alt

অমর একুশে সংখ্যা ২০২৫

রাজবাড়ী জেলায় ভাষা আন্দোলন

নেহাল আহমেদ

: শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন একটি বিশেষ ঘটনা। বলা যায়, পাকিস্তানের পরবর্তী ঘটনা-প্রবাহের ক্ষেত্রে এই ঘটনা বিশেষ প্রভাব ফেলে। ’৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হবার সময় থেকেই বাঙালি বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্র সমাজ বাংলা ভাষার বিষয় নিয়ে তাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছিল।

কিন্তু পাকিস্তানি ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী এ বিষয়ে মোটেও আন্তরিক ছিল না। তারা উল্টো উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছিল। সুতরাং অনিবার্যভাবেই সংকট সৃষ্টি হয়। এরই চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে ১৯৫২ সালের রক্তাক্ত ঘটনা প্রবাহ।

সারা দেশের মতো রাজবাড়ী জেলার সন্তানরা এগিয়ে এসেছিলো মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করার সংগ্রামে। রাজবাড়ীর সন্তান আবুল কাশেম (কার্টুনিস্ট) তখন বাংলা অক্ষর তাড়াও এঁকে প্রতিবাদ করেছিলেন।

১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মহান সৈনিক কাজী আবুল কাসেম তার আঁকা ‘হরফ খেদাও’ কার্টুন চিত্রটির কারণে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। ১৯৬০ সালে এক বছর অস্থায়ীভাবে টেক্সট বুক বোর্ডের আর্ট রিভ্যুয়ার এবং ১৯৬১ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ফ্রাঙ্কলিন বুক প্রোগ্রামসের প্রধান শিল্প নির্দেশক ও শিশুসাহিত্যের বইয়ের রিভ্যুয়ার হিসেবে চাকরি করেছিলেন।

১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মহান সৈনিক কাজী আবুল কাসেম তার আঁকা ‘হরফ খেদাও’ কার্টুন চিত্রটির কারণে সারা পৃথিবীতে এখনো স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।

রাজবাড়ী আরেক কৃতি সন্তান অধ্যাপক আব্দুল গফুর (একুশে পদকপ্রাপ্ত) যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রথম তিনজন ছাত্রছাত্রীর একজন। তাঁর নাম রাজবাড়ী জেলার কোনো অনুষ্ঠানে উচ্চারিত হতে দেখিনি। অথচ ভাষা আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিস পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে দাবি তোলে। এসময় এর প্রতিষ্ঠাতা আবুল কাসেমের সাথে অগ্রণী সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম ছিলন আবদুল গফুর।

১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর তমদ্দুন মজলিসের বাংলা মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হলে গফুর প্রথমে এর সহ-সম্পাদক ও পরে সম্পাদকম-লীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সৈনিক পত্রিকার বিশেষ সংখ্যার শিরোনাম ছিল ‘শহীদ ছাত্রদের তাজা রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত, মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে ছাত্র সমাবেশে পুলিশের নির্বিচারে গুলিবর্ষণ’। ফলশ্রুতিতে ২৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ পত্রিকাটির অফিস অবরোধ করে সম্পাদক আবদুল গফুর ও প্রকাশক আবুল কাসেমকে গ্রেফতার করে।

রাজবাড়ীর সন্তান কাজী মোতাহার হোসেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে তমদ্দুন মজলিস একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে যার নাম ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা না উর্দু? এই পুস্তিকার লেখক কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমদ এবং অধ্যাপক আবুল কাসেম (তমদ্দুন মজলিসের সাধারণ সম্পাদক) বাংলা ভাষাকে পূর্ব বাংলায় ভাব বিনিময়, অফিস ও আদালতের একমাত্র ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে জোরালো মতামত তুলে ধরেন।

অসাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী এবং সেই আলোকে দেশের শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সুদৃঢ় ভিত গড়ে তোলার জন্য তখন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে বিভিন্ন কর্মকা-ের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন অনেক রাজবাড়ীর সন্তান। শিক্ষার সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর দাবিতে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে রাজবাড়ী জেলার ভাষা সৈনিকদের নিয়ে রাজবাড়ীতে কোনো কাজ হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

মহান ভাষা আন্দোলনের রাজবাড়ী জেলায় বিদগ্ধ ও গুণী মানুষ প্রত্যক্ষ ও প্ররোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। ভাষা আন্দোলন অংশগ্রহণকারী ভাষা সৈনিকদের যে কয়েকটি নাম পাওয়া যায় তাঁরা হলেন- নাম ড. কাজী মোতাহার হোসেন (বাগমারা পাংশা), অধ্যাপক আব্দুর গফুর (দাদপুর, বেলগাছি), এ্যাড. আব্দুল ওয়াজেদ চৌধুরী (কাটাখালী, বরাট), সামছুল আলম চৌধুরী (রাজবাড়ী সদর), অধ্যক্ষ মিয়া মোহাম্মদ কায়েম উদ্দিন (রাজবাড়ী সদর), হামিদুল হক ভোলা মিয়া (সজ্জনকান্দা, রাজবাড়ী), অধ্যক্ষ বদোরুদ্দোজা টুকু মিয়া (সূর্যনগর, রাজবাড়ী), মুন্সি মোঃ তফাজ্জল হোসেন (পাকুরিয়া, পাংশা)।

কাজী মোতাহার হোসেন ভাষা আন্দোলনের ভিত রচনা করেন। অধ্যপক্ষ আব্দুল গফুর ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় এবং সৈনিক পত্রিকার সহ-সম্পাদক থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হলে তিনি তিন মাস পলাতক থাকেন। এ্যাড. আব্দুল ওয়াজেদ চৌধুরী ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে যোগদান করে হাতের তালুতে গুলি লেগে আহত হন। এ্যড. সামছুল আলম এবং অধ্যক্ষ মিয়া মোঃ কায়েম উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকা অবস্থায় ঐদিন মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। বদরোদ্দোজা টুকু মিয়া গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

হাদিদুর হক ভোলা মিয়া মিছিলে অংশগ্রহণ করায় গ্রেফতার হন। মুন্সি তোফাজ্জল হোসেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় গোপনে ছাত্রদের অর্থ সহায়তা এবং নানাভাবে সংশিষ্ট হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শালে বিচার শুরু হল। মাতৃভাষার পক্ষে জোরালো বক্তবে আত্মপক্ষ সমর্থন করায় তিনি অব্যাহতি পান।

রাজবাড়ী জেলার ইতিহাস বইতে লেখা হয়েছে- ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় নিরপরাধ ছাত্র ও জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি ও হত্যার প্রতিবাদে রাজবাড়ী শহরের মানুষ ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ করেন। এতে নেতৃত্ব দেন একেএম আসজাদ, সমর সিংহ, হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

তাদের নেতৃত্বে ২৪ ফেব্রুয়ারি ৬/৭ হাজার মানুষ আজাদী ময়দানে সমবেত হন। তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে তারা ডানলফ হলে বর্তমানে চিত্রা হলে মিলিত হন। ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখ ঢাকায় নিরীহ ও নিরপরাধ ছাত্র ও জনসাধারণের উপর পুলিশের অমানুষিক গুলি বর্ষণের প্রতিবাদে এই মহকুমার সর্বত্র স্কুল ও হাটবাজার বন্ধ রাখা হয়।

tab

অমর একুশে সংখ্যা ২০২৫

রাজবাড়ী জেলায় ভাষা আন্দোলন

নেহাল আহমেদ

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন একটি বিশেষ ঘটনা। বলা যায়, পাকিস্তানের পরবর্তী ঘটনা-প্রবাহের ক্ষেত্রে এই ঘটনা বিশেষ প্রভাব ফেলে। ’৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হবার সময় থেকেই বাঙালি বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্র সমাজ বাংলা ভাষার বিষয় নিয়ে তাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছিল।

কিন্তু পাকিস্তানি ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী এ বিষয়ে মোটেও আন্তরিক ছিল না। তারা উল্টো উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছিল। সুতরাং অনিবার্যভাবেই সংকট সৃষ্টি হয়। এরই চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে ১৯৫২ সালের রক্তাক্ত ঘটনা প্রবাহ।

সারা দেশের মতো রাজবাড়ী জেলার সন্তানরা এগিয়ে এসেছিলো মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করার সংগ্রামে। রাজবাড়ীর সন্তান আবুল কাশেম (কার্টুনিস্ট) তখন বাংলা অক্ষর তাড়াও এঁকে প্রতিবাদ করেছিলেন।

১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মহান সৈনিক কাজী আবুল কাসেম তার আঁকা ‘হরফ খেদাও’ কার্টুন চিত্রটির কারণে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। ১৯৬০ সালে এক বছর অস্থায়ীভাবে টেক্সট বুক বোর্ডের আর্ট রিভ্যুয়ার এবং ১৯৬১ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ফ্রাঙ্কলিন বুক প্রোগ্রামসের প্রধান শিল্প নির্দেশক ও শিশুসাহিত্যের বইয়ের রিভ্যুয়ার হিসেবে চাকরি করেছিলেন।

১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মহান সৈনিক কাজী আবুল কাসেম তার আঁকা ‘হরফ খেদাও’ কার্টুন চিত্রটির কারণে সারা পৃথিবীতে এখনো স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।

রাজবাড়ী আরেক কৃতি সন্তান অধ্যাপক আব্দুল গফুর (একুশে পদকপ্রাপ্ত) যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রথম তিনজন ছাত্রছাত্রীর একজন। তাঁর নাম রাজবাড়ী জেলার কোনো অনুষ্ঠানে উচ্চারিত হতে দেখিনি। অথচ ভাষা আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিস পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে দাবি তোলে। এসময় এর প্রতিষ্ঠাতা আবুল কাসেমের সাথে অগ্রণী সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম ছিলন আবদুল গফুর।

১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর তমদ্দুন মজলিসের বাংলা মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হলে গফুর প্রথমে এর সহ-সম্পাদক ও পরে সম্পাদকম-লীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সৈনিক পত্রিকার বিশেষ সংখ্যার শিরোনাম ছিল ‘শহীদ ছাত্রদের তাজা রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত, মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে ছাত্র সমাবেশে পুলিশের নির্বিচারে গুলিবর্ষণ’। ফলশ্রুতিতে ২৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ পত্রিকাটির অফিস অবরোধ করে সম্পাদক আবদুল গফুর ও প্রকাশক আবুল কাসেমকে গ্রেফতার করে।

রাজবাড়ীর সন্তান কাজী মোতাহার হোসেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে তমদ্দুন মজলিস একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে যার নাম ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা না উর্দু? এই পুস্তিকার লেখক কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমদ এবং অধ্যাপক আবুল কাসেম (তমদ্দুন মজলিসের সাধারণ সম্পাদক) বাংলা ভাষাকে পূর্ব বাংলায় ভাব বিনিময়, অফিস ও আদালতের একমাত্র ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে জোরালো মতামত তুলে ধরেন।

অসাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী এবং সেই আলোকে দেশের শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সুদৃঢ় ভিত গড়ে তোলার জন্য তখন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে বিভিন্ন কর্মকা-ের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন অনেক রাজবাড়ীর সন্তান। শিক্ষার সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর দাবিতে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে রাজবাড়ী জেলার ভাষা সৈনিকদের নিয়ে রাজবাড়ীতে কোনো কাজ হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

মহান ভাষা আন্দোলনের রাজবাড়ী জেলায় বিদগ্ধ ও গুণী মানুষ প্রত্যক্ষ ও প্ররোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। ভাষা আন্দোলন অংশগ্রহণকারী ভাষা সৈনিকদের যে কয়েকটি নাম পাওয়া যায় তাঁরা হলেন- নাম ড. কাজী মোতাহার হোসেন (বাগমারা পাংশা), অধ্যাপক আব্দুর গফুর (দাদপুর, বেলগাছি), এ্যাড. আব্দুল ওয়াজেদ চৌধুরী (কাটাখালী, বরাট), সামছুল আলম চৌধুরী (রাজবাড়ী সদর), অধ্যক্ষ মিয়া মোহাম্মদ কায়েম উদ্দিন (রাজবাড়ী সদর), হামিদুল হক ভোলা মিয়া (সজ্জনকান্দা, রাজবাড়ী), অধ্যক্ষ বদোরুদ্দোজা টুকু মিয়া (সূর্যনগর, রাজবাড়ী), মুন্সি মোঃ তফাজ্জল হোসেন (পাকুরিয়া, পাংশা)।

কাজী মোতাহার হোসেন ভাষা আন্দোলনের ভিত রচনা করেন। অধ্যপক্ষ আব্দুল গফুর ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় এবং সৈনিক পত্রিকার সহ-সম্পাদক থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হলে তিনি তিন মাস পলাতক থাকেন। এ্যাড. আব্দুল ওয়াজেদ চৌধুরী ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে যোগদান করে হাতের তালুতে গুলি লেগে আহত হন। এ্যড. সামছুল আলম এবং অধ্যক্ষ মিয়া মোঃ কায়েম উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকা অবস্থায় ঐদিন মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। বদরোদ্দোজা টুকু মিয়া গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

হাদিদুর হক ভোলা মিয়া মিছিলে অংশগ্রহণ করায় গ্রেফতার হন। মুন্সি তোফাজ্জল হোসেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় গোপনে ছাত্রদের অর্থ সহায়তা এবং নানাভাবে সংশিষ্ট হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শালে বিচার শুরু হল। মাতৃভাষার পক্ষে জোরালো বক্তবে আত্মপক্ষ সমর্থন করায় তিনি অব্যাহতি পান।

রাজবাড়ী জেলার ইতিহাস বইতে লেখা হয়েছে- ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় নিরপরাধ ছাত্র ও জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি ও হত্যার প্রতিবাদে রাজবাড়ী শহরের মানুষ ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ করেন। এতে নেতৃত্ব দেন একেএম আসজাদ, সমর সিংহ, হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

তাদের নেতৃত্বে ২৪ ফেব্রুয়ারি ৬/৭ হাজার মানুষ আজাদী ময়দানে সমবেত হন। তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে তারা ডানলফ হলে বর্তমানে চিত্রা হলে মিলিত হন। ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখ ঢাকায় নিরীহ ও নিরপরাধ ছাত্র ও জনসাধারণের উপর পুলিশের অমানুষিক গুলি বর্ষণের প্রতিবাদে এই মহকুমার সর্বত্র স্কুল ও হাটবাজার বন্ধ রাখা হয়।

back to top