আগামী অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেট নিয়ে গতানুগতিক কৌশলের যে কথা উঠেছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, হঠাৎ করে অনেক সাহসী বাজেট দেয়া সম্ভব ছিল না।
তবে নানামুখী মূল্যায়নের প্রসঙ্গে এ-ও জুড়ে দিলেন, ‘কিছুটা গতানুগতিক আছে, কিন্তু, একেবারে যে ইনোভেশন নেই তা নয়। কিছু সাহসী পদক্ষেপও আছে ট্যাক্সের ব্যাপারে। আবার কিছু কিছু আর্থিক শৃঙ্খলাও আনতে চেষ্টা করেছি।’
মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
গত ২ জুন সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। সেখানে অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগ করে বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে সেজন্য পাঁচগুণ বেশি কর দিতে হবে।
এর সমালোচনা করে সিপিডি বলে, ‘এতে বৈধপথে উপার্জনকারীদের সঙ্গে বৈষম্য তৈরি হবে। তাছাড়া এই পদক্ষেপে সরকারের খুব বেশি আয় হবে বলে মনে হয় না।’
আর টিআইবি বলছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের এ উদ্যোগ রাষ্ট্রীয় সংস্কার, বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের বিপরীত। এই অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও সংবিধান পরিপন্থী।’
সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি না যে খুব ভালো জিনিস করে ফেলছি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অনেকের একটা প্রশ্ন যে কালো টাকা সাদা করতে দেয়া হলো কেন। কালো টাকা কিন্তু ঠিক কালো টাকা না। আমরা যেটা বলেছি যে, অপ্রদর্শিত টাকা, কোনো কারণে যদি আপনার কাছে থাকে, শুধু ফ্ল্যাটের ব্যাপারে একটা বিধান দেয়া হয়েছে।
‘দুটো দিক আছে। একটা নৈতিক দিক-কালো টাকা সাদা করা, আরেকটা হলো প্র্যাক্টিক্যাল দিকÑ টাকা-পয়সা আমরা ট্যাক্স পাব কিনা। দুই দিকেই কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে অবশ্যই কিছু সেটা আমরা বিবেচনা করব।’
পাচার হওয়া কালো টাকা ফিরিয়ে আনতে পারলে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিতে হতো না বলে মন্তব্য করেন অর্থ উপদেষ্টা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কালো টাকা ফিরিয়ে আনা খুব সহজ কিন্তু না। কারণ, যারা পাচার করে, তারা অত্যন্ত বুদ্ধিমান লোক। লেয়ারিং করে টাকা পাঠায়। এগুলো শনাক্ত করা হচ্ছে। ১২টা উল্লেখযোগ্য কেইস নেয়া হয়েছে, সময় লাগবে তবু কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।’
বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে লম্বা সময় লেগেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি যে এক-আধ বছর লাগতে পারে। প্রসেস শুরু হয়েছে। কালো টাকা পেলে বাজেট সাপোর্টটা হয়তো কম লাগত। আইএমএফের কাছে যেতে হতো না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেটা পারিনি।’
সংবাদ সম্মেলনে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেসময় দায়িত্ব নিয়েছি, ক্ষমতা নিইনি এবং দায়িত্বটা একটা কঠিন সময়ে, একটা চ্যালেঞ্জের মুখে নিয়েছি, দেশের একটা ক্রান্তিলগ্নে। অনেকেই বলছে, আইসিউতে ছিল দেশটা। একটা খাদের কিনারে চলে আসছিল।
‘সার্বিকভাবে আমি মনে করি, ভালো-মন্দ আছে; আমি মনে করি আমরা একটা জনবান্ধব, ব্যবসাবান্ধব বাজেট দিয়েছি। বাস্তবতা দেখতে হবে আপনাদের। অনেক চাহিদা থাকে, কিন্তু আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল বাজেটটা যেন বাস্তবমুখী হয়, বাস্তবায়নযোগ্য হয়।’
মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলে তোমরা তো আগের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছ। আগের ম্যাক্রো ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক আমরা ডিপার্চার করে নিয়ে গিয়ে দারুণ বিপ্লবী একটা বাজেট দিয়ে দেব, দারুণ রেভিনিউ আনব, এটা সম্ভব নয়।’
‘কিছুটা গতানুগতিক আছে, কিন্তু, একেবারে যে ইনোভেশন নেই তা নয়। কিছু সাহসী পদক্ষেপও আছে ট্যাক্সের ব্যাপারে। আবার কিছু কিছু আর্থিক শৃঙ্খলাও আনতে চেষ্টা করেছি।’
বাজেটে আরও সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা তো বাজেট দিয়েছি গতকাল, এটা ওপেন থাকবে কিছুদিন। কিছু কিছু জিনিস আছে, সাজেশন আসবে বিভিন্ন জায়গা থেকে। আমরা চেষ্টা করব সেগুলো আমলে নিতে।’
তিনি বলেন, ‘বাজেটের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো দেশে সবার জীবনযাপনকে আরও স্বচ্ছ করা মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা। সেজন্য আমরা সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ওপরও নজর দিয়েছি।
বাজেট বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘বাইরের প্রত্যেকটা দেশ, প্রত্যেকটা এজেন্সি বাংলাদেশ সম্পর্কে অত্যন্ত ইতিবাচক ধারণা তাদের। প্রত্যেকের ইতিবাচক মনোভাব। এই মনোভাবকে আরেকটু সুসংহত করার জন্য আমাদের ভেতরে যারা আছেন তারা যেন একটু সহযোগিতা করেন।’
‘কিন্তু, আমরা যদি নিজেদের বলি, খারাপ হচ্ছে, কিছুই হচ্ছে না। যাচ্ছেতাই হচ্ছে দেশ, বাইরে গিয়ে তখন আমাদের আগে সেগুলো ব্যাখ্যা করতে হয়। হ্যাঁ, ভিন্নমত থাকবে, কিন্তু দেশপ্রেম এবং দেশের মানুষের জন্য দরদ থাকলে কিছুটা সরকারকে সহযোগিতে করবেনÑ এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।’
বাজেটের সিংহভাগ ব্যয়ই ঋণের দায় মেটাতে: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানী ওসমসানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ ঋণের দায় মেটাতেই প্রস্তাবিত বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় হতে যাচ্ছে।
তিনি এও বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ঋণের ‘দুষ্ট চক্র’ থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। তিনি একথা বলেন।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘এ বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় চলে যাচ্ছে বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ঋণের দায় মেটাতে এবং তার সঙ্গে ভর্তুকি আছে, কৃষি ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি আছে; সেটা রাখতে হচ্ছে কারণ মূল্যস্ফীতিকেও আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে গত বছর দায়িত্বগ্রহণের আগে থেকেই আমরা পেয়েছি।
‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখবেন যে জ্বালানিতে বিদেশিদের পাওনা পুরোটা আমরা পরিশোধ করে দিয়ে এখন অন্তত স্থিতিবস্থায় এসেছি। আমরা আসলে যেটা চাচ্ছি, সেটা হলো- ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধের যে দুষ্ট চক্র, এটা থেকে বেরিয়ে আসার; এক বাজেটে হবে না, অন্তত শুরুটা যেন আমরা করে যেতে পারি।’
নতুন বাজেটকে সংজ্ঞায়িত করার প্রশ্নে অনেকেই দ্বিধাগ্রস্ত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেছেন, গতানুগতিক বাজেট, বড় কোনো চমক নাই। কৌশলগত বা কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন তারা দেখতে পাচ্ছে না।’
‘অন্তর্বর্তী সরকার যেটা বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছে, সেখান থেকে প্রত্যাশা করা হচ্ছিলÑ যেমন: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষার ব্যয় বরাদ্দ এগুলোর দিকে তাকানো হয়েছে। বৈষম্য কমানো এগুলোর জন্য আসলেই কি কিছু করেছি কিনা; এ বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে কিনা সংখ্যাগুলোর মধ্যে।’
‘এটা বুঝতে হবে বাজেট চলমান প্রক্রিয়া, এটা শূন্য থেকে শুরু হয় না। যেমন যে কর বিন্যাস এখনও আছে, এ কর ব্যবস্থার মধ্যে তো অনেক অসংগতি আছে, অনেক সামঞ্জস্যহীনতা আছে।’
একটি অসংগতি কমাতে গেলে আরেকটি অসংগতি দেখা দেয় মন্তব্য করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘একদম সুন্দর অবস্থা থেকে শুরু করলে তাত্ত্বিকভাবে আমরা সুন্দর একটা করনীতি করতে পারতাম। এখন তো আমরা একটা জায়গায় আছি, সেখান থেকে এদিক-ওদিক করতে হচ্ছে।’
উন্নয়ন বাজেটের প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘সমাপ্ত প্রায় অর্থবছর ও প্রস্তাবিত আগামী অর্থবছরের বাজেটে যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে, সেগুলোর প্রায় সবই পূর্ববর্তী সরকারের নেয়া প্রকল্প এবং চলমান প্রকল্প এগুলো।’
‘এর কারণ হলো যে, এগুলোর অধিকাংশই স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় অত্যধিক সংখ্যায় এইসব প্রকল্প আছে। এত বেশিসংখ্যক প্রকল্পের অর্থ সংস্থানও সে সময় বিবেচনা করা হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে ১১১৩টা প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ২০-৩০টি শুধু নতুন প্রকল্প। বাকিগুলো সবই চলমান, মানে আমাদের প্রকল্প না।’
ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ‘এই যে ২০-৩০টি নতুন প্রকল্প বললাম, এগুলোও কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী গত বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের নথিভুক্ত, যেটাকে বলে বরাদ্দহীনভাবে সবুজ পাতায় অন্তর্ভুক্ত করা, সেগুলোও ঠিক আমাদের প্রকল্প না।’
‘মোদ্দা কথা হলো, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এবং আগামী প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা যেটুকু বাস্তবায়ন করব, আমরা শুধু পূর্ববর্তী সরকারের নেয়া প্রকল্পগুলোর কাটছাঁট করছি, পুনর্বিন্যাস করছি, অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিচ্ছি এবং সম্ভব হলে দ্রুত সমাপ্ত করছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন হলো, একটা পুল নির্মাণ হচ্ছে বা রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে; এর মাঝখানে তো আমরা ওটাকে থামিয়ে দিয়ে কৌশলগতভাবে মানবসম্পদ উন্নয়নে নতুন প্রকল্প নিতে পারব না, ওটাকে শেষ না করলে তো অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতি।’
বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫
আগামী অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেট নিয়ে গতানুগতিক কৌশলের যে কথা উঠেছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, হঠাৎ করে অনেক সাহসী বাজেট দেয়া সম্ভব ছিল না।
তবে নানামুখী মূল্যায়নের প্রসঙ্গে এ-ও জুড়ে দিলেন, ‘কিছুটা গতানুগতিক আছে, কিন্তু, একেবারে যে ইনোভেশন নেই তা নয়। কিছু সাহসী পদক্ষেপও আছে ট্যাক্সের ব্যাপারে। আবার কিছু কিছু আর্থিক শৃঙ্খলাও আনতে চেষ্টা করেছি।’
মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
গত ২ জুন সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। সেখানে অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগ করে বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে সেজন্য পাঁচগুণ বেশি কর দিতে হবে।
এর সমালোচনা করে সিপিডি বলে, ‘এতে বৈধপথে উপার্জনকারীদের সঙ্গে বৈষম্য তৈরি হবে। তাছাড়া এই পদক্ষেপে সরকারের খুব বেশি আয় হবে বলে মনে হয় না।’
আর টিআইবি বলছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের এ উদ্যোগ রাষ্ট্রীয় সংস্কার, বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের বিপরীত। এই অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও সংবিধান পরিপন্থী।’
সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি না যে খুব ভালো জিনিস করে ফেলছি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অনেকের একটা প্রশ্ন যে কালো টাকা সাদা করতে দেয়া হলো কেন। কালো টাকা কিন্তু ঠিক কালো টাকা না। আমরা যেটা বলেছি যে, অপ্রদর্শিত টাকা, কোনো কারণে যদি আপনার কাছে থাকে, শুধু ফ্ল্যাটের ব্যাপারে একটা বিধান দেয়া হয়েছে।
‘দুটো দিক আছে। একটা নৈতিক দিক-কালো টাকা সাদা করা, আরেকটা হলো প্র্যাক্টিক্যাল দিকÑ টাকা-পয়সা আমরা ট্যাক্স পাব কিনা। দুই দিকেই কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে অবশ্যই কিছু সেটা আমরা বিবেচনা করব।’
পাচার হওয়া কালো টাকা ফিরিয়ে আনতে পারলে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিতে হতো না বলে মন্তব্য করেন অর্থ উপদেষ্টা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কালো টাকা ফিরিয়ে আনা খুব সহজ কিন্তু না। কারণ, যারা পাচার করে, তারা অত্যন্ত বুদ্ধিমান লোক। লেয়ারিং করে টাকা পাঠায়। এগুলো শনাক্ত করা হচ্ছে। ১২টা উল্লেখযোগ্য কেইস নেয়া হয়েছে, সময় লাগবে তবু কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।’
বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে লম্বা সময় লেগেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি যে এক-আধ বছর লাগতে পারে। প্রসেস শুরু হয়েছে। কালো টাকা পেলে বাজেট সাপোর্টটা হয়তো কম লাগত। আইএমএফের কাছে যেতে হতো না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেটা পারিনি।’
সংবাদ সম্মেলনে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেসময় দায়িত্ব নিয়েছি, ক্ষমতা নিইনি এবং দায়িত্বটা একটা কঠিন সময়ে, একটা চ্যালেঞ্জের মুখে নিয়েছি, দেশের একটা ক্রান্তিলগ্নে। অনেকেই বলছে, আইসিউতে ছিল দেশটা। একটা খাদের কিনারে চলে আসছিল।
‘সার্বিকভাবে আমি মনে করি, ভালো-মন্দ আছে; আমি মনে করি আমরা একটা জনবান্ধব, ব্যবসাবান্ধব বাজেট দিয়েছি। বাস্তবতা দেখতে হবে আপনাদের। অনেক চাহিদা থাকে, কিন্তু আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল বাজেটটা যেন বাস্তবমুখী হয়, বাস্তবায়নযোগ্য হয়।’
মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলে তোমরা তো আগের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছ। আগের ম্যাক্রো ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক আমরা ডিপার্চার করে নিয়ে গিয়ে দারুণ বিপ্লবী একটা বাজেট দিয়ে দেব, দারুণ রেভিনিউ আনব, এটা সম্ভব নয়।’
‘কিছুটা গতানুগতিক আছে, কিন্তু, একেবারে যে ইনোভেশন নেই তা নয়। কিছু সাহসী পদক্ষেপও আছে ট্যাক্সের ব্যাপারে। আবার কিছু কিছু আর্থিক শৃঙ্খলাও আনতে চেষ্টা করেছি।’
বাজেটে আরও সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা তো বাজেট দিয়েছি গতকাল, এটা ওপেন থাকবে কিছুদিন। কিছু কিছু জিনিস আছে, সাজেশন আসবে বিভিন্ন জায়গা থেকে। আমরা চেষ্টা করব সেগুলো আমলে নিতে।’
তিনি বলেন, ‘বাজেটের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো দেশে সবার জীবনযাপনকে আরও স্বচ্ছ করা মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা। সেজন্য আমরা সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ওপরও নজর দিয়েছি।
বাজেট বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘বাইরের প্রত্যেকটা দেশ, প্রত্যেকটা এজেন্সি বাংলাদেশ সম্পর্কে অত্যন্ত ইতিবাচক ধারণা তাদের। প্রত্যেকের ইতিবাচক মনোভাব। এই মনোভাবকে আরেকটু সুসংহত করার জন্য আমাদের ভেতরে যারা আছেন তারা যেন একটু সহযোগিতা করেন।’
‘কিন্তু, আমরা যদি নিজেদের বলি, খারাপ হচ্ছে, কিছুই হচ্ছে না। যাচ্ছেতাই হচ্ছে দেশ, বাইরে গিয়ে তখন আমাদের আগে সেগুলো ব্যাখ্যা করতে হয়। হ্যাঁ, ভিন্নমত থাকবে, কিন্তু দেশপ্রেম এবং দেশের মানুষের জন্য দরদ থাকলে কিছুটা সরকারকে সহযোগিতে করবেনÑ এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।’
বাজেটের সিংহভাগ ব্যয়ই ঋণের দায় মেটাতে: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানী ওসমসানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ ঋণের দায় মেটাতেই প্রস্তাবিত বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় হতে যাচ্ছে।
তিনি এও বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ঋণের ‘দুষ্ট চক্র’ থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। তিনি একথা বলেন।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘এ বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় চলে যাচ্ছে বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ঋণের দায় মেটাতে এবং তার সঙ্গে ভর্তুকি আছে, কৃষি ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি আছে; সেটা রাখতে হচ্ছে কারণ মূল্যস্ফীতিকেও আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে গত বছর দায়িত্বগ্রহণের আগে থেকেই আমরা পেয়েছি।
‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখবেন যে জ্বালানিতে বিদেশিদের পাওনা পুরোটা আমরা পরিশোধ করে দিয়ে এখন অন্তত স্থিতিবস্থায় এসেছি। আমরা আসলে যেটা চাচ্ছি, সেটা হলো- ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধের যে দুষ্ট চক্র, এটা থেকে বেরিয়ে আসার; এক বাজেটে হবে না, অন্তত শুরুটা যেন আমরা করে যেতে পারি।’
নতুন বাজেটকে সংজ্ঞায়িত করার প্রশ্নে অনেকেই দ্বিধাগ্রস্ত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেছেন, গতানুগতিক বাজেট, বড় কোনো চমক নাই। কৌশলগত বা কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন তারা দেখতে পাচ্ছে না।’
‘অন্তর্বর্তী সরকার যেটা বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছে, সেখান থেকে প্রত্যাশা করা হচ্ছিলÑ যেমন: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষার ব্যয় বরাদ্দ এগুলোর দিকে তাকানো হয়েছে। বৈষম্য কমানো এগুলোর জন্য আসলেই কি কিছু করেছি কিনা; এ বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে কিনা সংখ্যাগুলোর মধ্যে।’
‘এটা বুঝতে হবে বাজেট চলমান প্রক্রিয়া, এটা শূন্য থেকে শুরু হয় না। যেমন যে কর বিন্যাস এখনও আছে, এ কর ব্যবস্থার মধ্যে তো অনেক অসংগতি আছে, অনেক সামঞ্জস্যহীনতা আছে।’
একটি অসংগতি কমাতে গেলে আরেকটি অসংগতি দেখা দেয় মন্তব্য করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘একদম সুন্দর অবস্থা থেকে শুরু করলে তাত্ত্বিকভাবে আমরা সুন্দর একটা করনীতি করতে পারতাম। এখন তো আমরা একটা জায়গায় আছি, সেখান থেকে এদিক-ওদিক করতে হচ্ছে।’
উন্নয়ন বাজেটের প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘সমাপ্ত প্রায় অর্থবছর ও প্রস্তাবিত আগামী অর্থবছরের বাজেটে যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে, সেগুলোর প্রায় সবই পূর্ববর্তী সরকারের নেয়া প্রকল্প এবং চলমান প্রকল্প এগুলো।’
‘এর কারণ হলো যে, এগুলোর অধিকাংশই স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় অত্যধিক সংখ্যায় এইসব প্রকল্প আছে। এত বেশিসংখ্যক প্রকল্পের অর্থ সংস্থানও সে সময় বিবেচনা করা হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে ১১১৩টা প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ২০-৩০টি শুধু নতুন প্রকল্প। বাকিগুলো সবই চলমান, মানে আমাদের প্রকল্প না।’
ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ‘এই যে ২০-৩০টি নতুন প্রকল্প বললাম, এগুলোও কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী গত বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের নথিভুক্ত, যেটাকে বলে বরাদ্দহীনভাবে সবুজ পাতায় অন্তর্ভুক্ত করা, সেগুলোও ঠিক আমাদের প্রকল্প না।’
‘মোদ্দা কথা হলো, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এবং আগামী প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা যেটুকু বাস্তবায়ন করব, আমরা শুধু পূর্ববর্তী সরকারের নেয়া প্রকল্পগুলোর কাটছাঁট করছি, পুনর্বিন্যাস করছি, অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিচ্ছি এবং সম্ভব হলে দ্রুত সমাপ্ত করছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন হলো, একটা পুল নির্মাণ হচ্ছে বা রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে; এর মাঝখানে তো আমরা ওটাকে থামিয়ে দিয়ে কৌশলগতভাবে মানবসম্পদ উন্নয়নে নতুন প্রকল্প নিতে পারব না, ওটাকে শেষ না করলে তো অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতি।’