিন।
তুল সময়, তবু আছি-
এই সব বিভেদ, প্রতারণা,
মার খাওয়া মানুষ,
হীন-স্বার্থ শাসকের স্বাভাবিক কথা-
তবু, আছে বাংলার পলিমাটি,
নিসর্গের স্বপ্নময় আলপনা, ভেজা ঘাসের ধ্রুপদী ঘ্রাণ-
তাই, কবিতার পা-ুলিপি।
তিন হাজার সাল
মিহির মুসাকী
সম্পর্ক যদি নবায়িত হতো
তাহলে অনেক তুমি আর আমি
ফিটনেসবিহীন গাড়ির মতো ছুটে বেড়াতো
লাইসেন্সহীন বেওয়ারিশ রাস্তায়।
কিন্তু অনেক আগেই
পেরিয়ে গেছে নবায়নকাল,
আমার সকাল হলেও দেখি
তোমার বিকাল!
জলের অতলদেশে গভীরতম কাদায়
যে মাছেরা থাকে মুখ লুকিয়ে
তাকে পায় না কোনো শিকারী,
তুমিও কি সেভাবে লুকাও
আছে কি তেমন অভিমানবাড়ি?
নাকি অনন্ত আঁধারে
ক্রন্দন শুনে বুঝে নিতে হয়
এখন বিরহকাল!
তখনো বুঝিনি এখনো বুঝি না
বুঝবো না কোনোদিন
যখন তিন হাজার সাল!
পৃথিবীর হাড়গোড়
মোহাম্মদ হোসাইন
অবিশ্রান্ত হেঁটে যাই। আমার হেঁটে যাওয়া কাউকে তাড়িত করে না। কারও কিছু হয় না তাতে! যেন কেউ নই, কিচ্ছু নই। তবু হেঁটে যেতে থাকি। এভাবে একাকী হেঁটে যাওয়া কি ভালো? ভালো থাকা কি ভালো? কিংবা মন্দ থাকা...!
আজকাল খুব বিশ্রী রকমের ভালো থাকা-থাকি...
খুব কদাকার রকমের কিছু! কারোরই মুখের দিকে
তাকাতে পারি না। কখনও কখনও মৃত মানুষের মুখ দেখে ফেলি! রোদ হেলে পড়লে যেমন দেখায় ঠিক তেমনটিই দেখায় বিম্বিত ছায়ার মতো!
মূঢ় হয়ে গেলে
পৃথিবী একা হয়ে যায়
আমার চারপাশে এখন হাড়গোড়-
পৃথিবীর, নক্ষত্রের...
ভ্রুক্ষেপিত বর্ণমালা
মাহফুজ আল-হোসেন
উপেক্ষার মর্মপীড়াদায়ক প্রহরগুলো কেন জানি না এখন আর উদ্বিগ্ন করে না একটুও;
অপ্রত্যাশিত অনায্য অবহেলায় ভুঁইচাপা ভালোবাসার হিরণ¥য় স্নিগ্ধ হরফগুলো সকলের অলক্ষ্যে সমাহিত হয়েছে মস্তিষ্কের পাললিক শিলাস্তরে;
ভ্রƒক্ষেপিত থোকা থোকা বর্ণমালাগুলো বেদনার্ত হতে হতে ক্রমশ সুসংহত আর সুস্মিত হয়েছে ঝালাই করা ঝলসিত সময়ের কমলাতপ্ত পথপরিক্রমা?;
অডিসিউসের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সমুদ্রযাত্রা থেকে ওরা অভিঘাত সহনশীলতার পাঠ নিয়েছে মনোযোগী বিদ্যার্থীর মতোই;
ইথাকায় ফিরে গিয়ে অন্যের অঙ্কশায়িনীরূপে পরিবর্তিত পেনেলোপির সাক্ষাৎ যদি ভাগ্যক্রমে মিলেও যায়,
আর কিছু না হোক তার প্রসাধন চর্চিত অবতল অবয়ব আর দিঘল কালো অপলক চোখের দিকে তাকিয়ে ‘হাই’ বলা যেতেই পারে!
আর, সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ টগবগে টেলিমেকাসের সাথে অনির্ধারিত আলাপচারিতা জুড়ে থাকবে- গণউপেক্ষা থেকে উৎসারিত নির্বীজ রাষ্ট্রচিন্তার নয়া থিসিস...
রক্তবীজের বৃত্ত
চয়ন শায়েরী
যখন সহজ কথা বলি-
দিই অসাধারণ উপমা,
তুমি বলো: ‘কেমন কেমন কথানামা
গা ছাড়া ছন্নছাড়া’
যখনই জটিল বিন্যাসে আঁকি
ছবিকল্প শব্দের তুলিতে
আঁচড় কেটেছি নক্ষত্রের রেখাচিত্রে-
তুমি বলো : ‘এসব কীসব!
জীবনের গল্প কই কবি?’
তখন প্রেমের কবিতা শিকেয় তুলে
আইডেনটিটি খুঁজি নিজের ভেতরে
দেশপ্রেম চেগে ওঠে,
পতাকার ক্যানভাসে বিমূর্ত ধারণা খুঁজে ফিরি-
দেখি, এ কী হাল হয়েছে পতাকার!
চাপাতির এককোপে
দেশপ্রেম দেহটার বুক থেকে
হৃৎপি- উপড়ে ফেলেছে-
ওখানে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে
একটা রক্তবীজের বৃত্ত;
পতাকার ক্যানভাসে বিমূর্ত ধারণা
মূর্ত হতে দেখি-
আসুরিক কল্পনার রং
শব্দের তুলির আঁচড়ে বাক্সময় হয়,
দেশটার বুকে চাপাতির কোপে আঁকা
রক্তবীজের বৃত্তে;
- যেন পতাকার রক্তবীজ
কিংবা রক্তবীজের পতাকা
আমাদের রক্ত রক্তম খেলার আইডেনটিটি;
এবারও তোমার মন্তব্যপ্রশ্ন:
‘এসব উত্তর-আধুনিক কবিতা বুঝি না-
সরল ভাষায় লিখতে পারো না?’
বলি: ‘দেশপ্রেম মযে কী, কীভাবে বোঝাব!
কবিতা লিখতে পারি-
কবিতা বুঝাতে পারব না।’
মায়ের ভাষা
হাইকেল হাশমী
আমার মায়ের কণ্ঠে উচ্চারিত
সেই প্রথম শব্দ-
এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে
আমার শোনা প্রথম শব্দ
তার উষ্ণতা আজও আমাকে ঢেকে রেখেছে।
শৈশব থেকে যৌবন
যৌবন থেকে বার্ধক্য
আমার মায়ের ভাষা আমার চিরসঙ্গী
হাসি কান্নার ভাষা
দুঃখ আনন্দের ভাষা
রাতের ঝাপসা আলোতে গল্প শোনার ভাষা
মায়ের কণ্ঠে ঘুমপাড়ানি গান
বাবার কন্ঠে দোয়া আর প্রার্থনার নরম ভাষা।
আমার ভাষা বহন করে
আমার পূর্বপুরুষের আকাক্সক্ষার চিহ্ন
তাদের সংগ্রাম, তাদের প্রতিবাদের ইতিহাস
তাদের গান, কবিতার প্রাণোচ্ছলতার কথা
আমার ভাষার প্রতিটি শব্দে মিশে আছে রক্তের আভা।
শব্দশিকারী
অশোক কর
নিভৃত অক্ষরে সেই তোমাকেই লেখার চেষ্টা করি,
তুমি সেই উদাসী বাউল, কোথায় হারিয়ে যাও দূরে
শব্দ-জ্বোনাকিরা আলোকিত ওড়ে তোমাকে ঘিরে
পিছু পিছু উড়ে আসে মন্ত্রমুগ্ধ সুরেলা বাতাস
তোমাকে ঘিরেই যতো উন্মাদনা
তোমাকে ঘিরেই শব্দ-কোলাহল
আমার লেখা শব্দগুলো তখন অচেনা পা-ুলিপি
নিষ্প্রভ সাদা পৃষ্ঠা, বুঝি ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ¤্রয়িমাণ!
মনে হয় অক্ষরেরা কবির নয়, শুধুই কবিতার,
মোহ-মুগ্ধ জটিলতায় রক্তাক্ত হতে হয় কবিকেই
চেনা পথ ছেড়ে স্বপ্নাহত সে হেঁটে যায় নিরুদ্দেশ
ফিরে আসে চন্দ্রাহত সে স্বপ্নবিলাস সাথে নিয়ে
কবি তখন এক প্রহান্তরের আগন্তুক
কবি তখন এক অবিনাশী স্বপ্নচারী
অলিক গন্তব্যে উন্মুখ ছুঁটে চলা এক শব্দ-শিকারী
নিভৃত অক্ষরে সেই তোমাকেই লেখার চেষ্টা করি!
বিদায়ী আলিঙ্গন
ভাগ্যধন বড়ুয়া
এই দেখা যদি শেষ দেখা হয় আমাদের!
গভীর অবলোকনে অনুভবে রেখে
নীরবে আঁকি মুখরেখা কলিজায়
একই বিষুবরেখায় দূরত্ব বহুত, মনে অভিঘাত!
আড়ষ্টতায় কথা নেই, চোখাচোখি নির্নিমেষ
কুশল সংবাদ নিবে কি? লুকোচুরি, না দেখার ভান
গোপনে ঘূর্ণন চলে লুপ্তপ্রায় আকরিক স্মৃতি
খননে উজ্জ্বল আরও দরোজায় হাজির...
এই দেখা যদি আর কখনও না হয়
মিলনপর্বের পর বিরহে কী কথা হলো?
কেন আলিঙ্গনে জড়ানো হাত ছাড়াতে দীর্ঘবিলম্ব
সাক্ষী শুধু দেহ-মন, ঘন শ্বাস, আরোপিত সূর্যছায়া...
প্রবাহ বাতাস বলেছিল কি এই শেষ দেখা?
আকাশমুখী বৃক্ষ ছায়া প্রলম্বিত করে কী বলেছিল?
কোনো মানে খুঁজতে যাইনি আমি, শুধুই হৃৎকম্প শুনেছি
আমার প্রদত্ত কথা তোমার সমীপে জমা থাক,
ভুলে যেও তোমার আসন্ন বসন্তে...
আর দেখা যদি না হয়;
আমাদের বলা শব্দগুলো মিশে যাবে কি বাহিত হাওয়ায়?
তরঙ্গিত ফেনা চরের বুকে এসে যে সমস্ত কথার সাক্ষী হয়েছিল
মনের চোরা¯্রােত কি সমুদ্রের চোরাবালিতে আটকায়?
গাঙচিল জানে সব, সূর্যাস্তের লাল আভায় ভুলে গেলে ভালো
কেউ আর না জানুক, আমাদের বিদায়ী আলিঙ্গন ক্ষণ!
পুনশ্চের মতো লেখা অবশিষ্ট অনুভব স্নায়ুকোষে বোবা
বিরান দুচোখ শুধু চেয়ে থাকে
রকিবুল হাসান
অভিমানে ফিরে যায় নদীতিকা স্রোতে- কিছুই প্রয়োজন নেই
ভোরের কুসুম ঘ্রাণ দরোজায় দাঁড়ানো মায়ের মুখ
পাখিদের গান বাড়ির উঠোন ঘাসফুলের পোটনি
গড়াই নদীর বুক উপচানো সুবাসিত গৈরিক স্বপ্নমুখশ্রী
রমণীর বেণীতে দোলখাওয়া সবুজ কবিতা লাবণ্যপঙ্ক্তি;
অনাদরে কাঁদে কূলকিনারাহীন দুঃখভর্তি মহুয়া যৌবন।
অভিমানে পথেরা পথের ঠিকানা ভুলে ভুল পথে চলে যায়
সকালের রোদে ঢেউখেলা পুকুরের সোহাগী সোনালি বুক
টিনের চালের শিশিরের নিশুতিকা গান- ঘুমভাঙা মধ্যরাত
কী যে মমতায় আলপথে ভেজাচুলে জড়ানো আকুতি
নিভে যায় অচেনা অগ্নিতে- নিঃসঙ্গতায় কাঁদে পায়ের নূপুর।
চকচকে আভিজাত্যে মা ভেসে যায় দুঃখের সাগরে
ঘরভর্তি মঁ মঁ মুগ্ধ গন্ধ দুর্গন্ধে নিহত হয়
হাছন-লালন ভেসে যায়- পরাণ জুড়ানো গান ভেসে যায়
হাওর-বাঁওড়ের শাপলা জড়ানো মৃত্তিকাকুসুম হারিয়ে যায়
মা আমার বিরান দুচোখে শুধু চেয়ে থাকে- মরা নদী মরে মরে।
আমি বাংলায় গান গাই
শুক্লা গাঙ্গুলি
যে পংক্তিমালা ভেসে যায় দূরে-
আমি তাকে আসন বিছিয়ে
হাতজোড় করে ধরে রাখি, সবিশেষে
মায়ের ন্যাতা-কাঁথার কাঠের তোরঙ্গে
যে শব্দগুলো স্বরবর্ণ আর ব?্যঞ্জনবর্ণে
বিভক্ত আ-কার ই-কার সহ-
আজ নত হই তার সামনে
আধুনিক মিডিয়া আমার বুকের ভিতর
আঁচর কেটে নাড়ী ধরে দেয় টান-
আমি চিৎকারে বলি
বাংলা আমার গর্ভধারিণী
বাংলা আমার মান-
আমি বাংলায় গাই গান
আমি বাংলায় গাই গান
একুশে ফেব্রুয়ারি
মুশাররাত
আমার জানালায়
যতখানি রোদ আসে
অলীক আলোয় যতটা স্বপ্ন
ভেসে থাকে আকাশে
যতটা লালে পুঞ্জীভূত
অসীম বেদনারাশি
উদাস হাওয়ার কর্কটে
ভাসে পাতাদের মরা হাসি
ফাল্গুনে মধু গুঞ্জরণে
সুখের দীর্ঘশ্বাস
শিমুলে, পলাশে জমাট রক্ত
প্রতিবাদে জোর আভাস
ততোটাই তুমি আমার চেতনে
আমার স্মরণে, আমার মননে
বুক ভরে প্রেমে বলতে পারা
তোমায় ভালোবাসি
একুশে ফেব্রুয়ারির বুকেই
বাংলাদেশের হাসি।
সোনার বাংলা
হাবিবা রোজী
চতুর্দশপদী কবিতা
অন্ত্যমিল: শেকসপিয়রীয় রীতি
গলায় শাপলার মালা, কদম খোঁপায়,
গ্রীষ্ম ঋতু মধুমাস, বর্ষা জলে ঢাকা।
পদ্মফুল পরি যেনো, পা দু’টি ডোবায়,
শরৎ শিশিরভেজা কাশফুলে আঁকা।
হরিৎ সোনালু রঙা, হৈমন্তী শরীর,
শীতে রিক্ত সন্ন্যাসিনী জবুথবু মেয়ে
বসন্তে ফুলেল সাজ ফাল্গুনী পরীর,
গুনগুন সুর করে পাখি ওঠে গেয়ে।
ষড়ঋতু ছয় রঙে তার ছবি আঁকে,
অ, আ, ক, খ কলতানে মিঠে মিঠে বোল।
অপার উজল ধারা, তটিনীর বাঁকে,
প্রাণমন সে জাগায়, আনন্দে দে দোল।
শ্যামল মায়াবী মুখ, আহা মরি মরি!
আমার সোনার বাংলা, প্রিয় নাম স্মরি।
ও ভাষা, ও বর্ণমালা
অদ্বৈত মারুত
সতত নদী নিরবধি ঢেউ তোলা গান সারাবেলা
সতেজ সবুজপাতা-পাখি ডাকাডাকি পুষ্পমেলা।
দুলে ওঠে সর্ষেপাতা, ধুলো- ও মন হাওয়া
ফুসফুস আমার বাংলা ভাষা, রক্তদাগে পাওয়া।
ও দুখিনী বর্ণমালা, বিশুদ্ধ প্রেম; ঝিঁঝিপোকা
দুলে ওঠা স্বপ্ন- নরম রোদে শিশির গন্ধ শোঁকা
মায়ের কোমল মুখখানা আর বোনের কানের দুল
জ্যোৎস্নাদেয়াল রোজ জ্বালাতে ফোটে রঙিন ফুল।
ও আমার বর্ণমালা রক্তজবা, কৃষ্ণচূড়া ফুলের ভেলা
ফাগুন দিনে আগুন তবু মিষ্টি বুলি কী সুরেলা!
এ দুচোখে বিষণœ রাত; সূর্যমিনার উঠলে ডোবে
একা হলে বুকটা ক্ষোভে জ্বলে ওঠে খুব নীরবে।
ও ভাষা-মা, বর্ণমালা
তোমার মনে অপরিসীম দুঃখ জমা
ভুল নদীমুখ ভুলের অসুখ-
করিও ক্ষমা, করিও ক্ষমা, করিও ক্ষমা
ও বর্ণ, ভাষা ও-মা।
আর কোন দিন
দিলীপ কির্ত্তুনিয়া
অন্তত বাংলা ভাষাকে আর কোনো দিন
লাল রঙে ঢাকতে দেবো না।
সেই যে একবার ঢেকেছিল উনিশ শ’ বাহান্নয়
ভিনভাষী ছোবলে
বুক পেতে দিয়েছিলাম ঠেকিয়ে
রক্তের বিছানা পেতে।
ভাষা আমার উজ্জ্বল পরিষ্কার
রক্তস্নাত তারপর থেকে।
ভাষার উজ্জ্বলতা এখন পৃথিবী ব্যেপে।
চৈতন্যে শীস-০২
পারভেজ আহসান
জলের কম্পন
চৈতন্যের দেয়ালে আলোর প্রপাত
আঙিনায় ফোটে রক্ত কুসুম
প্রতœছায়ায় মাগধী প্রাকৃত
লোহিত জলের উর্বরতায় বেড়ে ওঠে
সোনালি গাছ
উড়ে যায় পিঞ্জরভাঙা পাখির দল
কলস্বর হয় রৌদ্রের গান।
আগুনের বৃষ্টি
সঞ্জয় দেওয়ান
বুকে তপ্ত রোদের আঁচড় ছিল;
স্মৃতিতে ছিল দগ্ধ নারীর আর্তনাদ।
বিচ্ছিন্ন বালক ঘুঘুর দামে ফাঁদ কিনে
হাওয়ার শরীরে ওড়ায় রূপকথার ঘুড়ি।
বনবালকের পায়ে শিকল পরায় কামফুল,
নোনা জলের পুঁথি কেড়ে নেয় কর্পোরেট ঘুম।
কিশোরের মুখ বন্ধ করে দেয় শোষকের কালো হাত,
দেখায় রক্তচক্ষু, চালায় কার্তুজ!
বুক চিতিয়ে দেয় অকুতোভয় বায়ান্ন!
তারপর...
ফাগুনের নদী লাল হয়ে যায়;
রক্তরঙা পলাশ বনে আগুনের বৃষ্টি নামে।
রক্তে লেখা একুশ
নজরুল সাজু
রক্তে লেখা একুশ আসে,
ঝরা পাতা নয়,
বাংলা মাটির বুকের ভিতর
আগুন জ্বলে রয়।
শহীদের রক্ত রঙিন চাদর
ঢেকে দিল পথ,
ভাষার দাবি, মায়ের ডাক,
টলিয়ে দিল রথ।
সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার,
অমর তারা ইতিহাসে,
তাদের ত্যাগে, তাদের প্রাণে
বাংলা হাসে, বাংলা বাঁচে।
অমর একুশ, ভুলবো না আর,
শিকল ভাঙার গান,
বাংলা আমার হৃদয়জুড়ে,
আমার প্রাণের প্রাণ।
অদম্য সে বর্ণমালা
হাসান হাফিজ
ফাল্গুনের বুকে আছে মাতৃওম অগ্নির উত্তাপ
ভাষা তুমি ভালোবাসা, তুমি নদী-হাওয়া
আরো আছে আকাশের অফুরন্ত নীল
বর্ণমালা তোমার রক্তের রঙে ¯িœগ্ধ হলো
প্রতিবাদী তারুণ্য মিছিল
আগ্নেয় আবেগে পুড়লো স্বৈরাচার,
পরাধীনতার গ্লানি, দূষিত শৃঙ্খল
রক্ত¯্রােত বহে গেল নদীর নিয়মে অবিরল
প্রাণ পেল ভাষা
জেগে উঠলো আশা
বিশ্বমানবের হলো সে ঐতিহ্য
নিবৃত্তি সমাপ্তি পেল শতেক জিজ্ঞাসা
বাংলা বর্ণমালা তুমি রক্তের আখর হলে
দিন দিন হয়ে উঠলে অদম্য অপরাজেয়
আকাশের উচ্চতায় ¯িœগ্ধ সমুজ্জ্বল
দেশ কথা
নাসির আহমেদ
তুমি যে আমার ধমনীর ধ্বনি উতলা ¯্রােতস্বিনী
স্বদেশ সত্তা তোমার কাছেই ঋণী। তোমাকে ভাবলে
রক্তে ছলকে ওঠে বিদ্যুৎ ঝলসানো তরবারি!
বাঙালি আমি যে এই পরিচয় জানালো ফেব্রুয়ারি।
মায়ের মুখের প্রথম আদর আবেগী উচ্চারণ:
“বাবাসোনা তুই মানিক-রতন, আমার বুকের ধন”!
ধমনীর ধ্বনি কবিতা এবং তুমি প্রাণবায়ু আজো
হৃদয়ে-মননে দূরাগত কোনো সুরের মতোই বাজো।
সেই সুদূরের সুরের মায়ায় ঘরছাড়া এই বিভাগী হৃদয়
স্বার্থান্ধতা মুছে ফেলে একতারায় কেবলই দেশকথা কয়।
ধ্বনি তুমি এক উপান্ত গৃহকাহিনী
আবদুর রাজ্জাক
তুমি এক ধ্বনি, গোপন ধ্বনি এক বিহ্বল ধ্বনি।
কোলে তোমার পাকা ফল, বারবার চুমু খাও তারে, বলো:
সুখলতা রে! তুই আমার পুঁইলতা ভুঁই।
শুধু এক মৃত্যু, শুধু এক দূর অন্ধকার সব ছেয়ে দিয়ে গেছে।
তোমার প্রভু কৃপণ নন, তার কোনো ভুল হয় না-
সে কোনো ঋণ রাখে না।
তোমার বুকে তার সোনাঝরা হাসি, তোমার দগ্ধ হৃদয়
আগুনের পাখনা মেলে উড়ছে- তাহারই খোঁজে,
মেঘ-বিদ্যুৎ, শনশন হাওয়া তার কোনো হদিস জানে না।
তুমি কোনো স্বপ্ন দেখো না,
স্বপ্নহীন ঘুমাও এক আগুনের বিছানায়।
তোমার কোলে তার পাকাফল ওঁয়া ওয়াঁ করে, ক্ষুধায় কাঁদে।
খেয়ে না খেয়ে দিন যায় তোমার, তুমি এখন দিনেও কালা,
রাতেও কালা, দুখি এক বোবা-কালা।
একটি বড় বাড়ি থাকবে
দুলাল সরকার
অবিভক্ত একটি বড় বাড়ি থাকবে, মন থাকবে-
শিউলি সাদা উঠোন থাকবে,
হেঁটে বেড়াবার মুক্তি থাকবে, তারা মুগ্ধ
আকাশ থাকবে, পড়ার মতো একটি বিরাট
জীবন থাকবে, হাসি থাকবে, একুশ নামে
আমাদের এক পরিচয় থাকবে; মাঠে যাবার
আলোট থাকবে, কষ্ট লেখার কাগজ থাকবে
একটি বিশাল স্বপ্ন থাকবে- প্রজাপতির
রঙিন পাখায় আঙুল রাখার জায়গা
থাকবে- যা সত্য তা বলার মতো সাহস থাকবে-
পথের পাশে একটি বড়
বকুল গাছে নিঃশঙ্ক সব পাখি থাকবে।
আরেকটি রাগ ভৈরব
বাদল বিহারী চক্রবর্তী
কেনো পালাতে চাইছো?
জানি, দিবসের প্রথম প্রহরের সঙ্গীতটি
গাইতে পারোনি বলে-
অকালবোধনে তোমার পলায়নপর মনোবৃত্তি...
কিন্তু চাইলেই কি তা পারা যায়!
দ্যাখো, শাল-পিয়ালী বনে আজ
কতো পাখির গুঞ্জরন-ওরা গাইছে;
কারো সঙ্গে সুর মেলাবার ধার
ধারে না ওরা... কে জানে, কোনটি প্রেমের,
কোনটি দ্রোহের! আবার
কোনটিই বা ওদের আধ্যাত্মিকতার
আবরণে ঢাকা...
হ্যাঁ, সব প্রাণিরই রয়েছে আশাবরি
বিলাবল কিংবা অন্য কোনো ভায়রো...
ভাবছো তোমার সেটা নেই?
কিন্তু আমি তো রয়েছি; তুমি যে
ডেকে এনে একদিন আমাকে
পথের বাইরের এই কাব্য-জনারণ্যে
দাঁড় করালে... মধ্যাকাশ হতে ক্রমে
পশ্চিমে হেলে পড়া সূর্যালোকেরও
সৌন্দর্যের যে মুগ্ধতা, শান্ত হয়ে যাওয়া
কলকাকলির অবারিত স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় সুতীব্র যে ইমন-
সেখান থেকেই না-হয় শুরু হোক
তোমার আরেকটি ভোরের প্রত্যাশায় আরেকটি রাগ ভৈরব...
কর্নেল তোমাকেই বলছি
শারমিন সুলতানা রীনা
যুদ্ধের ময়দানে প্রস্তুতি
শত্রুর হাত থেকে বাঁচাতে হবে সীমান্ত
বাঁচাতে হবে দেশ, সার্বভৌমত্ব
মানচিত্রের সম্মান
ঠিক তখনি হাজার সেনা সদস্যে
পরিবেষ্টিত
দৃষ্টি আটকে যায় তোমার দিকে
তোমার ইউনিফর্মে আবৃত শরীর জুড়ে
বারুদের তেজ
সমুদ্রের দুরন্ত ঢেউয়ের মতো
দুর্দান্ত ব্যাক্তিত্ব।
দেশকে শত্রুমুক্ত করতে নিবেদিত প্রাণ
বিজয়ের বেশে স্বাধীনতা অথবা নিথর দেহে
ফিরে আসা
অদম্য এই প্রত্যেয়ে এগিয়েছো
অস্ত্র হাতে
জীবন মৃত্যুর দোলাচলের মিছিল
অতঃপর কারো দেহ বিদীর্ণ হয়ে
রক্ত বন্যায় ভেসে গেলো পথ
কেউ ফিরে এলো সহযোদ্ধার লাশ কাঁধে নিয়ে
কর্নেল তোমাকেই বলছি
একদিন যে জীবনটা বিলিয়ে দিতে শপথ নিয়েছিলে
আজ সেই জীবনটাই তোমার কাছে বড় বেশি দামী
নিজেকে মূল্যবান করতে তুচ্ছ এক
নারীর কাছেই কেন পরাজিত হলে?
তোমার কৃতিত্ব
মাহমুদুজ্জামান জামী
তোমাকে ভাবার মতো
কারো সময় না থাকলেও
কাল সারাদিন তোমাকে ভেবেই
আমার কেটে গেছে দীর্ঘ সময়!
অথচ প্রতিদিন এখন চারিদিকে
নতুন খবর-
অস্থির বাতাসে
ঘুরে ঘুরে ক্যামেরার সামনে আর
শিরোনামে বৈচিত্র্য এনেছে!
যখন শব্দের সুতীব্র চিৎকার
যখন যন্ত্রের অসহ্য উল্লাস
যখন পুষ্প অকালেই বৃন্তচ্যুত
এবং আমার সকাল
প্রারম্ভেই মেঘাচ্ছন্ন
তখনও কী জাদুময়তায়
আমার হৃদয়ে তুমি
বিছিয়ে রেখেছো প্রেমের অমলিন চাদর!
উষ্ণতার সাঁকো
আকেল হায়দার
কে তুমি দেবী?
প্রতিমার মতো বাঁকা চোখে হাসো-
হয়ে ওঠো বিন্দু বিন্দু সুমধুর ভুল!
হাত ধরো-
ভাসাও, আল্পনাবোনা কথার ভেলায়
ডোবাও, কাকচক্ষুজল চোখের মায়ায়।
আমাকে স্পর্শ কর পাগল পাগল
তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে অঙ্কুরিত হোক
আমার আদিজন্মের শাঁস।
তুমি এলে অরণ্য আলো পাবে
তুমি ছুঁয়ে দিলে মাঠ হবে নদী
তোমার চুম্বনে ফুল হবে কুড়ি
হৃদয়ে ঔরসিত-হবে স্বর্গোদ্যান।
তোমাকে আঁকতে গিয়ে ঋতুবাঁক-
মেঘেরা ভিজছে সঙ্গমের সুখে
চোখ মেলে দেখি উষ্ণতার সাঁকো
ফাগুনের ধ্বনি-ফুলবৃষ্টি বুকে।
শুল্ক মুক্ত ক্ষমতার প্রেম
আমিরুল হাছান
প্রেম কিংবা প্রণয় হয়নি কৃষকের মাটির সাথে
তারপর হালচাষের জন্য এঁটেল মাটিকে আঘাত
মাটির সমস্ত বর্ণনায় ক্রন্দন করে
হাহাকার শ্রাবণের মাস আর শোকাহত মন
দোয়াত কলমে স্বাক্ষরিত কাবিন হয়নি
সবে মাত্র অতিথি পরিচয় পর্ব আর সর্ব ছায়া
এরই মাঝে মাটি আমার অবৈধ গর্ভবতী
কেও বোঝে না আর্তনাদ। দায়িত্বটা কার?
বৈষম্যের চাদরে পুরু পৃথিবী নগ্ন আর শুল্কমুক্ত ক্ষমতার প্রেম।
যেখানে অনেক কিছুই নেই প্রশ্ন লাঠিম হয়
সেখানে কষ্টটাও অযৌক্তিক অপরাধ
প্রেম হয়, কথা হয়, বাধন হয় তারপর উত্তরাধিকার
কিছুই হয়নি বিশেষ প্রেমের বিধিনিষেধ
আমরা অনেক আদর্শলিপির পাঠ গবেষণা করি
তাইতো রেস্টুরেন্টে আমি স্যুপ খাই শিস্ দিয়ে
আর দুধ হাসিতে ভিটে ছাড়া হই আমরা।