alt

সাময়িকী

স্বপ্নের হাতি

সানোয়ার মনি

: বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১

চিত্র : ইন্টারনেট

স্বপ্নে কত কী হয়! না হলে এই রকম স্বপ্ন কেন সে দেখবে। এই রকম তো সে কখনও ভাবেওনি। আর তাছাড়া পেটও গরম হয়নি যে এই রকম উদ্ভট একটা স্বপ্ন সে দেখবে। সে দেখল লিলিদের বাসার সামনে মস্ত এক হাতি। আর হাতিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে শ’খানেক লোক। লিলি তার প্রেমিকা। প্রায় বছর খানেক ধরে তারা প্রেম করছে। বিয়েসাদীর সম্ভাবনা আছে। সেই সূত্রেই মাঝে মাঝে হালকাপাতলা যাতায়াত। হাতির সামনে দাঁড়াতেই কে একজন এগিয়ে এলো, তাকে সে কোনোদিন দেখেছে বলে মনে করতে পারলো না, কিন্তু লোকটির ভাবখানা ভারি চেনা চেনা, তাই একেবারে গা ঘেঁষে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞাসা করল,

কেমন দেখছেন? কনতো কয় মন ঘি লাগবো।

ঘি! কিসের ঘি! সে বিস্মিত।

বোঝেন নাই! ঘি ছাড়া রোস্ট হয়! আমার তো মনে হয় দশ মন লাগবোই।

কিসের রোস্ট।

হাতির। দেখেন না আপনার চক্ষের উপর খাড়ায় রইছে।

হাতি! এই হাতির রোস্ট হবে! বিস্ময়ে তার ঘোর লাগে। কিন্তু সেই ঘোর একেবারে ফিকে হয়ে গেল, যখন সে শুনলো আগামীকাল লিলির বিয়ে, বরেরা বনেদী জমিদার, বিশাল ধনী, তাদের মান রাখতেই এই ব্যবস্থা। মানে হাতির রোস্ট খাওয়ানো হবে বরযাত্রীদের। হাতির রোস্ট সে কোনোদিন খায়নি, আদতে হাতির রোস্ট হয় কিনা তাও সে জানে না, কিন্তু এই জানাজানিতে তার কিছুই যায় আসে না। কারণ তখন তার ভাবনায় শুধুই লিলি, লিলির যদি অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যায়, তা হলে সে কী করবে! কাকে নিয়ে ভাববে! কাকে নিয়ে বাঁচবে! এই সময় হাতি গা-ঝাড়া দিয়ে নড়েচড়ে উঠল, লোকজন পড়িমরি শব্দ তুলে ছোটাছুটি শুরু করল, একজন এসে তার গায়ের উপর পড়ল আর তাতেই তার ঘুম ভেংগে গেল।

রাতের স্বপ্ন দিনে হারায়, বেশিরভাগ সময় কিছুই মনে থাকে না কিন্তু এই স্বপ্ন তার মনে লেপে গেল। সারা সকাল এই নিয়েই সে ভাবতে লাগল। লিলি তাকে ভালবাসে এই বিশ্বাস তার আছে, কিন্তু তার বাড়ির লোকজন বিষয়টা ঠিক রিকগ্নাইজ করতে চায় না। তারা নাজানা-নাদেখা ভাসা ভাসা একাটা ভাব ধরে আছে। এটুকু যে এলাও করছে তার কারণ সে ভাল ছাত্র। এই ভাল ছাত্রের কারণেই লিলির মা বিষয়টা এলাও করেছিলেন। বসিয়ে গল্পগুজব করে চা-নাস্তাও খাইয়েছিলেন। ছেলে অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে। আশা মাস্টার্সেও পাবে। পেলে ইউনিভার্সিটিতে ঢুকে পড়বে। ইউনিভার্সিটির শিক্ষক, জামাই হিসবে মন্দ না। এই রকম একটা হিসাব তিনি করেছিলেন। কিন্তু শেষে সেই হিসাব মিলল না মাস্টার্সে সে ভাল করতে পারল না, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার সম্ভবনা জিরো হয়ে গেল।

এখন লিলির মাকে দেখলে তার বুক শুকিয়ে যায়। মনে হয় মুখখানা শানের মতো জমে আছে চোখ দিয়ে গরম হাওয়া বের হচ্ছে। সেই গরম হাওয়া তাকে পুড়িয়ে মারছে না। তার কারণ ভাল ছাত্র হিসাবে এখনও কিছু সম্ভবনা তার আছে। বিসিএস অথবা একটা ভাল চাকরি সে চেষ্টা করলে পেতেই পারে। কিন্তু যতক্ষণ না হচ্ছে ততক্ষণ ভাসা ভাসা ভাবটা তারা ত্যাগ করতে চাইছেন না, তার কারণ তার যোগ্যতা বলতে যা কিছু তা ওই ভাল ছাত্র টুকুতেই। ঘরবাড়ি টাকা-পয়সায় জোর নাই, পিতার ছোটখাটো ব্যবসা, সামান্য জমিজমা, মামুলি আত্মীয়স্বজন।

একটা ভাল চাকরি পাবার সম্ভবনা তার আছে। যদি সে একাটা ভাল চাকরি পায় তাহলে তাদের আর কোনো আপত্তি নাই। তখন ঢাকঢোল পিটিয়েই বিয়ে দিবে, আর যদি তা না হয় তা হলে কোনো আশাই নাই। আর আশা নাই মানে আক্ষরিক অর্থেই আশা নাই। পালিয়ে অথবা কোট মেরেজ এইসব বাহাদুরির কোনো সুযোগই নাই। লিলির ভাই-দুলাভাইয়েরা সব বড় বড় আমলা, বেচাল দেখলে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে, হাত পা ভেংগে জেলে পুরে দিবে। সে তা জানে তাই এই রাস্তায় হাঁটতে ভয় পায়। তবে তেমন দরকার হলে সাহস যে সে দেখাবে না তা নয়, কিন্তু লিলিই তা চায় না। পরিবারের মুখে চুনকালি মাখাতে সে রাজি নয়। আর কেনইবা রাজি হবে, পরিবার তো তাকে না করেনি, মেলামেশায় বাঁধা দেয়নি। শুধু বলেছে, ছেলে যেন উপযুক্ত হয়, আমাদের সাথে মেলে। মেলে মানে লিলির অন্য বোনদের জামাই এর মতো, যারা ভাল চাকরি করে যাদের বাড়ি গাড়ি আছে।

লিলি কিছুই লুকায়নি, সবই তাকে বলেছে। আর সেও পণ করেছে উপযুক্ত হয়েই লিলিকে বিয়ে করবে। ইউনিভার্সিটিতে ঢুকতে পরলে তা প্রমাণ হতো কিন্তু সে সম্ভবনা খুন হয়েছে। যে খুন করেছে তাকে সে চেনে। সে তার প্রেম। লিলির প্রেম তাকে ক্লাস-লাইব্রেরি থেকে টেনে পার্কে-রেস্তরাঁয় প্রকাশ্যে খুন করেছে। তাই খারাপ রেজাল্ট নিয়ে তার কোনো আফসোস নাই বরং এই ভেবেই সে সুখ পায়, লিলির জন্য এই রকম খুন সে বারবার হতে চায়।

কিন্তু এখন প্রেমের চেয়ে উপযুক্ত হওয়া অনেক বেশি জরুরি, আর এই উপযুক্ত হওয়া মানে একাটা ভাল চাকরি। বিসিএস ছিল ভরসা তা সে পরীক্ষা এখন হচ্ছে না, আর হলেও কবে রেজাল্ট দিবে কিছুই নিশ্চিত না। তাই সে অন্য একাটা ভাল চাকরির চেষ্টা করছে। একটার পর একটা ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তদ্বির করলে হয়ত কিছু হয় কিন্তু সেই কাজটাও সে করতে পারছে না। তদ্বির করতে আত্মীয়স্বজন, টাকাপয়সা অথবা মাস্তানি কিছু তো লাগেই, তার এই সবের একটাও নাই, তাহলে হবে কী ভাবে, কাজেই হয় না। তবে আছে বলতে তার এক মন, যার কোনো মূল্য নাই। এই মূল্যহীন মনই লিলিকে পাগলের মতো ভালবাসে। সমস্ত সত্তায় তাকে ধারণ করে, আর মেঘে মেঘে উড়ে উড়ে তার সাথে কথা বলে। লিলি এইসব জেনে মজা পায়, বাউরি বাতাসের মতো হেসে হেসে দোল খায় কিন্তু সিরিয়াস হয় না। লিলির জন্য সে সব কিছু করতে পারে কিন্তু সেই পারার কী-ই-বা মূল্য, যদি না থাকে যুতসই একটা চাকরি।

আজ তার লিলির সাথে দেখা হবে। আজ লিলি ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তার সাথে ঘুরে বেড়াবে। সকাল থেকে ভেবে সে ঠিক করতে পারছে না, দেখা হলে স্বপ্নের কথা লিলিকে বলবে কিনা। বললে লিলি কীভাবে নিবে সেই মাপজোক সে করতে পারছে না।

লোকে বলে স্বপ্নে হাতি দেখা ধনী হবার লক্ষণ। আর হাতির রোস্ট তার মানে তো মহা ধনীর লক্ষণ। লিলির কি তবে মহা ধনী কোনো ছেলের সাথে বিয়ে হব! তা তো হতেই পারে। তার বাবা ধনী তাদের আত্মীয়স্বজন হোমড়াচোমড়া কাজেই হওয়া তো বিচিত্র কিছু না। আর সে সম্ভবনা নিয়ে তো লুকোচুরির কিছু নাই। আজকাল দেখা হলে লিলি সরাসরিই জিজ্ঞাসা করে, কি তোমার কিছু হলো? না হলে তো ঘোরাঘুরি করে লাভ নাই। খামাখা তোমার কষ্ট আর আমারও কষ্ট। দেখ তাড়াতাড়ি কিছু করতে পার কিনা। আমার তো প্রপোজাল আসছে। ঠেকাব কেমনে? তোমার তো কিছুই নাই। কিছু করতেও তো পারছো না। এই অবস্থায় স্বপ্নের কথা বলাটা ঠিক হবে কিনা সে বুঝে উঠতে পারছে না। একবার মনে হচ্ছে, শুনে তো লিলি আনন্দিতই হবে। সেতো তাইই চায়। তার আর বোনরা যেমন সে তো তাদের মতই হতে চায়। আবার ভাবল বললে কী! স্বপ্নের আবার কী মানে! লোকে তো কত কথাই বলে, স্বপ্ন নিয়ে কত কিচ্ছা কাহিনীই তো আছে, তা কি সবই ঠিক। তখন ভাবনা এলো লিলি যদি এই রকম না ভাবে, যদি ভাবে হাতির স্বপ্ন- হাতির রোস্টের স্বপ্ন তার মানে ভীষণ বড় ঘরে তার বিয়ে। এতো সেই ইঙ্গিত। তা হলে কি দরকার তার মতো চালচুলাহীন বেকারের সাথে তাল দেওয়া।

ভাবতে ভাবতে সবকিছু একেবারে জট পাকিয়ে গেল। ঠিক এই সময় লিলি এসে তার সামনে দাঁড়াল। আর কি আশ্চর্য লিলিকে দেখা মাত্র সে গরগর করে স্বপ্নের কথা বলে হাসতে লাগল। শুনে লিলি একটু সময়ের জন্য গম্ভীর হয়ে গেল তারপর হঠাৎ শব্দ করে হেসে বলল, তাই আমার বিয়েতে হাতির রোস্ট খাওয়ানো হবে। দারুণ ব্যাপার, তোমার মুখে ফুল চন্দন পড়ুক। লিলি হো হো হো করে হাসতে লাগলো। হাসির দমকে চোখে জল এসে গেল। সেই জলের দিকে সে ম্লান তাকিয়ে রইল। লিলি একবারও তা লক্ষ্য করল না। তার আনন্দ আর ধরে না, সে ওড়না উড়িয়ে সিনেমার নায়িকাদের মতো নেচে নেচে বিয়ের গান গাইতে লাগল। হঠাৎ গান থামিয়ে বলল, জানো আমার দাদী কী বলতো, বলতো তোর বর আসবে হাতিতে চড়ে। আমাকে হাতির পিঠে চড়িয়ে নিয়ে যাবে শ^শুরবাড়ি। আহা আজ যদি সে বেঁচে থাকতো কী খুশিই যে হতো! লিলির সুখ-দুঃখের এই অবস্থানে তার নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগতে লাগল। সে দূরে দৃষ্টি ভাসিয়ে বোজা কণ্ঠে বলল, তা হলে তুমি চাও তোমার ওই রকম বিয়ে হোক।

চাই মানে! ওই রকমই তো চাই! ভীষণ বড়লোক। যারা হাতিতে চড়ে বেড়ায়, হাতির রোস্ট খায়। লিলি হো হো করে হাসতে লাগল। হাসি শুনে তার ভেজা মনটা শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেল। সে বোকার মতো হা করে তার দিকে চেয়ে রইল। দেখে লিলি আরও জোরে জোর হাসতে লাগল। তখন সে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে দুঃখ আড়াল করে বাঁচতে চাইল।

একটু পরে লিলি নিজেই থামল তারপর একটু দম নিয়ে বলল, তুমি দেখছি সিরিয়াস হয়ে গেছ। শোন দাদীর কাছে শুনেছি স্বপ্ন যদি বলা যায় তা হলে তা আর ফলে না। এই জন্য স্বপ্ন দেখলে কাউকে বলতে হয় না, এই যে তুমি আমাকে বললে কাজেই তা আর ফলবে না। আহা বলে তুমি বরযাত্রীদের হাতির রোস্ট থেকে বঞ্চিত করলে। লিলি আরও জোরে হোহো করে হাসতে লাগল। সেও নিজেকে হাল্কা করতে হাতির রোস্ট নিয়ে হাসতে চাইল কিন্তু কেন জানি তা সে পারল না। লিলির হাসির প্রান্ত ছুঁয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করতে গিয়ে একেবারে নাজেহাল হয়ে গেল। তার এই হাল দেখে লিলির বড় মায়া হলো তাই হাসি থামিয়ে বলল, শোন অত সিরিয়াস হচ্ছো কেন! এই রকম একটা উদ্ভট স্বপ্নের জন্য এতো মন খারাপ করছ কেন?

মন খারাপ করবো না। সিরিয়াস হবো না।

না হবে না। লিলির কণ্ঠ দৃঢ় শোনাল।

তুমি কি ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝতে পারছো?

বুঝবো না কেন! না বোঝার কী আছে? তোমার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে না, আমার বিয়ে হচ্ছে ভীষণ বড়লোকের সাথে, যারা হাতির রোস্ট খায়। হো হো করে লিলি আবার হাসতে লাগলো।

তোমার হাসি পাচ্ছে, আনন্দ হচ্ছে?

হবে না! এতো আনন্দই কথা।

আনন্দেই কথা!

তার কণ্ঠ বুঝে আসতে চাইলো। সেই বোজা কণ্ঠের বাষ্প সরিয়ে সে জানতে চাইল, তা হলে আমাদের এই প্রেম এই ভালবাসা!

তাতো জানি না! তাইতো কী হবে এই প্রেমের? লিলি নিজের প্রশ্নে নিজেই ভীষণ অবাক হয়ে তার মুখের উপর স্থির তাকিয়ে হঠাৎ তেমনি হো হো করে হাসতে হাসতে বলল, বিশ্বাস কর তোমার এই সিরিয়াসনেস দেখে হাসি চেপে রাখতে পারছি না। কী করব বলো?

কী করবে?

সে গম্ভীর হয়ে খানিকক্ষণ ভাবল, তারপর লিলির চোখের তারায় ছায়া ফেলে বলল, আমি কী শুনেছি জানো?

কী শুনেছো। লিলিকে সিরিয়াস দেখাল।

শুনেছি, স্বপ্নে যা দেখা যায় যদি তাই তাই করা হয়, তবে সে স্বপ্ন আর ফলে না। যেমন ধর এই যে হাতি দেখলাম এখন যদি হাতি দর্শন করা যায় তা হলে আর তা ফলবে না।

তাই! ইন্টারিস্টিং। কে বলেছে তোমার দাদী?

সে একট লজ্জা পেয়ে সাথে সাথে বলল, না না আমার দাদী না। সবাই বলে। সবাই জানে। কেন তুমি শোন নাই কখনও। এতো একেবারে পরীক্ষিত। অব্যর্থ তরিকা।

অব্যর্থ তরিকা!

ঠিক তাই। যাবে?

কোথায়?

চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানায় হাতি আছে। চল হাতির পিঠে চড়ে আজ সারাদিন আমরা ঘুরবো। শুধু দর্শন নয়, একেবারে নেড়েচেড়ে দেখব। দর্শনে স্পর্শে স্বপ্নের গুষ্টি শেষ। একেবারে নির্বিষ। চল উঠি।

চিড়িয়াখানা আধা ঘণ্টার পথ, এই আধা ঘণ্টার পথ যেতে যেতেই লিলি একেবারে নিস্তেজ নিশ্চুপ হয়ে গেল। এতক্ষণের সেই খলবলে হাসির ভাবটা কোথায় যেন হারিয়ে গলে। সারা গাড়িতে কেমন করবের নিস্তব্ধতা নেমে এলো। সে এই নিস্তব্ধতা ভাংতে তার ভালবাসা, সেই প্রেক্ষিতে চাকরি জোগাড় কারার প্রাণান্ত চেষ্টার করুণ কাহিনী ধীর লয়ে বলে যেতে লাগল। লিলি একটা কথাও না বলে পলকহীন শুনতে শুনতে হতাশ কণ্ঠে জানতে চাইলো, কী মনে হয় হবে তোমার চাকরি? পারবে কিছু করতে? লিলির এই প্রশ্নে তার চোখে জল চলে এলো। সে উত্তর না দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

গাড়ি চিড়িয়াখানায় পৌঁছালে সে নেমে টিকিট কাটার জন্য কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেল। লিলি আস্তেধীরে নেমে গাড়িতে হেলান দিয়ে নিস্তেজ দাঁড়িয়ে রইল, এগুবার কোন লক্ষণই দেখালো না। মিনিট দশেক পর সারা মুখে অন্ধকার ধরে সে ফিরে এলো।

কী হলো। কোন সমস্যা।

না সমস্যা না। আজা ছুটির দিন। চিড়িয়াখানা বন্ধ।

বন্ধ!

শুনে সাথে সাথে এতক্ষণের ঝিমিয়ে পড়া নিস্তেজ লিলি প্রাণ ফিরে পেল। হো হো করে হাসতে লাগল। মনে হলো লুকানো আনন্দটা হঠাৎই ছিঁড়েফুঁড়ে দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়ল।

ছবি

ওবায়েদ আকাশের বাছাই ৩২ কবিতা

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

দেহাবশেষ

ছবি

যাদুবাস্তবতা ও ইলিয়াসের যোগাযোগ

ছবি

বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা

ছবি

মিহির মুসাকীর কবিতা

ছবি

শুশ্রƒষার আশ্রয়ঘর

ছবি

সময়োত্তরের কবি

ছবি

নাট্যকার অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৪

ছবি

মহত্ত্বম অনুভবে রবিউল হুসাইন

‘লাল গহনা’ উপন্যাসে বিষয়ের গভীরতা

ছবি

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

মোহিত কামাল

ছবি

আশরাফ আহমদের কবিতা

ছবি

‘আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে আমাদেরই আগ্রহ নেই’

ছবি

ছোটগল্পের অনন্যস্বর হাসান আজিজুল হক

‘দীপান্বিত গুরুকুল’

ছবি

নাসির আহমেদের কবিতা

ছবি

শেষ থেকে শুরু

সাময়িকী কবিতা

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

রবীন্দ্রবোধন

ছবি

বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি হয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রাম

ছবি

হাফিজ রশিদ খানের নির্বাচিত কবিতা আদিবাসীপর্ব

ছবি

আনন্দধাম

ছবি

কান্নার কুসুমে চিত্রিত ‘ধূসরযাত্রা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ফারুক মাহমুদের কবিতা

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ও তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আসমানী’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

পরিবেশ-সাহিত্যের নিরলস কলমযোদ্ধা

ছবি

আব্দুলরাজাক গুনরাহর সাহিত্যচিন্তা

ছবি

অমিতাভ ঘোষের ‘গান আইল্যান্ড’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

tab

সাময়িকী

স্বপ্নের হাতি

সানোয়ার মনি

চিত্র : ইন্টারনেট

বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১

স্বপ্নে কত কী হয়! না হলে এই রকম স্বপ্ন কেন সে দেখবে। এই রকম তো সে কখনও ভাবেওনি। আর তাছাড়া পেটও গরম হয়নি যে এই রকম উদ্ভট একটা স্বপ্ন সে দেখবে। সে দেখল লিলিদের বাসার সামনে মস্ত এক হাতি। আর হাতিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে শ’খানেক লোক। লিলি তার প্রেমিকা। প্রায় বছর খানেক ধরে তারা প্রেম করছে। বিয়েসাদীর সম্ভাবনা আছে। সেই সূত্রেই মাঝে মাঝে হালকাপাতলা যাতায়াত। হাতির সামনে দাঁড়াতেই কে একজন এগিয়ে এলো, তাকে সে কোনোদিন দেখেছে বলে মনে করতে পারলো না, কিন্তু লোকটির ভাবখানা ভারি চেনা চেনা, তাই একেবারে গা ঘেঁষে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞাসা করল,

কেমন দেখছেন? কনতো কয় মন ঘি লাগবো।

ঘি! কিসের ঘি! সে বিস্মিত।

বোঝেন নাই! ঘি ছাড়া রোস্ট হয়! আমার তো মনে হয় দশ মন লাগবোই।

কিসের রোস্ট।

হাতির। দেখেন না আপনার চক্ষের উপর খাড়ায় রইছে।

হাতি! এই হাতির রোস্ট হবে! বিস্ময়ে তার ঘোর লাগে। কিন্তু সেই ঘোর একেবারে ফিকে হয়ে গেল, যখন সে শুনলো আগামীকাল লিলির বিয়ে, বরেরা বনেদী জমিদার, বিশাল ধনী, তাদের মান রাখতেই এই ব্যবস্থা। মানে হাতির রোস্ট খাওয়ানো হবে বরযাত্রীদের। হাতির রোস্ট সে কোনোদিন খায়নি, আদতে হাতির রোস্ট হয় কিনা তাও সে জানে না, কিন্তু এই জানাজানিতে তার কিছুই যায় আসে না। কারণ তখন তার ভাবনায় শুধুই লিলি, লিলির যদি অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যায়, তা হলে সে কী করবে! কাকে নিয়ে ভাববে! কাকে নিয়ে বাঁচবে! এই সময় হাতি গা-ঝাড়া দিয়ে নড়েচড়ে উঠল, লোকজন পড়িমরি শব্দ তুলে ছোটাছুটি শুরু করল, একজন এসে তার গায়ের উপর পড়ল আর তাতেই তার ঘুম ভেংগে গেল।

রাতের স্বপ্ন দিনে হারায়, বেশিরভাগ সময় কিছুই মনে থাকে না কিন্তু এই স্বপ্ন তার মনে লেপে গেল। সারা সকাল এই নিয়েই সে ভাবতে লাগল। লিলি তাকে ভালবাসে এই বিশ্বাস তার আছে, কিন্তু তার বাড়ির লোকজন বিষয়টা ঠিক রিকগ্নাইজ করতে চায় না। তারা নাজানা-নাদেখা ভাসা ভাসা একাটা ভাব ধরে আছে। এটুকু যে এলাও করছে তার কারণ সে ভাল ছাত্র। এই ভাল ছাত্রের কারণেই লিলির মা বিষয়টা এলাও করেছিলেন। বসিয়ে গল্পগুজব করে চা-নাস্তাও খাইয়েছিলেন। ছেলে অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে। আশা মাস্টার্সেও পাবে। পেলে ইউনিভার্সিটিতে ঢুকে পড়বে। ইউনিভার্সিটির শিক্ষক, জামাই হিসবে মন্দ না। এই রকম একটা হিসাব তিনি করেছিলেন। কিন্তু শেষে সেই হিসাব মিলল না মাস্টার্সে সে ভাল করতে পারল না, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার সম্ভবনা জিরো হয়ে গেল।

এখন লিলির মাকে দেখলে তার বুক শুকিয়ে যায়। মনে হয় মুখখানা শানের মতো জমে আছে চোখ দিয়ে গরম হাওয়া বের হচ্ছে। সেই গরম হাওয়া তাকে পুড়িয়ে মারছে না। তার কারণ ভাল ছাত্র হিসাবে এখনও কিছু সম্ভবনা তার আছে। বিসিএস অথবা একটা ভাল চাকরি সে চেষ্টা করলে পেতেই পারে। কিন্তু যতক্ষণ না হচ্ছে ততক্ষণ ভাসা ভাসা ভাবটা তারা ত্যাগ করতে চাইছেন না, তার কারণ তার যোগ্যতা বলতে যা কিছু তা ওই ভাল ছাত্র টুকুতেই। ঘরবাড়ি টাকা-পয়সায় জোর নাই, পিতার ছোটখাটো ব্যবসা, সামান্য জমিজমা, মামুলি আত্মীয়স্বজন।

একটা ভাল চাকরি পাবার সম্ভবনা তার আছে। যদি সে একাটা ভাল চাকরি পায় তাহলে তাদের আর কোনো আপত্তি নাই। তখন ঢাকঢোল পিটিয়েই বিয়ে দিবে, আর যদি তা না হয় তা হলে কোনো আশাই নাই। আর আশা নাই মানে আক্ষরিক অর্থেই আশা নাই। পালিয়ে অথবা কোট মেরেজ এইসব বাহাদুরির কোনো সুযোগই নাই। লিলির ভাই-দুলাভাইয়েরা সব বড় বড় আমলা, বেচাল দেখলে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে, হাত পা ভেংগে জেলে পুরে দিবে। সে তা জানে তাই এই রাস্তায় হাঁটতে ভয় পায়। তবে তেমন দরকার হলে সাহস যে সে দেখাবে না তা নয়, কিন্তু লিলিই তা চায় না। পরিবারের মুখে চুনকালি মাখাতে সে রাজি নয়। আর কেনইবা রাজি হবে, পরিবার তো তাকে না করেনি, মেলামেশায় বাঁধা দেয়নি। শুধু বলেছে, ছেলে যেন উপযুক্ত হয়, আমাদের সাথে মেলে। মেলে মানে লিলির অন্য বোনদের জামাই এর মতো, যারা ভাল চাকরি করে যাদের বাড়ি গাড়ি আছে।

লিলি কিছুই লুকায়নি, সবই তাকে বলেছে। আর সেও পণ করেছে উপযুক্ত হয়েই লিলিকে বিয়ে করবে। ইউনিভার্সিটিতে ঢুকতে পরলে তা প্রমাণ হতো কিন্তু সে সম্ভবনা খুন হয়েছে। যে খুন করেছে তাকে সে চেনে। সে তার প্রেম। লিলির প্রেম তাকে ক্লাস-লাইব্রেরি থেকে টেনে পার্কে-রেস্তরাঁয় প্রকাশ্যে খুন করেছে। তাই খারাপ রেজাল্ট নিয়ে তার কোনো আফসোস নাই বরং এই ভেবেই সে সুখ পায়, লিলির জন্য এই রকম খুন সে বারবার হতে চায়।

কিন্তু এখন প্রেমের চেয়ে উপযুক্ত হওয়া অনেক বেশি জরুরি, আর এই উপযুক্ত হওয়া মানে একাটা ভাল চাকরি। বিসিএস ছিল ভরসা তা সে পরীক্ষা এখন হচ্ছে না, আর হলেও কবে রেজাল্ট দিবে কিছুই নিশ্চিত না। তাই সে অন্য একাটা ভাল চাকরির চেষ্টা করছে। একটার পর একটা ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তদ্বির করলে হয়ত কিছু হয় কিন্তু সেই কাজটাও সে করতে পারছে না। তদ্বির করতে আত্মীয়স্বজন, টাকাপয়সা অথবা মাস্তানি কিছু তো লাগেই, তার এই সবের একটাও নাই, তাহলে হবে কী ভাবে, কাজেই হয় না। তবে আছে বলতে তার এক মন, যার কোনো মূল্য নাই। এই মূল্যহীন মনই লিলিকে পাগলের মতো ভালবাসে। সমস্ত সত্তায় তাকে ধারণ করে, আর মেঘে মেঘে উড়ে উড়ে তার সাথে কথা বলে। লিলি এইসব জেনে মজা পায়, বাউরি বাতাসের মতো হেসে হেসে দোল খায় কিন্তু সিরিয়াস হয় না। লিলির জন্য সে সব কিছু করতে পারে কিন্তু সেই পারার কী-ই-বা মূল্য, যদি না থাকে যুতসই একটা চাকরি।

আজ তার লিলির সাথে দেখা হবে। আজ লিলি ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তার সাথে ঘুরে বেড়াবে। সকাল থেকে ভেবে সে ঠিক করতে পারছে না, দেখা হলে স্বপ্নের কথা লিলিকে বলবে কিনা। বললে লিলি কীভাবে নিবে সেই মাপজোক সে করতে পারছে না।

লোকে বলে স্বপ্নে হাতি দেখা ধনী হবার লক্ষণ। আর হাতির রোস্ট তার মানে তো মহা ধনীর লক্ষণ। লিলির কি তবে মহা ধনী কোনো ছেলের সাথে বিয়ে হব! তা তো হতেই পারে। তার বাবা ধনী তাদের আত্মীয়স্বজন হোমড়াচোমড়া কাজেই হওয়া তো বিচিত্র কিছু না। আর সে সম্ভবনা নিয়ে তো লুকোচুরির কিছু নাই। আজকাল দেখা হলে লিলি সরাসরিই জিজ্ঞাসা করে, কি তোমার কিছু হলো? না হলে তো ঘোরাঘুরি করে লাভ নাই। খামাখা তোমার কষ্ট আর আমারও কষ্ট। দেখ তাড়াতাড়ি কিছু করতে পার কিনা। আমার তো প্রপোজাল আসছে। ঠেকাব কেমনে? তোমার তো কিছুই নাই। কিছু করতেও তো পারছো না। এই অবস্থায় স্বপ্নের কথা বলাটা ঠিক হবে কিনা সে বুঝে উঠতে পারছে না। একবার মনে হচ্ছে, শুনে তো লিলি আনন্দিতই হবে। সেতো তাইই চায়। তার আর বোনরা যেমন সে তো তাদের মতই হতে চায়। আবার ভাবল বললে কী! স্বপ্নের আবার কী মানে! লোকে তো কত কথাই বলে, স্বপ্ন নিয়ে কত কিচ্ছা কাহিনীই তো আছে, তা কি সবই ঠিক। তখন ভাবনা এলো লিলি যদি এই রকম না ভাবে, যদি ভাবে হাতির স্বপ্ন- হাতির রোস্টের স্বপ্ন তার মানে ভীষণ বড় ঘরে তার বিয়ে। এতো সেই ইঙ্গিত। তা হলে কি দরকার তার মতো চালচুলাহীন বেকারের সাথে তাল দেওয়া।

ভাবতে ভাবতে সবকিছু একেবারে জট পাকিয়ে গেল। ঠিক এই সময় লিলি এসে তার সামনে দাঁড়াল। আর কি আশ্চর্য লিলিকে দেখা মাত্র সে গরগর করে স্বপ্নের কথা বলে হাসতে লাগল। শুনে লিলি একটু সময়ের জন্য গম্ভীর হয়ে গেল তারপর হঠাৎ শব্দ করে হেসে বলল, তাই আমার বিয়েতে হাতির রোস্ট খাওয়ানো হবে। দারুণ ব্যাপার, তোমার মুখে ফুল চন্দন পড়ুক। লিলি হো হো হো করে হাসতে লাগলো। হাসির দমকে চোখে জল এসে গেল। সেই জলের দিকে সে ম্লান তাকিয়ে রইল। লিলি একবারও তা লক্ষ্য করল না। তার আনন্দ আর ধরে না, সে ওড়না উড়িয়ে সিনেমার নায়িকাদের মতো নেচে নেচে বিয়ের গান গাইতে লাগল। হঠাৎ গান থামিয়ে বলল, জানো আমার দাদী কী বলতো, বলতো তোর বর আসবে হাতিতে চড়ে। আমাকে হাতির পিঠে চড়িয়ে নিয়ে যাবে শ^শুরবাড়ি। আহা আজ যদি সে বেঁচে থাকতো কী খুশিই যে হতো! লিলির সুখ-দুঃখের এই অবস্থানে তার নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগতে লাগল। সে দূরে দৃষ্টি ভাসিয়ে বোজা কণ্ঠে বলল, তা হলে তুমি চাও তোমার ওই রকম বিয়ে হোক।

চাই মানে! ওই রকমই তো চাই! ভীষণ বড়লোক। যারা হাতিতে চড়ে বেড়ায়, হাতির রোস্ট খায়। লিলি হো হো করে হাসতে লাগল। হাসি শুনে তার ভেজা মনটা শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেল। সে বোকার মতো হা করে তার দিকে চেয়ে রইল। দেখে লিলি আরও জোরে জোর হাসতে লাগল। তখন সে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে দুঃখ আড়াল করে বাঁচতে চাইল।

একটু পরে লিলি নিজেই থামল তারপর একটু দম নিয়ে বলল, তুমি দেখছি সিরিয়াস হয়ে গেছ। শোন দাদীর কাছে শুনেছি স্বপ্ন যদি বলা যায় তা হলে তা আর ফলে না। এই জন্য স্বপ্ন দেখলে কাউকে বলতে হয় না, এই যে তুমি আমাকে বললে কাজেই তা আর ফলবে না। আহা বলে তুমি বরযাত্রীদের হাতির রোস্ট থেকে বঞ্চিত করলে। লিলি আরও জোরে হোহো করে হাসতে লাগল। সেও নিজেকে হাল্কা করতে হাতির রোস্ট নিয়ে হাসতে চাইল কিন্তু কেন জানি তা সে পারল না। লিলির হাসির প্রান্ত ছুঁয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করতে গিয়ে একেবারে নাজেহাল হয়ে গেল। তার এই হাল দেখে লিলির বড় মায়া হলো তাই হাসি থামিয়ে বলল, শোন অত সিরিয়াস হচ্ছো কেন! এই রকম একটা উদ্ভট স্বপ্নের জন্য এতো মন খারাপ করছ কেন?

মন খারাপ করবো না। সিরিয়াস হবো না।

না হবে না। লিলির কণ্ঠ দৃঢ় শোনাল।

তুমি কি ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝতে পারছো?

বুঝবো না কেন! না বোঝার কী আছে? তোমার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে না, আমার বিয়ে হচ্ছে ভীষণ বড়লোকের সাথে, যারা হাতির রোস্ট খায়। হো হো করে লিলি আবার হাসতে লাগলো।

তোমার হাসি পাচ্ছে, আনন্দ হচ্ছে?

হবে না! এতো আনন্দই কথা।

আনন্দেই কথা!

তার কণ্ঠ বুঝে আসতে চাইলো। সেই বোজা কণ্ঠের বাষ্প সরিয়ে সে জানতে চাইল, তা হলে আমাদের এই প্রেম এই ভালবাসা!

তাতো জানি না! তাইতো কী হবে এই প্রেমের? লিলি নিজের প্রশ্নে নিজেই ভীষণ অবাক হয়ে তার মুখের উপর স্থির তাকিয়ে হঠাৎ তেমনি হো হো করে হাসতে হাসতে বলল, বিশ্বাস কর তোমার এই সিরিয়াসনেস দেখে হাসি চেপে রাখতে পারছি না। কী করব বলো?

কী করবে?

সে গম্ভীর হয়ে খানিকক্ষণ ভাবল, তারপর লিলির চোখের তারায় ছায়া ফেলে বলল, আমি কী শুনেছি জানো?

কী শুনেছো। লিলিকে সিরিয়াস দেখাল।

শুনেছি, স্বপ্নে যা দেখা যায় যদি তাই তাই করা হয়, তবে সে স্বপ্ন আর ফলে না। যেমন ধর এই যে হাতি দেখলাম এখন যদি হাতি দর্শন করা যায় তা হলে আর তা ফলবে না।

তাই! ইন্টারিস্টিং। কে বলেছে তোমার দাদী?

সে একট লজ্জা পেয়ে সাথে সাথে বলল, না না আমার দাদী না। সবাই বলে। সবাই জানে। কেন তুমি শোন নাই কখনও। এতো একেবারে পরীক্ষিত। অব্যর্থ তরিকা।

অব্যর্থ তরিকা!

ঠিক তাই। যাবে?

কোথায়?

চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানায় হাতি আছে। চল হাতির পিঠে চড়ে আজ সারাদিন আমরা ঘুরবো। শুধু দর্শন নয়, একেবারে নেড়েচেড়ে দেখব। দর্শনে স্পর্শে স্বপ্নের গুষ্টি শেষ। একেবারে নির্বিষ। চল উঠি।

চিড়িয়াখানা আধা ঘণ্টার পথ, এই আধা ঘণ্টার পথ যেতে যেতেই লিলি একেবারে নিস্তেজ নিশ্চুপ হয়ে গেল। এতক্ষণের সেই খলবলে হাসির ভাবটা কোথায় যেন হারিয়ে গলে। সারা গাড়িতে কেমন করবের নিস্তব্ধতা নেমে এলো। সে এই নিস্তব্ধতা ভাংতে তার ভালবাসা, সেই প্রেক্ষিতে চাকরি জোগাড় কারার প্রাণান্ত চেষ্টার করুণ কাহিনী ধীর লয়ে বলে যেতে লাগল। লিলি একটা কথাও না বলে পলকহীন শুনতে শুনতে হতাশ কণ্ঠে জানতে চাইলো, কী মনে হয় হবে তোমার চাকরি? পারবে কিছু করতে? লিলির এই প্রশ্নে তার চোখে জল চলে এলো। সে উত্তর না দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

গাড়ি চিড়িয়াখানায় পৌঁছালে সে নেমে টিকিট কাটার জন্য কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেল। লিলি আস্তেধীরে নেমে গাড়িতে হেলান দিয়ে নিস্তেজ দাঁড়িয়ে রইল, এগুবার কোন লক্ষণই দেখালো না। মিনিট দশেক পর সারা মুখে অন্ধকার ধরে সে ফিরে এলো।

কী হলো। কোন সমস্যা।

না সমস্যা না। আজা ছুটির দিন। চিড়িয়াখানা বন্ধ।

বন্ধ!

শুনে সাথে সাথে এতক্ষণের ঝিমিয়ে পড়া নিস্তেজ লিলি প্রাণ ফিরে পেল। হো হো করে হাসতে লাগল। মনে হলো লুকানো আনন্দটা হঠাৎই ছিঁড়েফুঁড়ে দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়ল।

back to top