alt

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ০৮ জুলাই ২০২১

আহারে পাহাড়ের কার্নিশ
মনজুর শামস

বৃষ্টিভেজা রাতের সাথে মেন্যুতে উলুবনের মুক্তো রেখো

অ্যাপেটাইজারে এক্কা-দোক্কা-বউচি রাখতে পারো

কিংবা স্রেফ ভোরের হাওয়া

মেইন ডিশে পাহাড়ের কলজের সাথে ফ্রায়েড মরুভূমি

আমার ভারি পছন্দ- রাখতে পারো

সবচেয়ে ভালো হয় দগ্ধ মনের ইচ্ছেগুলো কুচি কুচি

করে কেটে মরুর মেদে ভুনে দিতে পারলে

এসব যদি দাও বড় তৃপ্তিতে খেয়ে ঢেঁকুর তুলতে পারি

মুখ
গৌতম গুহ রায়

সদর দরজা বন্ধ হলে খুলে যায় ভেতরের বুক

কুয়োতলার দেহের প্রাচীন ওই রক্ত ধুতে ধুতে

একটা মুছে যাওয়া কামড়ের দাগ ফুটে ওঠে,

বলো, দাঁতের ক্ষতচিহ্নই কি আধিপত্য?

বলো, খুনি দস্তানার সাদাই কি তবে আদিগ্রন্থ?

পার্সেল ভ্যান থেকে একটা নীরব কান্না ফিরে এলে

ভষ্ম মেখে সীমান্তের শূন্য মুখ তোমার নিজস্ব হয়ে যায়

আমার কিছু কাজ আছে
আদিত্য নজরুল

তোমার ভাবানা ছাড়া আমার ব্যস্ততা বলে কিছু নেই

কিছু কিছু কাজ আছে স্মরণীয়

মাঝে মাঝে স্মৃতি খুঁড়ে

অকপটে দেখি সেই সব কাজ

তুমি সেই সার্বভৌম প্রেম যাকে চিরকাল ভাবা যায়।

আসলে প্রেম তো তাকেই বলে

যাকে পেয়েও পাইনি

যে কিনা ছেড়ে যেতে যেতে আরো বেশি জড়িয়ে রেখেছে

আরো বেশি নিমগ্ন ও একা করে রেখেছে...

তোমার ভাবনা ছাড়া আমার ব্যস্ততা বলে কিছু নেই।

তোমাকে ভাবতে গিয়ে

দুপুরের রোদে ভিজে নাকে জমে হিরে কুঁচিঘাম

এও এক ঐশ্বর্যের রত্নভাণ্ডার

লুকিয়ে জমিয়ে রাখি নিখুঁত গৃহস্থ মনে করে।

তোমাকে ভাবতে ভাবতেই কেটে যায় প্রেমের দুর্ভিক্ষ...

কাজ আর

কাজ এই

তোমাকে ভাবতে গিয়ে মেনে নেই প্রেমদ্রোহী অভিযোগ!

‘যদি প্রেম দিলে না প্রাণে’
মালেকা পারভীন

এক.

শেষমেশ চেকমেট দিয়ে দিলাম এই বলে-

দেখি, কতকাল থাকতে পারো আমায় ভুলে!

আমি তো ডুবেই ছিলাম স্মৃতির অতল জলে!

দুই.

তোমার নিভুনিভু চোখের তারায় দেখি

আমার ভুলতে চাওয়া মুখের প্রতিচ্ছবি-

কীভাবে ভুলবে তুমি, কীভাবেইবা আমি?

তিন.

এভাবে কিছুই না ভেবে ভেবে একদিন তোমার কথা ভুলে যাবো বেশ।

না স্মৃতিতে, না স্বপ্নে, না আমার হৃদযন্ত্রের ধুঁকপুকানি শুষে

তোমার আর থাকবে কোন চিহ্ন অবশেষ!

চার.

বরাবরের মতো এবারও গলে গেলাম তাহার প্রেমমধুসম সুমিষ্ট গুঞ্জনে।

ও আমার ভুলো মন,

এভাবে আর কত ওগো ভুলভুলাইয়া জালে বলো জড়াবে আমায় অনুক্ষণ!

পাঁচ.

একটি মেঘমেদুর মায়া-উথলানো দিন,

একটি বৃষ্টিভেজা বিষণ্ন মন-হারানো দিন,

সিক্ত রক্ত কৃষ্ণচূড়ায় আমাদের স্মৃতি মলিন!

জলপাখি বৃত্তান্ত
শৈবাল আদিত্য

বহুদিন ধরে আমার একজোড়া জলপাখি আছে।

যখন ইচ্ছে কৃত মোহন-পাপে পুড়ে যায় অন্তরপ্রচ্ছদ

অথবা রাতের চাদরে পড়ে রই ম্রিয়মাণ ভায়োলিন...

পাখিগণ নেচে নেচে গায় কবিতা।

ক্লিনসেভড নগরীতে সূর্যের সাথে আড্ডা জমায় টিন-এজ,

ভাঙা স্বপ্নের রেস্তোরায় নৈঃশব্দ্য মুখস্থ করে সদ্যাহত প্রেমিক,

আমি ও আমার পাখি গুলতানি মারি-

দেমাগের সাথে পরস্পর খরচ করি নিজস্ব একাকীত্ব!

জলপাখিরা তর্ক বানায়

বন্ধু... বন্দুক... কাফন...

না

শাদা কাগজ... সুগভীর জোছনা...

না

কাঁঠালীচাপা... রডোড্রেনডন...

আমি ও আমার ছায়া একযোগে খুন করি দানাদার বৃক্ষ।

তিনশ’ পঁয়ষট্টির আপাদমস্তক মুল্লুক প্রতিদিন যথেচ্ছ খরচ হতে হতে

একটি দিন ঠিকই মিতব্যয়ী দিবস নির্মাণ করে!

আর আমি কৃচ্ছ্র আগন্তুক বৈরাগ্য আরাধ্যে

সংসারী পেটে বাঁকা হয়ে ঝুলে রই টুকরো বেগুন-

স্নিগ্ধ ভোরবেলা চাকা চাকা রক্ত হয়ে লেগে থাকি কসাইয়ের আঙুলে!

মধুফুলের কাঁটা বনে যতবার যাই কষ্ট-বণিক;

খাঁচাবন্দি পাখালীর আর্তনাদ আমায় একা মহাখালি রেখে

উড়ে উড়ে উপ-দ্রুত বনানী যায়...!

আমি ও আমার ভালোবাসা বিষম পুড়ে মরি

দাউ... দাউ... দাউ... দাউ...

জলপাখিগণ আব্বাসের সুর জ্বেলে দেয় আমার দু’চোখে

লেলিহান শিখার মত-

সুপ্রেমিক আমি পুনর্বার অশস্ত্র যোদ্ধা হয়ে পড়ি।

দূরবীন
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির

ধরে নেই শহরের দুই পাশে কয়েক মাইল বন

ধরে নেই আমাদের দুই পাশে উত্তাল নদী

আমরা আর বাইরে যাই না

আমাদের শহরেও কেউ আসতে পারে না

বছরে একবার ওপার দেখার আয়োজন চলত

তখন বড় বড় দূরবীনে বসত চোখ

উঁচু গাছগুলোতে চড়ে আমরা তাকিয়ে দেখতাম ভিন্ন দুনিয়া

ধরে নেই আমাদের সব পথের উপর ঘাস

ধরে নেই আমাদের এখন কোন গাড়িঘোড়া নাই

আগে বছরে একবার আমরা অতিথি বরণ করতাম

তারা এলে আমরা সব কাজ ফেলে

সকাল দুপুর সন্ধ্যা

একসাথে ঘুরে দেখতাম

গলির পর গলি

গোপনে ফোটা ফুল

পাখিদের পালক

ঘরের ছায়ার শুরু থেকে শেষ

ধরে নেই এক শহর এখন আর অন্য শহরের ঘ্রাণ পছন্দ করে না

আমরা কখনও বাইরে যেতে পারব না

আমাদের শহরেও কেউ কোনোদিন আসবে না

উপপাদ্য
রাবাত রেজা নূর

তোমার হেঁশেলে বলকানো ভাত

আমার হৃদয় তো কুকুরের খাদ্য

ছুঁয়ে দিলে যায় জাত- দেহকলঙ্ক

এ তোমার কোন শাস্ত্রীয় উপপাদ্য?

চড়ুইয়ের মতো বাসা বাঁধি তোমার

বুকের কোটরে, দেহভরা মায়াপাপ

আমার কি নাপাক শরীর? বলো

কোন মুনি দিলো এই অভিশাপ?

মানুষ এমন এক পরিযায়ী পাখি

হতে চায় ভালোবসে আজীবন খুন

ফল্গুনদীর মতো গভীরে বয়ে চলা

বুকের ভেতর চাপা উর্বশী আগুন

শ্রাবণ পৃথিবীর
অহ নওরোজ

এই যে শরীরে বৃষ্টি হচ্ছে, কখনো বাহিরে

হাওয়ার কাছে পাতাগুলো সব নুয়ে পড়ছে সহজে-

এই যে পথেরা খুব হিম হয়ে ভিজে গেছে

জনপদে সবকিছু মৃদু গোল হয়ে ঢুকে গেছে ঘরে-

এই যে আকাশ রোদ খেয়ে কালো হয়ে গেছে

কুয়াশার মতো করে মিহি রাত কবে যেন নেমে গেছে,

যেন কেউ নেই দুপুরে, আঁধারে- জল পড়ে,

কেবলই কিছু স্বাদ, কিছু ধোঁয়া গড়িয়ে আসে বাতাসে-

মেঘগুলো বারবার হরিয়াল হয়ে ওড়ে

তবু পথ রেখে ঘাসের পিছনে মাঝে মাঝে কেউ হাঁটে-

সুরভিত দৃশ্যের ভেতরে বাজখাই স্বরে

আলোগুলো নেমে আসে- কোনোখানে কুসুমিত ব্যথা আর

শ্বাস রেখে আসে, অথবা তাকেই রোদ বলি,

বলি, অবিদিত মাটির ভেতরে যেন সোনা ঢুকে গেছে,

যেন ক্ষতগুলো ধুয়ে গেছে মলয় বাতাসে

বছরে বছরে ফের নিজ নিজ দেহে আসা হলো ফিরে।

ছবি

ওবায়েদ আকাশের বাছাই ৩২ কবিতা

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

দেহাবশেষ

ছবি

যাদুবাস্তবতা ও ইলিয়াসের যোগাযোগ

ছবি

বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা

ছবি

মিহির মুসাকীর কবিতা

ছবি

শুশ্রƒষার আশ্রয়ঘর

ছবি

সময়োত্তরের কবি

ছবি

নাট্যকার অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৪

ছবি

মহত্ত্বম অনুভবে রবিউল হুসাইন

‘লাল গহনা’ উপন্যাসে বিষয়ের গভীরতা

ছবি

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

মোহিত কামাল

ছবি

আশরাফ আহমদের কবিতা

ছবি

‘আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে আমাদেরই আগ্রহ নেই’

ছবি

ছোটগল্পের অনন্যস্বর হাসান আজিজুল হক

‘দীপান্বিত গুরুকুল’

ছবি

নাসির আহমেদের কবিতা

ছবি

শেষ থেকে শুরু

সাময়িকী কবিতা

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

রবীন্দ্রবোধন

ছবি

বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি হয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রাম

ছবি

হাফিজ রশিদ খানের নির্বাচিত কবিতা আদিবাসীপর্ব

ছবি

আনন্দধাম

ছবি

কান্নার কুসুমে চিত্রিত ‘ধূসরযাত্রা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ফারুক মাহমুদের কবিতা

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ও তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আসমানী’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

পরিবেশ-সাহিত্যের নিরলস কলমযোদ্ধা

ছবি

আব্দুলরাজাক গুনরাহর সাহিত্যচিন্তা

ছবি

অমিতাভ ঘোষের ‘গান আইল্যান্ড’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

tab

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

বৃহস্পতিবার, ০৮ জুলাই ২০২১

আহারে পাহাড়ের কার্নিশ
মনজুর শামস

বৃষ্টিভেজা রাতের সাথে মেন্যুতে উলুবনের মুক্তো রেখো

অ্যাপেটাইজারে এক্কা-দোক্কা-বউচি রাখতে পারো

কিংবা স্রেফ ভোরের হাওয়া

মেইন ডিশে পাহাড়ের কলজের সাথে ফ্রায়েড মরুভূমি

আমার ভারি পছন্দ- রাখতে পারো

সবচেয়ে ভালো হয় দগ্ধ মনের ইচ্ছেগুলো কুচি কুচি

করে কেটে মরুর মেদে ভুনে দিতে পারলে

এসব যদি দাও বড় তৃপ্তিতে খেয়ে ঢেঁকুর তুলতে পারি

মুখ
গৌতম গুহ রায়

সদর দরজা বন্ধ হলে খুলে যায় ভেতরের বুক

কুয়োতলার দেহের প্রাচীন ওই রক্ত ধুতে ধুতে

একটা মুছে যাওয়া কামড়ের দাগ ফুটে ওঠে,

বলো, দাঁতের ক্ষতচিহ্নই কি আধিপত্য?

বলো, খুনি দস্তানার সাদাই কি তবে আদিগ্রন্থ?

পার্সেল ভ্যান থেকে একটা নীরব কান্না ফিরে এলে

ভষ্ম মেখে সীমান্তের শূন্য মুখ তোমার নিজস্ব হয়ে যায়

আমার কিছু কাজ আছে
আদিত্য নজরুল

তোমার ভাবানা ছাড়া আমার ব্যস্ততা বলে কিছু নেই

কিছু কিছু কাজ আছে স্মরণীয়

মাঝে মাঝে স্মৃতি খুঁড়ে

অকপটে দেখি সেই সব কাজ

তুমি সেই সার্বভৌম প্রেম যাকে চিরকাল ভাবা যায়।

আসলে প্রেম তো তাকেই বলে

যাকে পেয়েও পাইনি

যে কিনা ছেড়ে যেতে যেতে আরো বেশি জড়িয়ে রেখেছে

আরো বেশি নিমগ্ন ও একা করে রেখেছে...

তোমার ভাবনা ছাড়া আমার ব্যস্ততা বলে কিছু নেই।

তোমাকে ভাবতে গিয়ে

দুপুরের রোদে ভিজে নাকে জমে হিরে কুঁচিঘাম

এও এক ঐশ্বর্যের রত্নভাণ্ডার

লুকিয়ে জমিয়ে রাখি নিখুঁত গৃহস্থ মনে করে।

তোমাকে ভাবতে ভাবতেই কেটে যায় প্রেমের দুর্ভিক্ষ...

কাজ আর

কাজ এই

তোমাকে ভাবতে গিয়ে মেনে নেই প্রেমদ্রোহী অভিযোগ!

‘যদি প্রেম দিলে না প্রাণে’
মালেকা পারভীন

এক.

শেষমেশ চেকমেট দিয়ে দিলাম এই বলে-

দেখি, কতকাল থাকতে পারো আমায় ভুলে!

আমি তো ডুবেই ছিলাম স্মৃতির অতল জলে!

দুই.

তোমার নিভুনিভু চোখের তারায় দেখি

আমার ভুলতে চাওয়া মুখের প্রতিচ্ছবি-

কীভাবে ভুলবে তুমি, কীভাবেইবা আমি?

তিন.

এভাবে কিছুই না ভেবে ভেবে একদিন তোমার কথা ভুলে যাবো বেশ।

না স্মৃতিতে, না স্বপ্নে, না আমার হৃদযন্ত্রের ধুঁকপুকানি শুষে

তোমার আর থাকবে কোন চিহ্ন অবশেষ!

চার.

বরাবরের মতো এবারও গলে গেলাম তাহার প্রেমমধুসম সুমিষ্ট গুঞ্জনে।

ও আমার ভুলো মন,

এভাবে আর কত ওগো ভুলভুলাইয়া জালে বলো জড়াবে আমায় অনুক্ষণ!

পাঁচ.

একটি মেঘমেদুর মায়া-উথলানো দিন,

একটি বৃষ্টিভেজা বিষণ্ন মন-হারানো দিন,

সিক্ত রক্ত কৃষ্ণচূড়ায় আমাদের স্মৃতি মলিন!

জলপাখি বৃত্তান্ত
শৈবাল আদিত্য

বহুদিন ধরে আমার একজোড়া জলপাখি আছে।

যখন ইচ্ছে কৃত মোহন-পাপে পুড়ে যায় অন্তরপ্রচ্ছদ

অথবা রাতের চাদরে পড়ে রই ম্রিয়মাণ ভায়োলিন...

পাখিগণ নেচে নেচে গায় কবিতা।

ক্লিনসেভড নগরীতে সূর্যের সাথে আড্ডা জমায় টিন-এজ,

ভাঙা স্বপ্নের রেস্তোরায় নৈঃশব্দ্য মুখস্থ করে সদ্যাহত প্রেমিক,

আমি ও আমার পাখি গুলতানি মারি-

দেমাগের সাথে পরস্পর খরচ করি নিজস্ব একাকীত্ব!

জলপাখিরা তর্ক বানায়

বন্ধু... বন্দুক... কাফন...

না

শাদা কাগজ... সুগভীর জোছনা...

না

কাঁঠালীচাপা... রডোড্রেনডন...

আমি ও আমার ছায়া একযোগে খুন করি দানাদার বৃক্ষ।

তিনশ’ পঁয়ষট্টির আপাদমস্তক মুল্লুক প্রতিদিন যথেচ্ছ খরচ হতে হতে

একটি দিন ঠিকই মিতব্যয়ী দিবস নির্মাণ করে!

আর আমি কৃচ্ছ্র আগন্তুক বৈরাগ্য আরাধ্যে

সংসারী পেটে বাঁকা হয়ে ঝুলে রই টুকরো বেগুন-

স্নিগ্ধ ভোরবেলা চাকা চাকা রক্ত হয়ে লেগে থাকি কসাইয়ের আঙুলে!

মধুফুলের কাঁটা বনে যতবার যাই কষ্ট-বণিক;

খাঁচাবন্দি পাখালীর আর্তনাদ আমায় একা মহাখালি রেখে

উড়ে উড়ে উপ-দ্রুত বনানী যায়...!

আমি ও আমার ভালোবাসা বিষম পুড়ে মরি

দাউ... দাউ... দাউ... দাউ...

জলপাখিগণ আব্বাসের সুর জ্বেলে দেয় আমার দু’চোখে

লেলিহান শিখার মত-

সুপ্রেমিক আমি পুনর্বার অশস্ত্র যোদ্ধা হয়ে পড়ি।

দূরবীন
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির

ধরে নেই শহরের দুই পাশে কয়েক মাইল বন

ধরে নেই আমাদের দুই পাশে উত্তাল নদী

আমরা আর বাইরে যাই না

আমাদের শহরেও কেউ আসতে পারে না

বছরে একবার ওপার দেখার আয়োজন চলত

তখন বড় বড় দূরবীনে বসত চোখ

উঁচু গাছগুলোতে চড়ে আমরা তাকিয়ে দেখতাম ভিন্ন দুনিয়া

ধরে নেই আমাদের সব পথের উপর ঘাস

ধরে নেই আমাদের এখন কোন গাড়িঘোড়া নাই

আগে বছরে একবার আমরা অতিথি বরণ করতাম

তারা এলে আমরা সব কাজ ফেলে

সকাল দুপুর সন্ধ্যা

একসাথে ঘুরে দেখতাম

গলির পর গলি

গোপনে ফোটা ফুল

পাখিদের পালক

ঘরের ছায়ার শুরু থেকে শেষ

ধরে নেই এক শহর এখন আর অন্য শহরের ঘ্রাণ পছন্দ করে না

আমরা কখনও বাইরে যেতে পারব না

আমাদের শহরেও কেউ কোনোদিন আসবে না

উপপাদ্য
রাবাত রেজা নূর

তোমার হেঁশেলে বলকানো ভাত

আমার হৃদয় তো কুকুরের খাদ্য

ছুঁয়ে দিলে যায় জাত- দেহকলঙ্ক

এ তোমার কোন শাস্ত্রীয় উপপাদ্য?

চড়ুইয়ের মতো বাসা বাঁধি তোমার

বুকের কোটরে, দেহভরা মায়াপাপ

আমার কি নাপাক শরীর? বলো

কোন মুনি দিলো এই অভিশাপ?

মানুষ এমন এক পরিযায়ী পাখি

হতে চায় ভালোবসে আজীবন খুন

ফল্গুনদীর মতো গভীরে বয়ে চলা

বুকের ভেতর চাপা উর্বশী আগুন

শ্রাবণ পৃথিবীর
অহ নওরোজ

এই যে শরীরে বৃষ্টি হচ্ছে, কখনো বাহিরে

হাওয়ার কাছে পাতাগুলো সব নুয়ে পড়ছে সহজে-

এই যে পথেরা খুব হিম হয়ে ভিজে গেছে

জনপদে সবকিছু মৃদু গোল হয়ে ঢুকে গেছে ঘরে-

এই যে আকাশ রোদ খেয়ে কালো হয়ে গেছে

কুয়াশার মতো করে মিহি রাত কবে যেন নেমে গেছে,

যেন কেউ নেই দুপুরে, আঁধারে- জল পড়ে,

কেবলই কিছু স্বাদ, কিছু ধোঁয়া গড়িয়ে আসে বাতাসে-

মেঘগুলো বারবার হরিয়াল হয়ে ওড়ে

তবু পথ রেখে ঘাসের পিছনে মাঝে মাঝে কেউ হাঁটে-

সুরভিত দৃশ্যের ভেতরে বাজখাই স্বরে

আলোগুলো নেমে আসে- কোনোখানে কুসুমিত ব্যথা আর

শ্বাস রেখে আসে, অথবা তাকেই রোদ বলি,

বলি, অবিদিত মাটির ভেতরে যেন সোনা ঢুকে গেছে,

যেন ক্ষতগুলো ধুয়ে গেছে মলয় বাতাসে

বছরে বছরে ফের নিজ নিজ দেহে আসা হলো ফিরে।

back to top