শহিদের গন্ধভরা বাড়ি
সোহরাব পাশা
স্বাধীনতা- শহিদের গন্ধভরা বাড়ি
বিদীর্ণ দীর্ঘশ্বাসের গোপন আগুন
রক্তভেজা জল, কবরের বুনোফুল
বধ্যভূমির অজস্র বিষণ্ন কঙ্কাল
দীর্ঘজীবী অনেক সূর্যের
প্রাজ্ঞ ভোর
অন্ধরাত্রির দুয়ার খোলা
নক্ষত্র-দুপুর।
পাখিটি
ডালিয়া চৌধুরী
ভোরকে সন্ধ্যা মনে করে
উড়ন্ত পথের ধুলি চঞ্চুতে রেখে
তুমি কি এখনো ঘরে নিষ্প্রভে?
হায়!
ডানা আছে তবু ডানা গুটিয়ে
এখানে একটি পাখি
পৃথিবীটা রেখেছে অন্ধকারে,
যেখানে দিগন্ত নীল অভয়ারণ্য
যেখানে ডানার স্বাধীনতা,
স্মৃতিভ্রম অতীতের আক্ষেপে
সব ভুলে কিছু পালক উড়িয়ে,
পাখিটি জানালার ধারে নিষ্প্রভে।
স্বাধীনতা না এলে
দুলাল সরকার
স্বাধীনতা এই শব্দটি বৃক্ষ থেকে জাত
স্বাধীনতা এই শব্দটি শস্য থেকে জাত
এর জীবিতকাল বৃক্ষের জন্মোৎসবের উৎসারিত
নীরব অথচ অগ্নুৎসবের মত প্রভাব বিস্তারি;
স্বাধীনতা এই শব্দটি কৃষ্ণগহ্বর থেকে
বিস্ফোরিত প্রথম মৌলিক যাত্রারম্ভ
যা কিনা মহাবিশ্ব সৃষ্টির উদ্ভূত চঞ্চল
ঘুমের সেই আদিম স্বপ্নের মত অর্থবহ-
যা সকল বঞ্চনাকে, সকল অন্যায়কে গুঁড়িয়ে দেয়
যা সকল শৃঙ্খল ভেঙে প্রিয় মানুষকে
মুক্তির আহ্বানে নিয়ে যায় অসীম উচ্চতায়;
স্বাধীনতা শব্দটি তাই কিশোর সময়ের মত উন্মুক্ত
স্বাধীনতা শব্দটি তাই সব ভেঙে নির্মাণের মহামন্ত্রে
মানুষকে জানিয়ে দেয় স¦াধীনতা না এলে মানুষ
বসন্ত বকুলের মতো ফুটে উঠতে পারে না;
স্বাধীনতা না এলে মানুষ পাখির মতো গান গাইতে পারে না
স্বাধীনতা না এলে মানুষ খুঁজে পায় না তার ঠিকানা
মানুষ বঞ্চিত হয় তার অধিকার থেকে
তার গণতন্ত্র থেকে ক্রমশ সাম্যবাদে উত্তরণে
মানুষ পিছিয়ে যায় বর্ণবাদ ও পুঁজিবাদের কালো অন্ধকারে
তাই স্বাধীনতা না এলে মানুষ চিনতে পারে না নিজেকে
ভাবতে পারে না যে সেও এক অমৃতের সন্তান
এক অপাবৃত সত্তার পবিত্র পরিচয়।
দূরের রেললাইন
মোহাম্মদ হোসাইন
মানুষ যতটা পারে প্রকৃতি পারেনা তেমন
তাই, ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গেছে
দু’হাতে মুছে দিয়ে গেছে সব
যতটা দেয়া যায় ঠিক ততটাই রোপে দিয়ে গেছে
অপমান
বুক ফালি করে চোখ ফালি করে নিজের শূন্যতা
নিজেকে না দিয়ে আমাকে দিয়েছে
আমিও হৃদয় চিরে চিতিয়ে নিয়েছি সব, যেমন অবোধ আকাশ,
যেমন গহীন অরণ্যের রাত...!
কত মেঘ আকাশে লুকোনো থাকে
কত কালো মেঘ বর্ষা ধরে রাখে বুকে ও পর্বতে
বরফের নিচে কত কান্না চাপা দেয়া আছে
আমিও কি নিইনি সবই জীবন সংবেদে!
যেনবা, আমিও পাহাড়ের পাদদেশ
যেনবা, আমারও পাঁজর থেঁতলে দিয়ে যায় প্রতিদিন
কোনো না কোনো বন্যপ্রজাতি
তাকে দেখি তবু অজানা অনিমেষ চোখে
ত্রিলোকে, ত্রিমাত্রিক বিন্যাস!
এতকাল এত করে দেখেছি তাকে
তবু যেন দেখিনি কিছুই, কিছুই হয়নি দেখা... অবশেষ...!
লোহার শেকলে বেঁধে নিয়েছি সব
নিয়েছি লোহার পাটাতন
রেল যেমন যায়, যেমন যায় দূরের রেললাইন
আমিও সেভাবেই আছি, সেভাবেই থাকি স্বাধীন, চূর্ণ চিরদিন...
নতুন জন্মের গান
শফিক ইমতিয়াজ
প্রায়-ঔপনিবেশিক মেঘে আমাদের খরাপীড়িত মাঠের জন্য
কোন বৃষ্টি ছিলো না, ছিলো ভোরের সূর্য ঢেকে রাখা অরাতিবিস্তার!
কল্পিত জলরেখায় অলীক সাঁতার এক, যেখানে ছিলো না কোন
তীরের সংবাদ।
আরোপিত মলাটের সে এক নীল গ্রন্থনা
ক্রূর হাতে মুছে দেয়া প্রতœস্বর;
কবরের ’পর জেগে থাকা শীত, এই ছিলো যাপনসৌন্দর্য!
যতোবার চেয়েছি তৃষ্ণার জল ততবার ধেয়ে আসা নখ, পাশব উল্লাসে!
আমাদের সামনে ছিলো বন্ধুর পাহাড়চুড়ো, অনিবার্য জয়ের আহ্বান
তাই নতুন জন্মের গান বাঁধি; সঞ্চারীতে লিখি-
শান্তি তোমাকে রক্তাক্ত পথ পেরোতেই হবে কাক্সিক্ষত অভিষেকের জন্য...
মায়ের আঁচলে একদিন নাড়িছেঁড়া চাঁদ, অজরসুন্দর!
নন্দিত পদধ্বনি
রাহমান ওয়াহিদ
স্বপ্নভাঙা ভোরের লোনাজল মাটিতেই
তাহাদের সবেগ উত্থান;
তাহাদের নীলচে শিরায় উপচে পড়েছে
জোছনাধোয়া ফসলের ঘ্রাণ।
সেইসব ঋজুবৃক্ষ অগ্রজদের
সমুজ্জ্বল সৃজনেরই ভিন্ন নাম স্বাধীনতা।
হাঁটুজল কৈশোরের বহতা নদীর
সাংগীতিক কলতান
বাড়িয়ে দিয়েছে আমাদের
হামাগুড়ি বয়সের মধ্যাহ্নিক দীপ্তি।
সেইসব উদ্দীপ্ত সময়ের
চলিষ্ণু স্রোতধারারই প্রতিশব্দ স্বাধীনতা।
পথহীন পথের অঙ্কুশ আল্ ধরে
অনিশ্চিত পথচলার পাথর প্রত্যয়
টেনে নিয়ে গেছে আমাদের
বৃত্তকে ছাড়িয়ে প্রান্তিক অন্বেষায়।
সেইসব গন্তব্য ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাওয়া
নন্দিত পদচিহ্নের শিল্পিত শরীরই স্বাধীনতা।
আহা চোখ
আজিজ কাজল
আমি তো এই ঘাটের মাঝি, প্রতিদিন এক আনা করে সাঁতরাই আমার কূল।
বাহুতে মরে গেছে লবণ, ধরলার বুকে বাধা সাতজনমের নদী।
প্রতিদিন বাড়ছে আমার ভবচন্দনের কুল, ডুব সাতারের বাও।
এখানে নদী নেই। আছে নদীর বিস্মৃত কঙ্কাল। সেই খেয়া ঘাটে এঁটেল মাটির
লবণ-ধোয়া চোখের ছবি, আজ হতে হাজার বছর ধরে আজন্ম মাথায় নুয়ে বাঁচি-
বাঁচতে চাই, তোমার এই মরিচিকা পাখায় ধরাতে চাই নোঙর-নথের লতা।
জলের জমিদার
মাহবুবা ফারুক
হ্যাঁ আমি সাঁতার শেষ করে চলে এলাম ডাঙায়
তোমাদের ঘোষণায় জেনেছি
আমার জলবাস সমাপ্ত হলো
তোমরা যারা আছো জলে কর জলকেলি
জানো তো
জলের ভিতরে কিছুটা দেখা যায়
দূরে যায় না দৃষ্টি
সেই গভীরে তোমরা সাজাও মনখেলাঘর
ইচ্ছে হলে ঘোলা কর জল
তারপর সেখানে শিকার কর মাছ
দাসের সাঁতার কাটো রঙ্গলীলা ভেবে
মিছে প্রতিদ্বন্দ্বি মনে করে কাউকে
আর পুষতে হবে না সাপ
জলের জমিদার তোমরাই এখন
তোমরাই চিরকাল।
আকাক্সক্ষার পলিমাটি
মনিজা রহমান
মাটির ব্যাংকে জমানো পয়সার মত
জমিয়েছি তোমাকে হৃদয়ের গহীনে
সিকি-আধুলির বদলে ঝনঝন করেছে ডাইম-নিকল
মস্তিষ্কে শব্দতরঙ্গের মতো ঝনঝন করেছে একটি নাম
বাংলাদেশ।
যে নাম নিরন্তর উল্টোরথে টানে চুম্বকের মত
সন্তরক নই জেনেও ঝাঁপ দেই স্মৃতির জলে
অজর-অজস্র-অবিনাশী অনুভব
টেনে নিয়ে যায় নদীর গভীরে
তবু আমার শেষ হয় না সাদৃশ্যের সন্ধান
স্মায়ুতন্ত্রের অনুপরমানু অন্তর্গত বাসনায়
তীব্র আকাক্সক্ষায় খোঁজে পলিমাটির ঘ্রাণ-
সেই গ্রাণ আমার বাংলা নামের বদ্বীপের।
গেরিলা ৭১
শুক্লা গাঙ্গুলি
একটা এল প্যাটার্নের স্ট্রেঞ্জ- ভেতরে
জনা কয়েক অকুতোভয় বালকবীর, মুক্তিযাদ্ধা-
সাইকোলোস্টাইল কাগজে
সাদা কালো অক্ষরে
কিছু নির্দেশনামা...
মাটি বাঁচাতে ওদের লড়াই-
ঘরে ঘরে আশ্রয় দেবেন- যদি আসে
সাঁঝবেলায় ওরা ক’জন- ধরুন সাত,
এক রাতের মেহমান। হয়ত এটাই হবে
শেষ রাত ওদের জীবনের...
ভোরের আলোয় লম্বা ছায়া- দুর্নিবার
‘মা বলিতে প্রাণ করে আনচান’-
প্রিয় জন্মভূমি-
‘তোমারেই সঁপিনু দেহ মন প্রাণ’...
ওরা সাতজন হাতে রাইফেল- কাঁধে কাঁধ
অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে বর্গীর আস্তানায়,
লণ্ডভণ্ড- অস্ত্র লুট, পাঞ্জা মুষ্টিবদ্ধ
ওরা অভীক অপরাজেয়-
পরবর্তী অপেক্ষা নীল নকশায়...
সোচ্চার কণ্ঠ আপ্রাণ গর্জনে- আজন্মের
প্রতিজ্ঞা- লক্ষ্য স্থির
নিশানা চাঁদমারি
স্বাধীন বাংলাদেশ-
জয় বাংলা।
সূর্যের সমবয়সী
বাশার মাহফুজ
মা, একটি বকুল গাছ হয়ে দাঁড়িয়ে
মায়ের চোখে স্থির একটি মাছরাঙা
মায়ের দুহাতে ঝুলন্ত আকাশ
রোদ-বৃষ্টি-জলোচ্ছ্বাস বয়ে যায় সময়-অসময়
মা তবু দাঁড়িয়ে
সূর্যের সমবয়সী এই দাঁড়িয়ে থাকা!
শুক্রবার, ০২ এপ্রিল ২০২১
শহিদের গন্ধভরা বাড়ি
সোহরাব পাশা
স্বাধীনতা- শহিদের গন্ধভরা বাড়ি
বিদীর্ণ দীর্ঘশ্বাসের গোপন আগুন
রক্তভেজা জল, কবরের বুনোফুল
বধ্যভূমির অজস্র বিষণ্ন কঙ্কাল
দীর্ঘজীবী অনেক সূর্যের
প্রাজ্ঞ ভোর
অন্ধরাত্রির দুয়ার খোলা
নক্ষত্র-দুপুর।
পাখিটি
ডালিয়া চৌধুরী
ভোরকে সন্ধ্যা মনে করে
উড়ন্ত পথের ধুলি চঞ্চুতে রেখে
তুমি কি এখনো ঘরে নিষ্প্রভে?
হায়!
ডানা আছে তবু ডানা গুটিয়ে
এখানে একটি পাখি
পৃথিবীটা রেখেছে অন্ধকারে,
যেখানে দিগন্ত নীল অভয়ারণ্য
যেখানে ডানার স্বাধীনতা,
স্মৃতিভ্রম অতীতের আক্ষেপে
সব ভুলে কিছু পালক উড়িয়ে,
পাখিটি জানালার ধারে নিষ্প্রভে।
স্বাধীনতা না এলে
দুলাল সরকার
স্বাধীনতা এই শব্দটি বৃক্ষ থেকে জাত
স্বাধীনতা এই শব্দটি শস্য থেকে জাত
এর জীবিতকাল বৃক্ষের জন্মোৎসবের উৎসারিত
নীরব অথচ অগ্নুৎসবের মত প্রভাব বিস্তারি;
স্বাধীনতা এই শব্দটি কৃষ্ণগহ্বর থেকে
বিস্ফোরিত প্রথম মৌলিক যাত্রারম্ভ
যা কিনা মহাবিশ্ব সৃষ্টির উদ্ভূত চঞ্চল
ঘুমের সেই আদিম স্বপ্নের মত অর্থবহ-
যা সকল বঞ্চনাকে, সকল অন্যায়কে গুঁড়িয়ে দেয়
যা সকল শৃঙ্খল ভেঙে প্রিয় মানুষকে
মুক্তির আহ্বানে নিয়ে যায় অসীম উচ্চতায়;
স্বাধীনতা শব্দটি তাই কিশোর সময়ের মত উন্মুক্ত
স্বাধীনতা শব্দটি তাই সব ভেঙে নির্মাণের মহামন্ত্রে
মানুষকে জানিয়ে দেয় স¦াধীনতা না এলে মানুষ
বসন্ত বকুলের মতো ফুটে উঠতে পারে না;
স্বাধীনতা না এলে মানুষ পাখির মতো গান গাইতে পারে না
স্বাধীনতা না এলে মানুষ খুঁজে পায় না তার ঠিকানা
মানুষ বঞ্চিত হয় তার অধিকার থেকে
তার গণতন্ত্র থেকে ক্রমশ সাম্যবাদে উত্তরণে
মানুষ পিছিয়ে যায় বর্ণবাদ ও পুঁজিবাদের কালো অন্ধকারে
তাই স্বাধীনতা না এলে মানুষ চিনতে পারে না নিজেকে
ভাবতে পারে না যে সেও এক অমৃতের সন্তান
এক অপাবৃত সত্তার পবিত্র পরিচয়।
দূরের রেললাইন
মোহাম্মদ হোসাইন
মানুষ যতটা পারে প্রকৃতি পারেনা তেমন
তাই, ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গেছে
দু’হাতে মুছে দিয়ে গেছে সব
যতটা দেয়া যায় ঠিক ততটাই রোপে দিয়ে গেছে
অপমান
বুক ফালি করে চোখ ফালি করে নিজের শূন্যতা
নিজেকে না দিয়ে আমাকে দিয়েছে
আমিও হৃদয় চিরে চিতিয়ে নিয়েছি সব, যেমন অবোধ আকাশ,
যেমন গহীন অরণ্যের রাত...!
কত মেঘ আকাশে লুকোনো থাকে
কত কালো মেঘ বর্ষা ধরে রাখে বুকে ও পর্বতে
বরফের নিচে কত কান্না চাপা দেয়া আছে
আমিও কি নিইনি সবই জীবন সংবেদে!
যেনবা, আমিও পাহাড়ের পাদদেশ
যেনবা, আমারও পাঁজর থেঁতলে দিয়ে যায় প্রতিদিন
কোনো না কোনো বন্যপ্রজাতি
তাকে দেখি তবু অজানা অনিমেষ চোখে
ত্রিলোকে, ত্রিমাত্রিক বিন্যাস!
এতকাল এত করে দেখেছি তাকে
তবু যেন দেখিনি কিছুই, কিছুই হয়নি দেখা... অবশেষ...!
লোহার শেকলে বেঁধে নিয়েছি সব
নিয়েছি লোহার পাটাতন
রেল যেমন যায়, যেমন যায় দূরের রেললাইন
আমিও সেভাবেই আছি, সেভাবেই থাকি স্বাধীন, চূর্ণ চিরদিন...
নতুন জন্মের গান
শফিক ইমতিয়াজ
প্রায়-ঔপনিবেশিক মেঘে আমাদের খরাপীড়িত মাঠের জন্য
কোন বৃষ্টি ছিলো না, ছিলো ভোরের সূর্য ঢেকে রাখা অরাতিবিস্তার!
কল্পিত জলরেখায় অলীক সাঁতার এক, যেখানে ছিলো না কোন
তীরের সংবাদ।
আরোপিত মলাটের সে এক নীল গ্রন্থনা
ক্রূর হাতে মুছে দেয়া প্রতœস্বর;
কবরের ’পর জেগে থাকা শীত, এই ছিলো যাপনসৌন্দর্য!
যতোবার চেয়েছি তৃষ্ণার জল ততবার ধেয়ে আসা নখ, পাশব উল্লাসে!
আমাদের সামনে ছিলো বন্ধুর পাহাড়চুড়ো, অনিবার্য জয়ের আহ্বান
তাই নতুন জন্মের গান বাঁধি; সঞ্চারীতে লিখি-
শান্তি তোমাকে রক্তাক্ত পথ পেরোতেই হবে কাক্সিক্ষত অভিষেকের জন্য...
মায়ের আঁচলে একদিন নাড়িছেঁড়া চাঁদ, অজরসুন্দর!
নন্দিত পদধ্বনি
রাহমান ওয়াহিদ
স্বপ্নভাঙা ভোরের লোনাজল মাটিতেই
তাহাদের সবেগ উত্থান;
তাহাদের নীলচে শিরায় উপচে পড়েছে
জোছনাধোয়া ফসলের ঘ্রাণ।
সেইসব ঋজুবৃক্ষ অগ্রজদের
সমুজ্জ্বল সৃজনেরই ভিন্ন নাম স্বাধীনতা।
হাঁটুজল কৈশোরের বহতা নদীর
সাংগীতিক কলতান
বাড়িয়ে দিয়েছে আমাদের
হামাগুড়ি বয়সের মধ্যাহ্নিক দীপ্তি।
সেইসব উদ্দীপ্ত সময়ের
চলিষ্ণু স্রোতধারারই প্রতিশব্দ স্বাধীনতা।
পথহীন পথের অঙ্কুশ আল্ ধরে
অনিশ্চিত পথচলার পাথর প্রত্যয়
টেনে নিয়ে গেছে আমাদের
বৃত্তকে ছাড়িয়ে প্রান্তিক অন্বেষায়।
সেইসব গন্তব্য ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাওয়া
নন্দিত পদচিহ্নের শিল্পিত শরীরই স্বাধীনতা।
আহা চোখ
আজিজ কাজল
আমি তো এই ঘাটের মাঝি, প্রতিদিন এক আনা করে সাঁতরাই আমার কূল।
বাহুতে মরে গেছে লবণ, ধরলার বুকে বাধা সাতজনমের নদী।
প্রতিদিন বাড়ছে আমার ভবচন্দনের কুল, ডুব সাতারের বাও।
এখানে নদী নেই। আছে নদীর বিস্মৃত কঙ্কাল। সেই খেয়া ঘাটে এঁটেল মাটির
লবণ-ধোয়া চোখের ছবি, আজ হতে হাজার বছর ধরে আজন্ম মাথায় নুয়ে বাঁচি-
বাঁচতে চাই, তোমার এই মরিচিকা পাখায় ধরাতে চাই নোঙর-নথের লতা।
জলের জমিদার
মাহবুবা ফারুক
হ্যাঁ আমি সাঁতার শেষ করে চলে এলাম ডাঙায়
তোমাদের ঘোষণায় জেনেছি
আমার জলবাস সমাপ্ত হলো
তোমরা যারা আছো জলে কর জলকেলি
জানো তো
জলের ভিতরে কিছুটা দেখা যায়
দূরে যায় না দৃষ্টি
সেই গভীরে তোমরা সাজাও মনখেলাঘর
ইচ্ছে হলে ঘোলা কর জল
তারপর সেখানে শিকার কর মাছ
দাসের সাঁতার কাটো রঙ্গলীলা ভেবে
মিছে প্রতিদ্বন্দ্বি মনে করে কাউকে
আর পুষতে হবে না সাপ
জলের জমিদার তোমরাই এখন
তোমরাই চিরকাল।
আকাক্সক্ষার পলিমাটি
মনিজা রহমান
মাটির ব্যাংকে জমানো পয়সার মত
জমিয়েছি তোমাকে হৃদয়ের গহীনে
সিকি-আধুলির বদলে ঝনঝন করেছে ডাইম-নিকল
মস্তিষ্কে শব্দতরঙ্গের মতো ঝনঝন করেছে একটি নাম
বাংলাদেশ।
যে নাম নিরন্তর উল্টোরথে টানে চুম্বকের মত
সন্তরক নই জেনেও ঝাঁপ দেই স্মৃতির জলে
অজর-অজস্র-অবিনাশী অনুভব
টেনে নিয়ে যায় নদীর গভীরে
তবু আমার শেষ হয় না সাদৃশ্যের সন্ধান
স্মায়ুতন্ত্রের অনুপরমানু অন্তর্গত বাসনায়
তীব্র আকাক্সক্ষায় খোঁজে পলিমাটির ঘ্রাণ-
সেই গ্রাণ আমার বাংলা নামের বদ্বীপের।
গেরিলা ৭১
শুক্লা গাঙ্গুলি
একটা এল প্যাটার্নের স্ট্রেঞ্জ- ভেতরে
জনা কয়েক অকুতোভয় বালকবীর, মুক্তিযাদ্ধা-
সাইকোলোস্টাইল কাগজে
সাদা কালো অক্ষরে
কিছু নির্দেশনামা...
মাটি বাঁচাতে ওদের লড়াই-
ঘরে ঘরে আশ্রয় দেবেন- যদি আসে
সাঁঝবেলায় ওরা ক’জন- ধরুন সাত,
এক রাতের মেহমান। হয়ত এটাই হবে
শেষ রাত ওদের জীবনের...
ভোরের আলোয় লম্বা ছায়া- দুর্নিবার
‘মা বলিতে প্রাণ করে আনচান’-
প্রিয় জন্মভূমি-
‘তোমারেই সঁপিনু দেহ মন প্রাণ’...
ওরা সাতজন হাতে রাইফেল- কাঁধে কাঁধ
অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে বর্গীর আস্তানায়,
লণ্ডভণ্ড- অস্ত্র লুট, পাঞ্জা মুষ্টিবদ্ধ
ওরা অভীক অপরাজেয়-
পরবর্তী অপেক্ষা নীল নকশায়...
সোচ্চার কণ্ঠ আপ্রাণ গর্জনে- আজন্মের
প্রতিজ্ঞা- লক্ষ্য স্থির
নিশানা চাঁদমারি
স্বাধীন বাংলাদেশ-
জয় বাংলা।
সূর্যের সমবয়সী
বাশার মাহফুজ
মা, একটি বকুল গাছ হয়ে দাঁড়িয়ে
মায়ের চোখে স্থির একটি মাছরাঙা
মায়ের দুহাতে ঝুলন্ত আকাশ
রোদ-বৃষ্টি-জলোচ্ছ্বাস বয়ে যায় সময়-অসময়
মা তবু দাঁড়িয়ে
সূর্যের সমবয়সী এই দাঁড়িয়ে থাকা!