কঠোর লকডাউনের মধ্যে হঠাৎ শিল্পকারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা প্রচারিত হওয়ার পরপরই আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে কর্মমুখী হাজার-হাজার মানুষের ঢল নেমেছে। প্রায় সব বয়সী মানুষের চাপে এই দুইঘাটে তিল ধারণের জায়গা জায়গা নেই।
আজ শনিবার (৩১ জুলাই) ভোর হতেই কর্মমুখী মানুষের ঢল নামতে থাকে অরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে। দিন বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ভীড়ও বাড়তে থাকে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, ঢাকামুখী মানুষের ¯্রােত এবং সেই সাথে তাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের দৃশ্য।
গ্রামে অবস্থানরত মানুষ তাদের জীবিকার এক মাত্র অবলম্বন চাকুরি বাঁচাতে জীবনের ঝুকি নিয়ে ছুটছে কর্মস্থলের দিকে। শিল্প কারখানা খোলা হলেও গণপরিবহণ চালু করা হয়নি। এ কারণে সাধারণ ও খেটে খাওয়া অভাবি মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন।
‘একদিকে কারখানা খোলা অপরদিকে যাওয়ার জন্য কোন পরিবহণ নেই। এর চেয়ে চরম দুর্ভোগ আর কি হতে পারে’ - এমন করেই বলছিলেন পাবনা থেকে আরিচা আসা যাত্রী হাছান মাহমুদ। সরকারের এমন সিন্ধান্তে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
‘রাস্তায় চলাচলের জন্য কোন গণপরিবহণ না থাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের যেন কোন সীমা নেই।’ তিনি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেন একথা বলে।
উত্তরাঞ্চলের পাবনা, বেড়া, নাকালিয়া, সাথিয়া, কাজিরহাট, ঈশ্বরদী, কাশিনাথপুর, দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা, যশোর, ঝিনাইদহ, দৌলতপুর, রাজবাড়ী, গোয়ালন্দ, কুমারখালিসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হতে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে এসে ভিড় করে আছেন। কোন পরিবহণ না পেয়ে বেশীর ভাগ মানুষ গরুর ট্রাকে জনপ্রতি ৫শ’ টাকা ভাড়া দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। এছাড়াও সিএনজি, অটোরিক্সা, মটর সাইকেল, পিক-আপ ভ্যান, সাধারণ মালবাহী অটো ভ্যানসহ যে যেভাবে পারছেন ১০ থেকে ১৫ গুণ ভাড়া দিয়ে চাকুরি বাঁচাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন। দুই ঘাটে অবস্থানরত শতাধিক যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের শারিরীক, মানসিক ও আর্থিক দুর্ভোগের কথা।
সাথিয়া হতে ঢাকার পথে ধাবমান রেহেনা বেগম বলেছেন, “আমরা জানি আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত অফিস বন্ধ। কিন্তুু শুক্রবার হঠাৎ করে অফিস থেকে ফোন দিছে ১ তারিখে অফিসে না গেলে চাকুরি থাকবে ন।া কন কি করমু? সাথিয়া থেকে আরিচা ঘাট পর্যন্ত আসতে ৯শ’ টাকা লাগছে। এখন আরিচা থেকে সাভার যেতে ট্রাকে ৫শ’ আর সিএনজিতে ৮শ’ টাকা চায়। এমনিতেই জান বাচেনা তার পর ১শ’ টাকার ভাড়া ১হাজার টাকা। ‘আমাগো এখান মরণ ছাড়া গতি নাই”।
কুষ্টিয়া হতে আসা ছোহরাব হোসেন বলেন, “ভাই কুষ্টিয়া হতে ৫/৬ বার রিক্সা, ভ্যান, অটো বদল করে দৌলতদিয়া হয়ে ফেরিতে পাটুরিয়া ঘাটে এসেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে ১হাজার টাকা। এখন পাটুরিয়া থেকে পিক-আপে ঢাকার ভাড়া চায় ১হাজার টাকা। কন কেমনে বাচুম? এমনিতেই টাকা পয়সা সব শেষ। তার ওপর এই কষ্ট। এটা মড়ার পর খড়ার ঘা।”
রাজবাড়ী হতে আসা জুলেখা বেগম বলেন, “অফিসে যাওয়ার কোন গাড়ি না ছেড়ে অফিস খুললো। আমরা অফিসে যামু কেমনে কেউ ভাবলো না। এহন আমাদের কত কষ্ট। আমাগো কথা কেউ ভাবে না-রে ভাই।”
তার কান্না জড়িত আবেগঘন কথায় তার সাথে থাকা রহিমা বেগম আনোরা বেগম, সোলেমান, রহম আলী, সোবহানসহ অনেকেই সায় দিলেন। তারা বললেন,“ গরিবের কথা কেউ ভাবে নারে ভাই।”
আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট ঘুরে নারী, শিশু, কিশোর ও বৃদ্ধদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ দেখা যায়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে তারা ক্লান্ত। তার উপর ঘাটের আশের পাশের কোথাও খাবারের ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীরা আরো কাহিল হয়ে পড়েছেন। প্রকৃতির ডাকেও সারা দেওয়ার কোন ব্যবস্থা নাই। একদিকে চলতি পথে সাধারণ ও অসহায় মানুষের সীমাহিন দুর্ভোগ।
শনিবার, ৩১ জুলাই ২০২১
কঠোর লকডাউনের মধ্যে হঠাৎ শিল্পকারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা প্রচারিত হওয়ার পরপরই আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে কর্মমুখী হাজার-হাজার মানুষের ঢল নেমেছে। প্রায় সব বয়সী মানুষের চাপে এই দুইঘাটে তিল ধারণের জায়গা জায়গা নেই।
আজ শনিবার (৩১ জুলাই) ভোর হতেই কর্মমুখী মানুষের ঢল নামতে থাকে অরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে। দিন বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ভীড়ও বাড়তে থাকে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, ঢাকামুখী মানুষের ¯্রােত এবং সেই সাথে তাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের দৃশ্য।
গ্রামে অবস্থানরত মানুষ তাদের জীবিকার এক মাত্র অবলম্বন চাকুরি বাঁচাতে জীবনের ঝুকি নিয়ে ছুটছে কর্মস্থলের দিকে। শিল্প কারখানা খোলা হলেও গণপরিবহণ চালু করা হয়নি। এ কারণে সাধারণ ও খেটে খাওয়া অভাবি মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন।
‘একদিকে কারখানা খোলা অপরদিকে যাওয়ার জন্য কোন পরিবহণ নেই। এর চেয়ে চরম দুর্ভোগ আর কি হতে পারে’ - এমন করেই বলছিলেন পাবনা থেকে আরিচা আসা যাত্রী হাছান মাহমুদ। সরকারের এমন সিন্ধান্তে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
‘রাস্তায় চলাচলের জন্য কোন গণপরিবহণ না থাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের যেন কোন সীমা নেই।’ তিনি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেন একথা বলে।
উত্তরাঞ্চলের পাবনা, বেড়া, নাকালিয়া, সাথিয়া, কাজিরহাট, ঈশ্বরদী, কাশিনাথপুর, দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা, যশোর, ঝিনাইদহ, দৌলতপুর, রাজবাড়ী, গোয়ালন্দ, কুমারখালিসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হতে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে এসে ভিড় করে আছেন। কোন পরিবহণ না পেয়ে বেশীর ভাগ মানুষ গরুর ট্রাকে জনপ্রতি ৫শ’ টাকা ভাড়া দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। এছাড়াও সিএনজি, অটোরিক্সা, মটর সাইকেল, পিক-আপ ভ্যান, সাধারণ মালবাহী অটো ভ্যানসহ যে যেভাবে পারছেন ১০ থেকে ১৫ গুণ ভাড়া দিয়ে চাকুরি বাঁচাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন। দুই ঘাটে অবস্থানরত শতাধিক যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের শারিরীক, মানসিক ও আর্থিক দুর্ভোগের কথা।
সাথিয়া হতে ঢাকার পথে ধাবমান রেহেনা বেগম বলেছেন, “আমরা জানি আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত অফিস বন্ধ। কিন্তুু শুক্রবার হঠাৎ করে অফিস থেকে ফোন দিছে ১ তারিখে অফিসে না গেলে চাকুরি থাকবে ন।া কন কি করমু? সাথিয়া থেকে আরিচা ঘাট পর্যন্ত আসতে ৯শ’ টাকা লাগছে। এখন আরিচা থেকে সাভার যেতে ট্রাকে ৫শ’ আর সিএনজিতে ৮শ’ টাকা চায়। এমনিতেই জান বাচেনা তার পর ১শ’ টাকার ভাড়া ১হাজার টাকা। ‘আমাগো এখান মরণ ছাড়া গতি নাই”।
কুষ্টিয়া হতে আসা ছোহরাব হোসেন বলেন, “ভাই কুষ্টিয়া হতে ৫/৬ বার রিক্সা, ভ্যান, অটো বদল করে দৌলতদিয়া হয়ে ফেরিতে পাটুরিয়া ঘাটে এসেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে ১হাজার টাকা। এখন পাটুরিয়া থেকে পিক-আপে ঢাকার ভাড়া চায় ১হাজার টাকা। কন কেমনে বাচুম? এমনিতেই টাকা পয়সা সব শেষ। তার ওপর এই কষ্ট। এটা মড়ার পর খড়ার ঘা।”
রাজবাড়ী হতে আসা জুলেখা বেগম বলেন, “অফিসে যাওয়ার কোন গাড়ি না ছেড়ে অফিস খুললো। আমরা অফিসে যামু কেমনে কেউ ভাবলো না। এহন আমাদের কত কষ্ট। আমাগো কথা কেউ ভাবে না-রে ভাই।”
তার কান্না জড়িত আবেগঘন কথায় তার সাথে থাকা রহিমা বেগম আনোরা বেগম, সোলেমান, রহম আলী, সোবহানসহ অনেকেই সায় দিলেন। তারা বললেন,“ গরিবের কথা কেউ ভাবে নারে ভাই।”
আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট ঘুরে নারী, শিশু, কিশোর ও বৃদ্ধদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ দেখা যায়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে তারা ক্লান্ত। তার উপর ঘাটের আশের পাশের কোথাও খাবারের ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীরা আরো কাহিল হয়ে পড়েছেন। প্রকৃতির ডাকেও সারা দেওয়ার কোন ব্যবস্থা নাই। একদিকে চলতি পথে সাধারণ ও অসহায় মানুষের সীমাহিন দুর্ভোগ।